হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ #পর্বঃ৩০ #লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

0
2

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩০
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।]
[গল্পের শেষে আমার নোট বার্তা পড়ার অনুরোধ রইলো।]

“আমার ঠোঁটের উষ্ণ চুৃম্বন শুধু আমার ডার্ক কুইনের কোমল চামড়া পাবে।তুই গ্রহণ করলি কেনো?হ্যা?আনসার মি বা**স্টার্ড।”

“অপরপক্ষ থেকে কোনো প্রতিত্তোর এলো না।ক্ষেপে গেলো নির্জন।দুই হাত দিয়ে ফোনটা কে খুব জোরে চেপে ধরলো।নিধির সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলায়,ফোনের স্ক্রিন কিছুটা তপ্ত হয়ে গেছে।তার ওপর নির্জন এভাবে চেপে ধরায় ফোনের স্ক্রিনে তার হাত লেগে এলোমেলো ভাবে বিভিন্ন অ্যাপসে যেতে থাকল।এতে নির্জন আরও ক্ষেপে গেলো।
হিং**স্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ফোনের উদ্দেশ্যে ইংরেজি ভাষায় কয়েকটি গা**লি ছুঁড়ে দিলো,

‘You bloody screen stealer!’

‘Damn you, phone! Why do you have to get all the kisses?’

‘এই..উত্তর দিচ্ছিস না কেনো?
তোকে তো আজ শেষ করে ফেলবো রে..’

‘You attention-grabbing piece of junk!’

‘Stupid screen, get out of my way!’

‘You freaking phone, stealing my moments!”

‘কিরে কোনো উত্তর নেই কেনো? ইডিয়ট!’

“অপেক্ষা কর,তোর ব্যবস্থা করছি,বলেই পৈ**শাচিক হাসি দিলো নির্জন।ভেতর থেকে ‘মন’ বলে উঠলো,
‘এই ফোন টা ভীষণ অভদ্র।ও তোমার কোনো রেসপন্স করবে না।ও তোমার সবচেয়ে দামি জিনিস লুটে নিয়েছে।এই মুহূর্তে ওকে ছি**ন্ন-বিচ্ছি**ন্ন করে ফেলো।ওকে তোমার হিং**স্রতার আগুনে ভ”স্ম করে দাও।’

‘ভেতর থেকে ‘হৃদয়’ বলে উঠলো,
‘হুম, ওকে তোমার প্রিয় রুমটি তে নিয়ে গিয়ে স্পেশাল পানিশমেন্ট দাও।যেনো দ্বিতীয়বার এই সাহস না দেখায়।তবে একদম ইউনিক স্টাইলে।তোমার প্রতিটি খু**ন,প্রতিটি ধ্বংস সবকিছু ইউনিক হওয়া চাই।বুঝতে হবে,তুমি ছিলে তোমার ক্লাসে সায়েন্সের টপার।তো এই সম্মান টা তোমায় বজায় রাখতে হবে।বুঝতেই পেরেছো,আমি কি বোঝাতে চেয়েছি!”

“পৈ**শাচিক হাসি দিয়ে নির্জন বললো,
‘আমাকে এক কথা বারবার বোঝাতে হয় না।আমার ব্রেইন যথেষ্ট শার্প।আর সেগুলোর জন্য তোমাদের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ।”

“ভেতর থেকে ‘মন’ বলে উঠলো,
‘সত্যি নির্জন, তোমার মতো ভালো মানুষ হয় না।সবসময় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।প্রতিটি মানুষ যদি তাদের প্রয়োজনীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতি এভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতো,তাহলে সেই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলোও আনন্দে জাগ্রত হয়ে উঠতো।এনিওয়ে,অপারেশন শুরু করো।আমরা তোমার সাথে আছি।”

“নির্জন ফোনটা কে আরও জোরে চেপে ধরে, রুম থেকে বের হয়ে প্রথমে তার মায়ের রুমের দিকে গেলো।রুমের দরজা সবসময়ের মতো আজও বন্ধ আছে।কারণ, নির্জন সেবিকা কে আগেই বলে রেখেছে,সে বাসায় এলে তার মায়ের রুমের দরজা যেনো বন্ধ করে দেওয়া হয়।সেদিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে,নির্জন তার প্রিয় ১নম্বর কক্ষটি খুলে প্রথমে মুচকি হাসি দিলো।অতঃপর পুরনো দিনের স্মৃতিগুলো দেখে মুখ-মন্ডল মলিন হয়ে গেলো।এগুলো নির্জনের নিত্যদিনের অভ্যাস।”

“নির্জনের এই কক্ষটি যে কেউ দেখলে নিমিষেই বলবে,এটি একটি ভয়ং**কর,রহস্যময় ল্যাবরেটরি।যেখানে রয়েছে শুধু পৈ**শাচিক পন্থায় বিজ্ঞানের খেলা।গতরাতে এই রুম টিতে নির্জন ডায়নার সেই ‘বালি ভর্তি বক্স’ টেবিলের ওপর এক সাইডে রেখেছিলো।”

“নির্জনের এই রহস্যময় ল্যাবরেটরির ভেতরে আলো খুব কম, শুধুমাত্র কয়েকটি ডিমলাইট জ্বলছে। এই আলোতে সবকিছু রহস্যময় আর ভৌতিক দেখায়। দেয়ালের রং ওপরে গাঢ় ধূসর এবং নিচের দিকে কালো; যা পুরো পরিবেশকে আরও ভীতি,থমথমে এবং রহস্যময় করে তুলেছে।”

