হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ #পর্বঃ৩৩ #লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

0
2

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩৩
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য]

“ডার্ক কুইন,আমার সামনে এইমুহূর্তে লজ্জা পাওয়া তোমার শোভা পায় না।”

“I am your husband,so from now on,don’t even think about feeling shy.”

“নির্জনের বলা ইংরেজি বাক্যটি নিধি এক কান দিয়ে শুনে, আরেক কান দিয়ে বের করে দিলো।কারণ, সে এখন অন্যদিকে ফিরে লজ্জা নিবারণ করার চেষ্টা করছে।নির্জন যতই লজ্জা পেতে না বলুক,সেতো নারী।আর লজ্জাই তো নারীর একমাত্র ভূষণ।”

“রিমলেস চশমার আড়ালে থাকা এক জোড়া চোখ যেন শকুনের ন্যায় দৃষ্টি ফেলে রেখেছে,লাজুকলতায় লেপ্টে থাকা রমনীর দিকে।”

“নির্জন আনমনে নিজেকেই প্রশ্ন করলো,
‘কেনো সে লজ্জা পাবে?এখন তো আমরা স্বামী-স্ত্রী।এতদিন তার এইসব ড্রামা সহ্য করেছি।কিন্তুু এখন?ইম্পসিবল।’
ভেবেই বাঁকা হাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।তবে এইবার ধীর গতিতে নয়,খুব দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে নিজ বাসস্থানের সামনে এসে থামল।”

“গাড়ি থেকে নেমে নিধির পাশের গেট খুলে দিলো।অতঃপর মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

‘কোলে করে নিবো?নাকি আমার হাতে হাত রেখে হেঁটে যাবে?”

“নিধি মনে মনে ভাবলো,
‘কিছুক্ষণ আগে যেভাবে চুমু দিয়েছে,এখন আবার কোলে?অসম্ভব,এর থেকে হাত ধরে যাবো,সেটাই ভালো হবে।পরে না হয় ফ্রী হয়ে গেলে অগণিত বার কোলে চড়তে পারবো।’
ভেবে আনমনে হাসলো নিধি।’

‘প্রেয়সীর সেই মিষ্টি হাসি নজর এড়ালো না নির্জনের।’

“নিধি নিচুস্বরে বললো,
‘হাত ধরে যাবো।’

“বাঁকা হাসলো নির্জন।সে যেনো এই উত্তর টি জানতো।ভণিতা না করে নিধির হাত ধরলো।বোরকায় আবৃত ভারী ল্যাহেঙ্গাটি এক হাত দিয়ে উঁচিয়ে গাড়ি থেকে নেমে এলো নিধি।তারপর নির্জনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে তার বাহু শক্ত করে ধরলো।আচানক প্রিয়তমার এহেন স্পর্শে ঘুমন্ত অনুভূতি গুলো যেন ধীরে ধীরে জাগ্রত হতে শুরু করলো।এক অমীয় ভালো লাগায় রিনরিনিয়ে উঠলো নির্জনের সর্বাঙ্গ।যার প্রতিটি বাঁকে সুমধুর শিহরণের ছাপ স্পষ্ট।
প্রিয়তমার হাত আরও শক্ত করে বাহুর সাথে মিশিয়ে সদর দরজায় পা রাখলো।
মুচকি হেসে ভাবলো,
‘আজ থেকে এখানেই তোমাকে থাকতে হবে নিরুপমা;আমার ডার্ক কুইন।এই চার দেয়ালে তোমার এবং আমার সুখের বসতি গড়বো।আমাকে খুশি রাখলে, আমার সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে তোমায় পূর্ণ করার চেষ্টা করবো।আর যদি কখনো আমার ভালোবাসাকে বিন্দুমাত্র অবহেলা করো,তবে তার পরিণতি হবে অতি ভ**য়ানক।”

“দরজায় লাগিয়ে রাখা তালা খুলে প্রবেশ করলো একজোড়া মানব-মানবী।এই ছন্নছাড়া জীবনে নতুন করে সুখের সন্ধান পেলো নির্জন।যেটা ছিলো তার কাছে অকল্পনীয়।সে সর্বোচ্চ দিয়ে ধরে রাখবে এই রমনীকে,নিজের কাছে নিজে দৃঢ় সংকল্প করলো সে।”

“বাড়িটিতে ঢুকেই অদ্ভুত অনুভূতি হলো নিধির।আলোকিত হল রুমটি কেমন খাঁ খাঁ করছে।মনে হয় কোনো জনমানবহীন আস্তানায় ঢুকে পড়েছে নিধি।নির্জনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
‘আপনার বাসার মেইড এবং সেবিকা কোথায়?’

“নির্জন নিধির বাহু আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘মেইড রান্না করে দুপুরে চলে যায়।আর সেবিকা মায়ের রুমে থাকে।আচ্ছা, তুমি খুব টায়ার্ড হয়ে গেছো জানপাখি।চলো, আগে ফ্রেশ হয়ে নিবে।তারপর সারারাত না হয় আমরা একে-অপরের মনের কথা আদান-প্রদান করবো।’
বলেই নিধির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকলো।তৎক্ষনাৎ বাঁধা দিলো নিধি।মুচকি হেসে বললো,
‘সেকি!শাশুড়ি মায়ের সাথে দেখা করবেন না?সেতো এখানে আসতে পারবে না।চলুন, দু’জনে গিয়ে তার সাথে দেখা করে আসি।নতুন জীবন টা মায়ের দোয়া নিয়ে শুরু করতে চাই।সে হয়তো কথা বলতে পারেনা।মনে মনে দোয়া তো করতেই পারবে।”

“নিধির এহেন কথায় ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে মেজাজ বিগড়ে গেলো নির্জনের।পরক্ষণেই ‘হৃদয়’ ভেতর থেকে বলে উঠলো,
‘উহুম,এখন নয়।এখনও পুরোপুরি মিশে যাওয়া বাকি আছে।কন্ট্রোল ইউরসেল্ফ।’

