ডাহুক_নদীর_তীরে (পর্ব-২৩) হালিমা রহমান

0
38

ডাহুক_নদীর_তীরে (পর্ব-২৩)
হালিমা রহমান

উত্তেজনায় লাফ দিয়ে উঠে বসে ইরফান।মুহূর্তেই সরকারী হাসপাতালের নড়বড়ে খাট ক্যাচক্যাচ শব্দ তুলে।ইরফানের হাঁটুতেও ব্যাথা অনুভব হয়।এক্সিডেণ্ট ছোট হলেও হাঁটুতে বেশ বড়সড় চোট পেয়েছে।কপালে ব্যান্ডেজ,হাঁটুতে ব্যান্ডেজ,কনুয়ের দিকটায় চামড়া উঠে গেছে।ইরফান সাদিকের অবস্থা এখন অনেকটাই শোচনীয়।তবে শারীরিক অসুস্থতাকে খুব বেশি একটা পাত্তা দেয় না ইরফান।উত্তেজিত গলায় প্রশ্ন করেঃ” কি বলছো এগুলো, শাফিন?তোমরা এতো সাংঘাতিক একটা ক্রিমিনালের বাড়িতে আছো !”
_” হ্যাঁ, কি আর করা। এটাই আমাদের প্রফেশন।”
_” তথা কেমন আছে?”
_” একটু আগেই তো সব খুলে বললাম তোমাকে।ভুলে গেছো?”
ইরফান খানিক মিইয়ে যায়।বহুদিনের ব্যবহৃত কালচে সাদা রঙের বালিশে হেলান দিয়ে মলিন স্বরে বলেঃ” ভুলিনি,মনে আছে।”
_” তাহলে প্রশ্ন করছো কেন? আমরা কেউই খুব বেশি একটা নিরাপদ নই এখনো।অন্যান্যদের চাইতে আমরা ছয়জন বেশি ঝুঁকিতে আছি।তবে আমার মনে হয়, সবগুলো মেয়ের মাঝে তথা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। আহমেদ ইউসুফের পেয়ারের মানুষ বলে কথা।”
তথার বিষয়টা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে যায় ইরফান।বিষন্ন গলায় বলেঃ ” গোয়েন্দা সংস্থা থেকে ছয়জন এসেছে?”
_” হুম।”
_” তবুও তোমরা কিছু করতে পারছো না?এতোগুলো পুলিশ একসাথে আছো,তবুও..”
_” ভাই,আমরা তো সুপারম্যান না।আমরাও তোমাদের মতো মানুষ।দেখলাম আর খপ করে ধরে ফেললাম–বিষয়টা এমন না।অপরাধীকে ধরার কতগুলো প্রসেস আছে।আর ক্রিমিনাল যদি হয় আহমেদ ইউসুফের মতো জাত বজ্জাত,তাহলে তো কথাই নেই।ভেবে-চিন্তে পা ফেলতে হয় সেখানে।তাছাড়া,এখানে আসার আগে কি অর্ডার দেওয়া হয়েছে জানো?”
_” কি?”
_” প্রমাণসহ আহমেদ ইউসুফকে জীবন্ত ঢাকা নিতে হবে।বুঝতেই পারছো ,বিষয়টা সহজ নয়।”
_” বুঝলাম।”
শাফিন চোখ ঘুরিয়ে হাত ঘড়ির দিকে নজর দেয়।আযানের সময় হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ আগে মাগরিবের আযান শেষ হয়েছে।চারদিকে এক পশলা বৃষ্টির মতো ঝুপ করে নেমে এসেছে অন্ধকার। বাড়ি ফেরা দরকার।ইরফানকে এখানে দেখে খুব অবাক হয়ে গিয়েছিল শাফিন।ইরফান এখানে কেন আসবে? তার তো এখানে আসার কথা নয়?
স্থানীয়দের সাহায্যে অজ্ঞান ইরফানকে নিয়ে ছুটে এসেছে বাজারের হাসপাতালে।ভাগ্য ভালো এখানে একটা সরকারী হাসপাতাল আছে।নাহয় এই বিকেলবেলা অসুস্থ ইরফানকে নিয়ে বেশ কষ্ট হতো।শাফিন আড়চোখে একবার তাকায় ইরফানের দিকে।কপালের চামড়া কুঁচকে কি যেন ভাবছে সে।শাফিন হাসে মনে মনে।ইরফানের অবস্থা এখন অনেকটা আনাড়ি হাতের আটার রুটির মতো।ত্যাড়াব্যাকা, ফাটা-ফুটো।বেচারা! কত কষ্ট করে প্রেমিকার খোঁজ নিতে এতোদূর ছুটে এসেছে।অথচ, শুরুতেই এক্সিডেন্ট।কি দূর্ভাগ্য!
