প্রেমহিল্লোল||২৮|| #তাসনীম_তামান্না

0
7

#প্রেমহিল্লোল||২৮||
#তাসনীম_তামান্না

রিসিপশনে আত্মীয় স্বজনরা এসে পড়েছে। পার্লারের মেয়েরা এসে কুয়াশাকে সাজিয়ে দিয়েছে। বাসার লোকজন কাজের জন্য দম ফেলতে পারছে না। বিয়ের অনুষ্ঠান ছোটখাটো করে করলেও রিসিপশন বেশ বড় করেই হচ্ছে। বিয়েতে সাদা কাপল ড্রেস পড়লেও রিসিপশনে বউ লাল টুকটুকে রঙের লেহেঙ্গা পড়েছে আর বর কালো পাঞ্জাবি পড়েছে। কুয়াশার সাজানো শেষ হতে মেয়েরা হাসাহাসি করতে করতে বলল “আজকে তো তুষার ভাইয়া তো চোখই ফেরাতে পারবে না।”

কুয়াশা লজ্জা-টজ্জা কিছু পেলো না গম্ভীর মুখে মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো। ওরাও সে-সব খেয়াল করলো না। তুতুল বুঝতে পেরে বলল “কী হয়েছে কুশু এ্যানি প্রবলেম?”

ও ফুঁসে উঠে বলল
–ও বাড়ি থেকে এখনো কেউ এলো না। আমাকে কেউ ভালোবাসে না।

–এসে পড়বে এতো টেনশন করো না।

–তুমি একদম চুপ থাকো। তুমিও আজ ওদের সাথে চলে যাবে। আমাকে ভুলে যাবে আমি সব জানি। সবাই আমাকে পর করে দিচ্ছে। সব বুঝতে পারছি আমি।

–কচু বুঝো তুমি। দাঁড়াও ভাইয়াকে ডাকি একসাথে এন্ট্রি নিবে।

কুয়াশা বেজার মুখে বসে রইলো ইতিমধ্যে রুম ফাঁকা হয়ে গেছে। তুতুল ডেকে তুষারকে ব্যাপারটা বলে নিজেও গেস্টদের সাথে সাথে দেখা করতে গেলো। তুষার রুমে ডুকে বধূ সাঁজে দেখে থমকে গেলো। মুগ্ধতা এসে ভড় করলো। ওর এমন দৃষ্টি দেখে কুয়াশার বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। ও ধীরে ধীরে কুয়াশার মুখোমুখি গিয়ে মুহূর্তের মধ্যে ললাটে ওষ্ঠ জোড়া ছুঁয়ে দিলো। কুয়াশা উঁইচুঁইয়ের সুযোগ পেলো না কয়েক সেকেন্ড পর কী হয়েছে বুঝতে পেরে আখিঁজোড়া বৃহৎ গোল গোল করে পল্লব ঝাপটালো। লজ্জা পেতে গিয়েও রিমার কথা মনে পড়তেই তেঁতে উঠে বলল “ঐ ঠোঁট দিয়ে রিমাকেও চু-মু খেয়েছিলেন তাই না? ঐ ঠোঁট কেটে দিবো।”

তুষারের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো ধমকে বলল “শাট আপ! কতবার বলছি থার্ডক্লাশ টপিক তুলবে না। তাও নড়েচড়ে ও-ই টপিক ই তুলতে হবে?”

কুয়াশা মুখ ভেংচি কেটে বলল
–আপনি করতে পারবেন আর আমি বললেই দোষ?

–তুমি খুব জানো আমি ওকে চু-মু খেয়েছি? ওয়েল! ফাইন! ভেরি গুড! দেন, এই ঠোঁট দিয়ে তো তোমাকেও ছুঁয়েছি। তাই তোমার ফেসের চামড়াগুলো কেঁটে দিও। তুমি না পাড়লে আমাকে বলো আমি কেটে দিবো। ডিজগাস্টিং মেয়ে মানুষ। বুঝে কম চিল্লায় বেশি।

তুষারের কথা শুনে ও বিস্ময়ে হা করে তাকিয়ে রইল। ওর শেষের কথা শুনে চেঁচিয়ে বলল “মেয়ে মানুষ এতোই যখন ডিজগাস্টিং তাহলে পোলাা দেখে বিয়ে করতেন। আমাকে বিয়ে করেছেন কেনো?”

–কুশু, আজকে বিশেষ দিনে মুডটা খারাপ করো না। ঝগড়া করার মুড নাই। চলো, আমাদের জন্য সকলে অপেক্ষা করে আছে।

তুষার হাত বাড়িয়ে দিলো কুয়াশা মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো। তুষার নিয়েই ওর হাতের কব্জি ধরে টেনে দাঁড় করালো। বের হলো স্টেজের উদ্দেশ্যে সিঁড়ির কাছে আসতেই কুয়াশা নিজেই এক হাতে তুষারের বাহু জড়িয়ে ধরল। আরেক হাতে লেহেঙ্গা ওদেরকে নিচে নামতে দেখে সকলে সেদিকে তাকালো কুয়াশা চোখ ঘুরিয়ে চারিদিকে দেখলো রাজকীয় ভাইব পাচ্ছে। ঠিক যেমন রাজকন্যা-রাজকুমারের বিয়ে হয়। ও বাসার সবাইকে দেখে ওর মন খুশিতে নেচে-গেয়ে উঠলো।

তুষারকে এমন আস্তে-ধীরে হাঁটতে দেখে কুয়াশা বিরক্ত হয়ে বলল “আজকে কী আপনাকে কেউ খেতে দেয় নাই? পায়ে কী লুলা হয়েছে? জোরে হাঁটুন।”

ও দাঁতে দাঁত চেপে বলল “আমাদের এন্ট্রি ভিডিওশুট হচ্ছে।”

–এটা আবার শুট করার কী আছে? এটা কী ফ্লিম চলছে? নিজেকে কী নায়ক ভাবছেন?

