হৃদয়েশ্বরী #লেখিকা-সাদিয়া মেহরুজ দোলা #পর্ব-৩২

0
33

#হৃদয়েশ্বরী
#লেখিকা-সাদিয়া মেহরুজ দোলা
#পর্ব-৩২
_________

মানুষের জীবন অতি ক্ষুদ্র পরিসরের। এই ক্ষুদ্র জীবনে বেশ কিছু মানুষ আছে যাদের আমরা নিজ অন্তঃকরণে একদম পাকাপোক্ত ভাবে বসিয়ে ফেলি যাদের পরবর্তীতে অন্তঃকরণ থেকে মুছে ফেলতে ভীষণ কষ্ট বহন করতে হয়।সেই মানুষ গুলোকে অন্তঃস্থল হতে সরিয়ে ফেলার সময় যেই নিদারুণ যন্ত্রণাটা হয়! সেই যন্ত্রণা অত্যান্ত পীড়াদায়ক।এইযে মীরার ব্যাপারটা! দীর্ঘ এক মাস চোখের পলকে কাঁটার পরও সে উশানকে ভুলতে গিয়ে যে দারুণ যন্ত্রণা উপভোগ করছে। তার আপাতত মনে হচ্ছে, এ যন্ত্রণা হতে মৃত্যু শ্রেয়, পরম শান্তির!

কেটেছে দীর্ঘ এক সপ্তাহ।চলেছে অভিমানের পালা। উশান যশোর যাওয়ার পর মীরা আর তার সহিত কোনোরূপ যোগাযোগ করেনি, যোগাযোগ রাখেনি। একদম ‘ ইগনোর লিষ্ট ‘ এ ফেলে রেখেছে সে এই পাথর মানবকে। যশোরে যাওয়ার পর উশান যে কত শত বার মীরাকে ফোন দিয়েছে, ম্যাসেজ করে বার্তা পাঠিয়েছে হিসেব নেই তার।কিন্তু মীরা ছিলো নিজ সিদ্ধান্তে অটল! সে উশানকে কষ্ট দিবে মানে তো দিবেই। আপনজন আমাদের অবহেলা করলে কেমন লাগে?এটা উশানের অনুভব করা উচিত। তারপর আসে মীরার যশোরে যাওয়ার সময়কাল। সকল প্রস্তুতি শেষে মীরা যশোরে এসেছে আজ এক দুইদিন হবে।তবে অদ্ভুতুরে ব্যাপার হচ্ছে, এখানে আসার দুই দিন পর্যন্ত উশান কল দিয়ে আর কোনো প্রকার কল বা ম্যাসেজ দেয়নি৷ যোগাযোগ বন্ধ! মীরা আহত হয় প্রচন্ড! লোকটা এতো তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দিলো?মীরা যে তার বেলায় এতদিন ঘুরলো। কই! সে তো এতো জলদি হাল ছাড়েনি৷ তারমানে কি উশান তাকে পছন্দই করেনা? দয়া প্রদর্শন করছে?

-‘ আমারে সামনে রেখে তুমি কার কথা ভাবতেছো জান? ‘

রুহির চঞ্চল কন্ঠ! মীরা হুঁশে ফিরে। হাতের স্ট্র টা ফেলে দৃষ্টি দেয় রুহির প্রতি৷ রুহির নেত্রে প্রকাশ পাচ্ছে চরম কৌতূহল। মীরা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। বলল,

-‘ তোর হ্যাজবেন্ডের কথা ভাবছিলাম। বেচারা কত আনলাকি সেটা ভেবে দুঃখ প্রকাশ করছিলাম। তুই যেই বান্দর। তোকে সামলাতে গিয়ে বেচারা হার্ট অ্যাটাক না করে বসে। ‘

রুহি বিদ্রুপ হেঁসে বলল, ‘ বিয়া করলে তো! ফিলিং স্যাড ফর মাই উডবি ফিউচার জামাই বেইব!আমার মতো এতো কিউট একটা মেয়েকে হাতছাড়া করলো সে। আহারে..! আর ঐ! আমার বান্ধবী হয়ে তুই কিসব উল্টোপাল্টা বলস? বান্দর আমি মানলাম তাই বলে এই না যে জামাইরে জ্বালামু। ‘

