হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ #পর্বঃ৩২ #লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

0
4

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩২
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,

‘I love you excessively my Dark Queen.’

“নির্জনের মায়া মিশ্রিত কথায় গলে গেলো নিধি।এমন একজন কেই তো সে জীবন সঙ্গী হিসাবে চেয়েছিলো।যে শুধু তার প্রতি গভীরভাবে আসক্ত থাকবে।আর তাকেই সর্বোচ্চ দিয়ে গুরুত্ব দিবে।যার ভালোবাসায় কিছুটা পা**গলামিও থাকবে।সেই সবকিছু নির্জনের মধ্যে রয়েছে।’
কথা গুলো ভাবতেই নিধির মুখে হাসি ফুটে উঠলো।”

“নির্জনের দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
‘আমি সত্যি খুব সৌভাগ্যবতী নির্জন।আমি চাই আপনার মতো ভালো মানুষগুলো যেনো সব মেয়ের ভাগ্যে জোটে।আমার বান্ধবীগুলো যদি এমন ব্যক্তিত্ববান পুরুষ জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতো,তাহলে হয়তো তাদের অত্যাচার-নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হতো না।”

“নিধির কথায় নির্জন মুচকি হেসে বললো,
‘তুমি চিন্তা করো না ডার্ক কুইন;আমি তোমার ভীষণ খেয়াল রাখবো।আমার মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসার চাদরে তোমায় সর্বদা মুড়িয়ে রাখবো।তোমাকে আমার আঁধার রাতের রানী করে রাখবো।”

“এভাবে দু’জন আরও কিছুক্ষণ কথা বললো।অতঃপর নির্জন,মাহির এবং তার পরিবার রফিক মির্জা এবং তার আত্মীয়-স্বজনের সাথে বিয়ে সম্পর্কিত আরও আলোচনা করে চলে গেলো।”

————–
“অতঃপর কে**টে গেলো একটি নিদ্রাহীন রাত।কিছু মানুষ সংসারের টানা-পোড়েনে রাত্রি জাগরণ করে,কিছু মানুষ সুখের ভেলায় ভেসে রাত্রি জাগরণ করে।কিছু রোমান্টিক যুগল তাদের ভালোবাসাকে সাক্ষী রাখতে রাত্রি জাগরণ ঘটায়।এভাবেই কে**টে যায় এই নশ্বর দুনিয়ার দিন-রাত।”

“প্রভাতের সূর্য উদিত হতেই নিধি এবং তোহার ডাক পড়লো,

তাহমিনা বেগম রুমে এসে গম্ভীর স্বরে বললেন,
‘এই যে দুই মহারানী, আর কতো ঘুমাবি?তাড়াতাড়ি ওঠ,ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হবি।একটু পর আত্মীয়-স্বজনে ঘর ভরে যাবে।আর নাদিয়া কে ফোন করে বল,ও যেনো আজ রাতে আমাদের বাসায় চলে আসে।বিয়ের পর তো চাইলেই দুই বান্ধবী একসাথে থাকতে পারবি না।তাই কিছু সময় একসাথে কা**টা,ভালো লাগবে।’
বলেই হনহন করে চলে গেলেন তাহমিনা বেগম।আজ বাদে কাল তার দু’টো মেয়ের বিয়ে।তার মাথার ওপর অনেক দায়ভার রয়েছে।”

“এদিকে মায়ের চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে তোহা বললো,
‘আজ আমার কোনো বেস্ট ফ্রেন্ড নেই বলে বাসায় ডাকতে পারলাম না।সমস্যা নেই,, কিছু ক্লোজ ক্লাসমেটদের ইনভাইট করবো।আর আমার একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড তো হবে মাহির।তার মতো এমন একজন ফ্রী ফায়ার টাইপ মানুষ থাকলে আর কি লাগে?’
ভেবে মুচকি হাসলো তোহা।”

“অতঃপর দুই বোন মিলে একে একে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
তারপর দু’জনে তাহমিনা বেগমের সাথে কিচেনে গিয়ে হাতে হাতে সাহায্য করলো।দুই মেয়েকে একসাথে দেখে চোখ জোড়া নিমিষেই ছলছল করে উঠলো তাহমিনা বেগমের।একজন নয়, দু’জন মেয়ে এই বাড়িটা খালি করে চলে যাবে।ভাবতেই বুকটা ভারি হয়ে আসছে।হয়তো রফিক মির্জারও একই অবস্থা।’
কথাগুলো ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাজে মনোনিবেশ করলেন তাহমিনা বেগম।তাকে এভাবে কাঁদতে দেখলে নিধি এবং তোহাও কেঁদে ভাসাবে।এই মুহূর্তে কোনো রকম আবেগঘন পরিবেশ তৈরি করতে চাইছেন না তিনি।তাই দুই মেয়ের সাথে আজ খুব হেসে হেসে কথা বলছেন তিনি।শ্বশুর বাড়ি গিয়ে প্রথম অবস্থায় একটু কষ্ট হলেও কিভাবে মানিয়ে নিতে হবে,কিভাবে তাদের মন জয় করতে হবে,কিভাবে স্বামীর প্রতি সম্মান দেখাতে হবে,সবকিছু বুঝিয়ে বললেন।”

“বিশেষ করে নিধির থেকে তোহা কে বেশি বোঝালেন।কারণ তোহার শ্বশুর, শাশুড়ি উভয়েই আছে।আর নিধি কে উপদেশ দিলেন, ঐ বাড়িতে গিয়ে শাশুড়ির যেনো ভালোভাবে যত্ন নেয়।”

“এই নীরব নারীটির মুখে এতো জ্ঞানের বাণী শুনে, নিধি এবং তোহা দু’জনেই চমকে গেলো।তাদের মা তো সবসময় খুব কম কথা বলে।অথচ আজ মুখ ফুটে কতো কথা বললো।
মনে হলো,মা নয় বেস্টফ্রেন্ড বোঝাচ্ছে।’
কথাগুলো ভেবে ভীষণ খুশি হলো নিধি এবং তোহা।”

