#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩৮ (ধামাকা পর্ব)
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]
“নির্জন বাঁকা হেসে বললো,
‘তাহলে এখন দেখালি কেনো?তোর শেষ নিঃশ্বাসের ইতি ঘটাতে?”
“নির্জনের এহেন কথায় কিছুটা বোকা বনে গেলো ইতি।ম্লান হেসে বললো,
‘মজা করছিস, তাই না?তুই তো ভার্সিটিতে খুব নীরব থাকতি।সবসময় বইয়ে মুখ গুঁজে রাখতি,কখনোও তোকে এমন রসিকতা করতে দেখি নি।যাক সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়েছিস,দেখে ভালো লাগল।”
“নির্জন মুচকি হেসে বললো,
‘হুম,ঠিক বলেছিস,সময়ের সাথে সাথে আমি অনেক পরিবর্তন হয়েছি।আর আজ তুই আমার আরও পরিবর্তন দেখবি।’
“ইতি মুচকি হেসে বললো,
‘আরে বাহ!তুই দেখি আবার রহস্য করে কথা বলিস, হিহিহি।সে যাইহোক,অনেক দিন পর তোর সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগল।আর অতীতের ঘটনার জন্য আ’ম এক্সট্রিমলি সরি নির্জন।”
“নির্জন মৃদু হেসে বললো,
‘আরে ধুর..Past is past,present is gold.’
পুরনো কথা বাদ দে।এখন এটা বল,তোর হাজবেন্ড কে কেনো খুঁজতে এসেছিস?আর, এখন তোর বাসা কোথায়?”
“নির্জনের কৌশলে করা প্রশ্নটি বুঝতে পারলো না ইতি।দীর্ঘশ্বাস ফেলে গড়গড় করে বলতে শুরু করলো,
‘তোকে প্রপোজ করার পরেও,তোর থেকে কোনো উত্তর পাচ্ছিলাম না।ভেবেছিলাম,হয়তো এক্সেপ্ট করবি না।১৫দিন অপেক্ষা করার পর, একদিন নিলয় আমায় ম্যাসেজ করে বলে, সে আমাকে ভালোবাসে।প্রথম দিকে তাকে আমি ইগনোর করলেও,আমার পেছনে ঘোরা,প্রতিনিয়ত ম্যাসেজ দেওয়া,চিঠি দেওয়া এই বিষয়গুলোতে আমার মন গলে যায়।তারপর ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়।এর মধ্যে তোকেও ভার্সিটিতে আসতে দেখিনি।
হঠাৎ আমার বাবার ট্রান্সফার হওয়ার কারণে আমরা ঢাকা থেকে অদূরে একটা কোয়ার্টারে শিফট হই।আর সেখানের একটি ভার্সিটিতে ভর্তি হই।পরবর্তীতে আমার এক বান্ধবীর মাধ্যমে জানতে পারি যে, তুই ভার্সিটিতে এসে আমায় খুঁজেছিলি।কিন্তুু ততদিনে আমি আর নিলয় লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলি।কারণ, আমার পরিবার নিলয় কে বেকার বলে মেনে নিচ্ছিলো না।তারা আমাকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার জন্য জোর করেছিলো।কিন্তুু, দুঃখের বিষয় কি জানিস?যাকে ভালোবেসে ঘর ছেড়েছিলাম,সেই ব্যক্তিটি ভালো চাকরি পাওয়ার পর ধীরে ধীরে কেমন বদলে গেলো।বিয়ের ২বছর পর জানতে পারলাম, সে পরনারীতে আসক্ত।আজ ১০দিন হলো তার খোঁজে আমি পা**গল প্রায়।আজ ২মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা হয়েও তাকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াই।আমার এক কাজিন বলেছিলো, তাকে নাকি এখানে কয়েকবার দেখেছে।হতে পারে আশেপাশে তার নতুন সঙ্গীকে নিয়ে নতুন বাসায় উঠেছে।তাই তাকে খুঁজতে এসেছি।’
