#সুন্দর_স্পৃহা
#সামিয়া_সারা
#psychobasedstory
পর্ব-১১
স্পৃহাকে সকালে সুন্দরের মা মিসেস সাবিনা চৌধুরী নিজে গিয়ে বাসা থেকে নিয়ে আসেন। কারণ একটাই , সুন্দর কঠোর ভাবে তার নিজেকে শাস্তি দেয়ার পণ করেছে ।গতকাল রাতে সবাই মিলে বোঝানোর পরেও সে তার ভেজা কাপড় পরিবর্তন না করেই ছিল । নিজের ছেলের জেদের কাছে হার মেনে অবশেষে বাধ্য হয়ে সে নিজেই গাড়ি নিয়ে যায় স্পৃহা কে নিয়ে আসতে। স্পৃহা কে নিয়ে তিনি কোন রিস্ক নিতে চাননা । সুন্দর যেমন মানুষ ! যদি স্পৃহা কে অন্য কারো সাথে আসতে দেখে সব উলটপালট করে ফেলবে । এজন্যই তিনি নিজেই কে স্পৃহাকে বুঝিয়ে নিয়ে আসেন। সুন্দরের এ অবস্থা দেখে স্পৃহার বেশ খারাপ লাগছে। সুন্দরের মাথার কাছে সে বসলো । তাদেরকে একা ছেড়ে সুন্দরের মা মিসেস সাবিনা চৌধুরী চলে যান ।
কারণ সুন্দর ঘুম থেকে উঠে তার স্পর্শের পাশে অন্য কাউকে দেখলেই রেগে যাবে। স্পৃহা সুন্দরের কাছে বসার কিছুক্ষণের
মধ্যে সুন্দর চোখ মেলে তাকায় । তার চোখে মুখে ফুটে উঠেছে বিস্ময়ভাব।
-আপনার এমন করার কারণ কি জানতে পারি ?
-তুমি কখন এসেছ স্পর্শ ? কোন সমস্যা হয়েছে ??
-হ্যাঁ হয়েছে ! অনেক কিছু হয়েছে । আপনি কাল সারাদিন ভিজেছেন। নিজেকে কী ভাবেন আপনি ? এই অবস্থাতেই শুয়ে পড়েছেন ! আপনাকে তো আমি বলেছিলাম বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হতে । তবে হননি কেন ?
-আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি ,তাই না? এ জন্য আমার আমার থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে নেবে ? ভুলেও এমন কিছু করো না। নিজে ম*রতে কষ্ট হবে না কিন্তু তোমাকে মা*রতে গেলে আমি খুব কষ্ট পাব স্পর্শ। খুব কষ্ট পাব! তুমি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভেবো না ,আমার থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে নিও না । আমি আমার নিজেকে শাস্তি দিচ্ছি । তুমি শুধু বলো তুমি এসব কিচ্ছু করবে না ! আমি তোমাকে মা*রতে চাই না…
-আসলে আপনি আমাকে কি বলতে চাচ্ছেন একটু বুঝিয়ে বলবেন ? অনুরোধ করছেন ,আদেশ করছেন নাকি ভয় দেখাচ্ছেন?
-তুমি যা ভাববে । যে ভাবে ইচ্ছে আমাকে শাস্তি দিতে পারো । শুধু আমার হয়ে থাকবে । তোমার মনের কোন অংশ যায়গাও কাউকে দেয়া যাবে না । এমনকি তোমার বাবা-মা কেউ না।
-জ্বর এসেছে আপনার?
-তুমি সাথে থাকলে কিছু আসবে না ।তবে চাইলে চেক করে দেখতে পারো।
স্পৃহা সুন্দরের কপালে হাত রাখল । তার কপাল যেন পুড়ে যাচ্ছে। এত তাপমাত্রা অথচ সুন্দর কিচ্ছু বুঝতে দিলো না!