“মেয়েদের মুখে প্রাণোচ্ছল হাসি দেখে, চোখের অশ্রু সন্তর্পণে আড়াল করে তাহমিনা বেগম ও হেসে দিলেন।
ধীরে ধীরে পুরো বাড়ি আত্মীয়-স্বজনে ভরপুর হয়ে গেলো।”

“নিধি রুমে গিয়ে নাদিয়া কে ফোন করে রাতে থাকার প্রস্তুতি নিয়ে ওদের বাসায় আসতে বললো।
নাদিয়া দিগন্ত কে বলতেই,ইলেকট্রিক শকড খাওয়ার মতো কেঁপে উঠলো দিগন্ত।কিছুতেই সে নাদিয়া কে অন্য বাসায় রাত্রি যাপন করতে দিবে না।বউ ছাড়া এক রাত্রিও সে থাকবে না।কত সাধনার পর প্রিয়তমাকে নিজের করে পেয়েছে।তাকে ছাড়া এক রাত থাকা মানে কনকনে শীতের রাতে কম্বল ছাড়া থাকা সমান ব্যাপার।”

“নাদিয়া বেচারি হাজার বুঝিয়েও লাভ হলো না।তাই দিগন্ত কে বুঝিয়ে, শুধু পুরো দিন থাকার পারমিশন নিলো।
অবশেষে দিগন্ত রাজি হয়েছে,আর বলেছে,
‘অফিস থেকে ফেরার সময় নিধির বাসার সামনে থেকে নাদিয়াকে নিয়ে যাবে।”

“নাদিয়াও হাসি মুখে সায় জানিয়েছে।সেই সাথে দিগন্ত কে একটা চুমু উপহার দিয়েছে।
দিগন্ত তো চুমু পেয়ে তার চিরাচরিত অভ্যাস ঠোঁট কা**টা কথা না বলে থাকতে পারলো না।
তার প্রচলিত টেপ রেকর্ড ছেড়ে দিলো।
নাদিয়ার কানে কানে ফিসফিস করে বললো,
‘আমার বেস্টফ্রেন্ড বাসর করবে, আর আমি বসে বসে মাছি মা**রতে পারবো না।আমি ও কিন্তুু সবকিছু চাই,এইবার আর বাড়াবাড়ি করতে পারবে না।”

“নাদিয়া বড় বড় চোখ করে বললো,
‘এগুলো ছাড়া কি তোমার আর কোনো কথা নেই?”

“দিগন্ত মুচকি হেসে বললো,
‘দোষ তোমার চুমুর।তোমার শীতল ঠোঁটের উষ্ণ চুমুর কারণেই তো বোবার মুখে কথা ফুটেছে।”

“দিগন্তের কথা শুনে নাদিয়ার আকাশ থেকে পাতালে ধপাশ করে পড়তে মন চাইলো।কটাক্ষ করে বললো,
‘হাহ..তুমি বোবা?তাহলে বিশ্ব সেরা বাঁচাল কে?”

“দিগন্ত নাদিয়ার ডান গালে চুমু দিয়ে বললো,
‘খামোখা আমাকে রাগিয়ে এইমুহূর্তে নিজের ঠান্ডা বাঁধিও না।এমনিতেই অফিসে যেতে লেট হয়ে যাচ্ছে।এখন এইসব করলে আরও লেট হবে হানি।সো প্লিজ, আমি এখন বের হলাম।’
বলেই গা জ্বালানো হাসি দিয়ে নাদিয়ার বাম গালে টুপ করে চুমু দিয়ে চলে গেলো দিগন্ত।”

“নাদিয়া বেচারির চোখজোড়া কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো।কি বলবে সে?এতো নির্লজ্জ পুরুষও হয়?নিজেই ঠোঁট কা**টা কথা বলে,সেটাকে আবার আমার ওপর ধামাচাপা দেয়।হায় আল্লাহ! রক্ষা করো।”

————
“সন্ধ্যার একটু পরে নিধি এবং তোহার রুমে কাজিনদের মহরা বসেছে।যে যার মতো মেহেদী দেওয়াতে ব্যস্ত।পার্লার থেকে কিছু মেয়ে এসে তোহা এবং ওর কাজিনদের হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে।আর নিধির হাতে খুব যত্ন করে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে নাদিয়া।”

“নাদিয়া দুষ্টু হেসে বললো,
‘কি লিখবো?N+N?’

“নিধি মুচকি হেসে বললো,
‘উহুম…’Nirjon+Dark Queen ‘ লিখে দে।”

“বাব্বাহ! কতো প্রেম।দোয়া করি,তোদের এই প্রেম যেনো সারাজীবন অটুট থাকে।’
বলেই ফিক করে হেসে দিলো নাদিয়া।
নিধিও মুচকি হেসে বললো, ‘আমিন।”

“এই মুহূর্তে নিধি যদি জানত, তার হবু বরটি কেমন; তাহলে নিশ্চিত এই হাতে নির্জনের নামের জায়গায়
‘সাইকো+ডার্ক কুইন’ লেখা হতো,অথবা হতো না।”

“এদিকে তোহাকেও পার্লার থেকে আসা মেয়েটি জিজ্ঞেস করছিলো, যে কি লিখে দিবে?’

তোহা লাজুক হেসে বলেছে,
‘স্বপ্ন পুরুষ+স্বপ্নচারিনী’ লিখে দিতে।
মেয়েটি মুচকি হেসে তাই লিখে দিলো।”

“এদিকে মেহেদী দেওয়ার পর তোহার শরীরে চুলকানি শুরু হলো।বেচারি মেহেদী দিলেই এই সমস্যা হয়।তোহা ওর কাজিনদের ঘাড়ের কাছে হাত দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে দিতে বললে,ওরা মজা করে তোহার পুরো চুলগুলো খুলে দেয়।একে তো গরম,তার ওপর চুল গুলো খুলে দেওয়াতে আরও অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে।বেচারি তোহা লজ্জায় কিছু বলতে পারলো না।”

“নিধিদের বাড়িতে তেমন ভাবে হলুদের আয়োজন করা হয়নি।তবে ওরা কাজিন রা মিলে হলুদ দিয়ে নিধি এবং তোহার মুখমণ্ডলের ১২টা বাজিয়েছে।
সন্ধ্যার একটু পর মাহিরের এক আত্মীয় এসে তোহার সাজ – সজ্জার জিনিস দিয়ে গেছে।”

