ডাহুক নদীর তীরে (পর্ব-৩) # হালিমা রহমান।

0
5

ডাহুক নদীর তীরে (পর্ব-৩)
# হালিমা রহমান।
জমিদার বাড়ির আগাছা পরিষ্কার করা হচ্ছে।সেই কোন আমলের বাড়ি!এখানে এককালে জমিদার ছিল,একদল রাজাকার ছিল।এতোদিন পর বাড়িটাকে আবার ঝকঝকে করতে দেখে গ্রামবাসীর চক্ষু চড়কগাছ। এই ভূতের বাড়ি ঝাড়া -মোছা করে কি হবে?তবে দু একদিনের সাফ-সুতরোতেই বাড়ির জৌলুশ যেন একশগুণ বেড়ে গেছে।কে বলবে, এই বাড়িটাকে এতোদিন ভূতের বাড়ি বলা হতো?নতুন করে সাদা রঙে রাঙানো হয়েছে পুরো বাড়ি।বাড়ির পিছনে গাছ- গাছালিতে একদম জঙ্গল হয়েছিল।সেগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে।বড় বড় গাছের ডাল-পালা কেটে দেওয়া হয়েছে।অশ্বত্থ গাছের নিচে একটা বাঁশের বেঞ্চি তৈরি করা হয়েছে।নতুন করে লোহার সদর দরজা তৈরি করা হয়েছে।আজ সেটা জায়গামতো লাগানো হচ্ছে।দুজন মিস্ত্রি চুপচাপ কাজ করছে।তারা এ গ্রামের নয়।এ গ্রামের কোনো মিস্ত্রি ভয়ে কাজ করতে রাজি হয়নি।এই বাড়ি নিয়ে এখনো অনেক ভৌতিক গল্প প্রচলিত আছে।বাড়ির কাজ তদারকি করছে মামুন।সে এই বাড়ির ম্যানেজার। ব্যাচেলর ছেলে।এই বাড়ির নিচ তলার একটা রুমে থাকে সে।মামুন এই গ্রাম বা পাশের গ্রামের ছেলে না।সে কথা খুব কম বলে।তাই তার পরিচয় সম্পর্কে বেশিরভাগ গ্রামবাসী কিছুই জানে না।
মামুন সদর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কাজ দেখছে।এই পথ দিয়েই মাঠে যাচ্ছিলো মতিন মিয়া।ভূতের বাড়ি নিয়ে তার আগ্রহের শেষ নেই।মামুনকে দেখে হাঁটার গতি কমিয়ে দেন তিনি।মামুনের সামনে দাঁড়িয়ে বিগলিত হাসেন।
—” কি গো মিয়া,বাড়ি নতুন করতাছো যে?মালিক আইবো নাকি?”
—” স্যার আসবেন নাকি জানি না।”
—” তাইলে?”
—” শুটিং হবে এখানে—কাঠ কাঠ গলায় উত্তর দেয় ম্যানেজার।
মতিন মিয়া প্রথমে একটু থমকে যান।কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পরেই তিনি পুরোপুরি চমকে যান।কি বললো ছেলেটা? শুটিং হবে? এখানে? অবিশ্বাস্য বিষয়! এই অজপাড়া গায়ে কে আসবে শুটিং করতে?কি আছে এখানে?গ্রামবাসীর কাছে রূপালী পর্দা মানেই ভিন্ন কিছু।চাকচিক্যময় অন্য একটা জগৎ।মতিন মিয়া প্রথমে বিশ্বাস করতে চাননা।গলায় সন্দেহ নিয়ে প্রশ্ন করেনঃ” হাছা কথা কইতাছো?”
—” মিথ্যা বলে আমার কি লাভ?”
