#শুনলাম_বসন্ত_নাকি_আবার_এসেছে
#লেখিকা_সিনথিয়া_জাহান
#পর্বঃ৫
পুরো ড্রয়িংরুমে পিনপতন নিরবতা ছেঁয়ে গেছে ৷ সবাই সাভাশের দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অথচ ওর মধ্যে কিঞ্চিৎ পরিমাণও হেলদোল নেই ৷ নিজের বেহুদা কথাটা বলা শেষ করে দেয়ালে হেলান দিয়ে ও শিস বাজাচ্ছে ৷ আয়েশা তো চোখ দিয়েই ওকে আস্ত গিলে খাওয়ার পায়তারা করছে ৷ তুবা বিচলিত কন্ঠে উ*ত্তেজিত হয়ে বলল,,,
মানে কি! তোমরা তুবার বিয়ে দিয়ে দিয়েছো? আর আমাকে একবারের জন্য বললেও না? তার উপর এতো দুর্গম এলাকায় কেন বিয়ে দিয়েছো? আমার নাতনিকে যত দ্রুত সম্ভব আমার সামনে নিয়ে আসো ৷
এসব বলতে বলতে তুবা বেশ উ*ত্তেজিত হয়ে পড়ল ৷ তা দেখে সবার কপালে চিন্তার ছাপ পড়ে গেল ৷ এর প্রভাব না তুবার স্বাস্থ্যের উপর পড়ে! সবাই যখন দিশেহারা হয়ে পড়ল ঠিক তখন তুষার লম্বা লম্বা পা ফেলে তুবাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে ওর সামনে হাঁটুমুড়ে বসল ৷ অতঃপর অত্যন্ত শীতল গলায় ধীরে ধীরে বলতে লাগল,,,
নানু প্লিজ তুমি শান্ত হও ৷ সাভাশ ভাই তোমার সাথে মশকরা করেছে ৷ তোমাকে ছাড়া কি আমরা তুবার বিয়ে দিতে পারি বলো? আসলে তুবা ওর বান্ধবীদের সাথে স্টাডি ট্যুরে গিয়েছে ৷ ২ দিনের মধ্যেই চলে আসবে ৷
তুবা অবশেষে শান্ত হলো ৷ তা দেখে সবাই স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল ৷ তুষারের থেকে চোখ সরিয়ে তুবা সাভাশের দিকে তাকাল অতঃপর কপট রাগ দেখিয়ে বলল,,,
এই বাঁ*দর ছেলে এদিকে আয় ৷
সাভাশের কোনো নড়চড় নেই ৷ তা দেখে তানিয়া চোখের ইশারায় ওকে তুবার কাছে যেতে বলল ৷ ছোট মায়ের ইশারামত ও লম্বা লম্বা পা ফেলে তুবার দিকে এগিয়ে গেল ৷ তুবা গম্ভীর কন্ঠে বলল,,,
তোর মুখটা আমার সামনে নিয়ে আয় ৷ মানে একটু ঝোঁক আমার দিকে ৷
সাভাশ ভ্রু কুঁচকে তুবার দিকে ঝুঁকল ৷ তুবা আচমকা ওর গাল টেনে ধরে বলতে লাগল,,,
বাঁ*দর ছেলে তুই আমার হার্ট এ’ট্যাক করিয়ে দিচ্ছিল প্রায়! কে বলবে তুই সিনু মায়ের ছেলে?
সাভাশ ব্যা*থা পেয়ে আ*র্তনাদ করতে লাগল ৷ তুবা এখনও ওর গাল টেনে ধরে আছে ৷ এসব দেখে আয়েশা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল,,,
নানু আরেকটু জোরে টেনে ধরো প্লিজ ৷ তুমি যদি ওর গাল টা টেনে ছিঁড়ে দিতে পারো তাহলে আমি তোমাকে আরেকটা বিয়ে দিয়ে দিব ৷
সাভাশ চোখ পাকিয়ে বোনের দিকে তাকাল ৷ তুবা সাভাশের গাল ছেড়ে দিয়ে হেসে উঠে বলল,,,
ও কথা বলো না ৷ তোমাদের নানী আমাকে ৫০ তলা বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে ধা*ক্কা দিয়ে ফেলে দিবে ৷
তুলি বেগম এতোক্ষণ নিরব দর্শক ছিলেন ৷ তুবার বলা কথাটা শুনে উনি মুখ ভেংচি কেটে মনে মনে বললেন,,, এতো কম উচু বিল্ডিং থেকে না ৫০০ তলা বিল্ডিং থেকে ধা*ক্কা দিয়ে ফেলে দিতাম!
