#শুনলাম_বসন্ত_নাকি_আবার_এসেছে
#লেখিকা_সিনথিয়া_জাহান
#পর্বঃ১১
স্বাধীনের সাজেস্ট করা মেডিসিন খাওয়ার পর থেকে তুবা নিজের মধ্যে একটু উন্নতি অনুভব করছে বৈকি ৷ ভার্সিটির ক্লাস শেষে আয়েশার সাথে ও ক্যাম্পাসে বসে আছে ৷পিঠাপিঠি বয়সের হওয়ায় ছোট থেকেই আয়েশা আর তুবার সম্পর্ক অনেক গাঢ় ৷ ওরা বলতে গেলে বেস্ট ফ্রেন্ড কিংবা আপন বোনও বলা যেতে পারে ৷
আয়েশা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে লাগল,,,, তুবা রে এই পড়াশোনা আর সহ্য করতে পারছি না ৷ কবে না জানি আমার জান টা ফকাত করে উড়ে যায় ৷
তুবা মুচকি হেসে বলল,,, এতোটাও জটিল না যতটা তুই বলছিস ৷
তুই তো বলবিই কারন তুই তো ক্লাসের টপার ৷ টপ টেনে তোর স্থান ৷ আর আমি কোনোমতে গড়াগড়ি দিয়ে পাশ করা স্টুডেন্ট ৷
আরে আপু এভাবে বলছিস কেন? তুইও অনেক ট্যালেন্টেড ৷
হয়েছে চাটু মারতে হবে না ৷ আমার সবথেকে খারাপ লাগে কি ভেবে জানিস? ওই অ্যা*নাকন্ডা স্যারের সাবজেক্টে আমার নলেজ জিরো ৷ আর সেই সুযোগে ওই বেডা আমাকে যখন তখন ক্লাসের সবার সামনে অ*পমান করে ৷
সাভাশ ভাইয়া না তোদের ক্লাসে টপ স্টুডেন্ট ৷ তার কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারিস না?
আয়েশা মুখ ভেংচি কেটে বলল,, ওর থেকে সাহায্য নেওয়ার চেয়ে অপ*মান সহ্য করা বেশি ভালো ৷ আমি পড়াশোনায় কম পাওয়ায় এতোটাও দুঃখ লাগে না যতটা দুঃখ লাগে সাভাশের রেজাল্ট দেখে! ও কেন ক্লাসে সেকেন্ড পজিশনে থাকতে গেল?
তুবা হাসতে লাগল ৷ এমন সময় পাশের কিছু মেয়ের কথা ওদের কানে আসল,,,
বারিশ স্যার কি সিঙ্গেল? সিঙ্গেল হলে আমি চান্স মারব ভাই ৷
সিঙ্গেল থাকলেও তোকে পাত্তা দিবে না ৷ বারিশ স্যারের স্টান্ডার্ড উচু লেভেলের যেমন আমি ৷
এ্যাহহহহ নিজেকে নিয়ে খুব গর্ব তাই না? তোর দিকে তো চোখ তুলেই তাকাবে না কারন তোর মুখ দেখলে ব*মি এসে যাবে বারিশ স্যারের ৷
ওদের কথোপকথন শুনে আয়েশার চোখমুখ কুঁচকে গেল ৷ তুবাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল,,,, কোনো ইয়াং স্যার দেখলেই এই মেয়েগুলো ছ্যা*চড়ামো শুরু করে দেয়! এদের টেস্ট এতো নিচু মানের কেন ছ্যাহ?
তুবা দুষ্টু হেসে বলল,,,কেন তোর পছন্দ হয় না আপু?
আয়েশা মনে হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে কুৎ*সিত কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে এমন একটা ভান করে বলল,,, আমাকে পাগলা কু*ত্তায় কা*মড় দিয়েছে নাকি? নিজের টেস্ট এতো নিচুতে নামাতে চাই না আমি ৷ স্যারের বয়স মনে কর ৩১ বা ৩২ হবে ৷ তো সে হিসেবে স্যার আমার চাচ্চু আর ভাইয়ের মাঝখানের সম্বন্ধের কেউ ৷
এ সম্পর্কের নাম বল দেখি?