” নির্জন তার চোখজোড়া একবার বন্ধ করে, ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলো নিজের রাগকে।কিছুটা সফল হয়ে,নিধির দিকে তাকিয়ে মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে শীতল স্বরে বললো,

‘মা রাত ৮টার পর ঘুমিয়ে থাকে।তার মেডিসিনের মধ্যে ঘুমের ঔষুধ অন্যতম।আর একবার তার ঘুম ভে**ঙে গেলে, সারা রাতেও ঘুমাতে পারে না।তাই আজ তার সাথে দেখা বা কথা বলার দরকার নেই।আগামীকাল দেখা করবে।এখন চলো।’

“নিধি নাছোড়বান্দা।সে আবারও বলে উঠলো,
‘ঠিকাছে,তার সাথে কথা বলবো না।দূর থেকে তো দেখতেই পারি,তাই না?’

“নির্জন ভ্রুকুটি করে কিছু একটা ভেবে বললো,
‘ওকে,অ্যাজ ইউর উইশ।’

“সায়রা বেগমের রুমের দরজায় কড়া নাড়তেই,বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো সেবিকার।সে জানে,আজ নির্জনের বিয়ে।কিন্তুু এতো রাতে নির্জন কখনো এই রুমে আসে না।পরক্ষণেই তার ইন্দ্রীয়গুলো সজাগ হলো।ভাবলো,

‘হয়তো নতুন বউকে দেখা করাতে নিয়ে এসেছে।’

“হ্যা,তার ভাবনাই সঠিক হলো।বাইরে থেকে নিধির কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে।সেবিকার মুখে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা ফুটে উঠলো।মনে মনে ভাবলো,
‘যাক,এতদিনে এই বাড়িতে একজন কথা বলার সঙ্গী পেয়েছি।’
ভেবে তড়িৎ গতিতে বিছানা থেকে নেমে ধীর শব্দে দরজা খুলে নিধি কে দেখে খুশির ঝলক ফুটিয়ে বললো,
‘মাশাআল্লাহ।কতো মায়াবী তুমি।মানতে হবে,স্যারের পছন্দ আছে।’

“হায়!সেবিকা হয়তো জানে না,কি কথা বলেছে সে।’

“নির্জন কপাল কুঁচকে বললো,
‘আমি আমার স্ত্রীকে মায়ের সাথে দেখা করানোর জন্য এসেছি।’

“নির্জনের গম্ভীর স্বরে কথা শুনে,মুখমণ্ডল মলিন হয়ে গেলো সেবিকার।সে রুমের ভেতরে গিয়ে এক কোণে দাঁড়িয়ে রইলো।এই মানুষটা কে সে অকারণেই ভয় পায়।”

“নির্জন নিধির হাত ধরে তার মায়ের বিছানার কাছে নিয়ে গিয়ে মৃদুস্বরে বললো,
‘মা কে দেখো।তবে এতটা গভীর ভাবে নয়।’

“নির্জনের এহেন কথায় কর্নপাত করলো না নিধি।সে শয্যাশায়ী অর্ধবয়স্ক রমনীকে দেখলো।চুলগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ পাক ধরেছে।শুষ্ক ঠোঁট জোড়া।তবে চেহারায় এক মায়াবী ছাপ।কিন্তুু ঘুমিয়ে থাকার কারণে পুরোপুরি সৌন্দর্য যেন ফুটে উঠছে না।”

“নিধির এই মুহূর্তে তার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে।কিন্তুু কিভাবে কথা বলবে সে?শয্যাশায়ী রমনী যে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।”
মনে মনে ভাবলো,
‘আগামীকাল সকালে অনেক কথা বলবে তার শাশুড়ির সাথে।শাশুড়ি মা চোখের ইশারায় কথা বলবে।আর সে মুখ দিয়ে বকবক করবে।’
ভেবে নিঃশব্দে মুচকি হাসলো নিধি।সেই মন ভুলানো হাসির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো এক হিং**স্র মানব।যার মস্তিষ্কে এই মুহূর্তে দুষ্টু পোকাগুলো কিলবিল করছে।তারা বারবার করে বলছে,

‘এভাবে চুপ করে থেকো না।নইলে, খুব তাড়াতাড়ি তাকে হারিয়ে ফেলবে।’

“বি**ষাক্ত পোকা গুলোর সাথে দিব্যশক্তি দিয়ে কথা বললো নির্জন।
মনে মনে বললো,
‘She is only mine.’

———-
“রাত ১টা বেজে ৩মিনিট।
ফুলে সজ্জিত বিছানায় খয়েরী রঙা শাড়ি পড়ে,মাথায় ঘোমটা দিয়ে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে তোহা।শরীরে তার অদ্ভুত কাঁপুনি,মুখে তার লাজুকতার ছাপ বিদ্যমান।গাড়ি থেকে নেমে মাহির সবার সামনে তাকে হাত ধরে নিয়ে এলেও,ফুলসজ্জিত রুমের সামনে এসে তাকে পাঁজা কোলে নিয়ে প্রবেশ করেছে।ঐ সময়টাতে মাহিরের কাজিনরা হৈ-হুল্লোড় করে উঠেছে।সবার মুখে একটাই কথা,
‘আমাদের ডাক্তার ভাই যে এতটা রোমান্টিক আগে তো জানতাম না।বাহ!বাহ!”

“মাহির মুচকি হেসে রসিকতা করে বলেছে,

”এখন তো সবে শুরু।ধীরে ধীরে আরও ভালো ভাবে জানতে পারবে।যদিও তোমাদের সামনে কিছুটা হাইড করে রাখবো, হিহিহি।”

“মাহিরের এহেন কথায় সবার থেকে দ্বিগুণ লজ্জায় মিইয়ে গেলো তোহা।মনে মনে ভাবলো,
‘হায় আল্লাহ!শেষ পর্যন্ত কাজিনদের সামনেও আমায় লজ্জায় ফেললো?এ কার চক্করে পড়লাম আমি!”

