সুন্দর_স্পৃহা #সামিয়া_সারা #psychobasedstory পর্ব-৪

0
2

#সুন্দর_স্পৃহা
#সামিয়া_সারা
#psychobasedstory

পর্ব-৪

সুন্দর স্পৃহার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে রয়েছে ।তার জ্বর এখন কম অনেকটা সুস্থ লাগছে ।তবুও সে স্পৃহার সান্নিধ্যে থাকার জন্য বলল,

-ভীষণ মাথাব্যথা করছে আমার। একটু মাথাটা টিপে দিবে প্লিজ?

স্পৃহা ইতস্তত বোধ করায় কিছু বলল না। সুন্দর এবার চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

-উফফ্ ব্যথায় মরে যাচ্ছি…

এবার স্পৃহা আর অপেক্ষা করলো না ।নিজের হাতটা আলতোভাবে সুন্দরের মাথায় রাখলো।

– এটা কি তোমার হাত নাকি তুলা? মানে আসলেই মাংসের তৈরি হাতে তো? যদি এত নরম হাত হয় কারো তাহলে না জানি….

সুন্দরের কথার অর্থ বুঝে কথার মাঝখানে স্পৃহা চোখ বড় করে তাকালো। সাথে সাথে স্পৃহা প্রসঙ্গ পাল্টে নিল ।এমন লজ্জা জনক পরিস্থিতিতে সে মোটেই পড়তে চায় না।

-আপনি এতক্ষণ নাটক করছিলেন তাই না ? আপনার মাথা ব্যথা নেই তা বোঝা হয়ে গিয়েছে।

-এমন তুলার স্পর্শ পেলে মাথাব্যথা তুলার মতই উড়ে যায়।

-কিন্তু আমার মাথাটা ধরেছে এখন ।শাওয়ার নিব ।আপনি প্লিজ চলে যান এখন ।

নিমেষের মধ্যেই সুন্দরের এই হাস্যজ্জল মুখ হিংস্রতা লাভ করে স্পৃহার গাল চেপে বলে ,

-আমি থাকলেই তোমার মাথা ধরে তাই না তবে সেকেন্ডে সেকেন্ডে এমন মাথা ধরা সহ্য করবে।

-ছাড়ুন! আমি ব্যাথা পাচ্ছি! আহহহ্!..

-Don’t make this sound shoporsho! I can’t control myself….

স্পৃহার ঠোঁটে তার বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে দুবার স্লাইড করে হাত সরিয়ে নিল সুন্দর। তার স্পর্শের কাছে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না !

-যাও শাওয়ার নাও। সন্ধ্যায় দেখা হচ্ছে…

স্পৃহার সব যেন থমকে গিয়েছে ।তবুও সুন্দরের যাওয়ার কথা শুনে এক মুহূর্ত দেরি না করেই সে বলল,

-Thanks!

-Baby I love you

-Excuse me?

বেশ অবাক হয়ে তাকায় স্পৃহা। সুন্দর তো তাকে কখনো স্পর্শ ছাড়া অন্য নামে ডাকে না ! যখন খুব রাগ হয়ে যায় তখন স্পৃহা বলে । কিন্তু অন্য কোন নামে কখনই তাকে ডাকেনি ।আজ হলো কি হঠাৎ!

-O jaan-e-jaan,dono jahan ,meri bahon mein aa bhool Ja aaaa…!
Baby i love u, baby i love you, baby i love you, baby, Pehli nazar mein kaise jaado kar diya…

গান গাচ্ছি, স্পর্শ। তোমাকে তো আমি বেবি বলি না। তুমি কী ভেবেছিলে?

-না কিছু না ।

-তোমার না মাথায় ধরেছিল, যাও শাওয়ার নাও। আমি আসছি সন্ধ্যায় দেখা হবে ,রেডি থেকো।

-Baby I love you….so much

সুন্দর আর পেছনে না দেখে বেরিয়ে গেল।

সন্ধ্যা ছয়টা বাজে,লিহান আরিয়ান একসাথে বেরিয়েছে ।লিহানের কোন কোন ধারণা নেই সে কার কাছে বা কোথায় যাচ্ছে।

-কোথায় যাচ্ছি আমরা সেটা তো বল?

