মেহেরজান লেখনীতে- #সোহা পর্ব ১১

0
70

#মেহেরজান
লেখনীতে- #সোহা
পর্ব ১১

রাত তখন গভীর।এই গভীর রাতে পুরো রুম কাঁপিয়ে আয়াশের ফোন বেজে ওঠে।তখন আয়াশ ঘুমাচ্ছিলো।বুকের ওপর লেপ্টে শুয়ে আছে অনিমা।ফোনের আওয়াজ শুনে তার ঘুমে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে। আয়াশ পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে ঘুমু ঘুমু চোখে একবার তাকিয়ে দেখে।তার মা কল করছে।আয়াশ কল ধরতেই ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ শোনা যায়।আয়াশ মায়ের কান্নার আওয়াজ শুনে ধরফরিয়ে অনিমাকে সড়িয়ে উঠে পড়ে আর উদ্বীগ্ন স্বরে জিজ্ঞাসা করে,
“কি হয়েছে মা?কাঁদছো কেন?”

ওপাশ থেকে আমেনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন,
“বাবারে তোর বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি।আধঘণ্টা আগে স্ট্রোক করেছে। এখন হাসপাতালে আছি।বাবা তুই আয় না রে।তোর বাবার অবস্থা ভালো নেই রে।”

ঘুম ঘুম চোখে অনিমা আয়াশকে ঝাড়তে থাকে এপাশে।কেন এভাবে সড়িয়ে দিলো? এদিকে আয়াশ হতবম্ভ হয়েছে।বাবার এমন অবস্থার কথা শুনে নিজেকে সামলে রাখতেও পারছে না।তার বাবা কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলো তবে হঠাৎ করে এমন হয়ে যাবে এটা আশা করে নি।তার মা-কে বলে,
“মা আমি এখনই রওনা দিচ্ছি।বাবার খেয়াল রাখো আমরা আসছি।”

কথাটা শুনে অনিমা জিজ্ঞাসা করে ওঠে,
“এখনই রওনা দিবে মানে?কোথায় যাবে?”
“অনিমা বাবা স্ট্রোক করেছে।এখনই যেতে হবে আমাদের।অবস্থা ভালো নয় বাবার।”

কথাটা বলতেও আয়াশের কেমন যেন কণ্ঠনালী কেঁপে ওঠে।এদিকে অনিমা ঘোর বিরোধিতা করে বলে,
“পাগল হয়েছো এই সময়ে কোথায় যাব?আমার ঘুমে ধরেছে।তোমার বাবা দেখবে কালই ঠিক হয়ে যাবে।এত চিন্তার কি আছে? বয়স হয়েছে এখন এসব একটু আধটু হবেই, বাদ দাও।”

আয়াশ অগ্নিদৃষ্টে তাকায় অনিমার দিকে। ধমকে বলে,
“তুমি কি বলছো তুমি জানো অনিমা?”
“ভালো কথাই বলছি।এতে ধমকাচ্ছো কেন?”

আয়াশ নিজের চুল টেনে ধরে।সে তার বাবাকে ভালোবাসে।অনিমার কাছ থেকে এমন কথা মোটেও আশা করে নি।সে তো ভেবেছিলো অনিমা নিজেই আরও বেশি যেতে চাইবে।তবে তার ধারণা ভুল ছিলো। তার মন চাইছে অনিমাকে একটা চড় দিতে তবে আপাতত সেসব ঝামেলা না করে সে উঠে দাঁড়ায়।মাথায় আপাতত অন্যকিছু রাখা দায় হয় যাচ্ছে।আলমারি থেকে দরকারি জিনিসপত্র বের করে নেয়।এতে অনিমা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে।ওয়াশরুম থেকে রেডি হয়ে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বলে,
“তুমি থাকো আমি গেলাম।বাবার এমন কঠিন পরিস্থিতিতে অমানুষের মতো বসে থাকতে পারবো না।”

তাচ্ছিল্য হাসে অনিমা,
“অমানুষতা তো অনেকদিন আগেই করে ফেলেছো।”

