#সুন্দর_স্পৃহা
#সামিয়া_সারা
#psychobasedstory
পর্ব-২০
হাতে নতুন করে ক্ষত সৃষ্টি হওয়ায় জ্ঞান হারায় স্পৃহা।
তাছাড়াও বাম হাতটি তার পূর্ব থেকেই ক্ষত হওয়া ছিল। নতুন
ও পুরাতন ক্ষত এর তীব্র যন্ত্রণায় তাই সে আর হুঁশে থাকতে পারে না। একেবারে সকালে সুন্দরের দেওয়া পানির ঝাপটায় জেগে ওঠে স্পৃহা। অনেক আতঙ্কিত অবস্থায় সে তাড়াহুড়ো করে উঠলো। সুন্দরের দিকে তাকিয়ে বলল,
-রোজ সকালে আমি আপনাকে দেখতে পাই এই রুমে। কেন? কী উদ্দেশ্যে আসেন আপনি?
-আপনি সেন্সলেস হয়ে ছিলেন। আমাকে থ্যাঙ্কস দেওয়া উচিত ছিল,কারণ আমি আপনার জ্ঞান ফিরিয়ে এনেছি।
এ্যানিওয়ে, আমি অনেকক্ষণ ধরে ডাকছিলাম আপনাকে।
স্পৃহার ভিষণ মাথা ব্যাথা করছে। সে মাথায় হাত দিয়ে বসে রইল। সুন্দর তাকে লক্ষ্য করে বললো,
-আপনার হাতে কী হয়েছে? Accident?
এবার স্পৃহা রাগ আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। উঠে গিয়ে সুন্দরের টি-শার্ট এর গলার কাছের অংশ চেপে বললো,
-নাটক করছেন আমার সাথে? আপনি জানেন না কী হয়েছে?
-জানলে জিজ্ঞেস করতাম? বলতে ইচ্ছে হলে বলুন। তাছাড়া আমার ইন্টারেস্ট নেই।
স্পৃহার আগুনের মত রাগে সুন্দরের কথা একেবারে ঘি ঢেলে দিল। স্পৃহা সুন্দরের আরেকটু কাছে এগিয়ে বললো,
-রাতে এই রুমে আসেন নি?
স্পৃহা সুন্দরের এতোটা কাছাকাছি চলে যাওয়ার কারণে সুন্দর পিছিয়ে যায়। সুন্দরের করা এমন সূক্ষ্ম অপমান এড়াতে স্পৃহা বলে,
-জবাব নেই? নিজের ভাইয়ের হবু বউ এর কাছে ওতো রাতে আসতে লজ্জা করে না?
সুন্দরের কোন জবাব না পেয়ে আবার বললো,
-লিহান আমার হাত ধরেছিল বলে আপনি এমন করেছেন!
সুন্দর এবার স্পৃহার গাল চেপে ধরে। তার গালের ডান পাশে সুন্দরের বৃদ্ধা আঙ্গুল আর বাম পাশে বাকি চারটি আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়েছে একেবারে। স্পৃহার গাল যেন দাঁতের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে । সুন্দর তাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
-লিহানের হবু বউ ! লিহান? স্বামীর নাম মুখে নিচ্ছেন স্পৃহা! Very bad!
-Jealous?
-Nope! আপনার জীবন নিয়ে আপনি ভাববেন। আমার কিছু যায় আসে না । কিন্তু আপনাদের মাঝে আমাকে টানবেন না!
-আপনি রাতে এসেছিলেন? হ্যাঁ বলুন!
– এর আগে বললেন যে , আমি আপনার দরজা বাইরে থেকে আটকে রেখেছিলাম। তারপর?
স্পৃহা সে কথা মনে করে আবার লজ্জায় পড়ে গেল। আসলেই তো সুন্দর তাকে নিয়ে কিছু ভাবে না। সে শুধু শুধু সব বিষয়ে সুন্দরকে টেনে আনছে।
স্পৃহার চুপ থাকতে দেখে সুন্দর আবার বললো,
-আপনি কি আমার উপর ইন্টারেস্টেড ফিল করছেন ?
সুন্দরের এমন প্রশ্নের স্পৃহা বিস্ফোরিত চোখে তাকালো তার দিকে। এসব নিয়ে শুনে সে কিছুই ভাবতে চাচ্ছে না তবুও যেন সুন্দর তাকে জোর করে ভাবাচ্ছে।
স্পৃহার থেকে এবারও কোন জবাব না পেয়ে মুচকি হেঁসে সুন্দর তাকে বলল ,
-আজ আপনার মেহেন্দি অনুষ্ঠান । তৈরি থাকবেন।
.
.
.
.
.