-বললাম তা তো প্যারা নিস না

লিহান এবার আর কিছু বলল না।

চারিদিকে অন্ধকার হয়ে এসেছে ।তারা এর মধ্যে বেশ নির্জন একটি জায়গায় এসেছে ।একটি পুরনো বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ানোর পর আরিয়ান বলল,

– তুই এখানে দাঁড়া, আমি ভেতর থেকে দেখে আসি ভাই আছে নাকি ।

-কিন্তু কিসের ভাই কার ভাই কিছু তো বল

-তোর সমস্যা সমাধানের জন্যেই এত কিছু !আর তুই উল্টা আমাকে প্রশ্ন করছিস !?

-না তেমন কিছু যা তুই দেখে আয় ।

-লিহান ! ভেতরে আয়।

এটা হচ্ছে আমাদের আশিক ভাই। অনেক বড় নেতা ।পুরো শহর তার আন্ডারে ।তুই তো সমস্যা খুলে বল ।দেখ এক চুটকিতে সমাধান করে ফেলবে ।কিন্তু কি বলবো আমি ?আরে কী বলবি মানে !? যা যা হয়েছে এ পর্যন্ত সবকিছু বল !
আরে ছোট ভাই বল বল।আমি সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব ।

-তুমি তো আরিয়ানের বন্ধু, আর আরিয়ান কিন্তু আমার খুব কাছের! ইতস্তত বোধ করার কিছু হয়নি।

-নে নে লিহান এবার শুরু কর ভাই কিন্তু অনেক ব্যস্ত মানুষ ।আমাদের যে সময় দিচ্ছে এই অনেক ।এবার তুই বল আর দেরি না করে।

-আসলে ভাই আমি একটা মেয়েকে অসম্ভব ভালোবাসি ।বলতে পারেন আমার জীবনের চেয়ে বেশি। মানে মানসিকতাটা ঠিক এমন ভাবেই হয়েছে যে হয় তাকে আমার করে পাবো আর নয়তো আমি বাঁচতে পারব না ।কিন্তু আমার চেয়েও ভয়ানক মানসিকতার আমার ভাই। সে তার জন্য পুরোই পাগল এখন আমার হাতে দুইটা অপশন ।যেকোন মূল্যে তাকে পাওয়া আর নয়তো নিজেকে শেষ করে দেওয়া এটাই হলো সমস্যা।

-ঘটনার সূত্রপাত কোথা থেকে এবং কবে থেকে আমাকে পুরো ব্যাপারটা প্রথম থেকে বল।

-আমি হাসনিল চৌধুরী লিহান, শখের বশের গায়ক বলতে পারেন । আজ থেকে দুই বছর আগে যখন আমি ভার্সিটিতে ভর্তি হই। তখন আমরা কয়েকটা ফ্রেন্ড মিলে সিদ্ধান্ত নেই একটি গ্রুপ তৈরি করব বিভিন্ন কনসার্টে গান গাওয়ার জন্য । ওই একই ভার্সিটিতে আমার বড় ভাই ও পড়তো। তখন আমার বয়স ১৯ আর ভাইয়ার ২৩।সেও ভীষণ সুন্দর গান গায়। ভাইয়ার সাথে আলোচনা করে আমরা একটি গ্রুপ তৈরি করি। বেশ কয়েক মাস পরেই আমাদের অনেক জনপ্রিয়তা হল। তবে আমাদের গ্রুপে ভাইয়া ছিল না কারণ ভাইয়া সে বছরই ভার্সিটি ছেড়ে আমাদের কোম্পানিতে জয়েন করার প্ল্যান করছিল। একদিন একটি স্কুলের ফেয়ারওয়েল এর প্রোগ্রামে আমাদের ডাক পড়ে। ওটা মূলত এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান ছিল আর ওই অনুষ্ঠানের ভলেন্টিয়ার হিসেবে উপস্থিত ছিল নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা।

-মেয়েটা নিশ্চয়ই এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ একজন ছিল?

-না ।

-তাহলে তো মেয়েটা বেশ ছোট ছিল! হ্যাঁ, তারপর তুমি কন্টিনিউ করো।

-ওর নাম স্পর্শিয়া আদনান স্পৃহা। অসম্ভব সুন্দর ও,যার রূপে বর্ণনা করা যাবে না ! মায়াবী চোখ তার! প্রথম দেখাতে ভালোবাসা যাকে বলে,ওকে দেখার পরে আমি সে অনুভূতিটা পেয়েছিলাম। নজর আটকে যাওয়ার মত নিখুঁতভাবে তাকে তৈরি করেছেন সৃষ্টিকর্তা। ওর সাথে কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমার চোখাচোখিও হলো। হঠাৎ করে আমার সামনে এসে বলল,

-ভাইয়া আপনাদের কনসার্ট শুরু হওয়ার আগে আপনারা এখানে রেস্ট করতে পারেন ।

-ওর কন্ঠ আমার কানের রিনরিন করে বাজতে লাগলো।
এত সুমধুর কন্ঠ হয় কারো!

