ডাহুক_নদীর_তীরে (পর্ব-১১)
হালিমা রহমান
ইউসুফের কথা শুনে খুব অবাক হয়ে গেল তথা।চোখদুটো বড় বড় করে বললঃ” আপনি রাজাকারের বাচ্চা?”
_” গালি দিলেন নাকি প্রশ্ন করলেন?”
_” না,না গালি দেইনি।এমনি জিজ্ঞেস করলাম।”
_” একাত্তরে এই বাড়ি ছিল শান্তি কমিটির অফিস।আমার দাদা ছিলেন কমিটির চেয়ারম্যান। মুক্তিযুদ্ধের ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি।আর বাদবাকি সদস্যরাও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল।”
_” দেশের স্বাধীনতা চায়নি কেন তারা?”
_” তা তো আমি জানি না।আমি তখন পৃথিবীতে ছিলাম না।মুক্তিযুদ্ধের বহু বছর পরে আমার জন্ম।আই ওয়াজ বর্ন ইন নাইন্টিন এইটি সিক্স।”
_” ছিয়াশি! তারমানে আপনার বয়স পঁয়ত্রিশ।কিন্তু আপনাকে দেখলে মনেই হয় না। আপনাকে দেখলে মনে হয় আপনার মাত্র সাতাশ-আটাশ বছর।”
_” প্রশংসা করলেন কামিনী ফুল? “—মুচকি হাসে ইউসুফ।
ইউসুফের কথার বিপরীতে তথাও হাসে।মৃদু হেসে বলেঃ” ধরে নিন।”
_” মাসে মাসে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালি জেন্টস পার্লার আর জিমে।সকাল- বিকাল ব্যায়াম করি,ডায়েট কন্ট্রোল করি।এতো কিছুর পরে বয়স বুঝবেন কি করে?আমি খুব স্বাস্থ্য সচেতন এবং শৌখিন।”
_” তা আপনাকে দেখলেই বুঝা যায়।”
_” আপনার কি ক্ষুধা চলে গেছে?চা খাবেন না?”
_” হ্যাঁ, চলুন।”
ইউসুফের সাথে পা মেলায় তথা।দু-পা এগোনোর পর কিছু একটা ভেবে মাথা ঘুরিয়ে পিছনে তাকায়।যা ভেবেছিল ঠিক তাই।শাফিন এখনো একইভাবে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।সে কি ভাবছে কে জানে।তবে তথা জানে,এরপর শাফিনের সাথে দেখা হলে সে কি বলবে।শাফিন নিশ্চয়ই বলবে,তথা সুন্দর বলেই একদিনের মাথায় বাড়ির মালিকের সাথে ভাব জমাতে পেরেছে।মেয়ে হয়ে তাদের লাভই হয়েছে।এবার মনে মনে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নেয় তথা।আবার যদি শাফিন এমন কিছু বলে তবে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেবে তার গালে।এতো নোংরা মন-মানসিকতার মানুষ চড়-থাপ্পড়েরই যোগ্য।
কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে কিছু ফুল পড়ে আছে।টকটকে লাল রঙের ফুল। সেখানে পুনম দাঁড়িয়ে আছে।সুন্দর ফুলগুলোর ছবি তুলছে পুনম।পরনে স্লিভলেস টপস। তথা চোখ ফিরিয়ে নেয়।পোশাকের ব্যাপারে সে এখনো অনেকটাই রক্ষণশীল। এমন খোলামেলা আবরণ কেন যেন সহ্য করতে পারে না সে।গেট পেরিয়ে বাইরে চলে এলো দুজনে।সুনসান রাস্তা।এদিকটায় খুব বেশি মানুষ আসে না বোধহয়।তীব্র রোদে গা পুড়ে যায়।পাকা রাস্তাটা মিশে গেছে সামনের একটা ক্ষেতে।দূর থেকেই দেখা যায়, সেখানে কয়েকজন কৃষক কাজ করছে।তথা মাথায় ওড়নার আঁচল টেনে ঘোমটা দেয়।রোদের তাপে মাথাটা একদম গরম হয়ে যাচ্ছে।
_” আপনাকে একদম নতুন বউয়ের মতো লাগছে,কামিনী ফুল।”
_” তাই নাকি?”
