#মেহেরজান
#লেখা_সোহা
#পর্ব_২০ (#শেষ_অংশ)
মেহরানের এমন রাশভারী আওয়াজে কটাক্ষ করে কথাটা শুনে থমথমে মুখে মেহরানের দিকে তাকালো রাউশি। মেহরান তারই দিকে তাকিয়ে।লাল আলোয় মেহরানের মুখের প্রতিক্রিয়াটা ততোটা বোঝা গেলো না।তবে রাউশি বুঝলো এই লোক তাকে এখন আর ছেড়ে দেবে না। রাউশিকে চুপ থাকতে দেখে মেহরান পুনরায় বলল,
“আজকাল গম্ভীর হয়ে গেছিস নাকি?”
রাউশি এই কথারও জবাব দিলো না। চশমাটার কথা মনে পড়তেই খেয়ালে আসলো চোখে চশমা নেই।এই লোকটাই সড়িয়ে দিয়েছে হয়তো।রাউশি মুখ ভার করে বসে রইলো ঠিকই তবে এতে আবার রেগে গেলো মেহরান।রাউশির দিকে ভালোভাবে ঘুরে ভারী আওয়াজে বলল,
“কথা বলছিস না যে? বোবা তো নোস!”
“সব কথার জবাব দিতেও বাধ্য নই।”
মেহরান চমকালো,
“ওরে বাবা।মুখে খই ফুটেছে দেখছি।”
“মাঝে মাঝে ফোটাতে হয়ে মেহরান ভাই।”
“চুপ থাক।এখন বল আমায় ইগনোর করছিলি কেন?”
রাউশি স্বভাবতই স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিলো এবার,
“আমি ইগনোর করিনি।আপনার যদি একান্তই ইগনোর মনে হয়ে থাকে তবে আমি_”
বাকি কথা বলতে পারলো না রাউশি মেহরান রাউশির হাত চেপে ধরে বলল,
“দু একটা চুমু খেয়েই যদি এমন অবস্থা হয় তোর, আমি ভাবছি ভবিষ্যতে কি হবে? আমাদের বাসর রাতেই বা কি হবে?”
লজ্জায় কান গরম হয়ে এলো রাউশির।গালে ফুটে উঠলো লজ্জার আভাস।এই লোক দিন দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হলো রাউশির।আগে তো কেমন গম্ভীর থাকতো।রাউশির মুখ দেখা না গেলেও লজ্জা যে পেয়েছে সেটা মেহরান ঠিকই বুঝলো।হাত ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসে বলল,
“সিলেট থেকে এসেই তোর একটা ব্যবস্থা করছি আমি।দিন দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস।”
রাউশি মনে মনে বলল ‘নিজে যে খুব আদব হয়ে যাচ্ছে।’ তবে মুখে বলল,
“আমি বেয়াদব হই নি।এখনও আদবই আছি।”
মেহরান হালকা ধমকে বলল,
“চুপ থাক।ঘুমা যা।”
মেহরানের এহেন ধমক মোটেও বোধগম্য হলো না রাউশির।তবে মুখ ঘুরিয়ে গোমরামুখে জানালার দিকে তাকিয়ে বসে রইলো।
দূরে বসা নুজাইশ তাদের কথা ভালোভাবে না শুনলেও বুঝলো দুজনের মধ্যকার খুনশুটি।নিজেও হাসলো কিছুটা।রাউশির গোমরামুখটা দেখার একরাশ ইচ্ছা জাগলো মনে।তবে সেই অবহেলিত ইচ্ছে নিমিষেই বিসর্জন দিয়ে নিজেও ঘুমানোর জন্য রেডি হলো।বাবা মায়ের কথাও মনে পড়লো নুজাইশের।কাউকে না জানিয়েই এসেছে সে।চিন্তা করবে ভেবে নুসফারকে একটা মেসেজ করলো তৎক্ষনাৎ।মেসেজটা করে সিটে হেলান দিলো।
