#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩৯
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]
“কিন্তুু আমার মনে ছিলো বি**ষ,
যখন করলে তুমি ছলনা,ভেবে নিলাম
তুমি শুধু প্রতারণার কারিগর,
আর আমি হলাম মৃগয়াকামী নির্জন।”
“কবিতা আবৃত্তি করে নির্জন দাঁড়িয়ে গেলো,আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো, ইতির বিছানার পাশে একটি ফুলদানি।নির্জন এগিয়ে গিয়ে ফুলদানি টি হাতে নিয়ে,বাঁকা হাসি দিয়ে খুব জোরে ফ্লোরে ছুঁ*ড়ে মা**রলো,যেনো ইতির বাবা-মা সেই শব্দ শুনে তাড়াতাড়ি ছুটে আসে।কারণ, নির্জন চায় না যে ইতি এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করুক।ফুলদানি ভে**ঙে ইতির দিকে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে,সবকিছু গুছিয়ে দ্রুত পায়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।”
“এদিকে পাশের রুম থেকে কিছু ভা**ঙার শব্দ পেয়ে,ইতির বাবা-মায়ের ঘুম ভে**ঙে গেলো।তারা বুঝতে পারলেন,আওয়াজ টি ইতির রুম থেকে এসেছে।
তৎক্ষনাৎ দু’জনে সতর্ক পায়ে ধীরগতিতে মেয়ের রুমে দরজা ঠেলে প্রবেশ করতেই, ইতিকে চোখে কালো কাপড় বাঁধা অবস্থায় বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে আঁতকে উঠলেন।তারা ইতির কাছে গিয়ে দেখলেন,ওর হাত-পায়ে ব্যান্ডেজ করা,আঙ্গুল গুলো ফ্লোরে পড়ে আছে।নিজের সন্তানের এহেন ভ**য়ং**কর অবস্থা দেখে, ইতির মায়ের যেনো মাথা ঘুরে উঠলো।তিনি কোনো রকমে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে, ইতিকে জড়িয়ে ধরলেন।ইতির এহেন দশা দেখে ইতির বাবারও একই অবস্থা হলো।তিনি ইতিকে কাছে টেনে নিয়ে ওর নাসারন্ধ্রে আঙ্গুল নিতেই,দেখলেন শ্বাস পড়ছে।মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে,ইতির নিস্তেজ শরীর কোলে তুলে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।”
“ইতির হাত-পায়ের আঙ্গুলগুলো কে**টে ফেলেছে নির্জন।এমন এক ভ**য়ং**কর দৃশ্যের মাঝে তাকে অর্ধমৃ**ত অবস্থায় হসপিটালে আনা হলো।পুরো ঘটনাটি যেনো এক দুঃস্বপ্নের মতো। ইতির শরীরে র**ক্ত**ক্ষ*রণ হচ্ছে। হসপিটালের ইমার্জেন্সিতে ঢোকার সাথে সাথে ডাক্তার ও নার্সরা ইতিকে দেখেই শিউরে উঠলো।”
“ডাক্তার প্রথমেই ইতির জীবন রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে ওঠেন।ইতির র**ক্তের চাপ দ্রুত কমে যাচ্ছে,তাই সঙ্গে সঙ্গেই তারা তাকে একটি স্ট্রেচারে শুইয়ে জরুরি চিকিৎসা শুরু করেন। একজন নার্স ইতির র**ক্তচাপ মাপছে,আর একজন দ্রুত তার শিরায় স্যালাইন ওষুধ দিয়ে ইন্ট্রাভেনাস (IV) লাইন স্থাপন করছে।”
“একজন সিনিয়র সার্জন এসে দ্রুত বললেন,
‘র**ক্তক্ষরণ বন্ধ করতে হবে, নাহলে তার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাবে।’
তৎক্ষণাৎ ইতির হাত-পায়ের ক্ষ**তস্থানগুলোতে প্রাথমিকভাবে ট্যুর্নিকেট বেঁধে র**ক্ত*ক্ষরণ বন্ধ করা হয়। তারপর তার ক্ষ**তস্থানগুলো পরিষ্কার করা হয়, যাতে কোনো ইনফেকশন ছড়িয়ে না পড়ে।”
