#শুনলাম_বসন্ত_নাকি_আবার_এসেছে
#লেখিকা_সিনথিয়া_জাহান
#পর্বঃ১৩
ভার্সিটির বিশাল লাইব্রেরিতে অনেক স্টুডেন্ট নিজেদের পছন্দনীয় বই পড়ছে ৷ অতীত প্রজন্মের মতো এরা সবসময় মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে না ৷ সকলের মেন্টালিটি ছোট থেকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে সবাই বই পড়া টাকে নিজের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের বিষয় মনে পড়ে ৷ প্রত্যেক টা জেলায়, বিভাগে, গ্রামে, শহরে অসংখ্য লাইব্রেরি গড়ে উঠেছে ৷ এর বদৌলতে ফ্রিতে সবাই নিজেদের জ্ঞানের তৃষ্ণা মেটাতে সক্ষম হচ্ছে ৷
তুষার নিরিবিলি একটা টেবিলে বসে মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছে ৷ তুবা কিছু বই নেওয়ার জন্য লাইব্রেরিতে এসেছিল ৷ তুষারের দিকে চোখ পড়তেই ও ত্রস্ত পায়ে ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর সামনে চেয়ার টেনে ধপ করে বসে পড়ে বলল,,,
কি রে মাল্টি ট্যালেন্টেড ছেলে লাইব্রেরির সব বই তো মনে হয় পড়া শেষ করে দিয়েছিস! তা বলি একটু তো নিজেকে শান্তি দে ভাই ৷ সারাক্ষণ বইয়ের মাঝে ডুবে থাকলে হবে?
তুষার বই থেকে চোখ সরিয়ে তুবার দিকে তাকিয়ে বলল,,, বই পড়লে জ্ঞানের বিশলতা বাড়ে ৷ অবশ্য তোর মতো মাথামোটার সেটা বোঝার কথা না ৷ তুই তো শুধু শিখেছিস মাম্মার মতো কথায় কথায় পরকালে হিসাব নেওয়া ৷
তুবা নিজের হাতের বইগুলো শব্দ করে টেবিলের উপর রাখল ৷ লাইব্রেরিতে উপস্থিত বাকিরা ওদের দিকে বি*রক্ত চোখে তাকাল ৷ তা দেখে তুবা তৎক্ষণাৎ বলে উঠল,,,,,
আফওয়ান আফওয়ান ৷
সকলের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে তুবা ক*টমট দৃষ্টিতে তুষারের দিকে তাকিয়ে বলল,,, তোর বড্ড বাড় বেড়েছে তুষার ৷ আমাকে মাথামোটা বলার একটা কারন বল, শুধুমাত্র একটা ৷
এই যে নিজের বড় ভাইকে নাম ধরে ডাকছিস এটাই একটা কারন ৷
তুবা টিটকারি দিয়ে বলল,,, এ্যাহহহ তুই আমার থেকে জাস্ট ছয় মাসের বড় ৷ তোকে কেন ভাই বলতে যাব রে?
তুষার বুকে দুহাত গুজে তুবার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,, আমি ভার্সিটিতে তোর সিনিয়র ভাই সেটা ভুলে যাস না ৷
তুবা মুখ ভেংচি বলে উঠল,,, বয়স ম্যাটার করে ব্রো ৷ বয়স টাই আসল ৷ তুই আমাকে হিরার নেকলেস দিলেও আমি তোকে ভাই বলে ডাকব না হুহহহ!
তুষার কিছু বলল না ৷ পুনরায় বইয়ের দিকে মনোযোগ দিল ৷ ও কখনো কারো সাথে তর্ক করে না ৷ নিজের পক্ষে দুই একটা কথা বলে চুপ হয়ে যায় ৷ তুবা ওর বৈশিষ্ট্য জানে তাই নিজেও চুপ হয়ে গেল ৷ উকিঝুকি দিয়ে তুষার কি বই পড়ছে সেটা দেখার চেষ্টা করতে লাগল ৷ এমন সময় দুই একটা ফাস্ট ইয়ারের মেয়ে এসে তুষারকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
হ্যালো ভাইয়া ৷
তুষার এক পলক ওদের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল ৷ তুষারের থেকে জবাব না পেয়ে মেয়ে দুটো হাস্যজ্জ্বল মুখে দু হাত বাড়িয়ে একটা নকশা করা চিঠি ওর সামনে রেখে বলল,,,
এটা আপনার জন্য ৷ একটু পড়ে দেখবেন ৷
বলে লাজুক হেসে দৌঁড়ে ওদের সামনে থেকে চলে গেল ৷ তুবা এতোক্ষণ গালে হাত দিয়ে ওদের দৃশ্য অবলোকন করছিল ৷ মেয়ে দুটো চলে যেতেই তুবা চট জলদি চিঠিটা হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে বলল,,,
মানতে হবে চিঠিটা বেশ সুন্দর করে নকশা করেছে রে তুষার ৷ আর মেয়ে দুটো কিউট ছিল ৷ কাকে পছন্দ হলো তোর? বল বল লজ্জা পাস না , আমি কাউকে বলব না ৷
তুষার তুবার হাত থেকে চিঠিটা খপ করে ছিনিয়ে নিয়ে সেটা ডাস্টবিনে ছুঁড়ে মা*রল ৷ তুবা অবাক হয়ে বলল,,,
ফেলে দিলি কেন? মেয়েগুলো কত অনুরোধ করে তোকে পড়তে বলে গেল ৷
সবার রিকোয়েস্ট মেনে নিলে আমি চ*রিত্রহীন হয়ে যাব ৷ আমি শুধু একজনের রিকোয়েস্ট ই মেনে চলব ওকে?