ইরফানের জ্ঞান ফিরেছে কিচ্ছুক্ষণ আগে।শাফিনকে শিয়রের কাছে বসে থাকতে দেখে স্বাভাবিকভাবেই খুব অবাক হয়েছে সে।তারচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে শাফিনের কথা শুনে।শাফিন যখন একে একে তাদের কথা, জমিদার বাড়ির কথা, ইউসুফের কথা,তথার কথা,শুটিংয়ের কথা খুলে বললো; তখন ইরফানের মুখটা দেখার মতো ছিল।বেচারা বোধহয় এতোকিছু একসাথে আশা করেনি।
_” তথা সত্যিই ভালো আছে,শাফিন?”
ইরফানের কন্ঠে তীব্র বিষাদের ছাপ।শাফিন বামহাতে আগলে ধরে ইরফানের ডানহাত।মৃদু চাপ দিয়ে বলেঃ” সত্যি বলছি,তথা ভালো আছে।ইনফ্যাক্ট খুব ভালো আছে।তুমি চিন্তা করো না।”
_” ওই হারামী লোকটার সাথে সময় কাটাতে একটুও গা ঘিনঘিন করছে না ওর? অথচ,আমি একটু কথা বলতে গেলেই কত কঠিন কঠিন কথা শোনাতো আমাকে।আমি নাকি বাড়াবাড়ি করতাম। আমার আচরণ নাকি বিরক্ত লাগতো ওর কাছে।কি আশ্চর্য! আমার চাইতে এই আহমেদ ইউসুফ ভালো?”— বাতিকগ্রস্তের মতো প্রশ্ন করে ইরফান।তার প্রশ্নে আগাগোড়া অভিমান জড়ানো।গলায় কোনো জোর নেই। খুব কষ্ট করে কথা বলছে যেন।
_” দেখো,তোমাদের চোখে হয়তো তথার কাজটা ভালো লাগছে না।কিন্তু আমার চোখে তথার কাজটা ভালো লাগছে।ও প্রেম করছে বলেই ইউসুফের মনোযোগ অন্যদিকে আছে।যতক্ষণ ইউসুফ তথার সাথে আছে, ততোক্ষণ আমরা নিশ্চিন্তে আছি।ইউসুফ কালরাতে প্রেমে ব্যস্ত ছিল বলেই আমি সহজে মামুনের পিছু নিতে পেরেছি।আজ রাতে আবারো ও প্রেম করতে যাবে,আর সোনালী যাবে গোডাউনে। ইউসুফ যত তথার দিকে ঝুকে পড়বে,আমাদের কাজ ততো তাড়াতাড়ি শেষ হবে।তথা এখন আমাদের জন্য সোনার হরিণ।কোনোরকম কষ্ট ছাড়াই শিকারীকে আঁটকে রাখার ক্ষমতা তার আছে।”
_” তোমার চিন্তা-ভাবনা আমার কাছে ভালো লাগে না।তোমার কথাগুলোও খুব প্রফেশনাল।”
_” তুমি আমার জায়গায় থাকলে বুঝতে পারতে।সবাইকে সহজে রক্ষা করার জন্য এটাই এখন সবচেয়ে ভালো উপায়।তাছাড়া এতো মন খারাপের কি আছে?একটু প্রেমই করছে।প্রেম করলেই তো আর বিয়ে হয়ে যায় না।আর ওদের যতোই জীবন-মরণ প্রেম হোক না কেন,তথার সাথে ইউসুফের বিয়ের কোনো চান্সই নেই।দেশে যেহেতু আছে সেহেতু ইউসুফের শাস্তি নিশ্চিত। তবে যদি পাকিস্তানে চলে যায় তবে সেক্ষেত্রে হয়তো একটু এদিক-ওদিক হবে।”
_” তবুও আমার ভাবতেই খারাপ লাগছে,তথা অন্যকারো সাথে প্রেম করছে।আমি ভেবেছিলাম ওর হয়তো এসব প্রেম-ট্রেম ভালো লাগে না।কিন্তু এখন দেখছি এসবে আগে থেকেই ইন্টারেস্ট ছিল,শুধু আমিই তার অপছন্দের মানুষ ছিলাম।”
শাফিন উঠে দাঁড়ায়। পকেটে হাত গুজে বলেঃ” এসব এখন বাদ দেও।বিয়ের আগে দু-চারটে প্রেম করলে আহামরি ক্ষতি হয় না।তুমি এমন করছো যেন তথা বিরাট কোনো পাপ করে ফেলছে।হাহ! তথা শুধু একটুখানি প্রেম করছে।তাও একজনের সাথে।এখনকার দিনে বিয়ের আগে দু-তিনটে প্রেম সবারই থাকে।এই আমাকেই দেখো না,আমার এক্স গার্লফ্রেন্ডগুলোকে হাতে গুনে শেষ করা যায় না।কোন বয়স থেকে প্রেম করছি তা নিজেরই মনে নেই।আর ক্রাশ শব্দটা তো আমার জন্য ডাল-ভাত।এখানে এসেও চারটে মেয়েকে ভালো লেগেছে।কি যে করি!”