“কিছুক্ষণ পর ইতিকে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। সার্জনরা ইতির হাত-পায়ের কা**টা আঙ্গুলগুলোর ক্ষ**তস্থানে প্লাস্টিক সার্জারি এবং শল্যচিকিৎসা শুরু করেন। তারা ক্ষ**তস্থানের চারপাশে মৃ**ত টিস্যু সরিয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করেন। এরপর, প্রয়োজনীয় সেলাই দিয়ে ক্ষ**তস্থানে সাময়িকভাবে র**ক্ত*ক্ষরণ বন্ধ করা হয়।”
“ডাক্তাররা চেষ্টা করে আঙ্গুলগুলো পুনঃস্থাপন করতে,যদি তা না হয়,তাহলে কৃত্রিম আঙ্গুলের পরিকল্পনা শুরু করতে হবে।”
“অপারেশন শেষ হবার পর ইতিকে আইসিইউ-তে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। তার শরীরে ইনফেকশন ঠেকানোর জন্য শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।”
“ডাক্তারেরা ইতির বাবা-মাকে ডেকে বলেন,
‘ইতির আঙ্গুলগুলো স্থায়ীভাবে হারানোর আশঙ্কা আছে, তবে আমরা তার জীবন রক্ষা করতে পেরেছি। তাকে লম্বা সময় ধরে মানসিক ও শারীরিক পুনর্বাসন করতে হবে।”
“মেয়ের জীবন টা যে ফিরে পেয়েছে,তাতেই ইতির বাবা-মা খুশি হয়ে গেলেন।তারপর ইতির বাবা পুলিশ কে ফোন করে বিষয়টি জানালেন।”
——-
“ভোর সাড়ে ৫টা।গভীর নিদ্রায় মগ্ন নিধি।প্রেয়সীকে দেখার অদ্ভুত আকুলতা যেনো তীব্র গতিতে বেড়ে চলেছে নির্জনের মাঝে।রিমলেস চশমার ফাঁক গলিয়ে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে প্রিয়তমার মুখস্রি।নিধির কপালে লেপ্টে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো কে বড্ড হিং*সা হচ্ছে নির্জনের।ইচ্ছে করছে চুলগুলো কে কু**চি কু**চি করে কে**টে ফেলতে।কিন্তুু প্রেয়সীর সিল্কি চুলগুলো কে**টে ফেললে,সে তার প্রকৃত সৌন্দর্য হারাবে।উমম..এতটুকু স্যাক্রিফাইস নির্জন করতেই পারে।”
“হঠাৎ ভেতর থেকে ‘মন’ দুষ্টু হেসে বললো,
‘বাহ!নির্জন, তোমার খুব দয়া হয়েছে দেখছি।চিন্তা করো না,তোমার ডার্ক কুইন যখন বুড়ো হয়ে যাবে,তখন তার চুলগুলো ধীরে ধীরে পড়ে যাবে।তখন আর এগুলো তাকে বিরক্ত করবে না।আপাতত কয়েক বছর ধৈর্য ধারণ করো।’
“মনের কথা শুনে মুচকি হাসল নির্জন।”
“নির্জন আরও কিছুক্ষণ নিধির দিকে তাকিয়ে থাকল।প্রেয়সীকে একান্তে পেতে মন চাইলো।কিন্তুু ঘুমন্ত অবস্থায় তো অসম্ভব।তাই নিধির মাথায় আলতো করে হাত বুলাতে লাগল।নির্জন এভাবে হাত বুলিয়ে দেওয়াতে নিধির ঘুম ভে**ঙে গেলো।ঘুম ঘুম চোখে নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘এই সময় হঠাৎ মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন যে?আপনার চোখ দেখে মনে হচ্ছে আপনি ঘুমাননি।কোনো সমস্যা হয়েছে?কিছু লাগবে?’
“নিধির ঘুমের ঘোরে বলা কথাগুলো শুনে ফের মুগ্ধ হলো নির্জন।প্রেয়সীর এহেন নেশালো কন্ঠে অদ্ভুত এক আকর্ষণ কাজ করছে।নির্জন মুচকি হেসে নিধির কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে,কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,
‘তোমাকে বড্ড কাছে পেতে মন চাইছে ডার্ক কুইন।তুমি কি রাজি?’