দীর্ঘ জ্যাম পেরোতে অনেক্ষণ সময় লেগেছিলো তাইতো সিলেটে পৌঁছাতে সময়টাও দ্বিগুণ লেগেছে।এখন সিলেটের রাস্তা ধরেই গন্তব্যে এগিয়ে যাচ্ছে গাড়িটা। সকাল হয়েছে তবে সূর্য এখনও উঠে নি। শুধু পূর্ব দিগন্তে লাল লাল আভা দেখা যাচ্ছে।অর্থাৎ সূর্য আর কিছুক্ষণ পরই উদিত হবে।রাউশি সারারাত জেগে ছিলো।পাশে বসা মেহরান পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছে।মাঝেসাঝে আবার রাউশির কাঁধেও মাথা রেখেছে।রাউশি অবশ্য সড়িয়ে দেয় নি কারণ মানুষটার মুখটা দেখলে কিছুটা মায়া লাগে।তবে নিজের কাঁধ ব্যথা হয়ে গেছে রাউশির।এইযে এখনও কেমন আরামে ঘুমাচ্ছে রাউশির কাঁধের মাথা রেখে।বাসের সবাই ঘুমন্ত অবস্থায় শুধুই রাউশি জেগে জেগে কল্পনা জল্পনা করে যাচ্ছে।বাইরের প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত সে।আবার মাঝেমধ্যে মেহরানের মাথাটাও ঠিক করে দিচ্ছে।
কাঁধে ভারী কিছুর স্পর্শ পেতেই ঘুম পাতলা হলো মাইশার।নিভু নিভু চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো তানজিম তার কাঁধে মাথা রেখে আরামসে ঘুমাচ্ছে।সহ্য হলো না মাইশার।উল্টো কাঁধ থেকে মাথাটা সড়িয়ে দিয়ে নিজেই তানজিমের কাঁধে মাথা রাখলো।এদিকে এটা দেখে তানজিম মুচকি হাসলো।তানজিম ঘুমায় নি বরং অভিনয় করছিলো।মনে মনে ভাবলো দিনের সূচনাটা যদি এত সুন্দর হয় তবে পুরো দিনটাও নিশ্চিত অনেক সুন্দর হবে।এদিকে রাউশি একবার মাথা তুলে সামনে পেছনে তাকালো।সবাই ঘুমিয়ে আছে এখনও।তবে চোখ গেলো তানজিম আর মাইশার দিকে। তাদেরই বিপরীতে এক সিট পেছনে। তানজিমের কাঁধে মাইশার মাথা দেখে মুখ চেপে হাসলো রাউশি।তানজিমও খেয়াল করলো রাউশিকে।হাত নাড়লো রাউশিও হাত নাড়লো।তখনই আবার চোখ গেলো সবার পেছনে নুজাইশের ওপর।মানুষটা কেমন বাচ্চার মতো ঘুমাচ্ছে।আশেপাশে কোনো অবলম্বন নেই একটু ভালোভাবে ঘুমানোর।রাউশির মায়া হলো তবে তারও কিছু করার নেই।রাউশি আবারও সোজা হয়ে বসলো।আবারও চোখ রাখলো বাইরে। জানালা দিয়ে সুড়সুড় করে বাতাস আসছে আর দুজনের গা ছুয়ে দিচ্ছে।রাউশি কি মনে করে যেন পাশে থাকা মেহরানের দিকে তাকালো।ঠান্ডা হাওয়ায় মানুষটার কপালের কাছে চুলগুলো উড়ছে।সূর্য উঠেছে আর মেহরানের মুখের ওপর একটু একটু আলো এসে পড়লো।রাউশির ঠোঁটে হাসি ফুটলো। হাত বাড়িয়ে কপালের চুলগুলো সড়িয়ে দিলো।ঘুমন্ত মেহরান নড়ে উঠলো।রাউশির আদুরে বাচ্চার মতো লাগলো আর নিঃশব্দে হাসলো।আঙুল চালিয়ে কপাল হতে থুতনির কাছে আনলো।চাপ দাড়ি গুলো ছুয়ে দিলো। ঠোঁটের দিকে চোখ পড়তেই একটা শুকনো ঢোক গিললো রাউশি।কি করছে ভেবে হাত সড়াতে চাইলেই মেহরান খপ করে ধরে ফেললো।ঘুম ঘুম চোখে তাকালো রাউশির দিকে।ঘুম জড়ানো আওয়াজেই বলল,
“বিয়ের পর ধামাকা লেভেলের একটু চুমু খেয়ে নিস আপাতত নজর সামলা।”
রাউশি হতবিহ্বল হয়ে পড়লো।আর চমকালোও।এই লোক কিভাবে বুঝলো এতোসব।উনার কি কোনো অলৌকিক ক্ষমতা আছে নাকি ভাবা শুরু করলো রাউশি।মেহরান ঠিকভাবে বসে আবারও ঘুমিয়ে পড়লো।রাউশি ভাবনায় মশগুল হয়ে পড়েছে।
.