“নির্জন যেহেতু আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে সবকিছু থেকে দূরে, তাই সে নিধির জন্য শপিং করে একাই এসেছে।সেই সাথে নিধিকে বলার জন্য অনেক কথা গুছিয়ে এনেছে।”

——-
“সবাই নিধির রুমে তোহা এবং নিধির বিয়ের জিনিসপত্র দেখছে।সবাই নির্জন এবং মাহিরের চয়েজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।”

“এদিকে নির্জন সোফায় বসে রফিক মির্জার সাথে কথা-বার্তায় ব্যস্ত।
রফিক মির্জা দুই মেয়ের বিয়ের জন্য একটি কমিউনিটি সেন্টার বুক করেছেন।মাহিরের পরিবারের সাথে এই বিষয়ে আগেই কথা বলেছেন।নির্জনের সাথে এখন এই ব্যাপারে কথা বললেন।যেহেতু নির্জন এই বাড়ির বড় জামাই হবে,তাই নির্জনের গুরুত্ব টাও সেভাবেই দিতে হবে।
বর্তমানে রফিক মির্জা নির্জনের সাথে খাবারের মেনু নিয়ে আলোচনা করছেন।তিনি ঠিক করেছেন অনুষ্ঠানে,

‘চিকেন টিক্কা,চিকেন ফ্রাই,মাটন বিরিয়ানি,সাদা ভাত,সাথে ডিমের কোরমা,চিংড়ি ভুনা,ডাল মাখনি,গরুর মাংসের ভুনা,টক এবং মিষ্টি দই,ফ্রুট কাস্টার্ড,বোরহানি,
সপানহিয়াঃ তাজা পুদিনা,লেবু,আর সোডা দিয়ে তৈরি ঠান্ডা ড্রিংক।সেই সাথে কিছু বৃদ্ধ মানুষদের জন্য মিষ্টি পান।
আয়োজন টা কমিউনিটি সেন্টারে করা হলেও,খাবার গুলো ঘরোয়া আইটেমের মতো হবে।”

“দীর্ঘ সময় নিয়ে রফিক মির্জার মুখে বাহারি খাবারের চার্ট শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো নির্জন।’
ভাবলো,
‘আমার ডার্ক কুইন কে তো আমি এমনিতেই তুলে নিয়ে বিয়ে করতাম।ভাগ্যিস,সে সহজে রাজি হয়েছে।নইলে এইসব মেলোড্রামা করার কোনো প্রয়োজন ছিলো না।’
কথা গুলো ভেবে গলা খাঁকারি দিয়ে নিজের বরাদ্দকৃত স্থান থেকে উঠে, রফিক মির্জার পাশের সোফায় বসে ভদ্রতার সহিত বললো,

‘বাবা আমি আপনাকে কিছু কথা বলতাম।আই মিন নিজের কিছু মতামত জানাতাম, যদি আপনি অনুমতি দিন।’

“নির্জনের মুখে ‘বাবা’ ডাকটি শুনে, রফিক মির্জার কলিজা যেনো শীতলতায় ছুঁয়ে গেলো।যদিও তার কোনো ছেলের শখ ছিলো না।কিন্তুু নির্জন এবং মাহির কে না চাইতেই সে ছেলে রূপে পেয়ে গেছে।কত ভাগ্যাবান সে।মুখে অনাবিল হাসির ঝলক ফুটিয়ে বললো,
‘হ্যা, বলো বাবা।’

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,
‘বাবা আপনাকে তো সবই বলেছি।আমার যেহেতু কোনো আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ নেই,তো আমি মনে করি, আমার আর নিরুপমার জন্য এতো খাবার থেকে শুরু করে, এত আয়োজন করা বেমানান।এর থেকে ভালো হয় যে টাকাটা আপনি আমাদের বিয়েতে খরচ করবেন,সেটা আপনি বর্তমানে ভুক্তভোগী বন্যার্তদের দান করুন;এতে সৃষ্টিকর্তাও খুশি হবেন।আমি বিয়েটা সাদামাটা ভাবে করতে চাই।তাছাড়া আমি চাই,নিরুপমা যেনো বিয়ের দিন কালো বোরকায় আবৃত থাকে।
আর আমি চাই,আমাদের বিয়ের আয়োজন টা আপনার বাসার খোলা বাগানে আয়োজন করা হোক।কমিউনিটি সেন্টারের বুকিং ক্যান্সেল করে দিন।যেহেতু আপনার বাড়িতে এত সুন্দর একটি খোলামেলা মনরোম পরিবেশ আছে।তো কমিউনিটি সেন্টার বুকিং করে অযথা সময় এবং অর্থ নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।সেই অর্থগুলোও না হয় আপনি গরীব-দুঃখীদের মাঝে বিতরণ করবেন।আমাদের সমাজে যেই অহেতুক অর্থ গুলো মানুষ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শখ করে খরচ করে,সেগুলো একটি গরিব পরিবারে দান করলে,তাদের ১মাসের সংসারও চলে যায়।
যাইহোক,আমি আমার মতামত জানালাম;বাকি কথা আপনি আপনার ছোট মেয়ের হবু স্বামীকে এবং তার পরিবার কে বলতে পারেন।এটাই আমার মতামত।”

“বাহ!এমন ছেলে লাখে একজন মেলে।কোনো বিলাসিতা নেই,কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই।এ যেনো ধূসর আকাশের বুকে ভেসে ওঠা এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।’
কিচেন থেকে একমনে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবলেন তাহমিনা বেগম।মনে মনে বললেন,
‘এই ছেলে তো হিরার টুকরো।আমার দু’টো মেয়ের জামাই হিরার টুকরো।সত্যি,আমার নিধির মতো মেয়ের জীবনে যে এমন একজন বুঝদার ছেলে জুটবে,এ যেনো কল্পনারও বাইরে।’
ভাবতেই তাহমিনা বেগমের চোখজোড়া পুনরায় ছলছল করে উঠলো।”