“বাসর ঘরে ঢোকার সময় কাজিনরা টাকা নেওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়লো।কিন্তুু মাহিরও কম নয়,সে কিছুতেই টাকা দিবে না।অকপটে বলে দিলো,

‘ওগুলো আগের যুগে ছিলো,এখন ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল বাসর হবে।এইসব ভ**ন্ডামি ছেড়ে এখান থেকে তোমরা চলে যাও।’

“মাহিরের এহেন কথায় ভড়কে গেলো সবাই।একজন মেয়ে কাজিন কটমটিয়ে বললো,

‘ওল্ড অর ডিজিটাল’ কাহিনী তো একই।অতশত বুঝি না,আমাদের টাকা চাই।নইলে ভাবির সাথে আজ আমি ঘুমাবো।’

“মেয়েটির সাথে তাল মিলিয়ে সবাই একই কথা বললো।
বেচারা মাহির টাকার জন্য কিছুতেই এই মধুচন্দ্রিমা হাত ছাড়া করবে না।তাছাড়া অনেক রাত হয়ে গেছে।যত সময় বাড়বে তত লস প্রজেক্ট।অগত্যা আর কাজিনদের সাথে ঝামেলা না করে মাহিরের পকেটে যা ছিলো তাই দিয়ে দিলো।যদিও এতে সবার মন ভরেনি।তবুও যা দিয়েছে,এটা দিয়ে তারা ড্রিংকু পার্টি করবে।’
বলেই হৈ হৈ করে স্থান ত্যাগ করলো।ওরা যেতেই হাফ ছেড়ে বাঁচল মাহির।ঐ মুহুর্তে তোহার লাজুক চেহারাটা দেখার মতো ছিলো।’
কথাগুলো ভেবে মুচকি হাসলো তোহা।কিছুক্ষণ আগে ফ্রেশ হয়েছে সে।মাহির বলেছে,সেও ফ্রেশ হবে,তারপর নামাজ পড়ে নতুন জীবন শুরু করবে।”

“তোহার ভাবনার জগতে কড়া নাড়লো ওর হাতে মাহিরের আলতো স্পর্শ।পুরুষালি শক্ত হাতের আলতো স্পর্শ পেতেই,অচেনা অনুভূতি ঘিরে ধরলো তোহা কে।মাহিরের স্পর্শের সূচনায় কিঞ্চিৎ কম্পন হলো তোহার শরীরে।নিচু স্বরে কিছু বলতে যাবে,তখনই মাহির ঘোমটা সরিয়ে তোহার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,

‘এতো নিয়মকানুন মেনে ঘোমটা দেওয়া লাগবে না।আমি তোমায় আগেও অনেকবার দেখেছি।তোমার আপাদমস্তক আমার মুখস্থ হয়ে গেছে।আজ আরও ভালো করে মুখস্থ করবো স্বপ্নচারিনী।’
বলেই ঠোঁট টিপে হাসলো মাহির।”

“মাহিরের এহেন কথায় হকচকিয়ে গেলো তোহা।কোথায় ভেবেছিলো,ওয়াশরুম থেকে এসে নামাজ পড়ার কথা বলবে।কিন্তুু সেটা না বলে,প্রথম দর্শনেই ঠোঁট কা**টা কথা!’
ভেবে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারলো না তোহা।”

“হঠাৎ মাহির তোহার হাতে আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,
‘একটু পরে অনেক কিছু ভাবার সময় পাবে,আমিও অনেক কিছু করার সময় পাবো।তার আগে নামাজ টা পড়ে নেই।’
বলেই তোহার হাত ধরে মুচকি হাসলো।”

“বেচারি তোহা ভ্যাবলার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মাথা ঝাঁকিয়ে মাহিরের সাথে নামাজ পড়লো।নামাজ শেষে মাহির মোনাজাতে আল্লাহর নিকট দু’জনের কল্যাণকর জীবনের জন্য অনেক বাক্যে প্রার্থনা করলো।
সবকিছু শেষ করে মাহির তোহার হাত ধরে বেলকনিতে নিয়ে গেলো।”

“আজ আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন।মেঘের আড়ালে কয়েকটা তারা দেখা যাচ্ছে।আবার মেঘগুলো তারাগুলো কে কালো ধোঁয়ায় ঢেকে দিচ্ছে।”

“খোলা বেলকনির গ্রীলে ডান হাতের কনুই ভর দিয়ে, চিবুকে হাত রেখে মাহির শীতল স্বরে বললো,
‘জানো স্বপ্নচারিনী,প্রথমবার তোমায় কোথায় দেখেছিলাম?”

“তোহা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘কোথায়?’

“হাহাহা..চলনবিলের নদীতে।তুৃমি সাঁতার কাঁটতে পারছিলে না।আমি ওইদিক দিয়ে আরেকটি নৌকায় যাচ্ছিলাম।তখনই তোমাকে এভাবে দেখতে পেয়ে নৌকা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলাম।তারপর দেখি সেখানে পা রাখার মতো জায়গা থাকা শর্তেও তুমি চি**ৎকার করছিলে, হাহাহা..।বিশ্বাস করো, ওই ফানি ব্যাপারটা এখনও ভুলতে পারি না।নিয়নের হালকা আলোয় তোমার চেহারা টা পুরোপুরি দেখতে পারিনি।তবে সেদিনও আমি তোমায় স্পর্শ করেছিলাম।ভেবেছিলাম, হয়তো আর কোনোদিন আমাদের দেখা হবে না।কিন্তুু ভাগ্য আমাদের আবার এক করে দিয়েছে।আমি আবার তোমার দেখা পেলাম,আমার মায়ের মাধ্যমে।তোমাকে দেখতে গিয়ে আমার কিছুটা সন্দেহ হয়েছিলো।যখন তোমায় জিজ্ঞেস করলাম,তখন তোমার উত্তর পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছিলাম।ভেবেছিলাম, আজকের রাতটি জীবনে এলে তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো।আমি তোমার সেই স্বপ্ন পুরুষ.. স্বপ্নচারিনী।সারপ্রাইজ টা কেমন হলো?”