একাধারে কথাগুলো বলে আবারও দীর্ঘশ্বাস ফেললো ইতি।”
“নির্জন মুখস্রিতে একটু দুঃখী দুঃখী ভাব করে বললো,
‘সেকি!তুই বোকা নাকি রে?এত বড় এলাকায় একটা মানুষ কে তুই কিভাবে খুঁজবি?কি বলতো,’রিভেঞ্জ অফ ন্যাচার’ বলে একটা প্রবাদ আছে।তোর সাথেও সেটাই হয়েছে।আমি ১৫দিন জ্বর থেকে শুরু করে বিভিন্ন অসুস্থতায় ভোগার কারণে ভার্সিটিতে আসতে পারিনি।তুই প্রপোজ করার পর, আমি অনেক ভেবে-চিন্তে তোর জন্য আমার অতীতের স্মৃতি নিয়ে একটি চিঠি লিখেছিলাম।তখনও তোকে আমি ভালোবাসিনি,শুধু ভালো লেগেছিলো।ভেবেছিলাম,তোকে সবকিছু জানিয়ে, তারপর না হয় নতুন করে পথ চলবো।কিন্তুুু দেখ,তুই ১৫দিন অপেক্ষা করেই হাঁপিয়ে গেলি।অন্য পুরুষের প্রেমে গা ভাসিয়ে দিলি।ভাগ্যিস,তখন তোর প্রেমে পড়িনি,নইলে হয়তো আরও ভ**য়ং**কর কিছু ঘটে যেতো।তবে তোকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি।আচ্ছা,যেহেতু আমরা ফ্রেন্ড,তাই তোকে আমি তোর হাজবেন্ড কে খুঁজতে হেল্প করবো।তার আগে তোর বাসার ঠিকানা টা দে।”
“নির্জনের মুখে সাহায্য করার কথা শুনে ভীষণ খুশি হলো ইতি।খুশি হয়ে বললো,
‘থ্যাংকস নির্জন।আমার মাথা থেকে মনে হয় এতদিনের ভারী বোঝাটা নেমে গেলো।আমি ভাবতে পারিনি,তুই আমার মনোভাব বুঝতে পারবি।’
বলেই ইতি নির্জনকে ওর বর্তমান বাসস্থানের ঠিকানা বললো,এমনকি কয়টা রুম,কোথায় সে থাকে সবকিছু বলে দিলো।’
সবকিছু শুনে নির্জন ডেভিল হেসে মনে মনে আওড়ালো,
‘বোকা মেয়ে।’
———–
“ইতির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নির্জন আরও কিছু কেনাকা**টা করলো।তারপর বেশ কিছু সময় পার হওয়ার পর শ্বশুর বাড়িতে পদার্পণ করলো সে।”
“নির্জন সদর দরজা পেরিয়ে ঢুকতেই, রফিক মির্জা এবং তাহমিনা বেগম কে দেখে সালাম দিলো।নিধি এবং ওর বাবা-মা ডাইনিং টেবিলে সামনে হরেক রকম খাবার নিয়ে নির্জনের জন্য অপেক্ষা করছিলো, আর গল্প করছিলো।”
“নির্জন কে দেখে নিধি এগিয়ে গিয়ে বললো,
‘আপনি আসতে এতো লেট করলেন কেনো?সেই কখন থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি।আর আপনার চুলের এই অবস্থা কেনো?মনে হয় অর্ধেক টাই কে**টে ফেলেছেন?’
“নিধির কথা শুনে নির্জন মুচকি হেসে বললো,
‘ইদানীং মাত্রাতিরিক্ত গরমে আমার মাথাটাও গরম হয়ে গেছে।তাই চুলগুলো কিছুটা ছাটকা**ট করলাম।কেনো ভালো লাগছে না?’
“নিধি মুচকি হেসে বললো,
‘নাহ ভালো লাগছে।কিন্তুু, আপনি এতো…
“নিধিকে কিছু বলতে না দিয়ে,নির্জন ওর হাত ধরে বললো,
‘খুব ক্ষুধা লেগেছে।এভাবে কি দাঁড় করিয়ে শুধু প্রশ্ন করবে?নাকি কিছু খেতে দিবে?’
