সুন্দর_স্পৃহা #সামিয়া_সারা #psychobasedstory পর্ব-২৯

0
2

#সুন্দর_স্পৃহা
#সামিয়া_সারা
#psychobasedstory

পর্ব-২৯

স্পৃহার চোখের পলক এত ঘন ঘন পড়ছিল দেখে সুন্দর ঝটকা মেরে তার ডান হাত দিয়ে স্পৃহার গলা চেপে ধরে ।গর্জে উঠে বলে ,

-একদম নাটক করবে না! কথায় কথায় জ্ঞান হারানো তোমার নতুন একটা নাটক !

স্পৃহা অসহায় দৃষ্টিতে সুন্দরের দিকে তাকালো । সুন্দর এবার স্পৃহার গলা ছেড়ে তার গাল শক্ত করে চেপে বলল,

-ওই লোককে কল দিয়েছিলে কেন!?

স্পৃহা কোন জবাব দিল না । সুন্দর আবার চেঁচিয়ে একই প্রশ্ন করার পরে স্পৃহা শান্ত গলায় বলল,

– যাতে আর কোন অঘটন না ঘটে।

-অঘটন ? অন্যকে নিয়ে বেশি দরদ উথলে উঠেছে? অঘটন কাকে বলে এখন তা দেখবে তুমি স্পৃহা ।

-সবকিছুর জন্য এমনিতেও আমিই দায়ী।

সুন্দর ছেড়ে দিল স্পৃহাকে। কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে এসে স্পৃহার হাত মোচড় দিয়ে পেঁচিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল। স্পৃহার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল ,

-তোমার জন্য একটা গিফট আছে ।বাইরে যেতেই যাচ্ছিলাম । কিন্তু না, আমি দরজা খুলবো না। দরজাটা তুমি খোলো ।
ঠিক দরজার বাইরে রাখা আছে।

স্পৃহা ঘুরে সুন্দরের দিকে তাকালো । সুন্দর ইশারায় তাকে যেতে বলল । স্পৃহা গুটিগুটি পায়ে যেতে লাগল দরজার দিকে ।

দরজা খুলে দেখে সামনে একটি বক্স রাখা।

সুন্দর সেদিক না তাকিয়েই বলল,

-বক্সটা খুলে দেখো পছন্দ হয় নাকি।

স্পৃহা বক্সটা তুলে ঘরের ভেতরে নিয়ে এলো। বেশ দ্বিধা করে বক্সটা খুলতেই পুলিশের ফরমাল ড্রেস দেখতে পেল।

শার্টের বুকের কাছে নেম প্লেটে লেখা,

” এস.আই. সুবিন”

নামটা পড়তেই স্পৃহার হাত থেকে বক্সটা পড়ে যায়।

সুন্দরের দিকে তাকিয়ে বলে,

-আপনি… আপনি কী করেছেন…

ভাবলেশহীন ভাবে সুন্দর জবাব দেয়,

– বেশি আগ্রহ দেখালে আরো বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । আর আমার শাস্তি সম্পর্কে তুমি অবগত রয়েছ ।এখন বল জানতে চাও ? স্পৃহা দ্রুত মাথায় ঝাঁকিয়ে না বলল।

সুন্দরও আর কোন কথা না বলে চুপচাপ বেরিয়ে গেল।

আসলেই সুন্দরের ভয়ানক শাস্তি সম্পর্কে স্পৃহা অবগত। তার শরীর শিউরে উঠলো এটা ভেবে যে সুন্দর এসআই সুবিনের সাথে কি করেছে।

কোনভাবে কি খোঁজ পাওয়া যাবে? বিষয়টা যেহেতু প্রশাসনিক পর্যায়ে চলে গিয়েছে নিশ্চয়তা খবর আসবে । এ সকল বিষয় চিন্তা করে স্পৃহা রুম থেকে বের হতে যাবে তখন দেখে তার রুমের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ । বেশ অনেকক্ষন ধরে ধাক্কিয়ে, চেঁচিয়েও কোন লাভ হলো না।

অনেক হয়েছে! বিষাক্ত সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেতে হলে নিজেকেও বিষাক্ত হতে হবে এখন।

.

.

.

.

.