“নির্জনের হাস্কি ভয়েস কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই ঘুমন্ত অবস্থায়ও লাজুক হাসলো নিধি।রাতে তো নিধিও এটাই চেয়েছিলো।কিন্তুু নির্জনের পক্ষ থেকে তেমন সাড়া পায় নি,তাই কিছু বলেনি।’
ভেবে অস্ফুটস্বরে ‘হুম’
বলে নির্জনের বুকে মুখ লুকালো।”
“প্রেয়সীর লজ্জা পাওয়া বরাবরই অপছন্দ করে নির্জন। কিন্তু এই মুহূর্তে কিছু বলে,বিশেষ মুহূর্ত নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।তাই রহস্যময় হাসি দিয়ে, সন্তর্পণে নিধির ওষ্ঠযুগল আবদ্ধ করে নিলো নির্জন।প্রগাঢ় ভাবে নিধির শরীরের প্রতিটি অঙ্গে ছুয়ে দিতে লাগল।প্রিয়তমর স্পর্শে সাড়া দিলো নিধি।নিজেও বন্দী হলো নির্জনের তীব্র ভালোবাসার বন্ধনে।”
“দু’টি হৃদয়ের ভালোবাসা যখন পূর্ণতা পেলো,তখনই নির্জন নিধির কানের কাছে এসে ফিসফিস করে আওড়ালো,
“ঠোঁটের চুম্বনে রহস্যময় আতঙ্ক,
প্রেমের আড়ালে এক ভ**য়ং**কর শিকার।
র**ক্তের স্বাদে চুম্বনের বি**ষ,
অন্ধকারে কষ্টের সুমধুর আবেশ।
মৃ**ত্যুর ছায়ায় শ্বাসের খেলায়,
স্পর্শের মধ্যে লুকানো হিং*সা।
তীব্র আকাঙ্ক্ষা,বি**ষাক্ত প্রেম,
চুম্বনে বোনা এক ভালোবাসার স্নেহ।
দৃষ্টি ছিন্ন হৃদয়ে অতৃপ্তি,
ভ**য়ং**কর নেশার তীব্র শিহরণ।
প্রেমের নামে ভয়,অন্ধকারের খেলা,
ঠোঁটের উষ্ণতায় বি**ষাক্ত প্রেমের প্রহেলা।” ~মেহের~
———
“রাত পেরিয়ে সকাল হলো।তোহা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গিয়ে শাশুড়ি মায়ের সাথে হাতে হাতে সাহায্য করতে চাইলে,
তোহার শাশুড়ি তোহাকে রাগ করলেন,আর এটাও বললেন,
কোমর ব্যথা পুরোপুরি ভালো না হওয়া পর্যন্ত কোনো কাজ করতে হবে না।সে আর মেইড মিলে সব কাজ করে নিবে।”
“শাশুড়ির এহেন কথা শুনে তোহা তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘আমার মনেই হয় না,আপনি আমার শাশুড়ি।মনে হয় আপনি আমার নিজের মা।’
“তোহার শাশুড়িও মিষ্টি করে হেসে বললেন,
‘তুমি তো আমার মিষ্টি মেয়ে,তোমাকে আমার বৌমা কম,মেয়ে মনে হয় বেশি।’
এভাবে বৌমা আর শাশুড়ি কিছুক্ষণ কথা বললো।”
“অতঃপর তোহা রুমে প্রবেশ করতেই দেখলো ওয়াশরুম থেকে মাহির বেরিয়েছে।তার লোমশ বুকে পানির বিন্দু বিন্দু ফোঁটা স্পষ্ট।তোহা সেদিকে একবার দৃষ্টি দিয়ে,নজর ফিরিয়ে নিলো।মাহির তোহার কাছে এসে ওর হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে কাছে নিয়ে বললো,
‘আমার অবস্থা দেখেছো?চোখের নিচে কেমন কালো দাগ পড়ে গেছে?এই কয়েকদিন তোমার চিন্তায় আমি ঘুমাতে পারিনি।’
