ডাহুক_নদীর_তীরে (পর্ব-১৪)
হালিমা রহমান
_” আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি না, শাফিন।এখানে আমি নিরাপদ নয় কেন?”
_” দেখুন আমার মতে,এখন সময়টা খারাপ।বাইরের জগত অবাধে চষে বেরানোর মতো দিনকাল এখন আর নেই।মেয়েরা তাদের ঘরেই নিরাপদ।তাছাড়া,আপনার কাকি যখন এতো করে বলছে তখন চলেই যান।বড়দের কথা ফেলতে নেই।”
শাফিনের কথায় কিছুই বলে না তথা।একমনে একদিকে চেয়ে থাকে।নদীর ঠান্ডা বাতাস তার শরীর ছুঁয়ে দেয়।শাফিন আধুনিক যুগের ছেলে হলেও এ যুগের ছেলেদের মতো চিন্তা করতে পারে না বোধহয়। তার চিন্তা-চেতনা, দৃষ্টিভঙ্গী সবটাই অন্যরকম।মেয়েদের বাইরে চলা-ফেরা, ঘোরাঘুরি এসব যে সে খুব বেশি একটা পছন্দ করে না তা তার কথা শুনলেই বুঝা যায়।
কয়েক মিনিটের মাথায় তথাকে আবার একা রেখে অন্যদিকে চলে যায় শাফিন।বিষয়টা স্বস্তি দেয় তথাকে।কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না এখন।প্রত্যেকটা মানুষের ভিতরেই আলাদা একটা সত্তা থাকে।মাঝে মাঝে তাদেরকেও সময় দিতে হয়।হৈ-চৈ থেকে দূরে থেকে সেই গুপ্ত সত্তার সাথে চুপিচুপি বোঝাপড়া করতে হয়।এখন তাই করবে তথা।শান্ত নদীর তীরে দাঁড়িয়ে হারিয়ে যাবে একাকিত্বের অন্তরালে।
টিমের একটা মেয়ের সাথে ঝগড়া বেধে গেল সোনালীর।একদম উত্তাল ঝগড়া।নদীর তীরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিল সে।ঘুরতে এসে শ-খানেক ছবি না তুলতে পারলে ভালো লাগে? এদিক-ওদিক ঘুরে ছবি তুলছিল সোনালী।ফোনের দিকে নজর দিতে যেয়ে ভুল করে আরেকটা মেয়ের পা মাড়িয়ে দিল।সেকেন্ডের মাঝেই নিজের ভুল বুঝতে পারে সোনালী।ফোনটাকে জিন্সের পকেটে রাখে তাড়াতাড়ি করে।মাথা নিচু করে বলেঃ” সরি, সরি আমি একদম দেখতে পাইনি।”
_” দেখতে পাইনি বললেই হলো।চোখ আছে কেন হ্যাঁ? পা’টাকে ভর্তা করে দিল একদম।তোমার সরি ধুয়ে এখন আমি পানি খাব।”
বিশ্রি ব্যবহারে রীতিমতো অবাক হয়ে যায় সোনালী। এই মেয়ে কি সভ্য যুগের মানুষ? আশ্চর্য! সরি বলার পরেও এমন করার কি আছে?সোনালী কি আর ইচ্ছে করে করেছে?
সোনালীর পিছন থেকে আরেকটা মেয়ে দৌড়ে আসে।আহত মেয়েটার পাশে দাঁড়িয়ে ব্যস্ত কন্ঠে বলেঃ” কি হয়েছে চন্দ্রানী দিদি?ব্যথা পেয়েছ নাকি?”
_” আর বলিস না শুভ্রা।আকাশের দিকে চোখ রেখে হাঁটে সবাই।পায়ের হাড়গুলোকে একদম গুড়োগুড়ো করে ফেললো।”
স্পষ্ট খোঁচা।তবে সোনালী এবারেও কিছু বলল না।শত হলেও ভুলটা তারই।সোনালীর চুপ থাকাকে মেয়েদুটো দুর্বলতা ভাবলো হয়তো।শুভ্রা নামের মেয়েটা তেড়ে গেল সোনালীর দিকে।দাঁতে দাঁত চেপে বললঃ” দেখে চলতে পারো না?এখন যদি দিদির পায়ের কিছু হয় তবে ও এখানে কাজ করবে কিভাবে?”
