#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৪০
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ❌
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত]
“নির্জন ডেভিল হেসে ভাবলো,
‘দিগন্ত একটা কথা সত্যি বলে,আমার বুদ্ধির জুরি নেই।’
ভেবে লোকটির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।নিধি পানি খেয়ে নিকাব দিয়ে মুখ ঢেকে জানালার বাইরে তাকালো।এদিকে নিধি মুখ ঢেকে ফেলতেই,লোকটির নজর অন্য মেয়েগুলোর ওপর স্থির হলো।
সেদিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টিপাত করে,নির্জন আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকালো।দেখলো,যে যার মতো একে-অপরের সাথে কথপোকথন করছে,কেউ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে,কেউ আবার ক্লান্ত শরীর নিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় ঝিমাচ্ছে।এই সুযোগে নির্জন লোকটির প্যান্টের পকেট থেকে আলগোছে ওয়ালেট টি বের করে নিলো।অতঃপর বিজয়ের হাসি দিয়ে মনে মনে আওড়ালো,
‘আমি কিন্তুু চোর নই,এখান থেকে জাস্ট তোর জাতীয় পরিচয়পত্র(NID) নিবো।তারপর তোর বাসার ঠিকানায় যাবো,তারপর তুই আমার হাতে শেষ হবি,সিম্পল।’
ভেবে ওয়ালেট টি নিজের পকেটে ঢুকিয়ে নিলো নির্জন।”
“লোকটি বাসের ভাড়া আগেই মিটিয়ে দিয়েছিলো,তাই সে তার গন্তব্যে নেমে গেলো।কিছুক্ষণ পর নির্জনও নিধিকে নিয়ে নিজ গন্তব্যে নেমে গেলো।
দরজার লক খুলে বাসায় ঢুকতেই, সায়রা বেগমের রুম থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসতেই, একে-অপরের দিকে তাকালো নির্জন এবং নিধি।নিধি উত্তেজিত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
‘কি হয়েছে?ওই ঘর থেকে কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে কেনো?মায়ের কিছু হয়নি তো?’
“নির্জন নিধির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে,ফ্লোরে ব্যাগ রেখে দ্রুত পায়ে সায়রা বেগমের রুমের কাছে গিয়ে দরজা নক করতেই,দরজা খুলে গেলো।নির্জন বুঝতে পারলো,দরজা আগে থেকেই খোলা ছিলো।নির্জন কে দেখে দ্রুত মাস্ক পড়লো সেবিকা।নির্জনের পেছনে নিধি এসে তাকিয়ে রইলো সায়রা বেগমের দিকে।তার চোখজোড়া ঘোলাটে হয়ে আসছে।এক দৃষ্টিতে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে।ঠোঁট জোড়া অনবরত কাঁপছে, হয়তো কিছু বলতে চেয়েও পারছে না।”
“নির্জন স্থির দৃষ্টিতে সায়রা বেগমের দিকে তাকিয়ে রইলো।অতঃপর সেবিকাকে জিজ্ঞেস করলো,
‘এই অবস্থা কখন থেকে?আর আমাকে ফোন করেন নি কেনো?’
“সেবিকা কান্নারত গলায় নিচু স্বরে বললো,
‘প্রায় আধা ঘন্টা যাবৎ তার এই অবস্থা।প্রথমে মুখ দিয়ে কেমন আওয়াজ করছিলো।কয়েক মিনিটের মধ্যে দেখলাম, ঘেমে একাকার হয়ে গেলো।হয়তো তার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো।তার এই অবস্থা দেখে আমি আপনাকে ফোন করেছিলাম,কিন্তুু আপনার ফোন বন্ধ ছিলো।’
“সেবিকার কথা শুনে নির্জন পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো,সত্যি ফোন বন্ধ হয়ে গেছে।তৎক্ষনাৎ নির্জনের মনে পড়লো,ফোনে চার্জ ১%ছিলো।তাই বন্ধ হয়ে গেছে।”
ভেবে বললো,
‘তারপর আপনি কি করেছেন?’
“সেবিকা শুকনো ঢোক গিলে বললো,
‘আমি উপায়ান্তর না পেয়ে, তার শরীর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুছিয়ে দিয়েছি।স্যার, আপনার মা কে হসপিটালে নেওয়া আবশ্যক।তার প্রেশার হয়তো বেড়ে গিয়েছে।’
“সেবিকার কথা শুনে মনে মনে ভীষণ খুশি হলো নির্জন।ভাবলো,
‘আর কতো বেঁচে থাকবে এই মহিলা?এর তো দেখছি কই মাছের প্রাণ!’
