#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৩৪
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ
[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য]
“আকস্মিক ঘটনায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিধির মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিলো।”
“ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে নিধির মস্তিষ্ক সচল হতেই, নিধির আর্তনাদ ছড়িয়ে পরে ঘরের চারিদিকে।কিন্তুু নির্জনের চোখে তখনও ভয়ং**কর উ**ন্মাদনা খেলা করছে।নির্জন একজন নীরব সাইকোপ্যাথ,তার প্রেম ভয়ের চাইতেও শক্তিশালী।
কিন্তুু নিধি নির্জনের ভেতরের দা**নবীয় অস্তিত্ব এখনও টের পায়নি।সে তো চোখ জোড়া বন্ধ করে তীব্র আর্তনাদে ব্যস্ত।”
“নিধির হাত-পা তেলে জ্বালিয়ে দেওয়ার পর, নির্জন হঠাৎ ঠান্ডা মাথায় কাজ করা শুরু করলো।ডেভিল হেসে নিধির গালে হাত দিয়ে ভ্রুকুটি করে উত্তেজিত স্বরে বললো,
‘নিরুপমা..নিরুপমা কি হয়েছে তোমার?একি করলাম আমি?খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না?ডোন্ট ওয়ারি জানপাখি,এখনই সব ঠিক হয়ে যাবে।’
বলেই নিধিকে পাঁজা কোলে তুলে রুমে নিয়ে গেলো।”
“তপ্ত তেল ডান হাত এবং দুই পায়ের কিছু অংশে ছিঁটকে পড়াতে,প্রবল জ্বালাপোড়ায় বারংবার আর্তনাদ করে উঠছে নিধি।”
“নিধির এই আর্তচি**ৎকারে নির্জনের কিঞ্চিৎ কষ্ট হলেও, ‘মন’ তাকে বুঝ দিলো,
‘সে তোমার।এভাবেই তাকে আগলে রাখতে হবে।তোমাকে আরও শক্ত হতে হবে।মনে রেখো,তুমি যাকে ভালোবাসো,তার শরীর এবং মনের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে তোমার ক্ষমতার মোহর এঁকে দিতে হবে।এখন থেকে এটাই তোমার মূল কাজ হবে।তাকে ক্ষত করার অধিকার যেমন তোমার, তার সেই ক্ষত ঢেকে দেওয়ার অধিকারও তোমার।””
“মনের সাথে শ**য়তানি পরামর্শ করে বাঁকা হাসলো নির্জন।নিধিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে,সে প্রথমে ঠান্ডা পানি দিয়ে নিধির হাত-পায়ের পুড়ে যাওয়া জায়গাগুলো ধুয়ে দিলো। নিধি যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকল, কিন্তু নির্জন তখনো নীরব।সে শুধুমাত্র তার নিজস্ব উপায়ে নিধির যত্ন নিচ্ছে। সে পুড়ে যাওয়া অংশ পরিষ্কার করে, জীবাণুনাশক মলম লাগিয়ে গজ দিয়ে ঢেকে দিলো।”
“নির্জন যতই নিধির সেবা করছে, ততই নিধির ওপর নির্জনের মানসিক নিয়ন্ত্রণ বেড়ে যাচ্ছে। সে একক ভাবে বুঝিয়ে দেয় যে নিধি তাকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না, আর এই ঘটনার মধ্য দিয়ে তাদের সম্পর্ক আরও অদ্ভুত এবং তীব্রভাবে বাঁধা পড়ে গেলো আরেকটিবার।”
“নির্জনের প্রাথমিক চিকিৎসায় নিধি কিছুটা স্বস্তি অনুভব করলো।নির্জনের দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
‘থ্যাংক’স নির্জন।’
“নির্জনের মন পুলকিত হলো।নিধির গালে আলতো করে চুমু দিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
‘উহুম,আমি তোমার থেকে থ্যাংকস পাওয়ার যোগ্য নই।আমার কারণে তোমার হাত আর পায়ের এই অবস্থা হয়েছে।এর জন্য আমি শতভাগ দায়ী।আ’ম সরি ডার্ক কুইন।’
‘নির্জনের এহেন কথায় দ্বিগুণ আবেগী হয়ে গেলো নিধি।চোখজোড়া চিক চিক করে উঠলো সহসা।আনমনে ভাবলো,
‘কিভাবে এতো আবেগী হলাম আমি?’