অনেকক্ষণ পরে সুন্দর এসে স্পৃহাকে বললো ,

-মানসিকভাবে প্রস্তুত থেকো স্পর্শ ! কাল আমাদের বিয়ে ।

কয়েক সেকেন্ড সুন্দরের দিকে তাকিয়ে রইল স্পৃহা।

স্পৃহার দৃষ্টি উপেক্ষা করে সুন্দর বলে,

– এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই । বিয়েটা করতেই হবে।
তারপর আমিও দেখি কার জন্য কেমন দরদ তোমার ।

স্পৃহা এবার অপেক্ষা না করেই সোজা জবাব দিল ,

-আমি আজ রাতের মধ্যেই বিয়ে করতে চাই।

সুন্দরের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে।

স্পৃহা কে এক ঝাটকায় কাছে টেনে কপালে হাতের এপিঠ ওপিঠ রেখে বলল ,

-তোমাকে জ্বর এসেছে ? শরীর খারাপ লাগছে ?

স্পৃহা সুন্দরের আরেকটু কাছে এসে বলল ,

-আজ রাতে আপনাকে বিয়ে করতে হবে মিস্টার সানজিল চৌধুরী।

-তোমার এটা কি হলো? এতদিন যে বিয়ে করতে চাইতে না ! আর আজ বলছো এক্ষুনি ?? সব ঠিক আছে তো ?শরীর খারাপ লাগলে বল!

স্পৃহা সুন্দরের শার্টের কলার ধরে সুন্দরকে নিজের দিকে আরেকটু ঝুঁকিয়ে বলল,

-কেন ? এখন বিয়ে করতে সমস্যা ?

সুন্দর কোন কথা না বলে তার ফোনটা বের করে সবকিছু প্রস্তুত করতে বলল।

সুন্দরের হঠাৎ করে দেয়া এমন প্রস্তাবের কারণে বাড়ির সবাই বেশ হতভম্ব। এদিকে প্রস্তাবটা যে স্পৃহা দিয়েছে সুন্দর তা আর কাউকে জানায় না। তারপর ফিহাকে বলে ,

– আমার স্পর্শকে সাজিয়ে দাও।

সুন্দরের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে স্পৃহা তেজ দেখিয়ে বলে,

-কেন ! ও কেন সাজাবে আমায় ? আমি কি নিজে পারবো না? নাকি আমি সুন্দর না যে অন্য মানুষকে সাজাতে হবে ?

সুন্দর ও ফিহা একই সাথে বেশ আশ্চর্যান্বিত হয়ে তাকালো স্পৃহার দিকে।

সুন্দর স্পৃহার কাছে গিয়ে তার গালে হাত রেখে বলল,

– ঠিক আছে তুমি নিজেই তৈরি হও । যেভাবে তোমার ইচ্ছে।

স্পৃহা ফিহার দিকে তাকিয়ে সুন্দরকে বলল ,

-আপনিও ঘরে চলুন । এখানে থাকতে হবে না!

হঠাৎ করে স্পৃহার এমন ব্যবহারে সুন্দরের অবাক হওয়ার কোন শেষ নেই। হঠাৎ করে তার স্পর্শের কি হলো বুঝতে পারছে না সুন্দর । স্পৃহার পেছন পেছন রুমের দিকে যেতে লাগলো। রুমে ঢুকে স্পৃহা দরজা লাগিয়ে সুন্দরের বেশ অনেক কাছে গিয়ে বলল,

-কী কী পড়বো?

সুন্দর দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো ,

-চাইলে কিছু নাও পড়তে পারো।

-তারমানে বিয়ে উপলক্ষে কিছু আনেন নি ?

সুন্দর আলমারি থেকে একটি ব্যাগ বের করে স্পৃহার হাতে দিলো।

ব্যাগের মধ্যে একটা ব্লাডি রেড ওয়াইন কালারের শিফনের শাড়ি এবং রেড ওয়াইন ক্রিস্টাল হাই হিলস ছিল।
স্পৃহা সুন্দরের দেওয়া জিনিস গুলো নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো। এদিকে সুন্দর ডিভানের উপর তার গা এলিয়ে দিয়ে ফোন চালাচ্ছে। আগে হিলস পরে শাড়ি পরলে কুচি ধরতে সুবিধা হয় বলে স্পৃহা তার হিল দুটো সুন্দরের হাতে দিয়ে ডান পা সুন্দরের উরুতে রেখে বলল,

– পরিয়ে দিন।

এমন কর্মকাণ্ডে সুন্দরের হাত থেকে তার ফোন পড়ে যায়।

জিহ্বায় কামড় দিয়ে আহ্লাদী মুখ করে স্পৃহা সুন্দর কে বলল ,

-অসুবিধা হচ্ছে ? পা নামিয়ে দেবো?