“নিধি মাথা নিচু করে বললো,
‘সরি,আসলে আমরা আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।আসুন।’
“নিধি বলতেই নির্জন ডাইনিং টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ারে বসে রফিক মির্জার সাথে কুশলাদি বিনিময় করলো।
অনেক দিন পর বড় মেয়ে আর তার জামাই কে পেয়ে খুশি গুলো যেন উপচে পড়ছে রফিক মির্জা এবং তাহমিনা বেগমের মনে।যদিও তাহমিনা বেগমের তোহার অসুস্থতার জন্য কিছুটা মন খারাপ।তবে তিনি ভেবে রেখেছেন,তোহা পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর দুই মেয়ে জামাইকে একসাথে নিমন্ত্রণ করবেন।”
“রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে রফিক মির্জা এবং তাহমিনা বেগম তাদের রুমে ঘুমাতে গেলেন।
নিধিও ফ্রেশ হয়ে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিলো।বিছানায় বসতেই খেয়াল করলো,নির্জন বেলকনির গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে দূর আকাশের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে।”
“নিধি বিছানা থেকে নেমে, বেলকনিতে গিয়ে নির্জনের পিঠে আলতো করে হাত রেখে বললো,
‘রাত সাড়ে ১১টা বাজে।ঘুমাবেন না?’
“নির্জন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললো,
‘নাহ!ঘুম আসছে না।আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই।তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।’
বলেই নিধির হাত ধরে বিছানায় নিয়ে গেলো।
নিধির পাশে শুয়ে ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগল।”
“নিধি ভাবলো,
‘নির্জন কতটা কেয়ারিং।কিন্তুু সেদিন কেনো এমন আচরণ করেছিলো?’
ভেবে ক্ষুদ্র শ্বাস ছেড়ে বললো,
‘নির্জন আপনার সেদিনের আচরণ আমি এখনও ভুলতে পারছি না।আসলে আমি অনেক বার চেয়েছি ভুলে যেতে,কিন্তুু আমার মস্তিষ্ক চাইছে না।’
“নিধির কথায় ভীষণ বিরক্ত বোধ করলো নির্জন।ইচ্ছে করছে এখনই কিছু করে ফেলতে।কিন্তুু যতই হোক নিধি তার প্রিয়তমা,তাই নিজেকে সর্বোচ্চ দিয়ে দমিয়ে রাখল নির্জন।অতঃপর চশমা খুলে বালিশের পাশে রেখে নিধির মাথা বুকের ওপর নিয়ে,শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘বলেছি তো সরি।পুরনো কথা পুনরায় তুললে কিন্তু ভালো হবে না।চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো সোনা।’
“নির্জনের কথায় হয়তো কিছু একটা ছিলো।সেটা কিছুটা আঁচ করতে পারলেও, পুরোপুরি আঁচ করতে পারেনি নিধি।তাই কথা না বাড়িয়ে নির্জনের বুকের ওপর চুপটি করে শুয়ে রইলো।একসময় ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।”
“নিধি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর নির্জন আলতো হাতে ওকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে,ওর দিকে স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে বললো,
‘অনেক দিন পর একজন বিশ্বাসঘা**তক নারীকে একটু শাস্তি দিবো।উহুম,বেশি না,একটু..।তুমি ঘুমাও,আমি আমার শুভ কাজ সম্পন্ন করতে গেলাম।তারপর ফিরে এসে তোমায় অনেক আদর করবো ডার্ক কুইন।’
