প্রেমহিল্লোল||২৪|| #তাসনীম_তামান্না

0
10

#প্রেমহিল্লোল||২৪||
#তাসনীম_তামান্না

বিষাদময় ঝিমিয়ে যাওয়া বিয়ে বাড়ি আবার সতেজ হয়ে উঠেছে। নতুন বর-কনে হুট করে বাসায় ফিরে সবাইকে চমকে দিয়েছে। প্লানটা অবশ্য কুয়াশা ওই তুষারকে বাসায় জানাতে বারণ করেছে। সকলে তখন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত, কেউ বা তখনো ঘুমাচ্ছে, বাচ্চারা ছোটাছুটি করছে, অনেকে ড্রাইংরুমে বিরস হয়ে বসে আছে। যে-ই না তুষার কুয়াশাকে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করেছে ওমনি ড্রাইংরুমে উপস্থিত সকলে সশব্দে উল্লাসে চিৎকার দিয়ে উঠলো। ‘নতুন বউ এসেছে’ ‘বর-কনে এসেছে’ গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে গেলো একে একে সকলে বসার রুমে এসে উপস্থিত হলো। তিশা বেগম তুষার-কুয়াশাকে দেখে কেঁদে দিলো ওদেরকে জড়িয়ে ধরে সস্নেহে হাজারো ভালোবাসাময় বুলি আওড়াতে লাগলো। আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে একজন বলল “তিশা এভাবে কী ওদেরকে দাঁড় করিয়ে রাখবে না-কি! ওদেরকে ভিতরে আসতে দাও।”

সকলে সরে গিয়ে ওদের ভিতরে যাওয়ার রাস্তা করে দিলো তুষার মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে মা আর বউ দু’জনকে দুপাশে নিয়ে বাসায় ডুকলো। কুয়াশা আর তুষার সোফায় বসলো সকলে নানানরকমের প্রশ্ন করছে। তুষার সেগুলোও উত্তর দিচ্ছে। তুতুল ওদের জন্য মিষ্টি আর পানি আনলো। বর-কনে দু’জন দু’জনকে খাইয়ে দিবে। কথাটা বলার সাথে সাথে তুষার কুয়াশার মুখের সামনে মিষ্টি ধরলো সকলের সামনে কুয়াশা লজ্জা পেয়ে একটু খেলো। কুয়াশা কাটা হাত নিয়ে জোর দিতে পারবে না। তাই তুষার বলল “তুমি চামচটা ছুঁয়ে রাখো আমিই নিয়ে খাচ্ছি।”

কুয়াশাও সেটাই করলো ছোটরা হৈহৈ করে টিটকারি মারতে লাগলো। ও লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো। তুষার ভাইবোনদের চোখ রাঙানি দিলেও সেটাতে কাজ দিলো না। ওদের টিটকারি মূলক কথাবার্তা আরো তিব্র হলো। পুরো বাড়ি আনন্দে গমগম করে উঠলো। বড়রা আর ছোটদের মাঝে না থেকে রান্নাঘরের কাজে চলে গেলো। অনেকক্ষণ আড্ডা দেওয়ার সাথে সাথে কুয়াশা সকলের সাথে পরিচয় হয়ে সহজ হয়ে গেলো। তারমধ্যে তুষার বলল “অনেক আড্ডা দেওয়া হয়েছে এবার তোমার রেস্ট নেওয়া দরকার কুয়াশা। কিছু খেয়ে মেডিসিনও নিতে হবে।”

তুতুলের সাথে কয়েকটা মেয়ে কাজিন বলল “আমরা ভাবিকে নিয়ে যাচ্ছি।” বলে কুয়াশাকে নিয়ে যেতে লাগলো। যাওয়ার সময় কুয়াশা আবছা শুনতে পেলো কেউ বলছে “বাসরঘর সাজাব নাকি হসপিটালেই বাসরটা সেরে ফেলেছিস।”

কুয়াশার বুকটা ধক করে উঠলো। বিয়ের সবকিছু মাথায় থাকলেও এটা তো মাথায় ছিলো না। তুষারের সাথে একঘরে, একবিছানায় ও আর ভবতে পারলো না মনে মনে ভীত হয়ে গেলো। কাল তো দু’জন দুই বেডে ছিলো তাও কয়েক হাত দূরত্বে কিন্তু আজ রাতে কী হবে? ও যতই কথাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছে ততই ঘুরেফিরে একই কথা মাথায় এসে দল বেঁধে ওকে ভয় পাইয়ে দিচ্ছে।