_” হুম,মানুষের বেলায় বলাই যায়।তুমি যদি জানতে পারো তোমার প্রেমিকা আগে আরেক পুরুষকে ভালোবেসেছে,মিষ্টি হেসে কথা বলেছে,যত্ন নিয়েছে,তার সাথে প্রেমময় সময় কাটিয়েছে ,তখন কেমন লাগবে?গা জ্বালা করবে না?”
ফিচেল হাসে শাফিন।এদিক-ওদিক চোখ ঘুরিয়ে মৃদু গলায় বলেঃ” আমাকে এই গল্প শোনাতে এসো না বেয়াই মশাই।আমি আমার গার্লফ্রেন্ডের চৌদ্দতম বয়ফ্রেন্ড। আর সে আমার কততম তার হিসাব নেই।এসব ছোট-খাটো বিষয়ে এখন আর আমার গা জ্বলে না।ওই যে কে যেন বলেছিল না,সব প্রেমই প্রথম প্রেম।কথাটা আমার সেই লাগে।ভাই এই বয়সে প্রেম না করলে কবে করব? বুড়ো বয়স তো নাতি-পুতিদের সাথে গল্প করার বয়স।তখন বুক ফুলিয়ে বলতে পারব–তোদের দাদু জোয়ানকালে মেয়েদের চোখের মনি ছিল।উফ! কি একটা ভাবের কথা।আর তোমাদেরকে দেখলে আমি অবাক হই।এক মেয়ের পিছনে ঘুরতে বিরক্ত লাগে না? পৃথিবীতে কি মেয়ের অভাব?ওই যে দেখ ওই নার্সটাও কিন্তু সুন্দর।আমাদের দিকে কয়েকবার তাকিয়েছে।আমাদেরকে হয়তো তার ভালো লেগেছে।তুমি যদি বলো তো তোমার জন্য ঠিকঠাক করে দিতে পারি।কি বলো,করব?”
ইরফান দু’হাত একসাথে করে মাফ চাওয়ার ভঙ্গিতে বলেঃ” না ভাই,মাফ চাই।বহু রানী জয় করার সাধ্য আমার নাই।আমি একজন নিয়েই সন্তুষ্ট। তোমার মতো বারো….
_” আহ,আস্তে ইরফান।আমি জানি তোমার মুখ খারাপ।তাই বলে সামনাসামনি স্ল্যাং ইউজ করবা?আমারও মানসম্মান আছে।আচ্ছা,এসব বাদ দেও।আমাদের বাড়ির খবর জানো কিছু? কেমন আছে সবাই?”
_” ভালো। তবে তোমার জন্য চিন্তা করছে সবাই।”
_” হ্যাঁ, সেটা ত করবেই।কতদিন যোগাযোগ হয় না!আচ্ছা তবে থাকো।আমি এখন আসছি।”
_” এতো তাড়াতাড়ি? ”
_”হুম।কাজ আছে একটু।ফ্লেক্সিলড থেকে ফোন করতে হবে,দুটো ঘুমের ঔষধ কিনতে হবে, তারপর বাড়ি ফিরতে হবে।দেরি করলে যদি আবার কেউ সন্দেহ করে।”
কিছুক্ষণ ভাবে ইরফান।ভাবুকের মতো বলেঃ” তোমার কাছে তো ফোন নেই,তাই না?”
_” হুম।আমার ত্রিশ হাজার টাকার ফোন।ওই শালা কি করেছে আল্লাহ মালুম।ফোনটা না থাকায় বিপদে আছি।”
_” আমার কাছে দুটো ফোন আছে।তুমি একটা নিয়ে যাও শাফিন।তোমার কাজে লাগবে।”
মনে মনে খুব খুশি হয় শাফিন।একটা ফোনের খুব দরকার এখন।খুশিতে গদগদ হয়ে বলেঃ” তোমার সমস্যা হবে না তো?”
_” না।একটাই কাজে লাগে আমার।আর তোমার কাছে একটা ফোন থাকলে আমারও সুবিধা।সময়ে-অসময়ে খোঁজ-খবর নিতে পারব।”
_” না,ওটা বোধহয় পারবে না।কারণ,ফোনটা লুকিয়ে রাখব।তাই বেশিরভাগ সময় হয়তো বন্ধ থাকবে।”
_” তাহলে তুমিই সময় করে ফোন দিও।বুঝতেই পারছো,কোনো খোঁজ-খবর না পেলে আমার চিন্তা হবে।”
_” আচ্ছা।”
ব্যাগ থেকে ছোট-খাটো একটা ফোন বের করে ইরফান।দুটো ফোন এনে ভালোই হয়েছে।প্রয়োজনে কাজে লাগলো।শাফিনের হাতে ফোনটা দিতে দিতে বলেঃ” আমি এখন কি করব? জমিদার বাড়িতে না গেলে আমার মনটা খচখচ করবে।”
_” তুমি এখন ঢাকার বাস ধরবে।তারপর এই ভাঙাচোরা হাত-পা নিয়ে নিজের বাড়িতে যাবে।”
অবুঝের মতো এক আবদার করে ইরফান।নরম গলায় বলেঃ” আমাকে একটু তোমার সাথে নিয়ে যাও না।ওখানে বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিয়ো,প্লিজ।তথা এতো বাজে একজনের সাথে আছে,এতোদূর থেকে আসার পরে ওকে একনজর না দেখলে ভালো লাগবে না আমার।নেয়া যায় না আমাকে?”