আয়াশ বের হতে যাচ্ছিলো এই সময় এমন কথা শুনে থেমে যায়।রাউশির কথা মনে ওঠে তার।মেয়েটাকে সেদিন ভার্সিটি দেখার পর প্রায় ছদিন হয়ে গেলো ভার্সিটিতে আর দেখেনি।তার জন্যই কি ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করেছে নাকি?আয়াশ তো আর আগে থেকে জানতো না এই ভার্সিটিতেই রাউশি ভর্তি হবে।এতো বড় নামীদামী ভার্সিটিতে লেকচারার হওয়ার সুযোগ পেয়েছে এই সুযোগটা কিভাবে হাতছাড়া করতো আয়াশ। বাবার কথা মনে পড়তেই এসব ভুলে গিয়ে অনিমাকে ফেলেই তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।অনিমা তাচ্ছিল্য হেসেই যাচ্ছে।এদের ঢং দেখলে সে বাঁচে না। আয়াশের সাথে তার প্রেমে সম্পর্ক চারবছরের হলো।তবে আয়াশের বাবা হুট করেই আয়াশকে বিয়ে দিয়ে দেয়।এতে অনিমা রেগে সেদিনই বিদেশে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।আয়াশ সেটা জেনে গেলে সেও অনিমার সাথে চলে যায়।সেখানেই তারা লিভ ইন এ থাকা শুরু করে।অনিমা সেসব ভুলে গিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে আসে। যার যেখানে যাওয়ার যাবে তার এতে মাথা ঘামানোর কোনো ইচ্ছে নেই।সে তো আরও মনের শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে।

.

আজ ভার্সিটি যাওয়ার ইচ্ছে আছে রাউশির। কোমড় ব্যথা সেড়ে গিয়েছে তার কয়েকদিন হলো।তবে ভার্সিটি যায় নি ইচ্ছে করেই। এ কদিনে মেহরানের সাথেও দেখা করেনি রাউশি।মানুষটার থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দিন পার করে দিয়েছে।মেহরানের বিষয়টা খুব ভালোভাবেই বুঝে গিয়েছে রাউশি।তবে জড়তা তার এখানেই যে রাউশি ডিভোর্সি হিসেবেই গণ্য সমাজে।শব্দটাতেও কিছুটা অস্বস্তিবোধ যেন অগাধ মিশে।যার দরুণ চাইলেও সে আর কোনো সম্পর্কে জড়াতেও একটা জড়তা-সংকোচবোধ করবে। রাউশি এমনটাও চায় না কখনো।তাই তো মেহরানের থেকে এ কদিন লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়াচ্ছে।মেহরান সারাদিন বাড়িতে না থাকলে সারাদিন এভাবেই থাকে।তবে মেহরান যখন আসে এই খবর আবার তাকে তাজবির দিয়ে যায় তখনই দরজা লাগিয়ে রুমে বসে থাকে।এতে অবশ্য বাড়ির লোকেরাও অনেকে অনেক কথা বলেছে।কি হয়েছে এভাবে থাকে কেন? এসব প্রশ্ন প্রায় প্রতিনিয়তই করে গেছে তবে রাউশি সেই মুহুর্তগুলোতে নিরব,নিরুত্তর ছিলো।কি বলবে সে সবাইকে? এই মেহরান ভাইয়ের থেকে দূরে দূরে থাকছে।এটা তো বলা সম্ভব না।রাউশি ঠিক করেছে এই বাড়িতে মেহরান ভাই যতদিন থাকবে ততদিন ভালোভাবে থাকা হবে না।এ বাড়ি ছাড়া কোথায় যাবে সে চিন্তাও করেছে কদিন।ভার্সিটির পাশে গার্লস হোস্টেলে থাকার ডিসিশনও নেওয়া হয়েছে তার।তবে এটা এখন বাস্তবায়ন করা বাকি শুধু।রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে রাউশি।আজ সে মুক্ত কারণ মেহরান এক সপ্তাহের জন্য শহরের বাইরে যাবে বিজনেসের প্রয়োজনীয় কিছু কাজে।এ খবর আবার তাজবির দিয়েছে রাউশিকে।তাজবিরকে কড়া একটা ট্রিট দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাউশি।তাজবির তো মহাখুশি।মেহরান সকালেই চলে গিয়েছে তাইতো এখন নিশ্চিন্তে বের হতে পেরেছে। এ-কদিনে মেহরান নাকি অনেকবার তার ব্যাপারে বলেছে, জিজ্ঞাসা করেছে তবে এর উত্তর তো আর কেউ জানে না তাই কেউ কিছু বলতে পারেনি।এদিকে দরজার সামনে কোনো মানুষের অস্তিত্ব যে অনেকবার ছিলো সেটা রাউশি অনেক ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে।ওটা যে মেহরান সে বিষয়ে আবার নিশ্চিত নয় রাউশি।তবুও সন্দেহ করতে দোষ কোথায়?রাউশি নিচে আসতেই উর্মিলা বেগমের সাথে মুখোমুখি হয়। উর্মিলা বেগম রাউশিকে দেখে জিজ্ঞাসা করেন,
“ভার্সিটি যাচ্ছিস মৌরি?”
“হ্যা বড় মা।”
“খেয়ে যা।তানিয়া কোথায়?ও যাবে না আজ?”

