#সুন্দর_স্পৃহা
#সামিয়া_সারা
#psychobasedstory
পর্ব-১৭
আরিয়ানের এমন চেঁচিয়ে নাকচ করার বিষয়টিতে বেশ অবাক লিহান। আরিয়ান কে জিজ্ঞেস করল,
-স্পৃহাকে আমি ছাড়া আর কে বিয়ে করবে ? আর বিয়ে করলে আমার খারাপ হবে কেন?
-তোর বন্ধু বলে তোর ভালোর জন্য বলছি
-একটু ঝেড়ে কেশে কথা বল!
আরিয়ান কিছুক্ষণ সময় চুপ থেকে আবার বলল,
– তোর কি মনে হয় তোর ভাই এত সহজে তোর সাথে স্পৃহার বিয়ে মেনে নেবে? তুই যখন বলেছিলি তোর ভাই স্পৃহাকে ছেড়ে দিয়েছে তখন আমি ভেবেছিলাম হয়তো সত্যি। কিন্তু তারপর তুই যখন বললি তোর আর স্পৃহার বিয়ে এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না । তোর ভাই এর মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু একটা করবে। প্রাণে বাঁচতে চাইলে তুই এই বিয়েটা করিস না ।
-এমন কোন সমস্যা মনে হলে আমি তোকে বলতাম ,আরিয়ান । আমি নিজেও প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম যে ভাইয়া সব জেনে গেলে কি করবে। কিন্তু ভাইয়ার এসব নিয়ে আর মাথাব্যথা নেই।
বিয়ের কার্ড আরিয়ানের হাতে দিয়ে বলল,
-সাত দিন ধরে প্রোগ্রাম চলবে, তুই চাইলে কাল ও চলে আসতে পারিস। আমি আসছি।
এই বলে লিহান চলে যায়।
.
.
.
.
বাড়িতে সাজানোর কাজ প্রায় শেষ । আজ লাইটিং করা শেষ হয়েছে পুরো বাড়িতে । কাল অন্যান্য সব কাজ হবে। তারপর সন্ধ্যা থেকে সংগীতের অনুষ্ঠান শুরু হবে। কিন্তু আজ স্পৃহার কিছুই ভালো লাগছে না । তার ফোনটাও অন করতে পারছে না যে গান শুনবে। লিহান কিছুক্ষণ পরেই তার রুমে আসে।
-মন খারাপ করে বসে আছো কেন? তুমি কি আমাদের বিয়েতে খুশি নও ? ভালো কথা , এত কিছুই তো জানি । কিন্তু তুমি বিয়েতে রাজি কিনা তা নিয়ে তো মত নিলাম না ।
-আপনার মনে হয় এ বিয়েটা হবে ?
-মানে কী? তুমি কি ইচ্ছুক নও ?
-সেসব পরের কথা । ঘটনাটা বিয়ে পর্যন্ত যাবে না আপনার সাথে আমার ।
-তাহলে ?
-দেখা যাক।
-তুমি কি আমায় ভালোবাসো না ? এত হেঁয়ালি করে কথা বলো না স্পৃহা।
ভালোবাসা বুঝিনা । আপনি এখন এখান থেকে চলে যান । ওদের দুজনের কথাপকথনের মাঝেই সুন্দর উপস্থিত হয়।
অদ্ভুত হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-কী ব্যাপার ! ডিস্টার্ব করে ফেললাম নাকি ?
-আরে না ভাইয়া কি বলছো!
-তা কিনে কথা হচ্ছিল?
-টুকটাক কথার আর কি । এমন কিছু নয়!
লিহানের কথাটি ইগনোর করে স্পৃহার দিকে তাকিয়ে সুন্দর বলল,
-স্পৃহা ! কাল কিন্তু আপনাদের সংগীতের অনুষ্ঠান হবে ।প্রস্তুতি নিয়ে রাখবেন ।
-আপাতত আমার একটুও গান শুনতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু ফোন টা!
লিহান স্পৃহার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল ,
-তুমি গান শুনবে ? আমায় বলবে না ?
ভাইয়া ? আমার গিটার টা তো ভেঙ্গে গিয়েছে । তোমার টা একটু দাও ।
সুন্দর তার টেবিল থেকে নিজের গিটারটা হাতে নিয়ে বলল,
– আমি আপনাদের জন্য একটি গান গাই । লিহান তোকে কষ্ট করে গাইতে হবে না । আমি গাচ্ছি । তারপর সুন্দর গান ধরল,
Haasta rehta huu
Tujhse mil Kar kyu aajkal
Badle badle hain
Mere tevar kyu aajkal
Aankhein meri har jagaah
Dhoonde tujhe bewajah
Ye main hoon yaa
Koi aur hai
Meri taarah ……
Kaise hua, kaise hua
Tu itnaa zaroori kaise hua
Kaise hua, kaise hua
Tu itna zaroori kaise hua…
-কেমন লাগলো স্পৃহা?