গন্তব্যে পৌঁছানোর কিয়ৎক্ষণ আগেই সকলেই জেগে পড়েছে।আর এখন সবাই কথা বলাবলি করছে।মেহরান ফোন নিয়ে কিসব ঘাটাঘাটি করছে আর রাউশি চোখ ছোট ছোট করে আড়চোখে সেদিকেই তাকিয়ে।গ্রামের সরু পথ ধরে গাড়িটা চলছে।রাস্তাটা বড় হওয়ায় আর পিচঢালা রাস্তা হওয়ায় চলতে বেগ পেতে হচ্ছে না।
এদিকে মেহরান ঠিক বুঝতে পারলো রাউশির নজর কোনদিকে।তাই মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
“আড়চোখে দেখিস কেন?দেখতে চাইলে আমাকেই বল, আমিই দেখিয়ে দিচ্ছি।লুকিয়ে চুড়িয়ে দেখা কোন স্বভাব?”
মাথায় হাত দিয়ে বিরোধিতা করলো রাউশি,
“এমনটা মোটেও না মেহরান ভাই।আমি তো, ও-ওই সিটের দিকে তাকিয়েছিলাম।”
“ওহ আচ্ছা তাই নাকি?তা কি দেখছিলি সিটে।”
উত্তর দিতে পারলো না রাউশি।আমতা আমতা করতে লাগলো।আর এমন সময়ই গাড়িটা বিশাল এক বাড়ির সামনে এসে থামলো।সবার মাঝেই একটা হৈ-হুল্লোড় ভাব এসে গেলো।আস্তেধীরে একে একে সবাই নামার তোড়জোড় শুরু করলো।রাউশিও নামার জন্য উঠে দাড়ালো।তবে মেহরান রাউশির হাত ধরে টেনে বসালো আর বলল,
“হুশশ, তুই পড়ে নামবি।”
রাউশি বলল,
“আমি এখনই নামবো।”
“কথার অমান করছিস রাউশি?”
“সবাঅ নামছে।আমি এখানে একা থাকবো কেন?”
“আমি বলেছি তাই।চুপচাপ বসে থাক।”
একে একে সবাই নেমে গেলো।রাউশি জানালা দিয়ে দেখলো বাড়িটা।বিশাল বড় একটি বাড়ি।রাজবাড়ীর মতোই দেখতে বাড়িটা।বাড়ির সামনে ইট বিছানো রাস্তা আর পাশে নানান ফুলের বাগান।রাউশি শুনেছে উর্মিলা বেগমদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড অনেক ভালো।আজ সচক্ষে দেখছে।একে একে সবাই নামার পর সর্বশেষে নুজাইশও নামার জন্য উদ্যত হলো।তবে সামনে এগোতেই রাউশি আর মেহরানকে বসে থাকতে দেখে মেহরানের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“নামবি না?”
মেহরান সোজাসাপটা জবাব দিলো,
“তুই যা আমি আসছি।”
নুজাইশ হাসলো।রাউশির দিকে তাকিয়ে হাত নাড়িয়ে নেমে পড়লো।গাড়িতে এখন আর কেউ নেই।এবার মেহরান রাউশির দিকে ঘুরে বসলো।রাউশি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।রাউশির থুতনি ধরে মেহরান নরম আওয়াজে বলল,
“শোন রাউশি। এ বাড়িতে বেশ কয়েকজন যুবক ছেলেপেলে আছে।তাদের সাথে কথা বলবি না বলে দিলাম। আর কোথাও যাবি না আমার অনুমতি ব্যতীত।কোনোকিছুর প্রয়োজন হলে আমায় বলবি।আর ঘোরাঘুরির বিষয় সেটা আমি নিজে দেখে নেবো।”
রাউশি বাঁকা হেসে বলল,
“মেহরান ভাই আপনি জেলাস?”
মেহরান কপাল কুঁচকালো,
“কারণটা যদি তুই হোস, তাহলে হ্যা আমি জেলাস।”
চলবে…….????
[ পর্ব—২১ মিস না করতে নীল লেখায় চাপ দিয়ে আইডিতে ফলো করুন👉 It’s shemul