“রুমের এক কোণে আয়তাকৃতির বড় একটি টেবিলের ওপর বিভিন্ন ধরণের এসিড, বিষ, আর কেমিক্যাল ভর্তি কাচের জার ও বোতল সারি সারি করে রাখা আছে। কিছু বোতলের গায়ে লেবেল লাগানো-“হাইড্রোক্লোরিক এসিড”, “সালফিউরিক এসিড”, “আর্সেনিক” ইত্যাদি। আর কিছু বোতলে কোনো লেবেল নেই, যেনো সেখানে আরও ভয়ং**কর কিছু লুকিয়ে আছে।”

“নির্জনের যাবতীয় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি এখানে রাখা হয়।তাছাড়া সবচেয়ে ভ**য়ানক এবং পারফেক্ট মা**র্ডারের প্ল্যানগুলো এখানে বসেই ‘মন’ এবং ‘হৃদয়ের’ সাথে মিটিং এর মাধ্যমে সম্পন্ন করে।”

“নির্জন তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার আগে জানে, এই ধরনের ভয়ং**কর এবং বিষাক্ত রাসায়নিক মিশ্রণের সঙ্গে কাজ করতে গেলে, তাকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। তাই, সে তার ল্যাবরেটরিতে ঢুকে বিশেষ সেফটি পোশাক পরে নিলো।”

“নির্জন প্রথমে তার শরীরে একটি বিশেষ ধরনের স্যুট পরে, যা কেমিক্যাল রেজিস্ট্যান্ট। এই স্যুটটি একটি শক্তিশালী প্লাস্টিক এবং সিন্থেটিক ফাইবার দিয়ে তৈরি, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক রাসায়নিক গুলোর সংস্পর্শ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে পারে। স্যুটটি তার পুরো শরীর ঢেকে রাখে, যেনো কোনোভাবেই এসিড বা বিষাক্ত বাষ্প তার চামড়ায় স্পর্শ করতে না পারে।”

“এরপর নির্জন তার হাতে হেভি-ডিউটি গ্লাভস পরে। গ্লাভসগুলো কেমিক্যাল রেজিস্ট্যান্ট রাবার দিয়ে তৈরি, যা হাইড্রোফ্লোরিক এসিড এবং সালফিউরিক এসিডের মতো বিপজ্জনক রাসায়নিকের থেকে তার হাতকে রক্ষা করে। গ্লাভসগুলি তার কব্জি পর্যন্ত ঢেকে রাখে, যাতে এসিড ছিটকে গেলেও তা তার হাতে পৌঁছাতে না পারে।”

“নির্জন তার মুখ এবং চোখকে রক্ষা করার জন্য একটি হেভি-ডিউটি গ্যাস মাস্ক পরে। এই মাস্কটি বিশেষ ধরনের ফিল্টার দিয়ে তৈরি, যা বিষাক্ত বাষ্প এবং ধোঁয়া থেকে তার শ্বাস-প্রশ্বাসকে সুরক্ষিত রাখে। তার চোখকে রক্ষা করার জন্য সে একটি কেমিক্যাল রেজিস্ট্যান্ট গগলস পরে, যা তাকে কোনো ধরনের কেমিক্যাল স্প্ল্যাশ বা ধোঁয়ার আ**ক্রমণ থেকে রক্ষা করে।”

“তারপর পায়ে এক জোড়া অ্যান্টি-স্লিপ বুট পরে, যা কেমিক্যাল রেজিস্ট্যান্ট এবং অত্যন্ত সুরক্ষিত। বুটগুলি তার পা এবং পায়ের আঙ্গুলগুলোকে কেমিক্যালের ছিটে পড়া বা ঝলসে যাওয়ার থেকে রক্ষা করে। বুটের বিশেষ সোল তাকে ল্যাবরেটরির মেঝেতে শক্তভাবে দাঁড়াতে সাহায্য করে, যেনো কোনোভাবে পা পিছলে গিয়ে বিপদের মুখোমুখি না হয়।”

“সবকিছু ঠিকঠাক করে পরার পর তার চোখে এক গভীর পা**গলামী, মুখে এক র**ক্তচক্ষু হাসির ছাপ ফুটে ওঠে। সে জানে, এই সেফটি পোশাক তাকে সকল বিপদ থেকে রক্ষা করবে, এবং তার পরিকল্পনা সফল হবে।তারপর নির্জন হাইড্রোফ্লোরিক এসিড (HF) ১০০ মিলিলিটার নিলো। ”

‘সালফিউরিক এসিড (H₂SO₄)- ব্যাটারি ধ্বংস করার জন্য ৫০ মিলিলিটার নিয়ে রাখল।’

‘অ্যাকোয়া রিজিয়া (Aqua Regia)- ধাতু গলানোর জন্য ৩০ মিলিলিটার এই মিশ্রণ নিলো।’

‘নাইট্রিক এসিড (HNO₃)-ফোনের সার্কিট পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য ২০ মিলিলিটার নিলো।’

‘ডাইমিথাইল সালফোক্সাইড (DMSO)- এসিড দ্রুত ছড়িয়ে দিতে ১০ মিলিলিটার নিলো।”

“নির্জন এই সমস্ত রাসায়নিক একত্রে মিশিয়ে এক বিষাক্ত মিশ্রণ তৈরি করতেই, তার চোখে তৃপ্তির ঝিলিক দেখা গেলো।সে মনে মনে বললো,
‘এই মিশ্রণই হবে আমার প্রতিশোধের একমাত্র হাতিয়ার।হাহাহাহা..”