_ ” হুম।খুব সুন্দর দেখাচ্ছে আপনাকে।একটা ছবি তুলি?”
ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা টানে তথা।মাথা নেড়ে বলেঃ” না,না ছবি তুলবেন কেন?আপনার ফোনে আরেক মেয়ের ছবি দেখলে আপনার বউ নিশ্চয়ই খুব রাগ করবে।”
ইউসুফের পা থেমে যায়,কপাল কুঁচকে যায়।মেয়েটা খুব বেশি বুঝে।ও কখন বলল ও বিবাহিত?
_” আমি এখনো বিয়ে করিনি।তবে করব সামনে।”
_” এখনো বিয়ে করেননি! আমি আপনাকে যত দেখছি ততো অবাক হচ্ছি।এই বয়সে ছেলেরা বাবা ডাক শোনে।আর আপনি নাকি বিয়েই করেননি।অতি আশ্চর্য! ”
_” ব্যবসা-বাণিজ্যে খুব ব্যস্ত থাকতে হয়। বিয়ে করার সময় কোথায়?”
_” কীসের ব্যবসা আপনার?”
_”এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট। আমার কাজকে আমি জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসি।”
_” ভালো।আপনি এখানে থাকেন নাকি পাকিস্তানে?”
_” বেশিরভাগ সময় পাকিস্তানেই থাকা হয়।এখানে আসি মাঝে মাঝে।এখানের মানুষদের সাথে তাল মিলাতে পারি না আমি।তাছাড়া,বাঙালিদেরকে খুব বেশি পছন্দও করি না।তাদেরকে দেখলেই খুব প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছে করে।ওদের জন্যই আমার পুরো বংশ মরেছে।ইউজলেস ন্যাশন একটা।আই হেইট মোস্ট অফ দ্যা পিপল অফ ইয়োর কান্ট্রি।আমার দেখা সবচেয়ে খারাপ মানুষটাও বাঙালি ছিল।”
তথার পা থেমে যায়।ইউসুফের কথাগূলো ভিতরটাকে নাড়িয়ে দেয় একদম।কেমন একটা গা জ্বালা করা অনুভূতি হয়।অনুভূতিটা নতুন।এটা কি দেশপ্রেম?দেশ মায়ের প্রতি ভালোবাসার কথা শুধু বাংলা গল্প-উপন্যাস-কবিতা ও রচনায় পড়েছে।বাস্তবে খুব বেশি একটা দেশপ্রেম চর্চা করা হয় না।তবে ইউসুফের কথাগুলো চাবুকের মতো গায়ে লাগে।আত্মসম্মানের ভীতটাকেও নাড়িয়ে দেয় একদম।তথাও তো বাঙালি জাতির একজন।তার মানে তথার সঙ্গও নিশ্চয়ই ইউসুফের ভালো লাগছে না।বাঙালি জাতি এতোটা ঘৃণিত এই মানুষটার কাছে?ইতর কোথাকার। যুদ্ধের সময় যে তার বংশ নিজের জাতির সাথে প্রতারণা করেছে,সেটা মনে পড়ছে না?ফালতু।স্বাভাবিকভাবেই ইউসুফের কথাগুলো গায়ে লাগে তথার।রাগ উঠে খুব।তবে রাগটুকু দেখায় না তথা।বড় এক দম নিয়ে রাগ গিলে নেয়।
_” কামিনী ফুল,থেমে গেলেন যে?চলুন।”
_” আপনি যান, মি.আহমেদ।আমার ক্ষুধা নেই।”
_” সে কি মাত্রই তো বললেন…”
_” এখন আর ক্ষুধা নেই।আমিও বাঙালি।আপনার অপছন্দের জাতি।আপনি আগেই বলতে পারতেন,আমার সঙ্গ আপনার পছন্দ হচ্ছে না।অকারণে আমার সামনে আমার জাতিকে অপমান করলেন।আমি তো আপনার সাথে জোর করে আসতে চাইনি।বরং আপনিই নিয়ে এসেছেন।”
তথার পুরো কথা বোধগম্য হয় না ইউসুফের।বোকার মতো প্রশ্ন করেঃ” আপনার সঙ্গ খুব পছন্দ আমার।ইনফ্যাক্ট,আপনার সঙ্গ আমার আকাঙ্খা। এ কথা কেন বলছেন?”
