#মেহেরজান
লেখনীতে- #সোহামণি
পর্ব ১২
সাঈদ বন্ধুমহলের সবাইকে ইনভাইট করেছে তার বাসায়।মেহরান আগামীকাল ঢাকার বাইরে কিছু বিজনেসে কাজে যাবে।এদিকে রাউশিও আজকাল তাকে ইগনোর করছে বিধায় রাজি হয়েছে যেতে।নুজাইশ,তুষার, এহসান, আলভি সবাই পৌঁছে গেছে সাঈদের বাসায়।এখন বাকি শুধু মেহরান।তাদের এই বন্ধুমহলের সবাই বিদেশে একসাথে একই ভার্সিটিতেই পড়াশোনা করেছে।বাকিরা দেশে চলে আসলেও সাঈদ, মেহরান অনেক পড়ে দেশে এসেছে। মেহরান সাঈদ যে বিল্ডিং এ থাকে সেখানে গাড়ি থামায়।গাড়ি পার্কিং করে এসে লিফটের সামনে দাড়াতেই আলভি কল করে।যেহেতু পোঁছেই গেছে তাই আর কল রিসিভ করে না মেহরান।সোজা সাঈদ যেই ফ্ল্যাটে একা থাকে সেখানে চলে আসে।কলিংবেল বাজাতেই ভেতর থেকে সাঈদ এসে দরজা খুলে দেয়।সাঈদ হাসে মেহরানকে দেখে।
“ভেবেছিলাম তুই আসবি না।”
মেহরান ভেতরে প্রবেশ করে।ভেতরে সবগুলা কাছে এসে মেহরানকে জড়িয়ে ধরে।একেকজন এভাবে চেপে ধরাতে মেহরান বলে ওঠে,
“ছাড় এভাবে চিপকে ধরে আছিস কেন?”
সবগুলা হেসে ছেড়ে দেয়।নুজাইশ চেয়ারে বসে ওয়াইন খাচ্ছে।তুষার মেহরানকে খোঁচা মেরে বলে,
“মেয়ে হলে নিশ্চয় এভাবে বলতি না?”
সবাই হেসে ওঠে।নুজাইশ কাছে এসে বলে,
“আজকাল মেহরান বেশি বিজি থাকে।ওরে কল দিলেও পাওয়া যায় না।তোর কিসের এত ব্যস্ততা আমরা আসলে কেউ বুঝতে পারি না।”
মেহরান কিছু না বলে একটি চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ে।পরনের শার্টের টপ দুইটা বোতাম খুলে দেয়।বাকিরাও কাছে এসে বসে।সাঈদ এবার মেহরানের সামনে এসে বসে বলে,
“সমস্যার সমাধান হয়েছে?”
“না।”
পাশে থেকে এহসান জিজ্ঞাসা করে,
“কিসের সমস্যা?”
সাঈদ মেহরানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে,
“আমাদের মেহরানের মন খারাপ।আজ অনেকদিন যাবৎ নাকি সে মেহরানের সাথে কথা বলছে না।”
সবাই কৌতূহলী হয়ে পড়ে।তুষার এগিয়ে এসে অতি উৎসাহিত হয়ে সাঈদের কাধে চাপড় মেরে বলে,
“এই এই আমাদেরও খুলে বল ভাই।সিক্রেট রাখছিস কেন? কিরে মেহরান? ভাবী হলো নাকি রে?”
মেহরান নিশ্চুপ।গম্ভীর মুখে বসে আছে। বন্ধুদের সাথেও সবসময় এভাবে মুখ গম্ভীর রেখেই থাকে।সবাই চঞ্চল স্বভাবের হলেও আলভি আর মেহরান অত্যন্ত শান্ত আর গম্ভীর ধাঁচের।নুজাইশ মেহরানের কাঁধে হাত রেখে বলে,
“কিরে বললিও তো না।”
সাঈদ হালকা কেশে বলল,
“ওর কাজিন রাউশির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে আমাদের মেহরান।”
মেহরান চোখ রাঙায় সাঈদকে।প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে মানে এসব কি কথা?মেজাজ দেখিয়ে বলে,
“প্রেমে হাবুডুবু খাওয়ার কি বয়স আমার?”