“অপরদিকে নির্জনের বুদ্ধিদীপ্ত কথা শুনে খুশিতে ঝলমল করে উঠলো রফিক মির্জার মুখমন্ডল।মনে মনে গর্বের সহিত বললেন,
‘আমার নিরুপমা যোগ্য ছেলেকেই বাছাই করেছে।এই ছেলে আমার মেয়েকে সবচেয়ে সুখে রাখতে পারবে।’
ভেবে তিনি নির্জনের কথার সাথে সায় জানিয়ে,মাহিরের বাবা কে ফোন দিয়ে নির্জনের বলা কথা গুলো নিজের মতো করে ব্যক্ত করলেন।
সবকিছু শুনে মাহিরের বাবাও রফিক মির্জার সাথে একমত পোষণ করলেন।”

“অতঃপর বিজয়ের হাসি দিয়ে নির্জন রফিক মির্জার বাসা থেকে বিদায় নিলো।আজ সে তার ডার্ক কুইনের সাথে দেখা করলো না।কারণ, যেই মূল কথাটা বলার ছিলো, সেটা রফিক মির্জার কর্ণকুহরে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে।”

————
“অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ চলেই এলো।আজ নিধি এবং তোহার বিয়ে।সকাল থেকে কিচেনে দাঁড়িয়ে তাহমিনা বেগম কেঁদে ভাসিয়েছেন, তবে সবার চোখের আড়ালে।গতকাল রাতে প্রিয় অর্ধাঙ্গিনীকে জড়িয়ে ধরে রফিক মির্জার চোখ বেয়েও কিঞ্চিৎ অশ্রু কণা গড়িয়ে পড়েছে।তার দু’টো মেয়েতো তার কাছে দু’টো পরী ছিলো।আজ দু’টো দুষ্টু-মিষ্টি পরী শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে,তাদের ঘরটাকে পুরো শান্ত করে দিবে।ভাবতেই বুক ভার হয়ে এলো রফিক মির্জার।কিন্তুু কিছুই করার নেই।এটাই তো সুন্দর অথচ নিষ্ঠুর নিয়তি।”

“গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় নির্জন নিধির সাথে ১৪মিনিট কথা বলেছে।তার মধ্যে মূল টপিক ছিলো, নিধিকে বিয়েতে সাজ-সজ্জার ওপর কালো বোরকা এবং হিজাব পরিধান করতে হবে।শুধু নিধির চোখজোড়া দেখা যাবে।তবে চোখ এতটা সাজানো যাবে না।”

“নির্জনের এহেন কথায় মন খারাপ হয়ে গিয়েছে নিধির।পরক্ষণেই মনে পড়লো, তাহমিনা বেগমের কথা।তিনি বলেছেন,
‘স্বামীর মন জয় করার জন্য নিজের কিছু কিছু বিলাসিতা বর্জন করা উচিত।তবেই প্রকৃত সুখ মিলবে।সব সময় নারীবাদী ভাব ফুটিয়ে তোলার মধ্যেই বিজয় পরিলক্ষিত হয় না।’
কথাগুলো ভেবে মুচকি হেসে, নিধি রাজি হয়ে যায়।তাছাড়া এই সাজ তো সে শুধু নির্জনের জন্যই সাজবে।এটাই তো তার মূল লক্ষ্য।”

“এদিকে রাত ১২টা থেকে ৩টা ১৬মিনিট..মাহিরের সাথে কথা বলতে বলতে তোহার কান যেনো গরম হয়ে যায়।কিন্তুু মাহিরের বাসর রাতের প্ল্যান এখনও শেষ হয় নি।এর মধ্যে তোহা অনেক বার মাহিরের নির্লজ্জ টাইপ কথা শুনে ফোন কে**টে দিয়েছে।কিন্তুু মাহিরও কম নয়,রোমান্টিক টর্চারের ভয় দেখিয়ে, তোহাকে কথা বলতে বাধ্য করেছে।
বেচারি তোহা ঘুম ঘুম চোখে কথা বলতে বলতে একসময় ফোন কানে রেখেই ঘুমিয়ে যায়।
অপরপাশ থেকে তোহার সাড়াশব্দ না পেয়ে একসময় মাহির ফোন কে**টে দিয়ে,ফোনের ওয়ালপেপারে তোহার মিষ্টি হাসিমাখা ছবিতে আলতো করে চুমু দিয়ে ঘুমিয়ে যায়।”

————
“গোধূলির লগ্ন পেরিয়েছে অনেক আগে।
রফিক মির্জার বাগানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্যান্ডেল সাজিয়ে হৈ-হুল্লোড় করছে সব আত্মীয়-স্বজন।
নির্জন,নিধি,মাহির এবং তোহা ওদের দুই জুটির জন্য আলাদা স্টেজ সাজানো হয়েছে।
ইতোমধ্যে নিধি এবং তোহা সাজ-সজ্জা পরিপূর্ণ করে স্টেজে নিজেদের বরাদ্দকৃত স্থানে বসেছে।দুই বোন অধীর আগ্রহে নিজেদের প্রিয়তমর জন্য চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে আছে।কবে দু’জন সুদর্শন পুরুষ এসে দুই বোনের চক্ষু শীতল করবে;সেই অপেক্ষার প্রহর গুণছে নিধি এবং তোহা।”

“অবশেষে ওদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শুভ্র রাঙা ফিতা বাঁধা জায়গায়, দুই জোড়া পা রাখলো দুইজন বর।তাদের সাথে রয়েছে এক ঝাঁক পাখির মতো আত্মীয়-স্বজন।যদিও নির্জনের পক্ষ শূন্য।”

“স্টেজ থেকে নির্জন কে দেখে,বসা থেকে মুখমন্ডল হা করে দাঁড়িয়ে গেলো নিধি।”