“মাহিরের কথার মাঝে এতক্ষণ গভীর ভাবে ডুবেছিলো তোহা।হা.. করে তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে।ওর ভাবনাগুলো যেনো শূন্যে ভাসছে।বারবার একটা কথা মনে দামামার মতো বেজে চলছে,
‘কিভাবে সম্ভব?’

“প্রিয় নারীটির ভাবনাগুলো কিছুটা আঁচ করে মুচকি হাসলো মাহির।তোহার মুখের সামনে তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে চুটকি বাজিয়ে বললো,
‘কোথায় হারিয়ে গেলে তোহা রানী?চলনবিলের সেই নদীতে?হাহাহা।’

“মাহিরের প্রাণোচ্ছল হাসিতে ধ্যান ভা**ঙলো তোহার।মুখে হাসির ঝলক ফুটিয়ে বললো,
‘ভীষণ খুশি হয়েছি।এটা সত্যি সারপ্রাইজ ছিলো।আমিতো সেদিনের কথা ভুলে গিয়েছিলাম।সেই অচেনা মানুষটি আপনি ছিলেন,আর আজ আমি আপনার স্ত্রী?ভাবতেই যেন গা ছমছম করছে।”

“তোহার কথা শুনে দুষ্টু হেসে মাহির হঠাৎ করে তোহা কে কোলে তুলে নিয়ে, কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

‘একটু পর আরও ছমছম করবে স্বপ্নচারিনী।সবে তো শুরু।’
বলেই রুমে প্রবেশ করলো।এদিকে তোহা লজ্জায় সাতরঙা। মাহির তোহার ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিলো,অতঃপর মৃদুস্বরে বললো,

“চুম্বনের রেশ”

চুম্বনের ছোঁয়ায় মেলে,
অন্তরঙ্গ সুরের অনুভূতি,
যেন প্রতিটি স্পর্শে উন্মোচিত হয়,
এক নতুন প্রেমের বিশালতা।

তোমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলে,
মধুরতার লহর বয়ে যায়,
যেন প্রতিটি চুম্বন দিয়ে,
রচিত হয় এক নতুন সুরের কাব্য।

প্রেমের এই অমৃত সঙ্গমে,
আমরা হারিয়ে যাই একে অপরের মধ্যে,
চুম্বনের সেই জাদুকরী স্পর্শে,
তোমার ভালোবাসার উজ্জ্বল দ্যুতিতে।”

~মেহের~

“মাহির পুরো ঘরটাকে স্বপ্নের মতো সাজিয়ে তুলেছে তোহার জন্য। সারা ঘর জুড়ে সাদা রজনীগন্ধার মালাগুলো এমনভাবে টাঙানো, যেন প্রতিটি কোণ থেকে সুবাস ভেসে আসছে। সিলিং থেকে ঝুলছে সূক্ষ্ম কৃত্রিম ফুলের তোড়া, যা ঘরের মৃদু আলোয় রঙিন ছটায় ঝিলমিল করছে। বিছানার চারপাশে সিল্কের পাতলা পর্দা নেমে এসে সৃষ্টি করেছে এক স্বর্গীয় আভা, যার উপরে রজনীগন্ধা আর লাল গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে আছে ভালোবাসার নীরব সাক্ষী হয়ে। ছোট্ট টেবিলের উপর কয়েকটি সুগন্ধি মোমবাতি জ্বলছে, তাদের মৃদু আলো আর ঘ্রাণে ঘরের পরিবেশকে আরো মোহনীয় করে তুলেছে।”

“মাহির জানে, এই সাজসজ্জা তোহার মনে এক স্বপ্নিল আবেশ এনে দেবে, রজনীগন্ধার সুবাসে মিশে যাবে তাদের ভালবাসার মিষ্টি সুর।”

“কিছুক্ষণ আগে মাহিরের ঠোঁটের মৃদু স্পর্শ এবং ঠোঁট কা**টা কবিতা শুনে, লজ্জায় চোখ বন্ধ করে রেখেছে তোহা।প্রিয়জনের প্রথম স্পর্শ,প্রথম কাছাকাছি এসে কথপোকথন সবকিছুই যেন এক অন্যরকম অনুভূতির জন্ম দেয়।তোহার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।”

“মাহির তোহা কে বিছানায় বসিয়ে ওর মাথা বুকের সাথে মিশিয়ে বললো,
‘সেদিন আমার ইংরেজি কবিতাটা অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছিলো।তুমি হয়তো ভুলে গেছো,কিন্তুু আমার সবকিছু মনে আছে।আমি এখন সেটার বাকি অংশটুকু আবৃত্তি করে শোনাবো,তারপর..

বলেই মাহির মুচকি হেসে আবৃত্তি করলো,

“Hug me
But don’t let go,,
I want you to stay
I want you to know

I need you with me
You make me feel bright,
So just hug me
Right through the night

It’s what I want
Maybe even a kiss,
You make me feel special
I can’t turn away.”

