#তেজস্ক্রিয়_রক্তধ্বনি
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_৩১
অভিজিৎ এর সাথে যতটুকু কথোপকথন হচ্ছে সব টুকুতেই তীব্র ওর মস্তিষ্কের অবস্থা খুবই বিভ্রান্তিকর ও বিব্রত করে দিচ্ছে। ওর ব্রেইনকে এমনভাবে ড্রাইভার্ট করে দিচ্ছে কথায় কথায় যেনো, অভিজিৎ চোখের সামনে অস্ত্র থাকা সত্বেও কিছু না করতে পারে।
অভিজিৎ তো এখনো বিশ্বাস ই করতে পারছে না তীব্র বেঁচে আছে,আবার ওর সামনে আরাম করে বসে আছে পায়ে পা তুলে।
অভিজিৎ শেষমেশ ঠিক করলো কোনো মতে এখান থেকে পালিয়ে যাবে।
চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে প্ল্যান করতে করতেই তীব্র বুঝে যায় অভিজিৎ কি করতে যাচ্ছে, তাই বিভ্রান্তিতে না পড়ে ঠান্ডা মস্তিষ্ক মেজাজে চুপচাপ বসে ওর এক্টিভিটিস দেখছে আর মজা নিচ্ছে।
সামনে তীব্র অলরেডি অস্র হাতিয়ার বাড়িয়ে দিয়েছে তা সত্ত্বেও অভিজিৎ এর এই ব্যাপার টা খেয়াল হচ্ছে না। কারণ অভিজিতের মাথায় চলছে কি করে তীব্রর মুঠি থেকে বের হবে। এই মুহূর্তে তীব্রকে মারার ইনটেনশন মাথায় নেই, বরং নিজেকে বাঁচানোর।
উঠে দাঁড়িয়ে ছুটতে যাবে তার আগেই ল্যাং মেরে ফেলে দেয় তীব্র।
অভিজিতের হুঁশে এলো আর যাই হোক এভাবে বের হতে পারবে না তীব্রর খোপ থেকে।
দুজনেই হাতে পায়ে লড়তে লাগলো, একে অপরকে আহত করার প্রতিযোগিতায় নামলো, অবশ্য অভিজিৎ এর লগ্ন খারাপ যাচ্ছে তাই সে সফল হতে পারছে না, তীব্রর হাতের মার খেয়ে যাচ্ছে।
বেশকিছুক্ষণ মারামারির পর অভিজিৎ এর তীব্রর হাতে কুপোকাত হতে হয়।অভিজিৎ এর হাত দুটো পিঠের সাথে লাগিয়ে এক করে হ্যান্ডকাপ দিয়ে আটকে দেয়। অভিজিৎ ফ্লোরে পড়ে থাকে।
সর্বশেষ তীব্র আবার পায়ের উপর পা তুলে সিগারেট ধরালো।
-এখন বলো তো অভিজিৎ কিভাবে এখান থেকেই তোমার ভবিষ্যৎ যাত্রার অন্তিম করা যায়? প্রতিশোধ নেয়ার জন্য গুলি করবো?
যদি বেঁচে যাও আমার মতো?ছুরিকাহত?
নাহ সেটাও না, এটাতে বেঁচে ফেরার চান্স হান্ড্রেড পারসেন্ট!কিভাবে মারা যায় বলোতো?
অভিজিৎ আর্তনাদের সাথে উত্তেজিত কন্ঠে বললো,
-এই তীব্র ভাই আমার। তুই তো মরিস নি ভাই,বেঁচেই আছিস।আমার প্রাণ টা ভিক্ষা দে ভাই, আমি এদেশে আর ফিরবো না, আমার সমস্ত স্মাগলিং সোর্স বন্ধ করে দিবো, কথা দিচ্ছি।
তীব্র হো হো করে হেসে দিয়ে বললো,
– বানর বুড়ো হলে কখনো গাছে উঠা ছেড়ে দিয়েছে দেখেছো?
