মেহেরজান লেখনীতে- #সোহা পর্ব ৭

0
73

#মেহেরজান
লেখনীতে- #সোহা
পর্ব ৭

মেহরানের আস্তে করে বলা কথাটা রাউশি শুনতে পেলো কি পেলো না সেটা বোঝা গেলো না।কারণ সে তো ব্যস্ত জানালার বাইরের দৃশ্য দেখতে।মেহরান রাউশির দিকে একবার আড়চোখে তাকায়।মেয়েটাকে কেমন উদাসীন মনে হচ্ছে তার কাছে। মেহরান গলা ঝেড়ে বলে,
“তোর কি মন খারাপ রাউশি?”

রাউশি মেহরানের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে,
“এমনটা নয় ভাইয়া।”

“তাহলে এভাবে চুপচাপ বসে আছিস?ওইদিন তো খুব ঝরঝরা ছিলি।”

‘ঝরঝরা!’ শব্দটা মানে বুঝতে পারলো না রাউশি।বোকা চাহনীতে তাকিয়ে রইলো মেহরানের দিকে।মেহরান আড়চোখে একবার দেখে রাউশিকে।সেও কিছু বলে না আর।মেহরানের ফোন বেজে ওঠে।বাম হাতে সেটা নিয়ে দেখে তার পিএ রোজি কল করেছে।এই মেয়েকে মেহরানের একদম অপছন্দ।কিন্তু অপছন্দ হলেও চাকরি থেকে বের করে দিতে পারছে না।কারণ মেয়েটিকে মাহবুব খান ছেলের জন্য হায়ার করেছেন। মেহরান কল রিসিভ করে না।পরপর দুবার কল আসে।তবুও যখন মেহরান রিসিভ করছিলো না তখন পাশ থেকে রাউশি বলে,
“আপনাকে কেউ কল করছে ভাইয়া।রিসিভ করছেন না কেন?”

“জরুরী কোনো কাজের নয় তাই।”

গম্ভীর আওয়াজে এমন জবাব শুনে রাউশি মুখ ঘুরিয়ে সোজা হয়ে বসে।এই লোকের কি আবার রাগ উঠলো নাকি ভাবতে থাকে।মাঝেমাঝে এমন গম্ভীর আর রুক্ষ আওয়াজ শুনলে রাউশির রূহ কিছুটা হলেও যেন কেঁপে ওঠে।
আধঘণ্টা পর শপিং মলের সামনে পৌঁছে যায় তারা। রাউশি গাড়ি থেকে নেমে যায়। মেহরান গাড়ি পার্কিং করে আসছি বলে গাড়ি নিয়ে পার্কিং লটে যায়।রাউশি একটু সাইডে দাঁড়িয়ে থাকে।রাউশির কাছে আজ লোক সমাগম একটু বেশিই মনে হচ্ছে।এইযে সে সাইডে দাঁড়িয়ে আছে তাও আশপাশ দিয়ে অনেক মানুষ আসা যাওয়া করছে।মেহরানকে শার্টের হাতা গুটিয়ে গুটিয়ে আসতে দেখে রাউশি।মনে মনে বলে লোকটাকে আজ সুপুরুষ লাগছে কালো শার্টে।মেহরান রাউশি সামনে আসতেই ‘চল’ বলে।মেহরান আগে হাঁটছে রাউশি তার পিছু পিছু।মলে ঢুকতেই মানুষের ভিড় দেখে রাউশি কপাল কুঁচকে নেয়।মেহরান হাঁটছে তবে এবার রাউশির পাশে।হঠাৎ রাউশি তার বাম হাতে কারো স্পর্শ পায়।বাম হাতের দিকে তাকাতেই দেখে মেহরান তার বাম হাত দিয়ে একহাতে পেছন থেকে রাউশিকে জড়িয়ে ধরেছে।চোখ বড় বড় মেহরানের দিকে তাকায় রাউশি।মেহরান নির্বিকার ভঙ্গিতে হেঁটে যাচ্ছে সাথে রাউশিও হাঁটছে।রাউশি ভাবতে থাকে মেহরান ভাই কেন তাকে এভাবে ধরেছে?মেহরান ভাই কি তাকে পছন্দ করে?এসব ভাবতেই চোখ কপালে ওঠার জোগাড় রাউশির। রাউশি মেহরানের হাতটা ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে তবে ছাড়াতে পারে না।মেহরান গম্ভীর আওয়াজে বলে,
“লোকের ধাক্কা খেতে না চাইলে চুপচাপ হেটে যা।”

রাউশি এবার বুঝে যায় মেহরান কেন তাকে পেছন থেকে এক হাতে জড়িয়ে ধরেছে। এদিকে রাউশি কি না কি ভাবছিলো এসব ভাবতেই নিজেই লজ্জায় পড়ে যায়।চুপচাপ হাঁটতে থাকে।