ম্যানেজারের ঘুরানো-প্যাচানো কথায় ভয়াবহ বিরক্ত হন মতিন মিয়া।মনে মনে অশ্রাব্য গ্রাম্য কিছু গালি দেন।কথা বলার ইচ্ছাই তার মরে গেছে।মতিন মিয়া আর দাঁড়ান না।সোজা পথ ধরে সামনে চলে যান।খবরটা দিতে হবে না সবাইকে? মামুন একবার আড়চোখে তাকায় মতিন মিয়ার দিকে।আহমেদ ইউসুফ জনসমক্ষে আসবে এবার।তবে মামুনকে আগে থেকেই এসব প্রকাশ করতে নিষেধ করেছে সে।ইউসুফের কথা শুনলে গ্রামবাসী ভীড় করে দেখতে আসবে তাকে।জমিদার বংশের একমাত্র উত্তরাধিকারী বলে কথা।মামুন আবারো কাজে মনোযোগ দেয়। ইউসুফের ডানহাত সে।তাই ভিতরের খবর সব জানা তার।সবাই জানে, পুরোনো বাড়িটাকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। কিন্তু মামুন জানে,বাড়ি নয় একটা মৃত্যুপুরী সাজানো হচ্ছে নতুন করে।
***
রুবাইদা দাঁড়িয়ে আছে তথার রুমে। আলমারি থেকে সব জামা-কাপড় নামিয়েছে সে।এই ঘরটাতে তথা ও রুবাইদা একসাথে থাকে।রুবাইদা একটার পর একটা জামা নামিয়েই যাচ্ছে।কিন্তু একটাও মনমতো হচ্ছে না।তথা খাটের উপর বসে চুপচাপ বোনের কান্ড দেখছে।এতো কিছু নামিয়েছে, গোছাবে কে?তথা বোনের দিকে তাকিয়ে মুখ বাকায়।মেয়ের কান্ড দেখে মনে হচ্ছে তথা হিমালয় জয় করতে যাবে।
—” রুবি, আমি কিন্তু কিছু গোছাতে পারব না।সব তুই গোছাবি।”
—” আচ্ছা,গোছাব।কিন্তু তুমি কি পরে যাবে? আজকে ডিরেক্টরের সাথে দেখা করতে যাবে না?”
—” হুম। ”
—” ওখানে কত মানুষ থাকবে।তুমি কোন জামাটা পরবে? এই সাদা জামাটা নাকি সবুজ রঙেরটা?নাকি ওই কালোটা?কোনটা পরলে ভালো লাগবে তোমাকে?”
—” তুই বল, কোনটা পরব?”
—” এই সাদা জামাটা পরো।না থাক এইটা না এই লালটা পরো।এটাতেই ভালো লাগবে বেশি।”
—” আচ্ছা।এটা নিচে রেখে বাকি সব গুছিয়ে রাখ।”
লাল রঙের জামাটা খাটের উপর রাখে রুবাইদা।তথার সাথে তারও যেতে ইচ্ছে করছে খুব।ওখানে কত কত নায়ক-নায়িকা থাকবে! তাদেরকে একদম কাছ থেকে দেখার খুব শখ রুবাইদার।রুবাইদা একটার পর একটা জামা আবারো গুছিয়ে রাখে।তথা খাটে বসে মোবাইল টিপছে।তার কোনো কাজ নেই এখন। টিউশনিগুলো ছেড়ে দিয়েছে।মাসের শেষেই হয়তো পঞ্চগড় যেতে হবে।
ধীর পায়ে তথার রুমে ঢুকেন আকলিমা খাতুন।তিনি তথার চাচি।আকলিমা খাতুন তথার দিকে আড়চোখে একবার তাকান।দুইদিন যাবৎ তথার সাথে কথা বলেন না তিনি।কেন বলবেন?মেয়ে নাকি পঞ্চগড় যাবে! পঞ্চগড় কি বাড়ির কাছে?এতোদূর যাওয়ার কি দরকার?ভাগ্যে থাকলে বাড়ির কাছেই ক্যারিয়ার হবে। মেয়েটাকে এতোবার নিষেধ করেছেন কিন্তু মেয়েটা শুনছেই না।কতবড় সাহস হয়েছে মেয়ের! ভাবতেই রাগে মাথা নষ্ট হয়ে যায় আকলিমা খাতুনের।অবশ্য এর পিছনে বিরাট অবদান তথার চাচার।তথার চাচা,ইকবাল মিয়ার আগ্রহ যেন সবচেয়ে বেশি।মেয়ের ছোটোবেলার স্বপ্ন পূরণ হবে,তার মেয়েকে সবাই চিনবে—এ কি কম কিছু?তাই আকলিমা খাতুনের হাজার অভিযোগের কানাকড়িও গায়ে মাখেন না তিনি। আকলিমা বেগম যখন তথার অত্যধিক সাহসের নিন্দা করে স্বামীর কাছে বিচার দেন,ইকবাল মিয়া তখন আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে দুহাত তুলে দেন।মুচকি হেসে বলেনঃ” লিমা,এতো খিটখিট কইরো না।তথার বাপে ছিল যাত্রাদলের অভিনেতা। আমার মাইয়ার শরীরে অভিনেতার রক্ত।রক্তে কথা কয়।মাইয়াও অভিনেত্রী হইতে চাইব,এডাই স্বাভাবিক।”
আকলিমা খাতুনও চুপ মেরে যান।এরপরে আর কিইবা বলার থাকে?
