#মেইড_ফর_ইচ_আদার🌻
#কাজিন_রিলেটেড
#পর্বঃ১২
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
৩০বিঘা জুড়ে এই নদীর পাড় নিয়ে গড়ে উঠেছে ৩০ গোডাউন। অন্যান্য সৌন্দর্যে গেড়া এই জায়গা। নৌকায় বসে উপভোগ করে যাচ্ছে সবাই।। নৌকা ভ্রমণ শেষ হলে, বাসার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেলো সবাই।সন্ধ্যে নামার আগেই বাসায় ফেরে সবাই।
____
আপনাকে কিছু বলার ছিল,সানি ভাই।
রেলিং এ দাঁড়িয়ে থাকা সানির নিকট এসে তুলি বলল, কথা খানা।
সানি বাক ফিরে চাইলো। হালকা ভ্রু কুচকিয়ে ইশারায় বলতে বলল, কি বলবে বলো।
আপনাকে আমার ভালো লাগে সানি ভাই। আমি আপনাকে ভালোবাসি।
তুলির কথা শুনে চোখ বড় বড় করে চাইলো সানি।
কাট কাট গলায় তুলিকে শুধালো, আজ প্রথমবার বলছ।তাই মাফ কইরা দিলাম। কিন্তু দ্বিতীয়বার যেদিন বলবা,সেদিন তোমার কইলজাডারে টাইনা বাইর কইরা ওজন করমু।
তুলি সানির কথা শুনে ফেল ফেল করে তাকিয়ে রইল।
আমি সত্যিই পছন্দ করি আপনাকে।
সানি এবার রেগে গিয়ে বলল, এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম না। সবে মাত্র একাদশে পড়ছ,এখনই প্রেম ভালোবাসায় জোড়াতে চাচ্ছো। কিইবা বয়স তোমার। বয়ঃসন্ধির সময়টাতেই এমনটা হয় তুলি, এই সব বাদ দেও। যাও এখান থেকে এখন, তৃনা দেখলে ব্যাপারটা ভাল হবে না।
তুলির রাগে চোখ লাল হয়ে গেলো, চেচিয়ে বলে উঠল। কি করবে তৃনা, হ্যা। ওকে ভয় পায় কে?তুলি সানির বুকে ধাক্কা দিয়ে কথা গুলো বলতে লাগলো।
সানি এবার নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না৷।বলে ফেলল এক নাগাড়ে,
তোমার যে বইন কঠিন পদার্থ । বিয়ের পর পান থেকে চুন খসলেই আমার নামে মামলা দিবে। বছরের ছয় মাস আমার কাটবে জেলখানায়। বাকি ছয়মাস কাটবে তৃনার জুতোর বাড়ি খেয়ে। কাজের কাজ কিছু হবেনা।
আমি চাই না, তুমি আমার সাথে জড়াও।
তুলি বিকট সুরে হাসতে লাগলো, তুড়ি বাজিয়ে সানির দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। মিস্টার সানি, প্রেম আপনি করবেন, সাথে সাথে বিয়েও করবেন। আর রইলো জেল খাটার কথা। সংসারের জেল খাটবেন আপনি আজীবন,তাও আমার সাথে।
তুলির কথা শুনে, সানির চোখ কপালে উঠে গেলো। সানি কিছু বলার আগেই চলে গেলো তুলি।
সানি অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল, তুলির যাওয়ার পানে।
___
একে একে চলে গেলো, মেহেদী অনুষ্ঠান, গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান।আসন্ন হলো বিয়ের দিন। আজ মেহেরের বিয়ে।
কিছুক্ষন বাদেই বিয়েটা সম্পন্ন হলো মেহেরের।মেহেরের বিদায় পর্ব চলছে।ইতোমধ্যে মেহেরকে তার বাবা কুটুম বাড়ির মানুষদের হাতে তুলে দিয়েছেন। আঁধার নামার সাথে সাথে মেহেরের পরিবারে মন খারাপের আঁধার নেমে আসলো বাড়ি জুড়ে। তৃনার সাথে সেহতাজ সামলে নিলেন মেহেরের মাকে।
.
.
সকালে মেহেরের বাবাকে বিদায় দিয়ে তৃনারা বেরিয়ে পড়লো ঢাকার উদ্দেশ্যে। বিকাল নাগাত ফিরলো ঢাকায়। একে একে সবাইকে ড্রপ করে, আবির চলে গেলো উত্তরায়।
____
ভার্সিটির শহিদ মিনারে বসে আছে তৃনা, ফোনে মেহেরের নাম্বার ডায়েল করে, অপেক্ষায় রইলো কলটা রিসিভ হওয়া অব্দি।
অপাশ থেকে মেহেরের কন্ঠ ভেসে আসলো, তিনু বল।তৃনা হাসি হাসি কন্ঠে বলে উঠল, হ শ্বশুর বাড়ি গিয়ে উঠে থাকলে হবে। এখন তো স্বামীরে বল ভার্সিটিতেও আসতে হবে। মেহের মৃদু হেসে বলল, হু একেবারে জামাইরে নিয়ে একেবারে পার্মানেন্ট হবো সাভারে। এভাবেই কথা বলতে বলতে কেটে গেলো কিছু সময়।
.
