মেহেরজান লেখনীতে- #সোহা পর্ব ৯

0
76

#মেহেরজান
লেখনীতে- #সোহা
পর্ব ৯

গাড়িতে উঠে সিটবেল্ট বেধে গাড়ি স্টার্ট দেয় মেহরান।পাশে বসে থাকা রাউশির দিকে আড়চোখে একবার তাকাতে ভোলে না। রাউশি নখ কামড়াচ্ছে।ভয় পাচ্ছে কি?হয়তোবা।মেহরান গাড়ি চালানোর গতি বাড়ায়।এতে অবশ্য পাশে বসা রাউশি খুব একটা ভাবাবেগ হলো না।মেহরান উচ্চ স্বরে বলে,
“তুই কি আমার ডেটের ব্যাপারে সব জানতি?”

চোখ তুলে মেহরানের দিকে তাকায় রাউশি। ছোট্ট করে বলে,
“না।”
“তাহলে আজ কি হলো সেটা?”

উত্তরটা যেন রাউশির প্রস্তুত ছিলো আগে থেকে।তাইতো প্রশ্ন করার সাথে সাথে ই বলে ফেলে,
“আমি কিছুই জানতাম না মেহরান ভাই। আসলে ওরাই আমাকে জোর করলো যাওয়ার জন্য।আমি কিন্তু যেতে চাই নি।”

মেহরানের মনে হাসি পাচ্ছে।মুখায়ব মেকি কাঠিন্য করে বলে,
“যেতে চাস নি কেন?”
“আসলে যাবই বা কেন এই জন্য আরকি।”

এবার মেহরান কিছুটা রাগে।রাউশি তার ব্যাপারে উদাসীন।এটা মেহরান সহ্য করতে পারবে না।মেহরান রেগেমেগে বলল,
“ভার্সিটি যাস নি আজ।কেন যাসনি?এটা সম্পূর্ণ এক্সপ্লেইন করবি।”

মেহরানের এমন রাগীস্বর শুনে এবার কিছুটা ভয় পায় রাউশি।কি বলবে সে?বৃষ্টি পড়ছিলো বলে ভার্সিটি যায় নি এটা? নাকি বানোয়াট কাহিনী একটা শুনিয়ে দেবে? রাউশি কথা সাজিয়ে নিলো।বলল,
“অসুস্থ ছিলাম ভাইয়া।তাইতো ভার্সিটি যেতে পারি নি।এখন যদি তুমি বিশ্বাস না করো তবে সেখানে আমার কিছু করার নেই।”

আড়চোখে রাউশিকে পরখ করে মেহরান। বিশ্বাস হলো না তার।তবুও আর ঘাটলো না মেয়েটাকে।মেয়েটা তার প্রতি এখনও উৎসুক নয়।এদিকে মেহরানের বাবাও ছেলের বিয়ে দেওয়ার জন্য লেগে পড়েছেন। সমস্যা হতে পারে।এটা দ্রুত সামলাতে হবে ভাবে মেহরান।গাড়িটা বাড়ির সামনে পৌঁছাতেই দেখা যায় উজানদের গাড়িটাও সেখানেই রয়েছে।রাউশি নামতেই উজানদের গাড়ি থেকে বাকিরাও নেমে যায়। তানিয়া রাউশির কাছে এসে বলে,
“চল।”

রাউশি একবার গাড়ির দিকে তাকায়। মেহরান এখনও বসে আছে সেখানে।দৃষ্টি তার সামনে।রাউশি অবাক হচ্ছে এরা এখনও এখানে কি করছে?বাড়িতে তো এদের আগে পৌঁছানোর কথা।রাউশি তানিয়ার পিছু পিছু হাঁটা শুরু করে।মেহরান গাড়ি নিয়ে আবারও কোথাও চলে যায়।সামনেই উজান,তানজিম দাঁড়িয়ে আছে।নাহিন আর মাইশা হয়তো চলে গেছে তাদের বাড়িতে। রাউশির ফুফু মালিহা খানের বাড়ি খান বাড়ি থেকে মিনিট পাচেক দূরে।বাড়িতে প্রবেশ করতেই যে যার মতো চলে যেতে নিতেও পেছন থেকে কারও ডাকে থেমে দাঁড়ায় সকলে।পেছনে ঘুরেই দেখে উর্মিলা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন তাদের দিকে তাকিয়ে।

“কোথায় গিয়েছিলি তোরা?”

