প্রেমহিল্লোল||২৯|| #তাসনীম_তামান্না

0
8

#প্রেমহিল্লোল||২৯||
#তাসনীম_তামান্না

ভূপৃষ্ঠের একাংশে রোদের দেখা মিলেছে। কুয়াশার ঘুম ভেঙে পিটপিট করে চোখ খুলে তুষারের মুখশ্রী দেখল। তুষার তখন ঘুমিয়ে আছে। ও শুয়ে শুয়ে কতখন অধাঙ্গনের দিকে তাকিয়ে রইল নির্নিমেষ কি আদুরে বাচ্চার মতো লাগছে। তারপর ভাবলো উহুম এটা বাচ্চা নয় বুড়া শয়তান পেটে পেটে উহুম শিরায় শিরায় না না প্রতিটা রক্তের কণায় কণায় শয়তানিতে ভরা নিজে নিজে কথাগুলো একলা একলা হাসল ঘড়ির দিকে তাকাতেই খেয়াল হলো ৭ বেশি বেজে গেছে ও উঠে ফ্রেস হয়ে এসে দেখলো দরজায় কেউ নক করছে তুষার তখনও বেঘোরে ঘুমাছে ওর মায়া লাগল ও গিয়ে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে রিমাকে দেখে কিছু না বলে আবার মুখের ওপরে দরজা লাগিয়ে দিলো। কুয়াশার এমন কাজে রিমার মুখটা অপমানে থমথমে হয়ে গেলো।

কুয়াশা বিড়বিড় করে বলে উঠল “সকাল হতে না হতেই সাতচুন্নি এসে হাজির শালীকে দেখে মুডটাই খারাপ হয়ে গেলো সব এই বুইড়া ব্যাডার দোষ শালারে মন চাই খুন…”

বলতে বলতে থেমে গেলো চট করে মাথাই একটা বুদ্ধি আসে গেছে। এমন বুদ্ধিতে ওর নিজেই হেসে ফেললো। রিমা দরজার ওপরে রাগে কিড়মিড় করে বলল “খুব সাহস বেড়েছে মেয়ের। একবার সুযোগ আসুক তোকে শুধু এই ঘর থেকে নয় পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতেও ভাববো না।”

রাগে জেদে আবারও দরজা ধাক্কা দিলো। কুয়াশার হাসি মুখে রাগ এসে ভড় করলো দাঁতে দাঁত চেপে বলল “তুই যদি আর একবারও দরজায় শব্দ করিস তোর কী হাল করবো তুই জানিস না আমি যা বলি তাই করি আমাকে চিনিস না। তোকে সিঁড়ি থেকে এক ধাক্কায় ফেলে দিবো, সাতচুন্নি।”

রিমার রাগে জেদে কান্না পেলো। আর ঝামেলা বাড়ালো না কেউ দেখলে ওকেই দোষারোপ করবে। বাড়ি থেকেও বের করে দিতে পারে সেটা ও চাই না ওর প্লান ফুলফিল হতে হবে আগে তারপর এই কুয়াশা-ফুয়াশার অস্তিত্ব থাকবে না।

কুয়াশা রাগে ফুঁসে তুষারের দিকে তাকিয়ে দেখলো ব্যাটা এখনো নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে আরামের ঘুম দেখে ওর সহ্য হলো না। ও এদিকে ওদিকে তাকিয়ে জিনিসটি খুজলো তুষারের রুমের জিনিস পত্র কোথায় কি আছে ওর জানা নেই। তাই কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি খুঁজতে লেগে পরলো বেশি কষ্ট করে খোঁজাও লাগল না পেয়ে গেলো সেটা হাতে নিয়ে ঘুমান্ত তুষারের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিলো। সেটা ‘কাঁচি’! বেডের পাশে এগিয়ে গিয়ে তুষারের সুন্দর সুন্দর চুলগুলাতে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল “খুব ঢং তোর! শয়তান আরও বিয়ে করবি? বেশিভাব দেখাস শরম করে না? এবার দেখবো এতো ঢং কই থেকে পাস।”