‘পরিশেষে শুরু হলো ধ্বংসের তাণ্ডব।’

“নির্জন ফোনটিকে একটি কাচের বাক্সে রেখে দিয়ে, চারপাশে রাসায়নিক মিশ্রণ ঢেলে দেয়। ধীরে ধীরে এসিডের বাষ্প ট্যাংকের ভেতরে ভরাট হতে শুরু করে। ফোনের স্ক্রিন গলে যায়, ফোসকা পড়ে ওঠে। স্ক্রিনের কাচ ভে**ঙে পড়ে, যেনো কোনো রোগগ্রস্ত দেহের চামড়া খসে পড়ছে।”

‘তারপর হাইড্রোফ্লোরিক এসিড ফোনের ধাতব অংশগুলো গলিয়ে দেয়।’

‘নাইট্রিক অ্যাসিড সার্কিট বোর্ডকে জ্বালিয়ে দিয়ে সমস্ত বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ করে দেয়।’

‘অ্যাকোয়া রিজিয়া প্লাস্টিকের কেসিং গলিয়ে ফেলে।’

‘ডাইমিথাইল সালফোক্সাইডের প্রভাবে এসিড দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, পুরো ফোনকে এক বিষাক্ত গলিত পদার্থে পরিণত করে।”

“নির্জন তখন ফোনের ওপর রাসায়নিক ঢেলে দেয়ার পাশাপাশি, তার হাতে থাকা ছোট একটি হাতুড়ি দিয়ে ফোনের বাকি অংশগুলোকে টুকরো টুকরো করে ফেলে। তার হাতের প্রতিটি আ**ঘাতে ফোনের ধ্বংসপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। কাচের বাক্সের মধ্য থেকে গলিত ধাতব পদার্থ এবং প্লাস্টিকের টুকরো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তার পা**গলামী মন তখন পূর্ণ তৃপ্তিতে ভরপুর।”

“পা**গলামী তৃপ্তি পেয়ে,মুচকি হেসে ‘মন’ কে বললো,
‘ ফোনটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। কেবল কিছু গলিত পদার্থ আর ধোঁয়া বাকি।হাহাহা..’
উচ্চস্বরে হেসে নির্জন তার মনের অস্থিরতা মিটিয়ে নেয়। সে জানে, তার ভালোবাসা কেবল তার ডার্ক কুইনের কাছেই থাকবে, কোন যন্ত্রে নয়। তার মাথায় এক ভয়ং**কর চিন্তা ঘুরতে থাকে,সে তার ভালোবাসাকে যেকোনো কিছুর জন্য রক্ষা করবে, এমনকি পুরো পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিয়ে হলেও।”

“নির্জনের এহেন কান্ডে ‘মন’ এবং ‘হৃদয়’ প্রচুর পরিমাণে বাহবা দিতে থাকে।মন বলে ওঠে,
‘এত ভালো একটি কাজ করলে,সেই খুশিতে এই গলিত ফোনের জন্য একটা ধামাকাদার পৈ**শাচিক এবং ভয়ং**কর কবিতা হয়ে যাক।”

“নির্জন ডেভিল হেসে বললো,
‘ওয়েট বেবস্।জাস্ট ৬ মিনিট ভাবতে দাও।”

“নির্জন কবিতার লাইন গুলো মনে মনে ভেবে, মুখে হিং**স্র হাসি ঝুলিয়ে আবৃত্তি শুরু করলো,

“প্রতিশোধের প্রলয়”

তুই চুরি করিস প্রেয়সীর চুমু,
আজ এসিডে তোর হবে প্রলয় ঘুমু,
তুই কেনো স্পর্শ করলি ওর ঠোঁট?
এখন ম**রবি তুই, গলবে তোর প্রতিটি ফোঁট।

তুই স্ক্রিনের শ**য়তান, তুই পাষাণ,
তোর জন্য আজ এসিডের আয়োজন,
তুই লোভী, তুই করিস প্রেমের ভান,
আজ তুই গলবি, দেখবি কেমন ম**রণযাত্রা প্রাণ।

তোর মুখ গলে যাবে এসিডের বিষে,
তুই দেখবি মৃ**ত্যু, তোর জীবন টা দিবো পিষে,
তুই কে যে তোর এত সাহস হলো?
আমার প্রেমের পথে আসবি,
তোর ধ্বংসগুলো হবে কল্পনায় ছলোছলো।

তুই তোর ছলনায় ছড়িয়ে দিস জ্বালা,
আজ তোর দেহ হবে আগুনে কাঁপা,
তোর প্রতিটি স্পর্শ, তোর প্রতিটি সংকুচিত নিঃশ্বাসে ফাঁপা,
তোর মৃ**ত্যুতে মন খুলে দিবো হাসি,
এসিডে গলিয়ে তুই পাবি তোর ফাঁসি।