চাচিকে ঘরে ঢুকতে দেখে ফোন রেখে দেয় তথা।মাতৃসম চাচির মুখভার তার সহ্য হয় না।কিন্তু কিছু করার নেই।আকলিমা খাতুন কিছুতেই বুঝতে চাইছেন না তথার বিষয়টা। তথা চুক্তিবদ্ধ —এই কথা চাচিকে কে বুঝাবে?তথা খাটের কোনে চুপ করে বসে থাকে।রুবাইদাও মাকে দেখে এককোনে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।দুদিন যাবৎ ঘরের আবহাওয়া অত্যন্ত অস্থিতিশীল। খাটের উপর একগাদা জামা-কাপড় দেখে মুহূর্তেই ফুসে উঠেন আকলিমা খাতুন।রুবাইদাকে ঘর কাঁপিয়ে ধমক দেন।
—” আমার ঘরটাকি বস্তি বাড়ি? নাকি আমি মইরা গেছি? যার যা ইচ্ছা তাই করবি ঘরের মধ্যে?আলমারির সব কাপড় নামাইছোস ক্যান?”
—” এখনি গুছিয়ে রাখছি মা “—- মিনমিন করে উত্তর দেয় রুবাইদা।ইদানিং মাকে খুব ভয় পায় সে।আকলিমা খাতুন মেয়ের কথায় মনোযোগ দেন না।গজগজ করতে করতে জামা-কাপড় ছুড়ে মারেন আলমারির ভিতর।ঘর-সংসারের প্রতি বিরক্তি এসে গেছে তার।
—” কষ্ট কইরা কোকিলের ডিমে তা দিছি।আমার কথা শুনব ক্যান?আমি কি আর জন্ম দিছি?নিজের মা হইলে ঠিকই কথা শুনতো।আমার কি? আমার কিছু?দূরদেশে নাটক করতে যাইব,অঘটন ঘটলে মাইষের মাইয়ার ঘটব।আমি আর কিচ্ছু জিগামু না……”
গলা উঁচিয়ে বকতে বকতে ঘর ছাড়েন আকলিমা খাতুন।ঘর থেকে চলে যাওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তার কন্ঠও মিলিয়ে যায়।রুবাইদা হাফ ছাড়ে। মায়ের মেজাজের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই।তথার মুখটা ছোট হয়ে যায়।কথাগুলো যে তাকেই উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে-তা বুঝতে কষ্ট হয় না।কয়েক সেকেন্ডের মাঝে সেও দো-টানায় পড়ে যায়।কাজটা কি সত্যিই ঠিক হলো?আখতার হোসেন তার পরিচিত কেউ নয়।ক্যারিয়ারের খাতিরে হুট করেই তার সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়া কি বুদ্ধিমানের কাজ?পঞ্চগড় অনেক দূরের রাস্তা।যদি কিছু হয়?যদি কোনো অঘটন ঘটে?তবে কি হবে?
