#প্রেমহিল্লোল||৩০||
#তাসনীম_তামান্না
গোধূলিলগ্নে কারোর নীড়ে ফেরার তাড়া কেউ বা প্রকৃতি উপভোগ করতে ব্যস্ত। তার মধ্যে ঢাকার এক রেস্টুরেন্টের রুফটপে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতের ব্যান্ডেজ নিয়ে একরাশ বিরক্তি নিয়ে অপেক্ষায় বসে আছে রাজ। জানে না কার জন্য অপেক্ষা করছে শুধু জানে এক রমণী কে সে? কোথায় থাকে? নাম কী? এ-সব কিছু জানা নেই। শুধু জানে তার শুভাকাঙ্ক্ষী। এই তো কাল সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে জানালো তার সাথে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে তারই মতো ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্টে ভুগছে যদি একই সাথে কাজ করতে চাই তবে যেনো এখানে আসে। ও প্রথমে ভেবেছিল আসবে না কে না কে যেতে বলেছে তার ফোনে চলে যেতে হবে? রাজকে অর্ডার করে। এমন মেয়েকে দেখতে নিজেকে দমাতে পারে নি চলে এসেছে। এসে মনে হচ্ছে ভুল করেছে কেউ তাকে বোকা বানিয়ে ফোন দিয়েছে। এসির ঠান্ডাতেও বিরক্তিতে ঘামছে সে কোল্ড চকলেট মিল্কসেককে সুড়ুৎ সুড়ুৎ শব্দ করে শেষ করতে ব্যস্ত হয়ে গেলো এটা খাওয়া শেষ হলেই মাথা ঠান্ডা করে চলে যাবে। সাথে করে কোনো গার্ডস ও আনে নি। খাওয়ার মাঝে টেবিলের কাছে এসে কেউ দাঁড়ালো ও ভ্রু কুঁচকে মাথা উঁচু করে তাকালো। একজন ওয়েস্টার্ন পড়া সুন্দরী লেডি। মুখের কৃত্রিমত্তা সৌন্দর্যকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে চোখ ঝলছে যাওয়ার মতো। ওট ভ্রু যুগল শিথিল হলো। প্রশ্ন করলো “কিছু বলবেন?”
রিমা চোখমুখে কঠোরতার ঢেলে বলল “বাচ্চা নাকি আপনি? গেস্ট রেখে খেয়ে ফেলছেন? হাউ ম্যানরলেস!”
রাজ অপ্রস্তুত হয়ে গেলো বুঝতে অসুবিধা হলো না এই মেয়েই তাকে অর্ডার করে আসতে বলেছে অপ্রস্তুত ভাব ঢাকতে কুঠিল হেসে উল্টো ওকে অপ্রস্তুত করতে বলল “ওওহো আপনি! আমি তো ভাবলাম আপনি আসবেন না। নিজেই ডেকে এনে নিজেই দেরি করে আসেন। এটা কেমন ম্যানার? আপনি যখন আমাকে আগে থেকে চিনতেন এটাও জানেন আমি অসুস্থ…”
রিমা বিরক্ত হয়ে চেয়ারে বসে ওকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল “হেই, জাস্ট শাট আপ! বাংলাদেশে যেই জ্যাম আগে জানলে এখানে আপনার মুখো দর্শন করতে আসতাম না।”
রাজ রেগে গেলো ওকে শাট আপ বলে ধমক দেয়? মেয়েটার কী তাকে দেখে ভয় লাগছে না? তার হিস্ট্রি জেনেই এসেছে যতদূর জানা তাহলে তাকে ভয় পাচ্ছে না কেনো? আবার ও ধমক হজম করলো? নো নেভার!
–এমন ভাব দেখাচ্ছেন। আপনার জন্ম বিদেশে!
–রাইট!
রাজের সামনে বসে থাকা মেয়ের ওপরে রাগ, বিরক্তি হচ্ছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না। আবার কৌতূহল হচ্ছে। বলল “নাম কী? কে আপনি?”
–বলার প্রয়োজন মনে করছি না। বাই দ্যা ওয়ে কাজের কথায় আসুন…
রাজের রাগ তিরতির করে বাড়ছে। মেয়েটার সাহস দেখে অবাক না হয়ে পারছে না। মুখের ওপরে একের পর এক অপমান করে যাচ্ছে।
–কীসের কাজ?