ভেবে ক্ষুদ্র শ্বাস ফেলে তৎক্ষনাৎ নিজের রুমে চলে গেলো।”
“এদিকে নিধি মলিন চেহারা নিয়ে সায়রা বেগমের পাশে বসে,তার হাত ধরে স্বান্তনার বাণী শোনালো,
‘চিন্তা করবেন না মা,সব ঠিক হয়ে যাবে।কিছুক্ষণ পর আপনাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হবে।ডক্টর সঠিকভাবে চিকিৎসা দিলেই, আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন।’
“এদিকে নির্জন ফোনে চার্জ দিয়ে তার পরিচিত ডক্টর কে ফোন দিয়ে, সায়রা বেগমের বর্তমান অবস্থা জানালো।ডক্টর এই মুহূর্তে সায়রা বেগম কে হসপিটালে নিয়ে যেতে বললো।”
“নির্জন সায়রা বেগমের রুমে এসে, নিধিকে সায়রা বেগমের হাত ধরে বসে থাকতে দেখে ভীষণ রেগে গেলো।তবুও এই মুহূর্তে খুব কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে,ধীর পায়ে এগিয়ে এসে নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
‘জার্নি করে এসেছো।রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।আমি মায়ের পাশে আছি।আমি সবকিছু সামলে নেবো।’
“নিধির সত্যি খুব ক্লান্ত লাগছে।তাই সায়রা বেগমের দিকে আবারও মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে,সেখান থেকে চলে গেলো।নিধি যেতেই,নির্জন সেবিকা কে রুম থেকে প্রস্থান করতে বললো।”
“নির্জন বলতেই, সেবিকা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।নির্জন তৎক্ষণাৎ রুমের দরজা আটকে দিয়ে,সায়রা বেগমের দিকে তাকিয়ে ডেভিল হেসে তার পাশে বসে,তার ডান হাত ধরে বললো,
‘উহুম,আমি জানি,এই হাতে আপনার বোধ নেই।কিন্তুু কিছুক্ষণ আগে আমার নিরুপমা আপনার মতো নোং**রা মানুষের হাত টি ধরে অনেক বড় অপরাধ করেছে,যদিও ও জানে না আপনি কেমন।তবুও ওকে শাস্তি পেতে হবে।তবে এখন নয়,আগে আপনি পরপারে চলে যান,তারপর।”
“সায়রা বেগমের হাতে পায়ে বোধ না থাকলেও,তার শ্রবণশক্তি এখনও প্রখর।নির্জনের এহেন কথায় তার চোখজোড়া বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।সেটা দেখে পৈ**শা*চিক হাসি দিলো নির্জন।বোঝালো,তার একটুও কষ্ট হচ্ছে না।”
“সায়রা বেগমের এই মুহূর্তে নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে,সেটা বেশ বুঝতে পারছে নির্জন।এমতাবস্থায় তার কানের কাছে ঝুঁকে ফিসফিস করে আওড়ালো,
“শ্বাসের শেষে,অন্ধকারে,তোমার মুখোশ খসে পড়বে,
চরিত্রের পাপে ডুবে, তোমার আত্মা দুঃখের বি**ষে ম**রবে।
তোমার প্রতিটি নিঃশ্বাস,কাঁটার মতো হবে গলা চিরে,
যেমন তুমি ফাঁকি দিয়েছিলে,
সেভাবেই মৃ**ত্যুও আজ আসে ঘিরে।
এই পৃথিবী তোমার জন্য নয়,এই আলো তোমায় পোড়াবে,
তোমারই পাপের বোঝা,শূন্যতার গভীরে নিয়ে যাবে।
তোমার অজুহাতের কথারা ম**রে গেছে বহু আগে,
এখন শুধু অপেক্ষা,চিরস্থায়ী অন্ধকারে ডুবে যাওয়ার আগে।” ~মেহের~
“নির্জনের এহেন হিং**স্র কবিতা আবৃত্তি শুনে,সায়রা বেগমের নিঃশ্বাস যেনো আরও আটকে যেতে লাগল।তার মন চাইছে বুক ফাটা আ**র্তনাদ করে বলতে,
‘আমি পৃথিবীর বুকে আরও কিছুদিন বাঁচতে চাই।’
কিন্তুু মুখ মন্ডল সেটা সায় দিচ্ছে না।”
“সায়রা বেগমের বুক ফাটা আ**র্তনাদ শুনতে না পেলেও, তার চোখ থেকে ঝরে যাওয়া পানি দেখে ভীষণ তৃপ্তি পেলো নির্জন।”
“নির্জন দুঃখী দুঃখী মুখ করে বললো,
‘ইশশ!আপনি এখনও ম**রছেন না কেনো?আর কতদিন আমার ঘাড়ের ওপর বসে থাকবেন?স্বাধীন দেশে থেকেও আজ আপনি পরাধীন।কিছুদিন পর পর আপনার এমন উচ্চ র**ক্তচাপ হয়।অথচ ডাক্তার চিকিৎসা দেওয়ার পর,আবার আগের মত সুস্থ হয়ে যান।এটা কিন্তু খুব বোরিং লাগে।তাই আজ একটু শাস্তি দিয়ে,আপনাকে হসপিটালে নেবো।এত অভিনয় আমার সহ্য হয় না।