-প্রথম প্রেম ?নাকি এর আগেও কেউ কাউকে এভাবে ভালো লেগেছিল?

-ওই প্রথম এবং ওই শেষ।

– আচ্ছা তারপর বল ।

আমি ওকে পাওয়ার জন্য বেশ উতলা হয়ে পড়েছিলাম ।মনে হচ্ছিল এক্ষুনি ওকে জানিয়ে দিই আমার ভালোবাসার কথা। আমার আটকানো দৃষ্টি দেখে আমার বন্ধুরাও বুঝে যায় আমি প্রেমে পড়েছি। ওদের বিভিন্ন কথা শুনে মনে হলো প্রপোজ করার আগে ওদেরকে জানিয়ে নেই। এখন প্রপোজ করা ঠিক হবে নাকি পরে করব!

হঠাৎ লিহানকে থামিয়ে আরিয়ান বলল,

– থাম লিহান এরপর থেকে আমি বলছি ।
লিহান আমাদের ব্যাচের সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ ভার্সিটিতে ঢুকতেই সে ভার্সিটির ক্রাশ হয়ে যায় ।এক কথায় চেহারা যেমন সুন্দর তেমন কথা বলার ধরন। যেমন তার উচ্চতা তেমন সুন্দর জিম করা বডি,গায়ের রং! সাথে সিল্কি চুল গুলো আর ডিপ ভয়েস নিয়ে পুরো ভার্সিটির মেয়েদের ক্রাস বয় হয়ে গেল। আমরা ফ্রেন্ডসরা ওকে মজা করে এটা বলেই ডাকতাম । হঠাৎ আমাদের সেই ক্রাশ বয় কারো প্রেমে পড়েছে ভাবতেই পারিনি ।তারপর ওকে বললাম ,

-কে সেই সৌভাগ্যশালী নারী?

তখন ও স্পৃহা কে দেখালো এরপর অনেক বুঝিয়ে বললাম মেয়েটা এখন অনেক ছোট এত তাড়াতাড়ি প্রপোজ করার দরকার নেই ।আপাতত কনসার্ট টা করে যাই ।আর ওকে নজরে রাখ ।পরে সুযোগ বুঝে করিস এবং ও তাতে রাজি হয়ে যায়।

-হ্যাঁ,আরিয়ানরা সকলে আমাকে এ কথা বুঝিয়েছিল এবং আমি তাতে রাজি হয়ে যাই। আর তাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল যার মাশুল আমাকে মৃত্যু দিয়ে দিতে হচ্ছে।

এরই মাঝে আশিকের ফোনে কল আসে। কল কেটে ভীষণ তাড়াহুড়ায় এসে জানায় তার খুব জরুরী একটি মিটিং রয়েছে।

-ভাইয়েরা আমার ,খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি মিটিংয়ে যেতে হচ্ছে। আরিয়ান শোনো কাল ঠিক এই সময়ে তুমি ওকে নিয়ে আসবে ।আমি এ সমস্যাটা সমাধান করে দেব নিজের সর্বোচ্চ টা দিয়ে।
আশিক বেরিয়ে গিয়েও আবার ফিরে এসে লিহানকে জিজ্ঞেস করলো,

-ওহ্ এতকিছু শোনা হল,তোমার ভাইয়ের নামটাই তো এখনও বললে না !কি নাম তার?

সানজিল চৌধুরী সুন্দর…

(চলবে…)
#Running
Story Name: #Shundor_Spriha
Written by Samia Sara©️
Episode:4

আমার প্রিয় মানুষেরা এই পর্বটি আপনাদের কেমন লেগেছে ? আগের পর্বগুলোতে এত ভালোবাসা দেয়ার জন্য আমি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে ।আশা করি সব সময় পাশে থাকবেন💖(ekhon theke every episode e twist paben 😌golpo ta ke ektu unique korte chai jar karone bar bar plot change hobe,present past future mixed) আর আপনাদের কমেন্ট গুলো আমার অনুপ্রেরণা, অনেক ভালোবাসা।রোজ 10 টায় কিন্তু সবাই কে অপেক্ষা করতে হবে আমার জন্য🥺📌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here