মীরা নিরুত্তর! পাগলের সাথে কথা বলে লাভ আছে কোনো?নেই! আপাত লহমায় মৌন থাকাই শ্রেয়। রুহি, মীরা চটজলদি কফি শেষ করলো। মন খারাপের পায়রা গুলোকে উড়িয়ে দিলো মীরা। ব্যাস্ত হলো আপন কাজে। কফির বিল পরিশোধ করে ব্যাস্ত পায়ে বেড়িয়ে আসলো।

বাতাবরণ আবহাওয়া এখন উষ্ণ। তপ্ততা বিরাজমান। কাঠফাটা রোদে গলা শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায় ক্ষণে ক্ষণে। হলদেটে অম্বরে শুভ্র মেঘের আনাগোনা আংশিক! কড়া রৌদ্দুর দর্শন করা মাত্র রুহি ছটফট করে বলল,

-‘ দোস্ত চল ক্যাব বুক করি। এই রোদে হেঁটে যাওয়া সম্ভব না। ‘

মীরা ভাবলো কিছুক্ষণ। অতঃপর অনিচ্ছা সত্বেও সায় জানালো। ক্যাব আসার পর তারা দু’জন নিজেদের ফ্লাটে ফিরে আসে। এখানে আসার পর হোষ্টেলে না উঠে ফ্লাট ভাড়া করেছে তারা। মাহদির আদেশ! হোষ্টেলে ওঠা যাবেনা। মীরা – রুহি বিশেষ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি মাহদির সিদ্ধান্তে।মাহদি নিজেই আসতে চেয়েছিলো মীরার সাথে।তবে তাকে ব্যাবসার কাজে লম্বা সময়ের জন্য ইন্ডিয়া যেতে হয়েছে। ফিরবে কবে?সঠিক জানা নেই।মায়ান তার ফুপির কাছে।
রুহি বাসায় ফিরে হাত – পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ে। কারণ আপাতত তাকে মীরা বিছানায় যেতে দিবেনা যতক্ষণ না সে ফ্রেশ হচ্ছে। রুহির আপাত অবস্থা দর্শন করে মীরা বিরক্তিতে ভ্রু’কুটি কুঁচকালো!বলল,

-‘ ফ্রেশ হতে যা রুহি। তোর ড্রেসে ধুলোবালি লেগে আছে। ‘

-‘ যাইতেছি বইন। মাফ কর একটু! রেস্ট করে নেই।’

মীরা কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। মেয়েটা এখন আর তার কথা শুনবে না, মানবে না! তোয়ালে হাতে শ্রান্ত পায়ে সে ঢুকলো ওয়াশরুমে।

___

বাসায় যাওয়ার পথে মাঝ রাস্তায় আসতেই হটাৎ সিয়ার স্কুটি নষ্ট হয়ে যায়। আকাশ’সম বিরক্তি নিয়ে স্কুটি থেকে নেমে দুই চারটা লাথি মারলো তাতে। রাস্তাটা নির্জন, জনমানবহীন! শর্টকাটে জলদি বাসায় পৌঁছাতে এই রাস্তা ধরে সিয়া সবসময় যাতায়াত করে। কখনো কোনো বিপদে না পড়লেও আজ বোধহয় মহা বিপদে ফেঁসে গেলো সে৷ ভূমিতে এলোমেলো রূপে পড়ে থাকা স্কুটিটাকে টেনে দাঁড় করায় সে৷ সেলফোন বের করে কিয়ৎক্ষণ চিন্তা করে কাকে ফোন দেয়া যায়? কে তাকে এ সময় সাহায্য করতে পারে। অতঃপর মিনিট খানেক ভাবার পর ফলাফল আসে শূন্য! বইয়ে যাওয়া সমীরে মিলিয়ে গেলো তার যন্ত্রণাদায়ক দীর্ঘশ্বাস।

নিস্তব্ধ সড়কে হটাৎ শব্দের উৎপত্তি। চমকে পিছন তাকায় সিয়া। দর্শন মিলে উজানের। জিপ ড্রাইভ করে এদিকেই আসছে। চঞ্চল পায়ে সে দৌড়ে গিয়ে দাঁড়ালো রাস্তার মাঝখানে। হাত নাড়িয়ে থামাতে বলল। উজান জিপ থামায়। বিষ্মিত নয়নে বেড়িয়ে আসে। সিয়ার নিকট এগিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-‘ আপনি এভাবে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে ব্যাঙের মতো লাফালাফি করছেন কেনো মিস? এনিথিং রং?’