আপনি অনেক মেলোড্রামা করেছেন।এখন তাড়াতাড়ি ম**রে, আমাকে উদ্ধার করুন।নইলে,আমার বউ এসে আবারও আপনার হাতে হাত রেখে ন্যাকা কান্না শুরু করবে।’
বলেই দাঁড়িয়ে গেলো নির্জন।অতঃপর সায়রা বেগম কে কোলে তুলে নিয়ে,দরজা খুলে আগে থেকে ফোন করে রাখা উবারে উঠে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।”
“নির্জনের সাথে নিধিও যেতে চেয়েছিলো।কিন্তুু নির্জন বলেছে,সে একাই সামলাতে পারবে।নিধি যেনো নিশ্চিন্তে থাকে।’
নির্জনের কথা শুনে,নিধিও আর জোর করলো না।নির্জনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে, শাশুড়ির জন্য মনে মনে অনেক দোয়া করলো।”
“গাড়ির পেছনের সিটে নির্জনের কাঁধে মাথা রেখে বসিয়ে রাখা হয়েছে সায়রা বেগমকে।এই যে নির্জনের কাঁধে তার মায়ের মাথা ঠেকে আছে।এতে ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে নির্জনের।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো,পড়নের শার্ট টি পু**ড়িয়ে ফেলবে।কারণ, এতে এক চরিত্রহীনা নারীর ছোঁয়া লেগে আছে।’
ভেবে সায়রা বেগমের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
‘একি!আপনার নিঃশ্বাস এখনও ফুরায় নি?আমি তো ভাবলাম,এখানেই ফুরিয়ে যাবে।আচ্ছা চিন্তা করবেন না,ঢাকা শহরে অনেক জ্যাম;৩০মিনিটের পথ মাঝে মাঝে ১ঘন্টায় পাড়ি দিতে হয়।ততক্ষণে আপনি টাটা, বাই বাই।’
বলে ডেভিল হাসলো নির্জন।এদিকে সায়রা বেগমের নিঃশ্বাস যেন ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসছে।এই মুহূর্তে নির্জনের বলা কথাগুলো যেন বি**ষের মতো লাগছে।
আজ নির্জনের এহেন অবস্থার জন্য তিনি শতভাগ দায়ী।”
“সায়রা বেগমকে হসপিটালে নেওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থা খুবই সংকটজনক দেখে,নির্জন তার
মুখমন্ডলে দুঃখী ভাব নিয়ে,তাকে তাড়াহুড়ো করে হসপিটালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা তৎক্ষণাৎ তাকে ICU-তে ভর্তি করলো।সেখানে কয়েকজন ডাক্তার এবং নার্স দ্রুত তার শ্বাসপ্রশ্বাস, হার্টবিট, ও র**ক্তচাপ পরীক্ষা করতে থাকল।সায়রা বেগমের শ্বাস খুবই ভারী হয়ে এলো এবং তার শরীরে হালকা খিঁচুনি দেখা দিলো।”
“ডাক্তাররা প্রথমে অক্সিজেন মাস্ক দিয়ে তার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল।এরপরে ইসিজি মেশিন দিয়ে হৃদস্পন্দনের অবস্থা মনিটর করল।সায়রা বেগমের হৃদস্পন্দন অসমান এবং ধীরে ধীরে কমতে থাকল। নার্সরা তাকে ইনজেকশন দিয়ে,স্যালাইন লাগিয়ে শরীরে তরল ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করল।ডাক্তাররা CPR (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) করার প্রস্তুতি নিলো।কারণ তার হৃদপিণ্ড পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।”
“নির্জন দাঁড়িয়ে নির্লিপ্ত চোখে সবকিছু দেখতে থাকল। তার মুখে দুঃখের ভাব স্পষ্ট হলেও,মনে কোনো অনুভূতির ছাপ নেই, যেন সে তার মায়ের মৃ**ত্যু নিয়ে এক ধরনের শীতল প্রতিশোধের স্বাদ নিচ্ছে।”
“সায়রা বেগমের শ্বাস ধীরে ধীরে কমে আসলো। ডাক্তাররা চেষ্টার পরেও, কিছুক্ষণ পরই ঘোষণা করলো,
‘শি ইজ গন।’