-আপনার তো অনেক জ্বর এসেছে।
-এ সামান্য তে কিছু হবে না স্পর্শ । তুমি আমার পাশে বসে থাকো ।
সুন্দরের গত রাতের ভেজা শার্ট প্যান্ট শুকিয়ে গেছে, তবুও স্পৃহা জোর করে তাকে চেঞ্জ করে আসতে বলল। নরম টি-শার্ট আর টাউজার সুন্দরকে দিয়ে বলল ,
-ফ্রেশ হয়ে নেন। বাইরে যাওয়ার দরকার নেই আজ ।
-তোমাকে না একদম বউ বউ লাগছে।
স্পৃহার শরীর দিয়ে যেন গরম ভাপ বের হচ্ছে। মাঝে মাঝে সুন্দর এমন এমন কথা বলে যা শুনে লজ্জায় পুরো লাল হয়ে যায় স্পৃহা।
-ওহে লজ্জাবতী! তোমাকে পুরো স্ট্রবেরির মত লাগছে! টুপ করে খেয়ে ফেলি? প্রমিস,একটুও ব্যাথা পাবে না।
অন্য সময় হলে স্পৃহার এসব কথা শুনে ভীষণ বিরক্ত লাগত । কিন্তু আজ সে অনেক লজ্জা পাচ্ছে । হয়তো সুন্দরের অসুস্থতাই এর কারণ । নাকি সে সুন্দরকে ভালোবেসে ফেলছে?
-স্পর্শ!
-হুম?
-তুমি তো আমার বউ-ই।
-আপনার কত জ্বর এসেছে কোন ধারণা আছে?
এখনই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন । নাস্তা করেও ওষুধ খাবেন।
-আমার অনেক জ্বর এসেছে না ?
-জ্বী স্যার! যান এখন ।
-একা একা ওয়াশরুমে যাব কী করে বলো? তুমি চলো আমার সাথে ।
আরো একবার ধাক্কা খেল স্পৃহা। সুন্দর ইচ্ছে করে তাকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলছে! স্পৃহা চোখ নাক বুজে সোজা দরজার দিকে পা বাড়ালেই সুন্দরের শান্ত হুমকি ভেসে আসলো ,
-খবরদার এই ঘর থেকে এক পা বের হবে না! আমি ব্যতীত তোমাকে যেন কেউ না দেখে । আর খুব বাইরে যেতে ইচ্ছে করলে আমি যখন নিয়ে যাব তখন যাবে । আমাকে ছাড়া কারো সাথে কথা বলবে না ,সেটা আমার মা হলেও না!
মনে থাকবে?
স্পৃহা তার মাথা উপর নিচ করে নাড়ালো । অর্থাৎ মনে
থাকবে।
সুন্দর ফ্রেশ হতে গেলেই স্পৃহা সুন্দরের বিছানায় দুই পা উঁচু করে বসে পরলো । নিজের দুই হাত তার চিবুকে রেখে বলল,
-এই লোকটার আসলেই মাথায় সমস্যা আছে! একে পাবনায় না রেখে এই বাড়িতে কিভাবে রেখে দিল বুঝি না !!!! আর আমাকে ভাবে কী??? আমি কে ওনার প্রাণ ভোমরা নাকি??? কারো সাথে কথা বলা যাবে না !! আমার বাবা মায়ের কথা না হয় বাদই দিলাম। ভাই!!! একটা মানুষ এমন কিভাবে হয় ?? তার নিজের মার সাথেও কথা বলতে গেলে অসুবিধা! আন্টি কি চুরি করে নিবেন আমাকে? বুঝিনা ! সুযোগ বুঝে আন্টি কে জানাতে যে এই সুন্দরের মাথায় সমস্যা আছে । আমার মনে হয় বাড়ির কেউ বুঝতে পারছে না ব্যাপারটা….
-বিরবির করে কী বলছো স্পর্শ? কার সঙ্গে….
-কিসি কি সাথ ভি নেহি,মেরি কাসাম!
-What the heck!
-ওসব হেক দূরে রাখুন।
-ow so fast. Then, can I come in my personal heaven?
– হেভেন আবার পার্সোনাল হয় নাকি ?
-ওহ সরি ! আমি তো ভুলেই গেছিলাম তুমি এখনো পিচ্চি।
.
