মেইড_ফর_ইচ_আদার🌻 #কাজিন_রিলেটেড #পর্বঃ২

0
1

#মেইড_ফর_ইচ_আদার🌻
#কাজিন_রিলেটেড
#পর্বঃ২
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)

বেশি রাত অব্দি আড্ডা দেওয়ার কারনে ছোটরা কেউ এখনও উঠে নি। বাড়ির বড়রা সকালের নাস্তা বানাতে ব্যস্ত।সফিউল ও তনয় আহমেদ বাড়ির সামনের উঠনে বসে চা খাচ্ছে আর পেপার পড়ছে। বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়েছে, শুক্রবারে। শুক্রবার আসতে ৪দিন বাকি। বিয়ের কেনাকাটা করেই সবাই চলে এসেছে আহমেদ ভিলায়।

এক এক করে সবাইকে ঘুম থেকে উঠাচ্ছে মেহেরিমা ও সাহেলা খানম। সবাই উঠে গেলেও তৃনা এখনও উঠে নি। সাহেলা খানমের ভাষণ মতে তৃনার ঘুম ভেঙেছে আগেই আলসেমি করে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে তৃনা। তৃনার রুমে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে মেহেরিমা, অন্য পাশে সাহেলা খানম। সাহেলা খানম বলে উঠল এই মেয়ে উঠ ঘুম থেকে, কয়টা বেজেছে দেখেছিস। সকাল থেকে দুপুর হতে চলল, এখন তো উঠে পড়। তৃনা নিভু নিভু চোখ খুলে আবার বন্ধ করে বলে উঠল ❝উহু❞ একটু ঘুমাতে দেও না। কাল থেকে তো আর ঘুমাবোই না।
মেহেরিমা এবার সাহেলা খানমকে বলল,ভাবি মেয়েটা তো ঠিকই বলেছে, আজকে ওকে ছেড়ে দেও। কাল থেকে তো মেহেদী শুরু আজকে ছেড়ে দেও। সাহেলা খানম বলে উঠল তোমার জন্য আর তোমার ভাইয়ের জন্য মেয়েটা এতো লাই পেয়ে মাথায় উঠেছে, এই মেয়ে যে সংসারে যাবে তার কি হাল হবে সেই ভেবেই আমি কুল পাই না। এই মেয়ে আদৌ কি সংসার করতে পারবে, এই বলেই তৃনার রুম থেকে বেরিয়ে যায় সাহেলা খানম, তার পিছু পিছু চলে যায় মেহেরিমা।

আতিক খান ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করছে, রেহানা তার পাশের সিটে বসে গল্প করছে। প্রয়োজনীয় মালামাল রেহানাদের গাড়িতে রাখায় আবির আলাদা করে নিজের গাড়িতেই আসছে, তা ছাড়া আবির একা আসছে না তার দুই বন্ধু রাইদ আর রিয়াদকেও সাথে নিয়ে আসছে। ভার্সিটিতে এক হোস্টেলর রুমে থাকা খাওয়া এক ডিপার্টমেন্ট পড়ার সময় রিয়াদ আর রাইদের সাথে পরিচয়, সেখান থেকেই গভির বন্ধুত্ব তৈরি হয়। প্রফেসর নাফিয়ুরের মতে এরা তিনজন আস্ত এক একটা রত্ন। তাই ওদেরকে সাথে করে নিয়ে আসছে আবির। আবিরের আবার ওদের ছাড়া চলেই না।

ঘুরুম ঘুরুম মেঘের শব্দ হচ্ছে। যেকোনো সময় বৃষ্টি নামবে। দুপুর নাগাত তৃনার আলসেমি ভরা ঘুম ভেঙে যায় মেঘের ঘুরুম ঘুরুম আওয়াজে। তৃনার যে বৃষ্টি বড্ড পছন্দের, তাও আবার গ্রামের বাড়ি বলে কথা ছাদে গিয়ে বড়সড় আমেজ নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজবে সে। তাড়াতাড়ি করে উঠে ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তাটা দুপুরেই খেয়ে নিলো তৃনা।
নুপুরের ঝুনঝুন আওয়াজ করে ছাদে উঠছে তৃনা। আকাশ থেকে বৃষ্টি ফোটা পড়ছে। ছুয়ে দিচ্ছে তৃনার পরিহিত কালো কালারের সুতির সারারা।ভিজে যাচ্ছে সারা শরীর।মনের সুখে গান আওরিয়ে চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে বৃষ্টির শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে ভিজে যাচ্ছে, মুক্ত পাখির মতো ছাদের এক কর্ণার থেকে অন্য কর্ণারে লাফালাফি করছে, কিছুক্ষন দোলনায় দুলছে। তৃনা আজ বৃষ্টি বিলাস করছে মনের সুখে।