_” নেওয়া যায়। তবে কাল সকালেই তোমার জানাজা পড়ার ইচ্ছে আমার নেই।মরার এতো শখ কেন?আর কেউ না চিনলেও তো তথা তোমাকে চেনে।ওর মুখ দিয়ে একবার তোমার পরিচয় বের হলেই হয়েছে।তুমি শেষ।তাছাড়া, ওখানে যেয়েই কি করবে?আহমেদ ইউসুফের হাত থেকে প্রেমিকাকে রক্ষা করবে?”
_” সাধ্য থাকলে করতাম।কিন্তু ওই লোক নাকি অনেক ডেঞ্জারাস?”
_” হুম, হাড় বজ্জাত।শয়তানের ছাও একটা।”
আরো দু-চার মিনিট কথা বলে শাফিন।আলগোছে হাত ঘড়ির দিকে একবার নজর বুলায়।সন্ধ্যা সাতটা।বেশি দেরি করা যাবে না।সোনালী ঘুমের ঔষধ দিয়ে কি করবে কে জানে?এতো জিজ্ঞেদ করলো কিন্তু মেয়েটা কিছুতেই বললো না। গোঁয়ার একটা! সবকথা পেটে রেখে কিভাবে বেঁচে আছে এই মেয়ে?
***
নিচতলায় এসে এদিক-ওদিক নজর বুলায় সোনালী।টেবিলের ওপাশে,সোফার পাশে,দরজার কাছে।না, কেউ নেই।সবাই বোধহয় যে যার ঘরেই আছে।সোনালী বিরাট একদম নেয়।পা টিপে টিপে পৌঁছে যায় শাফিনের ঘরে।মামুনের ঘরের পাশের ঘরটাতেই সমীর ও শাফিন থাকে।সমীরও শাফিনদের দলের।শাফিনের মতো সেও গোয়েন্দা সংস্থার লোক।
ঘরে ঢুকে দ্রুতহাতে দরজা আটকে দেয় সোনালী।সমীর ও শাফিন বিছানায় বসে ছিল।সোনালীকে দেখে উঠে বসে।সোনালী বিছানার কাছে আসতেই ধমক দেয় শাফিন।
_” তোকে এখানে কে আসতে বলেছে?সেন্স নাই কোনো?পাশের ঘরেই মামুন আছে।তুই ভাবিস না এতোরাতে বাইরে ঘুরঘুর করতে দেখলে মামুন তোকে ছেড়ে দেবে।গলায় পারা দিয়ে মেরে ফেলবে।”
খুব বিরক্ত হয় সোনালী।শাফিনের দিকে আঙুল।তুলে বলেঃ” বেশি কথা বলবি না,শাফিন্না।এতোরাতে আমি গল্প করতে আসিনি।যা আনতে বলেছিলাম,তা এনেছিস?”
_” হুম,দাঁড়া দিচ্ছি।”
এতোক্ষণে মুখ খোলে সমীর।শাফিন ও সোনালীর জুনিয়র সে।বিনয়ী ভঙ্গিতে বসেঃ” কোনো প্রমাণ পেয়েছেন,ম্যাম?”
_” না।তবে,আজকে গোডাউনে যাব।দেখি কিছু পাওয়া যায় কিনা।”
শাফিন দুটো ট্যাবলেট এগিয়ে দেয় সোনালীর কাছে।বিরক্ত গলায় বলেঃ” ঘোড়ার ডিম আনতে দিয়েছিস।বাজারে একটাই ফার্মেসী।সেখানে আবার একটা পিচ্চি ছেলে বসেছিল আজ।সে নাকি মালিকের ছেলে।আমি তো আর ঔষধের নাম জানি না।ওর কাছ থেকেই এই ঔষধ আনতে হলো।বহু গবেষণা করে এই দুটো ট্যাবলেট দিয়েছে।ঠিকঠাক দিয়েছে নাকি দেখ তো?
_” কি ঔষধ এটা? ক্যা-ল-ব ডি,ক্যালব ডি?এটা ঘুমের ঔষধ? “—হতভম্ব কন্ঠে প্রশ্ন করে সোনালী।শাফিনের নির্বুদ্ধিতা যেন মেনে নিতে পারছে না।
সোনালীর প্রশ্নের উত্তর শাফিন দিতে না পারলেও সমীর দেয়।বিজ্ঞের মতো মাথা নেড়ে বলেঃ” না, ক্যালব ডি তো ঘুমের ঔষধ না।এটা ক্যালসিয়ামের ঔষধ। আমার আম্মা প্রতিদিন এটা খায়।”
বোকার মতো চেয়ে থাকে শাফিন।মিনমিন করে প্রশ্ন করেঃ” কি বলছো, সমীর? এটা তো ঘুমের ঔষধ। ছেলেটা আমাকে বলল।”
_” আরে না, স্যার।এটা ক্যালসিয়ামের ঔষধ।”
_” কিন্তু আমি তো…., আহ..”