সাঈদ হো হো করে হাসে।বাকিরা যেন এবার অতি উৎসাহিত হয়।মেহরানকে ঘিরে ধরে একসাথে বলে,
“কিরে মেহরান সত্যিই?ছবি দেখা ব্যাটা।”
মেহরান টেবিলে থাকা একটা ওয়াইনের গ্লাস হাতে নেয়।এক চুমুক দিতেই বাকিরা আবারও রাউশিকে দেখানোর জন্য বলে। মেহরান মিথ্যা বলে,
“ছবি নেই।বিয়ের দিন দেখে নিস।”
হৈ হুল্লোড় পড়ে যায় বাকিদের মাঝে।একেকজন একেক বিষয়ে এবার আলোচনা শুরু করে।নুজাইশ মেহরানের পাশে এসে বসে।সাঈদের এই ফ্ল্যাটটা নিজের কেনা ভীষণ সুন্দর।সাঈদের বাবা একজন বিগ্রেডিয়ার।ছেলেকেও সেই প্যাশন বেছে নিতে বললে সাঈদ মানা করে তাইতো বাবা মায়ের থেকে আলাদা করে এভাবে একা থাকে।নিজের পছন্দের প্যাশন ডাক্তারিটা হেছে নিয়েছে সে।নুজাইশ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে,
“আর ছয়দিন পর আমার বোনের বিয়ে। অবশ্যই সবাইকেই যেতে হবে।”
এহসান মজা করে বলে,
“ইশশ তোর এত্তো সুন্দর বোনটাকে আমার হাতে তুলে দিলি না।আমি যাব না।”
সাঈদ বলে,
“বোনের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তুই কবে বিয়ে করবি?”
মেহরানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“তোর তো তাড়াতাড়ি বিয়ে করা উচিত মেহরান।পাত্রী পছন্দ আছে।অন্তত কেউ তো বিয়ে কর।শুধু আলভিই এতো তাড়াতাড়ি মেরে দিলো।শালা তুমি আমাদের থেকে অনেক বেশিই ফার্স্ট।”
আলভি চুপ করে বসে আছে।বছরখানেক আগেই বিয়ে করেছে বাবা মায়ের পছন্দের পাত্রীকে।সুখের সংসার।স্ত্রী ছয়মাসের প্রেগন্যান্ট।এহসান বলে উঠলো,
“শুনেছি তোর নাকি বাচ্চা হবে?”
মেহরান ভ্রু কুচকে তাকায় এহসানের দিকে। নুজাইশ হো হো করে হেসে ওঠে।তার হাসির সাথে তাল মেলায় আবার তুষারও।আলভি হাতে গ্লাস নিয়ে তখনও চুপচাপভাবে ধীরে সুস্থে চুমুক দিচ্ছে।সাঈদ হাসতে হাসতে বলে,
“শালা ওর না ওর বউয়ের।”
“আমার কথাটাও এমনই ছিলো।বাট বলতে একটু মিসটেক হয়েছে।”
“এতো মিসটেক হলে চলে?নাকি তুইও কোথাও পিচলে গেছিস?”
মাথা চুলকে হাসে তুষার।সত্যি বলতে তার এক মেয়েকে পছন্দ হয়েছে।নাম অজানা তবে কিছুদিন আগে বাজারে দেখেছিলো মেয়েটাকে।একটা দোকানদারের সাথে ঝগড়া করতে।মেয়েটার তেজ দেখে প্রথমেই অনেক ভালো লেগেছে তুষারের।তবে মেয়েটার খোজ আর পায় নি।তবে তার মতে মেয়েটার সাথে পুনরায় দেখা হবে তুষারের। সবাই আবারও গল্পে মেতে ওঠে।মেহরান তাদের থেকে সড়ে সামনে যায়।এই ফ্ল্যাটের বারান্দা বিশাল বড়।ঠান্ডা বাতাস হচ্ছে। মেহরানের খুব করে রাউশিকে মনে পড়ছে। মেয়েটা তাকে ইগনোর কেন করছে এটা সে কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছে।তবে রাউশি কি বোঝে না মেহরানের কোনো সমস্যা নেই।মেহরানের কাধে হাত রেখে পাশে দাঁড়ায় আলভি।স্থিরদৃষ্টে সামনে তাকিয়ে থেকে বলে,
“কিছু হয়েছে?”
“বুঝলাম না আমায় ইগনোর কেন করছে?”
“হয়তোবা মেয়েটার মাঝে কোনো জড়তা আছে আর নাহয় তোকে অপছন্দ।তবে অপছন্দ হওয়ার কোনো মানেই হয় না।”
‘অপছন্দ’ শব্দটা একবার মুখে আওড়ায় মেহরান।আলভি বুঝদার ছেলে।কথাগুলো খুব সুন্দর সাজিয়ে বলতে পারে ছেলেটা। আলভির সাথে দেখা হয়েছিলো একটি ইতালির একটি রেস্টুরেন্টে।মেহরান তখনও জানতো না এই ছেলে তারই মতো ইংল্যান্ডে থাকে।ভার্সিটিও একই।ডিপার্টমেন্ট আলাদা শুধু।তখন থেকেই আলভির সাথে ভালো একটা পরিচয় হয় তার।একটাসময় গিয়ে ভালো বন্ধুত্বের কাতারেও পড়ে যায়। মেহরান হাতে থাকা গ্লাসে একের পর এক চুমু দিতে থাকে।দুজনে ভেতরে চলে যায়। বাকিরা নুজাইশকে নিয়ে কি বিষয়ে যেন হাসাহাসি করছে।মেহরান সেখানে গিয়ে একটি বিয়ারের বোতল হাতে নিয়ে ঢকঢক করে খাওয়া শুরু করে।বাকিরা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।এই ছেলে আজ এতো ড্রিংকস করছে কেন বুঝলো না কেউ?