ডাক্তারের মুখে এহেন কথা শুনে,নির্জন মনে মনে ভীষণ খুশি হলেও,চেহারায় প্রিয় স্বজন হারানোর বেদনার ছাপ ফুটিয়ে তুলে,সায়রা বেগমের কাছে গেলো। সায়রা বেগমের চোখজোড়া বন্ধ।তার মুখটা যেন মৃ**ত্যু যন্ত্রণায় আর আতঙ্কে বি**কৃত হয়ে গিয়েছে ,ঠিক যেন কোনো অদৃশ্য দুঃস্বপ্ন তাকে তাড়া করছে।”
“নির্জনের চোখজোড়ায় আনন্দের অশ্রু ছলছল করে উঠলো।মনে মনে আওড়ালো,
‘শেষটা তো এমনই হওয়ার ছিলো, মা।’
“শেষ..পৃথিবী থেকে আরেকজন বিশ্বাসঘা**তক, চরিত্রহীনা নারী বিদায় নিলো।যাকে নির্জন এতদিন তিলে তিলে য**ন্ত্রণা দিয়েছে। ”
“রাত ১টা বেজে ৩২মিনিট।অ্যাম্বুলেন্সের জোরালো শব্দ কানে ভেসে আসতেই, সোফায় হেলান দিয়ে বসে থাকা নিধি এবং সেবিকা ধরফরিয়ে উঠে বসলো।নির্জন এবং শাশুড়ি মায়ের জন্য অপেক্ষা করতে করতে,একসময় সোফায় হেলান দিয়ে চোখ লেগে এসেছিলো নিধির এবং সেবিকার।
অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ কর্ণপাত হতেই মনে আ*তং**ক সৃষ্টি হলো নিধির।দৌড়ে গিয়ে সদর দরজা খুলতেই দেখতে পেলো, অ্যাম্বুলেন্সের দরজা খুলে একজন সহকারী ধীরে ধীরে স্ট্রেচার বের করলো।তার সাথে নেমে এলো নির্জন। স্ট্রেচারের ওপর সায়রা বেগমের নিথর দেহ শায়িত আছে। তার শরীরটি সাদা চাদরে আচ্ছাদিত।”
“দু’জন লোক স্ট্রেচারের দু’পাশ ধরে ধীরে ধীরে নামলো।মাথার দিকের লোকটি যত্নসহকারে তাকে সামনের দিকে সামান্য উঁচু করে ধরলো।যাতে তার মাথায় কোনো আ**ঘাত না লাগে। স্ট্রেচার থেকে নিচে নামানোর পর, সায়রা বেগম কে ঘরের ভেতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলো।
ঘরের বাইরের দৃশ্যটি দেখে মুহূর্তেই থমকে গেলো নিধি এবং সেবিকা।এতক্ষণে তারা যা বোঝা বুঝে গেছে।নিধি এবং সেবিকা দু’জনেই দরজার কাছ থেকে সরে দাঁড়ালো।”
“সহকারী দু’জন খুব সাবধানে এবং নীরবে স্ট্রেচার ধরে দরজা দিয়ে ঢুকলো, যেন কোনো শব্দ না হয়। পুরো পরিবেশে এক ধরনের নিস্তব্ধতা আর ভারী বাতাস ভর করলো।”
“নিধি এবং সেবিকা দু’জনেই যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।নিধির চোখজোড়া বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।নির্জন নীরবে, নিভৃতে তাকিয়ে রইলো ফ্লোরে শুয়ে থাকা নিস্তেজ রমনীর দিকে;যার জন্য তার আজ এমন অবস্থা হয়েছে।”
“আকস্মিক নিধি হুঁশে ফিরলো।ভাবলো,
‘আমি যদি ভে**ঙে পড়ি,তাহলে নির্জন কে সামলাবে কে?এই পৃথিবীতে তার একমাত্র আপন বলতে শুধু মা ছিলো।এখন তো সেও চলে গেলো।এই মুহূর্তে নির্জন কে স্বান্তনা দেওয়া এবং তার পাশে থাকা সবচেয়ে বেশি জরুরি।নইলে মানুষ টা যে আরও ভে**ঙে পড়বে।’
ভেবে নির্জনের কাছে গিয়ে,তার কাঁধে হাত রেখে মলিন স্বরে বললো,
‘নির্জন, একদিন এই পৃথিবীতে সব প্রাণীকেই মৃ**ত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।এটা আপনি এবং আমি,আমরা সবাই জানি।যতদিন বেঁচে থাকব,আমি আপনার পাশে ছায়ার মতো থাকব।প্লিজ, মন কে শান্ত করুন।আমি আপনার কষ্ট বুঝতে পারছি।’
বলেই নির্জনের পাশে নিজেও বসে পড়লো।”
“নিধির দিকে একবার স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, আবারও সায়রা বেগমের দিকে তাকালো নির্জন।চোখে-মুখে তার দুঃখী ভাব স্পষ্ট।চোখ জোড়া লাল বর্ণ ধারন করেছে।”
“নির্জনের দিকে আবারও করুণ দৃষ্টিতে তাকালো নিধি।বুঝতে পারলো,সবচেয়ে প্রিয় মানুষ টিকে হারিয়ে, নির্জন পাথর হয়ে গেছে।”
