প্রেমহিল্লোল||২৩|| #তাসনীম_তামান্না

0
8

#প্রেমহিল্লোল||২৩||
#তাসনীম_তামান্না

ভূপৃষ্ঠের একাংশে সূর্য্যিমামা উঁকি মারছে। চারিদিকে তার লালকমলাটে সোনালি আলোয় সজ্জিত করে দিচ্ছে। রোদে তেজে ভ্যাবসা গরম। রাস্তাঘাটে ধীরে ধীরে মানুষজনের আনাগোনা বেড়ে যাচ্ছে। কারোর অফিসে যাওয়ার তাড়া, শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার তাড়া, আর চালকদের প্যাসেঞ্জারদের পৌঁছে দেওয়ার তাড়া।

তুষার আড়মোড়া ভেঙে আলসামি ছেড়ে হায় তুলতে তুলতে চোখ ডোলে কুয়াশার দিকে তাকালো দেখলো কুয়াশা ওর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। ঘুম থেকে উঠলে ওর কিছুক্ষণ সময় লাগে সব কিছু বুঝে উঠতে। সবকিছু বুঝে পেরে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলল “কী হয়েছে? তুমি কখন ঘুম থেকে উঠছো? কিছু লাগবে? আমাকে ডাকো নি কেনো?”

ও তখনও উত্তর না দিয়ে তাকিয়ে আছে দেখে তুষার বলল “কী হয়েছে কথা বলছ না কেনো?”

–ভাবছি…

তুষার ভ্রু কুঁচকে বলল
–কী ভাবছো?

–ভাবছি এতোগুলো প্রশ্ন করলেন কোনটার উত্তর আগে দিবো?

তুষার হতাশ হয়ে বলল “পর পর উত্তর দাও।”

–তাহলে আরেকবার প্রথম থেকে প্রশ্ন করুন তো পর পর কী প্রশ্ন ছিলো ভুলে গেছি রিভাইস করা দরকার করুন করুন আবার প্রশ্ন করুন

তুষার কোনো কথা বলল শুধু তাকিয়ে রইল। কুয়াশা অধৈর্য্যে হয়ে বলল “কী হলো প্রশ্ন করুন”

তুষার বেড থেকে উঠে পলিথিন খুঁজতে খুঁজতে বলল
–ফ্রেশ হবে চলো। হাতে পলিথিন বেঁধে দিচ্ছি পানি লাগানো যাবে না।

–কথা ঘুরাচ্ছেন কেনো?

–কী প্রশ্ন করেছিলাম আমার মনে নেই।

–এমন ব্রেন নিয়ে চলেন কীভাবে?

–হ্যাঁ কী আর করব বলো। এখন তো তুমি আছো সামলে নিও।

কুয়াশা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। তুষার ততক্ষণে ওর হাতে পলিথিন বেঁধে দিয়েছে। কুয়াশা ধীমি কণ্ঠে বলল “আপনি এতো কেয়ারিং হাসবেন্ড কীভাবে হলেন??”

ও হেসে ফেললো বলল “তাই নাকি? কই আমি তো জানি না তবে চেষ্টা করছি।”

–কেনো চেষ্টা করছেন? ওয়েট আপনার কী আগে বউ ছিলো? আপনি আগে বউয়ের থেকে ট্রেনিং নিয়েছেন?

–ওহ নো! কুশু প্লিজ এখানেই থেমে যাও।

–কেনো কেনো? থামবো কেনো? মানে সামথিং সামথিং?

তুষার ওর দিকে ঝুঁকে গিয়ে বলল
–যা মনে করছো যা ভাবছ তাই হ্যাপি?

কুয়াশা কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল “আপনি আমাকে এভাবে ঠকাতে পারলেন? আপনার একটুও বুক কাঁপলো না? একটুও কষ্ট হলো না?”

