#সুন্দর_স্পৃহা
#সামিয়া_সারা
#psychobasedstory
পর্ব-১৯
লিহান কথাটি বলেই স্পৃহার দিকে তাকাল । কিন্তু স্পৃহা অন্যদিকে তাকিয়ে । তার চোখ বারবার যাচ্ছে সুন্দরের দিকে । লিহানের এই কথা শুনে সুন্দরের প্রতিক্রিয়া কি হয় তা বোঝার চেষ্টা করছে সে। কিন্তু সুন্দর খুব স্বাভাবিকভাবে বসে রয়েছে। কিছুতেই তার কিছু আসে যায় না। তবে সুন্দরের দৃষ্টি আরিয়ানের হাতের দিকে । এদিকে আরিয়ান হাত মুঠ করে লিহানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।
সুন্দর আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বলল ,
-আচ্ছা ,আবার খেলা শুরু করা যাক ।
বলেই সে বোতলটি ঘুরিয়ে দিল । এবার বোতলের মুখ স্পৃহা বরাবর থামল। সুন্দর সকলের উদ্দেশ্যে বলল ,
-স্পৃহাকে কে প্রশ্ন করতে চাও?
সুন্দরের এমন প্রশ্নে বেশ মন খারাপ হলে স্পৃহার । অন্য সকলের প্রশ্ন করাতে সুন্দরের এত আগ্রহ অথচ তার বেলাতে তার কোন আগ্রহ নেই।
আরিয়ান একটু অপেক্ষা না করে উত্তর দিল ,
-আমি!
তারপর স্পৃহার দিকে তাকিয়ে বলল,
-ট্রুথ ওর ডেয়ার?
যেহেতু আগেরবার ডেয়ার নিয়ে স্পৃহা একবার ঝামেলায় পড়েছে ,তাই এবার সে ট্রুথ নিল।
আরিয়ান তাকে প্রশ্ন করল ,
– এক সপ্তাহ পরে কি তোমার বিয়েটা হচ্ছে? Sure?
আরিয়ানকে থামিয়ে লিহান বেশ রাগান্বিত হয়ে বলল ,
-এসব কোন ধরনের প্রশ্ন ? বিয়ে কেন হবে না ? অবশ্যই হবে।
লিহানের কথার সাথে যোগ দিয়ে সুন্দরও একই সুরে বলল অবশ্যই হবে । আরিয়ান তখন ওদের দুজনকে থামিয়ে বলল ,
-আমি যাকে প্রশ্ন করেছি তার থেকে উত্তর শুনতে চাই ।
তখন স্পৃহা বলল,
-হ্যাঁ হবে । আর এক সপ্তাহ পরে আমারই বিয়ে হবে। Sure.
স্পৃহা একথা বলে আবারও সুন্দর এর দিকে তাকালো।
সুন্দর এবারও কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না। সে আবার বোতল ঘোরালো । এবার বোতল থামল স্পৃহার সবচেয়ে কাছের বান্ধবীর দিকে। স্পৃহা তাকে প্রশ্ন করতে গেলেই সুন্দর থামিয়ে বললো ,
-আমি করছি ।
তারপর মেয়েটির উদ্দেশ্যে বলল ,
-ট্রুথ অর ডেয়ার?
মেয়েটি ভয়ে ভয়ে বলল,
-ট্রুথ।
সুন্দর মুচকি হেসে বলল,
-ফিহা। রাইট?
মেয়েটির নাম ফিহা। সুন্দরের দিকে তাকিয়ে বলল ,
-জ্বী ভাইয়া ।
তারপর সুন্দর বলল,
– আচ্ছা ফিহা ,এখন তুমি বলো ,তোমার ফ্রেন্ডকে কী বলেছিলে সেদিন, যেদিন লিহানের কনসার্ট ছিল তোমাদের স্কুলে ?
ফিহা বেশ কিছুক্ষণ সময় নিলো । স্পৃহা তার দিকে তাকিয়ে বলল,
– তুই কি বলতে লজ্জা পাচ্ছিস ? না হয় আমি বলি?
সুন্দর হুমকির স্বরে স্পৃহা কে বলল ,
-আপনাকে প্রশ্ন করিনি! যাকে করেছি সে উত্তর দিবে।
ফিহা একটু আমতা আমতা করে বলা শুরু করলো ,
– আসলে সেদিন আমাদের স্কুলের কনসার্টে লিহান ভাইয়া যখন এসেছিল, সে স্পৃহার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে ছিল ।দেখতে অনেক সুন্দর হওয়ার কারণে আমিও স্পৃহা কে বলেছিলাম ,
-এই হ্যান্ডসাম ছেলেটা তোর দিকে তাকিয়ে আছে ।তারপর যখন স্পৃহা ওনাকে দেখেছিল তখন আমরা ওকে নিয়ে মজা করেছিলাম কারণ ও একটা ছেলের দিকে ওভাবে তাকিয়েই ছিল । তাছাড়াও ও নিজেও বলছে,
– হ্যাঁ দেখতে তো ভালোই সুন্দর।
এজন্য আমরা সব ফ্রেন্ডরা মিলে ওকে লিহান ভাইয়া নিয়ে বলতাম যে লিহান ভাইয়াই ওর প্রথম ভালোবাসা।
এর মধ্যে লিহান বলে উঠলো ,
-ওহ্ থ্যাংকস ফিহা। তোমার জন্যই ও তাহলে আমার কথা মনে রেখেছিল । এই ব্যাপারটা আমি এখন বুঝতে পারলাম ।
লিহানকে থামিয়ে সুন্দর সবাইকে জানালো,
-ঠিক আছে এখন গেমটা অফ করা যাক । সঙ্গীতের অনুষ্ঠান শুরু করার সময় হয়ে গিয়েছে । না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
.