“তমসাচ্ছন্ন রাত পেরিয়ে সকাল হলো।যেহেতু নির্জনের সাথে তার আত্মীয়দের সম্পর্ক পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন, তাই সে কাউকে সায়রা বেগমের মৃ**ত্যুর খবরটি জানায় নি।নিধি ওর বাবা-মা,নাদিয়া, দিগন্ত, তোহা,মাহির কে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে।
সবাই খবর পেয়ে সকালেই নির্জনের বাসায় চলে এসেছে।জোহরের নামাজের পর সায়রা বেগমের দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়েছে।
নির্জন কে তার শ্বশুর-শাশুড়ি,দিগন্ত, মাহির সহ আশে-পাশের প্রতিবেশীরাও স্বান্তনার বাণী শুনিয়ে মাগরিবের নামাজ পড়ে,সবাই চলে গিয়েছে।
নিস্তব্ধ বাড়িটিতে থেকে গেলো শুধু নির্জন এবং নিধি।সেবিকাও নির্জনের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে,কারণ আজ থেকে এখানে তার কোনো কাজ নেই।”
“রাতে নির্জনকে নিজ হাতে খাইয়ে দিলো নিধি।নির্জন না খাওয়ার জন্য অনেক অভিনয় করেছে,কিন্তুু নিধি বেচারি খাওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করেছে।অবশেষে নিধি নির্জন কে কয়েক লোকমা খাইয়ে দিয়েছে।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে নিধি বিছানায় শোয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলে,নির্জন হুট করে নিধির হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে, মলিন স্বরে বললো,
‘আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না তো ডার্ক কুইন?’
“সারাদিন পর কতগুলো অক্ষর মিলিয়ে কথা বললো নির্জন।শুনে, কিছুটা স্বস্তি পেলো নিধি।নির্জনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘কোথাও যাবো না নির্জন।আমি সবসময় আপনার সাথে থাকব।আপনিই তো আমার সব।’
” নির্জনের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো,কিন্তুু সেটা দেখতে দিলো না নিধিকে।নিধির পিঠে হাত বুলিয়ে বললো,
‘প্রমিজ করো,সবসময় আমার সাথে থাকবে।’
“নিধি ম্লান হেসে বললো,
‘প্রমিজ, প্রমিজ, প্রমিজ।’
“নির্জন নিধির মাথায় ঠোঁট জোড়া ছুঁইয়ে বললো,
‘ওয়াদা টা মনে থাকে যেনো।’
“নিধি ভরসার সহিত বললো,
‘অবশ্যই মনে থাকবে।’
“আজ অর্ধেক রাতটুকু নির্ঘুম কা**টিয়েছে নিধি।নির্জনের মাথায় হাত বুলিয়ে বিভিন্ন স্বান্তনামূলক বাণী শুনিয়েছে।নির্জনও মনযোগী শ্রোতার ন্যায় নিধির প্রতিটি কথায় ‘হ্যা,হুম’ শব্দ করে তাল মিলিয়েছে।এক সময় নির্জন ঘুমিয়ে গেলেও,ঘুম ছিলো না নিধির চোখে।এই বদ্ধ বাড়িতে মানুষ থেকেও যেনো না থাকার মতো ছিলো।কেউ ওর সাথে কথা বলতো না।তবুও শাশুড়ির রুমে গিয়ে মাঝে মাঝে একাই কথা বলে চলে আসতো।কিন্তুু, এখন তো আরও একা হয়ে গেলো।নির্জন অফিসে যাওয়ার পর কিভাবে সময় কা**টবে ওর?ও তো একা থাকতে ভীষণ অপছন্দ করে।’
ভেবে খুব মন খারাপ হলো নিধির।ভোরের দিকে নিধিও ঘুমিয়ে গেলো।”
———-
“সুখ-দুঃখ মিলিয়ে কে**টে গেলো ৩দিন।এই ৩ দিন নির্জন অফিস থেকে ছুটি নিয়ে,বাসায় সময় কা**টিয়েছে।নিধি যথাসম্ভব তাকে মানসিক ভাবে সাপোর্ট করেছে।কিন্তুু আশ্চর্যের বিষয় হলো,এই ৩দিনে নিধি তার পরিবারের সাথে একবারও যোগাযোগ করে নি।এমন কি নিধির বাসা থেকেও কোনো ফোন আসে নি।কথাগুলো ভেবে খুব অবাক হলো নিধি।
ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে, খাবারের লোকমা মুখে দিয়ে নির্জন কে বললো,
‘আমি না হয় শাশুড়ি মায়ের মৃ**ত্যুর পর আপনাকে নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম;তাই বলে মা-বাবা,তোহা কেউ আমাদের খবর নিলো না?’
