হৃদয়েশ্বরী #লেখিকা-সাদিয়া মেহরুজ দোলা #পর্ব-১২ + ১৩

0
60

#হৃদয়েশ্বরী
#লেখিকা-সাদিয়া মেহরুজ দোলা
#পর্ব-১২ + ১৩

( দূর্বল হার্টের অধিকারী কেও আজকের পর্বের মধ্যাংশ পড়বেন না। মধ্যাংশে নৃ’শং’স খু*নের বিবরণ দেয়া আছে।)

-‘ আমাকে বিয়ে করবে এরিক?’

এরিক বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো। তূর্শীর মাত্র বলা কথাটি বারংবার সুরেলা ধ্বনিতে কর্ণকুহরে ভেসে আসছে। এতোকিছু করার পরও তূর্শী তাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? উঁহু! এরিক চমকিত হয়ে বলল,

-‘ তুমি কি আমায় মে*রে ফেলবে তূর্শী? মে*রে ফেলার পূর্ব মূর্হতে একটু স্বস্তি প্রদানের জন্য এমন কথা বলছো? ‘

তূর্শী হতাশ দৃষ্টিতে তাকায়। এরিক এতো বোকা কেনো? লোকটা কি একবার তার প্রণয় মিশ্রিত চাহনি দেখতে পারেনা? বুঝতে পারেনা অন্তঃস্থলের অন্তর্লীন কথা? যদিও পরিস্থিতি সাপেক্ষে এরিকের বলা কথায় কোনো খুঁত নেই। এ সময় এই কথা বলাটা স্বাভাবিক। ঝকঝকে কাঁচের জানালার কপাট উন্মুক্ত। সেদিক দিয়ে বহির্ভাগে দৃষ্টি ফেলে সে। ঢাকা থেকে আসা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট দু’জনের ওপর হামলা করতে চেয়েছিলো এরিক। দু’দিন পর সঙ্গোপনে এই তথ্য পেয়েছে তূর্শী। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো তার। এরিক কেনো এমন করলো?
পরিশেষে এরিক যখন বলল ট্রেনিং দিতে আসা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট দু’জনের মাঝে উশান রেজওয়ান আছে এবং একবার সে যদি যশোরে পা রাখে তাহলে তূর্শীর রফাদফা করবে সর্বপ্রথম। তাই উশানকে আগে থেকে মে*রে ফেলার বুদ্ধি করেছে এরিক এ নিয়ে কয়েকবার। কিন্তু সে ব্যার্থ প্রতিবারই। তূর্শী অন্তঃকরণে বেশ পাকাপোক্ত এক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।

তূর্শী উঠে দাঁড়িয়ে কাবার্ডের কাছে এগোয়। বাসাটা তার না হলেও এই বাসার প্রতিটা কর্ণার, কোথায় কি আছে তা একদম ঠোটস্থ তার। নিজের বাসা সম্পর্কেও হয়তো এতকিছু জানা নেই তার যতটা এরিকের বাসা সম্পর্কে জানে। কাবার্ড থেকে কালো রঙের শেরওয়ানি বের করে সে। গতবার ভারত থেকে আসার পথে এনেছিলো এরিকের জন্য। এই ছেলে পরেছে কিনা কখনো কে জানে? শেরওয়ানি এরিকের পানে ছুঁড়ে ফেলে তূর্শী কাঠ কাঠ গলায় বলল,

-‘ জলদি চেঞ্জ করে আসো। সাওয়ার নিবে। ‘

এরিক উঠে দাঁড়ালো। বিনাবাক্যে তোয়ালে নিয়ে এগোল বাথরুমের দিকে৷ আপাতত চুপ থাকাই শ্রেয়। কিছু বললে পরিবেশ তখন শান্ত থেকে উল্টো হয়ে যাবে। তূর্শী একজন কে ফোন করে এরিকের বাসায় কাজি পাঠাতে বলে। শেষে সে অন্য রুমে চলে যায়। পাশের রুমটা এরিক তূর্শীর জন্য তৈরি করে রেখেছে অনেক আগেই। রুমে গিয়ে খয়েরী রঙের লেহেঙ্গা নিয়ে সে দৌড় দেয় বাথরুমে। হাতে সময় সীমিত।

