#মেইড_ফর_ইচ_আদার🌻
#কাজিন_রিলেটেড
#পর্বঃ১৯
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
রেডিও কলোনির সিপি রেস্টুরেন্টের টেবিলে বসে আছে,তৃনার বন্ধুমহল।ওয়েটার বয় এসে অর্ডার নিয়ে স্থান ত্যাগ করলো অতি দ্রুত।
সবাই টেবিলে বসা থাকলেও তৃনা দাঁড়িয়ে।
তৃনা টেবিলে একটা চাপাটি রাখল, দেখেই মনে হচ্ছে মাত্রই কিনে আনা হয়েছে। তৃনার এভাবে টেবিলে চাপাটি রাখার কারন কেউ বুঝতে পারছে না৷ সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে তৃনার পানে।
তৃনা সবাইকে উদ্দেশ্যে বলে উঠল, চাপাটি টা কেমন হয়েছে বল তোরা। আন্নি জবাব দিলো, খারাপ না, সেহতাজ বলল, কি করবি এইটা দিয়ে, পর পর মেহের শুধালো ফল কাটবি বুঝি।
কিন্তু সানি কিছু বলার আগেই যেনো, সানি ঘামতে লাগলো তৃনার এহেম কান্ডে। তৃনা যে সানির গলার চাপাটিটা ধরে আছে। সবাই ভয় পেয়ে গেলো তৃনার কান্ডে।
আবির তোকে ফোন দিয়েছিল নাকি, সত্যি কথা বলা চাই, নাহলে তো জানিস ২সেকেন্ডের ব্যপার। সানি ঢোক গিলল, না দেয় নি, সত্যি বলছি বুন্ডি। এবার তো ছাড়।
ভাই আমি এতো তাড়াতাড়ি মরতে চাই না, আমার এখনও বিয়ে হয় নাই। কত আশা করে রাখছি বউরে নিয়া বুড়া হমু,রুম ভর্তি ছানাপানা বানামু। তুই আমার আশায় পানি ঢালিস না।
তৃনা হাত থেকে চা-পাটি টা রেখে চেয়ার টেনে বসল। সেহতাজ আর মেহের তৃনার উদ্দেশ্যে বলল, আমাদের কাছে কল দিয়েছিল। আমরা বলেছি হলে আসিস নি।
কি হয়েছে তৃনা, ভাইয়ের সাথে কি রাগারাগি হয়েছে।
তৃনা চোখ থেকে ২ফোটা অশ্রু বেয়ে নামলো।
আমায় চড় মেরেছে বিজ্ঞানমশাই। সে আমার কথা শুনতেই চাইলো না। আমি যে পদত্যাগের জন্য মিটিং ডেকেছি, আমায় বলতেই দিলো না। আমি তার সাথে অভিমান করেছি। খুব অভিমান করেছি, আমি বন্যচ্ছটায় উঠেছি, কেউ বলবি না বিজ্ঞানী মশাইর কাছে।তোদের কাছে অনুরোধ।
তৃনা চোখ মুছলো। ইতোমধ্যে খাবার চলে এসেছে। সবাই মিলে খাওয়া শেষে চলে গেলো জাহাঙ্গীর নগর।
_____
সানি আমি তোমাদের দুলাভাই বলছি। তোমার তৃনার সাথে কথা বা দেখা হয়েছে?
সানি দম নিলো, কথা গুছিয়ে বলল,আমার সাথে কথা হয়েছে। কার কাছ থেকে যেনো একটা মোবাইল নিয়ে কল করেছিল, সে আপনার সাথে অভিমান করেছে। আপনার উচিত ছিল তৃনার কথা শোনা, আপনি তো শুনলেন না, ও যে মিটিং টা ডেকেছে, সেটা পদত্যাগের জন্য। তবে ও এখন কই আছে আমি জানি না৷। তবে এতোটুকু গ্রান্টি দিতে পারি, ওকে খুজে পেতে আপনার অনেক কষ্ট হবে।
নিরাশ হবেন না, চেষ্টা চালিয়ে যান।
সানির কথা শুনে আবিরের চোখে হতাশার ছায়া নেমে আসলো। দিশে হারা লাগছে।
এক দ্বন্দ্ব দেড়ি করলো না আবির। রেডি হলো আবির। বেশ দেখতে লাগছে। অবয়বে জামাই জামাইয়ের চাপ ফুটে উঠেছে। দেড় ঘন্টা ড্রাইভ করে চলে এসেছে আবির সাভার। এখনও কিছুপথ বাকি। রেডিও কলোনির রাস্তার মোড় ঘুরে জামসিংয়ের রাস্তায় ছুটছে।কিছুক্ষন বাদেই গাড়ি এসে থামলো আহমেদ ভিলার সামনে। আবির দুহাত বোঝাই করে মিষ্টি ও ফলমূলের প্যাকেট নিয়ে সদর দরজায় দাড়ালো। কলিং চাপ দেওয়ার কিছুক্ষন পর তুলি এসে গেট খুলে দিলো। কুশল বিনিময় করে ঢুকলো আবির। দুপুরের খাবার শেষ করে আবির গিয়ে বসলো, সফিউল আহমেদের নিকট। খানিকক্ষণ কথা বলার পর আবির আমতা আমতা করে বলতে লাগলো, আচ্ছা মামু, পুতুল কি তোমার সাথে কখনও অভিমান করত?