-দেখ তীব্র ভাই অমন করিস না ভাই!ছেড়ে দে ভাই।
-ধরো তোমাকে একটা বাধ্য কুকুর দিলাম। কুকুরটার লেজ বাঁকা।তুমি তাকে খাওয়ালে,পড়ালে, আদর-যত্ন করলে,বুঝালে কিন্তু লেজ সোজা করাতে পারলে না ।এবার তুমি সেই কুকুরকে খুব পেটালে অত্যাচার করলে, এমনকি তার লেজটা স্ট্রেইটনার দিয়ে অনেক চেষ্টা করলে উল্টো দেখা গেলো লেজ টা পুড়ে আরো বাঁকিয়ে গেছে। তখন তুমি কি করবে?অবশ্যই কুকুরটাকে তাড়িয়ে দেবে? তাই নয় কি?
এরপরেও যদি দেখো কুকুরটা রোজ তোমাকে তাঁর বাঁকা লেজ দেখিয়ে তোমায় ব্যঙ্গ করছে তখন কি করবে?
তুমি হলে সেই কুকুর, যাকে আমি অনেক বুঝিয়েছি সহজ ভাষায় ও পদ্ধতিতে।আর তুমি কি করলে?আমাকে কামড়ে গেলে, আবার
বাঁকা লেজ দেখিয়ে ব্যঙ্গ করতে চলে এলে।
-ভাই তীব্র আমি যদি জানতাম তুই বেঁচে আছিস, আমি ভুল করেও এদেশের মাটিতে পা রাখতাম না, ছেড়ে দে ভাই।
তীব্র অভিজিৎ এর আর্তনাদ দেখতে দেখতে পকেট থেকে একটা কাঁচের শিশিবোতল বের করলো।
-এটাতে কি জানো? ইনল্যান্ড তাইপেনের বিষ।
পৃথিবীর সব থেকে ভয়ানক সাপের মারাত্মক বিষ।তাইপেনের একটা ছোবলের বিষে ৬০ থেকে ১০০ জন মানুষ মরতে সক্ষম।এক তাইপেনের ছোবল সমান ৫০টি কোবরার ছোবল!
সেখানে একাধিক ছোবল পরিমাণ বিষ তোমার গায়ে সরি তোমাদের একেকজনের গায়ে পুশ করলে ঘটনা কোথায় দাঁড়াবে? শরীরের মাংস কি খুলে খুলে পড়বে? চলো এক্সপেরিমেন্ট শুরু করে দেই। অনেক এক্সপেন্সিভ এই বিষ, সেই সুদূর অস্ট্রেলিয়া
থেকে আনা স্পেশাললি তোমাদের জন্য।
-না না না ভাই তীব্র, কত টাকা চাস তুই? ছেড়ে দে আমায়। আমার সব প্রোপার্টি তোর।
-এই প্রোপার্টি গুলো যদি আমি কবরের ভেতর নিয়ে যেতে পারতাম তাহলে অফারটা নেয়াই যেতো।
-তীব্র তুই ভুলে যাস না, তোর যে প্রেমিকা আছে না একটা, দীপ্তি ওর খবর কিন্তু আমরা জানি। আমরা চাইলে তোর প্রেমিকার ক্ষতি করতে পারতাম কিন্তু করি নি। তুই যে দীপ্তিকে ভালোবাসিস সেটা সবাই জানি আমরা, তুই মরে গেছিস ভেবে মনুষ্যতের খাতিরে তোর প্রেমিকার কোনো ক্ষতি করি নি। অন্তত সেই পুণ্যির জন্য ছেড়ে দে আমায়।
-দীপ্তিকেও মারতে চেয়েছিলিস তোরা?কেনো মারিস নি ওকে?এটা তো মস্ত বড় ভুল করেছিস রে!মারা উচিৎ ছিলো,অন্তত এর জন্যে হলেও তোর আজ নিস্তার নেই।
-তীব্র আমাকে বাঁচিয়ে রাখ,আমাদের পুরো টিমকে ধরতে সাহায্য করবো,আমায় ছাড়।
-প্রথমত আমি তোর কাছে সাহায্য চাই নি,দ্বিতীয়ত তুই যে একটা বিশ্বাস ঘাতক তোর পার্টনার রা জানে না, জানলে ওরা তোকে ছাড়বে না। তুই যদি ওদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারিস নিজের স্বার্থে, তাহলে আমার সাথে যে করবি না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। আর জেনে শুনে ভুল, তীব্র কখনো করে না।