“নিধির কথা শুনে মনে মনে হেসে কু**টিকু**টি হলো নির্জন।ভাবলো,
‘খবর নিবে কিভাবে?তারা যখনই ফোন দিয়েছে,তখনই তুমি কোনো কাজে ব্যস্ত ছিলে।কখনো কিচেনে,কখনো ওয়াশরুমে, কখনও অন্য কাজ করেছো।আর এই সুযোগে তোমার ফোন আমি সাইলেন্ট করে রেখেছি।কল শেষ হওয়ার পর মিসড কল অপশনে গিয়ে নাম্বার ডিলিট করে দিয়েছি।তারপর আবারও ফোনে রিংটোন দিয়ে রেখেছি।এইজন্যই তো ৩দিন ছুটি নিলাম।আশা করি, তোমার বাবা-মা তোমার ওপর ভীষণ অভিমান করবে।এভাবেই তো ধীরে ধীরে তোমাদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হবে।আর তুমি পুরোপুরি আমার হয়ে যাবে।
তাছাড়াও কানের কাছে ফোনের উচ্চশব্দ শুনতে আমার একদমই ভালো লাগে না।’
ভেবে ম্লান হেসে বললো,
‘হয়তো তারা ব্যস্ততার কারণে তোমাকে ফোন দিতে পারে নি।মন খারাপ করো না জানপাখি।এক কাজ করো,তুমি মা আর বাবা কে ফোন করে খোঁজ-খবর নাও।আমি একটু বাইরে গেলাম।আমার কিছু কাজ আছে।’
বলেই নির্জন রুমে গিয়ে রেডি হলো।”
“নিধিও রুমে গিয়ে ওর মাকে ফোন করলো।কিন্তু কয়েকবার ফোন করার পরেও তিনি রিসিভ করলেন না।তাই নিধি রফিক মির্জা কে ও ফোন করলো,
কিন্তুু তিনিও রিসিভ করলেন না।অবশেষে নিধি তোহা কেও ফোন করলো।দুঃখের বিষয় হলো তোহাও ফোন রিসিভ করলো না।’
নিধির এমন চিন্তিত মুখমণ্ডল দেখে মনে মনে ভীষণ মজা পেলো নির্জন।এই সুযোগে সে রুমের বাইরে গিয়ে খুব প্রিয় রুমটিতে ঢুকে,প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে নেক্সট অপারেশন সাকসেস করতে চলে গেলো।”
———–
“বাউন্ডারি দিয়ে ঘেরাও করা একটি বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে নির্জন।সেই বিকাল থেকে সেখানে কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করেছে সে।কিন্তুু বাড়িটি তালাবদ্ধ।তাই গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢোকার প্রয়োজন মনে করেনি।বাড়িটির আশেপাশে তেমন মানুষজনের আনাগোনা নেই।আশে-পাশের বাড়িগুলোও বেশ দূরে।শুনশান জায়গাটি বেশ ভালো লাগছে নির্জনের।অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পর রাত সাড়ে ৮টায় দেখা পেলো ব্যক্তিটির।লোকটি গেটের কাছে আসতেই,নির্জনের চোখে মুখে হিং**স্র হাসি ফুটে উঠলো।লোকটি আবছা-অন্ধকারে নির্জন কে দেখে বললো,
‘আপনাকে তো চিনলাম না?’
“নির্জন এগিয়ে গিয়ে বললো,
‘আপনি আমাকে না চিনলেও, আপনাকে আমি চিনি।আমি আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী।৩ দিন আগে বাসে আমার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়েছিলেন,বাস থেকে নামার সময় আপনার পকেট থেকে ওয়ালেট টা পড়ে যায়।আর সেটা আমার সিটের পাশে পড়ে।আমি আপনাকে ডাকতে যাবো, ততক্ষণে আপনি চলে গিয়েছিলেন।আর বাসও ছেড়ে দিয়েছিলো।আমি ওয়ালেট টি হাতে পেয়ে বুঝেছিলাম,এটা আপনার সবচেয়ে জরুরি জিনিস।কারণ, আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে শুরু করে, প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো তো এখানেই স্থান পায়।আমি পেরের দিন আপনার কাছে আসতাম।কিন্তু ৩দিন আগে আমার মা মা**রা যাওয়াতে আর আসা হয় নি।”
“নির্জনের কাছে ওয়ালেট টি আছে শুনে, লোকটির মুখমন্ডল খুশিতে চকচক করে উঠেছিলো।ওয়ালেটে জাতীয় পরিচয়পত্রের পাশাপাশি আরও কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস ছিলো।সে তো ভেবেছিলো,আগামীকাল নিকটবর্তী থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি(জিডি) করবে।কিন্তুু তার আগেই সে প্রয়োজনীয় জিনিস টি পেয়ে গেলো।’
কথাগুলো ভেবে লোকটি খুশি হওয়ার পরমুহূর্তেই আবার মন খারাপ হয়ে গেলো,নির্জনের মায়ের কথা চিন্তা করে।”
“লোকটি নির্জনের দিকে মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
‘জানেন ভাই,আমার মা-বাবা অনেক আগেই গত হয়েছে।একটা বউ ছিলো,সেটাকেও কিছুদিন আগে ডিভোর্স দিয়েছি।আমার একটু-আধটু নে**শাদ্রব্য খাওয়ার স্বভাব আছে।সেগুলো নিয়ে নিত্যদিন ঝামেলা করতো।তাই একেবারে মুক্তি দিয়েছি।যাইহোক,ভাই সুখ-দুঃখ মিলিয়ে জীবন।এখন একা আছি বিন্দাস আছি।’