‘ভেবে ম্লান হেসে নির্জনের মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললো,
‘এই টপিক বাদ দিন প্লিজ।আপনি তো আর ইচ্ছে করে করেন নি।যদি ইচ্ছে করে করতেন,তাহলে অন্য ব্যাপার ছিলো।’
“নির্জন ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞেস করলো,
‘তাহলে কি করতে?’
“নিধি মুচকি হেসে বললো,
‘তাহলে ওই একই তেলে আপনাকেও পোড়াতাম।’
” নিধির কথায় রহস্যময় হাসি দিলো নির্জন।কিভাবে বলবে সে,যে তার প্রিয়তমাকে নিজের কাছে রাখার জন্য ইচ্ছে করেই ক্ষতি টা করেছে।তবে এখন নয়,সব কিছু ধীরে ধীরে বলবে।”
“এভাবেই কে**টে গেলো একটি সকাল।নিধির অগোচরে নির্জন তার মায়ের রুমে গিয়ে সেবিকাকে কড়া সুরে বলেছে,
নিধির ধারে কাছেও যেনো সে না ঘেঁষে।’
‘সেবিকা এমনিতেই নির্জন কে ভয় পায়,তার ওপর নির্জনের এহেন আচরণে ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।তার অন্য কোনো পন্থা থাকলে হয়তো চলে যেতো।কিন্তুু সায়রা বেগমের কাজকর্ম করতে তার ততটা পরিশ্রম হয়না।তাছাড়া চাইলেই সব জায়গায় মনের মতো কাজ খুঁজে পাওয়া যায় না।’
“এদিকে নিধি তার মা-বাবা কে ফোন করে ওর হাতে-পায়ে তেল ছিঁটকে পড়ার কথা বলেছে।তবে নির্জনের বিষয়টি বলেনি।যদি তারা অন্যকিছু ভাবে,তাই বুদ্ধি করে বলেছে,নিজেই রান্না করতে গিয়ে অসাবধানতা বসত
হাতে-পায়ে তেল ছিঁটকে গেছে।
নিজের মেয়ের অসুস্থতার কথা শুনে খুব কষ্ট পেলেন রফিক মির্জা এবং তাহমিনা বেগম।তারা নিধি কে মানসিক ভাবে স্বান্তনা দেওয়ার পাশাপাশি এটাও বললেন,তারা আজ নিধিকে দেখতে আসবেন।”
“নিধির সাথে কথপোকথন শেষ করে,তারা তৎক্ষণাৎ তোহার শ্বশুর বাড়িতে বিষয়টি জানিয়ে দিলো।আর এটাও জানিয়ে দিলো,তোহার বৌভাতে তাদের আত্মীয়-স্বজন ঠিক সময় চলে যাবে।”
“সবকিছু শুনে মাহির স্তব্ধ হয়ে গেলো।তবে তোহাকে কিছুই বললো না।
প্রিয় বোনের এতটা অসুস্থতার কথা শুনলে, এই বিশেষ দিনে নিশ্চিত সে মন খারাপ করবে।তার অর্ধাঙ্গিনীর দিকেও তো তাকে খেয়াল রাখতে হবে।”
——–
“দুপুরে মেইড এসে রান্না করে গিয়েছে।নতুন বউ এসেছে জেনে,নিধিকে দেখতে চাইলে,নির্জন তাকেও বলে দিয়েছে,নিধি চাইলেও যেনো তার সাথে কথা না বলে।তার ওয়াইফ অন্য কারো সাথে কথা বলুক এটা তার অপছন্দ।”
“নির্জনের এহেন আচরণে,মেইড মনে মনে নির্জনকে রগচটা, বেয়াদব,অ**সভ্য বলে, আবারও তার কাজে মনযোগ দিয়েছে ।একটু পর তাকে আরও ২ বাসায় একেক করে কাজে যেতে হবে।নির্জন কে মনে মনে খারাপ জানলেও,প্রতিমাসে যখন ঠিক সময়ে বেতন পায়,তখন মনে মনে ভীষণ খুশি হয়।”
“নিধিকে নিজে হাতে খাইয়ে দিয়েছে নির্জন।নির্জনের কাছ থেকে এতটা যত্ন পেয়ে নিধিতো আহ্লাদে আটখানা।তার স্বামীকে কিভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে, সেই ভাষাটিও সে হারাতে বসেছে।”
“বিকালের দিকে নিধি কে দেখতে তার বাবা-মা এসেছে।নিধি আগেই নির্জন কে এই বিষয়ে বলে দিয়েছিলো।তাই নির্জনও তার শ্বশুর শাশুড়ির আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে রেখেছিলো।”
“নির্জনের শুনশান বাড়িটি দেখে কিছুটা অস্বস্তি অনুভব হলো তাহমিনা বেগমের।প্রথমে তিনি সায়রা বেগমের সাথে দেখা করলেন।সায়রা বেগম কে দেখে তার ভীষণ মায়া হলো।
তারপর তিনি এবং রফিক মির্জা নিধির সাথে দেখা করলেন।রফিক মির্জার তার মেয়ের পায়ের এহেন দশা দেখে নিমিষেই মুখ চুপসে গিয়েছে।তাহমিনা বেগম নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘তোর পা তো অনেকখানি পুড়ে গিয়েছে।অথচ তুই বলছিস কিছুটা পুড়েছে?’
