#শুনলাম_বসন্ত_নাকি_আবার_এসেছে
#লেখিকা_সিনথিয়া_জাহান
#পর্বঃ১০
রাত ১০ টার দিকে দুই ভাইবোন বাথরুমে অবস্থান করছে ৷ সাভাশ কাধে একটা তোয়ালে রেখে বলতে লাগল,,,
ভালো করে শ্যাম্পু করে দিবি ৷ আর হ্যাঁ এক ফোঁটা পানি কিংবা ফ্যানা যেন আমার টি শার্টে না লাগে ৷
আয়েশা মুখ ভেংচি কাটল কিন্তু কিছু বলল না ৷ প্রথমে মাথাটা ভিজিয়ে নিয়ে শ্যাম্পু মাখতে লাগল ৷ আলতো করে মাথায় মাসাজ করে দিতে লাগল ৷ সাভাশ ভ্রু কুঁচকে বলল,,,,
তোর হাতে শক্তি নেই? নিজ হাতে খাইয়ে দিলাম তাও শক্তি হলো না? একটু জোরে শ্যাম্পু করে দে গা*ধা!
আয়েশা এবার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সাভাশের মাথায় হামলা চালাতে লাগল ৷ এতে করে সাভাশ খানিকটা ভড়কে গিয়ে বলল,,,
গা*ধী আমার মাথা কি ভর্তা বানাতে চাচ্ছিস? আক্কেল নেই তোর?
আয়েশা ক্ষে*পে গিয়ে বলল,, তো আমি করব টা কি? আস্তে করলেও দোষ আবার জোরে করলেও দোষ? তুই বরং এক কাজ কর মাথা টা খোল তারপর নিজের ইচ্ছামতো শ্যাম্পু করতে থাক ৷
বেশি প্যাচর প্যাচর না করে শ্যাম্পু করে দে ৷ ফাও ফাও খাবার এনে তোকে খাইয়ে দিই নি কিন্তু আয়েশু ৷ মনোযোগ দিয়ে নিজের কাজ কর ৷
আয়েশার ঠোঁটের কোণে আচমকা হাসি ফুটে উঠল ৷ এবার অত্যন্ত ডেডিকেশনের সাথে শ্যাম্পু করে দিতে লাগল ৷ হঠাৎ মাথায় দু*ষ্টু বুদ্ধি এসে গেল ওর ৷ মাথার ফ্যানা হাতে নিয়ে সেটা সাভাশের গালে মাখিয়ে দিয়ে বলল,,,
Awww একদম ৮০ বছরের হ্যান্ডসাম বুড়ো লাগছে ৷
সাভাশ কঠিন দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,, আয়েশার বাচ্চা তোকে বলেছি না আমার গায়ে যেন ফ্যানা না লাগে?
তাই?
বলে আয়েশা সাভাশের সারা শরীরে ফ্যানা ছিটিয়ে দিল ৷ সাভাশ চট জলদি বসা থেকে উঠে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,,
আয়েশার বাচ্চা তোকে তো আমি…
সাভাশও আয়েশার সারা শরীরে ফ্যানা ছিটিয়ে দিল ৷ আয়েশা হতভম্ভ হয়ে গেল ৷ সাভাশ বাকা হেসে বাথরুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,,,
এই ঠান্ডা আবহাওয়ায় আমি আমার জমজ বোনকে রেখে একা কিভাবে গোসল করতে পারি?ঘোর অ*ন্যায় হয়ে যেত ৷ তুইও গোসল কর কেমন?
