প্রেমহিল্লোল||২৭|| #তাসনীম_তামান্না

0
11

#প্রেমহিল্লোল||২৭||
#তাসনীম_তামান্না

সকালের তপ্ত রোদ উড়ন্ত পর্দা ভেদ করে বারে বারে তুষারের চোখমুখের এসে আছড়ে পড়ছে। গরমে ওর ঘুম ভেঙে গেলো। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে দেখলো কুয়াশা এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে আছে সিঁন্দুর রাঙা লাল শাড়ি ফাঁকে একটুকরো মেঘের খন্ড উঁকি দিলো। নিষিদ্ধ জায়গায় চোখ যেতে ও কেমন বেসামাল হতে গিয়েও নিজে সামলে নিলো দ্রুত চাদর দিয়ে ঢেকে দিয়ে কুয়াশার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল “তুমি আমার সর্বনাশ করে দিলে, কুশু।”

ও এগিয়ে গিয়ে কুয়াশার ললাটে ওষ্ঠ চেপে ধরে বলল “মর্নিং কিস হানি! তবে সেটা স্পেশাল হওয়া উচিৎ ছিলো এভাবে লুকিয়ে চুড়িয়ে চোরের মতো নিজেই বউকে আদর করতে হয়। কী ভাগ্য দেখছ আমার।”

তুষার দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে উঠে পর্দা টেনে দিলো যাতে কুয়াশাকে রোদ ছুঁতে না পারে। সেই স্বামী হয়ে এখনো বউকে চুরি করে স্পর্শ করে আর রোদ ব্যাটা নাকি অনায়াসে ছুঁয়ে দিবে ওর হিংসা হবে না? ফ্রেশ হয়ে এসে মায়ের উদ্দেশ্যে গেলো।

তিশা বেগম রুমে এসেছিল কিছু কাজে ছেলেকে দরজা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল “ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? ভিতরে আয়!”

তুষার ভনিতা না করে সোজাসাপটা কথায় চলে গেলো বলল “মা, রিমা এ বাসায় কী করছে? ও এখানে কেনো? আমি তো ফুপিদের আমার বিয়ের বিষয়ে কোনো নিউজ জানাতে বারণ করেছিলাম তাও কেনো জানালে?”

তিশা বেগম অসহায় মুখে বলল “আমি তো বলি নি। কীভাবে জানলো তা-ও জানি না।”

–মা, তুমি জানো না কুয়াশার মেন্টাল হেল্থ সম্পর্কে? কাল রাতে ওসব ঘটার পর ও আরো আজব বিহেভ করছে, আমাকে ভুল বুঝছে। আমি জানি না কীভাবে সামলাব। কিছু বুঝতে পারছি না।

কথাগুলো বলতে বলতে ও ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো। তিশা বেগম ছেলের পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল “দেখ আমরা তো ওকে বের করে দিতে পারি না। তাছাড়া আজকে তোদের রিসিপশন, কোনো সিনক্রিয়েট করিস না। একটু অপেক্ষা কর মেয়েটা তো আর সারাজীবন এখানে থাকবে না।”

–এই টুকু সময়ের মধ্যে আমার আর কুয়াশার সম্পর্কে ইফেক্ট পড়ে গেছে মা। আমি এতোটা ধৈর্য্যশীল কখনো নই। শুধু কুয়াশার জন্য… তুমি জানো মা… আমার কেমন অসহায় লাগছে। কালকে তোমরা ওকে আঁটকে রাখতে পারলে না?

–রাতে সবাই খেয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। তুতুল দরজা খুলতে ও কোনো দিকে না তাকিয়ে তোর রুমে ছুটলো আমরা ওকে আটকানোর সময়টুকু পেলাম না।

তুষার সব শুনে চুপ করে রইল কী-ই বা বলবে? ছেলের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলল “তুই টেনশন করিস না কুয়াশাকে বোঝাব আমি। চল খেয়ে নিবি মেয়েটাকেও খাওয়াবি। রিসিপশনে এতো কাজ চল চল”

মা ছেলেকে একপ্রকার ঠেলে ডাইনিং রুমে নিয়ে আসলেন। অন্যরা সকালের চা নাস্তা করছে আর গল্প করছে। রিমা একপাশে চুপচাপ বসে ছিলো কাল সারারাত না ঘুমিয়ে যে কেঁদেছে সেটা তাকে দেখলে যে কেউ বলে দিতে পারবে। তুষারকে নিচে আসতে দেখে ওর চোখ-মুখ চকচক করে উঠলো। মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। উঠে দাঁড়িয়ে তুষারের দিকে এগিয়ে গেলো সেটা দেখে তুষার সেটা দেখে শক্ত কণ্ঠে বলল “ওখানে দাঁড়িয়ে থাক একদম কাছে ঘেঁষবি না।”

তিশা বেগম ছেলেকে দেখে নিয়ে বলল “দেখো রিমা, কোনো অশান্তি করো না। ওদের বিয়ে হয়ে গেছে কোনো মেয়ে তার স্বামীর আশেপাশে কোনো মেয়েকে সহ্য করতে পারে না। এমনিতেই কুয়াশার ওপর দিয়ে কম ঝড় ঝামেলা বয়ছে না মেয়েটাকে একটু শান্তিতে থাকতে দাও।”

রিমা ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল “আমার কী দোষ মামি? আমি তো শুধু ভালোবেসে ছিলাম। তোমার ছেলে সেটার দাম দিলো না। আমি তোমার ছেলের আমার ভালোবাসা বোঝার অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু ও লুকিয়ে বিয়ে করে নিলো? ওর থেকে আমি কম কিসে? কী এমন আছে ওর মধ্যে যা আমার নাই।”

–তোকে বলবো কেনো? কে তুই? এমন স্পেশাল কেউ নোস যে জবাবদিহিতা করতে হবে। মা নাস্তা দাও। আমার আর কুয়াশারটা একসাথে দিও।

–কেনো? তোমার বউ কী ল্যাংড়া? হাঁটতে পারে না? কেমন বউ বিয়ে করেছো?

