#প্রেমহিল্লোল||০৫||
#তাসনীম_তামান্না
মেঘার মেহেন্দি অনুষ্ঠান জমে উঠেছে। সকলে নাচ-গান, মজা করায় মত্ত। কুয়াশা তার রুমে কান্না থামিয়ে থমথমে মুখে বসে আছে। তুতুল ওর দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে থেকে বলল
–কুশু, ভাইয়ার সাথে তোমার কী হয়েছে? ভাইয়া কী কোনো কারণে বকেছে? তুমি এভাবে আছো কেনো? আমাকে বলো প্লিজ। আমি সমাধান করার চেষ্টা করবো।
–কিছু হয়নি ভাবি তুমি তোমার কাজে যাও আমাকে একা থাকতে দাও।
তুতুল অস্থির হয়ে বলল
–নিচে সবাই মজা করছে। তুমি না গেলে সবাই খারাপ ভাববে। চলো প্লিজ। আমি ভাইয়াকে তোমার সাথে কথা বলতে বারণ করে দিবো। তোমার আশপাশে আসতে বারণ করে দিবো তুমি মন খারাপ করে থেকো না প্লিজ।
কুয়াশা ওর অস্থিরতা বুঝতে পেরে বলল
–তুমি যাও আমি একটু পরে আসছি। টেনশন করো না কাউকে কিছু বলব না। মেঘার স্পেশাল দিনগুলো কোনো ফালতু লোকের জন্য নষ্ট হক সেটা আমি চাই না তাই নিশ্চিন্তে থাকো।
তুতুল আমতা আমতা করে বলল
–আমি সেসব ভেবে কিছু বলি নি। তোমার কথা ভেবেই…
–বললাম তো তুমি যাও আমি আসছি।
তুতুল চলে গেলে। কুয়াশা মেহেদি অসহ্য লাগছে বলে তুলে ফেললো ১ ঘন্টা রেখেছিলো অর্গানিক মেহেদীতে ৮/১০ ঘন্টা রাখতে হয়। নাহলে কালার হয় না। কুয়াশার মন খারাপ হলো জেদের বসে তুলে ফেলে এখন আফসোস হচ্ছে। কয়েক গ্লাস পানি পান করে মাথা ঠান্ডা করে নিচে গেলো আশেপাশে আর তুষারকে দেখা যাচ্ছে না। ও মেঘার পাশে গিয়ে বসতে মেঘা ফিসফিস করে বলল
–কী রে এতোক্ষণ কোথায় ছিলি? তুই তলে তলে আমাকে না জানিয়ে টেম্পু চালাচ্ছিস না-কি?
–আমি টেম্পু, সিএনজি, বাস, ট্রেন যা ইচ্ছে চালাবো। তোর কী? তুই বিয়ে করে চুপচাপ বিদায় হ।
–আমি চলে গেলেও তোর ওপরে নজর থাকবে। এবার বল কী করছিলি?
–প্রেম করছিলাম!
ওর কথায় মেঘা দুষ্টু হেসে বলল
–কার সাথে তুষার ভাইয়ের সাথে?
কুয়াশার আর বুঝতে বাকি রইলো না মেঘা জানে। ও চোখ রাঙিয়ে বলল
–একদম আজেবাজে কথা বলবি না। অনুষ্ঠানে মনযোগ দে।
ওকে রেগে যেতে দেখে মেঘা আর খোঁচাল না পরে চাপাচাপি করে ওর মুখ থেকে সব বের করে নিবে।
তুষার বিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে বাসার পাশে দোকানে গিয়ে বসলো। সিগারেট ধরিয়ে ঠোঁটে চেপে ধরলো। ঈশান আর রাহুল ও এখানে ওরা কেউ কাউকেই খেয়াল করে দেখলো না। ঈশান বিরক্তি নিয়ে বলল
–মেয়েদের মধ্যে যাচ্ছিস কেন ওখানে কী কাজ তোর? আর এমন ব্লাস করছিস কেনো? এই তোর কী জেন্ডার পালটে গেলো?
রাহুলের প্রেম প্রেম মুড চেঞ্জ হলো না। লজ্জা পেয়ে বলল
–দোস্ত, আই থিংকস আ’ম ফল ইন লাভ!
–বাহ তা সে পোড়াকপালিটা কে? তাকে জানিয়েছিস? না জানালে আমাকে বল মেয়েটাকে তোর থেকে দূরে থাকতে বলে তাকে বাঁচায়। আমারও তো একটা দায়িত্ব আছে না-কি!
রাহুল এবার ভয়ানক রেগে গেলো বলল
–তুই আদেও আমার বেস্টফ্রেন্ড তো! আমার হয়ে সুনাম করার বদলে দুর্নাম করছিস। মীরজাফর যা দূর হয়ে যা
–বল মেয়েটা কে? কোথায় থাকে? নাম কী? ভালো কী খারাপ আগে খোঁজ নিয়ে দেখি।
রাহুল মিনমিন করে বলল
–মেয়েটাকে চিনিস
–আরে এতো ভাং না ধরে বল
রাহুল গলা ঝাড়া দিয়ে বলল
–অনু!