কথায় আছে না, একটা ভুল সারাজীবনের কান্না।
– তী তীব্র ভাই আমার,মাফ কর ভাই।
-কি ভাই ভাই করছিস ? তোর মতো লোক কেনো আমার ভাই হবে?আর আমার নিজের ভাই ও যদি এমন পাপিষ্ঠ হয় তাকেও আমি কোনো সুযোগ দিতাম না। তুই তো দূরেই থাক।
কথাটা শেষ করে তীব্র একটা বল মুখে গুঁজে দিলো যেনো বেশি চিৎকার করতে না পেরে যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে। একটা সিরিঞ্জে বিষ নিয়ে অভিজিৎ এর গায়ে পুশ করে। এরকম মারাত্মক বিষ অভিজিৎ এর শরীরে প্রবেশ করে প্রতিটা শিরায় শিরায় গিয়ে রক্তের সাথে মিশে যন্ত্রণায় ছটফট করছে কিন্তু চিৎকার করতে পারছে না। মৃত্যুর যন্ত্রণা উপলদ্ধি করতে পারছে প্রতিটা ন্যানোসেকেন্ডে । ভেতরে যেনো আগুন লেগে গেছে, এসিডদগ্ধ যন্ত্রণাও এতো ভয়াবহ হয় না, যতোটা হচ্ছে এই তাইপেনের বিষে।
অভিজিতের কঠিন মৃত্যুর দশা তীব্র চোখ ভরে দেখে প্রশান্তির হাসি দিচ্ছে।
ভালোমতো চেক আপ করলো প্রাণ টা বেরিয়ে গেছে কিনা, তারপর আবার আগের মতো ইজি চেয়ারে বসিয়ে সব কিছু আগের পজিশনে রেখে মুখে মাস্ক আর ক্যাপ পড়ে ভালোমতো বেরিয়ে গেলো সবার সামনে থেকে।
এরপর আবার সেই রুমে প্রবেশ করলো যেটা ওর নামে বুকিং করা ছিলো।রুমে যে স্টাফকে সেন্সলেস করিয়ে রেখেছিলো তাকে তার পোশাক পড়িয়ে বের করে নিয়ে সেই লিফটের এক কোণে বসিয়ে রাখলো।
-মিশান বেবি বেরিয়ে আসো, কাজ শেষ।
কথাটা বলেই তীব্র হোটেল থেকে বেরিয়ে যায়।
আর বাইরে থেকে আব্দুর রহমান সব সিসি ক্যামেরা আবার আগের মতো অন করে দেয়।
মিশান এবার নিজের এক্টিং শুরু করে দিলো ম্যানেজারের সাথে, এতোক্ষণ ম্যানেজার কেমন যেনো তাল ছাড়া বিহেভ করছিলো,অকারণে হাসছে, উল্টা পাল্টা কথা বলছে।তাঁর কাজ যে ফুটেজ চেক করা সেটা তাঁর খেয়াল ই নেই।
মিশান ম্যানেজারের হুঁশ ফেরানোর জন্য চোখে মুখে পানির ছিটা দিলো,ম্যানেজারের হুঁশ ফেরার জন্য যা যা করণীয় তাই তাই করলো।মিশান নিষ্পাপ ভঙ্গীতে ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে বললো,
-আপনার কি হলো বলুন তো?
এরকম মাতালের মতো করছেন কেনো?রাত কটা বেজে গেছে খেয়াল আছে? আমার কোনো ইচ্ছেই পূরণ হলো না, আমার হাজবেন্ড অফিস থেকে এসে যাবে।
-কটা বাজে?
কাঁদোকাঁদো ভঙ্গীতে শাড়ীর আঁচল কচলাতে কচলাতে বললো ,
-ঘড়ি তো হাতেই আছে দেখুন না।
ম্যানেজার ঘড়িতে সময় দেখে অপ্রত্যাশিত ভাবে বললো,
-একি সময় এতো তাড়াতাড়ি কি করে গেলো? এগারোটার কাছাকাছি!