“মাহিরের মুখনিঃসৃত রোমান্টিক কবিতা শুনে, লজ্জায় তার বুকে আরও মিশে গেলো তোহা।”

“তোহা বুকের সাথে এতটা মিশে যাওয়ায় শেষ..মাহির শেষ…
অবাধ্য অনুভূতি গুলোকে হারিয়ে, প্রেয়সীর ঠোঁট জোড়া আবদ্ধ করে নিলো।উ**ন্মাদের ন্যায় ভরিয়ে দিতে থাকলো আদরে।সন্তর্পণে পোষ মানিয়ে রাখা অনুভূতি গুলো খাঁচা ছেড়ে যেনো উড়াল দিলো।নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না তোহা।অবশেষে সেও হার মানল সেই পা**গল করা স্পর্শে।দু’জন যেন দু’জনের হৃদস্পন্দন গভীরভাবে অনুভব করতে থাকল।অবশেষে সীমাহীন ভালোবাসার অমীয় সুধা পান করলো দু’জনে।ডুব দিলো প্রেম সায়রে,হারিয়ে গেলো এক অন্ধকারাচ্ছন্ন মোহে।”

—————
“এদিকে বিয়ে বাড়ি থেকে এসে দিগন্ত নাদিয়া কে রুমে ঢুকতে দেয় নি।বাসায় এসে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।বলেছে,
‘সে একটা চমলক্ক সারপ্রাইজ দিবে,অথচ নাদিয়া বেচারি ঘুমে টালমাটাল।কিছুক্ষণ দরজা ধা”ক্কা”ধা””ক্কি করে সাড়াশব্দ না পেয়ে,ড্রয়িং রুমে গিয়ে সোফায় কাত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে নাদিয়া।”

“এদিকে পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কিছু ঠিকঠাক করে পুরো রুমে সূক্ষ্মভাবে চোখ বুলালো দিগন্ত।
দিগন্ত আগেই পরিকল্পনা করেছিলো,তার বন্ধুর মতো সেও আজ বাসর করবে,তবে অন্যভাবে।তাই সে নাদিয়ার আড়ালে আগে থেকে সব জিনিস পত্র খাটের নিচে লুকিয়ে রেখেছিলো।অবশেষে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে।সে পুরো রুম সুন্দর করে সাজিয়েছে।
তবে দিগন্তের সাজানোর ধরণই আলাদা।ঘরের প্রতিটি কোণ রঙিন বেলুনে ভরপুর, যেখানে বেলুনগুলো নানা মজার আকারে বাঁধা। কিছু বেলুনে হাসির মুখ আঁকা, কিছুতে আবার কিউট কার্টুন চরিত্রের চেহারা। সিলিং থেকে ঝুলছে বেলুনের ঝালর, যা হাওয়ায় দুলছে। ফুলের জায়গায় দিগন্ত ব্যবহার করেছে কৃত্রিম ফুল, যেগুলো থেকে হঠাৎ হঠাৎ কনফেটি বের হচ্ছে, সব দেখে মনে হয় যেন কোনো কার্টুনি পার্টির মধ্যে ঢুকে পড়েছে। বিছানার চারপাশে জড়িয়ে রাখা আছে রঙিন স্ট্রিং লাইট, যা ঘরের মধ্যে এক হাসির আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। বালিশের উপর রাখা ছোট্ট একটি টেডি বিয়ার, তার হাতে একটি লাল হৃদয়, যেটার গায়ে লেখা,

‘তোমার হাসিই আমার সুখ।’

“পুরো রুম ভালো ভাবে দেখে মুচকি হেসে দিগন্ত দরজা খুলে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখলো নাদিয়া ঘুমিয়ে পড়েছে।কিন্তুু এই আরামের ঘুম সে কিছুতেই হতে দিবেনা।খুব কষ্ট করেছে সে।তার কষ্টের উশুল তো করেই ছাড়বে।দ্রুত গতিতে নাদিয়ার কাছে গিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে কোলে তুলে নিয়ে, নিজের রুমের দিকে নিয়ে গেলো।
আকস্মিক ঘটনায় ঘুম ভে**ঙে গেলো নাদিয়ার।নিজেকে দিগন্তের কোলে দেখে ঘুম ঘুম স্বরে বললো,

‘একি?হচ্ছে টা কি?রাত-বিরেতে কি শুরু করেছো?নামাও আমায়।’

“দিগন্ত নাদিয়ার গালে চুমু দিয়ে বললো,
‘এত পরিশ্রম কিছুতেই বৃথা যেতে দেবো না।তাড়াতাড়ি চোখ খোলো।’
বলতে বলতে রুমে নিয়ে নাদিয়া কে কোল থেকে নামালো।”

“পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে দিগন্তের এই ফানি সাজসজ্জা দেখে, বিস্ময়ে মাথা ঘোরার উপক্রম হলো নাদিয়ার।বিস্ময়ের স্বরে বললো,
‘এটা কি করেছো তুমি?
আমাদের রুম টাকে এভাবে কার্টুনের মতো সাজিয়েছো কেনো?”

“নাদিয়ার এহেন কথায় তেঁতে উঠলো দিগন্ত।ওর হাত ধরে বললো,
‘কোথায় একটু প্রশংসা করবে,সেটা না করে অদ্ভুত প্রশ্ন করছো।এই জন্যই তো তোমাকে নিরামিষভোজী বলি।আচ্ছা শোনো,কিছুদিন পর এমনিতেও আমাদের ঘরে কার্টুন বেবি আসবে।তাই আগেই একটু প্রস্তুুতি নিলাম।কেমন হয়েছে হানি?”

‘নাদিয়া পুরো রুমে সূক্ষ্মভাবে চোখ বুলিয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,
‘দারুণ হয়েছে,একদম ইউনিক, হাহাহা।’

“দিগন্ত নাদিয়ার হাত আরেকটু জোরে চেপে ধরে বললো,
‘হয়েছে, হাসাহাসি পরে হবে।অনেক রাত হয়ে গেছে,এখন তোমাকে কিছু কথা বলবো,মনোযোগ দিয়ে শুনবে।”

‘হুম বলো।’

“দিগন্ত নাদিয়ার দুই কাঁধে হাত রেখে মিষ্টি স্বরে বললো,

‘চলো, কল্পনা করি, আমরা দু’জনে মিলে একান্তে কোথাও বসে আছি।একটি সুন্দর চাঁদনী রাত, চারপাশে মৃদু বাতাস বইছে, আর দূরে নদীর কলকল ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। আমরা হাত ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি, যেখানে অসংখ্য তারা আমাদের জন্য ঝিলমিল করছে। কিছু সুমিষ্ট কথা আর ভালোবাসায় ভরা হাসির আদান-প্রদান চলছে… কেমন লাগছে?’