সফিউল আহমেদ নরম চোখে আবিরের পানে তাকিয়ে জবাব দিলো, তৃনা কি আবার পালিয়েছে নাকি?
আবির জোর পূর্বক হাসি টানলো, আরে না মামু,এমনি জিজ্ঞাসা করলাম আরকি, যদি কখনও অভিমান করে আর কি।
সফিউল আহমেদ হাসলেন, আবিরকে টুকরো করা ফল এগিয়ে দিলেন খাওয়ার জন্য , শোনাও আমার মেয়েটা খুব চঞ্চল, ও আমার সাথেই অনেক অভিমান করত, যদি কখনও অভিমান করে, তাহলে তুমি ওকে খুজে পাবে, জিরাবোতে যে বন্যচ্ছটা রিসোর্টে।
আবিরের মুখে হাসি ফুটলো।
গল্প করতে করতে বিকাল গড়িয়েছে। এবার আবির কাংক্ষিত যাওয়ার জন্য বের হবে।
আহমেদ ভিলার সদস্যদের বিদায় জানিয়ে বের হলো আবির। ছুটে চলল তার গাড়ি জিরাবোর দিকে।
____
বাতাসের হাওয়ায় সাফেদ পর্দাটা নড়ছে। বাহিরে আংশিক কুয়াশা বিদ্যমান। কিছুক্ষন পরেই আযানের পর্ব শুরু হবে। বিষন্ন সময়ের সংগি বেহালা। আর তার করুন সুর।
🎶গালিয়া 🎶
গানের সুর বাজাচ্ছে তৃনা।
তার সুর শোনা যাচ্ছে আশে পাশের জায়গা জুড়ে।
কেয়ার টেকার কফি হাতে এসে দাঁড়িয়েছে তৃনার কক্ষের সামনে। দরজায় নক করা মাত্রই থেমে গেলো বেহালার সুর।
দরজায় খুলে তৃনা মিষ্টি হাসি দিলো কেয়ার টেকারকে।
তৃনা কফিটা নেওয়া মাত্রই, কেয়ার টেকার বলল, তা মামনি, এবার কার উপর অভিমান করে আসলেন?
তৃনা হাসলো, জামাইয়ের উপর, চাচা।
কেয়ার টেকার হাসল,তৃনার মাথায় হাত ভুলিয়ে বলল, জাইয়ের এতো কষ্ট দিতে নাই, তাড়াতাড়ি বাসায় চইলা যাও। বেচারা তোমার জামাই, ভাবতেই কষ্ট লাগতাছে। তোমারে খুইজা কই কইনা গেছে।
এর মাঝেই আযানের সুর ভেসে আসল,কেয়ার টেকার বিদায় জানিয়ে চলে গেলো নামায পড়তে।
___
আচ্ছা আপনাদের রিসোর্টে তৃনা আহমেদ নামে কেউ উঠেছে?
ম্যানেজার আবিরের কথায় তাকালো, কয়েক সেকেন্ড অবোলোকন করলো, ম্যানেজার শুধালো, কে হোন কমরেড আপার?
আবির অধৈর্য্য গলায় বলে উঠল, হাসবেন্ড।
ম্যানেজার সাহেব, কেয়ার টেকারকে ডাকলেন আর বললেন, কাংক্ষিত জায়গায় নিয়ে যেতে।
~চলবে।
দয়াকরে পাঠকরা রিসপন্স করবেন, আজকের পর্ব কেমন লেগেছে অবশ্যই জানাবেন।