এই বলে পা নামাতেই যাবে ,সুন্দর তখন পা ধরে তার পায়ে জুতা পরিয়ে দেয়। তারপর খুব আলতো ভাবে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায়।

.

.

.

.

.

এত রাতে কাজিকে প্রায় তুলেই আনা হয়েছে জোর করে । বিয়ে পড়ানো শুরুর কিছুক্ষণ আগ মুহূর্তে ফিহা সুন্দরকে ডেকে ওঠে। হঠাৎ করে ফিহার এমন উত্তেজিত অবস্থা থেকে সুন্দর যেতেই যাবে তখন স্পৃহা তার হাত শক্ত করে চেপে ধরে। ঝাঁঝালো কন্ঠে সুন্দরকে বলে ,

-অন্য কোন বাইরের মেয়ে ডাকলেই তার কাছে চলে যেতে হবে? সানজিল চৌধুরীর ক্যারেক্টার নাকি স্ট্রং !

-হঠাৎ তোমার হয়েছে কী?

-আপনি কোথাও যেতে পারবেন না ! আমার কি হয়েছে না হয়েছে সেসব দেখতে হবে না।

এবার ফিহাও আর চুপ থাকলো না । বলল,

– কোন প্রয়োজনে তুই এভাবে আটকাতে পারিস না স্পৃহা ।

স্পৃহা শুধু ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে ইশারায় চুপ থাকতে বলল ফিহাকে। তারপর সুন্দরকে বলল ,

-বাহ্ খুব সাহস দিয়েছেন তো বাইরের মেয়েদের। আমার সাথে উচ্চ স্বরে কথা বলে! আমি বিয়ে করব না!

-ওকে মেরে ফেলি?

ফিহা চমকে উঠে সুন্দরের কথা শুনে। আতঙ্কিত হয়ে বলে,

-নিজের কাজ শেষ! আর আমাকে এখন মেরে ফেলতে চাচ্ছেন?

স্পৃহা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায় সুন্দরের দিকে।

-কী কাজ করেছেন ওর সাথে? নিজের চরিত্রের ঠিক নেই আর আমার উপর নজরদারি করেন!

সুন্দর স্পৃহার উপর নিজের হাত তুলতে গিয়েও নামিয়ে নিল। ব্যক্তিগত মানুষের সাথে যা হবে সব ব্যক্তিগতভাবেই হোক।

কণ্ঠ শান্ত করে বলল,

-ওকে আমি এখনি মেরে ফেলতে পারি। কিন্তু সত্যি তুমি জানো আগে।তারপর মারব ।

-কিসের সত্যি?

-ঐ মেয়ে বলুক। নোংরা মানুষ দের নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করে নাহ্!

ফিহা বেশ উত্তেজিত হয়ে সুন্দরের দিকে তাকিয়ে বলল,

-আপনার ভাই নোংরা মানুষ?

সুন্দর কেয়ারলেস ভাবে ফোন দেখছে। স্পৃহা ফিহাকে বললো,

-ওনার ভাই এর সাথে তোর সম্পর্ক আছে?

ফিহা জবাব দেয় না কোনো। স্পৃহা আবার বলে,

-আমার মনে হয়েছিল তুই ওনার ভাইকে পছন্দ করিস। আজ শিওর হলাম। কবে থেকে ভালোবাসিস?

-আমি আরিয়ান কে ভালোবাসি। ওর সাথে রিলেশন আমার । ওকে যেন প্রাণে না মারে তার বিনিময়ে এতোদিন লিহান ভাইয়ের ক্ষতি করেছি আমি। কিন্তু আজ আরিয়ানের কোনো খোজ পাচ্ছি না।

সুন্দর ফোনের দিকে তাকিয়েই বলল,

-পাবেও না আর!

(চলবে…)
#Running
Story Name: #Shundor_Spriha
Written by Samia Sara©️
Episode:29

আমার প্রিয় মানুষেরা এই পর্বটি আপনাদের কেমন লেগেছে ? আগের পর্বগুলোতে এত ভালোবাসা দেয়ার জন্য আমি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে ।আশা করি সব সময় পাশে থাকবেন💖
Jototuk parsi lekhar try korsi,mon khule support koren🥺🙏🏻
Onek din pore golpo ta dilam,khub khub sick chilam+ onek pressure er moddhe chilam. Kintu onek miss korechi apnader,jotota Apnarao amake miss korechen. Etodin poreo ke ke episode ta porlen? Obossoi kintu comment kore janaben.
Sobaike onek onek valobasha . Good night 🥺

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here