বলেই ডেভিল হেসে নিধির গালে আলতো করে চুমু দিয়ে,নিঃশব্দে দরজা খুলে,আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তড়িৎ গতিতে হেঁটে সদর দরজা খুলে চলে গেলো।”
“নির্জনের নিজের বাসায় ফিরতে প্রায় ৩০মিনিট সময় লাগল।বাসায় ফিরে সরাসরি নিজের অতি প্রিয় ২নাম্বার রুমে গিয়ে একটি ব্যাগের মধ্যে প্রয়োজনীয় ধাতব অ**স্ত্র ভরে,রুমের চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে,রুম থেকে বেরিয়ে বড় একটি তালা ঝুলিয়ে, ইতির বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।”
——–
“রাত ১২টায় একে-অপরের পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে মাহির এবং তোহা।
তোহার কোমর ব্যথা কিছুটা কমেছে।মাহির তোহার দিকে ফিরে বললো,
‘আর কতদিন লাগবে সুস্থ হতে?আমি এক অবলা পুরুষ,সেটা কি তোমার চোখে পড়ে না?সবেমাত্র বিয়ে করেছি,তার মধ্যেই কোমরের কি হাল করেছো।ভবিষ্যতে বেবি হলে আরও প্রবলেম হবে।’
“তোহা মুচকি হেসে বললো,
‘আপনি আছেন তো।আপনি বেবিকে সামলাবেন।তবে আপুর বাসায় গিয়ে আমার মন ভরে নি।ভাবছি, একটু ভালো হলে আবার যাবো।’
“তোহা বলতেই মাহির ওর ঠোঁট জোড়ায় আঙ্গুল রেখে বললো,
‘একদম নয়।ওই বাসার ফ্লোরে ধ**পাস করে পড়ে গিয়ে তুমি ব্যথা পেয়েছো।আর সেই বাসায় তোমাকে আমি আবার যেতে দেবো?ইম্পসিবল।”
“তোহা বড় বড় চোখ করে বললো,
‘আপনিতো অদ্ভুত মানুষ!এই বিপদ তো আপনার বাসায় ও হতে পারতো।যাই বলুন না কেনো,আমি আপুর বাসায় আবার যাবো।আমি আপুর কাছে গিয়ে এক রাত থাকব।নির্জন ভাইয়া আর আপনি একসাথে ঘুমাবেন,আর আমরা দুই বোন একসাথে ঘুমাবো।তারপর…
” আর বলতে পারলো না তোহা।তার আগেই মাহির তোহার ওষ্ঠদ্বয় সন্তর্পণে নিজ ওষ্ঠে আবদ্ধ করে নিলো।কয়েক সেকেন্ড পর ছেড়ে দিয়ে মুচকি হেসে বললো,
“তোমার ঠোঁটে এক চুমুর ছোঁয়া,
মনে হয় যেন সারা দুনিয়া থেমে গিয়েছে এক সেকেন্ডে,
তোমার স্পর্শে হারিয়ে যায় সব অন্ধকার,
তোমার ঠোঁটে ঝরে পড়ে প্রেমের অমৃতধারা।
যেন এক নরম বাতাস বয়ে চলে হৃদয়ের মাঝখান দিয়ে,
তোমার স্পর্শে মিশে থাকে আমার সমস্ত আকাঙ্ক্ষা,
প্রেমে মেতে ওঠে পৃথিবী, আকাশ ঝুঁকে আসে কাছে,
তোমার ঠোঁটে চুমু দিয়ে খুঁজে পাই স্বপ্নের সীমানা।
তুমি আমার প্রাণের জ্যোতি, মধুর কণ্ঠের সুর,
তোমার স্পর্শে মিশে যায় সমস্ত প্রেমের দুর্দমনীয় দাহ,
চিরকাল তোমার মনে খুঁজে যাবো আমি আমার শান্তি,
তোমার চুম্বন যেন হৃদয়ে লেখা এক মধুর প্রশান্তি।”
~মেহের~
“হায় কি রোমান্টিক কবিতা।মাহিরের – হাস্কি ভয়েসে রোমান্টিক কবিতা শুনে তোহা তো লজ্জায় ম**রি ম**রি।”
“তোহার লজ্জা মাখা মুখস্রি দেখে মাহির মনে মনে বললো,
‘যাক অবশেষে মাইন্ড কন্ট্রোল করতে পেরেছি।’
ভেবে বিজয়ের হাসি দিয়ে তোহার গালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,
‘হবে নাকি আরেকবার?’
‘তোহা পিট পিট করে তাকিয়ে বললো,
‘মানে?’