উজান একবার সবার দিকে তাকিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে বলে,
“মা আমরা সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলাম।”

খুব সহজেই উর্মিলা বেগম বিশ্বাস করেন। ছেলের মাথায় বারি মেরে বলেন,
“একবার বলে যাওয়া তো উচিত ছিলো নাকি।আমরা চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েছিলাম।কল করলেও ফোন বন্ধ বলে। এমন কাজ আর করবি না।তোর জন্য চিন্তা না হলেও ওদের জন্য তো টেনশন হয় নাকি।”

তখনই কোথা থেকে যেনো তাজবির সেখানে চলে আসে।আর উর্মিলা বেগমকে বলে,
“বড় মা উজান ভাইয়ারা মেহরা_”

আর বলতে পারে না তার আগেই তানজিম ঘটনা বুঝতে পেরে মুখ চেপে ধরে ছেলেটার।উর্মিলা বেগম তখন চলে যাচ্ছিলেন তাই ভালোভাবে তাজবিরের কথাটুকু কর্ণপাত হয় না।উর্মিলা বেগম চোখের আড়াল হতেই সকলে হাফ ছেড়ে বাঁচে নয়তো এই ছেলে এতক্ষণ বলেই দিতো কোথায় গিয়েছে?নিশ্চয় বাড়িতে এই মাত্র এসেছে প্রাইভেট থেকে।নয়তো সবকিছু আজ ফাঁস করে দিতো।তানজিম তাজবিরের হাত শক্ত করে ধরে।দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।তানজিমের পিছু পিছু সবাই যায়।তাজবিরের রুমে নিয়ে যাওয়া হয় তাজবিরকে।তানজিম গিয়ে তাজবিরের মাথায় গাট্টা মেরে বলে,
“এই বিচ্ছুটা দেখি আমাদের খেয়ে আমাদের পেছনেই লাগছিস।”

তাজবির বলে,
“তোমরা আমাকে সাথে নিয়ে যাও নি কেন? আমি সবাইকেই বলে দিবো।”

তানিয়া তার ছোট ভাইয়ের কান মলে দিয়ে বলে,
“এই তুই জানলি কিভাবে যে আমরা যে মেহরান ভাইয়ের ডেটে যাব কথাটা।”

“তোমাদের বলাবলি করতে শুনেছিলাম আজ দুপুরে।কিন্তু আমাকে বাধ্য হয়ে প্রাইভেটে যেতে হলো। তোমরা যদি একবার বলতে আমাকে মা প্রাইভেটে যেতে বাধ্য করতো না।আর আজ আমার মার খাওয়াও হতো না।”

সবাই হেসে ওঠে।তাজবির রাউশির কাছে গিয়ে রাউশির হাত ধরে বলে,
“রাউশিপু তোমার থেকে এটা আশা করি নি।”

তানজিম আবারও তাজবিরের কান মলে দিয়ে বলে,
“এসব কথা না বলে এখন এটা শোন। কাউকে কিচ্ছু জানাবি না নয়তো তোকে রামধোলাই দেব আমরা বুঝেছিস।”

তাজবির বিরোধিতা করে বলে,
“আমি সবাইকে সবটা বলে দেবো।”

উজান এগিয়ে এসে বলে,
“এই এটাকে আজ উচিত শিক্ষা দিতে হবে। চল এটাকে ছাদে বেধে ফেলে আসি।”

রাউশি এগিয়ে এসে উজানকে বলে,
“থাক না ভাইয়া।ও এমনটা করবে না।”
তাজবিরের সামনে এসে বলে,”তাজবির কাউকে কিছু বলবি না বুঝেছিস নয়তো আমরা বিপদে পড়বো পরেরবার হতে তোকেও সাথে নিয়ে যাব।”

“আমার নেক্সট যদি ডব্লাইন্ড ডেট থাকলে সেখানেও যাওয়ার প্ল্যান করছিস দেখি।”

পেছন থেকে মেহরানের ভরাট গমগমে আওয়াজ শুনে সবাই পেছনে ফিরে তাকায়। মেহরান দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।দৃষ্টিটা রাউশির দিকে।রাউশি উঠে দাঁড়ায়। মেহরানের কথার বিপরীতে বলে,
“এমনটা মোটেও নয় মেহরান ভাই।আমি তো শুধু তাজবিরকে_”

