#মেইড_ফর_ইচ_আদার🌻
#কাজিন_রিলেটেড
#পর্বঃ১৫
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
কিছুক্ষন আগে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। সফিউল আহমেদের কাছে একপাশে রেহানা, অন্য পাশে আতিক বসে আছে।
আতিক সফিউল আহমেদের হাত খানা ধরে বলল,ভাইজান এখন আপনার শরীরটা কেমন লাগছে।
সফিউল আহমেদ ক্লান্ত গলায় বললেন,
আতিক, মেয়েটাকে কয়েকদিনের জন্য তুমি একটু তোমাদের বাসায় নিয়ে যাও। আমি যতদিন না সুস্থ হচ্ছি ও তোমাদের ওখানে থাকবে। সাহেলা এখন রেগে আছে, তৃনার উপর। এই মেয়েকে আমি সামলে রাখতাম। ওকে যতক্ষণ তুমি খাওয়ার কথা বলবে না, ও ততোক্ষন খাবার ছুয়েও দেখবে না ।মেয়েটা আমার বড্ড অভিমানী। দেখা গেলো বাসায় থাকল, ওর মা রেগে থাকলে,পুতুলের দিকে তাকানোও যাবে না।
রেহানা মৃদু হাসল।তা না হয় নিলাম। মেয়েটার সাথে এখনও রেগে থাকবে। মেয়েটাকে ক্ষমা করে দেও।
সফিউল আহমেদ দীর্ঘ শ্বাস ফেলল, সময় হলে সব করবো। ওকে নিয়ে যা।
____
সন্ধ্যের আযান পড়েছে। সাই সাই গতিতে এগিয়ে চলছে আতিকের গাড়ি। তার পেছনের গাড়িতে আবির ড্রাইভ করে আসছে। আবিরের পাশের সিটে বসে আছে তৃনা। বিষন্নতার চাপ বহমান তার চেহারায়। আবির আড় চোখে চাইলো তৃনার পানে। আবির যতদূর জানে তৃনার বেহালার সুর খুব পছন্দ। তাই হালকা রোমাঞ্চকর মিশ্রিত একটা সুর আবির গাড়িতে প্লে করলো।সুরের আওয়াজে তৃনা ফিরে চাইলো আবিরের পানে। মনে মনে ভাবতে৷ লাগলো, এই মানুষটা কত শান্ত, এইতো কিছুদিন আগেও তারা প্রেম করছিল,আজ তাকে স্বামী হিসেবে লিখে নিয়েছে। যেটা দেড়িতে হওয়ার ছিলো, সেই টা যেন মুহূর্তের মধ্যে ঘটে গেলো। তৃনা আবিরের পানে চেয়ে জোড়পূর্বক ঠোঁটে হাসি টানলো।
___
সানওয়ার ও মাশরিফ গণস্বাস্থ্যে ভর্তি হয়েছে। হাতটাকে বেন্ডিস করা হয়েছে। মাশরিফ এর অবস্থা মোটামুটি ভালো, তার কাল রাতের কথা মনে পড়তেই শরীর ঝনঝন করে ওঠে, ভাগ্যিস , পুরষত্ব একটুর জন্য বিলীন হয় নি। এমন মেয়ের সাথে পাঙগা নিতেও এখন মাশরিফের বুক কাপছে।
ভাই খালি একবার কোন, যেমনেই হোক ওই তৃনারে খাল্লাশ করে দিমু।
সানওয়ার পৌশাচিক হাসে। বলে যে, একটু ভালো হতে দে। যা করার আমিই করবো।
এখন তোরা যা। আর শোন সিগারেট নিয়ে আসবি ফের আসলে।
সানওয়ার বিড়বিড় করে বলতে থাকে, এর প্রতিশোধ আমি নিয়েই নিবো। তৃনা তুই নিঃস্ব হয়ে যাবি।
___
খান মঞ্জিল আসা মাত্রই, যাবেদ এগিয়ে আসলো । মালামাল বয়ে নিয়ে ঢুকলো বাড়ির ভেতরে। ডুপ্লেক্স বাড়িটার সামনের আঙিনার একপাশে ফুলের বাগান। তার পাশে বেতের বসার সোফা। অন্যপাশে একটা ছোট সুইমিং পুল। তৃনা আর আবির সদর গেটে দাঁড়িয়ে আছে। রেহানা খান হাতে বরনডালা নিয়ে বরন করছে। বিয়ে নিয়ে তৃনার কোনো চঞ্চলতার চাপ দেখা যাচ্ছে না। নিয়ম মেনেই প্রবেশ করল ।রেহানা সিড়ি ভেঙে আবিরের সাথে নিয়ে গেলো তৃনাকে আবিরের রুমে। খাটে বসিয়ে রেহানা বলল, ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়, খাবার দিচ্ছি টেবিলে। তৃনা রেহানার কথায় মাথা দুলালো। আবির ইতোমধ্যে ওয়াশরুমে চলে গেছে। এই প্রথম আবিরের রুমে প্রবেশ করেছে তৃনা,তাও বউ হিসেবে। তৃনা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়, কক্ষের সব কিছু খুতিয়ে খুতিয়ে দেখতে থাকে।
কক্ষের সাথে আরেকটা আলাদা রুম রয়েছে, সেখানে রয়েছে, বিজ্ঞান বিষয়ক নানা যন্ত্র পাতি। রিসার্চের ফাইল। বিভিন্ন আসবাবপত্র।
কক্ষে সকল কিছু অফ-হোয়াইট কালারে মোড়া। ব্যালকনিতে রয়েছে গোলাপ আর এলোভেরার গাছ, তার পাশে একটা দুজন বসার মতো দোলনা।
হটাৎ লুকাইতো গোপন মোবাইলটা বের করে তৃনা কল করল, তার একান্তই কাজের সঙ্গিকে।
ওপাশ থেকে স্বর ভেসে আসে পুরুষালী কন্ঠে।মেডাম আপনি যে খবরটা জোগাড় করতে বলেছেন, আমি সেই কাজেই নিয়োজিত আছি।
তৃনার গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন,ওরা এখন কোথায় দিদার?
