#সুন্দর_স্পৃহা
#সামিয়া_সারা
#psychobasedstory
পর্ব-৩
বাড়ি ফিরে আগে শাওয়ার নিল সুন্দর । তবুও যেন তার রাগ কিছুতেই কমছে না । তার স্পর্শ তার মুখে স্পর্শ ডাক শুনতে
ঘৃণা পায়! এ যেন কিছুতেই মানা যাচ্ছে না। বাড়ির এক এক
করে সমস্ত কিছু ভাঙতে শুরু করলো সুন্দর। এমনকি নিজের গিটারটাও ভেঙে দু টুকরো করে ফেললো।
সুন্দরের মা এবং বাবা মি. সানজিদ চৌধুরী এবং মিসেস সাবিনা চৌধুরী দৌড়ে নিজের ছেলের কাছে যায় ।ছেলের এমন পাগলের মত আচরণ দেখে মিসেস সাবিনা চৌধুরী তাকে থামতে বলেন।
-মা আমাকে একা থাকতে দাও ।এখান থেকে চলে যাও তোমরা।
-কিন্তু তোর হাত দিয়ে তো র*ক্ত পড়ছে ।কি হয়েছে সোনা একটু শান্ত হ! স্পৃহা মা কিছু বলেছে?
-আমার স্পর্শকে নিয়ে কথা বলার অধিকার এই দুনিয়ার কারো নেই ! তাই ওকে নিয়ে কোন প্রশ্ন করবে না ।তোমাকে আগেও মানা করেছি ।ওকে নিয়ে যা বলার শুধু আমি বলব ।কারোর মুখ থেকে আমি ওর নাম বা ওকে নিয়ে কথা শুনতে চাই না ।তোমরা ঘুমিয়ে পড়ো।
সুন্দর এর সাথে যত বেশি কথা বাড়ানো হবে সে তত বেশি জেদ দেখাবে এই ভেবে মি. আর মিসেস চৌধুরী নিজেদের ঘরে ফিরে গেল।
নিজের ক্ষতবিক্ষত হাত নিয়ে সুন্দর ওভাবেই শুয়ে পড়ল ।
মনে হচ্ছে তার তীব্র জ্বর এসেছে,নিজের গায়ে তাপ প্রবলভাবে অনুভব করল। তবুও যেন সে নিয়ে কোন ভুরুক্ষেপ নেই তার। তীব্র মাথা ব্যথার কাছেও তার নিজের প্রতি অনীহা জিতে গিয়েছে! তুমি কি সত্যিই আমায় কখনো ভালবাসবে না স্পর্শ? কিন্তু আমি তো তোমাকে আর কারো প্রতি তোমার অনুভূতি তৈরি হতে দেব না ! হয় আমাকে ভালবাসবে নয়তো কাউকে না!
সুন্দরের ঘুম ভাঙলো মাথায় পানি নিতে নিতে, দুর্বল কন্ঠে জিজ্ঞেস করল ,
-তোমরা সবাই এখানে কেন?
– তোর জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে, অথচ একটাবার জানাস নি আমাদেরকে ! কী ভেবেছিস নিজেকে ? যা খুশি যেমন ইচ্ছা সেভাবেই চলবি?