ঘন্টাখানেক পর! তারা দু’জন এসে মিলিত হয় নিজ তলায়। এরিকের চোখে বিষ্ময়। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তার। কাজি এসে বসে সোফায় সাথে তার কয়েকজন বন্ধু।তূর্শী, এরিক সামনের ডাবল সোফায় বসতেই কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করে। কবুল বলতে বলা হলে অতি দ্রুত তূর্শী তিন কবুল বলে নেয়। সবশেষে এরিক কে কবুল বলতে বলা হয় যখন তখন সে আলত করে অশ্রু বর্ষণ করে কবুল বলে। সামনে বসে থাকা এরিকের বন্ধুরা তখন হতভম্ব, বাকরুদ্ধ! তারা স্ব-শব্দে হেসে ফেলে। প্রায়ই দেখে এসেছে কবুল বলার সময় ‘বউ ‘ কেঁদে কবুল বলে আর এখানে দেখি পুরোই উল্টো। কনে হাসছে, পাত্র কাঁদতে কাঁদতে কবুল বলছে। কি আশ্চর্য! বিয়ের কার্যক্রম শেষ হতেই ‘ আলহামদুলিল্লাহ ‘ বলে দোয়া করলো সকলে। দোয়া শেষে এরিক নিজের দু’জন বন্ধুর সাথে বাক্যলাপে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। তূর্শী তাকায় সেদিকে। কি সুদর্শন এক মানব তার স্বামী হয়ে গেলো। কিন্তু এরপর? ডিপার্টমেন্টে কি জবাব দেবে সে? আজই যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

_

দিগন্ত গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে। চিনচিন ব্যাথার প্রকোপ’টা কমছে না এখনো। কি মুশকিল!দাঁত নিশ্চিত দুই, একটা নড়ে গিয়েছে। অসহায় দৃষ্টিতে সে তাকালো তীব্রের মুখোশ্রীর প্রতি। তীব্র ঠোঁট টিপে হাসলো। ইশারায় জানান দিলো, ‘ এটারই প্রাপ্য তুমি। ‘ দিগন্ত নিষ্প্রভ চাহনি সামনে এলিয়ে দেয়। মীরার নাজেহাল অবস্থা কাঁদতে কাঁদতে। রুহি তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। উশান নেই অন্ধকারচ্ছন্ন রুমটায়। তাদের এই আঁধারে বিলীন কক্ষে বসিয়ে রেখে সে বাহিরে গিয়েছে।

কিয়ৎক্ষণ বাদে। থমথমে মুখোশ্রী নিয়ে কক্ষে আগমন ঘটে উশানের। হাতে ল্যাপটপ আর কিছু ফাইল। উশানকে দেখেই মীরা তেড়েঁ এসে বলল,

-‘ আমার উত্তর দিচ্ছেন না কেনো? বারবার পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। খালামনি বাবার প্রথম স্ত্রী মানে? ঐ ছেলেটা কি বলল তখন? ‘
দিগন্তের দিকে আঙুল তাক করে বলল মীরা।

দিগন্ত মনে মনে দোয়া,দরুদ পড়ছে। অন্তঃকরণে আকুতি-মিনুতি করছে তার দিকে আর কোনোরূপ দৃষ্টি না দেয়া হোক। এমনিতে এক থাপ্পড় খেয়ে তার নাজেহাল অবস্থা। উশান পুনরায় চড় দিলে দিগন্ত শেষ! উশান আঁড়চোখে রক্তিম নেত্রে তাকাতেই দিগন্ত চুপসে যায়। হাতের ল্যাপটপ আর ফাইল দু’টো সোফায় রেখে পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়ায় উশান। মোলায়েম কন্ঠে বলে,

-‘ এতটুকু ব্যাপারে অতোটা অস্থির হতে নেই মীরা। শান্ত হ! অনেককিছু জানার আছে তোর। সোফায় বস। ‘

মীরা বসলো৷ অস্থিরতায় হাত, পা কাঁপছে প্রবল। নেত্রযুগল টলমলে। ওষ্ঠাধর কম্পমান। অন্তঃকরণ বলছে সে যা শুনেছে সব মিথ্যা। সব! তবুও পুরো ঘটনা না জানা অব্দি শান্তি মিলবে না কিছুতেই। বসার সাথে সাথেই উত্তেজিত হয়ে মীরা বলে উঠলো,

-‘ জলদি বলুন! ‘

উশান তার সাথে আনা ফাইল দু’টো মীরার নিকট এগিয়ে দেয়। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ফাইল দু’টো হাতে নিলো সে। উশান জলদগম্ভীর কন্ঠে বলল,