.
বেশ অনেকক্ষণ খুনসুটির পর স্পৃহা আহ্লাদ করে বলল ,
-আপনি একবারও আমাকে আপনাদের বাড়ি ঘুরিয়ে
দেখেননি! আজ দেখাবেন।
স্পৃহার এমন ঠোঁট ফোলানো আবদার শুনে সুন্দর রাজি!
-ঠিক আছে ! কিন্তু কারো সাথে কোন কথা বলবে না । যা বলার আমি বলবো।
.
.
.
.
সুন্দরকে নাস্তা খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিল স্পৃহা। তারপর দুজন রুম থেকে বেরোলো । সুন্দর স্পৃহা কে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে হাঁটছে। মনে হচ্ছে যেন একটু ছাড়লেই সে ভ্যানিশ হয়ে যাবে। সুন্দরের ডুপ্লেক্স বাড়ির দুই তলায় উঠে তার বড় বেলকনিতে দাঁড়িয়েছিল তারা। এরই মধ্যে একটি গান ভেসে আসে স্পৃহার কানে।
যার কথা ভাসে, মেঘলা বাতাসে
তবু সে দূরে, তা মানি না
জানি না, কেন তা জানি না
জানি না, কেন তা জানি না
জানি না, কেন তা জানি না
জানি না, কেন জানি না
…..
-এত সুন্দর গান যাচ্ছে কে? আপনার বাসায় আপনি ছাড়াও কি কেউ গান গায়? আগে তো বলেননি।
মুহূর্তেই সুন্দরের চোখ অসম্ভব লাল হয়ে গিয়েছে। স্পৃহার কথা যেন তার মাথায় ঢুকছে না । নিজের ঘাড়ে ডানে বামে হালকা করে কাত করে স্পৃহার চোখের দিকে তাকালো। সুন্দরের এমন দৃষ্টি স্পৃহার পূর্ব পরিচিত । তার তাকানো দেখে ভয় পেয়ে স্পৃহা সুন্দরের থেকে দূরে সরে গেল । সুন্দর নিজেও তার হাত
আলগা করে দিয়ে সোজা লিহানের রুমের দিকে যেতে লাগলো । নিশ্চয়ই খারাপ কিছু হবে ভেবে স্পৃহা নিজেও সুন্দরের পেছন পেছন যেতে থাকে। সুন্দর সোজা লিহানের রুমের সামনে গিয়ে থামল , এদিকে লিহান এখনো গান গেয়ে চলেছে,
যার উষ্ণ আঁচে ভালোবাসা বাঁচে
সে হৃদয় ভাঙ্গে, তা মানি না!
যার উষ্ণ আঁচে ভালোবাসা বাঁচে
সে হৃদয় ভাঙ্গে, তা মানি না!
সুন্দর লিহানের হাত থেকে গিটার টা নিয়ে ফ্লোরে জোরে করে ছুড়ে মারল । ঠিক তিন টুকরো হয়ে লিহানের গিটার পড়ে রয়েছে। লিহান এক দৃষ্টিতে সুন্দরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে । এরই মধ্যে স্পৃহার প্রবেশ ঘটায় স্পৃহা ও লিহানের চোখাচোখি হয় । স্পৃহা লিহানকে দেখতেই তাকে প্রশ্ন করে,
আপনি এখানে?
(চলবে…)
#Running
Story Name: #Shundor_Spriha
Written by Samia Sara©️
Episode:11
আমার প্রিয় মানুষেরা এই পর্বটি আপনাদের কেমন লেগেছে ? আগের পর্বগুলোতে এত ভালোবাসা দেয়ার জন্য আমি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে ।আশা করি সব সময় পাশে থাকবেন💖
Jototuk parsi lekhar try korsi,mon khule support koren🥺🙏🏻boro kore lekhar try korlam to,happy?? Apnader sobar comment e ami pori,ar reply o deoar try kori sobaike,tai sobai beshi beshi inspire korben🥺 btw gaan ta kemon lage?? Good night 🥹
N.B. -Don’t copy