পায়ের জুতো ছুঁড়ে মেরে শাফিনের মুখ বন্ধ করে সোনালী।দাঁত কিড়মিড় করে বলেঃ” একটা কাজ ঠিকমতো করতে পারিস না।এটার নাম শুনলেই তো বুঝা যায়,এটা কীসের ঔষধ। বলদ জানি কোন দেশের।এটা খাইয়ে মামুনকে ঘুম পাড়াবো?আজকেও গোডাউনে যাওয়া হলো না।আমি আর পারব না।এরপর তুই যাবি।মামুনের মানিব্যাগে একগোছা চাবি দেখেছিলাম।আজকেই ওটা হাতাতে পারলে কি লাভটাই না হতো! কত প্ল্যান করেছিলাম,সব নষ্ট হয়ে গেল।ধুর,ভালো লাগে না।”
দুই ভাই-বোনের দিকে একবার নজর বুলায়।শাফিন মাথা নিচু করে আছে।সোনালীও কপালের দু’পাশে দু-আঙুল চেপে মাথা নিচু করে রেখেছে।তার সব পরিকল্পনা নষ্ট হওয়ায় খুবই রেগে আছে সে।সমীর এবার মুখ খুললো।সোনালীর চিন্তা কমানোর জন্য বললঃ” আমার কাছে ক্লোরোফর্ম আছে ম্যাম।আপনার হয়তো কাজে লাগবে।দেব?”
ঝট করে মাথা তোলে সোনালী।কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করেঃ” কি আছে?”
_” ক্লোরোফর্ম।ঘুমের ঔষধ দিয়ে যেই কাজ করবেন সেটা তো এটা দিয়েও করা যায়।”
_” সত্যিই আছে তোমার কাছে!”—সমীরের কথা যেন বিশ্বাস কর‍তে পারে না সোনালী।এই অসময়ে ক্লোরোফর্ম এক অমূল্য নেয়ামত।
_” আমার কাছে সত্যিই আছে ম্যাম।দাঁড়ান আপনাকে দেখাচ্ছি।”
সমীর উঠে গেলে নড়ে-চড়ে বসে শাফিন।গলায় একরাশ প্রশ্ন নিয়ে বলেঃ” এটা দিয়ে কি হবে?”
_” আমার আশিককে ঘুম পাড়িয়ে চাবি চুরি করব।”
_” অনেক তাড়াতাড়ি হয়ে যায় না?আজকে মোটে দশ তারিখ।”
_” হোক দশ তারিখ।আমার আর ভালো লাগছে না এখানে।প্রত্যেকদিন জ্বর আসে।শরীরটা আরো অসুস্থ হওয়ার আগেই কাজ গুছিয়ে রাখতে চাই।”
চিন্তিত দেখায় শাফিনের মুখ।ডান হাতের উল্টো পিঠে সোনালীর কপাল ছুঁয়ে বলেঃ” আবার জ্বর এসেছে নাকি?”
_” একটু আগে ছিল।”
_” তবে আজ আর যেয়ে কাজ নেই।আমি তো আছি।তোর কাজ আমি শেষ করে রাখবনি।”
_” চাবি জোগাড় করতে পারবি না তুই।আমি একটু চেষ্টা করলেই পারব।মামুনের সাথে আমার খাতির ভাল।শত হলেও আমি তার পেয়ারের মানুষ”—মুখ টিপে হাসে সোনালী।ততোক্ষণে সমীরও এসে গেছে।হাতের শিশিটা সোনালীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলেঃ” এই যে ম্যাম।”
_” এটা কেন এনেছিলে তুমি?”
_” আমার বাবাও এস.বি অফিসার ছিলেন।বাবাকে দেখতাম কোনো মিশনে যাওয়ার আগে রিভলবারের পাশাপাশি ছুঁড়ি,দড়ি,ক্লোরোফর্ম, আরো হাবিজাবি অনেককিছু নিয়ে যেত।তাই আমিও এবার বাবার প্রসেস ট্রাই করলাম।ভালোই হলো।কাজে লেগে গেল।”
_ ” বুদ্ধিমানের কাজ করেছো।এখন শোন শাফিন,আমি একটু পরেই বেরোব।মামুনের কাছ থেকে চাবি জোগাড় করে গোডাউনে যাব।কিছু পেলে তো ভালোই।আমি আর এখানে থাকব না।প্রমাণ নিয়ে সোজা ঢাকা চলে যাব।এরপর ইউসুফকে ঢাকা অবধি নিয়ে যাওয়া তোদের কাজ।”
_” আর যদি কিছু না পাস?”