নিজেকে ‘ ব্যাঙের ‘ সাথে তুলনা করায় সিয়া বোধহয় একটু অসন্তুষ্ট হলো। অপ্রতিভ কন্ঠে বলল,

-‘ আসলে.., আমার স্কুটিটা নষ্ট হয়ে গেছে। একটু হেল্প করবেন প্লিজ? আমায় একটু বাসায় পৌঁছে দিবেন? ‘

-‘ সেটা নাহয় দিলাম। কিন্তু আপনার স্কুটি?

সিয়া স্কুটির দিকে তাকিয়ে রুষ্ট কন্ঠে বলল,

-‘ এটা এখানেই মরুক। মাঝপথে নষ্ট হলো কেনো?বেয়াদব! ওর শাস্তি পাওয়া উচিত। চলুন আমরা চলে যাই। ‘

উজান একটুখানি ভড়কালো। সিয়ার উদ্ভট কথা শুনে মনে মনে হাসলো কতক্ষণ। শেষে তারা রওনা দেয় নিজস্ব গন্তব্যে। নিজের বাসায় আসার পর নেমে যায় সিয়া। উজানকে ছোট্ট করে ধন্যবাদ দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। বাসার ভিতর ঢুকতে ঢুকতে তার ফোনে কল আসলো। কল দেয়া ব্যাক্তির নাম দেখে সে বুঝি আরো একবার অপ্রতিভ হলো। রিসিভ করলো সেকেন্ড দুয়েক পর। জিজ্ঞেস করলো,

-‘ গুড মর্নিং স্যার। ‘

অপাশ হতে জবাব এলো ভারী, কর্কশ কন্ঠে,

-‘ পিরীতের আলাপ ছাড়ো সিয়া! যা বলছি মনোযোগ দিয়ে শোনো।’

-‘ সরি স্যার!বলুন স্যার। ‘

-‘ সব ইনফরমেশন কালেক্ট করার পর উজানকে তুমি মে’রে ফেলবে। এটা তোমার আপাতত টাস্ক। ফারদিনকে কিছু করার দরকার নেই। উশানের প্লান সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবে উজানের ক্লোজ হয়ে বুঝতে পেরেছো? সবকিছু জানার পর সুযোগ বুঝে ওকে মেরে ফেলবে। ‘

সিয়া চরম আশ্চর্য! হতবিহ্বল হয়ে বলল,

-‘ বাট স্যার। আমার তো কাওকে মে’রে ফেলার কথা ছিলোনা৷ ডিল সাইন করার সময় আমি কাওকে মে’রে ফেলবো! এমন কোনো লাইন পাইনি৷ এখন হটাৎ করে কেনো স্যার? ‘

-‘ ছিলোনা! এখন বলছি। এরজন্য তুমি এক্সট্রা টাকা পাবে। বুঝেছো? আপাতত কাজে মনোযোগী হও। ‘

সেলফোন কান থেকে সরিয়ে নিলো সিয়া। হাত তার কাঁপছে। কেনো?অদ্ভুত তো! তার এই ১৯ বছরের জীবনে তো কম খু’ন করেনি। আজ যখন আরেক ব্যাক্তিকে খু’ন করার আদেশ আসলো তাহলে এখন হৃদঃস্থলের এমন নড়বড়ে অবস্থা কেনো?