কথাগুলো বলতে বলতে তুষারের চুলগুলো খামচি দিয়ে ধরে গোড়া থেকে ক্যাউ ক্যাউ কুচুৎ কুচুৎ কাউচির শব্দ তুলে খাপছাড়া ভাবে কেটে ফেলে বিশ্ব জয়ের একটা হাসি দিলো। যেভাবে কেটেছে পুরা মাথার চুল আর্মিকার্ট না বেল টাক কাট না দিলে লোকে ওকে হ্যান্সাম না পাগল বলবে। নিজের প্ল্যান মতো কাজ করে কুয়াশা খুশি মনে নিজে চলে গেলো গুনগুন করে নিজে বানানো গান গেয়ে উঠলো “ঘুমন্ত পেয়ারা সোয়ামি তুম বহাত খুব সুরাত হো ও হো ও।”

নিচে এসে দেখলো কালকে প্রায় সব আত্মীয় স্বজনরা চলে গেছে শুধু আত্মীয় বলতো রিমাই আছে। তুষারের বাবাও কাল ফিরে প্রোগ্রামে এটেন্ড করেছে ছেলের বউকে অনেক উপহারও দিয়েছেন। রান্নাঘরে শাশুড়ি আর সার্ভেন্ট মিলে সকালের ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে ও রিমাকে না দেখার মতো করে চলে গেলো। রিমা নিচে এসে নিজেকে নিজে বুঝিয়ে শান্ত করেছিলো। কিন্তু কুয়াশাকে দেখে সেটা আবার জ্বলে উঠলো।

কুয়াশা কিচেনে গিয়ে শাশুড়ির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল “গুড মর্নিং! কী করছো?”

–গুড মর্নিং! এইতো কাজ করছি তোর এতো তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেলো?

–হুম হুম দাও আমিও করি। তুমি প্রতিদিন কাজ করো তোমার কষ্ট হয় না?

কথা বলতে বলতে হাত থেকে বেলন নিয়ে নিজেই রুটি বেলতে শুরু করলো। তিশা বেগম বাঁধা দিলেও কিন্তু কাজ হলো না।

–কী করছিস তুই? খুব বড় হয়ে গেছিস? হাতে ব্যান্ডেজ ব্যাথা পাবি তো!

ও ব্যাথা পাওয়া হাতে ব্যাথা পেলেও নিজের শখ মেটাতে রুটি বেলার চেষ্টা করলো
–তুমি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো। আমার হাত ঠিক হয়ে গেছে না হলে রুমে গিয়ে রেস্ট করো আমি এসে গেছি আমি করছি।

হালিমা খালা পান খাওয়া লাল দাঁতে হেসে বলল “ছোট আম্মায় মেলা লক্ষ্মী দেখছনি এহনকার দিনে এমন মাইয়া খুঁইজা পাওন যায় না।”

ওর চোখমুখ খুশিতে চকচক হয়ে উঠলো বলল
–ধন্যবাদ খালা।

তিশা বেগম ধমকে বলল “চুপ কর। যা গিয়ে বসে থাক বেশি পাকামি। নিজের বাড়িতে একটাও কাজ কখনো করেছিস? আর এটা কী রুটি কোন দেশের মানচিত্র বানিয়েছিস দেখেছিস?

