হৃদয়েশ্বরী #পর্ব-৫০ |১ম খন্ড |

0
48

#হৃদয়েশ্বরী
#পর্ব-৫০ |১ম খন্ড |

গগনপৃষ্ঠে ধূসর বর্ণের মেঘ জমেছে। বাতাবরণে তখন বর্ষণ নামার হাঁকডাক! গগনচুম্বী গাছ গুলো দুলছে তখন মুক্ত সমীরে। স্থিরচিত্তে থাকা দীঘির জল হয়েছে এলোমেলো। ক্ষীণ বাদে শুকনো ভূমির ওপর পড়ল ফোঁটা ফোঁটা জলের আস্তরণ। সময়ের তালে অম্বরে হতে আছড়েঁ পড়া জলের প্রকোপ বাড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে অনিলে আষ্টেপৃষ্টে জড়ালো বৃষ্টি ভেজা সোঁদা মাটির মোহনীয় ঘ্রাণ। ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টির তেজ বাড়ছে। শব্দ হচ্ছে ঝুমঝুম ঝুমঝুম!

বৃষ্টির তেজ দেখে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল সায়াশ। আরো একবার সে লুকিং মিরর দিয়ে অবলোকন করল তার পেছনটায়। পেছনে উশান বসে! হাত, পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে দেদারসে সিগারেট খাচ্ছে সে। শুকিয়ে কাঠ হওয়া গলায় একটুখানি সিক্ততা দান করার তারে সায়াশ ঢোক গিললো পরাপর দুইবার। সায়াশ ভেবে পায়না উশান ভাঙা হাত, জখম হওয়া পা, মাথায় বিশাল ব্যান্ডেজ, বুকের মাঝ বরাবর জখম! এসব নিয়ে এতোটা সুখ নিয়ে সিগারেটে টান দিচ্ছে কি করে? স্বাভাবিক ভাবে উশানের উচিত এখন ব্যাথায় ‘ উহ্, আহ্ ‘ করা! অথচ দেখো। এই লোক করছেটা কি? সুখানুভূতি নিয়ে সিগারেট খাচ্ছে আরামসে!

-” আমাকে দেখা হয়েছে? এতো কি দেখছো? আমি তোমার বউ না সায়াশ! তোমার মধ্যে কি কোনো সমস্যা আছে? ”

সায়াশ জোরেসোরে ব্রেক কষলো। উশান সামনে বাড়ি খেতে খেতে নিজেকে সামলে নিল। তীক্ষ্ণ, ধারালো দৃষ্টি ছুড়ঁলো সে সায়াশের প্রতি। সায়াশ সে সময় হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রয়েছে তার পানে।

সায়াশের বেখেয়ালি আচরণের কারণে উশান রাগল প্রচন্ড। ক্ষেপাটে চোখে তাকাল সে। ধমকে বলল,

-” তোমার কি মাথা খারাপ? এখনি এক্সিডে’ন্ট হতো আমাদের। গাড়ি চালাতে পারো না? ”

-” সরি স্যার। আর হবেনা স্যার। ”

সায়াশ গাড়ি স্টার্ট দিতে তৎক্ষনাৎ উশান গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। ড্রাইভিং সিটের পাশে এসে নক করলো কাঁচে। সায়াশ গাড়ির কাচঁ না নামিয়ে সটান গাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো। হন্তদন্ত হয়ে বলল,

-” স্যার আপনি অসুস্থ! গাড়ি থেকে বের হয়েছেন কেন? বৃষ্টিতে ভিজলে আপনার সমস্যা হবে স্যার। ”

উশান নিরুত্তর!সায়াশকে কথা না শোনার ভান করে সে ড্রাইভিং সিটে বসল। ইশারায় সায়াশকে নির্দেশ দিল চটজলদি গাড়িতে উঠে বসতে। হতভম্ব সায়াশ দৌড়ে গিয়ে বসল উশানের পাশের সিটে। বলে উঠলো,

-” স্যার! আপনি এই আহত শরীর নিয়ে ড্রাইভিং করবেন? ”

উশান ভাবলেশহীন বলল,

-” করবো! এতো জলদি মরা’র শখ নেই আমার। বাচ্চার বাবা হতে পারিনি এখনো। ”