রাউশি জামা চুজ করার সময় মেহরান ফোনে কারোর সাথে কথা বলছিলো। মেহরান রাউশির কাছে এসে বলে,
“তুই চুজ করতে থাক।আমি একটু কথা বলে আসি।একটুপরই আসবো।কোথাও যাবি না একদম।”

কথাটা বলে মেহরান চলে যায়।রাউশি নিজের মনমতো জামাকাপড় দেখতে থাকে। তখনই তার থেকে একটু দূরে একটি ছেলে আর মেয়েকে ঝগড়া করতে শুনে।সেদিকে তাকিয়ে দেখে ছেলেটা আর কেউ নয় বরং নুজাইশ স্যার।তবে নুজাইশের সাথে ওই মেয়েটা কে সেটা বুঝতে পারে না রাউশি। রাউশি ভাবে নুজাইশের গার্লফ্রেন্ড হবে হয়তো।কিন্তু এই ভরা মানুষের সামনে এরা এভাবে ঝগড়া করছে কেন?

নুজাইশ তার বড় বোন নুসফারের সাথে শপিং এ এসেছিলো।নুসফা আর নুজাইশের সম্পর্ক সাপে নেউলে হলেও আজ বাধ্য হয়ে তাদের দুজনের একসাথে এই শপিং করতে আসতে হলো।এর কারণ নুসফারকে দুদিন পর দেখতে আসবে। নুসফারের কিছু জিনিস কেনার প্রয়োজন ছিলো তাই সেটা তার মা নাজমা বেগমকে বললে তিনি তার ভাইকে নিয়ে যেতে বলেন।নুজাইশ যেতে না চাইলেও মায়ের ধমকে রাজি হয়ে যায়। নুজাইশ মা ভক্ত।মা-কে অনেক ভয় পায় সে।তাই মায়ের কথাতেই এই ঝগড়ুটে’টার সাথে আসতে হলো।নুজাইশ চেচিয়ে বলে,
“তুই এখানেই থাক আমি চলে গেলাম।”

নুসফা বলে,
“যা যা।”

নুজাইশ রেগে চলে যাওয়ার জন্য পেছনে ফিরে তাকাতেই মৌরিনকে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে ওঠে।নুজাইশ আজ সকালে মৌরিনকে ভালোভাবে দেখার পর হতেই এখানে সেখানে মেয়েটাকে দেখতে পাচ্ছে। মোটেও ভালো থাকতে পারছে না নুজাইশ। নুজাইশ এটা তার ভ্রম মনে করে মৌরিনের সামনে গিয়ে বলে,
“তোমার সাহস কত মৌরিন তুমি আবারও আমাকে তাড়া করছো?”

রাউশি হতবম্ভ হয়ে যায়।এই লোক বলে কি? আবার মৌরিন ডাকছে কেন?নুজাইশ নিজের মাথার চুল হাত দিয়ে টেনে ধরে।আশেপাশের মানুষ জন কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে।নুজাইশ বলে,
“দেখো মৌরিন এটা ঠিক নয় আমি তোমার টিচার।টিচার স্টুডেন্টের মাঝে_”

বাকি কথাটা যেন বলতে পারে না।গলা দিয়ে আসছে না কথাটা।রাউশি এবার নিজেকে সামলে বলে,
“স্যার আপনি কি ঠিক আছেন?”

এবার নুজাইশ ভালোভাবে দেখে এটা সত্যিকারের মৌরিন।এবার যেন নুজাইশ আকাশ থেকে পড়ে।এতক্ষণ এই মেয়ের সামনে কি পাগলামীটাই না করলো ভাবতে থাকে।লজ্জা পেলেও ক্ষণবাদেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
“ওহ আ’ম সরি মৌরিন।ইটস যাস্ট আ প্র্যাঙ্ক।”

কথাটা বলে নুজাইশ আবার নিজেই হাসতে থাকে।লজ্জায় যে তার মাথা কাটা যাচ্ছে এটা মোটেও বুঝতে দেওয়া যাবে না। নুজাইশ আবারও বলে,
“তা তুমি এখানে একা কি করছো?শপিং করতে এসেছো?ওহ করো করো।”

নুজাইশ ভাবছে এখান থেকে কেটে পড়লেই সে বাঁচে।তাই নুজাইশ মৌরিনের থেকে বিদায় নিয়ে বড় বড় পা ফেলে চলে যায়। রাউশি নুজাইশের যাওয়া দেখে।সে তো নুজাইশের এমন আচরণে চমকে গিয়েছে। আসলেই কি প্র্যাঙ্ক নাকি অন্যকিছু ভাবতে থাকে।টিচার কি কখনো শিক্ষার্থীর সাথে এমন প্র্যাঙ্ক করে কিনা জানা নেই রাউশির। তখনই ভেতরে আসে মেহরান।রাউশির কাছে এসে ব্যস্ত আওয়াজে বলে,
“আর ইয়্যু ডান রাউশি?”