আরে ভাইয়া ও কি বলবে ? আমি বলছি! তুমি তো বরাবরই বেস্ট!
আবারো সুন্দর লিহানকে ইগনোর করে স্পৃহাকে জিজ্ঞেস করল,
-তোমার ভালো লাগেনি? স্পৃহাআআ?
স্পৃহার কেমন জানি হঠাৎ খারাপ লাগতে শুরু করেছে। কোন জবাব দিল না সে । তার নীরবতা দেখে লিহান চিন্তিত স্বরে বলল,
– তোমার কি খারাপ লাগছে স্পৃহা ?
মাথা দুদিকে নাড়িয়ে স্পৃহা না বোঝালো। তারপর সবাই একেবারে চুপ। কিছুক্ষণ পর সুন্দর বলল ,
-আমরা যাই। আপনি রেস্ট করুন।
বলেই সুন্দর লিহান কে নিয়ে বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণ একা থাকার পরেও স্পৃহার মন কিছুতেই ভালো হচ্ছে না । বরং আরো বেশি খারাপ লাগছে। সে হুট করে সুন্দর যে রুমে থাকে সেখানে গিয়ে দরজায় নক করতেই সুন্দর বলে ,
-ভেতরে আসতে পারেন।
স্পৃহা ভেতরে ঢুকে সুন্দরকে বলে ,
-আপনি বুঝলেন কি করে আমি এসেছি?
-কই বুঝিনি তো। নক করার শব্দ পেলাম ,তাই ভেতর আসতে বললাম । কে ছিল তা তো আমি নিজেও জানতাম না ।
স্পৃহার মনটা আবার বিষন্ন হয়ে গেল। সুন্দর কি সত্যিই তাকে ছেড়ে দিল ? এটা ভেবে সে ভিষণ কষ্ট পাচ্ছে। চোখ ছলছল করে উঠছে । তারপর আবার সুন্দরের দিকে তাকিয়ে বলল ,
-আপনি হঠাৎ আমাকে স্পৃহা কেন বলছেন ? স্পর্শ বলে ডাকেন না কেন?
-অদ্ভুত কথা! স্পর্শ বলতে যাব কেন? সকালেও না বললেন আমি আপনার বড় ভাইয়ের মতো। আর তাছাড়াও তো আপনার ঘৃণা লাগতো।
-আপনি আমায় মুক্ত করে দিয়েছেন?
-হ্যাঁ অবশ্যই ! যা আপনি এতদিন চেয়েছিলেন, এত বছর চেয়েছিলেন।
-তবে আজ আমার জন্য ওই লোকটাকে শাস্তি দিলেন কেন?
-কোন লোকটাকে ?
-ওই যে , সকালে যে আমার থেকে বাজে ভাবে তাকিয়ে ছিল ।
-কী আবোল তাবোল কথা বলছেন ? আপনি আপনার জন্য আমি কাউকে কেন কোন শাস্তি দিতে যাব!
– ওটা একটা এক্সিডেন্ট হতে পারেনা । আমি শিওর কেউ ইচ্ছা করে ওই লোকটার চোখ দুটো চোখ জোর করে খুলে কারেন্টের তার দিয়েছিল।
-আপনার দিকে কে তাকিয়েছে না তাকিয়েছে ,তা নিয়ে আমার কোন আগ্রহ নেই । আমাকে এ ধরনের কথা বলবেন না। আপনি এখন আসতে পারেন ।
সুন্দরের এমন কথায় স্পৃহা অপমানিত বোধ করল। কোন কথা না বাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। সুন্দর তো বলতো সে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে স্পৃহা কে। তবে কই গেল তার ভালোবাসা ? সব শেষ?
.
.
.
.
স্পৃহা তার রুমে এসে কিছুক্ষণ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রইলো। ঘুম ধরছে না তার। লাইট অফ করে অন্ধকারের মধ্যে বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে সে। পূর্ণিমার চাঁদের আলো তার মুখে পড়ছে । স্নিগ্ধ প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। বেশ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর রুমে যাওয়ার সময় বেলকনি থেকে নিচে তাকাতেই কারো ছায়া চোখে পড়ে । নিশ্চয়ই এতক্ষণ ধরে কেউ তাকে দেখছিল। স্পৃহা আর রুমে যায়না। তার মন বলছে সুন্দর তাকে এখনো নজরে রাখছে। বেলকনির এক সাইডে দাঁড়িয়ে থাকে সে ওই ছায়া টা কার তা দেখার জন্য। কিন্তু কাউকে আর দেখা যায় না । হঠাৎ করে স্পৃহার ফোন বেজে উঠে। এত রাতে আবার কে কল দিল !
রুমে গিয়ে কল রিসিভ করতেই বেশ গম্ভীর কন্ঠের এক পুরুষের গলা শোনা যায়।
-আমাকে খুঁজছো?
