#হৃদয়েশ্বরী – ৪৮ সাদিয়া মেহরুজ দোলা

0
4

#হৃদয়েশ্বরী – ৪৮
সাদিয়া মেহরুজ দোলা
_________________________
তখন পড়ন্ত বিকেল। পশ্চিমাকাশে ডুবো ডুবো প্রায় কমলাটে সূর্য। বিদায় বার্তা জানাতে জানাতে সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমের কোলে। বাতাবরণে বইছে তখন উত্তপ্ত হাওয়া। নিদারুণ তপ্ততা আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে মেদিনী জুড়ে। কম্পমান শূন্য পাতা দীর্ঘ সময় যাবৎ পানির স্পর্শ না পেয়ে নির্জীব হয়ে রয়েছে। স্যাতঁস্যাতেঁ তপ্ত আবহাওয়া তখন বর্ষণের ছোঁয়া পাওয়ার লোভে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অথচ অম্বর তখন স্পষ্ট পরিস্কার, ঝকঝকে।মেঘমেদুরের ছিটেফোঁটা অব্দি নেই। ব্যাপক গরমে যখন অতিষ্ঠ হয়ে উশানের টিমের বাকি সদস্যগণ ঠিক সেই ক্ষণ কালেই উশান বিনা ক্লান্তিতায় সরু মাঠটায় হেঁটে হেঁটে টিমকে নির্দেশনা দিচ্ছে। হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বোঝাচ্ছে কিছু মনোযোগ সহকারে।উপস্থিত সকলে হতবিহ্বল তখন। ভ্যাপসা গরমে যখন তাদের জিভ বেড়িয়ে আসার উপক্রম সেখানে উশান কি করে এতোটা সময় বিনা ক্লান্তিতায় হাঁটতে হাঁটতে তাদের নির্দেশনা দিচ্ছে?উশানের মুখোশ্রী রক্তিম আভায় ছেয়েছে রোদের উত্তাপে।তবুও একবার তাকে দীর্ঘ নিঃশ্বাস অব্দি ফেলতে দেখা গেল না।অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে বিরতিহীন রূপে। আচানক উপস্থিত সকলে ধরেই নিল উশান আসলে অনুভূতিহীন এক মানব। এই লোকটাকে রড দিয়ে পেটালেও বোধহয় ‘উহ্ ‘ শব্দটুকুও করবে না।

-” ইজেন্ট ইট ক্লিয়ার? ”

সকলে সম্বিৎ ফিরে পেলো। হতবিহ্বলের রেশ চট করে কাটিয়ে স্বমঃস্বরে বলে উঠলো,

-” ইয়েস স্যার। ”

উশানের মুখোশ্রীতে গম্ভীরতা। ভারী কন্ঠ। ধারালো চোখের দৃষ্টি। উপস্থিত ব্যাক্তিবর্গকে তীক্ষ্ণ চাহনি নিক্ষেপ করে পর্যবেক্ষণ করলো একবার। ভরাট কন্ঠে শুধালো,

-” গুড! আমাদের হাতে কিন্তু আর চারদিন আছে। মাথায় রাখবেন বিষয়টা। আরেকটা ব্যাপার ক্লিয়ার করি, আমাদের যে করেই হোক পরবর্তী এটাক যেই হেলিকপ্টার দিয়ে হবে সেই হেলিকপ্টার তার কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছানোর আগেই আমাদের সেই হেলিকপ্টার কে আমাদের কব্জায় নিতে হবে। যত দূর জানতে পেরেছি, হেলিকপ্টারে এমন একটা ডিভাইস আছে যা মূল সন্ত্রাসী কেন্দ্রে সিগন্যাল পাঠায়। ওরা কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছানোর পর যখন হাম’লা করে, হা’মলা করার পরপরই সিগন্যালটা সেই কেন্দ্রে যায় আর ঠিক তখনি হেলিকপ্টার ব্লাস্ট হয়!আমরা যদি হেলিকপ্টার আগে থেকে আমাদের আয়ত্তে নিতে পারি তাহলে সিগন্যাল যাবে না। আর সন্ত্রা’সীদের আস্তানা শনাক্ত করাও আমাদের পক্ষে সহজ হবে। ক্লিয়ার? ”