উশানকে এতোটা সহজভাবে কথা বলতে দেখে সায়াশ বিষম খেলো। চটপট সে নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে সটান হয়ে বসল।তারা এখন ফিরে যাচ্ছে ঢাকায়। এখানকার কাজ শেষ! সবকিছু আয়ত্তে এনে উশান এবং তার টিমের সদস্যগণ নিজেদের নীড়ে ফেরার জন্য রওনা দিয়েছে দুইঘন্টা হবে। তবে বৈরি আবহাওয়ার কারণে কেওই এখনো ঢাকায় প্রবেশ করতে পারেনি। উশান কায়দা করে শর্টকাট ধরে গাড়ি চালাচ্ছে। এখানকার প্রতেকটা রাস্তা তার চেনা! বহুবার আসা হয়েছিল এখানে তার। কখনো কাজের পরিপ্রেক্ষিতে কখনোবা ইচ্ছেবশত!

সায়াশ ভাবছে তখনকার শ্বাসরুদ্ধকর লহমার কথা। উশাম নেই! মা’রা গিয়েছে! যখন তার মস্তিষ্ক এসব ভাবছিল তখন তার সর্বাঙ্গ হীম হয়ে আসছিল। কিন্তু তারপরই ঘটে চমকপ্রদ ঘটনা। অদূর হতে সে এবং উপস্থিত বাকিরা দেখে উশান সাতার কেটে আসছে তীরে। তাকে দেখে পরক্ষণেই একজন স্প্রিড বোট নিয়ে ছুটে উশানকে অতি দ্রুত তীরে ফিরিয়ে আনতে। উশান যখন তীরে ফিরে এলো, সায়াশ তখন এলোপাথাড়ি দৌড়ে উশানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয় হু হু করে। উশান তার প্রিয় একজন ব্যাক্তি। তার আদর্শ, তার অনুপ্রেরণা! এবং নিঃসন্দেহে উশান একজন চমৎকার মানুষ বৈকি। তার কার্যপরিচালনা, বুদ্ধিমত্তা, ব্যাক্তিত্ব, উদারতা! এসব কিছু সবাইকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করে।

বারংবার সেলফোন দেখছিল উশান। মীরাকে ফোন দিয়েছিল সে। মেয়েটা ফোন ধরেনি। রাত অনেক! উশান ভাবল মীরা হয়তো ঘুমোচ্ছে তাই তার কল রিসিভ করেনি। তবে তার অন্তঃকরণ অন্য বার্তা দিচ্ছে। তারা অস্থিতিশীল! বাড়ে বাড়ে তাকে বলছে, কিছু একটা হয়েছে। অনা-আকাঙ্খিত কিছু!

______

সন্ত্রা’সী পরিচালনাকারী মূল হোতাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।কিছু তথ্যও পাওয়া গিয়েছে ইতিমধ্যে। সন্ত্রা’সীরা ছিল এদেশেরই নাগরিক। তারা চাইতো রাজত্ব, টাকা – পয়সা! তারই পরিপ্রেক্ষিতে একটা দল গঠন করেছিল। যাতে করে মোক্ষম সময়ে এসে তারা দেশে এমন একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করবে যাতে সরকার দিশেহারা হয়ে পড়বে। জনগণ থু’থু করবে সরকারের প্রতি! ঠিক সেসময় সঠিক পন্থা অবলম্বন করে কোনো এক উপায়ে জনগণের নিকট এগিয়ে আসবে এই সন্ত্রা’সীরা। আড়ালে আবডালে ক্ষতি করলেও বাহিরে জনগণের প্রতি উদার মহানুভবতা দেখাবে। জনগণ তাদের প্রতি দূর্বল হওয়া মানেই অনেককিছু!