-আমার কিছু হয়নি, তোমরা নিজেদের মত কাজ কর। কোন সমস্যা হলে জানাবো ।অফিসে আজ একটি মিটিং রয়েছে আমাকে বের হতে হবে ।
-কী শুরু করেছো ভাইয়া ?এত জ্বর নিয়েও মিটিংয়ের কথা ভাবছো? আর ভুলে যেও না অফিসের দায়িত্বে তুমি ছাড়াও আমি এবং বাবা রয়েছি । বিজনেস আমরা সামলে নিব,তুমি বাসায় থেকে রেস্ট কর।
-নাহ্ এখন এমনিতেও বাসায় থাকা হবে না আমার মিটিং এর চেয়েও বেশি ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে আজ।
-মিটিং এর চেয়েও ইম্পরট্যান্ট কাজ ? তার মানে নিশ্চয়ই স্পৃহা কে নিয়ে । কোন দরকার হলে আমাকে বলো আমি গিয়ে ওর সাথে দেখা করে আসবো।
-তুই এত বড় সাহস কোথা থেকে পেলি লিহান!!! আমায় স্পর্শের নাম মুখে নিয়েছিস ! আবার ওর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার মতো কথা বলে নিজের দুঃসাহস দেখালি ! তোকে আমার আপন ভাই হ আর যেই হ এর শাস্তি তোকে পেতেই হবে।
সুন্দরের হুংকারে লিহানের গলা শুকিয়ে গিয়েছে। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,
-ভাইয়া ও আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট তাই বলেছিলাম, কিন্তু এমন ভুল আর হবে না ।তুমি যা বলে ডাকতে বলবে আমি তাই বলে ডাকবো ।
-তার কোন প্রয়োজন নেই। ওর সাথে কথা বলার মত দুঃসাহসও তুই কখনো দেখাবে না ।আমি চাইনা আমার স্পর্শের সাথে কেউ কথা বলুক।
-কোথায় যাচ্ছ ভাইয়া ?
-পানি..
-তুমি রেস্ট নাও আমি এনে দিচ্ছি।
লিহান পানি নিয়ে ফিরে আসতেই অদৃশ্যভাবে কিছু বাধা পেয়ে সামনে উপর হয়ে পড়লে তার সামনে থাকা টেবিলের কোনায় তার মাথায় লেগে বেশ অনেকখানি কেটে র*ক্ত পড়ছে ।তবুও চুপচাপ উঠে সুন্দরকে পানিতে সে নিজের ঘরে ফিরে গেল, সব স্বাভাবিক ।কিছুই যেন হয়নি অথবা এমনটা যেন হওয়ারই কথা ছিল।
সুন্দরের গায়ে তাপমাত্রা ১০৩° ফারেনহাইট। তবুও এ অবস্থাতেই সে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে ।আজ অফিসে যাবে না ,কিন্তু তার স্পর্শকে ছাড়া তার এক মুহূর্ত থাকা সম্ভব না। স্পৃহার বাসায় কলিংবেল বাজাতেই তার মা সদর দরজা খুলে দেন। সুন্দর কোন কথা না বলে সোজা দুই তলায় স্পৃহার রুমে চলে যায় । সুন্দরের এমন বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে স্পৃহা চমকে ওঠে। কিছু বলতে যাবে তার আগেই সুন্দর স্পৃহাকে বাধা দিয়ে শক্ত করে তার কোমর জড়িয়ে শুয়ে পড়ে । তীব্র জ্বরে তার শরীর এলিয়ে পড়েছে।
-আপনার তো অনেক জ্বর এসেছে, শরীর তাপে পুড়ে যাচ্ছে!
-সব ছারখার হয়ে যাক তবুও তুমি আমার থাকবে।
-কী সব আবোলতাবোল বলছেন ?আপনি কিছু খেয়েছেন ?এ অবস্থা থেকে বাসা থেকে বের হতে গেলেন কেন ?
-তোমাকে না দেখলে এমনিতেও অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেত।
-আপনি উঠুন ,আমি ওষুধ দিচ্ছি।
-নড়বে না এখান থেকে…
সুন্দরের জ্বর ক্রমেই বেড়ে চলেছে ।স্পৃহার এই মুহূর্তে কি করা উচিত সে নিজেও বুঝতে পারছে না।
সুন্দরের গোঙানির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, জ্বরের ঘোরে কী বলছে স্পৃহা তা বুঝতে পারছে না সুন্দরের কথা শোনার জন্য তার মুখের কাছে নিজের কান আগাতেই সে শুনতে পায় ,
-আমায় ভালোবাসো না কেন স্পর্শ …..এত ঘৃণা কেন কর ….আমায় ভালোবাসো না কেন…
-অনেক হয়েছে এবার ওষুধ খেয়ে নিন জ্বরে আপনার শরীর পুড়ে যাচ্ছে !