_” পাব না কেন?কিছু না কিছু তো নিশ্চয়ই থাকবে।আর না পেলে কি আর করার। আরো অপেক্ষা করতে হবে।”
শাফিন উঠে দাঁড়ায়। পকেটে হাত গুজে বলেঃ” ঠিক আছে চল তাহলে।এখনই বেরিয়ে পড়ি।”
অবাক হয় সোনালী।এক ভ্রু উপরে তুলে বলেঃ” তুই কোথায় যাবি?”
_” তোর সাথে।তোকে একা ছাড়ব নাকি?”
_” আমি বাচ্চা না শাফিন।আমি পারব।পাগলামি করিস না প্লিজ।”
_” কেন আমি সাথে গেলে কি সমস্যা?”
_” অনেক সমস্যা।আমি আমার সময় -সুযোগ বুঝে তারপর যাব।তুই সাথে থাকলে ঝামেলা হবে।”
_” তাহলে একাই যাবি?”
_” হুম।”
দু-পা এগিয়ে আসে শাফিন।বোনের মাথায় আদুরে ভঙ্গিতে ডান হাত বুলিয়ে দেয়।
_” সাবধানে থাকবি সোনালী। যেকোনো সমস্যা হলেই আমাকে জানাবি,যত রাতই হোক।আমি জেগে থাকব।আর সকাল সকাল আপডেট দিস।”
_” আচ্ছা।জেগে থাকতে হবে না।ঘুমিয়ে থাক।দুটো রিভলবার নিয়ে যাচ্ছি।তোর বোন দূর্বল নয়।”
_” আমি জানি।তবুও চিন্তা হয়।আল্লাহ তোকে ভালো রাখুক।”
_” আসছি।”
_” আচ্ছা।”
আবারো দরজা খুলে বাইরে উঁকি দেয় সোনালী।কচ্ছপের মতো মাথা বাড়িয়ে বসার ঘরটা দেখে।না কেউ নেই।টুকটুক পায়ে হেঁটে যাওয়ার আগেই পিছু ডাকে সমীর।মৃদু গলায় বলেঃ” বেস্ট অফ লাক, ম্যাম।আমরা আপনার জন্য অপেক্ষা করব।”
পিছু ফিরে একবার মুচকি হাসে সোনালী।ঠোঁট নেড়ে ইশারায় বলেঃ” আমি ফিরে আসব।আল্লাহ হাফেজ।”
খোলা দরজা দিয়ে আবার একছুটে বেরিয়ে যায় সোনালী।কেউ দেখার আগেই তাড়াতাড়ি রুমে যেতে হবে।
****
ইউসুফ হাত ও পায়ের দিকে একবার নজর দিলো।পুড়ে গেছে জায়গাগুলো।এখনও ব্যাথা করে। টি-শার্ট আস্তে আস্তে গায়ে দেয় ইউসুফ। হাতটা পুড়ে ভালো হয়নি।যেকোনো কাজ করতেই এখন বেগ পেতে হয়।
_” আসব সাহেব?”
ইউসুফ দরজার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।তথা দাঁড়িয়ে আছে।তার দিকে কয়েক পা এগিয়ে যেয়ে বলেঃ” কামিনী ফুলের সুবাস ছড়াতে অনুমতি লাগে?”
_” সারাদিন কি এসব কথা ঠোঁটের উপরেই থাকে?”
_” হুম।পঁয়ত্রিশ বছর যাবৎ সিঙ্গেল থাকার পরে প্রেমিকা যখন চোখের সামনে থাকে,তখন এসব কথা বন্যার পানির মতো বেরিয়ে আসে।”
_” বুঝেছি।এখন রাস্তা ছাড়ুন।হাত-পায়ের কি খবর এখন?”
_” ভালো।আজকে আবার আমার ঘরে? কোনো প্ল্যানিং আছে নাকি?”
_” উঁহু, ঘুম আসছিলো না। তাই চলে এলাম গল্প করতে।”
_” কিন্তু আমায় যে এখন বেরোতে হবে।”
_” এখন! এই রাতে কোথায় যাবেন?”
_” একটু কাজ আছে।কয়েকটা জায়গায় ফোন করতে হবে।অনেকদিন কাজের খোঁজ-খবর নেওয়া হয় না।একটু খোঁজ নিতে হবে আরকি।”
মন খারাপ করে তথা।মুখটাকে চিমসে বলেঃ” আমি আরো ভাবলাম আপনি ফ্রি আছেন।”
_” মন খারাপ করবেন না কামিনী ফুল।একটুখানি কাজ।আমি একটু পরেই ফিরে আসব।আপনি জেগে থাকবেন।”
_” না তাহলে আজ আর দরকার নেই।আমি বরং ঘুমিয়েই যাই।কাল কাজ আছে আমার।”
_” আচ্ছা, আপনার ইচ্ছে।”
তথা বেরিয়ে গেলে সেদিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে ইউসুফ।একটু মিথ্যা বলেছে সে।ইউসুফ তো এখন গোডাউনে যাবে।কাল প্রোডাক্টগুলো আসার পর একবারও দেখা হয়নি।একবার দেখতে হবে।নিজের চোখে না দেখা অবধি মনটা খচখচ করবে তার।অবশ্য এখনো করছে।কত কষ্ট করে কামিনী ফুল এসেছিল তার ঘরে।আবার ফিরে গেল।কাজটা কি ঠিক হলো? আজ বোধহয় গোডাউনে না যেয়ে গল্প করলেই ভালো হতো।কামিনী ফুলের কত আশা ছিল।মেয়েটা নিশ্চয়ই রাগ করেছে!