তুষার সোজা হয়ে উঠে দাড়িয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল “তুমি ড্রামকুইন। ড্রামা সুন্দর করছো। বাট তোমার সাথে ড্রামা করার মুড নাই।”

কুয়াশা চোখে পানি নিয়ে হাসতে হাসতে শুয়ে পড়লো। শুয়ে শুয়ে গড়াগড়ি দিয়ে কতক্ষণ হাসলো। তুষার তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো। তার বউকে হাসলে কত সুন্দর স্নিগ্ধ লাগে। ভালোবাসার মানুষের সব কিছু ভালো লাগে। তার খুশি দেখলে মনটা আনন্দে ভরে যায়।

কুয়াশা উঠে বসে বলল “অনেক হেসে ক্ষুদা লেগে গেছে। কিছু খাবো!”

–কী খাবে?

–বিরিয়ানি, বোরহানি, কোক।

–এত সকালে? উমম ওকে আমি ট্রাই করে দেখি পাওয়া যায় কিনা।

–না পেলে আইসক্রিম আর পটেটো আনবেন।

–খালি পেটে ওসব খাওয়া যাবে না।

–দূর… যা বলছি তাই আনবেন।

তুষার ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল “ফ্রেশ হয়ে এসো তারপর যাচ্ছি। কিছু দরকার হলে…”

–আপনি যান খুব খুদা পেয়েছে। আমার কিছু দরকার হলে আমিই নিয়ে নিবো। এতোটাও অক্ষম নই। যান তাড়াতাড়ি ফিরবেন।

–আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি হাতে পানি লাগাবে না ব্যাডেজ ভিজাবে না।

ও বিরক্ত হয়ে বলল “আপনার জ্ঞান দেওয়া শেষ হলে যান তো”

তুষার আর কিছু না বলে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো। কুয়াশা নিজে নিজে বলল “কেয়ারিং ভালো তবে ওভার কেয়ারিং ভালো না। একদম ভালো লাগে না।”

কুয়াশা ফ্রেশ হয়ে এসে হাতের পলিথিন খুলে ফেললো মুখের পানি কীভাবে মুছবে বুঝতে পারছে না। হাতে এতো ব্যাথা একটু নড়াচড়া করলে ব্যাথাতে জান বের হয়ে আসছে মনে হচ্ছে। ও অসহায় অনুভব করলো তুষারকে মনে পড়ছে লোকটা ঠিকিই বলেছিলো দরকার হলে তাকে লাগবে আর ও নিজেকে ভীষণ জ্ঞানী মনে করে পাঠিয়ে দিয়ে বকলো এখন নিজেই নিজের ফাঁদে পড়ে গিয়েছে। ও ব্যাথা হাত দিয়ে তবুও তোয়ালে দিয়ে মুখে ঘর্ষণ দিতেই হাতে তিব্র ব্যাথা অনুভব হলো। তোয়ালে রেখে দিয়ে হাতের দিকে তাকালো মুখ ভেজা অবস্থায় রেখে দিলো নিজে নিজে ওভাবেই শুকিয়ে যাক। ও ধুপ করে শুয়ে পড়লো এভাবে শুয়ে-বসে থাকতেও ভালো লাগছে না। হাতে চিনচিনে ব্যাথা হাত দু’টো শূন্যে তুলে দেখলো ডান হাতের ব্যান্ডেজ লাল রক্তে ভিজে যাচ্ছে। ও আপন মনে বলল “আমি কী বেশি পন্ডিতগিরি করে ফেললাম? ওনি এসে এসব দেখে কী রাগ করবে? আমাকে বকবে?”

তুষার আসলো বেশক্ষানিখন পরে কুয়াশা তখনও হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। দরজা খোলার শব্দে সেদিকে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে উঠে বসে হাত লুকিয়ে ফেললো। তুষার ওর কর্মকাণ্ড দেখে আঁচ করে ফেললো কিছু একটা ঘটেছে। খাবার, ফলের প্যাকট রেখে ভ্রু কুঁচকে বলল “কী হয়েছে?”

কুয়াশা তুঁতলিয়ে বলল “কক-ই ক-কিছু না তো!”

তুষার সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলল “সত্যি কিছু না? তাহলে তুতলিয়ে কথা বলছ কেনো? তুমি তো এমন তোতলা নও! দেখি হাত দেখি। হাত পিছনে লুকিয়ে রাখছ কেনো? হাতে আবার কর করছো?”