______

তখন গোধূলি লগ্ন। মীরা বারান্দার ডিভানে শুয়ে বইয়ের পাতা উল্টেপাল্টে দেখছিলো। কাল থেকে তার ক্লাস শুরু। মাস্টার্স শেষ করবে মীরা এখানে। তারপর চট্রগ্রাম চলে যাবে নয়তো মাহদি আর মায়ানকে এখানে নিয়ে আসবে। আপাতত এসবই তার মস্তিষ্কের নিউরনে গেঁথে ছিলো। মগ্ন ছিলো ভাবনায়! হটাৎ তীব্র হর্ণের শব্দে তার ধ্যান ফিরলো। হকচকিয়ে উঠে বসে বহির্ভাগে দৃষ্টি ফেলতেই তার নেত্রযুগল বড়সড় হয়ে এলো। ওষ্ঠাধর প্রসারিত হয়ে অস্ফুটস্বরে বেড়িয়ে এলো একটা শব্দ,

-‘ উশান! ‘

হুড়মুড়িয়ে রেলিঙ ধরে ঝুঁকলো মীরা। উশানের রুষ্ঠ চাহনি তার অন্তঃস্থল কাঁপিয়ে তুলছে ক্ষনে ক্ষনে। কি আশ্চর্য!লোকটা এতে রেগে আছে কেনো?আর উশানই বা এখানে কিভাবে হলো? তার তো ট্রেনিং ক্যাম্পে থাকার কথা। মীরা মুখ ফুটে কিছু বলবে তার পূর্বেই উশান ইশারায় মীরাকে নিচে আসতে আদেশ দেয়। মীরা ভাবলো একবার, যাবেনা সে! শেষে অন্তঃকরণের আগ্রাসী অনুভূতির নিকট পরাজিত হয় চললো দ্রুত পদে নিচে।

.
উশানের সামনে দাঁড়িয়ে মীরা। লোকটার রুষ্ট চাহনি! ক্রোধে ভরা নেত্রযুগল তাকে প্রথম বারের মতো ভয় পাওয়াতে বাধ্য করলো। অন্তঃস্থলে নিজেকে ধাতস্থ করে মীরা। শ্লেষের গলায় বলে,

-‘ কি হয়েছে? আপনার এখানে কি চাই? ‘

-‘ বাইকে ওঠ! ‘ রাগান্বিত কন্ঠস্বর।

মীরা ভীতি ফেলে প্রশ্ন করলো,

-‘ কেনো? কিসের জন্য? আমি আপনার সাথে কোথায় যাবোনা। ‘

উশান প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ধমকে বলে উঠলো,

-‘ বেশি কথা বলবি তো এই পাবলিক প্লেসে আমি তোকে তিন – চারটা থাপ্পড় মেরে বসবো মীরা। ‘

মীরা আর বাঁধ সাধলো না। নম্র পায়ে এগিয়ে উঠে বসলো। উশান দ্রুত পদে এসে বাইকে বসে দ্বিগুণ গতিতে বাইক চালানো শুরু করে। মীরা ভাবলো একবার, তাকে বলবে গতি কমাতে! কিন্তু তা আর বলা হলো না। জেদি লোকটা যে তারই মতো।শুনবে না কথা নিশ্চিত। গাড়ি নির্জন, নিস্তব্ধ, মানবহীন স্থানে থামলো। স্থানটা সম্পর্কে মীরার জ্ঞান নেই। কোথায় এটা সে জানেনা! তবে এই জায়গাটা তার বাসা হতে অনেক, অনেক দূরে তা নিশ্চিত সে।

মীরা নামলো। আশপাশটা তীর্যক চাহনিতে পর্যবেক্ষণ করে উশানকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুড়লো,

-‘ এখানে কেনো এনেছেন? ‘

জবাবহীন পাথর মানবটা! হেলমেট খুলে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে সামনে এগোল। সামনে যাওয়ার পথে মীরার হাত টেনে ধরলো। অতঃপর তাকে এক প্রকার টানতে টানতে নিজের সঙ্গে নিয়ে চললো।মাঝে মীরা তার হাতে খামচি দিয়েছে, থাপ্পড় দিয়েছে, কিল- ঘুষি দিয়েছে! লোকটা তবুও তার হাত ছাড়েনি। শেষে কাঙ্ক্ষিত স্থানে নিয়ে গিয়ে মীরার কো’মড় চেপে মীরাকে ব্রিজের রেলিঙের ওপর বসিয়ে দিলো। মীরা আঁতকে উঠে বলল,