“মায়ের স্নেহপূর্ণ কথায় মুচকি হাসলো নিধি।অতঃপর বললো,
‘সত্যি বলছি, খুব বেশি পুড়ে যায় নি।নির্জন ইচ্ছে করে পুরো পা ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে।ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।তুমি একদম চিন্তা করো না মা।”
“স্ত্রী,শ্বশুর এবং শাশুড়ির কথপোকথনের মাঝে নাস্তা নিয়ে এলো নির্জন।এই মুহূর্তে নিধির পাশ ঘেঁষে তাহমিনা বেগম এবং রফিক মির্জার মেলোড্রামা দেখে ভীষণ বিরক্ত লাগছে নির্জনের।কিন্তুু এমতাবস্থায় কিছুই করার নেই,কিছুটা সময়ের জন্য তাকে সহ্য করতে হবে।’
ভেবে মুচকি হেসে তাদের কে খাবার খেতে বললো।”
“নির্জনের এহেন আতিথেয়তায় ভীষণ খুশি হলো রফিক মির্জা এবং তাহমিনা বেগম।তাদের মনের অন্তরালে জানান দিলো,তাদের মেয়ে স্বামী হিসাবে পারফেক্ট মানুষ কে পেয়েছে।অবশেষে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে তারা নির্জনের বাসা থেকে প্রস্থান করলেন।শ্বশুর-শাশুড়ি চলে যেতেই নির্জন তার চশমাটি তর্জনী দিয়ে ঠিকঠাক করে বললো,
‘উফফ! বিরক্তিকর।যেখানে আমার ডার্ক কুইনের সেবা করার জন্য আমি আছি,সেখানে আপনাদের আসার কি দরকার?যত্তসব আদিক্ষেতা!”
———
“বৌভাতর অনুষ্ঠান কার্য শেষ হওয়ার পর তোহার কিছুটা অস্বস্তি অনুভব হয়।হঠাৎ করে মাথা ঘুরে ওঠে।মাহির রেডি হচ্ছিলো শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য,সেই সাথে তোহাও রেডি হচ্ছিলো।কিন্তুু হঠাৎ এমন হওয়াতে কিছুটা ঘাবড়ে যায় মাহির।তোহার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে চিন্তিত স্বরে বলে উঠলো,
‘কি হলো স্বপ্নচারিনী?তোমাকে এমন লাগছে কেনো?অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে?’
“তোহা চোখজোড়া বন্ধ করে নিজের মাথায় আলতো করে হাত দিয়ে বললো,
‘মাথাটা কেমন ঘুরে উঠলো।আসলে আমি বেশি রাত জাগতে পারি না।গতকাল সারা রাত জেগেছি,আজ আবার এই ভারী পোশাকে সারাদিন থেকেছি,সব মিলিয়ে শরীর খারাপ লাগছে।সমস্যা নেই,এমনি তে আমি ঠিক আছি।”
“তোহার কথা শুনে মাহিরের মুখে দুষ্টু হাসির রেখা ফুটে উঠলো।চোখ পাকিয়ে বললো,
‘ওকে এখন থেকে বেশি রাত জাগতে হবে না।এইতো ২-৩টা পর্যন্ত জেগে থাকলে এনাফ।’
‘মাহিরের এহেন কথা বুঝতে কিছুটা বেগ পেতে হলো তোহার।অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,
‘আমার অসুস্থতার মধ্যেও এইসব কথা?’