দুপুরের দিকে আরিয়ানের বোন আনিসা তাদের বাড়িতে আসে । আশিক গিয়ে তাকে নিয়ে এসেছিল। আনিসা এসে লিহান এর সাথে দেখা করে । লিহান বেশ খুশি হয়ে তাকে বলে,
– তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম আপু । অবশেষে আসলে।
আনিসা ও তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে জিজ্ঞেস করে,
– আরিয়ান কোথায়?
আরিয়ান যে রুমে ছিল তা আনিসাকে দেখিয়ে বলে ,
-ওই রুমে আছে । তুমিও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।
লিহানের থেকে বিদায় নিয়ে আশিক ও আনিসা দুজনেই আরিয়ানের রুম গেল।
আরিয়ান হেডফোনে গান শুনছিল। ওদের দুইজনকে একসাথে দেখে সে হেডফোন রেখে উঠে দাঁড়িয়ে আশিকের কাছে গিয়ে বলল ,
আশিক ভাই ! আপনি এসে গিয়েছেন !
আশিক মজার ছলে বলল ,
-শা*লা
আরিয়ান মেকি কান্না করে বলল,
– দুলাভাই!!! বাঁচান, আমার বউটা!!!
আশিক আরিয়ান এর কাঁধে হাত দিয়ে বলল ,
-আরে প্যারা নিও না আমি তো আছি!
সিগারেট ধরিয়ে আশিক কে উদ্দেশ্য করে বলে,
-কী যে বলো দুলাভাই!!! ওকে নিয়ে প্যারা খাব ?!
ওর মত মেয়েকে তো রোজ রাতে কাছে পাই! কিন্তু হয়েছে কি বলতো ? ওর মধ্যে আলাদা ব্যাপার আছে । তাই আমি ওকে এক রাতের জন্য পেতে চাই না । সারা জীবনের জন্য পেতে চাই।
এদিকে আনিসা ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে।
আশিকের দিকে তাকিয়ে বলে ,
-তা কি কথা হচ্ছে দুজনের মধ্যে?
আশিকও মুচকি হাসি উত্তর দেয় ,
-এটা আমাদের শালা দুলাভাইয়ের ব্যাপার। তুমি মাঝখানে এসো না।
তারপর আরিয়ান কে জিজ্ঞেস করে ,
-আচ্ছা এখন বলতো ,তুমি ওকে হঠাৎ ভালবাসলে কিভাবে ? এত জায়গা হয়ে গেল মনে যে এক রাতের জন্য না সারা জীবনের জন্যই দরকার ! কী এমন হয়েছিল?
-আচ্ছা তাহলে তোমাকে আমায় প্রেমে পড়ার গল্প শোনাই।
এবার আনিসা বিরক্তির স্বরে বলল,
– আরিয়ান আর শুরু করিস না তো! আমি অধৈর্য হয়ে গিয়েছি।
আশিক তাকে থামিয়ে বলল ,
-থামো তুমি ! তোমাকে শুনতে বলেছে কে ? আমি শুনবো । তুমি শুরু করো তো ।
তারপর আরিয়ান বলল,
-আসলে এই যে তোমার ছোট ভাবি , তিনি আবার ভীষণ গান পছন্দ করেন । তো আমরা যখন প্রথম প্রথম আমাদের গ্রুপ খুলি গানের তখন আমি বিভিন্ন কনসার্টে গিয়ে খোঁজখবর নিতাম ,যোগাযোগ করতাম যাতে নিজেদের পরিচিতি লাভ করা যায়। একেবারে শুরুর দিকে এমন একটা কনসার্টে যাওয়ার পর তাকে দেখি। লিহান ওকে পছন্দ করার মাস দুয়েক আগে।
-তারমানে তো তুমি ই ওকে প্রথম চেয়েছো!
-হ্যাঁ,আর এজন্য আমিই ওকে পাবো। আচ্ছা তারপর বলি, ও সেদিন একটা নীল সিল্কের শাড়ি পড়েছিল। ফাস্ট ক্লাস রো তে থাকার কারনে ওর ফ্যামিলি স্টেটাস বুঝতেও সমস্যা হয়নি ।
তাই আমি ওকে ভালো করে লক্ষ্য করি।
দুটো গ্লাসে ওয়াইন ঢালে আরিয়ান। একটা এগিয়ে দেয় আশিকের দিখে , আরেকটা নিজের হাতে রেখে চুমুক দিতে
দিতে আবার বলতে শুরু করে ,
-এই যে দেখো আমি গ্লাসে চুমুক দিচ্ছি না? ও এভাবেই পানি খেয়েছিল! ঠোঁ* ট! আর উফফ্ যা ফিগার ! দেখে তো মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তখনই মনে হয়েছিল এই মেয়েকে সারা জীবনের জন্য নিজের কাছে রেখে দিলে জীবনটা সার্থক হবে।
-থামো ছোট ভাই! বুঝে গিয়েছি তোমার ভাব ভালো না।
-সুন্দর আমার প্রধান কাঁটা ছিল তাই লিহানকে দিয়ে তার উপরে ফেলতে চেয়েছিলাম। আবার লিহানও ওকে ভালোবাসতো তাই আমি চেয়েছিলাম এক ঢিলে দুই পাখি মারতে । কিন্তু এদিকে সুন্দরকেই সরাতে পেরেছি, কিন্তু মাঝখানে লিহান যেন গলার কাটা হয়ে বসলো।
.