_” আমি সত্যিই দেখতে পাইনি।ভুল করে হয়ে গেছে।”
_” ম্যানার্সলেস।অবশ্য তোমারই বা দোষ কি।সব দোষ ডিরেক্টরগুলোর।কোয়ালিটি,ম্যানার্স,এক্সপেরিয়েন্স—এসব না দেখেই কাজে নিয়ে নেয়।যত্তসব।বস্তি-টস্তি দিয়ে মিডিয়াটাকে ভরে ফেললো একদম।”
এতো রীতিমতো গালাগালি! পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায় সোনালীর।মেয়েটা আবার খুব রাগী কিনা।রাগ সমসময় তার নাকের ডগায় থাকে।শুভ্রার দিকে তেড়ে যায় সে।গলা উঁচিয়ে বলেঃ” ওই সমস্যা কি হ্যাঁ? সরি বলেছি গায়ে লাগে না? এখন কি পায়ে ধরতে হবে?”
সোনালীর গলার আওয়াজে আশেপাশের সবাই অবাক হয়ে যায়।নিজেদের কাজ রেখে ওদের দিকে ছুটে আসে।তা দেখে শুভ্রা যেন আরো সাহস পায়।সেও গলা চড়িয়ে বলেঃ” তুমি পাড়া দিবে কেন?দেখে হাঁটতে পারো না?”
_” আমি কি ইচ্ছে করে দিয়েছি নাকি।তাছাড়া, যার পায়ে পা দিয়েছি,সে তো কিছু বলছে না।তোমার এতো সমস্যা হচ্ছে কেন?তুমি কি ওর চামচা?”
আরো রেগে যায় শুভ্রা।সোনালীর দিকে দু’পা এগিয়ে যেয়ে তার গালের কাছে হাত নিয়ে যায়।ডানহাত উঠিয়ে চোখ বড় বড় করে বলেঃ” এক চড়ে সবগুলো দাঁত ফেলে দেব বেয়াদব।তোকে বলতে হবে,আমি…….
আর কথা বলতে পারে না শুভ্রা।সোনালী তার ডানহাত পিছনে মুচড়ে বামহাতে গলা টিপে ধরে।শুভ্রাকে খানিকটা শূন্যে তুলে বলেঃ” আই উইল কিল ইউ বিচ।তোর হাত যদি আজকে না ভেঙেছি,তবে আমার নামও সোনালী না।”
অসহ্য যন্ত্রণায় গোঙাতে শুরু করে শুভ্রা।মুখ দিয়ে অদ্ভূত শব্দ করে। এক হাত দিয়েই সোনালীর শক্ত হাতের মুঠি থেকে গলা ছাড়াতে চেষ্টা করে।মুহূর্তেই চারপাশে হুলস্থূল কান্ড বেধে যায়।মেয়েগুলো অকারণে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে দেয়।চন্দ্রানী নামের মেয়েটা পায়ের ব্যাথা ভুলে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।ডিরেক্টর আখতার হোসেন চিৎকার করে সোনালীকে গালাগালি করেন।মামুন ভীরের মাঝে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে সোনালীর দিকে। এইটুকু মেয়ের শরীরে এতো শক্তি!
কোথা থেকে দৌড়ে এলো শাফিন।এক ঝটকায় শুভ্রার গলা থেকে সোনালীর হাত ছাড়িয়ে নেয়।শাফিন তার বলিষ্ঠ হাতদুটো দিয়ে সোনালীর দু-হাতের কনুই চেপে ধরে।শক্ত কন্ঠে বলেঃ” সমস্যা কি আপনার?ভদ্রতা -সভ্যতা ভুলে গেছেন?”