” হাহাহা তোমার সাথে বলবো না,তো কার সাথে বলবো?এনিওয়ে,আমি কিন্তুু আমাদের হানিমুন প্ল্যান রেডি করে ফেলেছি।
বলো,বাইরের কোথাও যাবে?নাকি বাংলাদেশে?তবে বাইরে কোথাও যেতে চাইলে কিছুটা সময় লাগবে।”
“তোহা মাথা এদিক-ওদিক নাড়িয়ে বললো,
‘উহুম,বাইরে নয়।বাংলাদেশের ভেতরে যাবো।এই ধরুন,রাঙামাটি, জাফলং,সিলেটের চা-বাগান।”
“মাহির দুষ্টু হেসে বললো,
‘ওকে, তবে আমার একটা শর্ত আছে।’
‘কি শর্ত?’
“বেশি বয়স করে বাবা হওয়ার ইচ্ছে আমার নেই।তাই হানিমুনে গিয়ে বেবি প্ল্যান করলে কেমন হবে?”
“হায়!মাহিরের এহেন কথা শুনে লজ্জায় মিইয়ে গেলো তোহা।সবে মাত্র এক রাত পেরিয়েছে।আর এখনই বেবি প্ল্যান?’
লাজুক হেসে বললো,
‘এইসব পরে ভাবা যাবে,আগে আমি রেডি হই।তারপর আপনার সাথে ঠান্ডা মাথায় কথা বলবো?’
“মাহির তোহার ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,
‘সেকি!সারা রাত এতকিছু করেও তোমার মাথা ঠান্ডা হয়নি?এখন আবার নতুন করে ঠান্ডা করতে চাও?বেশি পানি ব্যবহার করলে যেকোনো সময় নিউমোনিয়া হয়ে যাবে।এমনিতেই সবসময় পেশেন্টের ভীরে অস্থির হয়ে থাকি,তার ওপর তোমার এমন হলে আমার অ””ক্কা যেতে বেশি সময় লাগবে না।”
“তোহা কটমটিয়ে বললো,
‘আপনি থামবেন?সবসময় নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা মাথায় নিয়ে ঘোরে।আমি ওয়াশরুমে গেলাম।আপনি একা একাই ঠোঁট কা**টা কথা বলতে থাকুন।’
বলেই তোহা কোনোরকমে ধীরে ধীরে উঠে মুখ ভেং**চি কে**টে চলে গেলো।”
“মাহির সেদিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বললো,
‘হায়!এই ডাক্তার সাহেব তার বউয়ের লজ্জা ভা**ঙাতে ব্যর্থ হলো।ধুর..এরপর থেকে আরও ভালোভাবে ট্রাই করতে হবে।’ বলেই হো হো করে হেসে উঠলো মাহির।”
———-
“বাংলাদেশে যখন সন্ধ্যা ৬টা,কানাডার টরেন্টো শহরে তখন সকাল ৮টা।
শুভ্র বিছানায় শুয়ে আছে ইহান এবং আফরিন। স্নিগ্ধ শীতের বাতাস জানালা দিয়ে এসে হালকা পর্দাগুলোকে দুলিয়ে দিচ্ছে। বিছানার শুভ্র কম্ফোর্টারের নিচে ইহান আর আফরিন দুষ্টু মিষ্টি কথপোকথনে মগ্ন।”
“ইহানের দুষ্টু চোখে মায়াবী ঝিলিক, আফরিনকে ইশারায় কিছু বলতে চায়। আফরিন জানে, ওর প্রতিটি হাসির আড়ালে কিছু না কিছু শ**য়তানি লুকিয়ে আছে। ইহান হঠাৎ করেই আফরিনের দিকে ঝুঁকে এসে বলে,
“আচ্ছা, যদি আমি এখন তোমার গায়ে হিম শীতল হাত রাখি?কেমন হবে?”
“আফরিন মুচকি হেসে বললো,
‘ইশ!তোমার কি মনে হয়,তুমি ঠান্ডা হাত রাখবে,আর তোমাকে আমি এত সহজে ছেড়ে দেবো?ফ্রিজের বরফ গুলো সব তোমার মাথায় ঢেলে দিবো।এনিওয়ে,সকাল থেকে অনেক রোমান্স করেছি;এখন মূল টপিকে আসি।”
“হুম বলো।”
“আফরিন ইহানের গালে হাত রেখে বললো,
‘আমরা যেহেতু বিয়ে করেছি,তাই আমাদের হানিমুন করা আবশ্যক।কানাডায় তো অনেক জায়গায় ঘুরেছি।তবে বাংলাদেশী মেয়ে হয়েও বাংলাদেশের অনেক জায়গায় ঘোরা হয়নি।তাই ভাবছিলাম, আমাদের হানিমুন প্ল্যানিং বাংলাদেশে করলে কেমন হয়?’