সকলে একযোগে মাথা নাড়ল। একজন কৌতূহল চেপে না রাখতে পেরে জিজ্ঞেস করল,

-” স্যার একটা প্রশ্ন করি? ”

-” ইয়াহ্ শিয়র! ”

-” আপনি এতো ইনফরমেশন পান কোথা থেকে? ”

উশান গম্ভীর চোখে তাকাল।প্রশ্নকর্তা এতে অপ্রতিভ হয়ে পড়ে। হাসঁফাসঁ করে খেয়াল করার চেষ্টা করে সে কিছু ভুল বলল কিনা। উশানের জবাব আসলো পাঁচ সেকেন্ড পর,

-” আমার পদে আপনি যখন আসবেন।তখন বুঝতে পারবেন। আর কোনো প্রশ্ন? ”

-” নো স্যার। ”

উশানের ফোন এসেছে। রিং বেজেছে পরপর এক থেকে দুইবার! ফোন তুলছে না সে। আগের মতোই হেঁটে হেঁটে নির্দেশনা দিচ্ছে। ক্ষীণ ক্ষণ বাদে ভীষণ বিরক্তি নিয়ে বক্তব্য প্রদানে বিরতি দিলো সে। ফোন নিয়ে কিয়ৎ দূরে গেল।ফোন স্ক্রিনে থাকা ফোনদাতা ব্যাক্তিটার নাম দর্শন হতেই লহমায় তার রাগ উবে গেলো। চটজলদি ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ হতে কিছুটা রাগ নিয়েই বলা হলো,

-” এতক্ষণ লাগে ফোন রিসিভ করতে? ”

উশানের এখন রাগা উচিত। কঠিন এক ধমক দেয়া উচিত ফোনের অপর পাশের ব্যাক্তিকে। সে তাই করতে নিয়েছিল। অতঃপর আচানক মনে হলো, এই ব্যাক্তিটি আর দশটা মানুষের মতো নয়!তার জায়গা উশানের অন্তঃস্থলে সর্বোর্ধ্বে বিরাজ করে সর্বদা। গম্ভীরতা, কঠোরতা সবকিছু মিইয়ে খাদে নামলো তার। মোলায়েম হলো দৃষ্টি। কোমল হলো কন্ঠস্বর। ক্ষীণ বাদে শীতল কন্ঠে শুধালো,

-” আমি এখানে কাজ করছি মীরা। ”

মীরা ফোঁস করে তপ্তশ্বাস ছাড়ল। নম্র কন্ঠে সে বলে উঠলো,

-“তুমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়েছো? ”

-” গিয়েছি তো। সেখানেই আছি। ”

-” আমাকে একবারও বলার প্রয়োজন মনে করলে না? ”

উশান কপাল চুলকালো। বলল,

-” বলার প্রয়োজন মনে করিনি। কার থেকে জানলে তুমি? ”

-” বলার প্রয়োজন মনে করিনা। ”

-” আচ্ছা। ভালো আছো? ”

-” বলার প্রয়োজন মনে করিনা। ”

-” গুড! সুস্থ আছো? মাথা ব্যাথা করে এখনো? ”

-” বলার প্রয়োজন মনে করিনা। ”

উশান হেঁসে ফেললো এবার। শুধালো,

-” ফাইন! রাখছি তাহলে? আল্লাহ হাফেজ। ”

মীরা পণ করেছিল সে আর একটি শব্দও উচ্চারণ করবে না। তবে উচাটন, ছটফটে অন্তঃকরণ তার পণ মানলো না। তারা লাফিয়ে উঠলো। উশানের বিদায় জানানো মানে আবারও সেই এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ পরে কথা বলা। মীরা তাড়াহুড়ো করে বলল,

-” আবার কবে দেখা হবে আমাদের? ”

উশান নীরব রইল কতক্ষণ। শেষে ভারী কন্ঠে জবাব দিলো,

-” সঠিক জানা নেই মীরা। তবে জলদিই ফিরবো। ”

ফোন কেটে পেছনে ঘুরতেই উশান ভ্র কুঁচকাল। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পয়ত্রিশ জন মানুষ কেমন ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।আশ্চর্য! এভাবে তাকিয়ে থাকার মানেটা কি? উশান প্রশ্ন ছুঁড়লো,