তুই তৃষ্ণার্ত, তুই ম**রবি আজ,
তোর ঠোঁটের স্বাদ তুই ভুলে যা,
তুই কে যে, আমার ভালোবাসার চুমু খাবে,
তোর শেষ ঠোঁটের চুমু এসিডেই হবে।

আজ তুই আর প্রেয়সীর চুমু খেতে পারবি না,
তোর ছাই উড়ে যাবে বাতাসে, শূন্যে ভাসবে না,
তুই মিথ্যে প্রেমের সাগর, তোর ধোঁকা মিথ্যে,
তোর জন্য এসিড, তোর জন্য মরণভীত্রে। ”

~মেহের~

“কবিতা আবৃত্তি করে নির্জন ল্যাব থেকে বেরিয়ে আসে, তার চোখে এক অদ্ভুত উজ্জ্বলতা। তার পা**গলামী তাকে আরও অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে তার ভালোবাসা শুধুই তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ডার্ক কুইনের জন্য তার ভালোবাসা, তার পা**গলামী, সবকিছুই এখন আরও ভয়ং**কর, আরও তীব্র। নির্জন জানে, সে তার ভালোবাসার জন্য আরও অনেক কিছু করবে। তার মনোভাব, তার কাজ সবই এখন এক ভয়ং**কর পথে পরিচালিত হচ্ছে।”

———-
“রাত সাড়ে ১০টায় খাওয়া-দাওয়া করে নাদিয়া নিজের রুমে গিয়ে শোয়ার প্রস্তুুতি নিচ্ছে।আজ সে বাবার বাড়ি আসতে পেরে ভীষণ খুশি।”

“বিকাল থেকে মন ভার করে মুখ গোমড়া করে রেখেছিলো নাদিয়া।নাদিয়ার মিষ্টি মুখ খানা মলিন দেখে, নাদিয়ার শাশুড়ি বুঝতে পারলেন,যে নাদিয়া তার বাবার বাড়ির জন্য মন খারাপ করেছে।বোঝাটাই স্বাভাবিক।কারণ, তিনিও তো নতুন পরিবেশে এসে একই ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন।প্রাণোচ্ছল মেয়েটি খুব কম সময়ে তার মনে জায়গা করে নিয়েছে।”

“সন্ধ্যায় দিগন্ত বাসায় ফিরলে,তিনি নাদিয়াকে নিয়ে ওর বাবার বাড়ি ঘুরে আসতে বললেন।যেহেতু রিমনের মৃ**ত্যুর কারণে রিসিপশন ক্যান্সেল হয়ে গেছে,তাই মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
মায়ের কথা মতো দিগন্ত সন্ধ্যায় নাদিয়াকে নিয়ে ওর বাবার বাড়ি যায়।”

“শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে রাত পর্যন্ত ভদ্রতার সহিত কথপোকথন করে,নাদিয়াকে নিয়ে রুমে যেতেই দিগন্তের মুখ-মন্ডল চুপসে যায়।নাদিয়া যখনই ঘুমানোর প্রস্তুুতি নিবে,তখনই দিগন্ত ওর হাত টেনে কাছে এসে বললো,

“আমি এই সিঙ্গেল বেডে কিভাবে ঘুমাবো?”

“নাদিয়া বিষয়টি বুঝতে পেরে বললো,
‘ঠিক আছে চলো,গেস্ট রুমে যাই।সেখানে দু’জনে আরাম করে ঘুমাতে পারবো।”

“দিগন্ত হিং**সুটে স্বরে বললো,
‘মোটেও না।ওই রুমে ব্রিটিশ ইহান এবং তোমার ফুফু ঘুমিয়েছিলো।সেখানে আমি কখনোই ঘুমাবো না।”

“এইবার রেগে গেলো নাদিয়া।কটমটিয়ে বললো,
‘ওকে, তাহলে তুমি ড্রয়িং রুমে ঘুমাও।আমার এখন খুব ঘুম পাচ্ছে।তোমার সাথে বকবক করার সময় নাই।আর মনে রেখো, এটা আমার বাবার বাড়ি।তুমি বলবে,আর আমি গিলবো,এটা অসম্ভব।”

“দিগন্ত এইবার নাদিয়ার হাত আরও জোরে চেপে ধরে কাছে টেনে বললো,
‘তুমি তো নিরামিষভোজী নারী।তোমার ফিলিংস না থাকলেও, আমার অনেক আছে।নতুন বিয়ে করেছি কি ড্রয়িং রুমে শুয়ে মশা মা**রার জন্য?আর মনে রেখো, এটা আমারও শ্বশুর বাড়ি।তোমাকে এখান থেকে কোলে তুলে নিয়ে যাওয়ার অধিকার আমার আছে।তবে একটা শর্তে ড্রয়িং রুমে শুতে পারি।”

‘কি শর্ত?’

“প্রথমে তুমি সোফার ওপর টান টান হয়ে শুয়ে পড়বে।তারপর তোমার ওপর আমিও শুয়ে পড়বো।ব্যাস, হয়ে গেলো।কি বলোতো হানি,বিয়ের পর থেকে তুলতুলে নরম বালিশ ছাড়া আমার একদম ঘুম হয় না।’
বলে ঠোঁট টিপে হাসলো দিগন্ত।”

“দিগন্তের ঠোঁট কা**টা কথাটি বুঝতে দেরি হলো না নাদিয়ার।নাদিয়া যখনই আঙ্গুল উঁচিয়ে কথা বলতে যাবে,তখনই দিগন্ত ওকে অবাক করে দিয়ে,ওর ঠোঁটে আলতো করে চুৃমু দিয়ে,কোলে তুলে সদর দরজা খুলে বাইরে যেতে নিলে,
পেছন থেকে নাদিয়ার মা ডেকে ওঠেন,

‘একি তোমরা এতো রাতে কোথায় যাচ্ছো?’