“আফরিনের কথা শুনে মুহূর্তেই মুখে অন্ধকারের ছায়া দেখা গেলো ইহানের মুখস্রিতে।প্রেমের টানে কতগুলো বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছিলো সে।অবশেষে ব্যর্থ হয়ে তাকে ফিরে আসতে হয়েছে।আবারও সে তার মাতৃভূমিতে যাবে?অসম্ভব।’
ভেবে মলিন স্বরে বললো,
‘কানাডায় আরও অনেক দর্শনীয় স্থান আছে,যেখানে তোমার যাওয়া হয় নি।আমরা না হয়..
” আফরিন ইহানের ঠোঁট জোড়ায় আঙ্গুল ঠেকিয়ে বললো,
‘আমি জানি,তুমি কেনো সেখানে যেতে চাও না।আসল কথা হলো আমরা দু’জনেই একই পথের পথিক।তুমি প্রেমের টানে বাংলাদেশে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছো।আর আমি বাংলাদেশে থেকে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, কানাডায় আমার ফুফুর বাসায় চলে এসেছি।কিন্তুু এখন তো আমরা স্বামী-স্ত্রী।আমাদের মধ্যে কোনো অপূর্ণতা নেই।তবুও কেনো যাবে না?আমি তো ভেবে রেখেছি, ওখানে আমাদের বেবি হবে।তারপর বেবিকে একটু বড় করে আবার কানাডা পাড়ি জমাবো।”
“আফরিনের কথা শুনে কেশে উঠলো ইহান।মুখে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বললো,
‘তাহলে তো আগে থেকেই এইসবের জন্য প্রস্তুুতি নিতে হয়,তাই না?’
“নিজের কথায় নিজেই ফেসে গেলো আফরিন।কটমটিয়ে বললো,
‘এই একদম না।আর না..পরে হবে..কাল রাতে অনেক জ্বালিয়েছো।’
“ইহান হো হো করে হেসে বললো,
‘ওকে,ওকে সুমাইয়া..জাস্ট কিডিং।আমি খুব ভালো ছেলে,এখন কিচ্ছু করবো না।’
বলেই ইহান নরম করে আফরিনের চুলে হাত বুলাতে থাকল আর বললো,
‘জানো, তোমার হাসি আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস।যখন আমি পথহারা পথিকের ন্যায় ঘুরছিলাম।তখন তুমিই ছিলে আমার অজানা পথের পাথেয়।এভাবে সবসময় পাশে থাকবে তো?’
“আফরিন লাজুক হেসে বললো,
‘অবশ্যই থাকব।এই হাত তো ছেড়ে দেওয়ার জন্য ধরিনি জান।’
বলেই ইহানের গালে আলতো করে চুমু দিয়ে,প্রাণ প্রিয় অর্ধাঙ্গের বুকে চোখজোড়া বন্ধ করে মাথা রাখলো।”
———
“অফিস থেকে বাসায় এসে দিগন্ত তার মায়ের সাথে দেখা করে নিজের রুমে এসে দেখলো,নাদিয়া মোবাইলে ভিডিও দেখে হাসাহাসি করছে।দিগন্ত মুচকি হেসে এগিয়ে গেলো নাদিয়ার দিকে।নাদিয়া কে ভয় দেখানোর জন্য ভাউ..করে উঠতেই, নাদিয়াও চি**ৎকার করে উঠলো।
বুকে বারকয়েক থুথু দিয়ে বললো,
‘এটা কি হলো?একটু হলেই হার্ট অ্যা**টাক করতাম।’
‘হেহেহে বউয়ের সাথে একটু মজা করতে ইচ্ছে হলো,তাই করলাম।আচ্ছা, তোমার থেকে এমন পাঁচফোড়নের সুগন্ধি আসছে কেনো?”