***
আখতার হোসেনের পি.এর নাম খোকন।খোকন নামের সাথে একটা কোমল,আদুরে ভাবের সম্পর্ক আছে।কিন্তু আখতার সাহেবের পি.এর নাম খোকন না হয়ে অন্যকিছু হলে ভালো হতো।ছেলেটা সবসময় কপাল কুঁচকে রাখে।কপালের দু’দিকের চামড়া একদম কপালের মাঝখানে জড়ো হয়ে থাকে।চোখে-মুখে থাকে রাজ্যের বিরক্তি।ভাব দেখলে মনে হয়, সে দয়া করে এখানে কাজ করছে।তাকে ছাড়া শুটিং হবেই না।খোকনকে সিড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুখ বাকায় তথা।সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে সে।আখতার সাহেবের সাথে আজ একটা মিটিং আছে।এখানে নাকি সবাই থাকবে।একে অন্যের সাথে পরিচিত হবে।আখতার সাহেব নাটক সম্পর্কে, শুটিং স্পট সম্পর্কে সবাইকে বুঝিয়ে বলবেন।সেই জন্যই আজ এখানে এসেছে তথা।কিন্তু সেই কখন থেকে খোকন তাকে দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।আখতার সাহেব নাকি ভিতরে কার সাথে পার্সোনাল মিটিং করছেন।এখন দেখা করা যাবে না।এটা কোনো কথা?সাড়ে চারটার কথা বলা হয়েছে তথাকে। এখন বাজে চারটা চল্লিশ।আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে কে জানে!
তথা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে তাতে মনোযোগ দেয়। ভালো লাগছে না এসব।প্রথমে খুব ইচ্ছে থাকলেও এখন আর আগের মতো আগ্রহ খুঁজে পাচ্ছে না সে।চাচি খুব করে নিষেধ করছেন।ছোট থেকে এই মানুষটাই বড় করেছেন তথাকে।কখনোই তার কথার অমান্য করেনি তথা।এইবারই প্রথম।কাজটা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না।
—” এক্সকিউজ মি।আপনি কি বলতে পারেন ডিরেক্টর আখতার সাহেবকে কোথায় পাওয়া যাবে?”
একটি পুরুষালি কন্ঠের বিনয়ী প্রশ্নে ভাবনার রাজ্যে ভাঙন ধরে তথার।মাথা তুলে তাকাতেই একটি বলিষ্ঠ চেহারা চোখে পড়ে।তথার উত্তরের আশায় আছে সে।
—” ডিরেক্টর সাহেবকে এই রুমেই পাবেন।উনি মিটিং-এ ব্যস্ত আছেন।—তথা ডানহাত দিয়ে পাশের রুমটি দেখিয়ে দেয়।
—” আপনি কি তার পি.এ?এখন তো আমাদের টিমের সাথে মিটিং করার কথা ছিল।”
—” আপনি কি নতুন কাজ করছেন এখানে?”
—” হ্যাঁ। নতুন যেই নাটকটা তৈরি হবে,সেখানে নায়কের চরিত্রে আমি আছি।”
—” ওহ,আচ্ছা।আমিও ওই নাটকেই একটা চরিত্রে কাজ করছি।আমরা বোধহয় সহকর্মী। ”
—” তাহলে,এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?ভিতরে যান।”
—” ভিতরে নাকি স্যার মিটিং করছেন।”
—” আমাদেরকে ডেকে আরেকজনের সাথে মিটিং করছেন! আশ্চর্য! সময়জ্ঞান নেই নাকি?”
তথা কোনো উত্তর দেয় না।তার নিজেরও বিরক্ত লাগছে খুব।পাঁচটা বেজে গেছে।এখানে কাজ শেষ হবে কখন?
—” আপনাদেরকে স্যার যেতে বলেছেন।ভিতরে যান আপনারা।”
এখনো খোকনের কপাল কুঁচকানো।এই ছেলেটা কি হাসতে জানে না?কার উপর এতো বিরক্ত সে?
—” চলুন,ভিতরে যাই।আপনার নামটাই জানা হলো না এখনো।”
—” আমি সায়রা খানম তথা।আপনি?”
—” শাফিন আহমেদ।আপনি কি নায়িকা নাকি?”
—” জ্বি,না।সহকারী চরিত্র।”
—” ওহ”— একটু মিইয়ে যায় শাফিনের কন্ঠ।সে বোধহয় এতোক্ষণ তথাকে নায়িকা ভেবেছিল।
***
—” তোমাদেরকে এতোক্ষণ অপেক্ষা করানোর জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আসলে পুনমকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম,তাই দেরি হলো।পুনম এই নাটকে নায়িকার চরিত্রে কাজ করছে।”
তথা আড়চোখে একবার পুনমের দিকে তাকায়।মেয়েটার বয়স বোধহয় উনিশ- বিশ।তথার চাইতে দু-এক বছরের ছোটই হবে।অথচ,কি উদ্ধত ভাব-ভঙ্গি! যেন সে একাই এখানে বসে আছে।পায়ের উপর পা তুলে আরামে ফোন টিপছে।মেয়েটার পোশাকও খুব দৃষ্টিকটু।নতুন অবস্থাতেই এই রকম,একটু জনপ্রিয় হলে কি হবে আল্লাহ মালুম।
—” তারপর তথা,কি খবর তোমার?”