সন্ত্রা’সী দলটার মূল হোতারা ছিলেন মোট আঠাশ জন। তারা প্রায় পঁচিশ বছর সময় নিয়ে পরিকল্পনা করেছেন। তারপর দল গঠন করেছে। তাদের দলে থাকা সকল মানুষই ছিল নরপ’শু! দিনে রাতে মানুষ গুম, সন্ত্রা’স, চাদাঁবাজি, ধ”র্ষ”ণ সহ আরো নানা কুকর্মে লিপ্ত থাকত এরা। দীর্ঘ বিশ বছরে টাকার পাহাড় গড়েছিল অনৈতিক উপায়ে। সন্ত্রা’সীরা মূলত চাইত দেশে নিজেদের রাজত্ব করতে। জনগণ এর ওপর নিজেদের আর্জি, মর্জি চাপাতে! এক অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে! মানুষ খু’ন করে শান্তি পেতো এরা। চরম শান্তি! মানষিকভাবে ছিল তারা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত। এই দলটার ওপর সরকারের বিরোধী দলের একটা সাহায্যগামী হাত ছিলো যার দরুন এই সন্ত্রা’সীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল দিন দিন। স্বাভাবিক পর্যায় দর্শন করা বাদে ডাক্তার তাদের মানষিক চেকআপ করিয়ে এতটুকু নিশ্চিত হন এরা আসলে মানষিকভাব ঠিক কতোটা নিম্নতর অদ্ভুতুরে এবং ক্ষতিগ্রস্ত! এরা মানুষদের টাকার লোভ দেখিয়ে নিজেদের দলে আনতো তো কখনো স্বেচ্ছায় অনেকে এই দলে যুক্ত হওয়ার জন্য মরিয়া হতো! দলে যুক্ত হওয়া মানুষদের তারা এক অজানা পন্থার মাধ্যমে নিজেদের মতো নর’পি’শা’চ, নরপ’শুতে রূপান্তরিত করতো।

মিশনে সিয়ার মৃ’ত্যু ঘটেছে। বলা বাহুল্য সে স্বেচ্ছায় মৃ’ত্যু গ্রহণ করেছে। তাকে যখন উশানের আদেশে পাহারা দেয়া দু’জন পুলিশ অফিসার খাবার দিতে আসল, তখন সিয়া তাদেরকে আঘাত করে পালিয়ে আসে। ছুটে আসে স’ন্ত্রা’সী আস্তানায়।সেখানে পৌঁছে নিজেই স’ন্ত্রাসীদের নিকট বলে, সিয়াই বলেছে এয়ার ফোর্সের কাছে তাদের অবস্থান।ঠিক তখন! সন্ত্রা’সীরা তাকে গু’লি করে হ’ত্যা করে।
যাওয়ার পূর্বে ছোট্ট একটা চিরকুট রেখে গিয়েছিল সিয়া উশানের জন্য। চিরকুটে লিখা ছিল,

-” এই বিষাক্ত পৃথিবী আমার জন্য না। এই সুন্দর পৃথিবী আমার জন্য বিষাক্ত কা’টা। এর মাঝে বেঁচে থাকা যায়না।তাই স্বেচ্ছায় মৃ’ত্যু গ্রহণ করলাম।উশান স্যার, আপনার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ। আমার বাবাকে খুঁজে বের করুন। তাকে সুস্থ ভাবে, স্বাভাবিক জীবনযাপন করার সুযোগ দিন। আমার বাবার কোনো দোষ নেই। সে নির্দোষ!”

______

উশান হ’ন্য হয়ে ছুটছে! তার আশেপাশে থাকা কয়েকজন মানুষ তাকে বিষ্মিত নেত্রে অবলোকন করছিল। সেদিকে বিশেষ ধ্যান দিলোনা উশান।তার কপাল বেয়ে চুইয়ে চুইয়ে র’ক্ত গড়িয়ে পড়ছে।বুকের মাঝ বরাবর মোটা ব্যান্ডেজ থাকার কারণবশত সে শার্টটা অব্দি পরতে পারেনি। সেভাবেই শার্ট বিহীন হাসপাতালের করিডর ধরে দৌড়াচ্ছে। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত কামড়ার সামনে এসে স্থিরচিত্তে দাঁড়ালো সে। লম্বা কয়েক শ্বাস টেনে ভেতরে প্রবেশ করলো।
ঢাকায় ফিরে যখন সে কর্মস্থলে ইনানের সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিল উশান। বাসায় ফিরবে তখন তাকে ইনান আঁটকে রেখে ডাক্তার দ্বারা ক্ষত স্থান পুনরায় চেকআপ করায়।সে ক্ষণটায় উজানের ফোন আসে। বার্তা দেয়, বাবা অসুস্থ! ভীষণ অসুস্থ! বাবার প্রতি যে তার রাগ ছিলো তা মূর্হতেই ভুলে গিয়ে উশান হ’ন্য হয়ল ছুটে আসে গাড়ি নিয়ে। সে এতোটাই বেখেয়ালি ছিলো, তার গায়ে যে শার্ট নেই তার দিকেও ধ্যান ছিলোনা তার।