কুয়াশা চুমসে গিয়ে বলল “একটুই তো বেঁকে গেছে। বলো খালা” কথা বলতে বলতে হাতের আঙুল দিয়ে উঠিয়ে দেখাতে নিলে সেটা ছিঁড়ে আর্ধেক ফ্লোরে পড়লো। তিশা বেগম আর হালিমা খালা সশব্দে হেসে উঠলো। ও বোকা বোকা চোখেমুখে তাকিয়ে রইল।

তিশা বেগম ওর মাথায় হাত দিয়ে ঠুসি মেরে বলল “থাক মা আমার অনেক উপকার করেছেন। এবার গিয়ে শশুড়কে চা দিয়ে আসেন। তিনি সকালে কম করে তিন কাপ চা খান। এক কাপ খেয়েছে এখনো দুই কাপ বাকি। নিয়ে যান।”

ও দুঃখী দুঃখী মুখ করে টেবিলের কাছে এগিয়ে গিয়ে কাপে চা ঢেলতে লাগলো বলল “কষ্ট পেলাম শাশুমা সাহায্য করতে এসে অপমানিত হলাম। শশুআব্বাকে সব বলে দিমু”

–থাক হয়েছে…

তিশা বেগম কথা শেষ করতে পারলো না তার আগেই তুষারের হিংস্র রাগী কণ্ঠ ভেসে এলো অনবরত “কুয়াশা, কুয়াশা” বলে ডেকে চলেছে। কুয়াশা ভয়ে লাফিয়ে উঠতে কাপের গরম চা হাতে পড়লো ব্যাথাতুর শব্দ করেও ব্যথাকে পাত্তা না দিয়ে শাশুড়ির পিছনে গিয়ে লুকিয়ে গেলো।

–আমি কিছু করি নি শাশুমা তোমার হর্ল্লাদ ছেলের হাত থেকে বাঁচাও।

–কী করেছিস?

কুয়াশাকে ডেকে না পেয়ে ধুপধাপ পায়ে নিচে চলে এলো। রিমা রুমে চলে গেছিলো কুয়াশাকে সহ্য করতে না পেরে কিন্তু তুষারের এমন ডাকে ও রুম থেকে বের হয়ে আসলো। তুষারের বাবাও ছেলের ডাকে চলে এলেন। ও রীতি মতো রাগে ফোঁস ফোঁস করছে চুলগুলো ওর খুব শখের সেই চুলগুলোই তারই শখের বউ কেটে দিলো এ মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। তিশা ও হালিমা খালাও কিচেন থেকে বের হলো কুয়াশা বের হলো না। ও কিচেনের এ কোনে লুকিয়ে গেলো।

সবাই তুষারকে দেখে হেসে ফেললো। তিশা বেগম বলল “এ কী হাল তোর?”

–তোমাদের গুনধর বউমা করেছে তাকে কিছু না বলে বলে অনেক সাহস বেড়ে গেছে কই সে তাকে ডাকো। ব্যবস্থা করছি

রিমা তুষারের রাগ দেখে খুশি হয়ে তাতে ঘি ঢালতে বলল “বিয়ের দু’দিনে বুঝে গেলে। ঐ মেয়ে কি জিনিস? তাহলে বুঝো”

ওর কথায় কেউ পাত্তা দিলো না শুনেও না শোনার ভান করে রইলো। কিচেন থেকে কুয়াশা সবটা কান পেতে শুনছে। ওর কথা শুনে ভেংচি কাটলো।

তুষারের বাবা বলল “ভালোই তো করছে রাক্ষসের জঙ্গলির মতো রাখো কখনোতো কাটতে দেখি না। কুশু মা একটা ভালো কাজ করছে। এই কাজের জন্য সে পুরুস্কার পাবে।”

কুয়াশা ফিক করে হেসে ফেললো মুখ চেপে। তুষার অভিমানে মায়ের কাছে নালিশের সুরে বলল “মাহ দেখছ তোমার জামাই কী বলছে সব জেনেও চুপ থাকবে?”

তিশা বেগম হাসি আঁটকে বলল “কী আর বলবো বল। চুলতো আর এখনই পাবি না আবার উঠে যাবে মন খারাপ করিস না যা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।”

মায়ের কথা যৌক্তিক কিন্তু মন মানতে নারাজ এদিকে ওদিকে তাকিয়ে বিয়াদপ বউকে খুঁজলো কিন্তু ফলাফল শূন্য পেলো না। হতাশ হয়ে উপরে চলে গেলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here