-‘ ফাইল দু’টো পড়। প্রথমে কালো ফাইলটা পড়বি তারপর নীলটা। তোর যা জানার আছে সব এখানে পাবি। ‘

মীরা দৃষ্টি দেয় কালো ফাইলটায়। ওপরে খুব সুন্দর করে মোটা অক্ষরে লিখা, ‘ রুমিশা মাহমুদ হ*ত্যার সারসংক্ষেপ এবং মূল ঘটনার বিশ্লেষণ ‘! মীরা চমকিত হয়। চমকপ্রদ দৃষ্টি ফেলে উশানের পানে। রুমিশা বাংলাদেশের একজন নির্ভীক,বিচক্ষণ সাংবাদিক ছিলেন। বেশ কয়েকবছর আগে তাকে হ’ত্যা করা হয় অতীব রহস্যজনক ভাবে।খু*নিকে আদও খুঁজে পায়নি। মীরা অবাক হয়ে বলল,

-‘ রুমিশা মাহমুদের হ’ত্যার কাহিনি এখানে কেনো? আপনার কে হয় ইনি? ‘

উশান জবাবহীন। ল্যাপটপে সকল মনোযোগ তার।তীব্র তা দেখে তপ্তশ্বাস ফেলে বলল, ‘ উশানের আসল মা রুমিশা মাহমুদ। ঊষা আন্টি! উনি সৎ মা উশানের। আয়মান আঙ্কেলের দ্বিতীয় স্ত্রী। বিস্তারিত ফাইলে আছে। পড়ো। ‘

ফাইল খুলতেই দৃশ্যমান হয় প্রথম লিখা বিশেষ ভাবে কয়েকটা শব্দ। তারপর নিচে বিশদ বিবরণ।

হ*ত্যার পূর্ববর্তী ঘটনা এবং হ*ত্যাকারীর পরিচয়:

রুমিশা মাহমুদ। পেশায় সাংবাদিক। আয়মান রেজওয়ানের সাথে তার প্রণয়ের সম্পর্কের সময়সীমা ২ বছর। তার হ*ত্যাকরী তারই আপন বড় বোন রাহনুমা মাহমুদ। হ*ত্যায় সাহায্যকারী ঊষা রহমান।

হ’ত্যা করার কারণঃ

দেশে কয়েকবছর ধরে চলা নারী গুম হওয়া, নারী ধ’র্ষ’ণ, রাত – বিরাতে মানুষ তুলে নিয়ে পরদিন সেই মানুষের শরীরের কিডনি, চোখ, লিভার ইত্যাদি গায়েভ করে সেই মানুষটাকে আধমরা করে ফেলে যাওয়া অতি গোপনে। এসব কে করছে? মূল হোতা কে? তাকে ঘিরে যখন তুমুল সমালোচনা তখন সঙ্গগোপণে রুমিশা মাহমুদ তাদের সম্পর্কে তথ্য বের করেন। এসব করেছে এক সন্ত্রাসীর দল। সহজ ভাষায় বোঝার জন্য ‘ মাফিয়া ‘ আখ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাদের। পুলিশ, সি.আই.ডি, আর্মি ফোর্স এর তুমুল তদন্তে কয়েকজনকে আটক করা হলেও কোনো তথ্য উদ্ধার করা যায়নি। রিমান্ডে নেয়ার আগ মূর্হতে তারা নিজেদের হৃদপিণ্ডে পটাশিয়াম সা’য়া’না’ই’ড পুশ করে আ’ত্ম’হ’ত্যা করেছিলেন।

পুরো দেশের কড়া টহলে তখন নিস্তব্ধ ছিলো সেই সন্ত্রাসী টিম। কিন্তু তারা নিশ্চুপ হওয়ার পূর্বে প্রায় ৫ হাজার কিশোরী, নারীকে রাতা-রাতি নিয়ে গিয়েছে কিডন্যাপ করে। ঘটনার ২৩ বছর। এখনো তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ রুমিশা মাহমুদ সন্ত্রাসী দলের সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং মূল হোতা সম্পর্কে কিছু তথ্য পেয়েছিলেন এবং এটাই হয়ে দাঁড়িয়েছিলো তার অকাল, নৃ’শং’স মৃত্যুর কারণ। তার বড় বোন রাহনুমা! সন্দেহ করা সে নিজেও সেই সন্ত্রাসী দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। এই তথ্য পুলিশ, অন্যান্য ফোর্স জানতে পেরেছিলো তখন, যখন রাহনুমা কে আর ধরা-ছোয়ার সম্ভব ছিলো না। এই সন্ত্রাসী দলের কেও দেশের বাহিরে যায়নি আবার কেও কেও হয়তো গেছে বলে ধারণা করা হয়। যারা দেশে আছে তাদের আজ অব্দি কোনোভাবেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। রুমিশাকে হ’ত্যা করতে নির্দেশ দেয় সন্ত্রাসী দল থেকে৷ কারণটা ছিলো তাদের সম্পর্কে তথ্য জেনে যাওয়া।