“নিধি আজ পরিধান করেছে একটি কালো রঙের ল্যাহেঙ্গা, যেটিতে সোনালি জরির কাজ করা,কালো আর সোনালি জরির মিশ্রণে ল্যাহেঙ্গাটি একদম রাজকীয় দেখাচ্ছে।এর ডিজাইনে আছে সূক্ষ্ম পেইসলি প্যাটার্ন আর ফ্লোরাল এমব্রয়ডারি।
কালো ল্যাহেঙ্গার সাথে নিধির ব্লাউজটি সোনালি জরির কাজ করা, যাতে হালকা পাথরের কাজও রয়েছে। ব্লাউজের হাতা ট্রেডিশনাল লম্বা, কিন্তুু গলার ডিজাইনটি ভি শেপ, যাতে নিধিকে স্টাইলিশ দেখাচ্ছে।তবে সেটা বোরকার আড়ালে।
নিধির ওড়নাটি কালো রঙের, সোনালি জরির বর্ডার এবং ছিটকিনি পাথরের এমবেলিশমেন্ট দিয়ে সাজানো। ওড়নাটি মাথায় ফেলে রাখার কথা হলেও সেটা বোরকার নিচে কাঁধের সাইডে ঝুলানো।
নিধির গয়নাগুলো ভারী, সোনালি এবং রুবি পাথরের কাজ করা। পাথরের কাজের ছোঁয়ায় নিধি যেনো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। নিধির মেকআপ ডার্ক এবং গ্ল্যামারাস। তার চোখে সিম্পল ড্রামাটিক স্মোকি আই মেকআপ, সোনালি আর কালো আইশ্যাডোর মিশ্রণ। গালে হালকা ব্রোঞ্জ এবং ঠোঁটে গাঢ় মেরুন রঙের লিপস্টিক।
নিধির চুলগুলো খোপা করে সেখানে কয়েকটি ছোট ছোট গোল্ডেন স্টোন বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

“নিধির এই রাজকীয় সাজসজ্জা কুচকুচে কালো বোরকা এবং কালো হিজাবে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।এতো শুধু নির্জনের ব্যক্তিগত সম্পদ।এই সম্পদ সবাই দেখবে কেনো?”

“এদিকে নির্জনের শেরওয়ানির রং কালো। নিধির ল্যাহেঙ্গার সাথে ম্যাচ করে শেরওয়ানিটি কিনেছে।শেরওয়ানিটি সিল্ক ফ্যাব্রিকে তৈরি করা, যা দেখতে এবং পরতে রাজকীয় অনুভূতি হচ্ছে । এর উপরে রয়েছে সোনালি জরির সূক্ষ্ম এমব্রয়ডারি কাজ, যাতে নিধির ল্যাহেঙ্গার সোনালি কাজের সঙ্গে সুন্দরভাবে মিলিয়ে গিয়েছে।
শেরওয়ানির ডিজাইন ট্র্যাডিশনাল কিন্তুু একটু আধুনিক ছোঁয়া রয়েছে। সোনালি জরির কাজ করা কলার এবং কাঁধে হালকা এমব্রয়ডারি , যা শেরওয়ানির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সামনের সোনালি বোতাম, যা তার রুচি এবং স্টাইলের পরিচয় বহন করছে।”

“নির্জন শেরওয়ানির সাথে পরিধান করেছে কালো রঙের চূড়িদার পাজামা, যা তার পুরো লুককে সম্পূর্ণ করেছে।”

“নির্জন মাথায় পাগড়িও পড়েছে। পাগড়িটি কালো এবং , সোনালি এমব্রয়ডারি বর্ডারের কাজ দিয়ে সাজানো, যা নির্জনের সাজের সাথে সুন্দরভাবে মিলিয়ে গিয়েছে।
নিধির কালো ল্যাহেঙ্গার সাথে নির্জনের এই কালো-সোনালি শেরওয়ানি সত্যিই দুর্দান্ত মানিয়েছে।”

“নির্জন শেরওয়ানির সাথে মানানসই ঘড়ি পড়েছে।যা একটি ক্লাসিক, এলিগ্যান্ট ডিজাইনের। একটি সোনালি স্টেইনলেস স্টীল ব্রেসলেট ঘড়ি, যাতে একটি কালো ডায়াল আছে। কালো ডায়ালে সোনালি হাত এবং মার্কার আছে, যা ঘড়িটিকে নিধির ল্যাহেঙ্গার সোনালি জরির কাজের সাথে সুন্দরভাবে মিলিয়ে দিয়েছে।এবং চোখে পড়েছে চিরাচরিত চকচকে রিমলেস চশমা।”

“নির্জনের বর বেশে সাজ-সজ্জা দেখে, নিধির মাথা ক্রাশের বস্তা খেয়ে চক্কর দেওয়ার উপক্রম হলো।হায়.. কতো সুদর্শন একজন পুরুষ তার প্রেমিক এবং আজ তাকে স্বামী রূপে গ্রহণ করবে।’
ভাবতেই নিধির শরীর হিম হয়ে গেলো।”

————
“এদিকে মাহির কে দেখে তোহার বারকয়েক টাস্কি খাওয়া শেষ।মনে মনে আঞ্চলিক ভাষায় বুলি আওড়ালো,
‘উইমা..কিতা সুন্দর আমার জামাইডা।”

“আজ তোহা পড়েছে একটি রাজকীয় নীল (রয়্যাল ব্লু) রঙের ল্যাহেঙ্গা। ল্যাহেঙ্গাটির উপরে রয়েছে সোনালি জরির সূক্ষ্ম কাজ এবং পাথরের এমবেলিশমেন্ট। এই রঙ এবং কাজের সংমিশ্রণ তোহার লুককে একদম উজ্জ্বল এবং মাধুর্যপূর্ণ করে তুলেছে।”

” ল্যাহেঙ্গার সাথে মিলিয়ে তোহার ব্লাউজ নীল রঙের, সোনালি জরির কাজের সঙ্গে ব্লাউজের হাতায় সোনালি জরির ফ্লোরাল এমব্রয়ডারি রয়েছে, এবং গলার ডিজাইন স্লিটেড, যাতে তার গলার গয়নাটি স্পষ্ট দেখা যায়।”

“তোহার ওড়না হালকা নীল রঙের, সোনালি জরির পাড় এবং ছোট ছোট পাথরের কাজ দিয়ে সাজানো। ওড়নাটি তার কাঁধে অনায়াসে ঝুলে আছে, যেনো তোহার লুককে আরও ক্লাসি দেখাচ্ছে।”