মেহরানের হাত উঁচানোতে থেমে যায় রাউশি।সবার উদ্দেশ্যেই বলে,
“বল তো তোদের কি শাস্তি দেওয়া যায় আজ। ”

তানিয়া ভয়ে ভয়ে বলে,
“এবারের মতো মাফ করে দাও মেহরান ভাই।”
“মেহরানের খাতায় মাফ শব্দটা নেই।শাস্তিই প্রযোজ্য।”

উজান ভাইয়ের কাছে গিয়ে বলে,
“দেখ ভাইয়া তোর ভালোর জন্যই গিয়েছিলাম আমরা।ওই মেয়েটার সাথে তোকে ভালো মানাবে না।”

মেহরান কথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে বলে,
“ওদের কথা বাদ দিলাম কিন্তু তুই আর তানজিম তো দামড়া ছেলে।এই বয়সে এসে এমন ছেলেমানুষীতে কি তোদের শোভা পায়?”

উজান মাথা নিচু করে।মেহরান রাউশির দিকে তাকিয়ে ধমকে বলে,
“কান ধর।”

রাউশি চোখ ছোট ছোট করে তাকায়,
“শুধু আমি কেন?”
“সবাইকেই বলেছি।”

বিনাবাক্য ব্যয়ে সবাই কান ধরে।রাউশি ধরতে না চাইলেও বাধ্য হয়েই কান ধরে। মেহরান সবার আড়ালে একবার হাসে রাউশিকে দেখে,
“তানিয়া তুই আগামীকাল বাগান পরিষ্কার করবি পুরোটা।তানজিম তুই আগামীকাল বাড়ির সব বাজার করবি। উজান তুই পুরো বাড়ি পরিষ্কার করবি।আর,”
রাউশির দিকে তাকিয়ে বলে,”তুই আমার জামাকাপড় ধুয়ে দিবি। একদম সব।”

রাউশি শুধু চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকে।তার কাজটা এমন কেন?মেহরান কি তাকে পছন্দ করে?তাহলে এমন রুক্ষ ব্যবহার নিশ্চয় করতো না।তবুও রাউশি মেহরানকে নিয়ে সন্দিহান হচ্ছে।তানজিম মাথা দুদিকে বার বার নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলে,
“নাআআআ!মেহরান ভাই তুমি আমাদের সাথে এমন করতে পারো না।আমরা এখনও অনেক ছোট এসব কাজ আমাদের দ্বারা পোষাবে না।”

বলেই কপালে হাত দেয়।কষ্ট পেয়েছে এমন অভিনয় করে।উজান তানজিমের পিঠে চাপড় মেরে বলে,
“তোর তো শুধুই বাজার আমার দেখ পুরো বাড়ি পরিষ্কার করতে হবে।”
মেহরানের দিকে তাকিয়ে আবার বলে,
“ভাই তুই এমন মেয়েদের কাজ আমায় দিলি কেন?আমায় কি থার্ড পার্সন মনে হয় নাকি তোর?”

হো হো করে হেসে ফেলে মেহরান বাদে।রাউশিও মুচকি হাসে।উজান কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলে,
“হায় আল্লাহ কি দিন এলো? বড় ভাই নিজের ছোট ভাইকে তৃতীয় লিঙ্গের মনে করছে এখন।আল্লাহ আমারে তুমি উঠাইয়া নেও।”

মেহরান এতক্ষণ তাদের কর্ম দেখে যাচ্ছিলো।এবার ধমকে বলে,
“চুপ থাক হাদারাম।কাল যেন মনে থাকে সবার।এখন যে যার ঘরে চলে যা।”

