#মেইড_ফর_ইচ_আদার🌻
#কাজিন_রিলেটেড
#পর্বঃ১৪
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
রেহু তুই আমার এই পুতুল মেয়েটাকে তোর ঘরের পুতুল বউ বানাতে চেয়েছিলি। মনে হয় সেই সময় এসে গেছে। আমি চাই কালই আবিরের সাথে ওর বিয়েটা হোক। আমি চাই না রাজনীতিতে থেকে ওর জীবনটা ধ্বংস হয়ে যাক। এই মেয়ে কত মানুষকে মেরেছে তা আমার জানা নাই। আমি কখনও কল্পনাও করতে পারি নি, ও এসবে জড়াবে। আমার মেয়েটাকে তুই বাচা।
আমি আজ আছি, কাল নেই। আল্লাহ চাইলে বেশি সময় লাগবে না, আমার মৃত্যু হতে। আমার পুতুলটাকে তোর কাছে দিয়ে যেতে চাই।
রেহানা নিশ্চুপ চোখে তাকিয়ে রয়েছে তার ভাইজানের অবয়বে। তৃনার এমন সত্যি কেউ শরীরে মেখে নিতে পারছে না।
ভাইজান তুমি ব্যস্ত হোও না৷ তুমি আগে সুস্থ হও, তারপর যা হবে দেখা যাবে।
সফিউল আহমেদ রেহানার কথা মানলেন না। কাল বিকেলের মধ্যেই যেন বিয়েটা হয় সেই ব্যবস্থা করতে বলে।
___
সকলে সফিউল আহমেদের কেবিনে দাঁড়িয়ে আছে। তৃনার সাহস নেই কেবিনে ঢোকার। কেবিনের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে অবলোকন করছে তার বাবাকে।
সফিউল আহমেদ নরম গলায় সবার উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন,আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশাকরি এতে কারো দ্বিমত থাকবে না। আর এই সিদ্ধান্তর নড়চড় ও হবে না।
কাল আমাকে বাসায় নেওয়ার পর আছরের নামায বাদ তৃনা আর আবিরের বিয়ে।তনয় ভাই আপনি একটু সব দিক টা ম্যানেজ করবেন।
সফিউল আহমেদের কথায় কেউ এক বাক্যও ব্যয় করলেন না।কথার সম্মতি জানিয়ে দিলো সবাই। তৃনার মনে মন খারাপের ঘূর্ণিঝড় শুরু হলো। ত্যাগ করল স্থান। ইবনে সিনার ছাদে এক কোনে বসে অঝোর ধারায় বইতে শুরু হলো তার অভিমান ভরা কান্না।
বাবা তুমি আমায় এমন শাস্তি কেনো দিলে, তুমি আমায় দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিলে কেনো বাবা। আমি যেন তোমার কাছে না যেতে পারি,? তোমার সাথে দেখা না করতে পারি। বাবা আমি তো এমনটা কখনই চাই নি বাবা। বাবা আমি কিভাবে তোমাদের ছাড়া থাকবো বাবা।
____
তনয় আহমেদ, আবির আর সানি কেবিনের বেঞ্চিতে বসে আছে, মাথা হেলিয়ে দিয়ে। সাহেলা খানম কে বুঝিয়ে সবাই বাসায় নিয়ে গেছে। আতিক খান ও তনয় রিসিভশনের ফর্মালিটির কাজ করছে।
তৃনা ফোলা ফোলা চোখে সফিউল আহমেদের কেবিনের কাছে এসে হাজির হয়। চুপিচুপি কক্ষে প্রবেশ করে। তন্দ্রাচ্ছন্ন সফিউল আহমেদের বেডের নিকটে গিয়ে বসে তৃনা।
সফিউল আহমেদের হাতখানা নিজের গালে স্পর্শ করে শব্দ না করে নিরবে হাউমাউ করে কাদতে শুরু করে।
বাবা আমি সব ছেড়ে দেবো বাবা, আমার উপর এমন অভিমান করে দূরে সরিয়ে দিও না বাবা। বাবা ও বাবা তুমি বড্ড অভিমান করছো বাবা। আমায় ক্ষমা করে দেও বাবা।