তুবা চোখ বড় বড় করে আগ্রহের সহিত বলল,,, এইই তুষার তোর পছন্দের কেউ আছে? কে সে? আমি কি চিনি তাকে? বল বল ৷
তুষার কোনো উত্তর না দিয়ে বইয়ে নজর দিল ৷ তুবা ওর হাত থেকে বই কেড়ে নিয়ে বলল,,, বল না তুষার ৷ তুই তো দেখছি এখন রোমান্টিক উপন্যাস বেশি পড়ছিস ৷ অবস্থা সিরিয়াস দেখছি তোর? মেয়েটা কে রে?
তুষার বসা থেকে উঠে লাইব্রেরি থেকে বের হয়ে গেল ৷ ওর গমনপথের দিকে নজর রেখে তুবা বলতে লাগল,,,
তুই ধরা পড়ে গেছিস তুষার ৷ এবার আমি তোর পিছনে ডিটেক্টিভদের মতো লেগে পড়ব ৷ দেখি কিভাবে সেই মেয়েকে লুকিয়ে রাখিস হুহহ!
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
স্বাধীন নিজের ক্যাবিনে দাঁড়িয়ে একজন রোগীর ফাইল চেক করছে ৷ হঠাৎ ফোন বেজে উঠতেই ও পকেটে হাত দিল ৷ ফোনের সাথে রুমাল বেরিয়ে আসল ৷ রুমালের দিকে তাকাতেই ওর তুবার কথা মনে পড়ে গেল ৷ হেসে হেসে বলতে লাগল,,,
নোং*রা মেয়ে আমার শখের রুমালটা নিজের মূল্যবান সম্পদ দিয়ে মাখামাখি করে ন*ষ্ট করে দিল! আমি জানি আমার রুমাল আপনার মনে ধরেছিল তাই তো ছলছাতুরি করে নিয়ে গিয়েছেন ৷ লোভিইইই মেয়ে!
তুবার কথা ভাবতে ভাবতে স্বাধীন ফোন ধরার কথা ভুলেই গেল ৷ ফোন করেছিল ওর মা ৷ সেটা স্মরণ হতেই স্বাধীন তাড়াহুড়ো করে কল ব্যাক করল ৷ ফোন রিসিভ হচ্ছে না ৷ স্বাধীনের বুঝতে বাকি নেই ওর মা অভিমান করেছে ৷ বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ও ৷ ছোট থেকেই ওর মা ওকে নিয়ে অনেক পজেসিভ ৷ সবকিছু করার অনুমতি দিলেও ফোন ধরা নিয়ে উনার আলাদা একটা অভিব্যক্তি আছে ৷ যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন ফোন দেওয়ার এক সেকেন্ডের মধ্যেই ফোন রিসিভ করতে হবে ৷
স্বাধীন এখন পর্যন্ত ৯৯ বার ফোন দিল কিন্তু ওর মা রিসিভ করল না ৷ স্বাধীন হতাশ হয়ে কপালে হাত দিল ৷ কয়েক মিনিট পর ওর মায়ের ফোন থেকে ফোন আসল ৷ এবার আর এক মুহূর্ত দেরি না করে স্বাধীন সাথে সাথে ফোন রিসিভ করে বলল,,,
আম্মু আফওয়ান ৷
শায়লা খাতুন অত্যন্ত গম্ভীর গলায় বলল,,, কোথায় ছিলে? ফোন রিসিভ করতে এতো দেরি করলে কেন? তুমি কি ওয়াশরুমে গিয়েছিলে? তোমাকে কতবার বলেছি যে ওয়াশরুমে মোবাইল নিয়ে যাবে ৷
স্বাধীন অনুরোধ করে বলল,,, আম্মু ভুল হয়ে গেছে ৷ একটু অন্যমনস্ক ছিলাম তাই ধরার আগেই কেটে গেছে ৷
শায়লা খাতুন চুপ করে থাকলেন ৷ অতঃপর বলে উঠলেন,,, ঠিক আছে মানলাম এবারের মতো ৷ কিন্তু ৯৯ বার মিস কল দিয়ে থেমে গেলে কেন? ১০০ বার কেন দিলে না? হাতে ব্যা*থা উঠে গিয়েছিল? মা এখন পর হয়ে গেছে তাই না?
স্বাধীন ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,, আফওয়ান আফওয়ান আফওয়ান ৷
শায়লা খাতুন প্রায় আধা ঘন্টা ধরে ছেলের নামে নানা অভিযোগ করতে লাগলেন শুধুমাত্র প্রথমবারই ফোন রিসিভ না করার কারনে ৷ স্বাধীনও চুপচাপ সব অভিযোগ মাথা পেতে নিতে লাগল ৷ ওর মা সবদিক দিয়ে পারফেক্ট শুধু ফোনের বিষয়েই অযৌক্তিক পাগলের মতো আচরণ শুরু করে দেন ৷
ফোন কাটার পর স্বাধীন বড় করে একটা দম নিল ৷ হতাশ হয়ে বলতে লাগল,,, তুবা আপনার জন্য আমাকে কত কিছু শুনতে হলো! আপনাকেও আমি কথা শোনাব দেখে নিয়েন ৷
এমন সময় স্বাধীনের ফোন পুনরায় বেজে উঠল ৷ স্বাধীন তড়াক করে লাফিয়ে উঠে নাম্বার না দেখেই ফোন রিসিভ করে বলল,,,
হ্যাঁ আম্মু বলো ৷
তুবা কপাল কুঁচকে বলল,,, কে আপনার আম্মু শুনি? একটা অবিবাহিত মেয়েকে দামড়া ছেলের মা বানাতে আপনার লজ্জা করল না? ছিহ!
চলবে,,,,