“তোহা মুখ ভেং**চি কে**টে বললো,
‘আপনার তো দেখছি চাপার অনেক জোর।নাইট ডিউটি করে এমন হয়েছে, সেটা বলতে পারেন না?আচ্ছা,শুনুন আমার খুব কাশবনে যেতে ইচ্ছে করছে।নিধি আপুকে ফোন করেছিলাম,ওর ফোন নির্জন ভাইয়া রিসিভ করে বললো,
সে আজ আপুকে নিয়ে বাসায় ফিরবে।ছুটির দিনে আপুকে নিয়ে ঘুরতে যাবে।’
এটা শুনে আমি নাদিয়া আপুকে ফোন দিয়েছিলাম।আমার প্রস্তাবে নাদিয়া আপু আর দিগন্ত ভাইয়া রাজি হয়েছে।এখন আপনার কাছে আজ বিকাল টুকু সময় চাই প্লিইইজ।”
“তোহার এতো অনুরোধ ফেলতে পারলো না মাহির।তোহার ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,
‘ওকে স্বপ্নচারিনী,আজ বিকালে নিয়ে যাবো।তবে সেখানে গিয়ে যেকোনো এক জায়গায় বসে থাকবে।কোনো হাঁটাহাঁটি করতে পারবে না।তুমি কিন্তুু এখনও পুরোপুরি সুস্থ হও নি।আমি আর কোনো রিস্ক নিতে চাই না।”
“মাহিরের যত্নশীল কথায় মুগ্ধ হলো তোহা।মুচকি হেসে, মাহিরের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে সায় জানালো।”
——–
“এদিকে কিছুক্ষণ যাবৎ একসাথে শাওয়ার নেওয়ার জন্য, নাদিয়ার হাত ধরে টানাটানি করছে দিগন্ত।নাদিয়া সবেমাত্র রান্না করে রুমে এসেছে।তখনই দিগন্ত বিছানা থেকে উঠে রুমের দরজা আটকে, নাদিয়ার হাত ধরে টানতে লাগল।আজ সে পণ করেছে, নাদিয়া কে নিয়ে একসাথে শাওয়ার নিবে।”
“এদিকে দিগন্তের মতিগতি বুঝতে পেরে নাদিয়া বললো,
‘এই দেখো,এখন আমার ভালো লাগছে না।তোমার কাহিনী আমি বুঝিনা ভেবেছো?সব বুঝি।আমি তোমার সাথে ওয়াশরুমে শাওয়ার নিতে যাবো না।”
“দিগন্ত এইবার নাদিয়ার হাতে আস্তে করে চি**মটি দিয়ে বললো,
‘তোমার তো কয়েকটি কমন ডায়লগ সবসময় মুখের কাছে লেগে থাকে,
‘যাবো না,করবো না,খাবো না,না না না..’
অথচ আমার মতো অসহায় মানুষটির কথা একবারও ভাবো না।’
বলেই ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ফেললো দিগন্ত।”
“দিগন্তের চেহারা দেখে নাদিয়া ঠোঁট টিপে হেসে বললো,
‘হুম,আমরা কাশবন থেকে ঘুরে এসে তারপর একসাথে শাওয়ার নিবো, ওকে জানু?’
“দিগন্ত আহ্লাদী স্বরে বললো,
‘সত্যি তো?’
‘নাদিয়া মুচকি হেসে বললো,
‘হুম,১০০সত্যি।’
‘বলেই দিগন্তের গালে চুমু দিয়ে দ্রুত পায়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।’
“নাদিয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে দিগন্ত মুচকি হেসে মনে মনে আওড়ালো,
‘ইয়েএএএ.. আজকে আমার খুশির দিন।কবে যে রাত টা আসবে!”