-” হোয়াট হ্যাপেন্ড? ”

অবাকতার রেশ কাটিয়ে একজন বিষ্মিত কন্ঠে বলল,

-” স্যার আপনি হেঁসেছেন! ”

-” হ্যা তো? ”

প্রশ্ন করে উশান ভাবল কিছুক্ষণ। হটাৎ করে তার মাথায় ধরল এতো গুলো মানুষের ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকার কারণ।দ্বিতীয়বার পুনরায় সে স্বেচ্ছায় গলায় শব্দ করে হাসল। কর্মক্ষেত্রে সর্বদা গম্ভীর হয়ে থাকার দরুন আজ পর্যন্ত কারো সাথে সৌজন্যতা বজায় রাখার খাতিরেও সে হাসেনি কখনো। আজ এতবছরের চলে আসা এক অবাদ্ধ নিয়ম মীরা ভেঙে ফেলল।

_____

ফারদিন আজ ঢাকায় এসেছে। তার আসার কারণ উশান। মিশনে যাওয়ার পূর্বে উশান বারবার করে দাদুকে বলে গিয়েছে যাতে সে উমাইশাকে চট্টগ্রাম নিয়ে যায়। উমাইশা পুরোদিন বাসায় একা থাকে যা ওর ব্রেনের জন্য ভালো না। পুরোপুরি সুস্থ হয়নি এখনো সে। একা থাকাটা তার জন্য ক্ষতিকর। উজান কেসের কাজে সবসময় থানাতেই পড়ে থাকে রাত- দিন। সপ্তাহে একবার বাসায় আসে। মীরার বাসায় যেতে চায় না উমাইশা। তার কেমন লজ্জা লাগে। এভাবে অন্য কারো বাসায় কি করে থাকবে সে? উশান, মীরা বারবার বুঝিয়েও উমাইশা কে সহজ করতে পারেনি। শেষে হতাশ হয়ে ফারদিনের বাসায় যাওয়ার প্রস্তাব দিলে উমাইশা তা খুশি খুশি গ্রহণ করে। চট্টগ্রাম তার ভীষণ প্রিয় জেলা।

কাজের চাপ কম থাকার দরুন আজ বাসাতেই আছে উজান। ড্রইং রুমে বসে ফারদিনের সাথে কথা বলছিল সে। কথা বলার এক পর্যায়ে সে একটু অন্যমনস্ক হলো। আমতা আমতা করে প্রশ্ন করল,

-” দাদু বাবার কোনো খোঁজ – খবর জানো? কতোটা বছর হয়ে গেলো বাবাকে দেখিনা। কথা বলা হয়না তার সাথে। বাবাও একবার ফোন দেয়না। বাবা কি সুস্থ আছে দাদু? ভাইয়ার সামনে বাবার প্রসঙ্গ তুললেই ভাইয়া খুব রেগে যায়। কিন্তু আমি জানি দাদু ভাই কতোটা ভালোবাসে বাবাকে। ”

ফারদিন গহীন চোখে তাকাল। থেমে থেমে বলল,

-” আয়মান! ও দেশেই আছে উজান। চার মাস ধরে ও বাংলাদেশে। ”

উজান চরম আশ্চর্য হলো! বিষ্ময়ে অধরের মাঝে ব্যাবধান সৃষ্টি হলো তার। প্রশ্ন জাগল মনে, বাবা এতো মাস ধরে যদি দেশেই থাকে তাহলে তাদের সাথে যোগাযোগ কেনো করছে না?

_______

অবশেষে বহুল সেই কাঙ্খিত দিন। উশানের ধারণা অনুসারে যেখানে হা’মলা হওয়ার কথা আজ ঠিক সেখানেই হা’মলা হবে তা কিয়ৎক্ষণ পূর্বেই গোয়েন্দা বিভাগ হতে বার্তা এসেছে।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অত্যান্ত নগ্ন এক স্থান যেখানে মানুষের চলাচল, মানুষের বসবাস খুবই কম ঠিক সেখানেই হা’মলা হবে আজ। উশানের কথা মতো পুলিশ সেখানকার মানুষকে অতি গোপনে রাতের আঁধারে সেখান হতে সরিয়ে নিয়েছে। কাঙ্খিত স্থান হতে অনতিদূরে এক নির্জন জঙ্গলে উশানের টিম। হেলিকপ্টারে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনছে। উশানের নির্দেশ পেতেই তারা আকাশপথে ছুটবে। উশান বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পড়ে জঙ্গলের আশেপাশ দেখছিল।ঠিক তখন তার টিমের একজন সদস্য দৌড়ে আসলো। অতীব দ্রুত কন্ঠে সে বলল,