_” ছাড়ুন শাফিন।ওকে আজ মেরে তবে দম নেব।”
শাফিন ছাড়ে না।বরং আরো শক্ত করে সোনালীর হাত চেপে ধরে।কাঠকাঠ গলায় বলেঃ” ঠাটিয়ে দুটো চড় মেরে নিজের নাম ভুলিয়ে দেব,বেয়াদব।অসভ্যতার একটা সীমা থাকা উচিত।আপনি জানেন কি করতে বসেছিলেন মাত্র?মেয়েটা মরে যেতে পারতো।”
হুট করেই শান্ত হয়ে যায় সোনালী।মাটির দিকে তাকিয়ে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছাড়ে। বড় এক দম নেয়।ঘোলা চোখে আশেপাশে দেখে। সবাই ভীত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।কেউ কেউ নিজেদের মাঝে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছে।ডিরেক্টরের চেহারাটা পুরো লাল হয়ে আছে।খুব রেগে গেছেন বোধহয়।শুভ্রা মাটিতে বসে অনবরত কাশছে। মেয়েটার গলায় সোনালীর আঙুলের দাগ বসে গেছে। চন্দ্রানী শুভ্রাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করে কাঁদছে।আবার কিছুক্ষণ পর পর সোনালীর দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বলছেঃ” আই ওয়ান্ট জাস্টিস। আমার বোনকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।আমি থানায় অভিযোগ করব,আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব।”
আড়চোখে একবার মামুন ও ইউসুফের দিকেও তাকায় সোনালী।মামুনের চোখে-মুখে এখনো বিস্ময়ের রেশ লেগে আছে।সে অবাক চোখে চেয়ে আছে সোনালীর দিকে।ইউসুফের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে সোনালী।ইউসুফ তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।হাতদুটো বুকের উপর ভাঁজ করা।সারা মুখে চিন্তার ছাপ।ইউসুফের চেহারা দেখে কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করে সোনালীর।এই পরিস্থিতিতে এরকম একটা ঘটনা ঘটানো মোটেও উচিত হয়নি।এখন ইউসুফের মনে সন্দেহ না জাগলেই হয়।
_” মিস সোনালী,শুভ্রাকে সরি বলুন।এখন সরি বলুন।”
শাফিনের কথায় আবারো রাগ উঠে যায় সোনালীর। আবার সরি! এই সরিকে কেন্দ্র করেই তো এতো কাহিনি, এতো ঝামেলা।সোনালী বেশ গোয়ারের মতো প্রশ্ন করেঃ” ও আমার সরি মানবে কেন?এরা সরি-টরি বোঝে না।”
_” এই ফাজিল মেয়েটাকে এক্ষুণি বের করে দেও,শাফিন।আমার টিমে এরকম বেয়াদবের কোনো দরকার নেই।”
ডিরেক্টরের কথার বিপরীতে তার দিকে কঠিন চোখে তাকায় ইউসুফ।মুখে আঙুল দিয়ে ইশারায় বলেঃ” একদম চুপ।”
_” কি হলো আপনি এখনো চুপ করে আছেন কেন?আপনি কি আমার কথা বুঝতে পারছেন না?বাংলা বুঝেন না আপনি?”
চুপ করে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকে সোনালী।চারদিকে নিরবতা। সবাই যেন সোনালীর হার মানার অপেক্ষায় আছে। সোনালী বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর মিনমিনে গলায় বলেঃ ” সরি,আর এরকম হবে না।আসলে আমার উগ্র মেজাজ।রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না।আমার আচরণের জন্য আমি লজ্জিত।”
কিছুই বলে না শুভ্রা।চন্দ্রানীর বুকে মাথা দিয়ে বোনের শরীরের সাথে লেপ্টে থাকে।সে খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে।চোখের পাতা টেনে খুলতে পারছে না। শাফিন সোনালীর দিকে একবার তাকিয়ে শুভ্রার কাছে যায়।হাঁটুর উপর ভর দিয়ে শুভ্রার মুখোমুখি বসে।নরম গলায় বলেঃ” দেখুন,খুব বিশ্রি একটা ঘটনা ঘটে গেছে এখানে।দোষ আপনারও ছিল,সোনালীরও ছিল।দুইজনে মিটমাট করে নিন প্লিজ।আমরা কাজের জন্য এসেছি এখানে।রাত পেরোলেই একে অন্যের মুখ দেখতে হবে।শুধুশুধু নিজেদের মাঝে ঝামেলা করে লাভ আছে?আশা করছি এই বিশ্রি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আর কিছুই হবে না।এ ঘটনাকে এখানেই মাটি দিয়ে দিন।”
শাফিনের কথায় কাজ হলো।সত্যিই সত্যি চন্দ্রানী ও শুভ্রা শান্ত হয়ে গেল একদম।ডিরেক্টরের পিএ খোকন তাদেরকে জমিদার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাড়ির পথ ধরলো।সোনালীও বাড়ি চলে যেতে চেয়েছিল।কিন্তু তাকে আটকে দিল মামুন।চন্দ্রানী ও শুভ্রার সাথে একা বাড়িতে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই।আবার যদি উনিশ -বিশ হয়ে যায়।যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল আবার।শাফিন একদিকে চলে গেল,ডিরেক্টর পুনমের সাথে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো,অন্যান্যরা এদিক-ওদিক ঘুরাঘুরি করা শুরু করলো,মামুনের সাথে রাগ করে সোনালীও একদিকে চলে গেল।কেবল ইউসুফ ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো একজায়গায়। সে কিছু একটা ভাবছে।একটু দূরেই মামুনকে দেখতে পেয়ে তাকে হাতের ইশারায় কাছে ডাকে ইউসুফ।মামুন কাছে আসলে তাকে নিয়ে একটু দূরে চলে যায় সে।
_” মামুন, খবর পেয়েছো?”