-‘ কি করছেন? আল্লাহ! পড়ে যাবো তো। ‘

উশান মীরার কো’মড় পিছন দুই হাত আড়াআড়ি ভাবে আবদ্ধ করে নিয়ে মীরার কোলে মাথা রাখলো। অতঃপর অতি নম্র কন্ঠে শুধালো,

-‘ পড়বেনা। আমি আছিনা। ‘

শীতল এক অনুভূতি মীরাকে স্পর্শ করলো তুলতুল করে। উশানকে এখন অনেকটা নম্র, শান্ত দেখাচ্ছে যেমনটা তাকে সবসময় দেখায়৷ শান্তশিষ্ট লোকটার হটাৎ রেগে যাওয়াতে মীরা ভীষণ ভড়কে গিয়েছিল অনেকটা। কিয়ৎক্ষণ নীরবতা পালন! চারপাশে মিষ্টি সমীরের সাইঁ সাইঁ করে চলাচল। গোধূলির রাঙা আলো সামনের স্বচ্ছ নীল পানিতে আছড়ে পড়ে নিদারুন সৌন্দর্যের প্রলেপ একেছে। ঘোরতর মৌনতা ভেঙে উশান বলে উঠলো,

-‘ এতদিন তোমাকে ফোন দিচ্ছি আমি! ফোন কেনো রিসিভ করোনি তুমি? ইগনোর কেনো করছো?তুমি কি আমাকে মেনে নিতে পারছো না? তাহলে বলো! আমি তোমাকে জোর করে নিজের কাছে রাখবো না। এক- একটা মানুষের স্বাধীনতা আছে নিজের মতো করে চলার। জলদি উত্তর দাও! তুমি কি আমাকে এক্সেপ্ট করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছো? তুমি যা সিদ্ধান্ত নিবে আমি তাতে সায় জানাবো। ‘

উশানের কন্ঠে ধরে এলো। শব্দ গুলো বিষাক্ত বেশ!নয়তো কন্ঠনালী দ্বারা উচ্চারণ করতে তার এতো কষ্ট হলো কেনো?

মীরা নিশ্চুপ। উশান মাথা তুলে। ফিচেল হেঁসে বলে,

-‘ মৌনতা সম্মতির লক্ষন! চলে যাচ্ছি তাহলে।’

নিস্তব্ধ, শব্দহীন স্থানটায় ছোট খাটো বিস্ফোরণ ঘটলো। মীরা হটাৎ রেলিঙ হতে ঝাপ দিয়ে উশানের বুকে মাথা দিয়ে হুহু করে কেঁদে উঠলো। নিজেকে আর তার পক্ষে সামলানো সম্ভব হয়নি। ক্রন্দনরত কন্ঠে বলল,

-‘ আপনাকে ইগনোর করে বুঝি আমি শান্তিতে ছিলাম? কতটা কষ্টে ছিলাম আমি জানেন? আমি আপনাকে ইগনোর করতাম যাতে আমার অতীতে কতোটা কষ্ট হয়েছে তা আপনি বুঝতে পারেন তার জন্য। সেদিন তো বড় বড় ভাষন দিচ্ছিলেন আমি না মানলে কিডন্যাপ করে তুলে নিয়ে যাবেন আর আজ এতটুকুতেই হাল ছেড়ে দিচ্ছেন। আপনি নিষ্ঠুর, জঘন্যতম একটা ব্যাক্তি উশান! ‘

দু’হাতে উষ্ণ আলিঙ্গনে মীরাকে আবদ্ধ করলো উশান। তার অধর কোণে হাসি। ম্লান হাসি! আসক্তি মাখা কন্ঠে আচানক বলে উঠলো,

-‘ আমি নিষ্ঠুর।আমি জঘন্য।
তুমি মায়াবিনী, প্রাণদায়িনী!
আমি আঁধারের কলুষিত অন্ধকার,
তুমি স্বচ্ছ, পবিত্র রশ্মি!
আমি চাঁদের বুকের কলঙ্ক,
তুমি চাঁদের সৌন্দর্যের প্রতিমা।
তুমি বিশুদ্ধ প্রণয়ের প্রিয়তম হৃদয়েশ্বরী। ‘

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here