“মাহির এইবার তোহার কপালে গাঢ় চুম্বন দিয়ে বললো,
‘এই দুষ্টু মেয়ে,তোমার চিন্তা ভাবনা এতো নেগেটিভ কেনো?আমি তো চুমুর কথা বলেছি।’
‘মাহিরের এহেন কথায় তোহা হাসবে না কাঁদবে ভেবে পেলো না।মাহিরের হাতে চিমটি কে**টে বললো,
‘যাহ, দুষ্টু কোথাকার!”
———
“রাত ১টা বেজে ৫মিনিট।ঘুম নেই নাদিয়ার চোখে।প্রতিটি মেয়ের মাতৃত্বের শুরুর কয়েকটি মাস মুড সুয়িং,শরীরের বিভিন্ন দিক পরিবর্তন হওয়া থেকে শুরু করে হরেক রকম লক্ষণ দেখা দেয়।নাদিয়ার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।ঘন ঘন বমি,মাথা ঘুরানো,খাবারে অরুচি থেকে শুরু করে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিয়েছে।এই যে এখন ঘুমানোর জন্য কত চেষ্টা করেও পারছে না।ঘুম কাতুর নাদিয়ার ঘুম গুলো সব যেন পাখা মেলে উড়ে গিয়েছে।বারংবার বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছে নাদিয়া।নাদিয়ার এহেন কাজে ঘুম ভে**ঙে গেলো দিগন্তের।নাদিয়ার অস্বস্তি মনোভাব বুঝতে পেরে, শোয়া থেকে উঠে বসে নাদিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
‘খারাপ লাগছে, তাই না হানি?রাতেও তো কিছু খেলে না।তাই হয়তো বেশি দুর্বল লাগছে।চিন্তা করো না,আমি এখনই তোমার মুখে রুচি ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছি।’
বলেই তড়িৎ গতিতে বিছানা থেকে নেমে, একটি ব্যাগ থেকে একটি মাঝারি সাইজের বক্স বের করে নাদিয়ার পাশে বসে বললো,
‘এটা খেলে তোমার সব রুচি ফিরে আসবে।’
“নাদিয়া পিটপিট করে তাকিয়ে বললো,
‘এটা কি?’
“দিগন্ত ভ্রু কু**টি করে বললো,
‘সেকি!রুচির সাথে সাথে চোখ টাও গেলো নাকি?এটা হানি নাটস।এটা খেলে তোমার রুচি ফিরে আসবে,সেই সাথে এনার্জিও।কত দিন হলো তুৃমি আমাকে পাত্তা দাও না।”.
“দিগন্তের শেষ বাক্যটি বুঝতে কিছুটা বেগ পেতে হলো নাদিয়ার।কটমটিয়ে বললো,
‘ওওও বুঝেছি,এই জন্য আমার জন্য এতো দরদ?আমি আরও ভাবলাম, তুমি বেবির জন্য চিন্তা করে বলছো।অথচ তুমি কিনা?’
“দিগন্ত নাদিয়ার হাত ধরে উত্তেজিত স্বরে বললো,
‘ওই না না না.. আমি এতসব ভেবে বলিনি হানি।আমি ৯৫% বেবির কথা আর তোমার কথা ভেবেছি,বাকি ৫%আমার কথা।আমার দিকেও তো একটু তাকাতে হবে।দেখো আমার মুখটা কেমন শুকনো শুকনো হয়ে গেছে।’
“নাদিয়া মুচকি হেসে বললো,
‘আমি তো ভেবেছি, তোমাকে শুঁটকি বানিয়ে ছাদের ওপর রোদ দিবো।হুহ.. আসছে আমাকে হানি নাটস খাওয়াতে।জীবনেও খাবো না।তোমার টা তুমি খাও।”
“দিগন্ত নাদিয়ার দিকে ঝুঁকে এসে চোখ-মুখ কুঁচকে বললো,
‘আমি এটা খেলে তো, তোমার রাতের ঘুম উড়াল দিবে হানি।’
“দিগন্তের হাব-ভাব দেখে নাদিয়া বিছানা থেকে তড়িঘড়ি করে নেমে কটমটিয়ে বললো,
‘অসভ্য,ঠোঁট কা**টা পুরুষ।রাত-বিরেতেও লাগাম ছাড়া কথা-বার্তা শুরু করেছে।বলি কি, তুমি কি আর ভালো হবে না?’