কুয়াশা স্ট্যাচু হয়ে বসে আছে অন্য মেয়েগুলো বাইরে চলে গেছে এখন রুমে দুজন তুতুল আর কুয়াশা। তুতুল এসে ওকে একসেট থ্রিপিস সামনে রেখে দিয়ে বলল “কুশু, শাড়ি পড়তে হবে না। একে অসুস্থ সামলাতে পারবে না। তাই এই লাল সালোয়ার কামিজ সেটটা পড়ো। তোমার জন্যই বানানো। মা শাড়ি, সালোয়ার কামিজ যা পড়ো আমার কাছ থেকে শুনে নিয়েছিলো। আমার মা ভালো শাশুড়ি হবে সেটা ভালোই বুঝতে পারছি। তোমাকে আদরে আদরে তুলা বানিয়ে দিবে।”

কুয়াশার তুতুলের কথার দিকে মনোযোগ নেই সে নিজের ভাবনার জগতে বিচরণ করছে। ওকে অন্যমনস্ক দেখে তুতুল হালকা ধাক্কা দিয়ে বাস্তবে ফেরালো বলল “কী হয়েছে? মন খারাপ লাগছে ও বাড়ির জন্য?”

কুয়াশা উপর নিচ মাথা নাড়ালো অক্ষি জোড়ায় মুহুর্তে লোনা পানিতে টইটম্বুর হয়ে গেলো। তুতুল হেসে ওকে আগলে নিয়ে বলল “দূর পাগলি। মনখারাপ করো না কাল তো রিসিপশন কালই সবাই আসবে দেখো। বেশি মন খারাপ করছে? তাহলে কী ভিডিও কল দিবো সবার সাথে কথা বলে না-ও।”

–না থাক সবাই হয়তো-বা ব্যস্ত আমি ফ্রেশ হয়ে নি। আমাকে একটু হেল্প করো। এই কাটা হাত নিয়ে কিছুই করতে পারছি না। নিজেকে প্রতিবন্ধী লাগছে।

–ঠিক হয়ে যাবে এসব বলে না-কি কেউ?

সময়ের সাথে দুপুরের ঘন্টা বেজে গেলো। সেই সকাল সাড়ে এগারোটায় এ বাড়িতে এসেছে। কোথা থেকে যে সময় চলে যাচ্ছে কুয়াশা বুঝতে পারছে না হয়তো আজ সময়ের রাত হওয়ার বেশি তাড়া সময়ও ওর সাথে বেইমানি করছে। দুপুরে সকলে খেতে বসেছে। প্রথমে ছোট পিচ্চি বাচ্চাদের খাইয়ে দিয়ে ছেলেরা খেতে বসেছে। তারপর মেয়েরা। কুয়াশার হাতের বাজে অবস্থা দেখে তিশা বেগমই ওকে খাইয়ে দিলো। ওর মায়ের কথা মনে পড়ছে। মা-ও ওকে এভাবে আদর মিশিয়ে খাইয়ে দিতো। ওর চোখে পানি দেখে তিশা বেগম ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল “কী হয়েছে? বেশি ঝাল না-কি?”

কুয়াশা হেসে ফেললো বলল “না না মায়ের কথা মনে পড়ছিলো।”

ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল “আমি কী তোর মা না না-কি?”

এবার কুয়াশা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
–আরেহ আরেহ দেখো মেয়ের কান্ড এভাবে কাদচ্ছিস কেনো?

ওর কান্না থামলো না বাড়তে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতে জেদ করলো “মায়ের কাছে যাবো। এখনি মায়ের কাছে যাবো। আমার মাকে লাগবে। আমাকে প্লিজ মায়ের কাছে নিয়ে চলো।”

সকলে ভয় পেয়ে গেলো ওর অবস্থা দেখে। তুষার খবর পাওয়া মাত্র হন্তদন্ত হয়ে এসে উপস্থিত হলো। ওকে দেখে তিশা বেগম বলল “ও তুষার দেখনা কুশু এমন করছে কেনো?”