“নাদিয়া মুচকি হেসে বললো,
‘একটু আগে তোমার জন্য নিরামিষ রান্না করেছি তাই।এখন ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হবো।’
বলেই নাদিয়া ওয়াশরুমের দিকে যেতে নিলে দিগন্ত নাদিয়ার হাত ধরে কাছে টেনে বললো,
‘তুমি নিরামিষ,আর আমি আমিষ।এখন দু’জনে মিলে এক হয়ে গিয়ে না হয় ফ্রেশ হবো।’
” ছিহ!কি কথা!এই তুমি না মাত্র অফিস থেকে এলে?এতটা পথ জার্নি করে এসেও দেখছি তোমার মুখের তেজ কমেনি।”
“দিগন্ত নাদিয়ার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
‘ওই হানি,একদম আমার মুখের তেজ নিয়ে কথা বলবে না।আমার আরও অনেক দিক থেকে তেজ আছে,সেটা তুমি খুব ভালোভাবে জানো,আবার দেখাবো?’
“নাদিয়া জানে,দিগন্তের এই লাগাম ছাড়া কথা চলতেই থাকবে,তাই বুদ্ধি খাটিয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বললো,
‘ওই যে..ওই যে টিকটিকি টিকটিকি..
“নাদিয়ার কথা শুনে দিগন্ত ওর হাত ছেড়ে দিয়ে সিলিং এর দিকে তাকাতেই,নাদিয়া দুষ্টু হেসে দিগন্তের বুকে ধা**ক্কা দিয়ে দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।”
‘নাদিয়ার এহেন কান্ড দেখে দিগন্ত পুরো বোকা বনে গেলো।’
———-
“রাত সাড়ে ৯টা।নির্জনের বুকে মাথা দিয়ে কতশত গল্প জুড়ে দিয়েছে নিধি।ছোটবেলা থেকে কিভাবে দস্যিপনা করেছে,কিভাবে স্কুলের দেয়াল টপকে পালিয়েছে,এইসব বিষয়ে খুব ঘটা করে বর্ণনা দিচ্ছে সে।নিধির এইসব কাহিনী খুব বোরিং লাগছে নির্জনের কাছে।কথা ঘুরানোর জন্য নির্জন বললো,
‘জানপাখি,গতকাল রাত টা কেমন কাটালে,সেই সম্পর্কে তো কিছু বললে না?নাকি হাতে-পায়ে তেল পড়াতে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে আগের দিনে চলে গিয়েছো?”
“নির্জনের এহেন কথায় লজ্জায় মিইয়ে গেলো নিধি।নির্জনের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে বললো,
‘প্লিজ আর লজ্জা দিবেন না।আমার আনইজি লাগছে।’
“নিধির এহেন কথায় মুহূর্তেই ক্ষেপে গেলো নির্জন।নিজের রাগ কোনোরকমে নিয়ন্ত্রণ করে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
‘আমি তোমাকে আবারও বলছি,আমার সামনে কোনো লজ্জা পাওয়া চলবে না।আমরা স্বামী-স্ত্রী;
আমাদের মধ্যে সবকিছু হয়েছে।এখনও এতো লজ্জা কিসের,হুম?’
“নির্জনের আকস্মিক রুঢ় স্বরে ভড়কে গেলো নিধি।চোখ পাকিয়ে বললো,
‘অদ্ভুত মানুষ আপনি!যতই আমরা মিলিত হই না কেনো,তাই বলে আমি লজ্জা পাবো না?’