———–
“কাশবনের সৌন্দর্য যেন এক মায়াবী জগৎ তৈরি করে। চারপাশে সাদা কাশফুলের স্নিগ্ধতা,দিগন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে আছে।কাশফুলের নরম সাদা রং মনে হয় যেন মেঘ নেমে এসেছে জমিনে। বাতাসে দোল খাওয়া ফুলগুলো একে অপরের সাথে মৃদু হাসিতে মেতে উঠেছে,যেন প্রকৃতি তাদের নিয়ে কাব্য লিখছে।”
“নরম হাওয়া কাশফুলের পাতাগুলোকে আলতোভাবে ছুঁয়ে দিয়ে, মৃদু সুরে বাজিয়ে তুলছে এক অপূর্ব গান।দিগন্তে মিশে যাওয়া নীল আকাশের নিচে এই কাশবন যেন প্রেমের প্রাঙ্গণ হয়ে উঠেছে।সাদা ফুলের মেলা যেখানে, সেই কাশবনে দাঁড়িয়ে থাকলে মনে হয় যেন পৃথিবীর সকল ব্যস্ততা এখানে এসে থেমে গেছে।”
“সূর্যের নরম আলো কাশফুলের ওপর পড়ে,কাশবনের এই শান্ত ও মায়াময় পরিবেশে যেন প্রেমের এক বিশুদ্ধ সুর ধ্বনিত হয়, যেখানে মন হারিয়ে যেতে চায় অনন্ত ভালোবাসার সাগরে।”
“কাশবনের মাঝখানে তোহা এবং মাহির, দিগন্ত এবং নাদিয়ার গল্প যেন এক রোমান্টিক কবিতার মতো শুরু হয়। সূর্যের সোনালি আভা কাশফুলের ওপর পড়ে এক মায়াবী দৃশ্য সৃষ্টি করেছে, যা প্রত্যেক কাপলকে একে অপরের কাছে টেনে নেয়।”
“মাহির তোহার হাত ধরে মৃদু হাসি দিয়ে বললো,
‘স্বপ্নচারিনী,তোমাকে এই কাশফুলের মত কোমল আর স্নিগ্ধ লাগছে আজ।’
“তোহা তার চোখে একরাশ ভালোবাসা নিয়ে বললো,
‘আপনি না, সবসময় একটু বেশি বলেন।আপনাকেও শুভ্র রঙা পাঞ্জাবিতে দারুণ লাগছে স্বপ্ন পুরুষ।’
“মাহিরের চোখে যেন গভীর এক প্রেম, সে তার বুকে তোহাকে টেনে নিয়ে কাশফুলের একটি গোছা হাতে তুলে দিয়ে কবিতা শুরু করলো,
“কাশফুলের মায়ায় তোমার চুলে জড়াই,
তোমার চোখের আলোয় দিন শেষ হয়ে যাই।
তুমি যে আমার কাশবনের রাণী,
তোমার প্রেমে আমি হারাই যতটুকু জানি।”
“তোহা মুগ্ধ হয়ে মাহিরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে, সেই সাথে লাজুক হাসি দিয়ে কাশফুল দিয়ে মাহিরের বাহুতে আলতো করে চাপড় মা**রে।”
“এদিকে নাদিয়া কাশফুলের মাঝে দৌড়ে বেড়াচ্ছে, আর দিগন্ত তার পেছন পেছন ছুটছে এবং বার বার উত্তেজিত স্বরে বলছে,
‘হানি হানি..এখন দৌড়াদৌড়ি করলে বেবির প্রবলেম হবে।বেবি হয়ে গেলে ওকে কোলে নিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতা দিয়ো।কিন্তুু এখন নয়।’
“দিগন্তের এহেন কথায় থেমে গেলো নাদিয়া।মুচকি হেসে বললো,
‘তুমি যদি আমায় ধরতে পারো,তবে তোমায় কবিতা শুনাবো।’
“দিগন্ত মৃদু হেসে বললো,
‘আমি ধরতে চাই না,শুধু তোমার কাছে থাকতে চাই।’
কাশফুলের একটি ডাল তুলে সে নাদিয়ার হাতে দিয়ে বললো,
“তুমি আমার বনের ফুল,
তোমার হাসিতে পৃথিবী ভুল।
কাশের মাঝে তোমার ছোঁয়া,
আমার হৃদয়ে তোমারই ধোঁয়া।”
“নাদিয়া দিগন্তের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। দিগন্ত ওকে কোমলভাবে জড়িয়ে ধরলো। দু’জনের মাঝে যেন কাশফুলের মতো স্নিগ্ধ ভালোবাসার অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে।”