আহমেদ ভিলার কাছাকাছি আবিরদের গাড়ি আসতেই হঠাৎ বৃষ্টি নামার কারনে মিজান কাকা, পরিবারে সবাই মিলে সদর গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে হাতে ছাতা নিয়ে। গাড়ি থামা মাত্রই মিজান কাকা,তনয় , সফিউল,তন্ময় গিয়ে সবাইকে ছাতা মুরি দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করালো।

সবাইর সাথে কুশল বিনিময় শেষ হলে আবিরের জন্য বরাদ্দ রুমে গিয়ে ডুকলো আবির।রাইদ ও রিয়াদ কে আবিরের পাশের রুমে দেওয়া হলো, আতিক আর রেহানাও চলে গেলো তাদের রুমে।

আবিরের রুমে কাজিন মহলের সবাই উপস্থিত, তৃনা বাদে। সবাইর সাথে কুশল বিনিময় শেষে, আবির বলে উঠল আচ্ছা তৃনাকে তো দেখলাম না, ও কোথায়।
তুলি আর আন্নি বলে উঠল, আর বলবেন না আবির ভাই ওই ফাজিলটা মনে হয় ছাদে, বৃষ্টিতে ভিজছে। একটা অসামাজিক। বাসায় মেহমান এসেছে কোনো হেলদোল নেই। ও আসলে আমরা পাঠিয়ে দিব কেমন। এবার আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।

সবাই আবিরের রুম ত্যাগ করলে,আবির বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো, কপালে হাত রেখে আঙুল দিয়ে স্লাইড করে একটা শয়তানি হাসি দিল। আর হাটা শুরু করল ছাদের দিকে।

আকাশের পানে চেয়ে আছে তৃনা, ছাদ বাগানে অসংখ্য ফুল ফুটেছে, মিজান কাকার যত্নের ফল। চট করে কাঠগোলাপ গাছ থেকে কানে লালচে কাঠগোলাপ গেথে নিল তৃনা। বৃষ্টি বিলাস করছে তৃনা, জমে থাকা পানিতে লাফালাফি করার কারনে ঝুম ঝুম আওয়াজ হচ্ছে নুপুরের সাথে পানির আওয়াজ।

ছাদের গেট খুলে হতচকিত দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছে আবির। পেছন থেকে তৃনার চুল দেখে একদফা ক্রাশ খেয়ে গেলো আবির। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে পেছন ফিরে তাকায় তৃনা। কাক ভেজা শরীর নিয়ে তৃনা থতমত খেয়ে গেলো। ভেজা অবয়বে তৃনাকে ভয়ংকর সুন্দর লাগছে, লালচে কাঠগোলাপ এর জন্য তার সৌন্দয্য হলো দ্বিগুন।
আবির এবার আরও একদফা ক্রাশ খেয়ে গেলো। চোখের পলক ও যেনো আজ মিছিল করছে পলক না পড়ার জন্য।

তৃনা কোনো কিছু না ভেবেই আবির কে পাশ কাটিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। তৃনাও বুঝতে পারে নি এমন ভাবে কেউ ছাদে আসবে। তবে ছেলেটা কে সেটাই জানা হলো না তৃনার। এর মধ্যেই তৃনার মনে পড়ে গেলো, আজ তো আবির ভাইদের আসার কথা, তাহলে ছাদে যে ছিল, সে কি আবির ভাই। ঠোঁট কামড়ে মনে মনে বলতে লাগলো, আবির ভাইয়ের সামনে যাওয়াই যাবে না, কি লজ্জা কি লজ্জা। ছুটে ওয়াশরুমে ডুকে পড়লো তৃনা।

~চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here