বলেই ম্লান হাসলো লোকটি।”
“নির্জন মুচকি হেসে বললো,
‘হুম,আপনি ঠিকই বলেছেন।একা থাকার মতো শান্তি এই পৃথিবীতে নেই।ওহ!আপনার ওয়ালেট টা তো গাড়িতে রেখে এসেছি।এখানে একটু দাঁড়ান,আমি যাবো,আর আসবো।’
“লোকটি মুচকি হেসে বললো,
‘কি যে বলেন না ভাই!আপনি আমার কত বড় উপকার করলেন,এর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেও শেষ হবে না।চলুন,আমিও আপনার সাথে যাই।’
বলেই লোকটি নির্জনের সাথে হাঁটতে থাকল।”
“নির্জন একজন চরিত্রহীন, নে**শাখোর লোকের উপর তার প্রতিশোধ নিতে চায়। লোকটি নির্জনের বউয়ের দিকে বা**জে দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো, আর এই অপরাধের জন্য নির্জন তাকে নি**র্মম শাস্তি দেবে।”
“নির্জন লোকটিকে গাড়ির কাছে আসতে দেখে ডেভিল হাসি দিয়ে পকেট থেকে ক্লোরোফর্ম বের করে, এক টুকরো কাপড়ে ক্লোরোফর্ম ঢেলে,পেছনে ফিরে লোকটির মুখের উপর চেপে ধরলো।খুব দ্রুতই লোকটির নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে,তার মস্তিষ্ক শিথিল হয়ে আসে, আর সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।”
“অজ্ঞান লোকটিকে গাড়িতে তুলে,নির্জন বাঁকা হেসে বললো,
‘তুই তো আজ শেষ..।’
বলেই হাতে হ্যান্ড গ্লাভস পড়ে,লোকটির পকেট থেকে ফোন বের করে, তার বাড়ির গেটের সামনে ছুঁড়ে মা**রলো।তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলো।কিছুক্ষণ পর নির্জনের চেনা একটি পুরনো পোড়াবাড়িতে লোকটিকে নিয়ে গেলো। সেখানে চারদিকে নীরবতা,ভা**ঙা কাঠামো আর ছড়িয়ে থাকা পোড়ার দাগগুলো জায়গাটির ভ**য়াবহতা বাড়িয়ে তুলেছে।নির্জন লোকটিকে গাড়ি থেকে বের করে টেনে নিয়ে
স্যাঁতস্যাঁতে ফ্লোরে শুইয়ে দিলো।
অতঃপর লোকটির দিকে হিং**স্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
‘উহুম,উচ্চশব্দ আমি একদম পছন্দ করি না।আমি তোকে মা**রতে থাকব,আর তুই বিভৎ**স আওয়াজ করবি,এইসব আমার নিঁখুত কা**টাকা**টির মনযোগে ব্যা**ঘাত ঘটাবে।সেটা তো আমি কিছুতেই হতে দেবো না।তাই তো তোকে অজ্ঞান করেছি।ঘুমন্ত অবস্থায় তোকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সুযোগ দেবো, এটাই তো অনেক।তুই কিন্তুু খুব লাকি!আমি তোর বেশি কিছু কা**টবো না।জাস্ট ডান হাত,জিহ্বা আর চোখ দু’টো কা**টব।পুরো শরীর কা**টাছেঁড়া করতে গেলে আমার অনেক দেরি হয়ে যাবে।কিছুক্ষণ পর আমাকে আবার শ্বশুর বাড়ি যেতে হবে।আমার শ্বশুর খুব অসুস্থ।যদিও আমার বউটা জানে না।তাই বড় জামাই হিসেবে আমার অনেক দায়িত্ব,বুঝেছিস?আচ্ছা, ঝটপট কাজ টা শুরু করে দেই।’
বলেই নির্জন তার হাতে ধা**রালো স্ক্যালপেল নিয়ে এগিয়ে গেলো।লোকটির চোখের পাশে স্ক্যালপেল চালিয়ে,ধীরে ধীরে তার দৃষ্টিশক্তিকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দিলো।চোখের মণিগুলো বের হয়ে র**ক্তের ফোঁটা মাটিতে ঝরে পড়লো।এতে পৈ**শাচিক আনন্দ পেলো নির্জন।”
“লোকটির জিহ্বা ছিলো সেই বি**ষাক্ত অ**স্ত্র, যা দিয়ে সে নির্জনের বউকে অসম্মান করেছিলো।নির্জন লোকটির মুখের মধ্যে গ্লাভস পড়া হাত ঢুকিয়ে জিহ্বাটি ধরে, ছু**রি দিয়ে জিহ্বাটি কে**টে ফেললো।র**ক্তের স্রোত মুখ থেকে বেয়ে পড়লো।লোকটি তার শব্দ সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেললো।”
“সর্বশেষে, নির্জন লোকটির ডান হাত কে**টে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলো।সে ব্যাগ থেকে ছোট একটি ক**রাত বের করলো।লোকটির কব্জির কাছে সেটিকে স্থাপন করে কা**টা শুরু করলো। র**ক্তের স্রোত বইতে থাকল,আর লোকটি চিৎ**কার করার ক্ষমতাও চিরতরে হারিয়ে ফেললো।”
“নিখুঁত ভাবে নিজের কার্য সম্পন্ন করে নির্জন তার ‘মন’ কে জিজ্ঞেস করলো,
‘দেখেছো,লোকটি কতো তাড়াতাড়ি মা**রা গেলো!আচ্ছা,মা**র্ডার টা কেমন হলো?”