“এদিকে ইহান ও আফরিন শান্ত ভাবে কাশবনের প্রান্তে বসে আছে।
আফরিন গতকাল রাত থেকেই ইহানের কাছে বায়না ধরেছে কাশবনে আসার জন্য।প্রিয়তমার মিষ্টি বায়না ফেলতে পারেনি ইহান।তাছাড়া তারও তো বাংলাদেশে সেভাবে ঘোরা হয়নি।তাই আজ দু’জনে একসাথে কাশবনে ঘুরতে এসেছে।সেই সাথে দু’জনের মিষ্টি,রোমান্টিক মুহূর্ত গুলোও ক্যামেরা বন্দী করতে এসেছে।”
“ইহান হঠাৎ কাশফুল হাতে তুলে আফরিনের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বললো,
‘এই কাশফুলের মতো তুমি সবসময় আমার জীবনে রঙ এনে দাও সুমাইয়া।’
“আফরিন কিছু বলতে যাচ্ছিলো,কিন্তু তখনই ইহান কবিতা বলতে শুরু করে দিলো,
“কাশফুলের মতো তুমি সাদা,
তোমার প্রেমে হৃদয় বাঁধা।
তুমি ছাড়া জীবন মরুভূমি,
তোমার প্রেমে ভিজে যাই আমি।” ~মেহের~
“আফরিন একটুখানি হাসি দিয়ে বললো,
‘তুমি সবসময় এমন মিষ্টি কথা বলো,যেন প্রতিক্ষণে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই।’
“ইহান আফরিন কে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘কারণ,তুমি আমার কাছে সবচেয়ে সেরা উপহার।’
এই মুহূর্তে দু’জনের চোখে চোখ,যেন কাশবনের মাঝে তারা হারিয়ে গেছে একে-অপরের ভালোবাসায়।”
“এভাবেই তিনজন কাপল কাশবনের নরম হাওয়ায় নিজেদের ভালোবাসা খুঁজে নিলো। কাশফুলের মতন তাদের ভালোবাসা মধুর ও কোমল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এই সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে।”
——–
“এদিকে বিকাল বেলা নিধি নির্জনের কাছে বাবার বাড়িতে থাকার বায়না ধরলে,নির্জন কৌশলে অফিসের ব্যস্ততার কথা বলে, নিধিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি করিয়ে নেয়।সেই সাথে মেইড কে ফোন করে ৩দিনের ছুটি দিয়ে দেয়।আর নিধিকে জানায়,যে মেইড অসুস্থ, তাই আসতে পারবে না।তাছাড়া নির্জন তেমন ভাবে রান্না করতে পারে না।তাই নিধি কে তার সাথে যেতে হবে।
প্রিয় স্বামীর কথা চিন্তা করে, নিধিও আর না করতে পারেনি।”
“নিধি যখন বেলকনির দোলনায় বসে প্রকৃতির স্নিগ্ধ বাতাস গায়ে মাখছে,সেই সুযোগে নির্জন কিচেনে চলে গেলো।
তাহমিনা বেগম বিকালে হালকা নাস্তা তৈরি করছিলো।
এমন সময় নির্জনের উপস্থিতি টের পেয়ে মুচকি হেসে বললেন,
‘এসো বাবা।কিছু বলবে?’
“নির্জনও মুচকি হেসে বললো,
‘নাহ!এমনি, দেখতে এলাম কি কি তৈরী করছেন।বাই দ্যা ওয়ে,আপনার হাতের চিজ পাস্তা খেতে কিন্তুু অসাধারণ। কিন্তুু,নিরুপমা সেদিন বলেছিলো..
“তাহমিনা বেগম জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
‘কি বলেছিলো?’
“নির্জন ম্লান হেসে বললো,
‘না,থাক কিছু না।’
“তাহমিনা বেগম উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
‘আরে বাবা বলো না,আমার পা**গলী মেয়েটা কি বলেছে?’