আয়মান সাদা বিছানায় শুয়ে আছেন। জীর্ণশীর্ণ তার দেহ লেপ্টে রয়েছে বিছানার সাথে। চোখের নিচে কালো দাগ। ঠোঁট দু’টো শুকিয়ে চৌচির! নেত্রপল্লব ঘন ঘন ফেলছিল সে উশানকে দেখে। হাতের ইশারায় সে উশানকে ডাকল।উশান এগোল। ধীর পায়ে, অল্প অল্প করে! পেছনে ফেলে আসল স্তব্ধ মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকা মীরাকে। উশান ছোট টুলটা টেনে বসল। আয়মান উশানের গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,

-” এতো আঘাত পেয়েছিস বাবা। খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না? র’ক্ত পড়ছে তো মাথা থেকে। উজান! ডাক্তার ডাক জলদি। ”

উশান ভারী গলায় বলল, ” দরকার নেই। ”

-” রেগে আছিস বাবার ওপর? ”

বাচ্চাদের মতো করে দু’দিকে মাথা নাড়ল উশান। বলল,

-” রেগে নেই। তোমার এ অবস্থা কেন? ”

আয়মান নিষ্প্রাণ হেঁসে শুধাল,

-” পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় এসেছি তাই। শোন বাবা! কিছু কথা বলি তোকে। রুমিশা, তোর মা যখন মা’রা যায় তখন আমি ভেঙে পড়েছিলাম খুব। তোর মা আমার বেঁচে থাকার মাধ্যম ছিল। তিক্ত হলেও সত্য আমি তোদের দু’জনের থেকে তোদের মা কে বেশি ভালোবাসতাম। রুমিশা মা’রা যাওয়ার পর এই দেশটা আমার জন্য তিক্ত হয়ে গেলো। শ্বাস নিতে পারছিলাম না এখানে ঠিক মতো। চারিদিকে তাকালেই মনে হতো রুমিশা আমায় বলছে, ‘আমায় বাঁচাতে পারলেনা তুমি৷ “এই ঘটনার পর সরকার যখন তোর মায়ের খু’নিকে ধরতে পারল না তখন আমার অবস্থা আরো খারাপ হলো। ঠিক করলাম দেশ ছাড়বো। ভেবেছিলাম তোদের নিয়ে যাবো। পরবর্তীতে আবার ভাবলাম না, তোরা এখানেই থাক। এদেশে রুমিশার হ’ত্যার বিচার কখনোই হতো না। কখনোই হ’ত্যা’কারীকে হয়তো খুঁজে পেতোনা পুলিশ কিংবা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টাও করতো না। বাংলাদেশের রীতিই এটা! নিজে কিছু না করলে কোনো সমাধানই কখনো পাওয়া সম্ভব না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম তোরা দুই ভাই-ই রুমিশার হ’ত্যাকারীকে যাতে খুঁজে বের করতে পারিস তার ব্যাবস্থা করবো আমি। দেশ ছাড়ার আগে বাবাকে বলে গেলাম যাতে তোদের দু’জনকে ডিফেন্সার বানায়! তারপর যোগাযোগ প্রায় বন্ধই করে দিলাম। চেষ্টা করতে চাচ্ছিলাম যাতে তোরা শক্ত হোস! বাস্তবতা বুঝিস। কেও কারো জন্য নয়, এই বিষয়টা পাকাপোক্ত ভাবে বুঝতে পারিস।আজ এতো বছর পর আমার চাওয়া পূর্ণ হলো উশান।তুই, উজান আমার চাওয়া, আমার এতদিনের স্বপ্ন আজ পূরণ করেছিস। বাবা, যখন আমি শুনলাম! তুই নিজের হাতে রাহনুমা, ঊষাকে মে’রেছিস। বিশ্বাস কর বাবা!ঐ মূর্হতে আমার বুকের ওপর থেকে চাপ নেমে গিয়েছে। এতোটা বছর পর আমি শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারছি। আল্লাহ তায়ালার নিকট হাজার হাজার শুকরিয়া।মৃ’ত্যু’র আগে তিনি আমায় একটু শান্তি প্রদান করেছেন। তোদের জন্য আমি বিশেষ কিছুই করতে পারিনি তবে আমি এত বছর ধরে যা উপার্জন করেছি তা আমি তোর, উজান, উমাইশা আর মীরার নামে করে দিয়েছি। সুখে থাকিস তোরা বাবা! মীরাকে সুখে রাখিস উশান। ”