_” বাঙালি জাতিকে আপনি পছন্দ করেন না,ঘৃণা করেন।আমি এই জাতির মেয়ে।আপনার কথা অনু্যায়ী আমাকেও আপনার পছন্দ না।খুবই ভালো কথা।তবে, পরের বার
কথা বলতে হলে সাবধানে কথা বলবেন মি.আহমেদ ইউসুফ। আপনার শরীরেও এই ইউসলেস জাতির রক্তই বইছে।নিজের জাতি সম্পর্কে এতো বাজে কথা কিভাবে বললেন?আমরা খুব দয়ালু জাতি বলেই রাজাকাররা এখনো এদেশে থাকতে পারছে।আপনার বাড়িতে থাকছি বলে খুব আফসোস হবে আমার। আমাদের আত্মসম্মান খুব বেশি তো তাই অপমান করার পরে সেখানে মুখ ডোবাতে পারি না।
চুক্তিবদ্ধ না হলে এখানে আর থাকতাম না আমি।বাধ্য হয়ে থাকতেই হবে।”
গটগট করে বাড়ির দিকে চলে যায় তথা।রাগে তার শরীরটা ফেটে যাচ্ছে।ইকবাল মিয়া সবসময় একটা কথা বলেন।রক্তের দোষ অথবা গুণ কেউ কখনো এড়িয়ে যেতে পারে না।আজ এই কথাটার সত্যতা হাড়ে হাড়ে টের পেলো তথা।রাজাকারের রক্ত বলেই নিজের জাতি সম্পর্কে এভাবে বলতে পারলো।তথা নিশ্চিত মুক্তিযুদ্ধের সময় ইউসুফ পৃথিবীতে থাকলে সেও বংশের মতো কুখ্যাত রাজাকার হতো।একপেট ক্ষুধা নিয়ে আবারো বাড়িতে ঢুকলো তথা।সকাল সকাল মেজাজটা খুব খারাপ হয়ে গেছে।বেয়াদব একটা লোক।ফালতু।
এদিকে ইউসুফ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়।গরমে ঘাম দেয় তার শরীরে।কপাল বেয়ে পড়ে নোনা পানি।ইউসুফ সেদিকে খেয়াল দেয় না।ঘামটুকু মুছেও নেয় না।রাগে তার শরীর জ্বলছে। ইউসুফের রাগ সবসময় নাকের ডগায় থাকে।মেয়েটার খুব সাহস। শুধু তথা বলে আজ রক্ষা।তথার জায়গায় অন্যকেউ থাকলে আজকে তার কি হাল হতো তা নিজেও ভাবতে পারে না ইউসুফ।রাস্তার পাশের বিশাল আমগাছে সজোরে লাথি দেয় সে।কপাল চেপে ধরে।মেয়েটাকে যতটা সহজ ভেবেছিল,ততোটা সহজ নয়।একে বাগে আনতে খুব কষ্ট হবে ইউসুফের।
***
_” কি গো আব্বা,সকাল সকাল কই যাও?”