“নিধির এহেন আচরণ সহ্য হলো না নির্জনের।ভ্রুকুটি করে বললো,
‘নাহ!পাবে না।এটা আমার অপছন্দ।আগে যা পেয়েছো,সেটা না হয় ক্ষমা করে দিয়েছি।কিন্তুু এখন সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।”
“নির্জনের কথায় ফের অবাক হলো নিধি।কিন্তুু প্রিয়জনের এহেন মানসিক রোগ ধরতে ব্যর্থ হলো সে।উল্টো করে ভাবলো,
‘বাহ!কত অল্প সময়ে আমাকে আপন করে নিয়েছে সে।আমার লজ্জাকেও সে অপছন্দ করে।এমন একজন ইন্ট্রোভার্ট,পজেসিভ ছেলেকেই তো চেয়েছিলাম।’ভেবে নিধি মুচকি হেসে বললো,
‘আচ্ছা আপনিতো একজন ইন্ট্রোভার্ট পার্সন।আমি যতটুকু জানি,এরা খুব নিরামিষ টাইপের হয়।তবে কিছু ক্ষেত্রে তারা খুব পজেসিভ হয়,যেমন আপনি।আই লাইক ইট।’
“নিধির কথায় বাঁকা হাসলো নির্জন।
নিধির কপাল থেকে চুল সরিয়ে আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,
‘ইন্ট্রোভার্ট ছেলেদের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে,যা হয়তো অনেকেই জানে না।তোমায় বলছি,
“১.ইন্ট্রোভার্ট মানুষ শ্রোতা হিসেবে প্রথম শ্রেণীর হয়ে থাকে।
২.এক সঙ্গে অনেক মানুষের সান্নিধ্য তাদের কাছে ভালো লাগে না।
৩. কাউকে ভালো লাগলে সহসা প্রকাশ করে না।
৪. সহজে কারো সাথে মেশে না। কিন্তু যার সাথে মেশে খুব ভালো ভাবেই মেশে।
৫. ইন্ট্রোভার্টরা আনন্দ করে থাকে এবং তা প্রকাশও করে। মাঝে মাঝে পা**গলামিও করতে পারে। তবে তা শুধু বিশেষ মানুষদের কাছে, বিশেষ সময়। সবার সঙ্গে একদমই নয়।
৬. পছন্দের মানুষকে প্রথম অবস্থায় মনের কথা বলতে রাজ্যের অসঙ্কোচ দেখা দেয়।
৭. কোন কিছু বুঝতে একটু বেশি সময় নেয়।
৮. ভরা মজলিসে বক্তৃতা দেয়া মানে সাঁতরে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেয়া।
৯. অতিরিক্ত মানুষের মনযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে অপছন্দ করে।
১০.তাদের কাছে বই পড়ার চেয়ে আনন্দের আর কিছুই হতে পারে না।
১১. নিজেকে অন্যের জায়গায় রেখে ভাবতে অন্তর্মুখীদের জুড়ি নেই।
১২. ঝগড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে সরি বলে মিটিয়ে ফেলতে চায়।
১৩. রাগের চেয়ে অভিমানের পরিমাণটা বেশিই হয়।যদিও আমি কিছুটা অন্যরকম।
১৪.ভালোবাসলে মন উজাড় করে ভালোবাসে। বন্ধুত্বে জড়ালে টিকিয়ে রাখবার আপ্রাণ চেষ্টা করে।তবে যেকোনো কিছুর নির্দিষ্ট বেড়াজালে পুরোপুরি আবদ্ধ থাকতে বেশি পছন্দ করে।
সবশেষে বলতে চাই,অন্তর্মুখীরা একাকী সময় কা**টাতে ভালোবাসে, তার মানে এই নয় যে তারা অসামাজিক। তারা কথা কম বলে, কিন্তুু ভাবে বেশি। অবশ্য কথা কম বলার জন্য মানুষ বেশির ভাগ সময়েই তাদের লাজুক হিসেবে আখ্যা দেয়। অন্তর্মুখীদের মুখ বন্ধ থাকে কারণ, তাদের ভাবনার ডালপালা ছড়াতে থাকে। সেখানে নতুন নতুন ধারণা তৈরি হয়। মস্তিষ্কের কোষগুলোর মধ্যে সে ধারণাগুলো যেন রেসের ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকে।”
“এইবার বুঝতে পেরেছো ডার্ক কুইন?”
“নির্জনের বিশাল বিবরণ শুনে নিধি তো পুরো হা হয়ে গেলো।ওর ইন্ট্রোভার্ট দের সম্পর্কে এতটা ধারণা ছিলো না।নিধি নিচু স্বরে বললো,
‘আমি তো পুরো এক্সট্রোভার্ট।একদম আপনার বিপরীত।তেলে-জলে কিভাবে মিলে গেলো?’
” নিধির কথা শুনে নির্জন ওর মাথা বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো,
‘ডোন্ট ওয়ারি,আমার সাথে থাকতে থাকতে তুমিও আমার মতো হয়ে যাবে জানিপাখি।তবে তার জন্য আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে।তুমি তো জানো,তেলের মধ্যে পানি থাকলে,আগুনের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিলে,চারিদিকে পানিগুলো ছিঁটে গিয়ে অবশেষে শুধু আসল তেল থেকে যায়।তোমাকেও আমি তেমন ভাবে গড়ে নেবো নিরুপমা।তুমি কি রাজি?”