সাভাশ গালে হাত বোলাতে বোলাতে মনে মনে বলল,,, তুবার বাচ্চা তোকে তো আমি পরে দেখে নিব! একবার শুধু নরমাল হ ৷ তার আগে তোর ক্লোজ ফ্রেন্ড আই মিন আয়েশা ভু*তনী টাকে একটা শিক্ষা দিই!
বলে সাভাশ দ্রুতপদে আয়েশার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওকে টেনে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গেল ৷ আয়েশা বি*রক্তিতে ‘চ’ কারান্ত উচ্চারণ করে বলল,,,
আহ সমস্যা কি তোর? বাংলা সিনেমার ভিলেনগুলোর মতো আচরণ করছিস কেন বা*ল?
সাভাশ আয়েশার গাল টেনে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,, এবার দেখ কেমন লাগে!
আয়েশা বহুকষ্টে সাভাশের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গালে হাত দিয়ে আ*র্তনাদ করতে লাগল ৷ ক্ষণকাল বাদে ভাইয়ের দিকে অ*গ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,,
সত্যি বলছি এবার তোকে কয়লার খনিতে কামলা হিসেবে পাঠাতেই হবে ৷ বাবাকে শুধু একবার আসতে দে!
সাভাশ ক*র্কশ গলায় বলল,, আয়েশু!
আয়েশাও দ্বিগুণ ক*র্কশ গলায় বলল,,, সাভাশু!
আশা!
নিরাশা!
হতাশা!
বাতাসা!
চিৎ*কার করতে করতে দু ভাই-বোনের গলা শুকিয়ে গেল ৷ তার উপর দুজনের ই ব্যা’থায় গাল জ্ব*লতেছে ৷ দুজনেই চোখমুখ কুঁচকে গালে হাত দিয়ে ব্যা*থা স*হ্য করছে ৷ একে অপরের সাথে চোখাচোখি হতেই হঠাৎ দুজনে ফিক করে হেসে উঠল ৷
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
সবাই ছাদে বসে আছে ৷ তুবা বর্তমানে ঘুমন্ত অবস্থায় আছে ৷ এই সুযোগে সবাই একজোট হয়েছে কিছু শলা পরামর্শ করার জন্য ৷ সভার নিরবতা ভাঙল তানজিদের কথায়,,
তুবার এই পার্সোনাল ডিসঅর্ডার তো আগে যেমন ছিল এখনও তেমন ই আছে ৷ এতো ডাক্তার দেখালাম তবুও তো কোনো উন্নতি হলো না ৷
তুষার কিছু একটা ভেবে বলল,, মামু তুমি নতুন কোনো সাইক্রিয়াটিস্টের সন্ধান করো ৷ ভালো মানের, উচ্চ ডিগ্রি সম্পন্ন ৷
খোঁজ অবশ্য পেয়েছি ৷ তুবা একটু নরমাল হলে ওকে সেখানে নিয়ে যাব ৷ তার আগে ওকে নরমাল করতে হবে ৷
ঠিক আছে আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে ৷ আমরা যদি তুবার সাথে খুব নরমাল আচরণ করি যেমনটা নানুর সাথে করতাম তাহলে ও সন্তুষ্ট হয়ে যাবে এবং আবারও তুবা আগের অবস্থায় ফিরে আসবে ৷
তানিয়া বলে উঠল,,ঠিক বলেছিস ৷ তো তুবার সব চাহিদা আমাদের বিনা বাক্যে পূরণ করতে হবে ৷
তুলি বেগম টিটকারি দিয়ে বলে উঠলেন,,, উনাকে তোমরা চেনো? কিসব আবদার করে বসে! আমি পারব না উনার সব কথা শুনতে পরে দেখা যাবে মাথায় চড়ে বসেছে ৷ এই বুড়ো আজীবনেও ভালো হবে না ৷
সবাই শীতল দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালেন ৷ তানজিদ কাটকাট গলায় বলল,,, মা কতবার বলব এটা তোমার স্বামী না , এটা তোমার নাতনি ৷ প্লিজ কোয়াপারেট ৷
তুুলি বেগম লজ্জিত হয়ে বললেন,,, কি করি বল তো? বয়স হয়েছে , এতো কিছু কি আর মনে থাকে? যেখানে নিজের দাঁত ই আমাকে সাপোর্ট না করে সব পড়ে গেছে, হাড্ডি আর চিবোতে পারিনা সেখানে ব্রেন কিভাবে সাপোর্ট করবে?