বন্ধুদের সাথে পার্টি শেষে বাড়িতে ফিরে আসে মেহরান।মাতাল হলেও নিজেকে কন্ট্রোলে রেখেছে।বাড়িতে এসে সোজা রাউশির রুমের সামনে যায় তবে রুমের দরজা খোলা দেখে সেই অবস্থাতেই মনে পড়ে সকালে তাজবিরকে বলেছিলো রাউশিকে মিথ্যা বলতে আজ মেহরান চলে যাবে কিছু কাজে।কাজ হয়েছে বুঝতে পেরে ম্লান হাসে মেহরান।ঢুলুঢুলু পায়ে এদিক ওদিক কিছুটা খুজে নেয়।এই রাতে মেয়েটা কোথায় যাবে বুঝতে না পারলেও পরক্ষণে ছাদের কথা মনে পড়ে।ছাদে যেতেই রাউশিকে বসে থাকতে দেখে পেছন থেকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।আজ অনেকদিন পর দেখা মেয়েটার।কাছে এগিয়ে গিয়ে গুনগুনে আওয়াজে গান শুনতে পায়।তখনই নিজের মনোভাব প্রকাশ করে ফেলে।
এদিকে রাউশি মেহরানের গলার আওয়াজ শুনে পিলে চমকে ওঠে।মেহরান তো ঢাকার বাইরে আজই চলে গিয়েছিলো।তবে এখানে কি করছে?তাজবির কি মিথ্যা বলেছে রাউশিকে।ভাবতেই গা জ্বলে ওঠে রাউশির।পেছনে তাকিয়ে দেখে মেহরান কেমন করে যেন দাঁড়িয়ে আছে আর দৃষ্টিও কেমন ঘোলা।মেহরান কাছে এগিয়ে আসতেই বিদঘুটে গন্ধ এসে নাকে লাগে রাউশির।বুঝতে আর বাকি থাকে না মেহরান ড্রিংকস করেছে।রাউশি খুব শান্তভাবে বলে,
“ভাইয়া আপনি এখানে কি করছেন?আপনি তো_”
মেহরান আরেকটু এগিয়ে এসে মাতাল হওয়া আওয়াজে বলে,
“কেন আমায় দেখে কি ভালো লাগছে না?”
ঘোরলাগা কণ্ঠ।শুনতেও কেমন একটা আলাদা অনুভুতি এসে যায় মনের গহীনে। চোখ বুজে জোরে একটা শ্বাস নেয় রাউশি। জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়ে এত তাড়াতাড়ি এমন কিছু চায় নি।এমনকি পরবর্তীতে প্রেমে না পড়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে।তবে মেহরানের জন্য সেটা কতটা সহজলভ্য হবে এটাই ভাবছে রাউশি।মেহরান এবার ধমকে বলে,
“কি বলছি শুনতে পাস নি?”
ধমকে বললেও সেটা আজ ধমকিত শোনায় না যেন।অনুকম্পিত হৃদয় নিয়ে ঠোঁটজোড়া নাড়িয়ে রাউশি জবাব দেয়,
“এমনটা কিছুই না ভা_”
মেহরান নিজের ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে ধরে বলে,
“হুশশ।”
কাছে এগিয়ে আসতেই রাউশি পিছাতে থাকে।মেহরান থেমে যায়।মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।রাউশির বিচলিত মুখ দেখে মেহরান ক্ষীণ হাসে। বারবার পলক ফেলে রাউশিকে দেখতে থাকে।দীর্ঘ নেত্রপল্লবে আলাদা মাধুর্য আজ। গোলাপী ঠোঁটজোড়ার দিকে তাকিয়ে নেশা লেগে যাচ্ছে মেহরানের।তবে নিজেকে এমন অবস্থাতেও সংযত করে নেয় সে।ঠিক করেছে বিয়ের আগ পর্যন্ত এমন কিছুই নয়। নেশাক্ত গলায় ফিসফিসিয়ে বলে,
“আমার এই কান তোর মুখ থেকে অন্যকিছু শুনতে চায় রাউশি।অনুভব করতে পারছিস?”
রাউশি কেঁপে ওঠে।মেহরানের গলার স্বরটা আজ খুবই আলাদা শোনালো তার কাছে।অনুভুতিটা অন্যরকম নেশালো বললে ভুল হবে না।
চলবে……
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/