রাউশি তাড়াহুড়ো করতে করতে বলে,
“না বড় মা তানিয়া নাকি অসুস্থ।ও যাবে না আজ ভার্সিটি।আমি আসি আজ অনেক দেরি হয়ে গেছে।”

বলেই বড় বড় কদম ফেলে চলে যায়। উর্মিলা বেগম এপাশ থেকে চেচিয়ে ‘গাড়িতে করে যা’ বলেন।তবে রাউশি শুনতে পেলো কিনা বুঝতে পারেন না। রান্নাঘরের দিকে চলে যান তিনি।সকালের এ সময়টায় বাড়ির কর্তীরা ব্যস্ত থাকেন।

রাউশি বাইরে এসে গাড়িতে না চড়ে রিকশায় করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।গেইটের সামনে এসে একটু হেঁটে গিয়ে রাস্তার মোড়ে যায়।ওখানেই রিকশা সিএনজি সব পাওয়া যায়। রাউশি সেখানে গিয়ে একটি রিকশায় উঠে পড়ে।রিকশাকে ঠিকানা বলে দেয় রাউশি। রিকশা ধীর সুস্থে গন্তব্যে যেতে থাকে। ফোনে ভাইব্রেট হতেই দেখে রুনা কল করছে। মেয়েটা প্রতিদিনই তার খোজ নিয়েছে।আজ রাউশি ভার্সিটি যাবে শুনে অনেক খুশি সে। রিকশাটা ভার্সিটির রাস্তা ধরে যেতেই কোথা থেকে যেন একটি গাড়ির সাথে হুট করেই ধাক্কা লেগে যায়।এতে রাউশি রিকশা থেকে পড়ে যায়।গাড়িটি ডান পাশের রাস্তা দিয়ে এসেছে।গাড়ির বেগ অতিদ্রুত ছিলো না বলে রিকশার বেশি ক্ষতি হয় নি।রাস্তায় বাক নিতেই হয়তোবা এমন হয়েছে।তবে রাউশি আর রিকশাওয়ালা হাঁটের কনুইয়ে বেশ কিছুটা চোট পায়।রিকশাওয়ালা আরও কোথাও চোট পেয়েছে কিনা এটা বুঝতে পারে না রাউশি।তবে রিকশাওয়ালা গাড়ির ড্রাইভারকে চেঁচাচ্ছেন।মাটি থেকে ব্যাগটা নিয়ে জামাকাপড় ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে দাঁড়ায় রাউশি।পায়ের হাটুতেও ব্যথা অনুভব করে সে।এদিকে গাড়িতে থাকা মানুষটাও নেমে আসে।মৌরিনকে দেখে নুজাইশ অবাক হয়ে যায়।কাছে এসে উদ্বীগ্ন, উৎকন্ঠা নিয়ে বলে,
“এই মৌরিন আপনি ঠিক আছেন তো?”

মাথা তুলে নুজাইশকে দেখে রাউশি। রাউশি বেশ আঘাতপ্রাপ্ত।তার ওপর এই নুজাইশ স্যার সেই আঘাতের কারণ।আবার কাছে এসে এমন বেকুবের মতো প্রশ্ন করছে। নিজেকে যথেষ্ট সংযত রেখে তবুও বলে ফেলে,
“এক্সিডেন্ট করিয়ে কাছে এসে ঠিক আছে কিনা ব্যাপারটা বেশ মজাদার তাই না স্যার?”