“তোহার গয়নাতে রয়েছে সোনালি এবং পোলকি কাজের গ্ল্যামার। সে পড়েছে বড় সোনালি ঝুমকা, হালকা বালা, নথ, এবং মাথায় ছোট একটি টিকলি। গয়নাগুলো তোহার রাজকীয় সাজের সঙ্গে মানানসই হয়েছে।”

“তোহার মেকআপ ক্লাসিক এবং ব্রাইট। তার চোখে রয়েছে সোনালি এবং ব্রাউন আইশ্যাডোর সংমিশ্রণে একটি সফট স্মোকি লুক, কাজলে চোখের সৌন্দর্য আরও ফুটে উঠেছে। গালে হালকা পিঙ্ক ব্লাশ আর ঠোঁটে লেপ্টে রয়েছে গাঢ় গোলাপি রঙের লিপস্টিক, যা তাকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে। তোহার চুল গুলো এলিগ্যান্ট হেয়ার বান, সামনের দিকে কিছু লুজ টেন্ড্রিলস রাখা হয়েছে। চুলের এই স্টাইল তার গর্জিয়াস গয়নাগুলোকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে। বান-এর মাঝে রয়েছে সোনালি হেয়ার অ্যাক্সেসরিজ।”

“এই বিশেষ সাজে তোহাকে একদম রাজকীয় এবং মোহময়ী দেখাচ্ছে।”

“ওদের দুই বোনের উপস্থিতি যেনো পুরো অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।”

“মাহিরের শেরওয়ানির রং রাজকীয় নীল (রয়্যাল ব্লু) রঙের, যা তোহার ল্যাহেঙ্গার সাথে মিলিয়ে কিনেছে সে। শেরওয়ানিটি সিল্ক বা র-সিল্ক ফ্যাব্রিকে তৈরি করা, যাতে একদিকে সোনালি জরির এমব্রয়ডারি কাজ এবং অন্যদিকে মেটালিক সোনালি থ্রেডের ডিটেইলিং।”

“মাহিরের শেরওয়ানির ডিজাইন একটু হাই কলার, যার উপরে সোনালি জরির কাজ করা রয়েছে। শেরওয়ানির সামনের অংশে সোনালি বোতাম এবং কিছু ডিটেইলড এমব্রয়ডারি, যা মাহিরের স্টাইলকে আরও ক্লাসি করে তুলেছে।”

“মাহির তার শেরওয়ানির সাথে একটি অফ-হোয়াইট শাল ব্যবহার করেছে, যেটিতে সোনালি জরির বর্ডার আছে। শালটি সে তার এক কাঁধে ফেলে রেখেছে।যা তার পুরো লুককে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।”

“শেরওয়ানির সাথে পরিধান করেছে নীল রঙের চূড়িদার পাজামা, যা তার পুরো সাজের সাথে সুন্দরভাবে মানানসই হয়েছে।”

“মাহির মাথায় গাঢ় নীল রঙের পাগড়ি পড়েছে, যাতে সোনালি জরির কাজ করা । পাগড়িতে একটি ছোট ব্রোচ যুক্ত করেছে, যা তার সাজকে আরও গ্ল্যামারাস করেছে।”

“মাহির হাতে একটি ক্লাসি রিস্টওয়াচ পড়েছে। যাতে সোনালি নীল ডায়াল আছে। ডায়ালে ছোট ক্রিস্টাল স্টোন আছে। যা তোহার ল্যাহেঙ্গার পাথরের কাজের সাথে সুন্দরভাবে মানিয়ে গিয়েছে।”

“তোহা যেমন মাহিরের বেশভূষা দেখে কুপোকাত; এদিকে মাহিরেরও তোহা কে দেখে চক্ষু চড়কগাছ।মাহির আনমনে বলেই ফেললো,
‘এতো আমার স্বপ্ন পরী।আজ তো আর কোনো বিধিনিষেধ মানা যাবে না স্বপ্নচারিনী।’
ভেবে মুচকি হাসলো মাহির।”

———–
“দিগন্ত বরপক্ষ হয়ে এসেছে।যেহেতু সে নির্জনের বেস্ট ফ্রেন্ড।আর নাদিয়া কনেপক্ষ।যেহেতু সে নিধির বেস্ট ফ্রেন্ড।নাদিয়া কোমরে আঁচল গুঁজে গেটে টাকা তোলা নিয়ে দিগন্তের সাথে ঝগড়া করলো।দিগন্ত চোখের ইশারায় হু*মকি দিয়ে বোঝালো,
‘বাসায় গিয়ে সব ঝাল উঠাবে।”

“কনে পক্ষ মিলে গেটে বিশাল অংকের টাকা ধরেছে।কিন্তুু বরপক্ষ সেটা কিছুতেই মানবে না।অনেক ঝুট-ঝামেলার পর বরপক্ষের কাছে কনেপক্ষ হার মানলো।যদিও নির্জন এখানে একটা কথাও বলেনি।তার দৃষ্টি পুরোপুরি স্থির হয়েছিলো স্টেজে দাঁড়ানো প্রিয় মানবীর চোখ জোড়ায়,যে একটু পর পুরোপুরি তার হবে।’
কথাগুলো ভাবতেই, বাঁকা হাসলো নির্জন।”

———-
“অবশেষে সব নিয়ম-কানুন মেনে বিয়ের কার্য সম্পন্ন হলো।
স্টেজে ওঠার পর থেকে বিয়ে পর্যন্ত, খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে নির্জন শুধু নিধিতেই আবদ্ধ ছিলো।এমনকি ক্যামেরাম্যান ফটোশুট করতে এলে সেটাও বারণ করে দিয়েছে।বিষয়টি নিধির অদ্ভুত লাগলেও,বিয়ের খুশিতে হেসে উড়িয়ে দিয়েছে।”

“এদিকে মাহির আর তোহা কাপল ডান্স থেকে শুরু করে,সবার মুঠোফোনে যুগলবন্দী হলো।কাপল ডান্স করার সময় মাহির ফিসফিস করে তোহা কে উল্টাপাল্টা কথা বলতে মিস করেনি।তোহা চুপ করে সবকিছু গিলেছে।কারণ এইমুহূর্তে তার কিছুই করার নেই।”