“দিগন্ত আকস্মিক এভাবে কোলে নেওয়াতে নাদিয়া যেনো বাকশক্তি হারিয়ে হতভম্ব হয়েছিলো।তার ওপর মায়ের ডাক শুনে লজ্জায় ম””রি ম”””রি অবস্থা।দিগন্তের দিকে তাকিয়ে কটমটিয়ে বললো,
‘কোল থেকে নামাও,মা দেখছে।”

“দিগন্ত গা জ্বালানো হাসি দিয়ে নাদিয়া কে কোল থেকে নামিয়ে দিলো।মুচকি হেসে নাদিয়ার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘মা আপনার মেয়েটা না ভীষণ বাচ্চাসুলভ আচরণ করে।দেখুন না!এই রাতে বলছে, ওকে কোলে করে আমাদের বাসায় নিয়ে যেতে, হাহাহা..।তাই আমিও ওর বায়না পূরণ করছিলাম, হাহাহা।”

“দিগন্তের কথা শুনে নাদিয়ার মা নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘সে কি রে! সন্ধ্যায় তো এলি।আজ রাতটুকু না থেকেই চলে যাবি?এত তাড়াতাড়ি বাবা-মায়ের থেকে মায়া উঠে গেলো?”

“না মা,তেমন কিছুনা।আমি তো এগুলো কিছুই বলিনি।”

“হয়েছে,যা বোঝার বুঝে গিয়েছি।আমাকে আর বোঝাতে হবে না।মেয়ে আমার বিয়ে করে, পর হয়ে গেছে।’
অভিমানী স্বরে বললেন রুনা বেগম।”

“মায়ের মুখে এহেন কথা শুনে নাদিয়া ভড়কে গেলো।দিগন্তের হাত ধরে, কিছুটা দূরে নিয়ে গিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে নিচু স্বরে বললো,

‘মা কে পেট বানিয়ে মিথ্যা বলে,মায়ের কাছ থেকে আমায় কথা শুনালে কেনো?
দাঁড়াও আজ তো তোমায় স্পেশাল শাস্তি দিবো।বাসায় একবার গিয়ে নেই,তখন মজা বোঝাবো।”

“দিগন্ত বাঁকা হেসে নাদিয়ার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,
‘আমিও মজা নিতে চাই হানি।এক কাজ করো,বাসায় গিয়ে তুমি ওই নেভি ব্লু কালার নাইটি টা পড়বে,যেটার সামনে ওপেন লাভ শেপ আছে, হিহিহি।তাহলেই খুব মজা পাবো হানি।”

“দিগন্তের এহেন নির্লজ্জ টাইপ কথায় বোকা বনে গেলো নাদিয়া।”
মুখ থেকে ভাষাগুলো যেনো উধাও হয়ে গেলো।এ কেমন বেহায়া পুরুষ কে বিয়ে করেছে সে?”

———-
“রাত পেরিয়ে সূর্য় রশ্মি উঁকি দিতেই ঘুম ভে**ঙে গেলো তোহার।রাতে নিধি যখন বললো,নির্জনের সাথে রমনার বটমূলে দেখা করতে যাবে।তখনই তোহা একটা প্ল্যান করে ফেলে।আগামীকাল সকালে মাহিরের চেম্বারে গিয়ে দেখা করে তাকে সারপ্রাইজ দিবে।তাই রাতে মাহিরের ফোন রিসিভ করেনি।বেচারা একটু টেনশনে থাকুক।কষ্টের সাথেই রয়েছে স্বস্তি।যখন হসপিটালে তোহা কে দেখবে,তখন ঠিক চমকে যাবে,সাথে বেশ খুশিও হবে।’

‘ভেবে খুব ভোরে উঠে বিড়াল পায়ে কিচেনে গিয়ে যথাযথ নিঃশব্দে মাহিরের প্রিয় চিকেন নুডলস,এবং গুড়া দুধ দিয়ে পায়েস রান্না করলো।টেস্ট ঠিক আছে কিনা সেটা চেক করে,একটু ঠান্ডা করে দুটি বক্সে ভরে নিলো।তারপর কিচেন ক্লিন করে, রুমে গিয়ে পড়তে বসলো।মাঝে মাঝে বইয়ের ভেতর মুখ গুঁজে মুচকি হাসলো।কখন সকাল ১১টা বাজবে,আর কখন সে মাহিরের কাছে যাবে,ভেবে খুশিতে মন আঁকুপাঁকু করে উঠলো।”

———
“সকাল ৯টায় রফিক মির্জা টিভির হেডলাইনের লেখাগুলো মনযোগ দিয়ে পড়ছেন।আর অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যায় প্লাবিত মানুষগুলোর জন্য অনেক দোয়া করছেন।গতকাল তার জমানো কিছু টাকা এবং জামা-কাপড় একটি সংগঠনে দান করে এসেছেন।
ইদানীং হঠাৎ করেই বুকের ব্যথাটা তীব্র বেড়ে যায়।নইলে গত বছরের মতো,তিনিও সবার সাথে যোগ দিয়ে, অসহায় মানুষদের স্ব শরীরে সাহায্য করতে এগিয়ে যেতেন।’
ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রফিক মির্জা।”