-” স্যার আপনার কথা অনুযায়ী আজ আকাশপথে প্লেন, হেলিকপ্টার চলা নিষেধ ছিলো। কিন্তু মাত্রই কক্সবাজারের সমুদ্রে থেকে প্রায় কয়েক’শ কিলোমিটার দূর থেকে একটা হেলিকপ্টার আসা শুরু হয়েছে। হেলিকপ্টার টা রবিনসন – ২২ স্যার। স্যার হেলিকপ্টার’টা কোনো রেকর্ডে পড়ছে না। মেবি ঐটাই সন্ত্রা’সীদের হেলিকপ্টার’টা স্যার।এবার ওরা তিনটা হেলিকপ্টার নিয়ে এগিয়ে আসছে। ”

উশান ব্যাস্ত পায়ে সামনে দৌড়ানো শুরু করল।বলে উঠলো,

-” সবাই প্রস্তুত হও! ”

ছয়টা হেলিকপ্টারের বদলে এখন পনেরোটার মতো হেলিকপ্টার আনা হয়েছে। পয়ত্রিশ জনের পাশাপাশি রয়েছে জরুরি প্রয়োজনে আরো পঞ্চাশ জন। কাল রাতেই এই ব্যাবস্থা করেছিল উশান। তার বারংবার মনে হচ্ছিলো, শেষের হা’মলাটা এতোটা সাধারণ হবেনা।গুরুতর কিছু হবে। প্রায় ১৬ বছর পরপর এই সন্ত্রা’সী দল হা’মলা করেছে। এবার না ধরতে পারলে আবারও ১৬ বছর পর ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে এরা।

চট্টগ্রামের আকাশপথে গিয়ে আয়ত্তে আনা হলো স’ন্ত্রা’সীদের সেই হেলিকপ্টার তিনটি। প্রবল গু’লি বর্ষণ, কান এঁটো করা প্রখর শব্দ শ্রবণ করে তখন ভূমিতে অবস্থানকৃত মানুষজনের রুহ কেঁপে উঠল। দীর্ঘ দুই ঘন্টার পরিশ্রমে হেলিকপ্টার তিনটি যখন ভূমিতে আনা হলো তার পরপরই আচানক উশান পাইলট ছাড়া বাকি তিনজন সন্ত্রা’সীকে গু’লি করে বুক ঝাঝড়া করে মে’রে ফেলল। বাকি পাইলট তিন জন এবার সুস্থ, স্বাভাবিক।জিহ্বা কিংবা হাত, পায়ে তাদের কোনোরূপ আঘাত নেই। উশান পাইলট তিন জনের কাছে এগোল। শান্ত থেকে ছুঁড়ে দিল বুক কাঁপানো চাহনি। পি’স্তলে বুলেট লোড করতে করতে অতি শীতল কন্ঠে শুধালো,

-” দেশে জন্মে, দেশের মাটিতে বসবাস করে দেশেরই ক্ষতি করিস? ”

পাইলট তিনজন জবুথবু হয়ে মাটিতে বসে কাঁপছে। উশান সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাদের পর্যবেক্ষণ করা শেষে বুঝে নিল এই তিনজনের আসলে কোনো দোষ নেই, এরা নির্দোষ। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য হাত আছে যার পরিপ্রেক্ষিতে তারা আজ এরূপ অবস্থায়।হাঁটু গেড়ে ভূমিতে বসল উশান। হাতের পি’স্তল ঘোরাতে ঘোরাতে জিজ্ঞেস করল,

-” তোদের আসল আস্তানা কোথায়? সত্যি করে বলবি। ”