আয়েশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,,,ভাচা ৷
তুবা জোরে হেসে উঠে বলল,,, ভাচা! এটা কেমন নাম? তবে বেশ পছন্দ হয়েছে আমার ৷
বলে জোরে জোরে হাসতে লাগল ৷ এমন সময় সাভাশ এসে আয়েশার মাথায় টো*কা মে*রে বলল,,, বারিশ স্যার তোর ভাচা?
হঠাৎ মাথায় টোকা পড়ায় আয়েশা প্রচন্ড ব্যা*থা পেল ৷ মাথায় হাত দিয়ে রা*গে গজগজ করতে করতে সাভাশের দিকে তাকিয়ে বলল,,,
সমস্যা কি তোর? স্বাভাবিক ভাবে কথা বলা যায় না? সবসময় মাথায় টো*কা মা*রিস কেন? তোর বউকে জ্বা*লানোর আগে আমি ম*রতে চাই না!
সাভাশ সে প্রসঙ্গে না গিয়ে বলতে লাগল,,, এমনিতেই বারিশ স্যার তোর প্রতি ভীষণ বি*রক্ত ৷ তার উপর তুই তাকে ভাচা বলেছিস ৷ আমি এখনি স্যারকে বলে দিব যাতে তোর উপর এবার একটা বো*মা মে*রে দেয়! তাহলে আমি একটু শান্তি পাব ৷
বলে উল্টো ঘুরে হাঁটতে ধরলে আয়েশা দৌঁডে ওর সামনে গিয়ে দু হাত মেলে বলল,,, খবরদার সাভাশ ৷ আমার সাথে পাঙ্গা নিবি না ৷
আমি তো নিবই ৷
কথাটা বলে সাভাশ ছুটল ৷ আয়েশাও ওর পিছু পিছু ছুটল ৷ পুরো ক্যাম্পাস ছোটাছুটি করলেও আয়েশা সাভাশের নাগাল পেল না ৷ হঠাৎ সাভাশকে থামতে দেখে আয়েশা ওর কাছে চলে আসল ৷ নরম স্বরে বলতে লাগল,,,,
এই না প্লিজ ৷
সাভাশ মিটিমিটি হাসতে হাসতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ আয়েশা সাভাশের দিকেই নজর অব্যাহত রেখেছিল তাই সামনের দিকে তাকায়নি ৷ সাভাশকে সামনের দিকে তাকিয়ে হাসতে দেখে আয়েশাও সেদিকে তাকাল ৷ তাকানোর সাথেই ওর চোখ বড় বড় হয়ে গেল ৷ বারিশ টানটান হয়ে ওদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে ৷
সাভাশ জোরে করে একটা সালাম দিল ৷ বারিশ শান্ত স্বরে সালামের জবাব দিয়ে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকল ৷ পর মুহূর্তে সাভাশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই আয়েশা ওর মুখে নিজের এক হাত চেপে ধরল আর অন্য হাত দিয়ে ওর শার্ট খামছে ধরে বিব্রত ভঙ্গিতে বারিশকে সালাম দিয়ে সাভাশকে সেখান থেকে টানতে টানতে নিয়ে গেল ৷
বারিশ ওদের দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে আছে ৷ কিছুদূর যেতেই সাভাশ নিজেকে আয়েশার থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে ৷ অতঃপর আয়েশার মাথায় টো*কা মে*রে কিছু বলতে লাগল আর প্রতিক্রিয়া হিসেবে আয়েশাও সাভাশের গাল টেনে ধরল ৷ এসব দৃশ্যই বারিশ দেখতে লাগল যতক্ষন পর্যন্ত না ওরা অদৃশ্য হলো ৷
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
সাভাশ নিজের রুমে সামান্য এক্সারসাইজ করে নিজের ঘর্মাক্ত শরীর টা ঠান্ডা করার জন্য দোতলার বেলকনির দিকে চলে গেল কারন ওখানে সবচেয়ে সুন্দর বাতাস পাওয়া যায় ৷ ওই বেলকনির সামনে অনেক ফুলের গাছ রয়েছে ৷ বেলকনির দিকে এগিয়ে যেতে ধরতেই হঠাৎ কারো সুমধুর রিনরিনে হাসির আওয়াজ ওর কানে ভেসে আসল ৷ সাভাশের কদম থেমে গেল ৷
পায়ের দিক পরিবর্তন করে ও ড্রয়িংরুমের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল ৷ ড্রয়িংরুমে আসতেই দেখতে পেল সবাই মিলে কাউকে ঘিরে গোল হয়ে বসে গল্প করছে ৷ সাভাশ ভ্রু কুঁচকে উকিঝুকি দিতেই একটা মায়াবী মুখবিবর ওর চোখের সামনে ভেসে উঠল ৷ এক পা এক পা করে সেদিকে এগিয়ে যেতে লাগল ও ৷
বেছে বেছে নীরের সামনের সোফায় গিয়ে ধপ করে বসে পড়ল ৷ কারো আগমনে সবাই চকিতে পিছু ঘুরে তাকাল ৷ বাকিদের চোখকে অবজ্ঞা করে সাভাশ নির্দিষ্ট চোখের মালিককে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
কেমন আছিস নিক্কি? সিলেটে কেমন কাটল এই কয়দিন?