“নির্জন মলিন স্বরে বললো,
‘বলেছে,আপনার হাতের ফাস্ট ফুডগুলো ওর কাছে তেমন ভালো লাগে না।এর থেকে আমাদের বাসার মেইডের বানানো খাবার বেশি ভালো লাগে।
আসলে মা, আপনি কিছু মনে করবেন না,আমার বাসার মেইড ও খুব ভালো ফাস্ট ফুড আইটেম বানাতে পারে।তাছাড়া এই কয়েকদিনে নিরুপমা আমার বাসার সদস্যগুলো কে এতটা আপন করে নিয়েছে,যে আপনার কথা একবারও বলে না হাহাহা।তবে আমি প্রতিদিন নিয়ম করে আপনার আর বাবার কথা ওকে মনে করিয়ে দিয়েছি।আপনাদের জন্যই তো ওকে আমি অর্ধাঙ্গিনী হিসাবে পেয়েছি,তাই না মা?’
“নির্জনের এহেন কথায় মুহূর্তেই মুখমণ্ডল মলিন হয়ে গেলো তাহমিনা বেগমের।মনের মধ্যে কষ্ট অনুভব করে ভাবলেন,
‘নিধি তো সত্যি বলেছে,ছোটবেলা থেকে নিধির অতিরিক্ত দুষ্টুমি স্বভাবের জন্য মেয়েটা কে কতটা বকাঝকা করেছি,মে**রেছি।ওর সাথে মা হিসেবে তেমন ভাবে আমার সখ্যতা গড়ে ওঠেনি।হয়তো, এটা আমার নীরব স্বভাবের জন্য।একজন মা হিসাবে সত্যি আমি ব্যর্থ!
তাই তো মেয়েটা দূরে গিয়ে সবার আদর-যত্ন পেয়ে আমাকে ভুলে গেছে।’
‘ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো তাহমিনা বেগম।”
“নির্জন সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাহমিনা বেগমের মুখমণ্ডল পর্যবেক্ষণ করে ভাবলো,
‘যাক,তার নীরব মস্তিষ্কে কথা গুলো ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি।উনি আর আমাদের মাঝে কাবাব মে হাড্ডি হবে না।আমার ডার্ক কুইন শুধু আমারই থাকবে।’
‘ভেবে বাঁকা হাসলো নির্জন।”
“অবশেষে নির্জন এবং নিধি ওর বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিলো।নিধির মন ভীষণ খারাপ।কারণ,বিদায়ের মুহূর্তে তাহমিনা বেগম ওর সাথে ভালোভাবে কথা বলেনি।নিধি ওর মাকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে,তিনি জবাবে বলেন,
‘আমি নীরব স্বভাবের হলেও,তোদের দুই বোন কে সমান ভাবে ভালোবেসেছি।দোয়া করি,তোর জীবন যেনো খুব সুখের হয়।’
“মায়ের এহেন কথার ভাবার্থ বুঝতে পারেনি নিধি।এদিকে নির্জন ও যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করছিলো,তাই নিধি আর কথা না বাড়িয়ে বিদায় নেয়।”
“গাড়িতে উঠে নিধিকে মুখ ভার করে বসে থাকতে দেখে,মনে মনে তৃপ্তির হাসি দিয়ে গাড়ির স্পিড আরেকটু বাড়িয়ে দিলো নির্জন।কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ করে গাড়ির স্পিড আপনা-আপনি কমে এলো।নির্জন তৎক্ষণাৎ গাড়ি থামিয়ে,বাইরে গিয়ে চেক করে দেখলো গাড়ির ইলেকট্রিক সিস্টেমে কিছু ত্রুটি হয়েছে।নির্জন মনে মনে সেগুলো কে ইচ্ছে মত বকা ঝকা করে গাড়িতে বসে,স্লো স্পিডে টেনে একটি গ্যারেজে নিয়ে যায়।গাড়ির মেকানিক সবকিছু দেখে বললো,
‘আগামীকাল বিকালে এসে নিয়ে যেতে।’
নির্জন সায় জানিয়ে চলে গেলো।”
“মাঝ রাস্তায় রিকশা,সি এন জি গুলো ভরপুর হয়ে আসছিলো।তাই ওরা বাধ্য হয়ে বাসে উঠলো।
বাসে ওঠার কিছুক্ষণ পর, নিধি নির্জনের কাছে পানির বোতল চাইলো।”