“সবাই নির্জনের থেকে মাহির কে অনেক বেশি পছন্দ করেছে।কিছু কিছু আত্মীয়-স্বজন নির্জন কে ‘অসামাজিক’ উপাধি দিয়েছে।সেটা অবশ্য কর্ণে পৌঁছে গেছে নির্জনের।তবে এতে তার কিছু যায় আসে না।সে এখানে আসল কার্য সম্পাদন করতে এসেছে।এইসব মেলোড্রামা দেখতে নয়।”

——-
“এইবার কনে বিদায়ের পালা।শুরু হলো এক আবেগঘন পরিবেশ।আজ যেনো কান্নার ঝড় উঠে গেলো মির্জা বাড়িতে।আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে সবার চোখ থেকে ভারী নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে।রফিক মির্জা যেনো অতি শোকে পাথর হয়ে গেছেন।তাহমিনা বেগম দুই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেঁদে চলেছেন।”

“মাহিরের কাছে বিষয়টি খারাপ লাগলেও,নির্জনের কাছে ভীষণ বিরক্তিকর লাগছে।মনে মনে বলছে,
‘যত্তসব অদ্ভুত কাহিনী।সব অভিনয়।’
তবে সে মুখভঙ্গিতে দুঃখী ছাপ ঝুলিয়ে রেখেছে।”

“যখনই নিধি ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরলো,তখনই তেঁতে উঠলো নির্জন।নিধির এক হাত নির্জনের মুঠোয় আবদ্ধ।আরেক হাত দিয়ে বাবা কে জড়িয়ে ধরে সেকি কান্না!
এইবার রফিক মির্জারও চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।মেয়েকে স্বান্তনার বানী শোনাতে লাগলেন,
‘বিয়ে হলেই মেয়েরা পর হয়ে যায় না।তার দুই মেয়ের জন্য তার হৃদয়ের দরজা সবসময় খোলা থাকবে।’
তোহাও ওর বাবা কে জড়িয়ে ধরে নাকের পানি-চোখের পানি এক করলো।তোহা যা সেজেছিলো; সব শেষ।”

“নির্জন এইবার সব সহ্যের অতিক্রম করে নিধির হাতে খুব জোরে চেপে ধরলো।
আকস্মিক ঘটনায় ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো নিধি।এক ঝটকায় বাবার বুক থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।আশে-পাশে কেউ কিছু বুঝতে পারলো না।যা বোঝার নিধি বুঝেছে।কিন্তুু উল্টো বুঝেছে।ভেবেছে,

‘ নির্জন হয়তো তার কান্না সহ্য করতে না পেরে, এভাবে হাত চেপে ধরেছে।’

“আত্মীয়-স্বজনের সামনেই নিধির চোখের পানি মুছিয়ে, নির্জন রফিক মির্জা কে ভরসার সহিত বললো,
‘আপনি একদম চিন্তা করবেন না বাবা।আজ থেকে আপনার নিরুপমা শুধুই আমার।ওকে আমি খুব যত্ন করে সাজিয়ে রাখবো,যেনো কারো কু”নজর ওর ওপর না লাগে।কথা দিলাম।”

“নির্জনের এহেন কথা শুনে, আত্মীয়-স্বজন গুলো ফিসফিস করে বললো,
‘ছেলেটা গম্ভীর হলেও নিধিকে খুব সুখে রাখবে।আমাদের নিধির কপাল টা সত্যি ভালো।’

‘নির্জনের সাথে তাল মিলিয়ে, মাহিরও রফিক মির্জাকে একই কথা বললো।’

‘অবশেষে দীর্ঘসময় কান্নাকাটির হিসাব চুকিয়ে, শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো দুই বোন।’

———
“গাড়িতে বসে তোহা হেঁচকি তুলে কাঁদছে।এদিকে তোহা কে কাঁদতে দেখে মাহিরের খুব মন খারাপ হলো।তাই মাহির তোহার কাঁধে হাত দিয়ে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘কেঁদো না স্বপ্নচারীনি।পুরো সাজ নষ্ট করে ফেলেছো,সমস্যা নেই আমারই ভালো হয়েছে।একটু পর আমার স্বপ্নচারিনীকে আমি নিজের মতো করে সাজাবো।আসো তোমাকে একটা কবিতা শুনাই।’
বলেই দুষ্টু হেসে শুরু করলো,

“মধুময় রাত”

“এই যে প্রিয়া, তুমি বসে আছো এভাবে চুপচাপ,
এই রাতে শুধু আমি আর তুমি, কারো নেই আমাদের খোঁজখবর!
সবাই বলে, বাসর রাত মানেই লজ্জার খেলা,
কিন্তু তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে, আমার লজ্জা তো হয় না ঢেলা!

তুমি যখন এভাবে তাকাও, মিষ্টি মিষ্টি চোখে,
মনে হয় যেনো এই রাতটাই থেকে যায় এখানে, একেবারে ঠেকে।
আমি বলি, আর দেরি কেনো, কাছে এসে বসো,
এই রাতের গন্ধে, যেনো মধুরতার ঢেউয়ে ভাসো।

আলোটা নিভিয়ে, ছায়ার খেলা করবো,
তোমার কানে কানে বলবো, মধুর কথাগুলো আরও।
লাজুক লাজুক মুখের ওই হাসি, মুছে দাও এখন,
এই রাতে আমরা একসাথে, হারাবো সারা বিশ্বভুবন।”

~মেহের~

“বলেই তোহার নোনা গালে টুপ করে চুমু দিয়ে দুষ্টু হেসে বললো,
‘ইশশ!নিজেকে সামলাতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো।তাই আপাতত টেস্ট করে নিলাম।তবে খারাপ না; টেস্টিং সল্টের মতো লাগল।”

“মাহিরের কথায় কান্না থেমে গিয়ে লজ্জায় মিইয়ে গেলো তোহা।লজ্জা ঢাকতে মাহিরের বুকেই মুখ গুঁজলো।”

———–
“বাংলাদেশে যখন রাত ১২টা,তখন কানাডার টরেন্টো শহরে দুপুর ২টা।
সুইমিং পুলে দুই হাত বাড়িয়ে সাঁতার কাঁটছে পাতলা গড়নের ২৪বছর বয়সী এক রমনী।পরনে তার সুতির সালোয়ার-কামিজ।চাইলেই সে বিদেশিনীদের সাথে তাল মিলিয়ে শরীরে বিকিনি জড়াতে পারতো,কিন্তুু এই ধরণের পোশাক তার বরাবরই অপছন্দ।”