নীর মুচকি হেসে বলল,,, আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি ভাইয়া ৷ সিলেটে ভালোই কেটেছে দিনগুলো ৷
আচ্ছা ৷
বলে সাভাশ নিজের ফোন ঘাটতে লাগল ৷ ওর পড়নে টি শার্ট যেটা ওর ঘামের কারনে শরীরে চিপকে আছে ৷ কপালেও ফোটা ফোটা ঘামের দর্শন পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু ওর ঠোঁটের কোণে লেপ্টে আছে অস্পষ্ট হাসি ৷
আয়েশা ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,,, তোর না আড্ডা অপছন্দ তাহলে এখানে কি করছিস? ভাগ এখান থেকে ৷
সাভাশ ফোনে চোখ নিবদ্ধ রেখেই বলতে লাগল,,, আমার ইচ্ছা ৷ আমি যেখানে মন চাবে সেখানেই গিয়ে থাকব ৷ দরকার পড়লে গাছের ডালে ঝুলে বাঁ*ন্দরের সাথে সেলফি তুলব , দরকার পড়লে শা*র্কের পিঠে চড়ে সমুদ্রপথে পাড়ি দিব, আ*গ্নেয়গিরির লাভায় ডিম ভেজে খাব, পাখির সাথে সুখ দুঃখের আলাপ করব তাতে তোর কি রে বা*ল?
সাভাশের কথা শুনে আয়েশা ব্যতীত সকলে হেসে উঠল ৷ আয়েশা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,, ব*লদ!
হাসি বাদ দিয়ে শেহনাজ নীরকে বলল,,, তুই দিনদিন এতো সুন্দরী হয়ে যাচ্ছিস কিভাবে?
তুষার শেহনাজের কথার পিঠে বলে উঠল,,, আসলেই নীর ইউ আর বিকামিং আ প্রিটি লেডি ৷
প্রতি উত্তরে নীর সামান্য হাসল ৷ তুষার ওর হাসির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিল ৷ এসব লক্ষ্য করে শেহনাজের আচমকা বুক কেঁপে উঠল ৷ ভীষণ হাঁশফাশ করতে লাগল ৷ আয়েশা শেহনাজকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,
তুই যদি যখন তখন চিৎপটাং হয়ে না পড়ে পড়ে শরীরের হাড় হাড্ডির ক্ষ*য় ক্ষ*তি না করতি তাহলে তুইও নীরের মতো সুন্দরী হয়ে যেতি ৷
শেহনাজের আরো খারাপ লাগতে শুরু করল ৷ নীরের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল,,,
তোর সৌন্দর্যের রহস্য কি? আমাকে একটু টিপস দে না রে ৷
নীর শেহনাজের গাল টেনে দিয়ে বলল,,, যে আগে থেকেই এতো কিউট আর সুন্দরী তাকে কি টিপস দিব শুনি? ইউ আর সো এডোরেবল সিস ৷
আয়েশা ব্যঙ্গ করে বলল,,, অ্যান্ড সাভাশু ইজ আ এডোরেবল ষাঁড়!
চলবে,,,,,