_” কিসের খবর,স্যার?”
_” আমরা এখানে কি কি করছি,তার সব খবরাখবর গোয়েন্দা বিভাগের কাছে যাচ্ছে।”
_” তাই নাকি,স্যার! কিন্তু কিভাবে?”
_” বিভিন্ন ভাবেই নিউজ লিক হতে পারে।হতে পারে এখানে গুপ্তচর আছে অথবা স্বয়ং গোয়েন্দা পুলিশ আছে।আবার এমনও হতে পারে,আমাদের টিমের কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করছে।আমাদের কাজের কথা পুলিশকে বলছে।”
_” পুলিশ যদি এখানে কাজের কথা জেনেই থাকে, তবে হাত গুটিয়ে বসে আছে যে?ওদের তো ডিরেক্ট অ্যাকশন নেওয়ার কথা।”
_” সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি না।গোয়েন্দা বিভাগ আসলে কি করতে চাইছে।ওদের পরিকল্পনা এখনো ধরতে পারছি না।”
_” স্যার,তাহলে কি করবেন এখন?অতি শীঘ্রই দেশ ছাড়া উচিত আপনার।এখনো কি মাস শেষ হওয়ার অপেক্ষায় থাকবেন?”
_” উঁহু। বিশ দিনের মাথায় ভারত থেকে সীমান্ত পথে অস্ত্র আসবে।ওগুলো নেপালে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেই দেশ ছাড়ব।”
_” এবারেও রিভলভার? ”
_” হুম।মডেল পি-২৯।”
_” তথা ম্যাম?”—দূরে দাঁড়িয়ে থাকা তথার দিকে চোখ রেখে প্রশ্ন করে মামুন।
_” তোমার ম্যামকে নিয়েই যাব।”
_” করাচীতে যাবেন স্যার?”
_” না,লাহোরে।গত বছর দুইদিন বাড়িতে হানা দিয়েছিল পুলিশ।এবারেও করাচীতে গেলে আবারো ছুটে আসবে।আমি চাই না তোমার ম্যাম কখনো এসব জানতে পারুক।তথা কখনোই এসব মেনে নিতে পারবে না।আমার সারা পৃথিবী একদিকে আর তোমার ম্যাম একদিকে।আমি চাই না কাজের মাঝে তথা চলে আসুক অথবা তথা আর আমার মাঝে আমার কাজ বাধা হয়ে দাঁড়াক।দু-জায়গায় ব্যালেন্স করে চলতে চাইছি।”
_” যদি ম্যাম না যায়?”