“দিগন্ত নাদিয়ার আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে দুষ্টু হেসে বললো,
‘তোমার জন্য এর থেকেও বেশি ঠোঁট কা**টা হতে রাজি আছি হানি।এইবার কাছে এসো, আদর করে দেই।”
“দিগন্তের এহেন কথা শুনে নাদিয়ার মাথা আকস্মিক ঘুরে উঠলো।
বেচারি না চাইতেও বিছানায় বসে থাকা দিগন্তের ওপর ঢলে পড়লো।”
———
“রাত ১টা বেজে ৩৪মিনিট।ইতির রুমের কাউচে বসে,ওর ঘুমন্ত মুখটির দিকে তাকিয়ে আছে নির্জন।
দুই হাত দুই হাঁটুর ওপর রেখে, চিবুকের সাথে ঠেকিয়ে কিছুক্ষণ যাবৎ দেখে চলেছে ইতি কে।
কিছুক্ষণ পর ঘাড় কাত করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,
‘এই বাবা-মায়েরা যে কেনো এত অসচেতন হয়,বুঝিনা।যুবতী মেয়ের রুমে কেউ এমন করে খোলা বেলকনি রাখে?যাক, বড়লোকের কারবার।আমার জন্য ভালোই হয়েছে,কোনো কিছু কা**টাকা**টি করে ঢুকতে হলো না।যদিও আমি চু**রি করতে আসিনি।সামান্য কা**টাকা**টি করতে এসেছি।’
বলেই নিঃশব্দে পৈ**শা**চিক হাসি দিলো নির্জন।”
“এর মধ্যেই দেখতে পেলো ইতি কিছুটা নড়ে উঠেছে।নির্জন ভ্রুকু**টি করে বিড়বিড় করে আওড়ালো,
‘ না না..আমার চেহারা ওকে কিছুতেই দেখতে দেবো না।ওর যন্ত্রণা হবে অভিনব পদ্ধতিতে।কষ্ট পাবে,তবে এখন নয়।আর সময় নষ্ট নয়।কিছুক্ষণ পর আমার ডার্ক কুইন কে গিয়ে সময় দিতে হবে।তাই ঝটপট কাজ গুলো সেরে ফেলি।’
বলেই ইতির কাছে গিয়ে ব্যাগ থেকে একটি অচেতন করার মেডিসিন বের করলো,যার নাম হলো-প্রোপাফল।”
“নির্জনের চোখে অন্ধকারের ছায়া।ইতি আরেকটু নড়েচড়ে উঠতেই, নির্জন হাতে গ্লাভস পরিধান করে,খুব দ্রুত গতিতে প্রোপাফল ইনজেকশন টি ইতির ঘাড়ে পুশ করে দিলো।
এই ওষুধটি খুব দ্রুত কাজ করে।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে শরীর কে অবশ করতে সক্ষম।তবে সমস্যা হলো,মস্তিষ্ক সবকিছু অনুভব করে এবং বুঝতে পারে।কিন্তুু কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে না।”
“প্রোপাফল ইনজেকশনের কাজ শেষ হয়ে গেছে। ইতির শরীর এখন পুরোপুরি অবশ, কিন্তু মস্তিষ্কে এখনো প্রতিটা ব্যথার তরঙ্গ পৌঁছাচ্ছে। নির্জন তৎক্ষনাৎ ইতির চোখ জোড়া কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে দিলো।আস্তে করে প্রথমে ইতির হাত তুলে নিলো।ওর হাত হালকা ঠান্ডা, নড়াচড়া নেই, কিন্তুু পুরোপুরি জীবন্ত।”
“প্রথমে নির্জন একটি চিকন ক্ষু**র হাতে নিয়ে ইতির আঙুলের নখের দিকে তাকালো।আঙুলটা ধরে সে হাসলো, যেন কোনো মজার খেলায় নেমেছে।এরপর ক্ষু**রের ধা**রালো ফলাটা প্রথম আঙুলের গোড়ায় স্পর্শ করল। এক মুহূর্তেই সে ক্ষু**রটা চালিয়ে দিলো,আঙুলের চামড়ার নিচের শিরা আর পেশিগুলো নিখুঁতভাবে কে**টে গেলো। র**ক্তের ফোঁটা এক ফোঁটায় জমা হয়ে মেঝেতে পড়তে শুরু করল।তার পরপরই সে প্রথম আঙুলটি হাত থেকে আলাদা করে ফেললো।”
“ইতির মুখে কোনো আওয়াজ নেই, কিন্তুু চোখ জোড়ায় হয়তো এক ধরনের নীরব আতং**ক ভেসে উঠেছে।কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে দেওয়ার কারণে সেই আতং**ক দেখা যাচ্ছে না।
নির্জন ইতির মুখের কাছে এসে বললো,
‘ব্যথা হচ্ছে, তাই না?কিন্তুু, তুই চি**ৎকার করতে পারছিস না,একটুও!”