রাউশি নিজের হাতের দিকে তাকায়। শুধু মাত্র একটা ড্রেস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেহরান রাউশির চোখ অনুসরণ করে সেদিকে তাকাতেই বুঝে যায় যে রাউশির এখনো হয় নি।তাই এবার সে নিজেই রাউশির জন্য ড্রেস পছন্দ করতে শুরু করে। আর রাউশিকে তার পিছু পিছু আসতে বলে। রাউশি শুধু অবাক চোখে মেহরানকেই দেখে যাচ্ছে।মানুষটার চয়েজ সেন্স খুব ভালো।
সবকিছু কেনা শেষ হলে মেহরান শপিং ব্যাগগুলো নিজেই হাতে নেয়।রাউশিকে জিজ্ঞাসা করে,
“আর কিছু বাকি আছে তোর?”

রাউশি দুদিকে মাথা নাড়ায়।আর কিছু বাকি নেই।হাটার সময় রাউশি হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে নিলে মেহরান রাউশির বাম হাত ধরে ফেলে।বলে,
“আস্তে হাঁট আর দেখেশুনে হাঁটাচলা কর।চোখ কোথায় রেখে হাঁটিস?”

রাউশি তো ভালোভাবেই হেঁটে যাচ্ছিলো। মাঝে মধ্যে এমন হওয়া স্বাভাবিক।মেহরান পার্কিং লটে গিয়ে গাড়িটা নিয়ে আসে। রাউশি গাড়িতে উঠে বসে।মেহরান গাড়ি স্টার্ট দেবে তখনই কেউ একজন আবার তাকে কল করে।মেহরান ফোন বের করে ফোনের স্ক্রিনে চোখ দিতেই রেগে যায়। রোজি আবারও কল করছে।কল রিসিভ করে রুষ্ট আওয়াজে জিজ্ঞাসা করে,
“তোমার সমস্যা কি?”

রোজি ওপাশ থেকে বলে,
“স্যার আমি আপনার গাড়ি পেছনে দাঁড়িয়ে আছি।আসলে আজ রাতে আপনার ঢাকার বাইরে যাওয়ার কথা ছিলো।আগামীকাল খুব গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে আপনার।কিন্তু আপনি আমার কলই রিসিভ করছেন না।”

ফোন কানে নিয়েই একবার পেছনে তাকায় মেহরান।সত্যিই রোজি পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।এই মেয়ে জানলো কিভাবে মেহরান শপিং মলে?নাকি বাবা বলেছে?মেহরান তার বাবাকে পরে দেখে নেবে ভেবে নেয় মেহরান।আগে এই রোজির একটা বিহিত করতে হবে।রোজি মেহরানের সিটের জানালার কাছে আসে।মেহরান কাঁচ নামিয়ে ঝাঝালো গলায় বলে,
“কি?”

রোজি একবার রাউশির দিকে তাকায়। মেয়েটাকে সে চেনে না। তবে রোজির যেন হুট করেই মেজাজ খারাপ হয়,
“স্যার আপনার তো আজ ঢাকার বাইরে যাওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু আপনি উনার সাথে কি করছেন?”

মেহরান চোখমুখ শক্ত করে বলে,
“তার কৈফিয়ত কি তোমায় দেবো আমি? মিটিং ক্যান্সেল করো।আমি যাব না।”

রাউশি শুধু ড্যাবড্যাব করেই তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটাকে সে চেনে না।তবে মেয়েটার পোশাক আশাক খুবই মডার্ন।মেয়েটি আবারও রাউশির দিকে তাকিয়েই প্রশ্ন করে,
“কিন্তু স্যার এটা করলে তো আমাদের কোম্পানীরই ক্ষতি হবে।আপনার এভাবে যার তার সাথে সময় কাটানো উচিত নয়।আপনার বাবা জানতে পারলে রেগে যাবেন।”

রাউশির চোখজোড়া ছোট ছোট হয়ে যায়। মেহরান এবার প্রচণ্ড রকমের রেগে যায় বুঝি।ধমকে বলে,
“আমি কি আমার বাবাকে ভয় পায়?এনসার মি?ভয় পায়?চলে যাও এখান থেকে।”

ধমক খেয়ে এবার কিছুটা দমে যায় রোজি। মেহরান রাগে শ্বাস নিচ্ছে ঘনঘন।রাউশির দিকে একবার তাকিয়ে রোজির দিকে চক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে মাথা একটু এগিয়ে নিয়ে বলে,
“ওকে নিয়ে ‘যার তার’ শব্দটা উচ্চারণ করা মোটেও ঠিক হয় নি তোমার।মেহরান খানের অতিপ্রিয় কিছুকে এভাবে অপমান করার শাস্তি তোমাকে পেতে হবে রোজি।বিদায়।”

চলবে……

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here