“এদিকে নিধি শপিং করতে যাবে এবং তোহা নীলক্ষেত থেকে কিছু বই কিনবে বলে, কলেজ ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার প্রস্তুুতি নিয়েছে।মূলত তোহার ব্যাগে মাহিরের জন্য খাবার নেওয়া হয়েছে।”

“তাহমিনা বেগম ওদের কে বলে দিলেন,এক ঘন্টার মধ্যে যেনো বাসায় চলে আসে।”

“নিধি এবং তোহা মায়ের কথায় সায় জানিয়ে বিদায় নিলো।”

———
“মাহির মাত্রই কিছু রোগী দেখে চায়ের কাপে ঠোঁট ডুবিয়েছে।রাতে কয়েকবার তোহা কে ফোন দিয়েছে।কিন্তুু তোহা ফোন রিসিভ করেনি।তাই মন টা ভীষণ খারাপ এবং বেশ চিন্তিত।তার স্বপ্নচারিনী তো কখনোই তার সাথে এমনটা করেনা।’
ভেবে হাতে ফোন নিয়ে যখনই তোহাকে কল করতে যাবে,তখনই মাহিরের এসিস্ট্যান্ট এসে বললো,
‘স্যার বাইরে একজন মেয়ে এসেছে।”

“কোনো পেশেন্ট?”

” না স্যার,বলছে আপনার পরিচিত।তাকে কি ভেতরে পাঠাবো।”

‘ওকে, পাঠাও।’

“লোকটি রুম থেকে চলে যেতেই,কয়েক সেকেন্ড পর তোহা রুমে প্রবেশ করতেই বিস্ময়ে চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেলো মাহিরের।অবাক চাহনি নিক্ষেপ করে বললো,
‘তুমি এখানে?”

“তোহা দুই হাত দুই দিকে মেলে বললো,
‘হাহাহা..সারপ্রাইজ!এইজন্যই গতকাল রাতে আপনার ফোন ধরিনি।”

‘বলেই এগিয়ে গেলো তোহা।কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে মাহিরের সামনে থাকা টেবিলের ওপরে রেখে, চেইন খুলে দুটি খাবারের বক্স বের করে বললো,
‘এই নিন।হা.. করে তাকিয়ে না থেকে এটা খুলুন।এখানেও সারপ্রাইজ আছে।”

“মাহির এখনও বিস্ময়ের সীমানা পার হতে পারে নি।”

“মাহিরের এমন ভাব-ভঙ্গি দেখে তোহা ঠোঁট টিপে হেসে নিজেই নুডলস এর বক্স খুলে, চামচে উঠিয়ে মাহিরের সামনে ধরে বললো,
‘নিন খেয়ে আমায় উদ্ধার করুন।অলরেডি ঠান্ডা হয়ে গেছে।খুব ভোরে উঠে বানিয়েছি।’

“বিস্ময় কা**টিয়ে,মাহির মুখে মুচকি হাসি ফুটিয়ে বললো,
‘এটা সত্যি; দারুণ সারপ্রাইজ ছিলো।গতকাল থেকে আমার পা**গল প্রায় অবস্থা হয়ে গেছিলো।সকালে কিছুই খাইনি।’
বলেই একটু ঝুঁকে নুডলস মুখে নিয়ে বললো,

‘ওয়াও ইয়াম্মি।তোমার হাতের রান্না তো দারুণ।তুমি তো দেখছি স্বপ্ন-রাঁধুনি।”

“আর কত নাম যে দিবে মাহির!সেটা ভেবেই তোহা অবাক হয়ে গেলো।”

“মাহিরের সত্যি ক্ষুধা লেগেছে।তাই তো পুরো নুডলস খেয়ে নিলো।’
ভেবে মুচকি হাসলো তোহা।তারপর পায়েসের বক্স খুলে বললো,
‘নিন,ঝাল খাবারের পর এইবার মিষ্টি মুখ করুন।’

“মাহির পায়েস দেখে তো আরও খুশি হলো।পায়েসের বাটি সামনে নিয়ে, পরম তৃপ্তিতে চোখ জোড়া বন্ধ করে পায়েস খেতে খেতে বললো,

“একটা কথা বলি স্বপ্নচারিনী?”

‘হুম বলুন।’

“তোমার হাতের মিষ্টি পায়েস খেয়ে,এই মুহূর্তে তোমাকে নিয়ে জাহাজে উঠতে ইচ্ছে করছে।তারপর সূর্যের কিরণ দেখতে দেখতে টাইটানিক মুভির নায়ক জ্যাকের মতো, তোমাকে ডার্ক লিপ কিস করতে ইচ্ছে করছে।”

“মাহিরের এহেন কথায় থতমত খেয়ে গেলো তোহা।ফোনে না হয় সবসময় বলে,তাই বলে সামনা-সামনিও?
নাহ!আর এখানে থাকা যাবে না।”

“তোহার ভাবনার মাঝেই মাহির আবার বললো,
‘তারপর তোমাকে একটি রুমে নিয়ে গিয়ে,ওগুলো করতে ইচ্ছে করছে,আরে ওই যে নায়িকা রোজ টানটান হয়ে শুয়ে ছিলো, আর জ্যাক মিটমিটিয়ে হেসে তার সর্বাঙ্গের পেইন্টিং করছিলো।উফফ!ব্যাপারটা কি দারুণ ছিলো; তাই না?
আচ্ছা,ছবিটা দেখেছো?”