বলেই নির্জন ইতির দ্বিতীয় আঙুলের দিকে মনোযোগ দিলো। এবার ধীর গতিতে,যেন প্রতিটি স্নায়ু কে**টে দিয়ে ছিন্ন করা হচ্ছে, এভাবে ক্ষু**রটা চালাতে লাগল।আঙুল কে**টে যাওয়ার ফলে হাড়ের উপর ছোট ছোট টুকরোগুলো ফুটে উঠতে লাগল।আর নির্জন তৃপ্তির সঙ্গে তার কাজ চালিয়ে গেলো। একটার পর একটা আঙুল আলাদা হয়ে পড়ে থাকছে মেঝেতে, র**ক্তের পিচ্ছিল গন্ধ ঘর জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।”
“তারপর নির্জন ইতির ডান পায়ের দিকে মনোযোগ দিলো। এবার সে তার পায়ের আঙুলগুলো কে**টে ফেলবে।কিন্তু প্রথমে সে একটি মোটা সুই বের করে বললো,
‘আগে একটু মজা করি।’
বলেই সুই টি নিয়ে ইতির পায়ের পাতা ফুটো করে দিলো।প্রতিটা ছিদ্র তার অনুভূতির মধ্যে দিয়ে বিদ্ধ হয়ে যাচ্ছিলো, অথচ মেয়েটি কিছুই করতে পারছিলো না।
এরপর সে প্রথম পায়ের আঙুলটি ধরলো।একটুখানি হাসি দিয়ে ধীরে ধীরে আঙুলের চারপাশে ক্ষু**র চালিয়ে প্রথমে পেশিগুলো কে**টে দিলো, তারপর হাড় টা দড়ির মতো করে পাকিয়ে ছিন্ন করে ফেললো। র**ক্তের ফোয়ারা উঠলো, আর সেই র**ক্ত মেঝেতে ধা*ক্কা খেয়ে ছি*টকে ছড়িয়ে পড়লো। ইতি বুঝতে পারছিলো তার দেহে কী হচ্ছে,কিন্তু সে পাথরের মতো নিশ্চল ছিলো,যেন জীবিত একটি মৃ**তদেহ।”
“প্রতিটা আঙুলই একইভাবে কা**টা হলো, প্রতিটি ক্ষ*তই এক নতুন ব্যথার জন্ম দিচ্ছিলো।কিন্তু সেই ব্যথা প্রকাশের কোনো উপায় ছিলো না।তারপর নির্জন ইতির হাত পা থেকে অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়াতে, খুব দ্রুত ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে দিলো।তবুও র**ক্ত যেনো উপচে পড়ছে।
নির্জন তার প্রতিটা কাজ সূক্ষ্মভাবে সম্পন্ন করে ঘাড় কাত করে বিড়বিড় করে আওড়ালো,
‘তোকে তো ভেবেছিলাম কু**চি কু**চি করে কা**টবো।কিন্তুু যখনই তোর পেটে বাচ্চার কথা শুনলাম,জানিস..তখন একটু মায়া হলো।আহারে.. নিরুপমা কে বিয়ে করার পর থেকে আমার মায়া টা একটু বেড়েছে, বুঝেছিস?চিন্তা করিস না,একটু পর তোর বোধ-শক্তি ফিরে এলে, তুই চি**ৎকার করলেই তোর বাবা-মা এসে তোকে হসপিটালে শিফট করবে।হসপিটালের ডক্টর তোকে বুঝে-শুনে ওষুধ দিবে,যেহেতু তোর বেবি পেটে।আমি চাই, তোর বেবি এই পৃথিবীতে এসে তোর এহেন দশা দেখুক।