হ’ত্যার করার পরিকল্পনা এবং সময়কালঃ

১৯৯৯ সালের ২৩শে মার্চ। রাত দশটা! রুমিশা মাহমুদ তার দুই ছেলে উশান ( বয়স-০৭) এবং ছোট ছেলে উজান ( বয়স-০৫)। দু’জনকে নিয়ে তখন একা বাসায় অবস্থান করছিলেন। তার স্বামী তখন দেশের বাহিরে। রাত ১১টার দিকে রাহনুমা এবং ঊষা আসে। ঊষা মূলত রুমিশার বান্ধবী। কাছের বান্ধবী হওয়াতে বাসার সেফটি লক জানতেন। বড় বোন রাহনুমার সাথে সম্পর্ক ভালো ছিলো না রুমিশার। সম্পর্ক ভালো না থাকার কারণ রাহনুমা সর্বদা কুপরামর্শ দিতেন রুমিশাকে। মানুষ এবং নিজের পেশার প্রতি যেই ভালোবাসা রুমিশার ছিলো তাকে ‘ সময় নষ্ট ‘ বলতেন তাকে। বোনের সাথে আরো কিছু কারণে খুব কম-ই রুমিশা রাহনুমার সাথে কথা বলতেন। যার দরুন বাসায় এতো সহজে ঢোকাটা তার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। ঊষা বাসায় প্রবেশ করার পথ সহজতর করে দেন।

ঊষা রাহনুমার সাথে তাল মেলানোর কারণ ছিলো আয়মান রেজওয়ান। আয়মান রেজওয়ান কে পছন্দ করতেন তিনি। কিন্তু আয়মান রুমিশাকে পছন্দ করার স্বার্থে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন প্রতিবার। ঊষার কল্পনা, রুমিশা মারা গেলে কোনো এক উপায়ে আয়মানের জীবনে তার প্রবেশাধিকার ঘটবে। রাহনুমার সাথে পাঁচ কোটি টাকার ডিলও হয়েছিলো তার।

হ’ত্যার বিবরণঃ

ঊষা উশান এবং উজানকে নিজের কাছে নিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলেছিলেন। রাহনুমা এবং আরেকজন ছেলে তখন রুমিশাকে বাঁধছে দড়ি দিয়ে। রুমিশা ছটফট কিংবা চেঁচানোর কোনো সুযোগ পাননি। দীর্ঘ কয়েকবছরের পুশে রাখা রাগের ফলস্বরূপ সেদিন পি’শা’চ, উন্মাদ হয়ে উঠেছিলেন। রাহনুমার মতে বাবার ত্যাজ্যকন্যা পাওয়া উপাধিটা রুমিশার কারণে হয়েছে।

উপস্থিত ছেলেটাকে দিয়ে রুমিশাকে সেদিন উশান, উজানের সামনে শারীরিক আঘাত করায় রাহনুমা। ধারালো ছু’রি দিয়ে শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় আঘাত করে সেখানে মরিচের গুঁড়ো এবং লবণ ঢেলে দেয়। হাত, পায়ের নখ তুলে ফেলে প্লাস দিয়ে। সুক্ষ্ম ছু’রি দ্বারা চোখ উপরে ফেলে। ধারালো ছু’রি দিয়ে জিহ্বা কেঁ’টে দ্বিখণ্ডিত করে সঙ্গে ওষ্ঠাধর কেঁ’টে ফেলা হয়। তলোয়ার দ্বারা প্রথমে হাত এবং পরে পা শরীর থেকে আলাদা করে দেয়া হয়। তলোয়ার বুকের মাঝ বরাবর ঢুকিয়ে হাত দিয়ে হৃদপিণ্ড বের করে আনে টান দিয়ে। সবশেষে ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করে দেয় রাহনুমা।