“নিধি মুচকি হেসে বললো,
‘উহুম,একটুও না।আমি এইরকমই থাকতে চাই।
এতো কম কথা,এতো ভাবনা আমার ভালো লাগেনা।আপনি আপনার মতো থাকবেন,আর আমি আমার মতো।শুধু আমাদের মধ্যে ভালোবাসার গভীরতা অটুট থাকলেই যথেষ্ট।”
বলেই নিধি নির্জনের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে বালিশের পাশ থেকে মোবাইল নিয়ে ফেইসবুক স্ক্রল করতে থাকল।”
“নির্জন পাশে থাকা শর্তেও নিধির এহেন আচরণ মানতে পারলো না সে।এটাকেই তো বলে চরম অবহেলা।তবে কি এক দিন আর এক রাতেই পুরনো হয়ে গেলো সে?অসম্ভব!এটা হতে পারে না।এর জন্য তো তাকে দুষ্টু-মিষ্টি শাস্তি পেতেই হবে।’
ভেবে বাঁকা হাসলো নির্জন।”
———–
“দীর্ঘ একটি রাতের পর ঘুম ভে**ঙেছে নিধির।রাতে নিধি ঔষুধ খাওয়ার পর নির্জন তাকে ঘুমিয়ে যেতে বলে।নিধিও সভ্য মেয়ের মতো ঘুমিয়ে পরে।”
“সকাল ৮টায় ঘুম ভা**ঙে নিধির।আগের থেকে বেশ ভালো লাগছে তার।আড়মোড়া ভে**ঙে মোবাইল হাতে নিয়ে ৮টার এলার্ম বন্ধ করে,সোশ্যাল মিডিয়ায় যখনই ঢুকতে যাবে,তখনই দেখলো আইডি তে লগ ইন হচ্ছে না।নিধি তো বেশ অবাক হয়ে গেলো।বারবার নিজের আইডি লগ ইন করার চেষ্টা করেও পারলো না।অতঃপর সে তার ইউটিউব চ্যানেলে ঢুকে ফের অবাক হলো।সে যতগুলো ভিডিও বানিয়েছিলো,কিছুই নেই।বিস্ময়ে মুখ হা হয়ে গেলো নিধির।ভ্রুকুটি করে একবার নির্জনের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো,সে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।”
“নিধি আবারও ইউটিউব চ্যানেলে গেলো।কিন্তুু কিছুই নেই।এমনকি ফটোর নিচে ক্যাপশনে লেখা,
‘এখানে আর কোনো ভিডিও আপলোড করা হবে না।’
“লেখাগুলো পড়ে কপালে হাত রাখলো নিধি।কত কষ্টের ফলে ১০হাজার সাবস্ক্রাইবার হয়েছে তার।ভিডিও গুলোতে কত শত ভিউ;সব শেষ।তার ওপর ফেইসবুকেও লগ ইন করতে পারছে না।সবকিছু দেখে মাথায় হাত রাখলো নিধি।
না চাইতেও নির্জনের বাহুতে হাত দিয়ে আলতো করে ধা””ক্কা দিয়ে বললো,
‘এই উঠুন,দেখুন না আমার ফোনে কি হয়েছে?ফেইসবুক,ইউটিউব চ্যানেল সব শেষ।”
“নিধির এহেন কথায় পৈ**শাচিক আনন্দ পেলো নির্জন।তবুও চোখজোড়া বন্ধ করে নিধির হাত বুকের মধ্যে আগলে ধরে বিরক্তি স্বরে বললো,
‘উফফ! গতকাল রাতে অফিসের ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল রেডি করে,রাত ৪টার দিকে ঘুমিয়েছি।প্লিজ ডার্ক কুইন ঘুমাতে দাও।”
#চলবে…
(আমি আবারও বলছি,নির্জন এই গল্পের নায়ক নয়,তাই তাকে সেভাবেই দেখবেন।আর গল্পটি ভালো না লাগলে ইগনোর করবেন।আমি ক্যাটাগরি অনেকবার উল্লেখ করেছি।তবুও আবার বলছি,এই গল্পের মূল চরিত্র ভিলেন।অযথা বিরক্তি নিয়ে গল্প পড়ে সমালোচনা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি।গল্পে বাস্তবতার ছিটেফোঁটাও পাবেন না।গল্পের ক্যাটাগরি (সাইকো+থ্রিলার+রোমান্টিক)।ভালোবাসা অবিরাম।)