উনার কথা বলার ভঙ্গি দেখে সবাই হেসে উঠল ৷ হাসি থামিয়ে তুষার গলা খাকারি দিয়ে বলল,,,
যাক গে এবার আমাদের মিশন কমপ্লিট করতে হবে ৷ এবং মোস্ট ইম্পর্ট্যান্টলি তুবার সামনে কোনো উল্টাপাল্টা কথা বলা যাবে না যেটা শুনে ও উ*ত্তেজিত হয়ে পড়বে ৷
কথাটা বলে তুষার আনমনে বাদামের খোঁসা ছাড়িয়ে একটা একটা করে বাদাম খাওয়া সাভাশের দিকে তাকাল ৷ তুষারের পাশাপাশি বাকিরাও ওর দিকে তাকাল ৷ সবাইকে একসাথে তাকাতে দেখে সাভাশ বাদাম খাওয়া বাদ দিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,,,
হোয়াট?
সবাই সমস্বরে বলে উঠল,,, তুই মুখটা বন্ধ রাখিস ৷
সাভাশ এক পলক ওদের গম্ভীর মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল এবং পুনরায় বাদাম খাওয়ায় মনোযোগ দিল ৷ সবাই এবার সাভাশের থেকে চোখ সরিয়ে নিল ৷ তুষার শান্ত দৃষ্টিতে শেহনাজের দিকে তাকিয়ে বলল,,,
আর তুই…
শেহনাজ সাভাশের অবস্থা দেখে মুচকি মুচকি হাসছিল ৷ তুষারের কথা শুনে ও চমকে উঠে বলল,,,
কি? আমি তো কিছু বলিনি ভাইয়ার মতো ৷
বলিস নি কিন্তু তার চেয়েও বেশি কিছু করেছিস ৷
শেহনাজ অবাক হয়ে বলল,, কি?
তোর অভার এক্টিংয়ের দোকান টা একটু বন্ধ রাখিস ৷ তোর এতো সুন্দর ট্যালেন্ট দয়া করে সবার সামনে উন্মুক্ত করিস না ৷ ইট’স আ রিকোয়েস্ট ভ্যাবলি ৷
শেহনাজ মুখ ভেংচি কেটে মনে মনে বলল,,, আমার মেধার মূল্য যেদিন বুঝবেন সেদিন আপনার চোখের পানি নাকের পানি এক হয়ে যাবে হুহহ!
এমন সময় নিচে থেকে তুবার কন্ঠস্বর ভেসে আসল,,,
তুলি আমার দাঁতের সেট টা কোথায়? খুঁজে পাচ্ছি না তো ৷
তুলি বেগম খেকিয়ে উঠে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,, দেখলি এই বুড়োর কান্ড? এই জন্যেই সব চাহিদা মেটাতে বারণ করেছিলাম ৷ ৩২ টা দাঁত থাকার পরেও নাকি দাঁতের সেট লাগাবে! তা বলি দাঁতের সেট কি জিহ্বায় লাগাবে না ঠোঁটে লাগাবে?
চলবে,,,,