তুষার আশ্বাস দিয়ে বলল “কিছু হয়নি মা আমি ওকে রুমে নিয়ে যাচ্ছি। তোমরা লান্স করে নাও। টেনশন করো না একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে।”

ও কুয়াশাকে নিয়ে রুমে চলে গেলো।ও কুয়াশাকে বেডে বসিয়ে দিলো বলল “আমি মায়ের কাছে যাবো নিয়ে চলুন।”

–হুম নিয়ে যাবো। তুমি শান্ত হও। কান্নাকাটি করলে কিন্তু নিয়ে যাবো না। তখন ভালো লাগবে?

ও কান্না থামানোর চেষ্টা করেও পারলো না। আরো জোরে জোরে কেঁদে দিয়ে বলল
–আমি কান্না থামাতে পারছি না কেনো? এই কান্না থামছিস না কেনো? থাম বলছি, থাম। কান্না আমার কথাও শুনে না।

তুষারের হাসি পেলেও হাসলো না ও হাসলে কুয়াশা রেগে গেলে সমস্যা বাড়বে বৈই কমবে না।

–চকলেট খাবে?

–চকলেট বাচ্চারা খাই আমি কী বাচ্চা না-কি আমি বউ।

–হুম, আমার বাচ্চা বউ।

কুয়াশা চোখ রাঙিয়ে বলল “বাচ্চা তাহলে বিয়ে করেছেন কেনো বুড়ি বিয়ে করতেন।”

–তুমি বুড়ি বউ খুঁজে দিলে আমার সমস্যা নেই।

ও আরো রেগে গেলো বলল “চুপ একদম চুপ। খুব বিয়ের শখ না? একদম বিয়ের শখ ঘুচিয়ে দিবো। নিজেই তো একটা বুড়ো কেউ আপনার মতো বুড়ো টাক, ভুঁড়িওয়ালাকে বিয়ে করবে না।”

তুষার আকাশ থেকে পড়লো ওর টাক! ভুঁড়ি! কোথা থেকে আসলো? ও সিরিয়াস হয়ে বলল “আমি হ্যান্সাম এই চুল দেখে কত মেয়ে ক্রাস খাই জানো।”

–বাহ খুব ভালো তাহলে আমাকে বিয়ে করেছেন কেনো তাদেরকে করতেন।

তিশা বেগম এসে বলল “কী হয়েছে রে তোরা এমন করে ঝগড়া করছিস কেনো?”

–তোমার ছেলে খুব খারাপ। ও না-কি আরো বিয়ে করবে। বলো ওর মতো বুইড়া ব্যাডাকে কেউ বিয়ে করতে চাইবে? ওর দিকে কেউ তাকাবে? যেই না চেহারা।

তিশা বেগমের হাসি পেলেও ওর সাথে সহমত প্রকাশ করে বলল “ঠিক ঠিক তুই আয় তো আমার সাথে ঠিক মতো খেতে পারলি না। খাবি আয়।”

শাশুড়ি বউ মিলে চলে গেলো যেতে যেতে স্বামীর নামে সব অভিযোগ শাশুড়িকে জানাতে লাগলো। তুষার হাসলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ

#প্রেমহিল্লোল||২৫||
#তাসনীম_তামান্না

দিনের আলো শেষে, রাতের আঁধার নেমে এসেছে। সেকেন্ডে পেরিয়ে মিনিট পেরিয়ে ঘন্টা। রাত যতোই বাড়ছে মনে মনে ততোই ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে কুয়াশা। তখন সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলছে আবার অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে। ছোটরা উপরে তুষারের রুমের দরজা বন্ধ করে কিছু একটা করছে। তুষার কোনো কাজে বাইরে গেছে। রাতের খাবার খাওয়ার সময় হয়ে গেছে। একে একে প্রায় সকলে খাওয়া শেষ করলো। তিশা কুয়াশাকে খেতে বসতে বলেছে কিন্তু ওর খেতে ইচ্ছে করছে না বলে তুতুলের রুমে গিয়ে বসে রইলো। তুষার ফিরে এসে শুনলো কুশু খাইনি তাই তিশাকে একপ্লেটে দু’জন খাবার দিতে বলল। তিশা বেগম ছেলেকে মজা করে বলল “বাবাহ, ছেলে দেখি বউ ছাড়া বাঁচতে পারবে না।”