বলে সাভাশ ওর রুম থেকে বেরোতে ধরলেও কিছু একটা ভেবে ফিরে এসে বলল,,, আর একটা কথা তোর বিয়ে আমার মতোই একটা কালাচাঁনের সাথে হবে দেখে নিস ৷ এটাকে আবার অ*ভিশাপ ভাবিস না, এটা আমার পক্ষ থেকে তোর জন্য দোয়া ৷ প্রতিদিন নামাজে আমি তোর জন্য এই দোয়াই করি ৷
কথাটা বলে সাভাশ দোতলা থেকে তিন তলায় চলে গেল ৷ অন্যদিকে ফ্যানায় মাখামাখি হয়ে থাকা আয়েশা ওর দিকে ক*টমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল ৷
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
পড়াশোনা কমপ্লিট করে তুবা বিছানায় গা এলিয়ে দিল ৷ হঠাৎ ড্রেসিং টেবিলের দিকে নজর যেতেই ওর মুখে হাসি ফুটে উঠল ৷ স্বাধীনের রুমাল টা ওখানে অযত্নে পড়ে আছে ৷ তুবা বিছানা থেকে নেমে সেদিকে এগিয়ে গেল ৷ রুমাল টা হাতে তুলে বলতে লাগল,,,
ঝ*গড়া কমপ্লিট করতে না পারলেও আপনাকে অন্যভাবে হেনস্থা করতে পেরে আমি গর্বিত ৷ তবে রুমাল টা আপনার পকেটে রাখতে পারলে পৈশাচিক মজা পেতাম ৷ যাক গে ব্যাপার না ৷
কিছু একটা ভেবে তুবা রুমাল টা নিয়ে বাথরুমে চলে গেল ৷ তারপর খুব সুন্দর করে নিজের হাতে রুমাল টা ধুতে লাগল যদিও ওয়াশিং মেশিন ছিল ৷ আজ কেন জানি নিজ হাতে ধুতে ইচ্ছা করল ৷ ধোয়া শেষে তুবা হেয়ার ড্রেয়ার দিয়ে রুমাল টা শুকাতে লাগল ৷ নিজের কান্ড দেখে তুবা নিজেই নিজেকে ব্য*ঙ্গ করে বলতে লাগল,,,,
বাহ কেয়া সিন হে! হেয়ার ড্রেয়ার দিয়ে ভেজা চুলের জায়গায় ভেজা রুমাল শুকানো বাহ!
রুমাল টা শুকিয়ে তুবা রুমালটার উপরে সুই সুতা দিয়ে কিছু একটা করতে লাগল ৷ করা শেষে হেসে উঠে বলল,,,
যার রুমাল তার নাম তো লিখতেই হবে ৷ তাই না সাইকো সাহেব?
তুবা রুমাল টা নিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল ৷ তারপর রুমাল টার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল ৷ হঠাৎ হুঁশ ফিরতেই ও থতমত খেয়ে গেল ৷ গলা খাকারি দিয়ে নিজেই নিজেকে বুঝ দেওয়ার জন্য বলতে লাগল,,,
এটা উনি আমাকে গিফট দিয়েছেন ৷ গিফট পাওয়া জিনিস আমি কেন অবহেলায় রাখব? তাই পরিষ্কার করেছি ৷ আর রুমাল টার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য তার উপর একটু নকশা করেছি ৷
তুবার ভিতর থেকে হঠাৎ একজন সত্ত্বা বলে উঠল,,, নকশা তো করিস নি ৷ সাইকো লিখেছিস ৷
লিখেছি তো কি হয়েছে? আরে যেন বুঝতে পারি যে এটা সাইকো সাহেবের থেকে পাওয়া গিফট ৷
অন্য গিফটে তো আগে কখনো লিখিসনি ৷
কারন ওরা সাইকো ছিল না ৷
যা মেনে নিলাম ৷ কিন্তু রুমাল টার দিকে তাকিয়ে হাসছিলি কেন?
আজব আমার দাঁত, আমার মুখ, আমার গাল , আমি হাসব তাতে তোর কি রে? এই স্বাধীন দেশে কি আমরা এটাই চেয়েছিলাম? আমরা কি এই স্বাধীনতাই চেয়েছিলাম যেখানে হাসার অনুমতি নেই?
সত্ত্বাটা বাকা হেসে বলল,,,কি বললি স্বাধীন? স্বাধীনতা?