থতমত খেয়ে যায় নুজাইশ।বার বার মাথা এদিক ওদিক নাড়িয়ে বলে,
“আ’ম এক্সট্রিমলি সরি ডিয়ার স্টুডেন্ট।আমি খেয়াল করিনি।”

‘ডিয়ার স্টুডেন্ট’ কথাটা কেমন শোনাকেও অতটা পাত্তা দেয় না রাউশি।রাউশির এখানে তামাশা করার মতো ইচ্ছে নেই।আশেপাশে মানুষ জড়ো হয়েছে।লোকজন এসে নুজাইশকেও কথা শোনাচ্ছে।সাথে রিকশাওয়ালাও শোনাচ্ছে। নুজাইশ অবশ্য সেদিকে কান না দিয়ে মৌরিনের দিকেই চিন্তিত মুখে তাকিয়ে আছে।রাউশিকে আবারও বলে নুজাইশ,
“চলো রাউশি তোমায় হাসপাতালে নিয়ে যায়।”

ওপাশ থেকে এবার রিকশাওয়ালা চেচিয়ে বলে,
“খালি আফারেই কেন?আমিও তো ব্যাথা পাইছি।আমারে মানুষ মনে হইতাছে না নাকি?”

নুজাইশ বিরক্তিকর চাহনী দিয়ে বলে,
“আপনি তো মৌরিন না।আপনার ব্যবস্থা আমার ড্রাইভার করবে।এখন ডিস্টার্ভ করবেন না।কান ঝালাপালা করে দিচ্ছেন।”

রিকশাওয়ালা কণ্ঠে দ্বিগুণ ঝাঝ মিশিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
“সুন্দরী মাইয়া দেখলেই খালি গায়ে পড়বার মন চাই না আপনেগোর।খারাপ বেডা।”

নুজাইশ কথাটা শুনে রিকশাওয়ালার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়।রিকশাওয়ালা কিছুটা বিচলিত হয় তবে নিজেকে দমিয়ে রাখে না।কিছু বলার আগেই রাউশি থামিয়ে দেয়।নিজে থেকে কিছু টাকা বেশি দিয়ে দেয় রিকশাওয়ালাকে।উনার চিকিৎসা এবং ক্ষয়ক্ষতির জন্য।এতে অবশ্য নুজাইশ অনেককিছুই বললো তবে রাউশি শুনলো না।নুজাইশকে দেরি হচ্ছে বলে হাটা ধরে রাউশি।এদিকে ভার্সিটির কাছাকাছি থাকায় নুজাইশও আর রাউশির পিছু পিছু গেলো না।অন্যরা দেখলে খারাপ ভাববে। তবে নুজাইশ উৎফুল্ল চিত্তে গাড়িতে উঠে বসে। আজ অনেকদিন পর মৌরিনের দর্শন পেয়েছে সে।মৌরিনের নাম্বার খুজেছিলো অনেকবার তবে পায় নি। মেয়েটা তার ধরাছোয়ার বাইরেই বলা চলে। নুজাইশ ঠিক করেছে তার বোনের বিয়েতে মৌরিনকেও ইনভাইট করবে।এটা কতটা যুক্তিসঙ্গত হবে সেটা তার জানা নেই তবে দেওয়ায় যায় বলে নুজাইশের ধারণা।
রাউশি ভার্সিটি প্রাঙ্গণে পা রাখতেই কোথা থেকে যেন রুনা,নাঈম,হাসিব,মিলি,শ্রুতি আর ইউসুফ দৌঁড়ে রাউশির কাছে আসে। রুনা রাউশিকে জড়িয়ে ধরে,
“এতদিন তুমি আসো নি তোমায় মিস করেছি।”
“আমিও তোমাদের মিস করেছি।”

নাঈম বলে,
“এই রাউশি আমিও তোমাকে মিস করেছি।”

নাঈমকে থামিয়ে হাসিব ইউসুফের কাধে হাত রেখে বলে,
“ইউসুফ বেশিই মিস করেছে তোমায় রাউশি।”

ইউসুফ কড়া নজরে তাকায়।ছেলেটা চশমা পড়া,ভোলাভালা দেখতে।পড়ালেখায় ভীষণ সেনসিটিভ।তার বাবা-মা ডাক্তার ছেলেকেও ডাক্তার বানাতে চেয়েছিলেন তবে ইউসুফ নাকি মানা করে দেয়।এসব গল্প রুনার থেকে শোনা রাউশির।সবার ব্যাপারে কমবেশি জানা হয়ে গেছে তার।রাউশিকে ধরে নিয়ে যায় সবাই তাদের ডিপার্টমেন্টের পেছনে থাকা কৃষ্ণচুড়া গাছটির দিকে।কৃষ্ণচুড়া ফুল ফোটেনি গাছে তবে আর এক-দুমাস পর ফোটার সম্ভাবনা প্রখর।রাউশিকে এতক্ষণ খেয়াল না করলেও এবার শ্রুতি খেয়াল করে বলে,
“এই রাউশি হাতে চোট পেলে কোথায়?”