ঈশান কিছু সময় কথা বলতে ভুলে গেলো। অতঃপর স্বম্ভিৎ ফিরতে ওর ওপরে চড়াও হয়ে বলল
–শালা আমি আগেই জানতাম তোর ক্যারেক্টরের সমস্যা তাই তো বিয়ে বাড়িতে এসে মেয়ে খুঁজে বেড়াস। এখন ফ্রেন্ডসার্কেলের মধ্যে প্রেম ডুকাচ্ছি। শালা, অনু, কুশু, মেঘু আমাদের বোনের মতো আর তুই!
–আরে বিশ্বাস কর কীভাবে কী হলো বুঝতে পারি নি। কুশু, মেঘুকে বোন ভাবতে সমস্যা নেই কিন্তু অনু ইম্পসিবল।
–শালা যা পারিস কর। ফ্রেন্ডশিপে এতটুকু ফাটল ধরলে তোর ব্যবস্থা তখন করা হবে।
তুষার ওদের সকল কথা মন দিয়ে শুনতে না চাইলেও শুনে ফেললো। নাক, মুখ দিয়ে অনবরত ধোঁয়া ছাড়ছে। ওরা দু’জন দোকান থেকে বের হওয়ার সময় তুষারকে দেখে এগিয়ে গিয়ে বলল
– কী ব্যাপার তুষার ভাই আপনি এখানে? আপনি সিগারেটও খান?
–কেনো আমার সবকিছু করা বারণ না-কি?
ঈশান দাঁত কেলিয়ে বলল
–না তা নয় কিন্তু আপনার ওপরে ক্রাস খাওয়া মেয়েগুলো এই অবস্থায় দেখলে রাগ করবে।
রাহুল বলল
–আরে না। এখনকার মেয়েগুলো গা*ঞ্জাখো*র, সিগা*রেটখো*র পোলা পছন্দ করে ভাইয়া আপনি চালিয়ে যান
তুষার রেগে ওদের দিকে তাকাতে দু’জন হাসার চেষ্টা করে ঠেলাঠেলি করে বাড়ির দিকে চলে গেলো। ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সিগারেট পা দিয়ে পিষে নিজেও বাসার দিকে গেলো।
রাত অনেক হয়েছে সকলে হৈ-হুল্লোড় করে ক্লান্তিতে ঢলে পড়েছে। রুমের ফ্লোর, বেড খালি নেই। কুয়াশা এভাবে ঘুমাতে পারে না। শুধু বিয়ে বাড়ি বলে চুপচাপ আছে নাহলে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলতো। ঘুমের জন্য মাথাটা ব্যথা করছে। মেঘাও টলছে কিন্তু ঘুমাতে পারছে না এই লোকজনের মধ্যে। ওরা দু’জন কাঁথা বালিশ, বিছানা, মশার কয়েল নিয়ে ছাদে গেলো এখানে কেউ নেই। সারাক্ষণ বাতাস বইছে গরম লাগবে না। দু’জন সব গুছিয়ে পাশাপাশি শুয়ে পড়লো। কুয়াশার ঘুম চলে এসেছিল মেঘার ফিসফিসানি, হাসিতে ঘুম ভেঙে গেলো রেগে ওর পায়ে লাথি মেরে বলল
–দূরে গিয়ে কথা বল কানের কাছে একটাও শব্দ আসলে তোকে ছাদ থেকে ফেলে দিবো।
মেঘা বিরক্তি নিয়ে উঠে ছাদের অন্য পাশে গেলো। কুয়াশা ঘুমালো। কিন্তু সে শান্তির ঘুম বেশিক্ষণ টিকলো না। তুষার ছাদে এসেছিল স্বল্প আলোয় চারিদিককে আলোকিত সবটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ও প্রথমে কুয়াশাকে দেখে নিজে ভুল মনে করেছিলো। পরে দেখল না না এটা সত্য। ওর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। কী মিষ্টি দেখতে লাগছে। মেয়েটা কাঁদলে, হাসলে ঘুমালে সব কিছুতেই মায়াবী লাগে এতো মায়া কেনো? সে এই মায়ায় আটকা পড়েছে।
কুয়াশা অস্বস্তি নিয়ে ফট করে চোখ খুলে ফেললো। তুষার থতমত খেয়ে বড়বড় চোখ করে দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে রইলো। কুয়াশা উঠে বসে বার বার ওড়না ঠিক করতে লাগলো। তুষার আমতা আমতা করে বলল
– আমি দূরেই আছি তুমি ঘুমাচ্ছিলে কোনো ডিস্টার্ব করি নি সরি তবুও ঘুম ভেঙে গেলো। আমি আসছি।
তুষার নিজের মতো সবটা বলে তাড়াহুড়ো করে ছুটে বের হয়ে গেলো। কুয়াশা কিছু বলার সময় সুযোগ দিলো না্ তাহলে কী রাগীপুরুষটা ভীতুরাণীকে ভয় পায়?
চলবে ইনশাআল্লাহ
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/