খু’ন করা শেষে অতীব বিচক্ষণতার সাথে সকল প্রমাণ মিটিয়ে চলে যান তারা তিনজন। রাহনুমা সেদিনই গা ঢাকা দেয়। রুমিশার মৃ’ত্যুর পর চলে কয়েকদিন তোলপাড়। কিন্তু ফলাফল শূন্য। যেই ছেলেটাকে রাহনুমা রুমিশাকে শারীরিক আঘাত করিয়েছিলো তাকে পেয়েছিলো পুলিশ। কিন্তু সেই ব্যাক্তিও আটক হওয়ার ২ মিনিট পর মারা যায়। সম্ভবত তার শরীরে বিষাক্ত বি’ষ দিয়েছিলো কেও।
ঊষাকে কেও বুঝতেই পারেনি। এতোটা সু-কৌশলে ঊষাকে রাহনুমা সুরক্ষা দিয়ে গিয়েছে। ছেলেটাকে ইচ্ছে করেই জনসম্মুখে পেশ করেছিলো সে।

মীরা পৃষ্ঠা উল্টায়। প্রতিবেদন শেষ। সে উপলব্ধি করলো তার হাত – পা থেকে শুরু করে ঘেমে একাকার। সা’ই’কো কি’লা’র সম্পর্কে ধারণা আছে তার। তারা যেমন ভয়ানক তাদের মানুষ খু’ন করার ধরণটা তার থেকেও ভয়ংকর।কিন্তু মীরার কাছে রাহনুমার মে’রে ফেলার ধরণটা একটু বেশিই ভয়ংকর লাগলো।নিশ্চিত এনার মাথায় বিশাল কোনো সমস্যা আছে। মীরা শুষ্ক অধর যুগল সিক্ত করে উৎসুক চাহনি ফেলে বলল,

-‘ এই প্রতিবেদন আপনাদের কাছে? ঊষা আন্টি? উনি মানুষ? ওনাকে আবার বিয়ে করেছে আঙ্কেল?মানে কি করে? ‘

উশানের ধ্যান নেই দিন-দুনিয়ার। দিগন্ত বলল,

-‘ ঊষা ম্যামের ব্যাপারে আমরা কিছুদিন হলো জানতে পেরেছি। বড়জোর একমাস। এখনো তেমন প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। সুবিধার জন্য ছোট করে উশান স্যার প্রতিবেদন বানিয়ে রেখেছেন। পর্যাপ্ত প্রমাণ হাতে আসলেই আমরা কাজে নেমে পড়বো। ‘

-‘ ঊষা আন্টির সাথে বিয়েটা হলো কি করে? ‘

-‘ রুমিশা ম্যাম মারা যাওয়ার কয়েকবছর পর। ঊষা তখন তার মেয়ে উমাইশা কে নিয়ে আয়মান আঙ্কেল এর বাসায় আসেন। থাকার জন্য জায়গা চান। তার স্বামী নাকি মারা গেছে তাই। উশান, উজানের কথা ভেবে সেদিন ফারদিন স্যার ঊষা এবং আয়মান স্যারের বিয়ে দিয়ে দেন। উশান স্যার, উজান স্যার ঊষাকে চিনতে পারেননি তখন। হ’ত্যা করার সময় মুখে নিকাব পড়ে এসেছিলো তাই। বহু বছরের তদন্তের শেষে এতটুকু প্রমাণ পেয়েছি আমরা। এখনো আরো স্ট্রং প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত ঊষার বিরুদ্ধে কোনো স্টেপ নিতে পারবো না। চুপ থাকা লাগবে। ‘

তীব্র উশানের নেত্র পানে দৃষ্টি ফেলে। জ্বলজ্বল করছে চোখ দু’টো। ফাইল পড়ার পর নিস্তব্ধ ভূমিকায় বসে থাকা রুহির কানে ফিসফিসিয়ে বলল,

-‘ ভাবীর বান্ধবী! একটু বাহিরে আসুন তো। উশান, মীরাকে একা ছাড়ুন একটু। ‘

রুহি ফ্যালফ্যাল করে তাকায়। তীব্র তাড়া দিতেই সে উঠে দাঁড়ায় ঝটপট। তিনজন তখনি বেড়িয়ে আসে রুম থেকে। মীরা থ! আঁখি জোড়ার সামনেই মনে হয় ভাসছে খু*নের দৃশ্যটুকু। নিজেকে ধাতস্থ করে সে দৃষ্টিপাত দেয় উশানের মুখোশ্রীতে। উশানের নেত্র যুগলের সাদা অংশ রক্তিম ক্ষণেই। মীরা কিয়ংদশের জন্য ভুলে যায় নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করা সকল কথা গুলো ভেবেছিলো দূরে দূরে থাকবে কিন্তু উশানের মুখোশ্রী দশা দেখে তার অন্তঃস্থলের অবস্থা বেহাল, করুণ!
মীরা গিয়ে বসলো উশানের পাশে। উশান তখনো ল্যাপটপে তাকিয়ে আছে। কিয়ৎক্ষণ উশখুশ করে গলা ঝেড়ে বলল,