–ব্রেনলেস নাকি? এখানে কীসের জন্য এসেছেন? কী কাজে ডেকেছি?
রাজ অপমানে থমথমে হয়ে গেলো। রিমা নিজেই বলল “এই ব্রেন নিয়ে চলেন বলেই আজ আপনার এই হাল মার খেয়ে লটকে আছেন। যাই হোক নিজের ভালোবাসা কুয়াশাকে নিজের করে পেতে এসেছেন। আর আমি আমার ভালোবাসা তুষারকে নিজের করতে এসেছি।”
–আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন!
–ওয়াও দ্যাটস গ্রেট এটা বুঝতে পারলেন কীভাবে? ব্রেন তাহলে একটু আধটু আছে তাহলে?
রাজ আর বসে থাকতে পারলো না এতো অপমানিত হয়ে বসে থাকার কোনো মানেই হয় না। মেয়েটা প্রতিটা কথায় তাকে অপমান করছে, ব্রেনলেস বলেছে। এমন মেনে বসে থাকলে ও নিজেই নিজের কাছে ব্রেনলেস প্রমাণিত হবে। ওকে উঠে দাঁড়াতে দেখে রিমা ভ্রু কুঁচকে বলল “মি. ব্রেনলেসমশায় এ্যানি প্রবলেম? মার খেয়ে কী বেশিক্ষণ বসতে প্রবলেম হয়? প্রপার টিটমেন্ট নেন নাই নাকি?”
রাজ ধপ করে আবার বসে পড়লো মেয়েটা তাকে একচুল অপমান করতে ছাড়ছে না। মেজাজ দেখিয়ে ধমকে বলল “জাস্ট সাট আপ। আপনার সাথে আমার কোনো প্রকাশ কথা হবে না। আপনি আপনার মতো আপনার ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে নিন। আমি আমারটা বুঝে নিবো।”
রিমা নিজেও বুঝতে পারলো বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। তাই বুদ্ধি করে বলল “আমি আপনাকে হেল্প না করলে আপনি পারবেন না। এতোদিন যেমন পারেন নি এবারও পারবেন না। ঠিকাছে যান আপনি।”
রাজ গেলো না। বসে থেকে রিমার দিকে তাকিয়ে রইল। ওকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিমা কঠিন স্বরে বলল “দূর হচ্ছেন না কেনো এখনো?”
–আপনাকে দেখতে ভালো লাগছে।
রিমা তেতে উঠে বলল “কী?”
ও থতমত খেয়ে বলল “কী কী? কী বলবেন বলুন শুনছি।”
–এতোক্ষণ ঢং করে টাইম ওয়েস্ট করলেন কেনো তাহলে?
রাজ গা ছাড়া ভাবে বলল “দেখছিলাম আপনি কী বলেন! কী করেন!”
————–
তুষার সারাদিন পর সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরলো টাক মাথায় ক্যাপ ছাড়া চলতে পারছে না। যেই দেখছে সেই জিজ্ঞেসা করছে ক্যাপ খুলছে না কেনো? বন্ধুরা ক্যাপ খুলেই টাক দেখেই মজা নিতে ছাড়ে নি। ফ্রেশ হয়ে নিবরে কুয়াশাকে খুঁজলো কিন্তু সাতচুন্নি বউয়ের টিকিটার খোঁজ পেলো না। ও কুয়াশাকে দেখতে না পেয়ে তিশাকে জিজ্ঞেসা করলো “মা, কুয়াশা কই?”
ওনি হেসে বলল “তোর ভয়ে তুতুলের রুমে দরজা আটকে বসে আছে। থাক ওকে বকিস না। বাচ্চা মেয়ে!”