-আমায় কেন ভালোবাসো না স্পর্শ !? কেন বাসনা?…
স্পৃহা এবার জোর করে উঠে গেল । সুন্দরের জ্বর আরো বেড়েই চলেছে ।অপেক্ষা করাটা ঠিক হবে না ।তাই সে দ্রুত ওষুধ এনে সুন্দরকে খাইয়ে দিল এবং একটি ভেজা কাপড় দিয়ে তার কপাল বারবার উল্টিয়ে উল্টিয়ে রাখছে।
সুন্দরের ক্ষত হওয়া হাতে র*ক্ত শুকিয়ে লেগে আছে স্পৃহা আরেকটি ভেজা কাপড় নিয়ে তা সাবধানে পরিষ্কার করতে লাগলো ।
-নিজের প্রতি তার এত অনীহা কেন ! আমাকে এত যত্ন করেন অথচ নিজের যত্ন একটুও করতে পারেননা?
এদিকে লিহানের মাথায় বেশ গভীরভাবে কেটে গিয়েছে। মিসেস সাবিনা চৌধুরীর অনুরোধে লিহান ডক্টরের কাছে যায় তার বেস্ট ফ্রেন্ড আরিয়ানের সঙ্গে। ডক্টর লিহানকে বেশ কিছু ওষুধ দিল এবং রেষ্ট করতে বলল। তার মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে, তবে ভাগ্য ভালো যে কোন সেলাই লাগেনি।
-আচ্ছা লিহান সত্যি করে বলতো তোর কপালে কিভাবে কাটলো। ঠিক কতবার এ প্রশ্নটার করলে তুই উত্তর দিবি বল তো?
-পড়ে গিয়ে কেটে গিয়েছে তেমন কিছু না। অসাবধানতার
কারণে ।
-দেখ আমি তোর বন্ধু ! দয়া করে আমার থেকে কিছু লুকাস না। নিশ্চয়ই তোর সাইকো ভাইটার কাজ ।ঠিক বলেছি না?
-আসলে আজকে স্পৃহাকে নিয়ে কথা তুলেছিলাম…..
-কিন্তু আমরা সবাই তোকে বুঝেছিলাম ওকে নিয়ে কোনো রকমের কথা না বলতে তবুও তুই কেন
এই ভুল করেছিস?
-তোরা আমাকে বুঝিয়েছিস কিন্তু আমি আমার মনকে কিভাবে বোঝাবো?
-র*ক্তে খু*ন হতে নেই তাহলে সেই বংশের র*ক্ত অপবিত্র হয়ে যায়। তোর ভাই ওর জন্য পুরাই সাইকো তাই এখনো সময় আছে এসব ভুলে যা।
-ওকে আমি ভালোবাসি আরিয়ান আমার নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি!
-আমার পক্ষে ভোলা কখনো সম্ভব নয় আর আমি সহ্য করতে পারছি না!
– ভাই ,তুই কিভাবে পারিস নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের আপন ভাইয়ের সাথে দেখতে? আমি হলে কখনোই মেনে নিতে পারতাম না!
আমার কাছে একটা প্লান আছে আজ সন্ধ্যায় আমার সাথে বের হ,একজনের সাথে দেখা করব । সব শেয়ার করলে তাকে দিয়ে কাজটা করিয়ে পথের কাঁটাটা দূর করব ।তবে তোর স্পৃহা কে তুই পাবি।
-কিন্তু কার কাছে যাবো?
সুন্দরের জ্বরটা এখন কমে এসেছে। তার স্পর্শের যত্নের ছোঁয়ায় সে সুস্থ হয়েছে, সুন্দরের মনে হচ্ছে জ্বর আসায় যদি তার স্পর্শের স্পর্শে সে থাকতে পারে তবে জ্বরই ভালো সে !!!…….
(চলবে…)
#Running
Story Name: #Shundor_Spriha
Written by Samia Sara©️
Episode:3
আমার প্রিয় মানুষেরা এই পর্বটি আপনাদের কেমন লেগেছে ? আগের পর্বগুলোতে এত ভালোবাসা দেয়ার জন্য আমি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে ।আশা করি সব সময় পাশে থাকবেন💖(next episode special hobe)