-এখন কি হবে! আমার হাজবেন্ড তো আর কয়েক মিনিটের মধ্যে বাসায় চলে যাবে, আপনার জন্য এখন আমার ঘরটাও যাবে। কাজের কাজ কিচ্ছু হলো না, আপনি আমার সাথে এরকম করবেন আগে জানলে কখনোই আসতাম না।
ম্যানেজার হন্তদন্ত হয়ে বললো,
-প্লিজ তুমি কান্না করো না, আজকের মতো ক্ষমা করে দাও, আর হবে না এমন।বুঝলাম না কি থেকে কি হয়ে গেলো।তুমি এখন বাসায় চলে যাও, আমার গাড়ি নিয়ে যাও প্রয়োজনে। আমরা অন্যদিন মিট করবো।
-আপনার সাথে কাট্টি, কোনো কথা নেই। আমি আর আসবো না কখনো।আর গাড়িও লাগবে না।
শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ছাপিয়ে মিশান বেরিয়ে গেলো ম্যানেজারের সামনে থেকে।ম্যানেজার বেকুব হয়ে গেলো, কি থেকে কি হয়ে গেলো নিজের অজান্তে।
হোটেল থেকে বেশ কিছুটা দূরে তীব্র গাড়ি নিয়ে মিশানের জন্য অপেক্ষা করছিলো।
মিশান গাড়ির সামনে গিয়ে বাইরে থেকে তীব্রকে বলে উঠে,
-গাড়ি থেকে বের হোন।
-কেনো?
-চেঞ্জ করবো,বড্ড হিচপিচ লাগছে এই ড্রেস আপ।
-কেনো ভালোই তো লাগছে, থাকো না এভাবেই।
মিশান চোখ গরম করে বললো,
-আপনি বলবেন তারপর?
-ওকে,বাট ভেতরে আসো না।আমি থাকলে কি হবে? আমি তো আর তাকাবো না, আর তাকালেই বা কি? তুমি তো আমার বউ ই।
মিশান চোখ কুঁচকে তাকালো তীব্রর দিকে,
তীব্র ডেভিল স্মাইল দিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেই মিশান গাড়িতে উঠে মিনিটেই ড্রেস চেঞ্জ করে ফেলে,গাড়িতে আগেই একটা কুর্তী রাখা ছিলো, আর শাড়িটা পড়েছিলো প্যান্টের উপর।
চেঞ্জ করা হতেই তীব্র গাড়িতে উঠলো,
-মেকআপ রিমুভেবল টিস্যু টা কোথায় রেখেছেন?আমি তো জামার সাথেই রেখেছিলাম।
-আছে দেখো, আমি তো কিছু সরাই নি।
-না সরালে ওটার পাখা দিয়ে উড়ে গেছে?
-হতে পারে।
-গাড়িটা কোনো মলের সামনে থামান আর আমার জন্য মেকআপ রিমুভেবল টিস্যু কিনে আনুন?
-তোমার দাদা কি টাকার বান্ডেল আমার হাতে ধরিয়ে দিয়েছে? যে যখন যেটা হুকুম করবে সেটাই কিনে দিতে হবে?
-এতো কিছু বুঝি না। আমার জিনিস আপনার গাড়ি থেকে হারিয়েছে, এখন এর দায় আপনার,ক্ষতিপূরণ আপনি দেবেন।
তীব্র মুখ ভেঙিয়ে বললো,
-আমার ঠ্যাক্কা!
রুমাল দিচ্ছি পানি দিয়ে ভিজিয়ে মুখ মুছে ফেলো ।
মিশান গাড়ির পেছনের সীটের দিকে ঘুরে তাকালো, ড্রেস চেঞ্জ করে সীটে শাড়িটা অমনিই ফেলে রেখেছিলো।একটু পেছনের দিকে ঝু্ঁকে শাড়িটার একটা মাথা ধরে টান দিয়ে কাছে এনে তীব্রর গলার সাথে পেঁচিয়ে টেনে ধরলো।
-এই এই এই করছো টা কি!পাগল! মরে যাবো! ছাড়ো ছাড়ো!
