মেইড_ফর_ইচ_আদার🌻 #কাজিন_রিলেটেড #পর্বঃ১৩

0
1

#মেইড_ফর_ইচ_আদার🌻
#কাজিন_রিলেটেড
#পর্বঃ১৩
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)

তোকে শুধু এই একটা কারনে আমি রাষ্ট্র বিজ্ঞান নিয়ে পড়াতে চাইনি। কিন্তু তোর মন খারাপ আমি সহ্য করতে পারি না। চাওয়া পাওয়ার ত্রুটি যেনো না হয় তাই তোর মুখের দিকে তাকিয়ে তোকে এই সাবজেক্টে পড়তে দিয়েছি। তুই আমায় কথা দিয়েছিলি তুই এসবের কিছুতেই জড়াবি না।আমি জানতাম তোর রাজনীতিতে ইন্ট্রেস্ট আছে, তাই তোকে বার বার আমি সাবধান করেছি। তোকে কি আমি বড় করেছি রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার জন্য?
বল তৃনা, বল।
সফিউল আহমেদের বাজখাই গলায় কেপে উঠল আহমেদ ভিলা।

তৃনা কান্নারত কন্ঠে বলতে গিয়েও আটকে যাচ্ছিল বার বার , সফিউল আহমেদের কথার কাছে।

এখন আমার বুঝতে বাকি নেই তুই কেনো হলে থাকতি,বিভিন্ন কথা বলে এদিকে সেদিকে যেতি। ছি আমার লজ্জা লাগছে এই ভেবে তুই আমার মেয়ে। যে কিনা পরিবারকে না জানিয়ে কমরেড পদে কাজ করে যাচ্ছে।

তৃনার গলায় কথা দোলা পাকিয়ে যাচ্ছে, আব্বু, আমার কথাটা শুনো।

কে তোমার বাবা, মুখ সংযত করে কথা বল।আমি তোর মুখ থেকে কোনো কথা শুনতে চাই না। প্রমান তো হাতেই আছে। তোমায় কোনো কিচ্ছু বিশ্লেষণ করতে হবে না।

সাহেলা খানম তার এই পুতুলের মতো মেয়ের চরম সত্যি বিশ্বাস করতে পারছে না। হতভম্ব হয়ে আছে সবটা চোখের সামনে দেখে।

তৃনা কান্নারত অবস্থায় সফিউল আহমেদের নিকট এসে পা জড়িয়ে আকুতি করে বলতে লাগলো, বাবা আমায় ক্ষমা করে দেও। আমি সব ছেড়ে দেব।বাবা একটা সুযোগ দেও।
সফিউল আহমেদের সারাশরীর ঘামতে শুরু করেছে মেয়ের চরম সত্যি জেনে, কপাল ঘেমে টুপ টুপ করে ঘাম জড়ছে। বুকে ব্যথা উঠেছে সফিউল আহমেদের। বুকে হাত দিয়ে চেচিয়ে উঠে বলল, তুলির মা ওকে সরতে বলল,ওর মতো মেয়ের আমার কোনো দরকার নেই।
কথা বলতে বলতেই সফিউল আহমেদ লুটিয়ে পড়লো মেঝেতে। সাহেলা খানম একদ্বন্দ্ব না দাঁড়িয়ে পাগলের ন্যায় খাবলে ধরলো নিজ স্বামীকে। হতাশায় মাথায় কাজ করছে না। বাবার এমন অবস্থা দেখে তুলি ছুটে গিয়ে ফোন করে সকলকে জানিয়ে দিলো বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
তৃনা ইবনে সিনা হাসপাতালে কল করে এম্বুলেন্সকে তলব করে দিলো। দিশে হারা অবস্থায় সানিকে আসতে বলে রেডিও কলোনির মাথায়।

তুই তোর বাবার শরীরে হাত দিবি না। আজ যদি তোর বাবার কিছু হয়ে যায় না তৃনা তোকে আমি কোনোদিন ক্ষমা করবো না।

সাহেলা খানমের কথায় তৃনা আরো ভেঙে পড়লো। আজ তার এই নিজের ভুলে বাবার এই অবস্থা।
ইতোমধ্যে এম্বুলেন্স এসেছে।সফিউল আহমেদকে উঠানো হয়েছে তাতে। তুলি সাহেলা খানমের সাথে উঠে এম্বুলেন্স এ। কিন্তু তৃনা উঠতে চাইলেও, সাহেলা খানম বাধা দেয় এম্বুলেন্সের গেট আটকে দিয়ে।

আহমেদ ভিলার বাড়িটার দিকে তাকিয়ে, চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল তৃনা।বাসায় ডুকে মেঝেতে পড়ে থাকা মোবাইলটা তুলে, দেখে নিলো শুভাকাঙ্ক্ষীর নাম্বার। স্কুটারের চাবি ঘুড়িয়ে ফোন লাগালো সানিকে। কড়া ভাবে সানিকে তৃনা নির্দেশ দিলো ইবনে সিনা যেতে।

.
কুত্তা*র বাচ্চা,বেড়িয়ে আয়। আমার বাবার যদি আজ কিছু হয়ে যায়, তোর বংশ আটকে দিবো সালা শুয়া*র। তোর টুনটুনি দিয়ে যাতে, তোর মতো শুয়া*রের জন্ম না হয় সেই ব্যবস্থা করবো আজ।
সানওয়ারদের ডেরার সামনে দাঁড়িয়ে তৃনা উক্ত কথা বাজখাই গলায় বলল।