” নাদিয়া হা করে তাকিয়ে দিগন্তের কপালে হাত দিয়ে বললো,
‘হ্যা ভালো,কিন্তুু তোমার তো জ্বর আসেনি,হঠাৎ এগুলো বলছো কেনো?’

‘তেঁতে উঠলো দিগন্ত।কটমটিয়ে বললো,
‘মানে?তোমার কি আমার মুখে রোমান্টিক কথা শুনে অবাক লাগছে?”

‘না, ঠিক তা নয়।কিন্তুু তুমি তো সবসময় অন্য কথা বলো।’

‘কি কথা বলি?’

‘ওই যে..অন্য কথা।আচ্ছা, তুমি হঠাৎ এতো সুন্দর করে রুম সাজালে,তো এখন কি করবে?’

‘নতুন করে বাসর করবো।’

‘অ্যা?নতুন করে বাসর মানে?আগে কি করেছো?’

“দিগন্তের কা**টকা**ট জবাব,
‘আগের টা মনের মতো হয় নি।আজ মনের মতো হবে।তাছাড়া ইদানীং দেখছি তুমি আমাকে পাত্তাই দাও না।”

“দিগন্তের এহেন কথায় বিস্ময়ের শেষ সীমানায় পৌঁছালো নাদিয়া।বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,

‘তুমি কি আমার সাথে মজা করছো?আমি তোমাকে পাত্তা দেই না?নাকি তুৃমি আমার কথা কে পাত্তা দাও না?ব্যাপারটা কেমন ফানি হয়ে গেলো না?’

‘কি?আমার তোমাকে জোকার মনে হয়?ওকে দেখাচ্ছি তোমাকে জোকারের জোকারগিরি।’
বলেই নাদিয়ার হাত ধরে টেনে বিছানায় বসিয়ে ওর শরীরে সুড়সুড়ি দিতে থাকল।’

” দিগন্তের আকস্মিক এহেন কান্ডে নাদিয়া হাসতে হাসতে শেষ।এক পর্যায়ে বললো,
‘প্লিজ জানু,আমায় ছাড়ো।আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।’

“দিগন্তের সুড়সুড়ি চলমান।দুষ্টু হেসে বললো,
‘আগে বলো,’আমি তোমার রোমান্টিক স্বামী,আর তুমি আমার নিরামিষ হানি।আমরা এখন কিউট কার্টুন আনার প্রস্তুুতি নিবো।’বললে ছাড়বো।”

“নাদিয়া দিশেহারা হয়ে দিগন্তের বলা কথা গুলো গড়গড় করে বলে দিলো।অবশেষে দিগন্ত নাদিয়াকে ছাড়তেই হাফ ছেড়ে বাঁচল নাদিয়া।তবে সেটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য।পরক্ষণেই নাদিয়ার অধরে অধর মিশিয়ে দিলো দিগন্ত।ব্যাস,এতো কষ্ট তো উশুল করতেই হবে।
বেচারি নাদিয়া বরাবরের মতো এবারেও দিগন্তের গভীর স্পর্শে হার মানলো।
নাদিয়া ধীরে ধীরে দিগন্তের শরীরে আলিঙ্গন করে, তার উষ্ণতা আর নিরাপত্তা খুঁজে পায়। দিগন্ত তার চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয়, তার গালের ওপর আলতো চুম্বন করে। তারা একে অপরের বাহুডোরে হারিয়ে যায়, সময় যেন থেমে থাকে তাদের জন্য।”

“মিলনের এই মুহূর্তে তাদের মধ্যে কোন শব্দ নেই, শুধু হৃদয়ের গভীর থেকে বেরিয়ে আসা নিঃশ্বাস আর মৃদু গুঞ্জন। এই রাত্রি, এই ঘর, এই মুহূর্ত সব কিছু যেন তাদের প্রেমের সাক্ষী হয়ে থাকে, এক চিরন্তন প্রেমের কাহিনী রচনা করে।”

————
“প্রায় ১ঘন্টা যাবৎ নিধির সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে নির্জন।ঘড়িতে বাজে রাত ২টা ৬মিনিট।”

“নির্জন নিধির জন্য একটি অত্যন্ত আভিজাত্যমণ্ডিত রাতের আয়োজন করেছে। পুরো বাসরটি সাজানো হয়েছে কালো রঙের কৃত্রিম গোলাপ দিয়ে, যা একটি গাঢ় ও রহস্যময় পরিবেশ তৈরি করেছে। গোলাপগুলোর উপরে নরম সোনালী আলো ফেলে থাকা হালকা মোমবাতির আলো চারপাশে এক ধরণের স্নিগ্ধতা এনে দিয়েছে।”

“বাসরের কেন্দ্রস্থলে কালো গোলাপের পাপড়ি দিয়ে বিছানা সাজানো, যা সিল্কের কালো চাদরে মোড়া। বিছানার চারপাশে সুগন্ধি ফুল ও পাতার অঙ্গসজ্জা দেওয়া হয়েছে। নির্জন নিজ হাতে নিধির মাথায় সোনালী ক্রাউন পরিয়ে দিয়েছে, যা স্টোন ও রূপার এক অনবদ্য সম্মিলন। ক্রাউনের নকশা আভিজাত্যপূর্ণ, যে তা নিধির সৌন্দর্যকে আরো প্রাত্যহিক ও রাজকীয় করে তুলেছে।”