-ভাদাইম্মা পানা আমার সাথে কম কম করবেন, আমি মিশান!আপনার পেয়ারের দোস্ত না, দুশমন! যেটা বলি সেটা করবেন।
তীব্র বিরক্তি ভাব দেখিয়ে বললো,
-মিশান গাড়ি এক্সিডেন্ট করলে কিন্তু দুজনেই মরবো।ছাড়ো ব্যাথা পাচ্ছি।
-গাড়ি থামান তারপর ছাড়বো।মলে গিয়ে টিস্যু কিনে আনুন।
-গাড়ি থামাতে হবে না, দেখো অই ফার্স্ট এইড বক্সের ভেতর তোমার টিস্যু রাখা আছে।
শাড়ি ছেড়ে দিয়ে চোখ গরম করে তাকালো তীব্রর দিকে,তীব্র বড় বড় শ্বাস নিলো আর বেশ কয়েকটা কাশি দিলো।
-মিথ্যে কেনো বললেন তখন?
-এমনিই মজা করে।
-আমি জানতাম তো, জিনিসটাতে আপনার হাত না পরলে কার হাত পড়েছে। দুনিয়াতে শত্রুতো আমার একটাই।
ঘন্টা খানেকের মধ্যে কেউ কিচ্ছু বুঝতে না পারলেও, যখন অভিজিৎ এর বাইরে যাওয়ার সময় হয় সে সময় ওর কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে গার্ড রা ভেতরে
প্রবেশ করে দেখে নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝড়ে পড়ে জমাট ধরে আছে। রক্তের বর্ণ কালো কুচকুচে রঙের।
হোটেলের সমস্ত স্টাফরা এসে জড়ো হয়ে গেছে কি করে হলো এমন কেউ বুঝতে পারছে না।
অভিজিৎ কে সরাসরি হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়।
কেউ এটা বুঝতে পারছে না এরকমটা কি করে হলো, মারামারির পর আঘাতের চিহ্নগুলো নীলচে বর্ণ ধারণ করে আছে।
এটা স্পষ্ট সবার চোখে, কেউ এসে মেরে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন সবার, কখন এসে মেরে গেছে!সবার অগোচরে কিভাবে ঢুকলো।
সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেও কিছু মিললো না। পুরো হুলুস্থুল বেঁধে গেছে।
কাউকে সন্দেহজনক ও লাগছে না।
হসপিটালে নিয়ে যখন দেহে সাপের বিষ শনাক্ত করলো, সবার চোখ কপালে উঠে যায়। আইনি ব্যবস্থা নিলেও কোথাও কোনো প্রুভ পায় না, শরীরে আঘতের চিহ্ন পেলেও কোনো হাতের ছাপ পায় না।সব কিছুই বিষ্ময়কর ঘটনার মতো ।
বাড়ি না ফিরে বারে গিয়ে বসে ড্রিঙ্কস করার জন্য একজন ওয়েটারকে আঙুলের ইশারায় ডেকে কাছে আসতে বললো,
-জি ম্যাডাম বলুন।
-লিসেন, দুটো বোতলের বেশি নয় দেড় হলে ভালো হয়।
-ওকে ম্যাডাম বাট!