তৃনার গাল বেয়ে অশ্রু গরিয়ে পড়ে তার বাবার হাতে। ভেজা স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকায় সফিউল আহমেদ।
পদত্যাগের খবরটা আমি যেদিন পাবো, সেদিন আমি ক্ষমা করবো তোমায়। তবে তোমার বিয়ে যে কাল হবে, এই সিদ্ধান্তর কোনো নড়চড় হবে না। এখন একটা বাক্য ব্যয় না করে চলে যাও। বাসায় গিয়ে তোমার সাথে আমার কথা হবে। সফিউল আহমেদের কন্ঠে গম্ভিরতার চাপ।
সফিউল আহমেদের কথায় তৃনা স্তব্ধ বিমূর্ত হয়ে চেয়ে রইল।
চোখের জল মুছে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো কেবিন হতে। ইতোমধ্যে দেখা মিলল, আবিরের। সে তৃনার আসার টের পেয়ে দরজার বাহিরে থেকে সবটা দেখেছে এতোক্ষন। আবিরকে দেখা মাত্র একদ্বন্দ্ব ও দাড়ালো না তৃনা। তৃনার পিছু করলো আবির। ছাদের বেঞ্চিতে বসে বসে হাউমাউ করে কাদছে তৃনা। নিজেকে আজ বড্ড দোষী মনে হচ্ছে তার। অসহ্য কর লাগছে সবটা। তৃনা উত্তেজিত হয়ে দৌড়ে ঝাপিয়ে পড়তে চাইলো ছাদের কিনারা হতে। ওমনি পুরুষালি দেহে ঠাই পেলো তৃনা। তৃনার আআষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আবির বলতে লাগলো, কি করছিলে বল।সুইসাইড করলেই যদি সব সমাধান হতো। তাহলে পৃথিবীর সবাই না বেচে থেকে এটাই করত।তৃনার মস্তিষ্কে হাত রেখে ভুলিয়ে দিতে দিতে আবির বলতে লাগলো সব ঠিক হয়ে যাবে পুতুল, সবটা ঠিক হয়ে যাবে।
তৃনা তার বিজ্ঞানী মশাইয়ের শার্ট খাবলে ধরে কাদতে লাগলো বিরাম হীন ভাবে। বেঞ্চিতে বসলো আবির। কিছুক্ষনের মাঝেই তৃনা ঘুমিয়ে পড়লো তার বিজ্ঞানী মশাইয়ের বুকে মাথা রেখে।
___
আহমেদ ভিলায় মানুষের আনাগোনা চলছে। আশেপাশের প্রতিবেশীরা সফিউল আহমেদের অসুস্থতার কথা শুনে দেখতে এসেছে। পরিবারের সকলে উপস্থিত।
তৃনার কক্ষ ভেতর থেকে বন্ধ। মেয়েটা কাল রাত থেকে এখনও কিছু মুখে দেয় নি।
রেহেনা তৃনার৷ কক্ষের কড়া নাড়ছে। বিষন্ন তৃনা এসে খুলে দিলো কক্ষের দরজা। রেহানা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তৃনার পানে। কি হাল হয়েছে এই পুতুল মেয়েটার। রেহানার বুকের মধ্যে মোচর দিয়ে উঠল, তৃনার চেহারা দেখে। তড়িৎ জড়িয়ে ধরে রেহানা বলে উঠল, আয় মা কিছু খেয়ে নে। এভাবে না খেয়ে থাকলে কি চলবে।
তৃনা কিছু বলল না। সম্মতি জানিয়ে টেবিলে গিয়ে বসল তৃনা। কয়েক লোকমা ভাত মুখে দিতে না দিতেই কাজি সাহেব এসে হাজির। কনের সই এর জন্য তলব করা হয়েছে। রেহানা কাজিকে অপেক্ষা করার কথা বলার আগেই তৃনা বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে, মাথায় কাপড় দিয়ে হাজির হলো কাজির সামনে। সই সহ কবুল বলে তৃনা আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। রেহানা তৃনার এমন আচরণ দেখে করুন মুখভঙ্গিমায় তাকিয়ে রইলো।
~চলবে।
(গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। সবাই রেসপন্স করবেন। আজকের পর্ব কেমন লেগেছে অবশ্যই জানাবেন। আপনাদের মন্তব্য আমায় লেখার সাহস বাড়ায়)