***
মামুনের জ্যাকেটের হাতার কাছটায় স্প্রে করে নিলো সোনালী।খুব বেশি ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করেনি সে।বেশি ব্যবহারে মৃত্যু হতে পারে।মামুনকে মারার ইচ্ছে নেই তার।কয়েক ঘন্টা অজ্ঞান করে রাখতে চায় শুধু।সিঁড়ি বেয়ে ধীরে ধীরে নিচে নামে সোনালী।তথাকে ইউসুফের ঘরে ঢুকতে দেখেছে।বিষয়টা স্বস্তি দিলো সোনালীকে।ইউসুফ সেখানে ব্যস্ত থাকুক,মামুন অজ্ঞান থাকুন।মাঝ দিয়ে সোনালী একবার গোডাউন থেকে ঘুরে আসুক।দ্রুতগতিতে নিচে নেমে মামুনের ঘরের সামনে যায় সোনালী।দরজায় ঠকঠক আওয়াজ তোলে।মামুন হয়তো ঘুমিয়ে ছিল।প্রায় মিনিট পাঁচেকের মতো দরজা ধাক্কানোর পর ভিতর থেকে আওয়াজ শোনা যায় মামুনের।সে গলা বাড়িয়ে প্রশ্ন করছেঃ” কে?”
উত্তর দেয় না সোনালী।কড়া নেড়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।ভিতর থেকে মামুনের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।সোনালী চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।এখন কথা বলার সময় নেই।
এতোরাতে নিজের ঘরের সামনে সোনালীকে দেখে অত্যন্ত অবাক হয় মামুন।ঘুমঘুম চোখগুলোকে দু-হাতে রগড়ে নেয়।বিস্মিত কন্ঠে বলেঃ” ছোট্ট মেয়ে,আপনি এতো রাতে কোনো সমস্যা?”
_” হুম।আগে আমাকে ঘরে ঢুকতে দিন।”
মামুনকে ঠেলে ঘরে ঢুকে সোনালী।দ্রুতহাতে ছিটকিনি আঁটকে দেয়।মামুন হতভম্বের মতো চেয়ে থাকে।বোকার মতো প্রশ্ন করে ঃ” কি করছেন?”
_” কিছু না।এই আপনার জ্যাকেটের হাতার কাছটায় এতো গন্ধ কীসের? এতো গন্ধ,ছিঃ! আমার বমি আসছে।আপনি আমায় আরেকটা জ্যাকেট দিন তো।অনেক ঠান্ডা লাগছে।জ্যাকেট না হলে মরেই যাব এখন।”
কপাল কুঁচকায় মামুন। গলায় সন্দেহ নিয়ে প্রশ্ন করেঃ” কি বলছেন এগুলো? দেখি কোথায় গন্ধ?”
সোনালী নির্দিষ্ট হাতাটা এগিয়ে দেয় মামুনের দিকে।নাকের কাছে নিয়ে একবার গন্ধ নেয় মামুন।একবার,ঠিক একবার।ব্যাস, সেখানেই চিৎপটাং সে।মাটিতে লুটিয়ে পড়ার আগে দু-হাতে আগলে নেয় সোনালী।টেনে -হিঁচড়ে মামুনের অসার শরীরটাকে খাটের উপর ফেলে।দ্রুতগতিতে এদিক -ওদিক নজর দেয়।হ্যাঁ, ওই তো।বেডসাইড টেবিলের উপর মানিব্যাগটা দেখা যাচ্ছে।সেদিকে যেন উড়ে যায় সোনালী।সকালে এটার ভিতরেই চাবির গোছা দেখেছিল সে।
সোনালীর ভাগ্য ভালো বলতে হয়।একগোছা চাবি পেয়ে যায় মুহূর্তেই।হয়তো চাবিটা এখানেই রাখে মামুন।একগোছা চাবির কোনটা গোডাউনের চাবি তা জানা নেই।এতো সহজে চাবি পেয়ে যাবে তা মোটেও ভাবেনি সোনালী।খুশিমনে চাবি হাতে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।যাওয়ার আগে মামুনের ঘরের দরজা আঁটকে দেয় সোনালী।এদিক-ওদিক তাকায় না।বাড়ির দরজা খুলে পা বাড়ায় বাইরের দিকে।