.
তৃনার কথা বলা শেষ হতে না হতেই মাশরিফের আগমণ।
তৃনা সানওয়ার ভাই তোমার সাথে একটু দেখা করতে চায়। মাশরিফের কথায় তৃনা তাকালো।
হাতে থাকা ক্যানটা পাশে রেখে তৃনা বলল, ঠিক আছে আমার সময় হলে দেখা করে নিবো। এখন আমায় বিরক্ত না করে চলে যান।
.
আমি তো মনে করেছিলাম তুমি আসবে না। তা দেখছি এসেই পড়েছ। যাক তোমায় আমি এই কথাটাই বলতে ডেকেছি যে, শেষ বারের মতো বলছি, আমার দলের হয়ে কাজ করো। কথাটা বলেই সানওয়ার সিগারেটের শেষ টান দিলো।
তৃনা বাহুতে হাত গুজে জবাব দিলো,
আর কিছু?
সানওয়ার হাসতে লাগলো বিকট সুরে, চাবিকাঠি যদি থাকে পথ পরিবর্তন করতে সময় লাগবে না তৃনা। তুই এমনেতেই আমার হয়ে কাজ করবি। না করতে চাইলেও বাধ্য হবি।
সানওয়ার ভাই আমি আপনাকে যথেষ্ট সম্মান করি। তাই বলছি আমায় আমার মতো কাজ করতে দিন। এভাবে হুমকি দিয়ে লাভ নেই। আমি আমার জায়গা থেকে এক চুল নড়বো না।
তৃনা এক দ্বন্দ্ব দাড়ালো না। অগ্রসর হলো বাড়ি মুখি। তবে কি হতে চলেছে তৃনার সাথে। তাহলে কি মোড় ঘুড়বে তৃনার জীবনে।
___
ওই মাশরিফ ভিডিও টা কিলিক কর তো, শেষ বারের মতো কমরেড তৃনার রাজনৈতিক আলোচনাটা দেখি।দেখে একটু মনটাকে জুড়াই।
ভিডিও টা দেখতে দেখতে সানওয়ার বলতে লাগলো, জানিস তো মাশরিফ, পিপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তোরে। এই লাইনের পিপিলিকাডা কে কো তো।
মাশরিফ শয়তানি হাসি দিয়ে বলল, কেন ভাই এডা তো এমনেই বোঝা যায়, তৃনা।
মোবাইলটাকে ছুড়ে মারলো মাশরিফের দিকে। মাশরিফ তার সুকৌশল হাতের চালানে ধরে ফেলল মোবাইলটা।
সানওয়ার সিগারেট মুখে নিয়ে লাইটার দিয়ে জ্বালিয়ে নিলো। সিগারেটে টান দিয়ে মুখ হতে ধোয়া নির্গত করলো।
যা মাশরিফ ভিডিও টা চালান করে দে। আজকের মধ্যেই যেনো কাজ টা হইয়া যায়।
জ্বি বস, পাক্কা কাজ হয়ে যাবে।
_____
রাত ৮বেজে ২০ মিনিট। আহমেদ ভিলার সদস্যরা গল্প গুজব করছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। হঠাৎ সফিউল আহমেদের ফোনে কল বেজে ওঠে। আননোউন নাম্বার দেখে কলটা রিসিভ করলেন না সফিউল আহমেদ।পর পর ৩বার কল আসতেই সফিউল আহমেদ বিরক্ত হয়ে বারান্দায় গিয়ে কলটা রিসিভ করলেন।
~হ্যালো। কে?
~আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী।
সফিউল আহমেদ ইতস্তত বোধ করলেন
~কি চাই।
~আপনাকে একটা খবর দিতে ফোন করা। আপনার দ্বিতীয় কন্যা যে রাজনৈতিক কমরেড আপনি তা জানেন?
এই কথা খানা শোনা মাত্রই সফিউল আহমেদের কপাল ঘামতে শুরু করেছে, পুতুলের মতো নরম মেয়ে, সে করবে রাজনীতি অসম্ভব। কোনোদিনও হতে পারে না।
~সফিউল আহমেদ জবাব দিলেন, আপনার কাছে কি প্রমান আছে। আমায় আপনার কথার সত্যতা দেখান।
~সফিউল আহমেদ, আমি প্রমান ছাড়া কোনো কথা বলি না।
~আপনার ফোনে একটা ভিডিও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, সময় করে দেখে নিবেন।
কথা খানা বলেই কলটা কেটে দিলো, অপর পাশের লোকটি।
অতঃপর
~চলবে।