দু’জন মুখ খুলল না। কাপাঁ কাপাঁ চোখে তারা শুধু উশানকে দেখল। তৃতীয়জন বলল,

-” আমরা খারাপ লোক না স্যার। বিশ্বাস করুন!ওরা আমাদের বাধ্য করেছে। আমাদেরকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ওদের আস্তানায় পরশু দিন। তুলে নিয়ে বলল এইদিন এখানে হেলিকপ্টার চালিয়ে যেতে হবে। আমরা চট্টগ্রাম এয়ারলাইনসের পাইলট স্যার। চাইলে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। প্রাণের ভয়ে এমনটা করেছি। মাফ করে দিন স্যার।”

-” ওদের আস্তানা কোথায়? ”

-” কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ঐদিকে স্যার।ওখানে থেকে প্রায় কয়েকশ কিলোমিটার দূরে। নির্জন স্থান, সেখানে সূর্যের আলো অব্দি পৌঁছায় না। সেখানে একটা পরিত্যক্ত ভবন আছে স্যার। পরিত্যাক্ত ভবন এর নিচে, মাটির নিচে ওদের আস্তানা। বিশাল বড় জায়গা জুড়ে। ওদের দলে প্রায় লাখ খানেক মানুষ স্যার। ”

উশান উঠে দাঁড়ালো। ফোন করে ইনানকে সবকিছু খুলে বলল। অতঃপর ফিরে এসে উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-” এই তিনজন পাইলট সহ আমরা মোট ষাটজন যাচ্ছি সেখানে। আজই, এখনি! অস্ত্র নাও আরো কিছু। ”

উশান এবার জব্দ করা হেলিকপ্টারে উঠে বসলো সেখানে সিগন্যাল পাঠানোর ডিভাইস তা সন্তর্পণে নিজের কাছে নিয়ে নিলো। হেলিকপ্টার থেকে বেড়িয়ে এসে সে হাতের ডিভাইস গুলো সামনে থাকা দীঘিতে ছুঁড়ে ফেলল। তার ডান হাত থেকে র’ক্ত পড়ছে অনর্গল। একজন তা দেখে দৌড়ে এসে বলল,

-” স্যার আপনি তো অনেক আঘাত পেয়েছেন। আসুন ব্যান্ডেজ করে দেই। ”

উশান ভারী কন্ঠে জবাব দিল,

-” দরকার নেই। যাও! ”

______

উশান সন্ত্রা’সীদের আস্তানার কয়েক কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হাতের পেশী তার ক্ষণে ক্ষণে ফুলে ফেপেঁ উঠছে। কপালের রগ সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে। অন্তঃকরণে তার বিশাল প্রশান্তির ভেলা বইছে। অবশেষে এতো বছর পর সে তার মায়ের খু’নিদের নিজ হাতে শাস্তি দিতে পারবে। রুমিশার করা অর্ধসমাপ্ত কাজটি আজ সমাপ্ত করতে পারবে। পাইলট তিনজনকে সঙ্গে করে এনেছে সে। তারা দিক নির্দেশনা দিতে পারবে। তাদের তিনজনের মাঝ থেকে রাদিফ নামের একজন পাইলট এগিয়ে আসল। কাঁপা কন্ঠে বলল,

-” স্যার! হেলিকপ্টার থেকে বো’মা ফালানো যাবেনা এখানে। ভিতরে অনেক নিরীহ মানুষ রয়েছে স্যার। তারা মারা যাবে তাহলে। ”

উশান সামনে দৃষ্টিপাত নিবদ্ধ করে বলে উঠলো ,

-” জানি আমি।প্রায় বিশ হাজারের মতো মানুষ বন্দী এখানে কয়েক বছর ধরে। ”

-” তাহলে কি করবেন স্যার? কিভাবে ভেতরে যাব?”

শুকনো পাতায় পা ফেলার মড়মড় শব্দ। উশান ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করতে বলল। তারা আড়ালে সরে আসলো। প্রায় বিশ মিনিট পর বেড়িয়ে আসল ঘন জঙ্গলের মাঝ থেকে সিয়া। গাছপালার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা উশান ঠোঁট বাকিঁয়ে হাসল। বলল,

-” শি উইল বি হেল্প আছ! ”

চলবে~

( আজকে সবাই একটু মন্তব্য করবেন। বিশাল বড় পর্ব দিয়েছি। ভালোবাসা… ❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here