তুষার মাকে জড়িয়ে ধরে বলল “মা’কে ছাড়াও বাঁচতে পারব না।”

–থাক হয়েছে। সর দেখি অনেক কাজ পড়ে আছে। তোর বাবাও যে কবে ফিরবে কাজ নিয়ে পড়ে থাকুক লোকটা জ্বালিয়ে মারলো।

–রাগ করছ কেনো মা বাবারও কী এসব ছেড়ে ওখানে থাকতে খুব ভালো লাগছে? শুধু শুধু রাগ করছো তুমি। বুঝার চেষ্টা করো না রাগ করে ঝগড়া করো।

ছেলের কথা বুঝলেও শেষের কথাটা শুনে রেগে গেলেন বলল “কীহ? কী বললি তুই আমি শুধু ঝগড়াঝাটি করি আর তোর বাপ দুধে ধোঁয়া তুলসীপাতা?”

তুষার মুখ ফোস্কে কী বলেছে বুঝতে পেরে কথা ঘুরিয়ে বলল “আমার ক্ষীদা পেয়েছে মা। খেতে দিবে না বলে কী কথা বাড়াচ্ছ মা?”

–ছিহ ছিহ কী বলছিস তুই? যা ফ্রেশ হয়ে নে আমি খাবার বাড়ছি।

ও দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে খাবার নিয়ে কুয়াশার কাছে গেলো। ও বাসার সবার সাথে কথা বলে ফ্রেন্ডসদের সাথে চ্যাট করছিলো। তখনই তুষার রুমে ঢুকলো। ওর সেদিকে না তাকিয়ে নিজের মতো ফোন টিপছে ও ভেবেছে তুতুল এসেছে একটু আগে মেঘের সাথে ফোনে কী নিয়ে ঝগড়াঝাটি করে মুখগোমরা করে রেখেছে কারোর সাথে কোনো কথা বলছে না তাই আর তাকাই নি। তুষার গিয়ে ওর পাশে বসে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। ওর তা-ও হুঁশ ফিরলো না আবার মিটমিট করে হাসছেও। তুষার ঠাশ করে ফোন কেঁড়ে নিলো। কুয়াশা গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে পড়লো তেতে উঠে বলল “ফোন! ফোন নিলেন কেনো? একটা ইম্পটেন্ট কথা হচ্ছিল।”

তুষার ভ্রু নাচিয়ে বলল
–সয়ং আমি উপস্থিত থাকতে তোমার আমার থেকেও ইম্পটেন্ট কিছু থাকতে পারে?

ও অক্ষি পলক ঝাপটে তাকিয়ে বলল “ইউ কন হো? আপ এ্যাছে ভাব দেখারেহিহো জো আপ এ্যাছা ও্যাছা ওয়ালা প্রেসিডেন্ট।”

ও হেসে বলল “রাইট, আমি তোমার জীবনের প্রেসিডেন্ট। সো চুপচাপ এখন খাবে ভুলভাল হিন্দি বলবে না।”

–এ্যাঁহ আসছে ওনি আপনার পিছনে তো অনেক মেয়েরা পড়ে আছে যান তাদের কাছে যান।

ও হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল “আমার ভুল হয়ে গেছে। আমার আগে-পিছনে ডানে-বামে আমার একমাত্র বউ ছাড়া আর কাউকে দেখতে পাই না কাউকে দেখার কথা ভাবিও না।”

–থাক অনেক নাটক করেছেন। আপনি খেয়ে নিন। আমার খেতে ইচ্ছে করছে না আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।

ও ভ্রু কুঁচকে বলল “আগে খাবে তারপর ঔষধ খাবে তারপর ঘুমাবে। তাই কোনো বাহানা শুনতে চাইছি না।”

ও একলোকমা কুশুকে দিলো ও চিবাতে চিবাতে বলল
–আপনি খেয়েছেন?