“ব্যাস, এরপর যে মাহির কি বলবে সেটা বোঝা হয়ে গেছে।আর থাকা যাবে না।তোহা এখানে যেটা করতে এসেছিলো সেটা হয়ে গেছে।এখন পাখি ফুরুৎ।’
ভেবে তোহা ব্যাগ নিয়ে,সেখান থেকে বিড়াল পায়ে প্রস্থান করলো।”

“এদিকে মাহির তো টাইটানিক মুভির অর্ধেক রোমান্টিক দৃশ্য বলে ফেলেছে।যখনই তোহার সাড়া শব্দ পেলো না।তখনই তাকিয়ে দেখলো, সামনে এসিস্ট্যান্ট হা করে তাকিয়ে আছে।”

“মাহির ভ্রুকুটি করে করে বললো,
‘মেয়েটা কোথায় গেলো?’

“এসিস্ট্যান্ট বিস্ময়ের স্বরে বললো,
‘স্যার মেয়েটাতো কয়েক মিনিট আগে চলে গেলো।তবে স্যার, আপনি যে টাইটানিক মুভির রোমান্টিক দৃশ্যের এত সুন্দর বর্ণনা দিতে পারেন,সেটা ভেবে খুব অবাক হলাম।সত্যি স্যার,আপনি ভীষণ রোমান্টিক।’
বলেই ঠোঁট টিপে হাসলো এসিস্ট্যান্ট।”

“এসিস্ট্যান্টের মুখনিঃসৃত বাক্যগুলো শুনে কিঞ্চিৎ লজ্জা পেলো মাহির।’
ভাবলো,
‘যাহ!স্বপ্নচারিনীর জন্য আমার প্রেস্টিজের ফালুদা হয়ে গেলো।”
পরক্ষণেই দেখতে পেলো, টেবিলের ওপর একটি পিংক কালার চার কোণায় ভাজ করা চিরকুট।মাহির বেশ অবাক হয়ে চিরকুট টি খুলে পড়তে যাবে;এমন সময় নতুন পেশেন্ট এসে হাজির।”

“যাহ!বেচারা মাহিরের মুখ টা তখন দেখার মতো ছিলো।
মনে মনে নিজেকেই নিজে ধি””ক্কার দিয়ে বললো,
‘রোমান্টিক কথা বলতে গেলে হবু বউ পালিয়ে যায়।এদিকে রোমান্টিক চিঠি পড়তে গেলে, পেশেন্ট এসে হাজির হয়।ধুর.. ভাল্লাগেনা।”

———-
“রমনার বটমূলে বসে আছে নির্জন আর নিধি। বাতাসে বয়ে যাচ্ছে মিষ্টি মাটির গন্ধ, আর গাছের পাতায় পাতায় খেলা করছে সূর্যের আলো। বটগাছের নিচে ছায়ার মাঝে বসে আছে ওরা দু’জন। সামনে একটি পুকুর, যার শান্ত পানিতে প্রতিফলিত হচ্ছে গাছের ছায়া আর আকাশের নীল রঙ।”

“নির্জন নিধির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
‘তুমি জানো ডার্ক কুইন, এই পুকুরের পানির মতোই তোমার চোখের গভীরতা আমাকে টানে।”

“নিধি একটু লজ্জা পেয়ে পুকুরের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘আর আপনি এই পুকুরের সেই শান্ত পানির মতোই, নির্জন। আমাকে অসীম শান্তি দেওয়ার অন্যতম কারণ।’

” নিধির কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।পুকুরের হালকা ঢেউয়ের আওয়াজে মিশে যায় তার হাসির শব্দ, আর বটগাছের পাতা ধীরে ধীরে বাতাসে দুলতে থাকে, যেনো প্রকৃতিও তাদের প্রেমের সাক্ষী হয়ে আছে।”

“মুখে থাকা মাস্ক খুলে নিধি বললো,
‘আমি আপনাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য এখানে এসেছি নির্জন।’

“নির্জন পাত্তা দিলো না সে কথায়।নিধির দিকে কিছুটা ঝুঁকে বললো,
‘I love you even more Dark Queen.’

‘নিধি মিষ্টি করে হেসে বললো,
‘I love you very much too.’
এখন আমার কথাটা শুনুন।”

“উহুম..আগে আমার হাতে হাত রাখো তারপর শুনবো।’
বলেই নির্জন নিধির দিকে হাত এগিয়ে দিলো।”

“উফফ! কি গভীর অনুভূতি।নিধি লাজুক হেসে নির্জনের হাতে হাত রাখতেই,নির্জন ভ্রূকুটি করে বললো,
‘তোমার অনামিকা আঙ্গুলের চামড়ায় এত গভীর ভাবে লেপ্টে থাকা আংটি টা কি তুমি কিনেছো?”