~গনস্বাস্থ্য হাসপাতালে আছে। মেডাম, সানওয়ার বোধহয় সুস্থ হলে আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারে। ওর কথায় হাবভাবে তাই বোঝা যাচ্ছে।
~তৃনা ভয়ংকর হাসি হাসলো। তৃনার এমন হাসি শুনে দিদার সংকিত হলো।
~মেডাম, হাসছেন কেনো?
আপনি কি কিছু ভেবে রেখেছেন?
~দিদার তুমি ভালো করেই জানো, আমি কিছু মুখে বলি না, সময় হলে নিশ্চয়ই দেখতে পাবে।
দিদার বিদায় জানালো। তৃনা তার গোপন ফোনটাকে লুকিয়ে রাখলো।
____
ওয়াশরুমের সামনে তৃনা
দাঁড়িয়ে আছে। মূল উদ্দেশ্য তার বিজ্ঞানী মশাইকে লজ্জার ফেলা। ইতোমধ্যে ওয়াশরুম এর দরজা খুলে বের হতেই থতমত খেয়ে দাঁড়ায় আবির।
তৃনা মিন মিন করে মুচকি হাসছে তার বিজ্ঞানী মশাইয়ের ভেজা অবয়ব দেখে।
তৃনা গলা খাকারি দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করলো তার বিজ্ঞানী মশাইয়ের।
সাথে সাথে তৃনা চোখ মারলো আবিরকে। তৃনার এমন আচরণে হতচকিত হয় আবির।
আবির তৃনাকে বলল, হচ্ছেটা কি?
তৃনা আরোও আবিরের কাছে এগিয়ে এলো, আবিরের গালে আঙুল স্লাইড করে বলতে লাগলো, উফ, কন্ট্রোল তৃনা, কন্ট্রোল।
তৃনা দুষ্টমির ছলে বলল,বুঝলেন বিজ্ঞানী মশাই আমি আর দেরি করতে চাইছি না।
আপনার লজ্জা থাকলে এখনি বিসর্জন দিন বুঝলেন। এমন না হয়, এই লজ্জা না কাটাতে পারলে, আমি বাচ্চা কাচ্চার মুখও দেখতে পারবো না।
এই বলেই তৃনা তার বিজ্ঞানী মশাইকে চুমু খেয়ে নিলো। আবির হতভম্ব হয়ে চাইলো তৃনার পানে। তৃনার অবয়বে এখনও দুষ্টুমিরা খেলা করছে। তৃনা আবারো বলতে লাগলো,
এইযে দেখুন, এখনও আপনি লজ্জা পেয়ে বসে আছেন, এইযে ৪ঘন্টা হতে বসলো,আমি আপনার বউ হয়েছি। এখনও অবধি একটা চুমুও খেলেন না। সব যদি আমায় করতে হয় আপনি করবেন কখন।
আবির হতভম্ব। স্তব্ধ হয়ে চেয়ে আছে তার পুতুলের দিকে। লাজ শরমের মাথা খেয়েছে নাকি তার পুতুল।
তৃনার কথায় হুশ ফেরে আবিরের। তা বিজ্ঞানী মশাই যদি একটু সরতেন, তাহলে আমি ফ্রেশ হতে যেতে পারি, তবে আপনি যদি আমার সাথে আবারো ওয়াশরুম ভ্রমন করতে চান, আই ডোন্ট মাইট।
তৃনার এহেম কথায়, আবির বিষম খায়। ওয়াশরুমের দরজা থেকে রুমে চলে আসে, ভ্রু কুচকিয়ে আয়নায় তাকিয়ে, বিরবির করে বলতে থাকে,
মেয়েরা হবে সর্বদা লজ্জাপতি গাছের ন্যায়, তার পুতুল লজ্জাপতি গাছ না হয়ে, কবে থেকে এমন ঠোঁটকাটা হলো।
ছিঃ ছিঃ।
~চলবে।
(আজ সুন্দর সুন্দর কমেন্ট চাই।)