-স্পৃহার ডেয়ার টা এখনো বাকি ছিল। ও এখন আমাদের জন্য একটি নাচ করবে।
ফিহা ও স্পৃহার বাকি ফ্রেন্ডদের এই একটিই কথা যে , স্পৃহাকে এই ডেয়ার মানতেই হবে।
সবশেষে নাচ করার জন্য স্পৃহা উঠে দাঁড়াতেই লিহান তার হাত ধরে হেঁচকা টান মারল। স্পৃহা লিহানের দিকে থমকে তাকাতেই, লিহান সকলকে উদ্দেশ্য করে বলল,
– ও কারো সামনে নাচ করবে না।
বিরক্তি নিয়ে লিহানের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে স্পৃহা তাকে বলল ,
-যেহেতু এটা ডেয়ার, তাই আমাকে মানতে হবে । আপনি এখানে মানা করার কেউ না।
স্পৃহার সরাসরি হাত ছাড়ার কথা বলার পরেও লিহান তার হাত ছাড়ে না। অন্যদিকে তার বন্ধুদের দেওয়া ডেয়ার স্পৃহা মানবেই।
তখনই হঠাৎ করে পুরো বাড়ির আলো নিভে যায়। লিহানকে কেউ ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। যার ফলে স্পৃহার হাত সে ছেড়ে দেয়। লিহানের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে স্পৃহা একটু দূরে সরে দাঁড়ায়। তখনই কেউ তার হাত মোচড় দিয়ে পিছনে নিয়ে খুব সামান্য দূরত্বে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে। সামনে থাকা মানুষটা স্পৃহার এতটা কাছাকাছি যে সে তার হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছে। এ মানুষটির ঘন ঘন শ্বাস নেওয়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। মানুষটির ত্যাগ কৃত নিঃশ্বাস উপচে পড়ছে স্পৃহার মুখে । এই অন্ধকারে এমন দূরত্বে অস্বস্তি বোধ করছে স্পৃহা । তাই নিজের দুই হাত দিয়ে তার সামনে থাকা মানুষকে আন্দাজ করে বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। তখনই আবার লাইট চলে আসে।
স্পৃহা তাকিয়ে দেখে তার সামনে আরিয়ান দাঁড়ানো। আরিয়ান তাকে কিভাবে টাচ করেছিল ??? এতটা কাছাকাছি গিয়েছিল ! ভাবতেই ঘৃণায় চোখ মুখ কুচকে আসে স্পৃহার।
অন্যদিকে লিহানকেও ক্রস করে তার সামনে আরিয়ান দাঁড়িয়ে আছে দেখে লিহানও বুঝে যায় তাকে ধাক্কাটা কে দিয়েছে। আরিয়ানের এমন ব্যবহারে লিহান বেশ অবাক এবং বিরক্ত হয় । রাগে তার গা কাঁপতে থাকে। আরিয়ানকে কিছু বলতেই যাবে তখনই সুন্দর চলে আসে ।সকলে সুন্দরের দিকে তাকিয়ে। সবার মনে একটি প্রশ্ন , এতক্ষণ সুন্দর কোথায় ছিল ? সকলের এমন চাহনি দেখে সুন্দর নিজেই বলে ,
-হঠাৎ লাইট চলে গিয়েছিল তো এজন্য নিজ থেকে ঠিক করে দিয়ে আসলাম । এখন তাহলে সঙ্গীতের অনুষ্ঠানটা শুরু করা যাক?
.
.
সকলের সম্মতি নিয়ে সংগীত অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। কিন্তু স্পৃহার কিছুতেই মন বসছে না। স্পৃহার মন ভালো করার জন্য লিহান গান গাইতে চায় কিন্তু এদিকে স্পৃহার মনের মধ্যে কি চলছে তা কেউ বুঝতে পারছে না । অন্য একজন পুরুষের থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত টাচ পাওয়া কেমন বিষয় তা বাইরের মানুষকে বোঝানো সম্ভব না। অন্যদিকে নিজের মনের মধ্যে ভীষণ খারাপ লাগছে। আরিয়ানের উপর অসম্ভব রাগ হচ্ছে তার। যেন পারলে এখনি খু*ন করে ফেলে ! সুন্দরকে সত্যিই তাকে ভুলে গেল ! আজ সুন্দর আগের মতো থাকলে আরিয়ান কে মে*রেই ফেলতো। সুন্দরের মতো করে তাকে কেউ প্রটেক্ট করছে না ভেবে আফসোস হয় তার। অন্যদিকে সবাই অনেকক্ষণ ধরে তাকে ডাকাডাকি করায় ধ্যান ফিরে তার। বলে,
– কী হয়েছে?