তুবা বি*রক্ত হয়ে চা*পা আর্তনাদ করে বলল,,,, বেরিয়ে যাহ বে’য়াদব ৷ এখনি বেরিয়ে যাহ নয়তো এর হিসাব আমি পরকালে গিয়ে নিব!
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
মাম্মা আমি নীরের সাথে আজকে একটু কলেজ শেষে ঘুরতে যাব ৷ তাই ফিরতে দেরি হবে ৷
শেহনাজের কথা শুনে সিনু বলল,,, আচ্ছা ঠিক আছে ৷ তবে বেশি দেরি যেন না হয় , সাবধানে থাকবে ঠিক আছে?
ওকে মাম্মা ৷
শেহনাজ খুশি মনে যেতে ধরতেই সিনু পুনরায় বলে উঠল,,, ওহ হ্যাঁ নীরকে আমাদের বাসায় নিয়ে এসো ৷ কতদিন থেকে মেয়েটাকে দেখি না ৷ রাইমা আর নাভিন ভাইয়ার সাথে আমি কথা বলে নিব ৷
শেহনাজ সম্মতি জানিয়ে খুশিতে ছুটতে ছুটতে সদর দরজার দিকে এগিয়ে গেল ৷ হঠাৎ অভ্যাশের দাস হয়ে ধুড়ুম করে চিৎপাটাং হয়ে পড়ে গেল ৷ সিনু দৌঁড়ে ওর কাছে গিয়ে ওকে তুলল ৷ শেহনাজ ৩২ টা দাঁত বের করে হাসতেছে ৷ সিনু গম্ভীর মুখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
তোমার গায়ে লোশনের জায়গায় সিমেন্ট মাখানো উচিত ছিল আমার ৷ তাতে যদি একটু শক্তি পাও!
শেহনাজ এখনও ৩২ পাটি দাঁত বের করে হাসতেছে ৷ তা দেখে সিনু বলে উঠল,,,, দাঁত বন্ধ করে নিজের চিৎপাটাং হয়ে যেখানে সেখানে পড়া বন্ধ করে দাও বুঝলে?
আয়েশা আসতেই শেহনাজ আপুকে নিয়ে ড্রাইভার আঙ্কেলের কাছে চলে গেল ৷ সাভাশ নিচে নামতে নামতে বলল,,,
শেজু আবারও পড়ে গিয়েছিল নাকি মাম্মা?
সিনু হতাশ শ্বাস ফেলে বলল,,, হ্যাঁ ৷
সাভাশও দীর্ঘশ্বাস ফেলল ৷ অতঃপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,, আচ্ছা মাম্মা রাইমা খালামনিরা সিলেট থেকে ফিরেছে?
হুম কাল বিকেলেই চলে এসেছে ৷ নীরের সাথে শেহনাজ আজ ঘুরতে যাবে সেই খুশিতে আটখানা হয়েই তো ও উল্টে পড়ল ৷
সাভাশ ভ্রু কুঁচকে বলল,,,ঘুরতে যাবে মানে? ওরা কোথায় যাবে? কার সাথে যাবে? কিভাবে যাবে?
তুষার সাভাশের পাশে এসে বলল,,, ভাই এক এক করে প্রশ্ন কর ৷ বড় মাকে নিঃশ্বাস তো নিতে দে ৷
সিনু হেসে উঠে বলল,,, সমস্যা নেই ড্রাইভার চাচার সাথেই যাবে ৷
সাভাশ বিরবির করে বলল,,, ড্রাইভার আঙ্কেলের উপর না জানি আজ কি লেভেলের অ*ত্যাচার করে এরা! একবার তো ওদের ঘুরতে নিয়ে গিয়ে আমি ফ্যা*সাদে পড়ে গিয়েছিলাম ৷ ওরা জেদ শুরু করেছিল কু*ত্তার পিঠে চড়ে বেড়ানোর জন্য! শেষে ঠাটিয়ে দুটোকে দুটো করে চ*ড় মে*রে ফেরত এনেছিলাম!
চলবে,,,,