রাউশি এবার সবাইকে পুরো ঘটনা খুলে বলে।রুনা বলে,
“এই নুজাইশ ব্যাটা দিনকানা মনে হয়।”

মিলি বলে,
“নুজাইশ স্যারকে নিয়ে কিছু বলিস না তোরা।উনি আমার ক্রাশ।”

শ্রুতি বলে,
“ক্রাশ মাই ফুট।ব্যাটার চেহারা লম্বা মুলার মতো।”
“ওই লম্বা মুলাটাকেই আমার পছন্দ।”

মিলি লাজুক হেসে ফেলে।বাকিরা মিলির এমন আচরণে হেসে ওঠে।ইউসুফ তার ব্যাগ থেকে একটি রুমাল বের করে রাউশির হাতে লাগিয়ে দেয়।রাউশি মানা করলেও শোনে না ইউসুফ।হাসিব তৎক্ষণাৎ উৎসাহিত গলায় ইউসাফের কাধে চাপড় মেরে বলে,
“এই ইউসুফ ওই দেখ তোর ইশা আসছে।”

ইউসুফও ঘার বাকিয়ে পেছনে তাকায়।কথাটা মিথ্যে বলেনি হাসিব।ইশাকে ইউসুফ পছন্দ করে আজ প্রায় দুবছর হলো।তবে মেয়েটা তাকে দেখলে না দেখার ভান করে চলে যায় সবসময়।এতে অবশ্য ইউসুফ কষ্ট পেলেও নিজেকে সামলে নেয়।এখন আর মেয়েটার পিছু নেয় না সে।বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়ানো নেহাৎই বোকামি।তারা সবাই ক্লাসে চলে যায়।পরপর সব ক্লাস শেষ হতেই আয়াশের ক্লাস এখন হবে শুনে রাউশি কিছুটা ভড়কে যায় আবার অস্বস্তিও হতে থাকে।তবে তার এই অস্বস্তিকে পেছনে ফেলে দিয়ে হেড এসে জানান,
‘আয়াশ স্যার নাকি দরকারি কাজে রাজশাহী চলে গেছেন ছুটি নিয়ে।’

কথাটা শুনে রাউশি ভাবতে থাকে হঠাৎ কি হলো? তবে মনে মনে খুশিও হয়।তবে তার এই খুশি নিমিষেই পানি হয়ে যায় নুজাইশকে দেখে।নুজাইশ ক্লাসে ঢুকতেই সবাই সালাম জানায়।নুজাইশ শুধু রাউশির দিকে তাকিয়ে সালামের উত্তর দেয়।রাউশি বিব্রতবোধ করে। এই লোকের বোধবুদ্ধি কম নাকি? পড়া বোঝানোর সময়ও রাউশির দিকে তাকিয়েই বুঝিয়ে বলে নুজাইশ।নুজাইশের হাবভাব কেমন যেন বাচ্চা বাচ্চা টাইপের মনে হয় রাউশির কাছে।রাউশি ভীষণ অকোয়ার্ড ফিল করে নুজাইশের এমন আচরণে।ক্লাসের বাকিরা বারবার রাউশির দিকেই কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে। রাউশি শুধু ক্লাস কখন শেষ হবে এটাই ভেবে গেছে পুরো ক্লাস।নুজাইশ যেতেই বিশাল বড় একটা শ্বাস নেয়।মিলি রাউশির কাছে এসে বলে,
“এই রাউশি নুজাইশ স্যার কি তোমার কেউ হয়?”

রাউশি মিলিকে কষ্ট দিতে চায় না।নুজাইশ স্যার যেভাবে তার পিছু লেগেছে আর তার ব্যবহার,কথাবার্তা যে কোনদিক নির্দেশ করে এটা রাউশির নারীমন বুঝতে পেরেছে আজ।তাই মিলিকে স্বান্তনার সুরে বানিয়ে বানিয়ে বলে,
“আমার ভাইয়ের বন্ধু।ভাই বলেছে আমায় একটু দেখে রাখতে তাইতো এমন করছে।”

মিলি খুশি হয়।মিলিকে দেখে রাউশিও কিছুটা ঝামেলামুক্ত হয়।তবে সে হয়তো জানে না বানানো হলেও সত্যি কথায় বলেছে মিলিকে।

.