রাত হওয়ায় সানওয়ারের সাংগ-পাংগরা বাড়িতে চলে গেছে। ডেরাতে রয়ে গেছে মাশরিফ আর সানওয়ার।
সানওয়ার আর মাশরিফ তৃনার গলা পেয়ে হাসতে লাগলো হো হো করে।
কিছুক্ষণ বাদেই বেড়িয়ে এলো সানওয়ার আর মাশরিফ।
আহা তৃনা এতো রাতে না আসলেই হতো।আমার সাথে কাজ করার এতো ইচ্ছে হলো যে, তুমি এখনই আসলে আমার দলের হয়ে নাম লেখাতে।

খা*কির ছেলে আমি নাম লেখাতে আসি নি, বোঝাপড়া করতে এসেছি, আমার বাবা হার্ট এটার্ক করেছে। আমার বাবার এই অবস্থার জন্য তুই দায়ি। তোকে তো আমি এতো দিন খুব সম্মান করছি। তুই তোর সম্মান রাখলি না,জানোয়া*রের বাচ্চা।

সানওয়ার বিকট সুরে হাসতে হাসতে এগিয়ে এল তৃনার সামনে, তৃনার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই, সানওয়ারের হাতখানা ধরে মোচর মারলো তৃনা। সানওয়ারের আর্তনাতে মাশরিফ এগিয়ে এলো তৃনাকে এটার্ক করতে। শক্ত পেশির দেহের অধিকারী তৃনা লাথি মেরে ফেলে দিলো মাশরিফ কে। সানওয়ারকে মাটিতে পিসিয়ে ধরে বলতে লাগলো, এই হাত দিয়েই তো বাবাকে কল করেছিলি না। তোর হাত আমি ভেঙে দিব। বলার সাথে সাথেই যেনো তৃনা সানওয়ারের হাতটা মোচরিয়ে ভেঙে দিলো। মাশরিফের সাথে অতর্কিত ফাইটের পর, অন্ডোকোষের লাথি মারলো তৃনা। মাশরিফ যেনো অচেতন হয়ে লুটিয়ে পড়লো মাটিতে।

তৃনার চোখ দিয়ে এখনও জল পড়ছে। স্কুটারে উঠে চাবি ঘুড়ালো তৃনা। উদ্দেশ্য ইবনে সিনা যাওয়া।
___

সফিউল আহমেদকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে আই সি ইউ তে। কাবিনের বাইরে সকলে দাঁড়িয়ে আছে। কেবিনে ডাক্তার -সিস্টাররা চিকিৎসার কার্যক্রম চালাচ্ছে।দূরে একপাশে দাঁড়িয়ে থেকে সব কিছু অবলোকন করছে তৃনা। কেবিনের বাইরে সাহেলা খানমকে সামলাচ্ছে রেহানা। তনয় আহমেদ ও আতিক খান এপাশ থেকে ওপাশ পাইচারি করছে। সানি,আবির আর তন্ময় আসা মাত্রই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ আনতে চলে গেছে, তন্নি কেদেই চলেছে সেই হাসপাতালে আসার আগে থেকেই। রোদেলা,আন্নি, তুলি মলিন হয়ে আছে। তৃনা যে এসে দাঁড়িয়ে আছে কেউ খেয়াল করলো না।

এর মাঝেই ডাক্তার বেরিয়ে এলো কেবিন থেকে।
এখানে রেহানা কে। পেসেন্টের জ্ঞান ফিরেছে, রেহানার সাথে দেখা করতে চায়।

রেহানা বেঞ্চি থেকে রোদেলাকে ইশারা করে চাচির কাছে বসতে বলল, ডাক্তারকে শুধালো, আমি রেহেনা।
ডাক্তারকে পাশ কাটিয়ে ডুকে গেলো রেহেনা।

ডাক্তার কি অবস্থা ভাইয়ের।
ডাক্তার মৃদু স্বরে বলল, সে এখন সুস্থ। বেশি উত্তেজিত হয়ে যাওয়ার কারনে হার্ট অ্যাটাক করেছে। ওষুধ দিয়েছি, স্যালাইন চলছে। ইনশাআল্লাহ কাল বিকেলে বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন। এই বলেই ডাক্তার চলে গেলেন। হটাৎ তৃনার দেখা মিলল সবার। দেয়ালের সাথে মাতা ঠেকিয়ে মুখ বুজে নিরবে কান্না করেই চলেছে। তনয় আহমেদ আর আতিক খানের এই দৃশ্য দেখে বুকের মধ্যে মোচর দিয়ে উঠল।তড়িৎ ছুটে গেলো তৃনার নিকট। সাহেলা খানম তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে তেতিয়ে উঠলেন, ভাইজান, ও যেন এখানে না আসে, ও যদি এখানে আসে আমি ওরে টুকরো টুকরো করে ধলেশ্বরীতে বাসিয়ে দিব। তৃনা যেনো আবারো ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। চাচা,ফুফার হাত চাড়িয়ে, চোখের পানি মুছে চলে গেলো নিচে।

~চলবে।

বিঃদ্র~পর্বের কাহিনী ফুটিয়ে তুলতে কিছু অপভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। তাই খারাপ কিছু মনে করবেন না। আজকের পর্ব কেমন লেগেছে অবশ্যই মন্তব্য করবেন, আপনাদের মমন্তব্য আমার লেখার সাহস বাড়ায়। নতুন লিখিকা তাই আপনাদের সাপোর্ট আমার খুবই প্রয়োজন। ভালো মন্তব্য আশা করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here