—” জ্বি স্যার, ভালো।”
—” শাফিনের সাথে আলাপ হয়েছে তোমার?”
—” জ্বি।”
সদস্যদের ভালো- মন্দ জিজ্ঞেস করে মূল কথায় আসেন ডিরেক্টর।অনেকটা সময় নিয়ে নাটকের কাহিনী বর্ণনা করেন। এই নাটকটা মূলত প্রেম বিষয়ক সামাজিক একটা নাটক।প্রেক্ষাপট সেই উনিশ শতকের।শাফিনের বিপরীতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করবে পুনম।আর তথা হবে অন্যতম প্রধান নারী চরিত্র।শাফিন তথার প্রতি দুর্বল থাকবে আবার পুনমের প্রতিও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবে।একটা ত্রি-কোন প্রেমের গল্পের ভিত্তিতেই নাটকটা তৈরি হবে।ডাহুক নদীর পাড়ের পুরোনো জমিদার বাড়িতে নাটকের শুটিং হবে।এই মাসের শেষের দিকেই ঢাকা ছাড়তে হবে সবাইকে।বেশিরভাগ মেয়ে চরিত্র।পুরুষ চরিত্র হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র।
প্রায় ত্রিশ মিনিট আলোচনা করলো ডিরেক্টর সাহেব।আদ্যোপান্ত বর্ণনা করলেন সবকিছু।কাজের ক্ষেত্রে তিনি খুব সচেতন।আলোচনা শেষে একটু ব্যস্ততা দেখিয়েই উঠে গেলেন আখতার সাহেব।তার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ পড়ে গেছে। এখন না গেলেই নয়।ডিরেক্টরের পিছনেই হাই হিলে গটগট আওয়াজ তুলে রুম ছাড়লো পুনমও।মেয়েটার আচরণ দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় তথা।মেয়েটা রীতিমতো অসামাজিক। এর সাথে কাজ করবে কিভাবে?
—” কি বুঝলেন মিস তথা?কাজটা কি সহজ?”
তথা উঠে যাচ্ছিলো।কিন্তু শাফিনের কথায় আবার বসে পড়ে চেয়ারে। মাথা নেড়ে বলেঃ” উঁহু। এরকম অসামাজিক মেম্বারদের সাথে কি করে কাজ করব?”
—” মিস পুনম ডিরেক্টরের খুব কাছের মানুষ।একটু-আকটু অসামাজিক তো হবেই”— ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি দেয় শাফিন।
—“মানে?”
—” আরে পার্সোনাল মিটিং, কাজ বুঝানো — এসব বুঝেন না?এতো অবুঝ হলে চলে?আমি শখে অভিনয় করতে এসেছি।সিলেক্ট হওয়ার জন্য দশহাজার টাকা পকেট থেকে খসাতে হয়েছে। অথচ,মিস পুনমকে ডিরেক্টর সাহেব হাতে ধরে কাজ শিখিয়ে দিচ্ছেন।বিষয়টা অদ্ভূত না?আপনিও দেখতে অসাধারণ সুন্দরী।আপনারও বোধহয় টাকা-পয়সা লাগেনি।আপনারা মেয়ে হয়ে বেঁচে গেছেন,বুঝলেন।আমি ছেলে বলেই আমার চান্স পেতে টাকা লাগে অথচ……”
—” আমি আসছি শাফিন সাহেব।পুনমের থেকেও আপনি বেশি অসামাজিক।পরেরবার কথা বলতে হলে সাবধানে বলবেন।মেধা দিয়ে টিকেছি এখানে, সৌন্দর্য দিয়ে নয়।কথাটা মাথায় রাখবেন।”
প্রচন্ড আক্রোশ নিয়ে রুম ছাড়ে তথা।আগ্রহের নদীতে পূর্ণ ভাটা চলছে। ইশ! আবেগের বশে এগ্রিমেন্ট পেপারে সাইন না করলেই ভালো হতো।এদের সাথে সে কাজ করবে কিভাবে???
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here