“এই এক ঘন্টায় নিধি অনর্গল কথা বললেও,রিমলেস চশমার আড়ালে নির্জন একমনে তাকিয়ে থেকেছে নিধির দিকে।বারংবার বলে ফেলেছে,
‘কালো পোশাক,সোনালী ক্রাউন পরিহিত তোমাকে এখন আঁধার রাতের রানীর মতো লাগছে।তুমি আমার ডার্ক কুইন।”

“নির্জনের প্রশংসায় বারকয়েক মুচকি হেসেছে নিধি।এ সুখ যেন তার স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর।আহ!কত সুখ,কত শান্তি।নিজের ওপর নিজেরই কিঞ্চিৎ ঈর্ষা হলো নিধির।”

‘নির্জনের এই নিখুঁত আয়োজন তার প্রেমের গভীরতা এবং নিধির প্রতি তার শ্রদ্ধার নিদর্শন। এই মুহূর্তটি যেন একটি চিরকালীন প্রেমের প্রতীক, যেখানে কালো রঙের গোলাপ এবং সোনালী ক্রাউন এক অমোঘ রোমান্সের চিত্র তুলে ধরে।’

‘নিধিকে মনের দিক থেকে কিছুটা ফ্রী করে,মাইন্ড কন্ট্রোল করে এক পর্যারে নিধির সর্বাঙ্গে ছুঁয়ে দিতে থাকল নির্জন।’

“নির্জনের এহেন গভীর স্পর্শে ঈষৎ কেঁপে উঠলো নিধি।অতিরিক্ত লজ্জায় কোনোরকমে নিজেকে সংযত করে বললো,
‘আচ্ছা,আপনি সবকিছু কালো রঙের জিনিস দিয়ে সাজিয়েছেন কেনো?
আমার তো লাল গোলাপ পছন্দ।”

“নির্জনের গভীর অনুভূতিতে ব্যাঘাত ঘটালো নিধি।নিধির ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট স্পর্শ করে বললো,
‘কিন্তুু আমার তো কালো গোলাপ আর লাল র**ক্ত পছন্দ।’

” মানে?”

“হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।নিধির গালে ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া দিয়ে বললো,
‘আমার লাল র**ক্তজবা পছন্দ।’

“নিধি স্বাভাবিক স্বরে বললো,
‘ওহ।’

“নির্জনের স্পর্শ আরও গভীর হতে থাকলো।এইবার নিধি তো লজ্জায় পুরোপুরি শেষ।
নিধি কে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে, বিরক্ত হলো নির্জন।চশমা খুলে বালিশের একপাশে রেখে নিধিকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে হাস্কি স্বরে বললো,

“তুমি কি মৃদু কাঁপছ?
পৃথিবীও কি কিছুটা টলছে নাকি?
পোষ মানা নিঃশ্বাস গুলো?
খুব বেশি বেপরোয়া, অবাধ্য, চঞ্চল!
আর আধবোজা চোখের পাতারা?
তির তির করে কাঁপছে!
সে পাতার মর্মরধ্বনি আবার হৃদয়েও বাজছে!
তবে নিশ্চিত কেউ তোমার ঠোঁটের তৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত
সে তোমায় লুট করে নিবে, সে তোমায় শেষ করে দিবে…”

“নির্জনের কবিতা শুনে নিধির শরীরের কম্পন যেনো দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেলো।
নির্জন এইবার নিজের রাগ কে তীব্র হতে দিলো না।বিশাল ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে বললো,

‘ওকে, ওকে তুমি আরেকটু স্বাভাবিক হও,তারপর..আচ্ছা আজ তো আমাদের বাসর রাত।আমি তো তোমাকে বেশ কয়েকবার গান শুনিয়েছি।এইবার তুমি শোনাও।হুম,শুরু করো।এখন এটা বলো না যে,গান গাইতেও লজ্জা লাগছে।’

“নির্জনের এহেন কথায় নিধি কিছুটা স্বাভাবিক হলো।ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে মুচকি হেসে, নির্জনের বুকে মাথা রেখে গেয়ে উঠলো,

🎶বাতাসে গুনগুন, এসেছে ফাগুন
বুঝিনি তোমার শুধু ছোঁয়ায় এত যে আগুন..(২)

ও এলোমেলো হয়ে যায় মন, কেন আজ বুঝি না
দাবানল যেন ছড়ালো পার করে সীমানা
শ্বাপদের মতো হানা দেয় এ মনের কামনা
নিজেকেই দেখে লাগে আজ
অচেনা, অচেনা, অচেনা
বাতাসে গুনগুন-🎶

“হায়!কি গান…গান গেয়ে লজ্জায় নিজেই শেষ হতে থাকলো নিধি। নির্জন তার ঠোঁট দিয়ে প্রথমে নিধির কাঁধে আদর করতে শুরু করলো।
তার ঠোঁটের স্পর্শ নিধির গলায় চলে আসে,তার ঘ্রাণে মনোমুগ্ধকর স্নিগ্ধতা তৈরি হয়।যেন প্রতিটি স্পর্শের মাধ্যমে তার অন্তরঙ্গ অনুভূতি প্রকাশ করছে।নির্জনের সাথে নিধিও যেন একই স্পর্শে মত্ত হতে থাকল।নির্জন নিধির কোমরে মৃদু করে জড়িয়ে ধরলো।
দুটি আত্মার সঙ্গমে, যেখানে গহীন সত্তা একে অপরকে অন্তরঙ্গভাবে স্পর্শ করে,
প্রেমের অগ্নিতে ভাসমান এই গভীর মিলনে, সীমাহীন সমর্পণ ঘটলো।
শরীরের গভীরে প্রতিটি সঞ্চালন, একে অপরের অন্তরের অন্ধকারকে আলোকিত করে তুললো।
মিলনের এই গভীর চাহনিতে, সৃষ্টি হয় এক অমর, অদেখা,অন্ধকার বন্ধন।”