উত্তরে লিহান বলে,
-তোমার জন্য একটি গান গাবো । তোমার প্রিয় গান বলো।
স্পৃহা তাকে সরাসরি জানিয়ে দেয় ,তার কোন প্রিয় গান নেই । লিহানের উপরও সে বিরক্ত।
ওদের এতো কথা দেখে সুন্দর জানায় ,
-তোমাদের কথা বলতে বলতে আমিই গান গাচ্ছি।
এই বলে সুন্দর গান ধরে। আলাদা কোন ইফেক্ট বা অন্য কোন সাউন্ড ছাড়াই শুধু গিটার নিয়ে খালি গলায় সে গাইতে শুরু করে।
Ye jism hai toh kya
Ye ruhh ka libaas hai
Ye dard hai toh kya
Ye ishq ki talaash hai
Fanaa kiya mujhe
Ye chaahne ki aas ne
Taraa taraa shikast hi hua
Raza hai kya teri
Dil-O-Jahaan tabaah kiya
Sazaa bhi kya teri
Wafaa ko bewafa kiya
Tu vaar zindagi se yun mujhe judaa kiya
Kahaan kahaan phirun main dhoondta
…….(Song’s Name: Yeh jism)
এই গানটা স্পৃহার অসম্ভব রকমের প্রিয় । নিজের প্রিয় গান বলবে না বলবে না করা সত্ত্বেও সুন্দর তা গাইলো । কিন্তু সে তো কখনো কাউকে জানায়নি। সুন্দর একে একে আরো তিন থেকে চারটা গান গাইলো । এরপর লিহান আর আরিয়ান যখনই গাইতে যাবে তখনই সুন্দরের গিটারের একটি তার ছিড়ে যায়। ফলে তাদের আর গাওয়াও হয় না। সংগীতের অনুষ্ঠানটাও শেষ।
.
.
.
.
.
.
স্পৃহা তার রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়েছে । কিন্তু কিছুতেই ঘুমাতে পারছে না । নিজের মনের মধ্যে নানা ধরনের প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে । সে কি ভুল কিছু করছে? তার মন আসলে কি চায় সে নিজেও বুঝতে পারছে না। এক ধরনের সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।
এমন সময় আবার পুরো বাড়ির লাইট অফ হয়ে যায়। তার রুম পুরো অন্ধকার। হাতের কাছে ফোনও নেই। হঠাৎ রুমে কারো উপস্থিতি টের পায় স্পৃহা। বলিষ্ঠ এক শরীর তাকে পেছন থেকে আঁকড়ে ধরে। ডান হাত আর পেট একসাথে শক্ত করে চেপে
ধরে এক হাত দিয়ে। অপর হাত দিয়ে স্পৃহার বাম হাতের ৫ আঙ্গুলের মধ্যে তার ৫ আঙ্গুল শক্ত করে চেপে রাখে। স্পৃহা এক নাগাড়ে চেঁচিয়েই চলেছে। কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না। মুট করে রাখা ৫ আঙ্গুল কিছুক্ষণ পরে খুলে দিল। মুহূর্তে স্পৃহা কে চেপে ধরার ধরন বদলে গেল । যেন আস্তে আস্তে হিংস্র রূপ ধারণ করেছে। দানাদার কিছু দিয়ে তার বাম হাতের কব্জিতে অনবরত মুছতে থাকে, ঠিক যেখানে লিহান ধরেছিল। এমন ভাবে জায়গাটা মুছছিল যেন মনে হচ্ছিল অনেক ময়লা জমে রয়েছে সেখানে ।এদিকে স্পৃহার হাতে অসম্ভব জ্বালাপোড়া শুরু হয়ে গিয়েছে । মনে হচ্ছে তার হাতে এসিড লেগেছে ।পুড়ে গেলে যেমন যন্ত্রণা হয় তার হাতে তেমনি লাগতে শুরু হয়েছে। সংগীত অনুষ্ঠানের সময়ের সেই একই রকম নিঃশ্বাস আবার অনুভব করে। উপচে পড়ছে তার কাঁধে। পুরো শরীর যেন শিরশির করে উঠলো ।
তবে কি এটা আরিয়ান?
(চলবে…)
#Running
Story Name: #Shundor_Spriha
Written by Samia Sara©️
Episode:19
আমার প্রিয় মানুষেরা এই পর্বটি আপনাদের কেমন লেগেছে ? আগের পর্বগুলোতে এত ভালোবাসা দেয়ার জন্য আমি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে ।আশা করি সব সময় পাশে থাকবেন💖
Jototuk parsi lekhar try korsi,mon khule support koren🥺🙏🏻
Lekhar moto manoshikota chilo na ekdom e ei situation e,Tobuo apnader onek er onek request e likhlam. Onek er mon valo hobe vebe etotuku kora. 🥰
Sobar jonne doa korben sobai please🤲
Ajker porbo ta kemon hoyeche?
Good night🥹💖