“সহজ-সরল চঞ্চলমনা নিধি মুচকি হেসে বললো,
‘নাহ!এটা ফ্রেন্ডশিপ ডে তে নাদিয়া আমায় গিফট করেছিলো।ওকে বলেছিলাম,আমার গোল্ডেন স্টোনের আংটি খুব ভালো লাগে।তাই ও আমাকে সারপ্রাইজ দিয়েছে হিহিহি।”

“নিধির এহেন কথায় নির্জনের মাথার উগ্র পোকা গুলো নিমিষেই কিলবিল করে উঠলো।”

#চলবে…
(অ্যাটেনশন প্লিজ।এখানে যারা সাইন্সের স্টুডেন্ট আছেন,আশা করি এসিডের বিবরণ গুলো পড়তে আপনাদের আনইজি লাগছে না।আমার মতোই ইনজয় করছেন।আর যাদের এতটুকু বিষয় ভালো লাগবে না।তারা এই লাইনগুলো স্কিপ করবেন।
তবে গল্পের মেইন পয়েন্ট হলো এই লাইনগুলো।
ইতোমধ্যে অনেকে বুঝে গেছেন,এখানে বিজ্ঞানের খেলা হবে।তবে গল্পের ক্যাটাগরি এবং ভিলেন চরিত্রটির সাথে মিল রেখে পৈ**শাচিক ভাবে।
আর আপনাদের উদ্দেশ্যে আরেকটা কথা বলতে চাই।আমাদের মধ্যে অনেকেই ‘ডার্ক রোমান্স’ বলতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার স্বাভাবিক রোমান্সগুলো বোঝে।
যারা ‘ডার্ক রোমান্স’ সম্পর্কে জানে,তাদের কে নতুন করে কিছু বলার নেই।
তবে যারা জানে না,তাদের উদ্দেশ্যে কিছু লাইন বলছি।

‘ডার্ক রোমান্স শুধু ওই রোমান্স কে বোঝায় না।এর আগে পরে থাকে কিছু ভয়ং**কর থ্রিলার কাহিনী।যার প্রতি পদে পদে থাকে রহস্য।ভ**য়াবহ মা**র্ডার,সেগুলোও নিখুঁত এবং ভয়ং**কর ভাবে ঘটে।আর গল্পের মূল চরিত্র টি কখনোই তেমন পজিটিভ দিক গ্রহণ করে না।আরও যদি হয় সাইকো,তাহলে তো কথাই নেই।গল্পের মেয়েটি তার স্ত্রী হোক বা যাই হোক।তাদের মধ্যকার সম্পর্কে যখনই টানা-পোড়েন দেখা দেয়,তখনই হিং**স্র চরিত্র টি নারীটির সম্পূর্ণ অনিচ্ছায় যে রোমান্স করে সেটাই হলো- ‘ডার্ক রোমান্স’।
মোট কথা হলো,ডার্ক রোমান্স বলতে
(থ্রিলার+ভয়ং**কর মার্ডার+রোমান্স)এগুলো কে বোঝায়।এরা ভিলেনের থেকেও নিকৃষ্ট হয়।বাংলাদেশে এমন গল্প কেউ লিখেনি।আমিও লিখবো না।
অনেকে প্রশ্ন করেন,
‘আপু আপনার মাথায় এতো ভয়ং**কর মা**র্ডার থিম আসে কি করে?’
উত্তর হলো:সাইকোলজিক্যাল কাহিনী,ফ্যান্টাসি কাহিনী এগুলো নিয়ে আমি প্রচুর ভাবি,এবং আমার কল্পনার রাজ্য থেকে অটোমেটিক তৈরি হয়ে যায়।হতে পারে এগুলো নিয়ে অতিরিক্ত ভাবার কারণে আমার ব্রেইন টা তেমন হয়ে গেছে।’

এই গল্পটি আমি সাইকো পাঠিকাদের জন্য সম্পূর্ণ ইউনিক ভাবে উপস্থাপন করতে চাইছি।যেখানে প্রথম থেকে খুব সাদামাটা ভাবে শুরু করেছি,যেনো গল্পের প্রতিটি লাইন,এবং প্রতিটি চরিত্র আপনারা গভীর ভাবে উপলব্ধি করতে পারেন,তবেই তো গল্পের আসল মজা হবে।আর নির্জন চরিত্র টিকে যারা অপছন্দ করেন,তাদের কে বলবো,গল্পটি দয়া করে ইগনোর করবেন।কারণ সে ভিলেন।তার চরিত্র নিয়ে পজিটিভ ভাবনা করাটাও ভুল।তাকে সেভাবেই উপস্থাপন করা হবে।গল্পের বাকি ২জুটিদের নিয়ে লিখতে গেলে আমি যতটা ফুরফুরে থাকি।কিন্তুু নির্জনের চরিত্র টি লিখতে গেলে ততটাই সিরিয়াস থাকি।মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা করে।তার পার্ট লিখতে গেলে আমি কয়েকবার থেমে যাই।অনেকবার ভেবে, বই থেকে শুরু করে সবকিছু ঘাটাঘাটি করে তারপর লিখি।আর কেউ একদিনে খারাপ হয় না।নিশ্চয়ই তার পেছনে বিষাক্ত অতীত লুকিয়ে থাকে।
এটাই বলার ছিলো।আমি সামনের পর্বগুলোতে ধীরে ধীরে সব কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।আর ডার্ক রোমান্স সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বিশ্লেষণ করবো।
সবার জন্য ভালোবাসা অবিরাম।গঠনমূলক মন্তব্য করতে ভুলবেন না।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here