খালেদা বানুর কথায় হাঁটা বন্ধ করে ইরফান।মুচকি হেসে ডাইনিংয়ে বসে থাকা মায়ের দিকে চলে যায়।চেয়ার টেনে বসে পড়ে জন্মদাত্রীর পাশে।
_” ধানমন্ডি যাব,মা।”
_” রেস্টুরেন্টে? ”
_ ” হ্যাঁ। অনেকদিন যাওয়া হয় না।তাই ভাবলাম আজ একটি ঘুরে আসি।”
_” আলহামদুলিল্লাহ, আমার আব্বার বুদ্ধি হইছে।মাইনষের উপরে ভার দিয়া কি আর ব্যবসা চলে?ব্যবসা সামলানো অনেক কঠিন ব্যাপার।হাড়-মাংস এক কইরা, রক্ত পানি কইরা ব্যবসা চালাইতে হয়।তোমার বাপেরে দেখ নাই?এরকম কষ্ট করতে হয় জীবনে।আজকে থেকা পত্যেকদিন যাইবা, ঠিক আছে?”
ইরফান মাথা নাড়ে।খালেদা বানু কথা একটু বেশি বলেন।সংসারের শুরুর দিকে খুব বেশি কথা বলতেন না।অবশ্য কথা বলার সময় ছিল কোথায়?সারাদিন তো সেই টিনশেড হোটেলের চটের বস্তার আড়ালেই থাকতে হতো।দুঃখের দিনের কথা কেউ শুনতে চায় না।তাই খালেদা বানুর বান্ধবী-টান্ধবী খুব বেশি ছিল না।সারাদিন একাই থাকতেন।মুখ বন্ধ রেখে কথা জমিয়ে রাখতেন।আজ সুখের দিনে তার বন্ধু-বান্ধবীর অভাব নেই।রোজ বিকালে তার ঘরে চায়ের আসর বসে।রাজ্যের কথা হয় সেখানে।খালেদা বানুও তার ঝাপি খুলে বসেন।জমিয়ে রাখা কথাগুলো এখন বন্যার পানির মতো মুখ দিয়ে বেরোয়।তিনি এখন আর কথা জমিয়ে রাখতে পারেন না।জমিয়ে রাখা কথাগুলো পেটের ভিতর কেমন যেন গুড়গুড় করে।
_” আব্বা, নাস্তা খাইলা না যে?”
_” ক্ষুধা নেই মা।”
_” এই কথা কইলে চলব?একটা কড়কড়া কইরা ডিম ভাইজা দেই।কয়ডা ভাত খাও।নাকি রুটি খাইবা?ডিম-পরোটা দিমু?”
_” না,মা।তাহলে ভাতই দাও।কম পেয়াজ দিয়ে একটা ডিম ভাজতে বলো।আর রাতের বাসি ডাল আছে নাকি?”
_” হ আব্বা, আছে।খাইবা?”
_” হুম।দাও তাহলে।”
খালেদা বানু সন্তুষ্টির হাসি হেসে ছেলের খাবার আনতে যান।ছেলে-মেয়েদের খাবারের ব্যাপারে তিনি খুব সচেতন।এই একটা বিষয়ে তিনি কাজের লোকদের উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন না।
ইরফান চেয়ারে হেলান দেয়।ব্লেজারটাকে খুলে পাশের চেয়ারে রাখে।আজকে একটা নতুন সকাল তার জন্য।আগে তো ঘুম থেকে উঠে কোনোমতে ব্রাশ করেই তথার বাড়ির দিকে ছুটতো।তথা এই সময়ে ভার্সিটিতে যায়।তাকে পাহারা দিতে হবে না?রিকশা ঠিক করে দিতে হবে,বাজে ছেলেরা যাতে নজর না দেয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।তথার পিছু পিছু ভার্সিটি পর্যন্ত যেয়ে আবার ফিরে আসতো ইরফান।এলাকায় আসতে আসতেই অনেক সময় দশটা বেজে যেতো।বাড়ি ফেরা হতো না তখনো।এলাকার কোনো একটা দোকান থেকে দুটো পরোটা আর খানিক ডাল-ভাজি অথবা একটা ডিম পোচ দিয়েই নাস্তা সাড়তো।