.
.
.
.
এদিকে বিকেল হয়ে গিয়েছে । স্পৃহাকে প্রস্তুত হওয়ার জন্য সকলে তাড়া দিচ্ছে । তাই সে রুমে এসে নিজের মেহেন্দি অনুষ্ঠানের সবুজ হাফ কাতানের শাড়িটা পড়তে যায় । কিন্তু শাড়ি খুলে তার চোখ কপালে ! এ কি অবস্থা এত সুন্দর নতুন শাড়িটার!?
শাড়িটি দেখে মনে হচ্ছে পুরো শাড়ি জুড়ে কেউ ছু*রি ঢুকিয়ে টান মেরেছে । একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে রয়েছে।
স্পৃহা মন খারাপ করলো শাড়ির এই অবস্থা দেখে । আড়ালে থেকে তার সাথে বারবার কে এমন করছে? কেন ই বা করছে? প্রথম প্রথম তার সুন্দরকে সন্দেহ হলেও এখন আর সুন্দরকে সন্দেহ হচ্ছে না। মেহেদী অনুষ্ঠানের শাড়ি পড়বেনা ভেবে ভীষণ মন খারাপ হলো তার। তাই রুমেই বসেছিল সে । তখনই বাইরে থেকে কেউ দরজায় নক করে । দরজা খুলে দিলেই সুন্দর আর লিহান রুমে প্রবেশ করে। তারা দুজনেই একই সাথে মেহেন্দির গান ধরেছে স্পৃহাকে নিয়ে যেতে।
Mehendi laga rakhna
Doli saja ke rakhna
Lene tujhe o gori
Aayenge tere sajna
………………………..
Oh.. ho.. oh.. ho..
স্পৃহার এমন উদাস মুখ দেখে সুন্দর তার গান থামিয়ে বলল ,
-কি হয়েছে ? এখনো রেডি হননি কেন?
হাতের শাড়িটা সুন্দরের হাতে দিয়ে বলল ,
-দেখে নিন।
সুন্দর শাড়িটা খুলতেই এমন বিধ্বস্ত অবস্থা দেখতে পায়। লিহানও অবাক হয়ে বলে,
-এ অবস্থা হল কি করে?
সুন্দর সবাইকে শান্ত করে বলল ,
-আচ্ছা সমস্যা নেই! অল্টারনেটিভ হিসেবে একটি ড্রেস তোলা ছিল । পাঠিয়ে দিচ্ছি । রেডি হয়ে চলে আসেন।
সুন্দর আর লিহান রুম থেকে বেরিয়ে গেলে স্পৃহা যখন তার রুমের দরজা বন্ধ করতে যায় তখনই সামনে আরিয়ানকে দেখে । স্পৃহা কে দেখে আরিয়ান একটি বড় চা*কু তাড়াতাড়ি পেছনে লুকায়। আরিয়ানকে দেখে স্পৃহার ঘৃণা লাগছে! তাই সে তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে দেয় । কিন্তু আরিয়ানের হাতে চা*কু কেন?! আর শাড়িটা!
(চলবে…)
#Running
Story Name: #Shundor_Spriha
Written by Samia Sara©️
Episode:20
আমার প্রিয় মানুষেরা এই পর্বটি আপনাদের কেমন লেগেছে ? আগের পর্বগুলোতে এত ভালোবাসা দেয়ার জন্য আমি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে ।আশা করি সব সময় পাশে থাকবেন💖
Jototuk parsi lekhar try korsi,mon khule support koren🥺🙏🏻
Onek deri hoye gelo,kintu ashe pasher onek kichu bad effect fele,tai likhte Nijer e koshto hocche. Apnara sobai shustho achen to? Apnader ektu valo rakhar jonne etotuku lekha! Sobai ektu support korben onnoder kache share kore. Ar doa kori sobai beshi kore jeno shob thik hoye jay taratari e🤲
Good night 🥀✨