যদিও তুই এবং সে কখনো জানবে না, কেনো তোর সাথে এমন হয়েছে।কিন্তুু তোর মনে সারাজীবন একটা ভয় কাজ করবে।আর সেটাই হলো তোর সবচেয়ে বড় শাস্তি, হাহাহা..।তাছাড়া তুই আমার চুলে হাত দিয়ে অনেক বড় অপরাধ করেছিস।যেখানে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড দিগন্ত আমাকে স্পর্শ করতে পারে না,সেখানে তোর মতো বিশ্বাসঘা**তক নারীর হাত পড়েছে।এই জন্যই তো কিছুটা চুল কে**টে ফেলেছি।
আচ্ছা,এই টপিক চেঞ্জ।
এই শোন,আমার না অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।এখনই চলে যেতে হবে রে।আমার নিরুপমা আবার আমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ওয়েট করছে।আমি জানি,একটু আগে সে আমার আদর পেতে চেয়েছিলো।কিন্তুু মস্তিষ্কে এতো প্রেশার নিয়ে রোমান্স টা ঠিক জমবে না,বুঝলি?তাই আগে তোর কাছে ছুটে এসেছি।আচ্ছা, যাওয়ার আগে তোকে একটা কবিতা শোনাই।’
‘বলেই পৈ**শাচিক হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে আওড়ালো,
“প্রেম নয়, প্রতিশোধ”
তুমি ভাবলে আমি প্রেমে পড়েছি,
তোমার মায়াবী চোখের মণিতে,
আসলে আমি দেখেছি প্রতারণার ছাপ,
তোমার নীলাভ হৃদয়ে অন্ধকারে।
প্রেম ছিলো না কোনো,শুধু ছিলো এক খেলা,
তোমার প্রতিটি হাসিতে ছিলো ছদ্মবেশ,
আমি বুঝেছিলাম,তুমি শুধু শিকারী,
তাই প্রস্তুত করেছিলাম আমার প্রতিশোধের বেশ।
তোমার বিশ্বাসঘা**তকতা ছিলো পূর্বাভাস,
আমার অন্তরে জন্মেছিলো অগ্নিশিখা,
তুমি ছিলে আমার শত্রু,
প্রেমের মোহে জড়ানো সেই ভ্রান্তিকা।
তোমাকে আমি ভালোবাসিনি,
শুধু দেখেছিলাম,কীভাবে তুমি পু**ড়বে,
আমার চোখে নেই কোনো আবেগ,
তুমি ছিলে শুধু আমার প্রতিশোধের খেলা।
তোমার শেষ এখন হাতের নাগালে,
আমি জানি,তুমি প্রতিটি ক্ষণে ভেবেছো প্রেম,
কিন্তু আমার মনে ছিলো বি**ষ,
যখন করলে তুমি ছলনা,ভেবে নিলাম তুমি শুধু প্রতারণার কারিগর,
আর আমি সেই মৃগয়াকামী নির্জন।” ~মেহের~
🔴সবাই আমার গল্পের গ্রুপে জয়েন করুন👇
https://facebook.com/groups/540631661830855/
#চলবে…
[প্রিয় পাঠকমহল গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকবেন।সবার জন্য ভালোবাসা অবিরাম।আর নিশ্চিন্তে থাকুন,সবাই
সবার কর্মফল ভোগ করবে।]