ঘন ঘন শ্বাস নিতে শুরু করলেন আয়মান। উশান ব্যাকুল হয়ে উঠে দাঁড়াল। বলল,

-” বাবা! বাবা তোমার কষ্ট হচ্ছে? বাবা কথা বলো একটু। ”

আয়মান কথা বললেন না। জবাব দিলেন না উশান এর করা প্রশ্নের। লম্বা করে একবার শ্বাস টেনে চিরতরের জন্য।কক্ষে উপস্থিত সকলে তখন নিস্তব্ধ। অদূরের মসজিদ হতে ফজরের আজানের মধুর ধ্বনি ভেসে আসছে শুদ্ধ সমীরে। উশান আয়মানের খোলা নেত্রজোড়া বন্ধ করলো। সাদা কাপড়টা দিয়ে আয়মানের কপাল অব্দি মুখ ঢেকে দিল। পিছন ফিরলো সে।তার মুখোশ্রী অস্বাভাবিক থমথমে হয়ে। উজানকে উদ্দেশ্য করে উশান স্বভাবগত কন্ঠে বলল,

-” আমার জন্য একটা শার্ট আর টুপি নিয়ে আয়। নামাজ পড়ে আসি। ”

উজানের কৃষ্ণ গাল বেয়ে অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ছে। বিশুদ্ধ, নোনা জল! উশানের কন্ঠ শ্রবণ করে সে ঘাড় ফিরিয়ে নেত্র কোণে জমে থাকা অশ্রুজল মুছে নিল দ্রুত। অতঃপর ‘ আনছি ‘ বলে বেড়িয়ে গেল।

উজানের ফিরে আসতে দশ মিনিট লাগল। শার্ট তার গাড়িতেই রাখা ছিলো।জরুরি প্রয়োজনে রেখেছিল। পকেটে কালো টুপি ছিলো উজানের আগ হতেই। এশারের নামাজ আদায় করেছিল এখানে।শার্ট,টুপি উজান উশানের কাছে দিল। উশানকে মাত্রাতিরিক্ত স্বাভাবিক দেখাচ্ছে। ভাইকে এতোটা কঠোর দেখে বিন্দুমাত্র চমকালো না উজান। উশান এমনই। সে অনুভূতি প্রকাশ করতে চায়না। ধরা কন্ঠে উজান একবার জিজ্ঞেস করল,

-” ঠিক আছো ভাই? ”

উশান ভরাট কন্ঠে বলল, ” আছি! ”

উশান সামনে এগোল।উদ্ভ্রান্তের ন্যায় তার অন্তরাল। মা হারানোর পর এবার বাবাকেও হারালো সে।বাবা মা দু’জনই এতিম করে দিয়ে গেলো! বাবার প্রতি জমে থাকা এতো বছরের অনুরাগ, অভিযোগ আজ লহমায় সেই সব অভিযোগের পাহাড় ভেঙে চুরমার হলো।পল্লব ফেলল উশান একবার, দুইবার, তিনবার করে। প্রাণহীন নেত্রে একবার মীরার পানে তাকিয়ে বেড়িয়ে আসলো গুমোট কক্ষ হতে। তার শ্বাস রুখে আসছে কেন হটাৎ?

চলবে~
সাদিয়া মেহরুজ দোলা।

( বাহ! অর্ধশত পর্ব হয়েই গেলো তাহলে।❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here