———-
“সুমধুর একটি রাত পেরিয়ে ভোর হলো।
নির্জনের আগেই নিধি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়।অতঃপর নির্জনের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে,সরাসরি শাশুড়ি মায়ের রুমের সামনে গেলো।কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে বুঝলো,হয়তো ঘুমিয়ে আছে।তাই নিধি কিচেনে গেলো।রাতে নির্জন নিধি কে সবকিছু দেখিয়ে দিয়েছে।নিধি নির্জন আর ওর জন্য চা বানালো,নুডলস রান্না করলো।আপাতত আর কিছু খুঁজে পেলো না সে।
হঠাৎ, নির্জন নিধি কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে চুমু দিয়ে ঘুমঘুম স্বরে বললো,

‘তুমি কিচেনে এসেছো কেনো ডার্ক কুইন?একটু পর তো মেইড আসবে।’

“নিধি নির্জনের দিকে ফিরে মুচকি হেসে বললো,
‘হ্যা,জানি।কিন্তুু আমার খুব ক্ষুধা লেগেছিলো।তাই সামনে যা পেয়েছি তাই বানিয়ে নিলাম।তাছাড়া এই বাসায় যেহেতু কোনো আয়োজন হবে না,তাই ভাবছি আজ তোহার বৌভাতে আমরা দু’জনে যাবো।ওকে গিয়ে সারপ্রাইজ দিবো।দারুণ হবে তাই না?”

“নিধির মুখে এহেন কথা শুনে নির্জনের ঘুম উবে গেলো।
বাঁকা হেসে বললো,
‘ওকে জানপাখি,তুমি যেমনটা চাও।’
বলেই নিধি কে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।”

“নির্জনের চোখে এক অদ্ভুত উন্মাদনার ঝিলিক।বিয়ের পরদিনই নিধি তার বোনের বাড়ি বৌভাতের অনুষ্ঠানে যেতে চায়, কিন্তুু নির্জন তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।তার মনে ভ**য়ানক সন্দেহ, অন্যরকম এক অধিকারবোধ দেখা দিয়েছে।সে কিছুতেই নিধিকে ছাড়বে না।”

“সকালের খাবারের পর নির্জন নীরবে বসে রইল, চোখেমুখে ক্রোধের ছাপ স্পষ্ট।নিধি যখন ঘরে ঢুকলো,নির্জন মৃদুস্বরে বিড়বিড় করলো,
‘তুৃমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে না ডার্ক কুইন।তুমি এখানেই থাকবে।’
বলেই বাঁকা হাসি দিলো।”

“নির্জনের বিড়বিড় করে বলা কথাগুলো নিধির কর্ণকুহরে পৌঁছালো না।”

“নির্জন কিচেনে গিয়ে সরিষার তেলের বোতল খুললো। কিছু পাঁচফোড়ন আর লংকার গুঁড়ো বের করলো। একটি মাঝারি সাইজের পাত্রে এক কাপ সরিষার তেল ঢেলে গরম করতে দিলো।তার মধ্যে একেক করে দিলো ১চামচ পাঁচফোড়ন,৩চামচ লংকার গুঁড়ো,১চামচ লবণের মিশ্রণে তীব্র গন্ধে পুরো কিচেন ভরে উঠলো।”

“নিধি হেঁটে কিচেনের দরজায় এসে দাঁড়ালো। নির্জনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো,
‘আপনি কি করছেন নির্জন?’

“নির্জন পেছন ফিরে তাকালো, চোখে তার নিষ্ঠুরতার ছাপ স্পষ্ট।অথচ মুখে মুচকি হাসি ফুটিয়ে অতি স্বাভাবিক স্বরে বললো,
‘তোমার জন্য বিশেষ কিছু বানাচ্ছি, ডার্ক কুইন।গেস করোতো,এটা কি?’

“নিধি একটু এগিয়ে গিয়ে বললো,
‘সরিষার তেল আর পাঁচফোড়নের সুঘ্রাণ বেরিয়ে এলো।কিন্তুু আমার চোখ কেমন জ্বলছে।এর মধ্যে কি শুঁকনো মরিচের গুঁড়ো দিয়েছেন?”

“নির্জনের গম্ভীর উত্তর,
‘হুম।’

“নিধি চোখ জোড়া কঁচলে বললো,
‘আচারে দেওয়ার জন্য গরম করছেন তাই না?জানেন,আচার আমার ভীষণ প্রিয়।কোন আচারে দিবেন?আমের আচারে নাকি অন্য কোনো….

“নিধি কে আর কথা বলতে দিলো না নির্জন।রহস্যময় হাসি দিয়ে হাস্কি ভয়েসে বললো,

‘হিসস..এত কথা বলো কেনো জানপাখি?এই তেলের মিশ্রণ টা আমার সবচেয়ে প্রিয় স্পেশাল আচারে দেওয়া হবে,মাই ডার্ক কুইন।”

বলেই চুলা থেকে পাত্রটি নিয়ে তড়িঘড়ি করে নিধির দিকে ফিরতেই, ঝালমিশ্রিত তপ্ত তেল নিধির হাত এবং পায়ের ওপর পড়ে গেলো।”

“আকস্মিক ঘটনায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিধির মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিলো।”

#চলবে…
(আজ আমি শেষ…ইয়ে মানে হাত ব্যথায় শেষ।৪-৫ঘন্টা একাধারে টাইপ করার কারণে হাতের কনুই সহ ব্যথা হয়ে যায়।তাই এক দিন পর পর গল্প দিবো।গঠনমূলক মন্তব্য করতে ভুলবেন না।আর হ্যা,ভিলেনের মধ্যে নায়কের গুণ খুঁজতে যাবেন না।নইলে ভেবে নেবো, আমি বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি।ভালোবাসা অবিরাম।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here