-‘ প্রতিবেদন টা আপনি তৈরি করেছেন না? ‘

উশান বহুক্ষণ পর ওষ্ঠাধর প্রসারিত করে ভরাট কন্ঠে বলল,

-‘ হ্যা। ‘

-‘ কিভাবে লিখলেন? হাত কাঁপেনি যখন নিজের মায়ের নৃ’শং’স হত্যার বর্ণনা লিখলেন? ‘

নিরুত্তর উশান৷ মীরা চমকায়। এখনো শক্ত খোলস থেকে বেড়িয়ে আসেনি পাথর মানবটা। বিরস মুখে উঠে দাঁড়ালো সে। উদ্দেশ্য নীল রঙের ফাইলটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যাবে। এই ফাইলটা এখনো পড়া হয়নি তার। কৌতূহল বাড়ছে ক্ষণে ক্ষণে। উশানের সামনে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না। মীরা উশানকে পার করতে নিবে যখন তৎক্ষনাৎ উশান ফুপিয়ে উঠে। বিস্ফোরিত চোখে পিছন ঘুরে তাকায় মীরা। উশানের নেত্রযুগল কোণে জমাট অশ্রুকণা দেখে চমকিত হয়। লোকটা কাঁদছে? সে ভুল দেখছে না তো? ক্রন্দনরত কন্ঠে উশান বলে উঠলো,

-‘ আমি নিজের চোখে আমার আম্মুকে হ*ত্যা করতে দেখেছি মীরা। স্ব-চোখে দেখেছি। আমার সামনে আম্ম যন্ত্রণায় কেমন ছটফট করছিলো তা দেখেছি আমি। পঞ্চাশ বার চাবুক দিয়ে মা’রা’র পর আম্মু ছটফট করে ওদের দু’জনের হাত থেকে ছুটে এসে আমাকে, উজানকে পাগলের মতো চুমু খেয়েছিলো। বারবার বিড়বিড় করে বলছিলো কিছু। বুঝিনি আমি! বাঁচার জন্য ছটফট করছিলো সে। আকুতি- মিনুতি করছিলো। তারা শুনেনি। আমার আম্মুর ঠোঁটদুটে ছুড়ি দিয়ে কে’টে ফেলেছিলো। আম্মু আমার বুকে শেষ বারের মতো মাথা রেখে যখন আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়েছিলো। ওরা.. ওরা আম্মুর হাত দু’টো তখনই কে’টে ফেলে টুকরো টুকরো করেছে। আমি ব্যার্থ সন্তান। নিজের মায়ের নৃ’শং’স মৃত্যু চোখের সামনে দেখে কিছু করতে পারিনি। অনেক কষ্ট পেয়ে আম্মা পৃথিবী ছেড়েছে মীরা। অনেক কষ্ট দিয়েছে ওরা। শেষবার যখন মুখের ভিতর ছু’রি ঢুকিয়ে দিচ্ছিলো তখন সে চেঁচিয়ে বলেছিলো, ‘ উশান বাবা চোখ বন্ধ কর। ‘! আম্মা কেমন ছটফট করছিলো, আর্তনাদ করছিলো তা আজও আমার কানে ভাসে মীরা। আমি ঘুমোতে পারিনা। আমি ঠিক মতো শ্বাস নিতে পারিনা আজকাল।..’

হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে উশান মীরার কোম’ড় জরীয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দেয়। দেয়ালে বাড়ি খেয়ে কান্নার করুণ ধ্বনি মীরার অন্তঃকরণ কাঁপিয়ে তুলছে ক্ষনে ক্ষনে।

চলবে…

[ ১২, ১৩ দু’টো পর্ব একসাথে সংমিশ্রিত আকারে দেয়া হয়েছে। শব্দসংখ্যাঃ ২১০০+! ]

রি-চেইক করা হয়নি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here