তারপর কিছুক্ষণ এলাকার পঞ্চায়েত আর কিছুক্ষণ পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকানে আড্ডা চলতো।এরকম এদিক-ওদিক ঘুরে ঠিক বারোটা বাজে আবার তথার ভার্সিটির সামনে চলে যেত।আবারো তথাকে পাহারা দিয়ে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে এসে তারপর নিজের বাড়িতে ফিরতো ইরফান।রেস্টুরেন্টে মোটেও যেতে ইচ্ছে করতো না তার।সেখানে তো আর তথা নেই।বিগত দিনগুলিতে প্রেয়সীর জন্য কত কত পাগলামি করেছে ইরফান।ঘটনাগুলো মনে করে কিছুক্ষণ নিজের মনেই হাসে সে।কালকের সকাল আর আজকের সকালে রাত-দিন তফাৎ। কালকেও তথার সাথে এই সময়ে বাস স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিল ইরফান।কাল সে ছিল কান্ড-জ্ঞানহীন এক পাগল প্রেমিক।আর আজ? আজ সে মোহমুক্ত এক কাঠখোট্টা কর্মজীবী। নিজেকেই আজ চিনতে পারে না ইরফান।কেমন যেন নতুন নতুন লাগে সব।ইরফান স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।অবশেষে সেই হৃদয়হীনার কাছ থেকে মুক্তি মিললো।ইরফান আর কখনো তথার দিকে ফিরে তাকাবে না।তথাকে পুরোপুরি বয়কট করেছে সে।তথার কথা মন থেকে মুছে ফেলত চেষ্টা করে ইরফান।তথার সাথে আর কখনো দেখা না হওয়ার প্রার্থনাও করে মনে মনে।
_” হা করো আব্বা।আমিই খাওয়ায় দেই।তোমার আর হাত দেওয়ার দরকার নেই।”
ইরফান মায়ের কথার অবাধ্য হয় না।স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাদের মতো মায়ের হাত থেকে একের পর এক লোকমা মুখে নেয়।
_” আব্বা,আমার তো বয়স হইছে।নাতী-নাতিন নিয়া খেলার বয়স হইছে আমার।এহন একটা সঙ্গীর দরকার।তোমার বাপে কয়দিন ধইরাই তোমার বিয়ার কথা কইতাছে।তোমার কি কোনো পছন্দ আছে,আব্বা?”
বিয়ের কথা শুনে বিষম খায় ইরফান।অন্য সময় হলে হয়তো পছন্দ হিসেবে তথার নাম বলেই দিতো।কিন্তু এখন বললো না।একটু পানি খেয়ে গলা শক্ত করে উত্তর দেয়ঃ” আমার কোনো পছন্দ নেই,মা।তোমার পছন্দই আমার পছন্দ।”
খালেদা বানুর মুখে হাসি ফুটে।ইরফানটা ভীষণ লক্ষ্মী। এমন সোনার টুকরা কয়জনের কপালে জুটে?
_” তাইলে মাইয়া দেখা শুরু করি?”
_” করো।”
ইরফানের গলা শুকিয়ে যায়।ভাতগুলো গলা চিড়ে নিচের দিকে নামছে যেন।ভিতরের অস্থিরতা বাড়ে।তবে সেসব পাত্তা দেয় না সে।নিজের মনকে ছেলে ভুলানো কথা শুনিয়ে শান্ত করে।আবারো চেয়ারে হেলান দেউ ইরফান।মনে মনে বলেঃ” খুব বাঁচা বাঁচলাম।হৃদয়হীনা লৌহ মানবীর কবল থেকে একেবারের জন্য মুক্তি পেয়ে গেলাম আমি।”
এই সান্ত্বনায় ইরফানের মন ভালো হলো কিনা কে জানে! মানুষের মন তো।বাইরে থেকে একে বুঝা একেবারেই দুঃসাধ্য।
চলবে