-কোনো কিন্তু টিন্তু শুনতে চাই না,যাও।
এখানকার প্রত্যেকে জানে মিশানের কান্ড, প্রতিবার ই বলে দেয় দু বোতলের বেশি যেনো ওকে খেতে না দেয়া হয়, কিন্তু মিশান একবার খাওয়া শুরু করলে থামার ব্যক্তি না।
আজকে এমনিতেই মিশানের পর্যাপ্ত পরিমাণে ড্রিঙ্কস করতে হবে , একটু পরেই অচেনা কোনো আগুন্তুক এসে একটা ঠিকানা আর ছবি দিয়ে যাবে তাকে মারতে যেতে হবে।
যা হওয়ার তাই ই হলো।,দু বোতলের বেশি খেয়ে তিন নাম্বার বোতল হাতে নিয়ে ঢোলতে ঢোলতে বেরিয়ে যায়, অচেনা আগুন্তুকটা এসে মিশানকে প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে গেছে।
বার থেকে বের হওয়ার আগে একজনের গায়ের সাথে ঠেস লেগে বোতল সহ হাতে যা যা ছিলো সব পড়ে যায়।যার সাথে ধাক্কা লাগে তার গালে কষে দিলো এক চড়, একজন ছেলে ছুটে এসে মিশানের জিনিস গুলো উঠিয়ে হাতে দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নেয়।
মিশান বেরিয়ে যায় ওর গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
যাকে মারবে তাকে বাড়ির ভেতরে গিয়েই মারবে, মিশানের টেকনিক খাটিয়ে ওয়াল টপকিয়ে ভেতরের দিকে ঢুকে।
বাড়িটা বিশাল বড়, বাড়ির সামনেও স্কয়ার শেইফ বিশাল প্রশস্থের জায়গা।
বিল্ডিংয়ের কোনো পাশেই ভেতরে ঢুকার বা উপরে উঠার স্কোপ দেখতে পাচ্ছে না।
বোতলের ভেতরের সবটুকু অংশ খেয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর শক্তি নেই যার, সে এসেছে মার্ডার করতে!
বাড়ির চারপাশ পর্যবেক্ষণ করতে করতে একটা সময় খেয়াল করলো ভেতরে ঢুকার গেটা টা খোলা। মিশানের সুবিধাই হয়ে গেলো।যাকে মারবে তাকে ছাড়াও যদি অন্য কাউকে সামনে পায় তাকেও মেরে ফেলে যাবে এই নিয়তে।
হাতে ছুরি নিয়ে ঢোলতে ঢোলতে গেটের সামনে দাঁড়াতেই একজন বয়স্ক মহিলা গেট আটকে দেয়ার উদ্দেশ্যে গেটের কাছে আসে। আর সামনে এরকম একটা পরিস্থিতি দেখতে পায়।
মিশান তাঁর দিকে তাকিয়ে বোকা হাসি দিয়ে মাতাল স্বরে বলে উঠে,
-হাই আন্টি!
বয়স্ক মহিলাটার সাথে মিশান কিছু করার আগেই,মিশানের দিকে বড় বড় করে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠে,
-তীব্রওওওওওওও !
তীব্র নামটা শুনে মিশান একটু সটকে যায়।
তীব্র কেবলই বাড়ি ফিরেছে, নিজের ঘরে যাওয়ার জন্য কেবলি সিঁড়িতে পা রেখেছিলো,পেছন থেকে মায়ের চিৎকার শুনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে মিশান ওর মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
তীব্র ভেবেছে মিশান হয়তো ওকে ফলো করতে করতে এখানে এসে গেছে এটা ভেবেই মগজ গরম হয়ে যায়, ছুটে এসে মাকে ধরে
-আরে স্যার, আপনি এখানে?আমাকে আগে পা…(পুরোটা বলার আগেই মিশানের মুখ চেপে ধরে)
তীব্র ওর মাকে সরিয়ে নেয়।
-মা তুমি ভেতরে যাও,আমি দেখছি।
-কিন্তু বাবু?
তীব্র চোখ গরম করে বললো,
-যা বলছি সেটা করো, আর গেট আটকে দাও ভেতর থেকে, আমি আসছি একটু পর।
এটা বলেই তীব্র মিশানের হাত ধরে টেনে চলে গেলো, তীব্রর মা বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো।
চলবে…………
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ভুল গুলো ধরিয়ে দেবেন শুধরে নেবো। গল্পকে গল্প হিসেবে দেখুন,বাস্তব জীবনের সাথে মেলাতে যাবেন না দয়া করে।
ভালো লাগলে অনুপ্রেরণা দিয়ে পাশে থাকুন,ভালো না লাগলে ইগনোর করুন,ধন্যবাদ!)
আগের পর্বের লিংক:-
https://www.facebook.com/112848997065058/posts/270822344601055/
পরের পর্বের লিংক:-
https://www.facebook.com/112848997065058/posts/276188847397738/