–ও এতোটাও বাচ্চা নয়। বাচ্চা মানুষ করার বয়স হয়েছে। এখন এসব না দমালে এমন বাচ্চামি করতে করতে একদিন বড় অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে।
কুয়াশা তুতুলের রুমের দরজায় কান পেতে তুষারের কথা শুনে চুপসে গেলো। ছেলের এমন কথায় তিশা বেগম গম্ভীর কণ্ঠে বলল
–এসব কী বলছিস তুষার? মেয়েটার মানসিক অবস্থা ঠিক নেই। ঠিক থাকলে কখনো এমন করতো বলে তোর মনে হয়? এই মেয়েটাকে বিয়ে করলি বড় শখ করে এখনই শখ মিটে গেছে?
–মা তুমি উল্টো বুঝতেছ। আমি সেভাবে বলি নি। আমার কখনো ওর ওপরে বিরক্ত আসে নি। সকালে সাময়িক রাগ হয়েছিল ঠিকি কিন্তু এখন আর সেটা নেই।
–তুষার তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি। কুয়াশার ওপরে কখনো অবহেলা দেখলে তুমি আমার ছেলে বলে পার পাবে না।
–মা তুমি ভুল বুঝতেছ
তিশা বেগম শুনলেন না চলে গেলেন। তুষার কী করবে বুঝতে পারলো না। সে রাতে তুষার খেলো না রুমে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লো মা-ও ছেলেকে ডাকলো না। শাশুড়ি বউমাকে ডাকলো কুয়াশা সাড়া দিলো না ঘুমিয়ে পড়ছে ভেবে ওনি চলে গেলে। তিশা খাবে না ভেবেছিলো কিন্তু তুহিন তার বউকে না খেয়ে শুতে দিলো না নিজেই বউকে যত্ন করে খাইয়ে দিলো।
সকলে তখন ঘুমিয়ে পড়েছে। বাসার লাইট অফ অল্প আলোর লাইট জ্বলছে। কুয়াশা চোখ-মুখ ফুলিয়ে তুতুলের রুম থেকে বের হয়ে তুষারের রুমে আসলো। তুষার পুরো বিছানা জুড়ে উবুড় হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো মেয়েলি সুবাস পেয়ে চোখ খুললো ড্রিমলাইটের আলোয় মেয়েলি অবয়ব দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না এটা কুয়াশা। তবুও ওভাবে ঘুমের ভান ধরে শুয়ে রইলো। কুয়াশার নাক টানার আওয়াজ আসলো। কুয়াশা লাইট জ্বালিয়ে এসে ডাকলো “এই এই শুনেন শুনেনন না এই?”
ও তেজ দেখিয়ে বলল “কী সমস্যা?”
কাঁচি এগিয়ে দিয়ে বলল “আমি আপনার চুল কেটে দিয়েছি আপনি আমার চুল কেটে দিন। তাহলে বরাবর হয়ে যাবে। নিন শোধ তুলুন”
তুষার স্বাভাবিক কাঁচি নিলো ও পিছনে ফিরে কান্না চেপে দাড়িয়ে রইলো। নিজের চুলগুলো তারও প্রিয়। তুষার কাচিটা নিঃশব্দে রেখে কুয়াশার পেট কোমড় পেচিয়ে বিছানায় ফেলে লাইট অফ করে ওর গলায় মুখ গুঁজে দিলো। ও তখনো ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।
–কী সমস্যা ঘুমাচ্ছ না কেনো?
–আমি খারাপ তাই!
–আমি জানি সেটা ঘুমাও। বউ ছাড়া কতগুলো ঘন্টা থেকেছি বলো তো! চোখের তৃষ্ণা, কানের তৃষ্ণা, মুখের তৃষ্ণা…
–চুপ করুন। আমাকে আপনার ভালো লাগে না। শুধু শুধু মিথ্যা বলছেন কেনো?
–কে বললো?
–নিজের কানে শুনেছি। সব জানি আমি।
–ঘোড়ার ডিম জানো। আর একটা আওয়াজ পেলে হাত পা মুখ বেঁধে রাখব
ও তুষারের কথায় ভয় পেয়ে কান্নার গতি বাড়লো। তুষার কিছু বলল না। একটা সময় ওর কান্না থেমে গেলো ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লো। ও ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল “আমার সাতচুন্নি বউ! আমার শখের বউ! পেত্নী বউ! কাঁদুনি বউ! অভিমানি বউ! পাগলি বউ! ভালোবাসি বউ!”
চলবে ইনশাআল্লাহ
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/