“নির্জন ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে দিতেই,নিধি নিকাব খুলে বোতল উঁচিয়ে খাওয়া শুরু করলো।
তখনই একজন লোক নির্জনের সাইড ঘেঁষে দাঁড়িয়ে, নিধির পানি পান করা দেখছিলো।আর বারবার জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিচ্ছিলো।”
“নির্জন লোকটা কে কিছুক্ষণ যাবৎ খেয়াল করেছে,সে বাসে ওঠা অন্য মেয়ে গুলোর দিকেও কেমন নোং**রা দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো।কিছু মেয়ের কোমরে ভিড়ের দোহাই দিয়ে বা**জে ভাবে ছুঁয়েও দিয়েছে।কেউ বোঝেনি,কেউ আবার বুঝেও লজ্জায় কিছু বলেনি।বাসগুলো তে প্রতিনিয়ত মহিলাদের সাথে এমন ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে।কেউ প্রতিবাদ করে।কেউ আবার মান-সম্মানের ভয়ে চুপসে যায়।মাঝখান থেকে পৈ**শা**চিক আনন্দ উপভোগ করে মানুষ রূপী হা**য়েনা গুলো।”
“নির্জনের মস্তিষ্কের উগ্র পোকাগুলো মুহূর্তেই কিলবিল করে উঠলো। মনে মনে আওড়ালো,
‘ও কেনো আমার জানপাখির দিকে এমন করে তাকিয়ে আছে?তাও আবার এভাবে জিহ্বা টা বারবার ভিজিয়ে?এটাই তো নোং**রামো।মেয়েগুলো কেও কেমন করে ছুঁয়ে দিলো।না না..ওকে তো শাস্তি পেতেই হবে।তাও আবার ভ**য়নাক শাস্তি।ওর জিহ্বা,হাত আর চোখ দু’টোকে বেশি শাস্তি পেতে হবে।কিন্তুু, এত মানুষের ভীড়ে কিভাবে দেবো?’
“কথাগুলো ভাবতেই নির্জনের নজর গেলো লোকটির প্যান্টের পেছনের পকেট থেকে কিঞ্চিৎ বের হয়ে থাকা ওয়ালেটের দিকে।নির্জন ডেভিল হেসে ভাবলো,
‘দিগন্ত একটা কথা সত্যি বলে,আমার বুদ্ধির জুরি নেই।’
[আমার গল্পের গ্রুপে যুক্ত হয়ে নিন👇
https://facebook.com/groups/540631661830855/
#চলবে…
(প্রিয় পাঠকমহল গত পর্বে আমার ২-৩জন পাঠক বলেছেন,নির্জনের অতিরিক্ত সাইকোগিরি আপনাদের ভালো লাগছেনা।এখন আমি আপনাদের বলতে চাই,আমি আগে থেকেই বলেছি, সে ভিলেন।তার থেকে ভালো কিছু আশা করাটাও ভুল।অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না।সেটা আমিও জানি।কিন্তুু আপনাদের কথায় আমি যদি নির্জনের কাহিনী গুলো ভালো বানিয়ে দেই,তাহলে তো আমার গল্পের ক্যাটাগরির সাথে মিলবে না।এই চরিত্রটিও আমি ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবো না।আর গল্প টাও পুরো নষ্ট হয়ে যাবে।আপনারা বিষয়গুলো জেনেই গল্প টা পড়েছেন।তাই বলবো,গল্পটি যেহেতু শেষের পথে,তাই ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।আর আগামী পর্ব গুলো তে তার সাইকোগিরি দ্বিগুণ বাড়বে।ধৈর্য ধরে পড়তে থাকুন,নিরাশ হবেন না।তাছাড়া আমি এখানে ৩টি জুটির স্বাভাবিক জীবন ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।সেই সাথে একজন সাইকোর জীবনও ফুটিয়ে তুলেছি।এর মাধ্যমেই তো আপনাদের সবকিছু বোঝা উচিত।তবুও আপনারা অতিরিক্ত বিরক্ত বোধ করলে,গল্পটি ইগনোর করুন প্লিজ।আর সাইকো লাভার দের জন্য ভালোবাসা অবিরাম।)