রাতে বাড়িতে আজ খুব তৃপ্তি ভরে খাবার খেয়েছে রাউশি।গার্লস হোস্টেলে চলে গেলে এভাবে আর খাওয়া হবে না তার।জীবন একটা বন্দী শিকলে বাধার সম্ভাবনা অত্যন্ত। খাওয়ার সময় পরিবারের বড়রা সবাই রাউশির এতদিন ওভাবে রুমে পড়ে থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করেছে রাউশি উত্তর দিতে পারেনি।কথা ঘুরানোর চেষ্টা করেছে।অবশ্য সফলও হয়েছে।রাউশি খেয়ে দেয়ে নিজের রুমে চলে যায়।ফোন হাতে নিতেই সেদিনের সেই মেসেজের কথা মনে পড়ে।মেসেজটা কে দিয়েছে রাউশি জানে না।তবে সেই নাম্বার ব্লক করে রেখেছে রাউশি।ফোন রেখে দেয়।এসাইনমেন্ট লেখার কাজে লেগে পড়ে মেয়েটা।আর মাত্র এক সপ্তাহের ভেতরেই জমা দিতে হবে তাকে।

রাত সাড়ে এগারোটা বাজে।রাউশি ফোন নিয়ে ছাদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তানিয়াকে মেসেজে বলেছে সে যাবে কিনা? তানিয়া বললো সে ব্যস্ত আছে।যাবে না তাই রাউশি একাই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।গুটি গুটি পায়ে ছাদে চলে যায়।এই বাড়িটি আয়তাকারে প্রশস্ত হওয়ায় ছাদটাও বিশাল। মাহবুব খান বাড়ির ছাদ খুব সুন্দর করে সাজিয়েছেন।বিভিন্ন লাইটিং এর ব্যবস্থাও আছে ছাদে।এছাড়াও একপাশে বসে থাকার জন্য বেতের সোফা পাতানো আছে।বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য অবশ্য সেই সোফা রাখার স্থানের ওপর ছাদও আছে।রাউশি গিয়ে সেখানেই বসে পড়ে।সারাদিনের কোলাহল ছেড়ে এই সময়টায় পুরো শহর যেন হালকা হলেও নিস্তব্ধ হয়।বাতাসে বাতাসে থাকে মাতাল করার মতো একটি সুঘ্রাণ।রাউশি এই বাতাসের ঘ্রাণগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে অনুভব করে।একেকটা যেন একেক অনুভুতি প্রদান করে তাকে।সকালের পক্ষীকূজনে ভরা স্নিগ্ধ বাতাসের এক গন্ধ আর রাতে চাঁদ ও তারাভরা আকাশের বাতাসের আলাদা ঘ্রাণে তার শরীরে দোলা দিয়ে যায়।আজও তেমনই এক অনুভুতি হচ্ছে।নদীর তীরে ঘুরতে পারলে ভালো হতো বলেও ধারণা করছে রাউশি।গুনগুনিয়ে রাউশি গান গাওয়া শুরু করে।রাউশির গানের গলা সুন্দর,

‘বৃষ্টি নেমেছে আজ আকাশ ভেঙ্গে,
হাটছি আমি মেঠোপথে।’

তখনই পেছন হতে পরিচিত ভরাট গমগমে পুরুষালী আওয়াজ শুনে গান গাওয়ার বারোটা বেজে যায় রাউশির।সেই কণ্ঠ হতে নিঃসৃত বাক্যগুলো যেন রাউশির নিষিদ্ধ হৃদয়ে অতিমাত্রায় ভুমিকম্পের সৃষ্টি করে যেটা রাউশি আজ হাড়ে হাড়ে ঠাওর করতে পারে,

“বৃষ্টিতো পড়ছে না রাউশি।তবে তুই যদি চাস আমি বর্ষণ নামিয়ে দেওয়ার মতো অসম্ভব কাজটাও করতে পারি।তবে সেটা আবার এই সেই বর্ষণ নয় ভালোবাসার বর্ষণ, সাথে মৌসুমটাও হয়ে যাক না একরাশ অনবদ্য ভালোবাসার।”

চলবে…..

রিচেইক দেওয়া হয়নি।ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here