“রমনীটির সাঁতার কাঁটা মুগ্ধ হয়ে দেখছে ইহান।পরনে তার থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট।লোমশ বুক থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।কিছুক্ষণ আগেই রমনীর সাথে তাল মিলিয়ে সাঁতার কেঁটেছে সে।”

“রমনীটি লক্ষ্য করলো, তার শখের পুরুষ প্রিয়তম স্বামী সূক্ষ দৃষ্টিতে তাকে নজর বন্দী করছে।এই তো এক বছর আগের কথা।কতো ঘুরেছিলো তার পেছনে।অফিসের কলিগ হওয়ার সুবাদে তার সাথে পরিচিত হয়েছে।তারপর কথপোকথন।যখন লোকটির প্রেমে পড়ে তাকে প্রপোজ করলো।তখনই জানতে পারলো,সে নাকি নাদিয়া নামে কাউকে ভালোবাসে।
ব্যাস,সরে গিয়েছিলো সে।কারণ, তার প্রেমিক পুরুষের ভালোবাসা জোর করে আদায় করার সাধ্য তার নেই।”

“কিন্তুু দেড় মাস আগে যখন পুরো ঘটনা জানতে পারলো,সেদিন মনে মনে খুব খুশি হয়ে আবারও প্রণয়ের সুযোগে গা ভাসালো।দীর্ঘসময় অতিবাহিত হওয়ার পর সফল ও হলো।অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে ইহান কে সে নিজের অর্ধাঙ্গ করেছে,যেখানে বিয়ের ব্যাপারে ইহান পুরোপুরি নাকচ করে দিয়েছিলো।
কিন্তুু এই লাবণ্যময়ী,সুহাসিনীর কাছে হার মানতে হয়েছে তাকে।”

“৪দিন হলো তারা বিয়ে করেছে।ইহানের মা পুত্রবধূকে এখনও ভালো ভাবে মেনে নেয়নি।তাতে কোনো সমস্যা নেই রমনীর।সেতো এক ইহানে আসক্ত।’
ভেবে মুচকি হেসে সাঁতার কেঁটে ইহানের কাছে এসে গলা জড়িয়ে ধরে বললো,

‘কি হয়েছে আমার কিউট স্বামীর?একটু আগেই তো আমাকে আদরে ভরিয়ে দিলে,এখন কি আবার?’
বলেই দুষ্টু হাসলো রমনী।”

“ইহান তার অর্ধাঙ্গিনীর কপালে আলতো করে ঠোঁট মিশিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘উহুম,তোমাকে কোটিবার আদর করলেও আমার শখ মিটবে না। কারণ, তুমি আমার আদুরী পাখি।আচ্ছা তোমায় কি নামে ডাকবো বলোতো?
তোমার তো দু’টো নাম,’সুমাইয়া আফরিন।’
সুমাইয়া মানে ‘উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ’ আর আফরিন মানে
‘শ্রেষ্ঠত্ব/প্রশংসা’।দু’টো নাম দারুণ।”

“আফরিন হেসে বললো,
“তুমি তো জানো,আমার একজন এক্স ছিলো।সে আমাকে ‘আফরিন’ বলে ডাকত।তুমি বরং আমায় ‘সুমাইয়া’ বলেই ডাকো।আমি এতেই পরিপূর্ণতা পাবো।’
বলেই প্রিয় পুরুষ টিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আফরিন।”

“অবশেষে সে একজন সত্যিকারের প্রেমিক পুরুষের সন্ধান পেয়েছে,যাকে নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করা যায়।”

———-
“বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টা।ধীরে ধীরে গাড়ি চালাচ্ছে নির্জন।তার পাশে বসা বোরকা পরিহিত নারীটি কিছুক্ষণ পর পর গুণ গুণ করে কেঁদে উঠছে।গাড়িতে ওঠার পর থেকে এতক্ষণ যাবৎ এই টেপ রেকর্ড শুনতে শুনতে কান তব্দা খেয়ে গেছে নির্জনের।গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে একটি জনশূন্য ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি থামালো সে।”

“অতঃপর নিয়নের আলোয় বোরকা পরিহিত রমনীর হাত ধরে, কাছে টেনে তার নিকাব খুলে দিলো।সাজ-সজ্জা নষ্ট হয়ে গেছে নিধির।মুখে বিরক্তিকর ভাব লেপ্টে পকেট থেকে কুচকুচে কালো রুমাল বের করে নিধির ঠোঁট জোড়ার গাঢ় মেরুন কালার লিপস্টিক মুছে দিলো।”

“নির্জনের আকস্মিক এহেন কান্ডে নিধি কিছু বলতে যাবে,তার আগেই নির্জন নিধির ঘাড়ের পেছনে হাত দিয়ে ওকে কাছে টেনে অধরজোড়া এমনভাবে আকড়ে ধরলো,যেনো সে বহুদিনের প্রতীক্ষার তৃষ্ণা মেটাচ্ছে।”

“নির্জনের আকস্মিক আ**ক্রমণে নিধির দম ফেটে যাওয়ার উপক্রম হলো।সহ্য করতে না পেরে,সজোরে ধা””ক্কা দিলো নির্জনের বুকে।ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে ভয়ে এবং লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বললো,
‘এটা কি করলেন আপনি?উফফ!একটু হলেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতো।’

“নিধির মুখে ফের লজ্জার কথা শুনে রেগে গেলো নির্জন।রুঢ় কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ডার্ক কুইন,আমার সামনে এইমুহূর্তে লজ্জা পাওয়া তোমার শোভা পায় না।’

“I am your husband, so from now on, don’t even think about feeling shy.”

#চলবে..
(প্রিয় পাঠকমহল আশা করি সারপ্রাইজ টা বুঝতে পেরেছেন।যারা বুঝেছেন,তারা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।আর সবার বড় করে কিউট কমেন্ট চাই।হ্যাপি রিডার্স।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here