_ ” ঢাকা থেকে এ পর্যন্ত টেনে আনতে পারলে, পাকিস্তান পর্যন্তও টেনে নিয়ে যেতে পারব।যেতে না চাইলে প্রয়োজনে অজ্ঞান করে নিয়ে যাব।”
ইউসুফ কিছুক্ষণ একমনে চেয়ে থাকে তথার দিকে।বাতাসে তার শাড়ির আঁচল উড়ছে।খোপার ফুলটা নেতিয়ে গেছে।মুহূর্তের মাঝেই এক সুন্দর সিদ্ধান্ত নেয় ইউসুফ। বিয়ের পর গাদা গাদা শাড়ি কিনে দেবে তথাকে।বাড়ির সামনে ফুলের বাগান করবে।তথা যখনই খোপা করবে তখনই তার খোপায় সতেজ ফুল গুজে দেবে সে।কখনো একটা ফুল আবার কখনো একগুচ্ছ ফুল।তথা নিশ্চয়ই তখন দারুন খুশি হবে।
তথার দিক থেকে চোখ ফুরিয়ে আবার মামুনের দিকে তাকায় ইউসুফ।আদেশের সুরে বলেঃ” সোনালীর উপর নজর রাখবে মামুন।মেয়েটা ভীষণ স্মার্ট। আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো না ও।”
_” ওকে স্যার।”
_” ওহ আর একটা কথা।আমি দেশ ছাড়ার পরেরদিনই মেয়েগুলোকে পাচারের ব্যবস্থা করবে।কলকাতার ব্রোথেল ম্যানেজারের সাথে কথা হয়েছে আমার।ওদিকে সব ঠিকঠাক করা।আমাদের দিকের কাজ বাকি শুধু।এখন থেকেই কাজ গুছিয়ে নেও।এবার দেরি করা যাবে না।গোয়েন্দা বিভাগ হাত ধুয়ে পিছনে পড়েছে।কি থেকে কি হয় বলা যায় না।”
আদেশ দেওয়ার পর আর দাঁড়ায় না ইউসুফ।লম্বা লম্বা পা চালিয়ে জায়গা ছাড়ে।কথার শেষে মামুনের দিকে একবার তাকায় না পর্যন্ত। তবে মামুনের দিকে তাকালে আজ অবাক হয়ে যেত সে।কারণ বহুদিনের বিশ্বাসী মামুনের মুখের রঙ উবে গেছে ইউসুফের কথা শুনে। মামুনের দৃষ্টি ঘোলা হয়ে আসে। সে ঘোলা চোখে একবার সোনালীর দিকে তাকায়।বড়জোর দশ পা দূরে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা।গোমড়ামুখে নদীর পানির দিকে চেয়ে আছে।মামুনের অস্থিরতা বাড়ে।সোনালী ও ব্রোথেল— দুটো শব্দকে কিছুতেই একসাথে মিলাতে পারে না সে।
***
_” মিস সোনালী,আপনি খুনোখুনি করতে গেছেন ওখানে?মিনিমাম কমন সেন্স নেই আপনার?”
ডিপার্টমেন্ট হেডের ঝাঝালো গলার আওয়াজে সোনালীর কানে তালা লাগার জোগাড়।কান থেকে ফোন সরিয়ে বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুল কানে ঢুকায় সে।কানের ভিতরে আঙুল দিয়ে কিছুক্ষণ খুচিয়ে নেয়।
_” সোনালী আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?”
_” জ্বি,স্যার।”
_” সমস্যা কি আপনার বলুন তো।আরেক মেম্বারের কাছ থেকে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ কেন শুনতে হয়? আপনি না টিম লিডার?”
_” সরি স্যার।তখন রাগ উঠে গিয়েছিল খুব।”
_” আপনার রাগের উপর ভর করে পৃথিবী চলে না মিস সোনালী।আপনারা তো খুব আনন্দেই আছেন সেখানে। আর এদিকে আহমেদ ইউসুফ তার কাজ চালিয়েই যাচ্ছে।গত মাসের মাঝামাঝিতেও বিপুল পরিমান ড্রাগ ও হেকলার এন্ড কক এমপি-৫ মডেলের রিভলবার পাচার করেছে।আর নারী পাচারের কথা নাহয় নাই বললাম।ব্রোথেলগুলোতে মেয়েরা পৌঁছে যাওয়ার পর আমরা খবর পাই। বুঝতে পারছেন কিছু?এরকম চলতে থাকলে ওকে থামানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে।যেভাবেই হোক আহমেদ ইউসুফকে এবার ধরতেই হবে।আর কোনো সমস্যা বা অভিযোগের কথা শুনতে চাই না আমি।ঠিকাছে?”
_” জ্বি স্যার।”
_” গুড।সাবধানে থাকবেন। গুড বায়।”
_” গুড বায়, স্যার।”
খট করে লাইন কেটে দেন ডিপার্টমেন্ট হেড।হাফ ছাড়ে সোনালী।মেজাজটা খারাপ হয়ে যায় পুরো।কিছু একটা হলেই উপরতলায় খবর পাঠিয়ে দিতে হয়?বেয়াদপ কোথাকার। অফিসার মনিরুজ্জামানের উদ্দেশ্যেও গুটিকয়েক গালি দেয় সোনালী।কি না কি শুনেছে, অমনি রাতদুপুরে বকাবকি করতে ফোন করেছে।যত্তসব।তিক্ত মেজাজে রাতের অন্ধকারে বাড়ির পিছনে পা বাড়ায় সোনালী।বাড়ির পিছনের জঙ্গলে তন্ন তন্ন করে খুঁজবে আজ।দেখাই যাক কিছু পাওয়া যায় কিনা।
চলবে