কুয়াশা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসছিলো। এমন সময় রিমার কথা শুনে সিঁড়িতেই দাড়িয়ে পড়লো।

–সেটা তোকে না ভাবলেও চলবে। দরকার পড়লে আমার বউকে কোলে নিয়ে ঘুরবো নো প্রবলেম!

রিমা রাগে ফুঁসে উঠলো। ওর কথা শুনে কাজিনগুলো মিটমিট করে হাসতে লাগলো। কুয়াশা একটু লজ্জা পেলো এভাবে কেউ বলে না-কি! ছিহ ছিহ! সবাই কী ভাবলো? ওকে কেউ দেখার আগে ও তাড়াহুড়া করে রুমের দিকে ছুটলো। ততক্ষণে তিশা বেগম খাবারগুলো সার্ভ করে দিয়েছে।
– অনেক বেলা হয়ে গেছে ব্রেকফাস্ট করে নে। নাস্তা আর করতে হবে না। ঔষধ গুলো মনে করে খাওয়াস।

–হুম, আমাদের গেস্ট রিমাকেও ভালো করে খাওয়াও। ও ফুপি তার মেয়ের এমন অবস্থা দেখলে বলবে। মামা বাড়িতে এসে তার মেয়েটাকে আমরা না খাইয়ে মে–রে ফেলতে চাইছি।

রিমা একটু খুশি হয়ে গেলো বলল “তুমি আমাকে নিয়ে এতো ভাবো? আমি জানি তুমি আমাকে মনে মনে ঠিকই ভালোবাসো।”

–জি হ্যাঁ আমি তোকে বোনের মতো ভালোবাসি। ভাই হিসাবে আমার দায়িত্ব বোনকে ভালোবাসা। তার ভালোমন্দের খেয়াল রাখা।

রিমা রাগে ফুঁসতে লাগলো অন্যরা শব্দ করে হাসলো। ফিসফাস করে রিমাকে নিয়ে কথা বলতে লাগলো। ওর সহ্য হলো না রুমে চলে গেলো। একা একা কতক্ষণ কাঁদল ভালোবাসা হারানোর কষ্টে মানুষ ভয়ংকর হয়ে যায়। রিমার মাথায় সেই ভয়ংকর ভয়ংকর পরিকল্পনা ঘুরপাক খেতে লাগলো। কী করবে ও নিজেও জানে না।

—————-

তুষার খাবার নিয়ে রুমে এসে দেখলো কুয়াশা পরিপাটি হয়ে বিছানায় বসে আছে। কালকের শাড়ি পাল্টে সবুজ রঙের থ্রি পিস পরেছে। বিছানাটাও গোছানো। ভেজা চুল থেকে টুপটাপ ফোঁটায় ফোঁটায় পানি ঝরে বিছানা ভিজে যাচ্ছে। ওর দিন দুনিয়ার খেয়াল নেই আপমমনে কী যেনো ভেবে চলেছে। তুষার গলা ঝাড়া দিয়ে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করলো সফলও হলো। ও ফাজলামো করে বলল “আমাদের মধ্যে তো কিছুই হয় নি তা-ও এতো সকাল সকাল সাওয়ার নিয়েছ কেনো? মানুষের মাইন্ডে পজিটিভ ভাইব দেওয়ার জন্য?”

কুয়াশা লজ্জা পেলেও কঠোর চোখে তাকিয়ে বলল “আপনার এক্স এসে যা করলো তারপর সবাই জানে আপনার আর আমার মধ্যে কিছু হওয়ার কথা না।”

ওর কথায় তুষার থতমত খেয়ে গেলো। ভেবেছিলো ও লজ্জা পাবে কিন্তু উল্টো নির্লজ্জ মার্কা কথা বলে ওকে ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়ে দিলো। নিজেকে ঢাকতে কথার ঘোরানোর জন্য বলল “খেয়ে না-ও। তারপর তোমার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।”

বলে ওর মুখোমুখি বিছানায় বসলো। কুয়াশা ওর দিকে একমনে তাকিয়ে রইল। তুষার নিজ মনে পরোটা টুকরো করে ডিম ভাজা দিয়ে ওর মুখের সামনে ধরতে ও মুখ
–আম্মুকে ডেকে দিন। আমি আপনার হাতে খাবো না।

–কেনো আমার হাতে কী সমস্যা?

–আপনার প্রেমিকাকে যে হাত দিয়ে খাইয়েছেন সে হাত দিয়ে আমি খাবো? কখনো না।

–কুয়াশা আমাকে রাগিও না। ওর সাথে কাজিনে বাইরে কোনো সম্পর্ক নেই তবুও কেনো বার বার থার্ড টপিক তুলছ? এসব আলতুফালতু বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা বাড়াচ্ছি।

–ভালো হয়েছে নিজের প্রেমিকার কাছে যান। ঠক, প্রতারক আমাকে ঠকিয়ে বিয়ে করেছে।

তুষার ভয়ানক রেগে গিয়ে ধমকে বলল “কুয়াশা!”

কুয়াশাও ভয় পেয়ে ভেজা বেড়ালের ন্যায় চুপসে গিয়ে তুষার হাত থেকে পরোটার টুকরো মুখে পুরে নিলো। তুষার কিছু বলল না কুয়াশাকে খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নিলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here