সবাই একে একে বেরিয়ে যায়।রাউশিও মেহরানের সামনে গিয়ে মুখ বেঁকিয়ে চলে যায়।মেহরান চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই নিজের রুমে চলে যায়।রাতের বেলা আসমা খালা রাউশিকে খাবারের জন্য ডাকতে আসে।খান বাড়িতে নৈশভোজন সবাই একসাথেই করে।রাউশি নিচে আসতেই দুটো চেয়ার বাদে বাকি সব চেয়ার খালি পড়ে থাকতে দেখে।চেয়ার দুটো মুখোমুখি।একবার পুরো টেবিল পরখ করে বুঝে যায় কে বাকি আছে এখনও এখানে আসার। একদিন মেহরান রাতে দেরিতে ফিরতো বলে একসাথে খাওয়া হয় নি।গতকালও রাউশি খেতে যায় নি নিচে।আজ তো বাঘের সামনে বসেই খেতে হবে।মানুষটা বাড়িতে আছে। রাউশির অনিচ্ছা সত্ত্বেও বার বার তার চেয়ারের সামনে গিয়ে হাটাহাটি করতে থাকে। তার এমন হাটাহাটি করা দেখে মাহবুব খান বলে উঠল,
“রাউশি মা কি হয়েছে তোমার? এভাবে হাটাহাটি করছো কেন?”

রূপা বেগম বলেন,
“হ্যা রে মা কি হয়েছে এমন করছিস কেন? বসে পড় চেয়ারে।”

রাউশি কিছু বলতে পারে না।বসে পড়ে। রাউশির প্লেটে খাবার দেন রোকসানা বেগম।কিছুক্ষণ পর ওপর থেকে নেমে আসে মেহরান।পরনে কালো নেভি ব্লু টি-শার্ট আর কালো ট্রাউজার। চুলগুলো ভেজা মনে। গোসল করেছে হয়তো।এসেই রাউশির সামনের চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে।মেহরানের সামনে খেতে কেমন অস্বস্তি হচ্ছে রাউশির।এটা আজ থেকেই বেশি হচ্ছে বলে রাউশির ধারণা।তানজিম,উজান,তানিয়ার দিকে তাকাতেই দেখে তারা গপাগপ খেয়ে চলেছে।এরা এভাবে খাচ্ছে কেন আজ?খাওয়ার মাঝেই মাহবুব খান একটু কেশে সকলের সামনেই মেহরানের উদ্দেশ্যে বলে,
“একটু আগে আজিজ কল করেছিলো। বললো আরিয়ার নাকি তোমায় মনে ধরেছে। বিয়েতে সে হ্যা বলে দিয়েছে।এখন তোমার কি মত?হতাশ করবে না নিশ্চয়।”

মাহবুবের কথা শুনে উজানের ভাত গলায় আটকে যায়।তানজিম সেসময় পানি খাচ্ছিলো মুখ দিয়ে পানি বেরিয়ে প্লেটের পাশে গিয়ে পড়ে।তানিয়া কাশতে শুরু করে। তাদের মাঝে শুধু মেহরান আর রাউশিই শান্ত।মেহরান নির্বিকার ভঙ্গিমায় খেয়ে চললেও রাউশি পাশে থাকা তানিয়ার পিঠে হাত বুলাচ্ছে।ছেলেমেয়েদের একেকজনের এমন অবস্থা দেখে বড়রা ভুরু কুচকায়। মাহবুব নিজ ছোট ছেলেকে বলেন,
“কি হলো তোমার?”

উজান তার বাবাকে বলে,
“কিছু না বাবা।আজ খাওয়া বেশি হয়ে গেছে আমার তাই গলায় খাবার আটকে গেছে।”

মাহতাব খান তার বড় ছেলেকে জিজ্ঞাসা করে,
“আর তোমার কি সমস্যা হলো? খাবার তো নষ্ট করলে।”

“এমন ভয়ানক কথা শুনলে খাবার শুধু গলায় নয় কলিজায়ও আটকে যায়।” তানজিম কথাটা বিরবির করে বলায় কেউ শুনতে পায় না।মাথা নিচু করে বসে আছে সে।মেহরান এবার তার বাবার কথা প্রেক্ষিতে জবাব দেয়,
“মেয়েটাকে আমার পছন্দ হয় নি।”

মাহবুব খান নাখোশ,
“কেন?”
“মেয়েটা অভদ্র।সেল্ফ রিসপেক্ট নেই।আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমার নিজের পছন্দ করা একজন আছে।ওপাশ থেকে উত্তর হ্যা আসলে আমি নিজেই বিয়ের বিষয়ে এগিয়ে যাব এর আগে নয়।তাই আমার বিয়ে নিয়ে বিষয়বস্তু আপাতত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো তোমরা।”

চলবে……

ভুল ক্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here