কথাগুলো বলতে বলতে তুষার জোর করে হাত দেখলো। শুভ্র রাঙা ব্যান্ডেজে লাল রক্তে ভিজে গেছে। কুয়াশা কাঁদো কাঁদো হয়ে অপরাধী ভংগীতে বাচ্চাদের মতো নিজের সাফাই দিতে বলল “বিশ্বাস করুন, আমি না ইচ্ছে করে করি নি। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে গেছিলাম। খুব ব্যাথা পেয়েছি জানেন। প্লিজ আর হবে না।”

বলতে বলতে প্রায় কেঁদে দিলো। তুষার ওর হাতে চুমু খেয়ে বলল “কেঁদো না বেশি কষ্ট হচ্ছে? দাঁড়াও ডক্টর ডাকি।”

তখন ডক্টর নেই। নাস্তা করতে গেছে। নার্স এসে ড্রেসিং করে দিলো। কুয়াশা শান্ত লক্ষী বাচ্চা মতো আছে কোনো কথা বলছে না মনে মনে ভয়ে আছে কখন জানি তুষার বকে। তুষার স্যান্ডুইস এনেছিলো সেটা কুয়াশা বিনাবাক্যে খেয়ে নিয়েছে। কুয়াশার এমন অস্বাভাবিকতা তুষার বারংবার ধাক্কা খাই। কখনো ভালো সুস্থ তো আবার কখনো বাচ্চা হয়ে যায় অস্বাভাবিকতা করে। খাওয়া শেষ করে বলল “আমি বাসায় যাবো হসপিটালে ভালো লাগছে না।”

–হাতে আবার রক্ত বের করেছ মনে হচ্ছে না যেতে দিবে।

–না না আর এমন করবো না। প্লিজ নিয়ে চলুন বাসায়।

তুষার ‘দেখছি’ বলে বের হয়ে গেলো ডক্টরের সাথে কথা বলে জানলো ডিসচার্জ করে দিবে। তুষার পাশাপাশি কুয়াশার অস্বাভাবিক আচারণের কথাও বলল। ডক্টর কুয়াশা চেকাপ করতে গিয়ে ওকে কথায় কথা ভুলিয়ে ব্যাপারটা নিয়ে তুষারকে জানালো। মেডিসিন দিলো।

ততক্ষণে কুশান, মেঘ হসপিটালে এসেছে। কুয়াশার সাথে বসে গল্প করছিলো। তুষার এসে বলল “চল, ডিসচার্জ হয়ে গেছে।”

মেঘ বলল “হ্যাঁ, চল এখানে অল্প কয়েকটা জিনিসপত্র ছিলো সেগুলোও গেছানো শেষ।”

ওরা গুছিয়ে গাড়িতে উঠলো চারজন। গাড়ির উদ্দেশ্যে চৌধুরী বাড়ি দিকে যাচ্ছে দেখে কুয়াশা চেচিয়ে উঠে বলল “এ্যাই এ্যাই এই দিকে যাচ্ছো কেনো?”

মেঘ ওর চিৎকারে আচমকা ব্রেক কষলো। কুশান বলল “বাসায় যাচ্ছিস আবার কোথায় যাবি?”

কুয়াশা থমথমে মুখে বলল
–আমি ওখানে যাবো না। শশুড়বাড়িতে যাবো।

ওরা তিনজন ওর দিকে তাকিয়ে রইল। কুয়াশা সেটা দেখে বিরক্ত হয়ে বলল “আমার বিয়ে হয়ে গেছে না? আমি তো শশুড়বাড়িতেই যাবো। এভাবে তাকানোর কী আছে?”

কুশান দোনোমোনো করে বলল “কিন্তু এই অসুস্থ অবস্থায়…!”

ওর কথা শেষ করতে না দিয়ে তুষার বলল “টেনশন করবেন না ভাইয়া আমি আছি, মা-বাবা আছে সবাই মিলে কুয়াশার দেখাশোনা করবো ওর কোনো অসুবিধা হবে না।”

চলবে ইনশাআল্লাহ

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here