“ভেতর থেকে ‘মন’ বলে উঠলো,
‘নির্জন, এভাবে তোমাকে ছু**রি দিয়ে আ**ঘাত করলে, তুমিও মা**রা যেতে।তবে মা**র্ডার টা দারুণ হয়েছে।তোমাকে তো সেই আগের রূপেই দেখতে চেয়েছিলাম।যাক, অবশেষে তুমি নিজের জগতে ফিরে এসেছো,তার জন্য তোমায় স্বাগতম।”
“মনের সাথে সাথে হৃদয়ও তাল মেলালো।
ভেতর থেকে ‘হৃদয়’ বলে উঠলো,
‘নির্জন,এই চরিত্রহীন,দুষ্টু লোকটির জন্য আমি একটা কবিতা বানিয়েছি।এটা তুমি আবৃত্তি করো।’
বলেই ‘হৃদয়’ কবিতাটি নির্জন কে বললো।”
“নির্জন মুচকি হেসে লোকটির ছি**ন্ন-ভিন্ন শরীরের দিকে একবার তাকিয়ে, প্রতিশোধের তীব্রতা প্রকাশ করতে বিড়বিড় করে কবিতা আওড়ালো,
“র**ক্তের ঢেউয়ে ডুবে যায় রাত,
তোমার চোখের আঁধারে হারালো আকাশের চাঁদ।
তাকিয়ে ছিলে নিষ্ঠুর চোখে,
সেই চোখ আজ অন্ধকারে বাঁধা পরেছে।
তোমার জিহ্বা ছিলো বি**ষের ফুল,
কে**টে ফেলেছি সেই শব্দের কূল।
তোমার হাত ছিলো হিং**স্রতার বাঁধ,
আজ সেই হাত কে**টে,মিলিয়ে দিলাম শূন্যতার ফাঁদ।
এখন তুমি বোবা,তুমি পঙ্গু,
তোমার জীবনের আ**গুন নিভেছে,নেই কোনো রং।
তুমি যা হারিয়েছো,তা ফিরবে না আর,
আমার প্রতিশোধের আ**গুন,
তোমার র**ক্তে আজ থমকে দিচ্ছে তার।” ~মেহের~
“নির্জনের এই প্রতিশোধের আ**গুনে যেন লোকটির জীবন ও সব ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে গেলো।”
[সবাই আমার গল্পের গ্রুপে যুক্ত হয়ে নিন-
https://facebook.com/groups/540631661830855/
#চলবে…
(ধীরে ধীরে সব রহস্যের উন্মোচন হবে।আর আজকের পর্ব+নেক্সট পর্বগুলোতে ৩ জুটিকে কম পাবেন।যেহেতু মূল কাহিনী তে চলে এসেছি,তাই সেগুলো নিয়ে বেশি লেখা হবে।
আমি প্লটটিকে ৩ভাগে ভাগ করেছি।প্রথম ভাগে ওদের অবিবাহিত জীবনের খুনসুটি,দ্বিতীয় ভাগে বিবাহিত জীবনের কিছু রোমান্টিক কাহিনী,যদিও নিধির বিষয় টি অন্যরকম/অস্বাভাবিক।আর তৃতীয় ভাগে মূল চরিত্র, ভিলেনের মাত্রাতিরিক্ত সাইকোগিরি এবং সব রহস্যের উন্মোচন।আশা করি,বুঝতে পেরেছেন।আমার প্রিয় পাঠিকারা গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।সবার জন্য ভালোবাসা অবিরাম।)