***
রাত দেড়টা।জমিদার বাড়ির পিছনে একটা মেয়ে দৌড়াচ্ছে।সাদা শার্ট,কালো জিন্স আর একজোড়া কেডস পায়ে দেওয়া সোনালী মৃদু গতিতে দৌড়াচ্ছে। উদ্দেশ্য অর্জুন গাছের সামনের গোডাউনে পৌঁছানো।বিরাট আমগাছের সামনে যেতে থমকে দাঁড়ায় সোনালী।ঘাড় ঘুড়িয়ে এদিক-ওদিক,সামনে-পিছনে তাকায়।মনে হচ্ছে কেউ অনুসরণ করছে। খুব মনোযোগ সহকারে সোনালীর পায়ের চিহ্ন লক্ষ্য করছে কেউ।অস্থির লাগে সোনালীর।কার্তিকের রাতের মৃদু ঠান্ডায় ঘামতে শুরু করে।সত্যিই কি কেউ পিছু নিয়েছে? কে হতে পারে? শাফিন? না করার পরেও পিছু পিছু এলো?সোনালী তীক্ষ্ম নজরে এদিক-ওদিক তাকায়।রিভলবার বের করতে যেয়েও করে না।কাউকে দেখা যাচ্ছে না তো আশেপাশে। চারদিকে আধো আলো,আধো অন্ধকার।খোলা আকাশের চাঁদে আজ আলাও বেশি।চারপাশে সাবধানী নজর বুলিয়ে আবারো রাস্তা ধরে সোনালী।কেউ নেই।মনের ভুল তাড়িয়ে দ্রুতপায়ে অর্জুন গাছের দিকে ছুটে যায় সোনালী
আমগাছ থেকে অর্জুন গাছের দূরত্ব বেশি নয়।সাত-আট মিনিটের মাঝেই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যায় মেয়েটা।এবার আর সামনের দরজায় চোখ দেয় না।হাজির হয় ঘরের পিছনের দিকে।একটা বিশাল স্টিলের দরজায় আধ-পুরোনো তালা ঝুলছে।তালার চেহারা বলে দেয় বহুবার ব্যবহার হয়েছে এটা।সোনালী মনে মনে হাসে।বুদ্ধি আছে বটে।সামনের দরজাকে কঙ্কালের মতো ফেলে রেখে এই দরজা ব্যবহার করা হচ্ছে।কত সতর্কতা! একে একে দু-তিনটা চাবি দিয়ে তালা খোলার চেষ্টা করে সোনালী।হচ্ছে না।একগাদা চাবির ভিতর থেকে সঠিক চাবিটা বের করতে বেশ বেগ পেতে হয়।ছোট্ট চাবিটাকে ব্যবহার করে বিরাট তালা খুলেই চওড়া হাসি দেয় সোনালী।সবকিছু এতো সহজেই হয়ে যাচ্ছে! কি আশ্চর্য! ভাগ্য আজ এতো সুপ্রসন্ন?
খুশিমনে দরজা খোলে সোনালী।ভেবেছিল পুরোনো দরজা,খোলার সময় ক্যাচক্যাচ শব্দ হবে।কিন্তু না।হলো না।কোনোরকম শব্দ ছাড়াই খুলে গেল দরজা।সোনালী চাবিটা পকেটে ঢুকায়।তালাটাকে হাতে নিয়ে ভিতরে ঢুকে।অন্ধকার ঘর।সোনালী টর্চ লাইট জ্বালে।আসার সময় পকেটে করে একটা টর্চ লাইট নিয়ে এসেছিল। মুহূর্তেই চোখের সামনে স্পষ্ট হয় নানা আকারের কতগুলো বাক্স।একটা কাঠের চেয়ারও চোখে পড়ে।চেয়ারের উপর লাইট রেখে পিছু ফিরে।দরজাটা লাগাতে হবে তো।
কিন্তু ঠিক তখনই, তখনই সোনালীর নিঃশ্বাস আঁটকে আসে।হৃৎপিণ্ড মনে হচ্ছে বেরিয়ে আসবে।সোনালীর গলা শুকিয়ে যায়,মাথা চক্কর দেয়।দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইউসুফ।সোনালী চোখ বন্ধ করে আবার খুলে।হতে পারে এটা মনের ভুল।ইউসুফ তো তথার সাথে ছিল।এখানে কি করে আসবে? তবে ভুল ভাঙে সেকেন্ডের মাঝেই।পকেটে দু-হাত গুজে এদিকেই আসছে সে।দরজাটাকে আঁটকে দিয়ে সোনালীর দিকেই আসছে। গুনগুন করে গান গাইছে ইউসুফ। তার ঠোঁটের কোনে বিজয়ের হাসি।সোনালী আলগোছে হাত ঢুকায় জিন্সের পকেটে।হ্যাঁ, রিভলবারটা এখানেই আছে।বিপদ থেকে বাঁচার একমাত্র অবলম্বন।
ইউসুফ সোনালীর বেশ কাছাকাছি চলে আসে।নরম গলায় বলেঃ” আসসালামু আলাইকুম, অফিসার সোনালী আহমেদ।এতো তাড়াতাড়ি আপনার আসল রূপ দেখব তা কিন্তু ভাবিনি আমি?আমাকে এখানে আশা করেছিলেন আপনি?”
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here