–ভাবাভাবির কী আছে? আমি নায়কই!

–ঢঙ দেখলে গা জ্বলে যায়। চুলগুলো উঠিয়ে দিলে সব নায়ক ভাব বেড়িয়ে যাবে।

তুষার উত্তর করলো না নিচে চলে আসলো। সকলে একে একে ওদের সাথে কথা বলতে আসছে। কুয়াশা ভাই-ভাবীদের কাছে যেতে পারছে না। ও রাগে চোখ-মুখ দাঁতে দাঁত চেপে সকলের সাথে কথা বলছে তুষার বুঝতে পেরে ওকে নিয়ে ওর পরিবারের কাছে নিয়ে গেলো। গিয়েই কুশানকে জড়িয়ে ধরলে বলল “ভাইয়া তোমরা আমাকে ভুলে গেছো? আমাকে একটুও ভালোবাসো না।”

মেঘ ওর মাথা চাটি মেরে বলল “ঠিক ঠিক তোর মতো গাধীকে কে ভালোবাসবে? তুই বাড়িতে নেই বলে বাড়িতে শান্তি ফিরে এসেছে।”

কুয়াশা রেগে তাকিয়ে রইল। মেঘা একটা ফাইল তুষারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল “এই নেন ভাইয়া এটাতে সব কিছু আছে। তাও আপনি একবার চেক করে নিবেন।”

কুয়াশা রাগ উড়ে কৌতূহল হানা দিলো দমাতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলো “কীসের কাগজপত্র এ-সব?”

মেঘ হেসে বলল “তোর ভাগের সব সম্পত্তি। তোকে আর তোর জামাইকে সব বুঝিয়ে দিলাম। আজকের পর আর কোনো ঝামেলা নিবো না। যার বিষয় সে বুঝে নিবে।”

মেঘের কথা শুনে কুয়াশা এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না কেঁদে। বউকে কাঁদতে দেখে সকলের দৃষ্টি ওর ওপরে এসে পড়লো। কোলাহল থেমে গুনগুন শব্দ শোনা গেলো। কুশান ধমকে বলল “মেঘ কী হচ্ছে কী এ-সব? কুশু তুই কাঁদছিস কেনো? বোকা মেয়ে জানিস না মেঘ মজা করছে। ওগুলো তোর সার্টিফিকেট সহ আরো ইম্পরটেন্স কাগজপত্র হাদার মতো শুধু কাদতে জানে”

পাখি আর মেঘা এসে ওকে বোঝালো ওর কান্না কমে এলে তেড়ে মেঘকে মারতে গেলে কুশান ওকে ধমকে বলল “যা স্টেজে গিয়ে বস। সবাই অপেক্ষা করছে।”

কুয়াশা মুখ ফুলিয়ে কুশ আর শানের হাত ধরে ওদের ও সাথে করে স্টেজে চলে গেলো মেঘা বলল “এমন পেঁচার মতো মুখ করে আছিস কেনো? হাস! একটু হেসে কথা বল আত্মীয় স্বজনরা কী ভাববে বলতো!”

–যা ইচ্ছে ভাবুক আই ডোন্ট কেয়ার।

মেঘা হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল ওর সাথে। তুষার একবার ওকে দেখে কিছু বলল না। একে একে সকলে এসে নতুন বর-বউয়ের সাথে কথা বলছে অভিনন্দন সহ উপহার দিচ্ছে। কুয়াশাও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে সকলের সাথে হাসিমাখা মুখে কথা বলছে।

———–

রিমা দূরে দাঁড়িয়ে পুরোটাই দেখেছে দৃষ্টি ওদের ওপর থেকে সরছে না। তুষারকে কী মিষ্টি লাগছে। কুয়াশার জায়গায় তার থাকার কথা ছিলো কিন্তু এই মেয়েটা এসে সব নষ্ট করে দিলো। ওর হাত দেখে ভ্রু কুঁচকে গেলো কাল রাতে বিষয়টা খেয়াল করে নি কৌতুহলে ও একটা কাজিনকে ডেকে বলল “কুয়াশার হাতে কী হয়েছে?”

মেয়েটা রিমাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য বিয়ের দিনের ঘটনাটা রসিয়ে রসিয়ে বলল। রিমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো বলল “বাহ, ইন্টারেস্টিং! খুব প্রেম দেখছি তবে এই রাজটা কে? দেখতে হচ্ছে তো! প্রেমিকা বিয়ে ভাঙতে গিয়ে কী সে এখনো জেলের ভাত খাচ্ছে?”

মেয়েটি সহজ-সরলভাবে নিজের মতো গড়গড়িয়ে বললে গেলো
–আরে না কী বলো! ভাবী তো ওই ব্যাডার প্রেমিকা নয় বিয়ে ঠিক হয়েছিলো। ব্যাডার পাওয়ার আছে এতোক্ষণে জেল থেকে বেরও হয়ে গেছে, হ্যান্সামও আছে কিন্তু চরিত্রের ঠিক নাই।

রিমা ভ্রু কুঁচকে মনোযোগ শ্রোতার মতো ওর সব কথা শুনে গেলো…

চলবে ইনশাআল্লাহ

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here