-কে আপনি?
-এত রাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থেকো না। চাঁদের নজর লেগে যাবে।
-কি যা তা বলছেন!
-যা তা নয়। ঠিকই বলছি । তুমি যে চাঁদের থেকেও সুন্দর ,তাই চাঁদ তোমায় হিংসা করবে । বেলকনি তে আর এসোনা কিন্তু।
– আপনি কে? ঠিক করে কথা বলুন ! না হলে ঝামেলায় পড়বেন । হুটহাট কল দিয়ে বিরক্ত করবেন আর ছেড়ে দেবো ভেবেছেন?
-হায়য় আমার রাগিণী! আমি লিহান ! তোমার হবু … এহেম এহেম
লিহানের মুখে এমন কথা শুনে স্পৃহার কেমন যেন খারাপ লাগতে শুরু করলো। কিছু মানুষের মুখ থেকে নির্দিষ্ট কিছু কথা শুনতে ভালো লাগে , তার ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি ওই ধরনের কথা বললে তা শুনতে ইচ্ছে করেনা । স্পৃহার অবস্থা এখন তাই হয়েছে।
সে কি সুন্দরের কথাগুলো মিস করছে ?
-কী হলো কিছু বলছো না কেন ?
-আপনি কি আমার উপর নজরদারি করছেন ?
-না না। নিচে হাটাহাটি করছিলাম তখন । উপরে তাকাতে তোমার দিকে নজর পড়লো । দেখলাম চাঁদের দিকে তাকিয়ে ছিলে । সত্যি বলছি , অসম্ভব সুন্দর লাগছিল । চাঁদও তোমার কাছে হার মেনে যাবে ।
স্পৃহার এসব কথা শুনতে ভীষণ বিরক্ত লাগছে। লিহানকে বেশ কড়া স্বরে বলল ,
-আমার নাম্বার পেলেন কোথায়? আর এভাবে কল দেবেন না।
– তুমি কি রাগ করলে?
স্পৃহা কোন জবাব না দিয়ে কল কেটে দিল । ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলো। বিভিন্ন উদ্ভট চিন্তাভাবনা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছে একবারে চোখ মেলে দেখে সকাল হয়ে গিয়েছে। ঘুম ভাঙার চোখে তাকাতে আজও স্পৃহা সুন্দরকে দেখতে পেল। আশ্চর্যজনক ঘটনা তো। গতকাল রাতেও সে রুম লক করে ঘুমিয়ে ছিল। ঘুম জড়ানো কন্ঠে সুন্দরকে জিজ্ঞেস করল ,
-আপনি এখানে কি করছেন?
-ওহ গুড মর্নিং! আসলে আমার ওয়াশ রুমে পানি আসছিল না । তাই এখানে আসলাম । আর আমার কাছে রুমের চাবি ছিল এই জন্য।
-এভাবে হুট হাট আসবেন না ।
-আমি নক করেছিলাম ,আপনি উঠেননি। কিন্তু আমার ইমার্জেন্সি ছিল তাই চলে এসেছি।
স্পৃহাও আর কথা না বলে ওয়াশরুমে চলে গেল। ব্রাশ করে হাত মুখ ধুয়ে, মিরর এ তাকাতেই আবার নিজের গলায় গতকালের মতো দাগ দেখতে পেলো। এবার শুধু গলাতেই না বরং ডান গাল আর ঠোঁটেও র*ক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে।
গত দুইদিন ধরে এমন ঘটনায় বেশ চিন্তিত হয়ে যায় স্পৃহা। ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে আয়নার দিকে। কিছক্ষণ যেতেই তার ওয়াশরুমের দরজায় কেউ নক করে। যেন হুঁশ ফিরে পায় স্পৃহা। দরজা খুলতেই সুন্দর বলে,
– সরি কিছুক্ষণ আগে আমার ব্রাশ আর আপনার ব্রাশ এক্সচেঞ্জ হয়ে গিয়েছে।
সুন্দরের হাতে থাকা ব্রাশটি স্পৃহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
-নিন এটি আপনার ব্রাশ । আর আমার টি ফেরত দিন।
(চলবে…)
#Running
Story Name: #Shundor_Spriha
Written by Samia Sara©️
Episode:17
আমার প্রিয় মানুষেরা এই পর্বটি আপনাদের কেমন লেগেছে ? আগের পর্বগুলোতে এত ভালোবাসা দেয়ার জন্য আমি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে ।আশা করি সব সময় পাশে থাকবেন💖
Jototuk parsi lekhar try korsi,mon khule support koren🥺🙏🏻boro hoyeche? Beshi beshi kore comment korben kintu sobai(amar hashir ekta effective reason,trust koren kichu kichu comment dekhe hashte hashte pagol hoye jai). Review o diyen jodi valo lage,jate bakirao Porte pare🥺
Good night🥹🌼