–উহুম তোমার সাথেই খাবো।

ওরা দুজনের চুপচাপ খেতে লাগলো। ওদের খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই দল বেঁধে মেয়েরা রুমে এসে গেলো। তুষারকে দেখে টিটকারি মেরে এক কাজিনের বউ বলল “কী দেবর জি বউকে ছাড়া থাকতে পারছ না না-কি? একটু সবুর করো তোমার বউকে সুন্দর ভাবে তোমার কাছে উপস্থাপন করে দিয়ে আসবো।”

বলেই সকলে হাসাহাসি করতে লাগলো। তুষার সকলের দিকে তাকিয়ে কুয়াশার দিকে তাকালো ও অবাক হয়ে গোল গোল চোখে তাকিয়ে ছিলো তুষার ওর দিকে তাকিয়েছে বুঝতে পেরে নিজেও ওর দিকে তাকালো দুজনের চোখাচোখি হলো। ও ভয়, লজ্জা, সংকোচে চোখ নামিয়ে নিলো। তুষারকে ঠেলে রুম থেকে বের করে দিয়ে ওরা কুয়াশাকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। ও কাউকে বাঁধা দিতে পারলো না। মনে মনে ভীতিগ্রস্ত হয়ে গেলো। ও অনেক দ্বিধাদ্বন্দ নিয়ে বলল “ভাবিপুকে ডাকবেন প্লিজ।”

–কেনো গো আমাদেরকে পছন্দ হয় নি বুঝি? তুতুলকেই লাগবে?

–না না তেমনটা বলি নি। ভাবিপুকে দেখছি না তাই বলছিলাম আর কী

–ভয় লাগছে বুঝি? হয় হয় এমন হয়। এখন ভয় পেয়ে না-ও তখন আর ভয় লাগবে না।

বলে আবারো সকলে হেসে ফেললো। ওর কেনো জানি রাগ লাগছে। জানে এই সময় মেয়েরা ভয় পাই। তাই বলে হাসাহাসি করবে একটু সাহস দিলে খুব ক্ষতি হয়ে যায়? ওরা লাল টুকটুকে রঙের শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে হালকা সাজিয়ে বেনি করে দিলো। ওরা সাজানো শেষে তুতুল এসে ওকে দেখে বলল “মা-শা-আল্লাহ কুশুকে এতো মিষ্টি লাগছে ভাইয়া তো পুরো পাগল হয়ে যাবে।”

ও অস্থিরতা নিয়ে তুতুলে একটু সাইডে এনে বলল “ভাবিপু আমার না খুব ভয় লাগছে। আমি আজ তোমার সাথে থাকি। প্লিজ”

–তা বললে কীভাবে হবে? এতো লোকজন কী ভাববে বলো তো! আর তোমাদের বিয়ে হয়ে গেছে একদিন না একদিন তো ভাইয়ার সাথে থাকতেই হবে। তবে আজ নয় কেনো? ভয় পেও না ভাইয়ার সাথে সহজ হও।

ওরা কুয়াশাকে তুষারের রুমে দিয়ে আসলো। রুমে ফুলের গন্ধে ম-ম করছে চারিদিক। কী ফুলের গন্ধ সেটা ও ধরতে পারলো না। কানে কানে অনেক দুষ্টুমি করে অনেক কথাই বলে গেলো যা ওর কানে বা মস্তিষ্কে ডুকাতে পারলো না নার্ভাস নেসে সব গুলিয়ে ফেলছে। তুষার ও তার কাজিনদের কথা কাটাকাটি আওয়াজ আসছে। ওর বুকে হাতুড়ি পেটানোর শব্দ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ওদের হৈ-হুল্লোড়ের মাঝে তুষার রুমে ডুকে সশব্দে দরজা আঁটকে দিলো। ও শাড়ির আচল খামচে ধরে শক্ত হয়ে বসে রইলো। তুষার ওর অবস্থা দেখে সহজ হওয়ার জন্য বলল “যাও অজু করে এসো নামাজ… ওহ তোমার হাতে ব্যান্ডেজ। তুমি বসো আমি পড়ি তুমি সুস্থ হলে একসাথে পড়বো আবার”

ও একটু সহজ হয়ে মাথা নাড়ালো। তুষার নামাজ শেষ করলো পুরোটা সময় সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত স্নিগ্ধ পুরুষকে দেখতে লাগলো কুয়াশা তার একান্ত পুরুষ সে। তার মধ্যে ক্রমাগত দরজায় বারি পড়তে লাগলো যেনো কেউ দরজা ভেঙে রুমে ঢুকে পড়বে।

–কে এমন করছে?

–দেখছি আমি। বাদরগুলো হলে আজ খবর আছে।

তুষার গেলো দরজা খুলতে।

চলবে ইনশাআল্লাহ

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here