অন্তর্নিহিত কালকূট লেখনীতে: অনিমা কোতয়াল ২২.

0
1

অন্তর্নিহিত কালকূট
লেখনীতে: অনিমা কোতয়াল

২২.

মেজাজ তুঙ্গে রুদ্রর। তীব্র রাগে শরীরের প্রতিটা রন্ধ্র জেগে উঠছে। রাগটা ঠিক কার ওপর হচ্ছে; প্রিয়তার ওপর না-কি নিজের ওপর? বুঝতে পারছেনা ব্যপারটা। বুঝতে গেলেও তরতর করে বাড়ছে রাগের মাত্রা। তারসাথে মাঘের কনকনে শীত আর মশার নির্মম অত্যাচার। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ও।

না, রুদ্র ফিরে যেতে পারেনি। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে জিপে উঠে বসেছিল। চাবিও লাগিয়েছিল। কিন্তু স্টার্ট করতে পারেনি। কারণটা পরিষ্কার। ও প্রায় নিশ্চিত আজ রাতে প্রিয়তার ওপর আক্রমণ হবে। কারণ দিনের বেলায় বাড়ি কিংবা অন্যকোন জায়গা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়াটা খুব বেশি সুবিধার হবেনা। তাই কাজটা আজ রাতেই করতে চাইবে ওরা। আবার ভাবল, করলে করুক তাতে ওর কী? যে নিজেই কোনরকম সাহায্য নিতে নারাজ, তাকে সাহায্য কেন করবে? ওর যেহেতু জানা ছিল মেয়েটার বিপদ আছে; ওর কর্তব্য ছিল মেয়েটাকে সাবধান করা। ও সেটা করেছে। বরং তারচেয়েও বেশি করেছে। ওর সাথে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যেতে চেয়েছে। সুরক্ষা দিতে চেয়েছে। সুতরাং ওর আর কোন দ্বায় নেই। মেয়েটাকে তো আর ও বিপদে ফেলেনি। সুতরাং এখানে দাঁড়িয়ে থাকার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণই নেই। ও যেতে পারে। মস্তিষ্ককে যথাসম্ভব যুক্তি দিয়ে বোঝালেও মনকে বোঝাতে পারল না। প্রিয়তার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই দমে গেল রুদ্র। সেই অসম্ভব সম্মোহনী চোখদুটো যেন বেঁধে ফেলেছে ওকে। ও স্বভাব বিরুদ্ধ আচরণ করছে, কাল থেকেই। এবারও তাই হল। ফিরে গেলোনা। জিপ বেশ খানিকটা দূরে নিয়ে পার্ক করে ফিরে এলো আবার। দাঁড়িয়ে রইল সেই বিল্ডিং এর আড়ালে।

তখন থেকে দুই ঘন্টা যাবত দাঁড়িয়েই আছে। এখনো কারো আসার নাম নেই। রাগে দাঁতে দাঁত পিষল রুদ্র। কিছুক্ষণ পরপর হাত ঝাপটে মশা তাড়াচ্ছে। কেন এভাবে দাঁড়িয়ে আছে জানা নেই রুদ্রর। কিন্ত প্রিয়তাকে রেখে যেতে পারছেনা। শুধুমাত্র একটা মেয়ের প্রাণরক্ষার জন্যে এতো কষ্ট? এতো উদার কবে হলে রুদ্র আমের! কথাটা ভেবে অদ্ভুত কৌতুকবোধ করল ও। নিজের কাজে নিজের ওপরই রেগে যাচ্ছে রুদ্র। যখন মানুষের মন আর মস্তিষ্ক তাদের আলাদা আলাদা পথে চালিত করে; তখন মানুষ নিজের ওপরেই রেগে যায়। নিজেই নিজের কাছে অসহ্য হয়ে ওঠে। রুদ্রর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছেনা। রুদ্র আমের না-কি এমন অসহায় অবস্থায় রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছে। এ যেন কল্পণারও অনেকটা উর্ধ্বে। নিজের অবস্থার কথাটা চিন্তা করে রাগের পাশাপাশি অদ্ভুতভাবে হাসিও পাচ্ছে রুদ্রর।

হঠাৎই খেয়াল করল দুজন লোক বিল্ডিং এর মেইনগেট এর কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। রুদ্র শিড়দাঁড়া সোজা করে দাঁড়াল। মিশে গেল দেয়ালের কোণে পড়া অন্ধকার ছায়ায়। লোকদুটোর দিকে সুক্ষ্ম নজর ফেলল। দুজনেই সতর্ক দৃষ্টি বুলাচ্ছে আশেপাশে। কারা এরা? বিল্ডিং এর লোক? রুদ্র হাতে থাকা ঘড়িটাতে একবার চোখ বুলালো। রাত দুটো বাজে। বিল্ডিং এর লোক হলে এতো রাতে চোরের মতো কেন আসবে? এরা বিল্ডিং এর লোক নয়। প্রিয়তাকেই নিতে কিংবা মা*রতে এসছে। সেব্যাপারে মোটামুটি নব্বই শতাংশ নিশ্চিত রুদ্র। রুদ্র শতভাগ নিশ্চিত হল; যখন দেখল লোকদুটো তালা ভাঙছে। তাও কেমিক্যাল ব্যবহার করে। হাসল রুদ্র। কোনরকম শব্দ ছাড়াই তালা ভাঙ্গতে চাইছে। বাকিদের জ্বালাতন করার কোন ইচ্ছে তাদের নেই। ভদ্র লোক। এসব ভাবতে ভাবতেই তালা খোলা হয়ে গেল। পা টিপে টিপে ভেতরে ঢুকলো দুজন। নিঃশব্দে! প্রিয়তাদের রুমটা গ্রাউন্ড ফ্লোরে হওয়ায় সুবিধা হয়েছে ওদের। রুদ্র এগিয়ে যেতে নিয়েও থেমে গেল। ঐ মেয়ে খুবতো বলেছিল ‘আমি আপনাকে বিশ্বাস করিনা’। এবার নিজের চোখেই একটু দেখুক, কী অপেক্ষা করছিল ওর জন্যে। এখনই যাবেনা ও। মেয়েটাকে একটা শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এখনই অ‍্যাটাক না করলেও এগিয়ে থাকা উচিৎ। অন্তত দরজার কাছাকাছি। ওরা ঠিক কী করবে নিশ্চিতভাবে জানা নেই রুদ্রর। সতর্ক থাকা ভালো। প্যান্টের পকেট থেকে একটা সাইলেন্সার বের করল রুদ্র। হোলস্টার থেকে এম.টি 608 বের করে তাতে সাইলেন্সার লাগাতে লাগাতে আপন মনেই হেসে ফেলল। ও নিজেও কম ভদ্র নয়। যা করার নিঃশব্দেই করবে।

বিনা শব্দে বিল্ডিংটার দিকে এগিয়ে চলেছে রুদ্র। হঠাৎই একটা চাঁপা নারী কন্ঠের আর্তনাদ শুনতে পেল ও। বিদ্যুৎ এর মতোই ঝলকে উঠলো আওয়াজটা। এসে আবার সঙ্গেসঙ্গে মিলিয়েও গেল। থমকে গেল রুদ্র। প্রিয়তার কিছু হলোনা তো? এই ভয়ানক আতঙ্ককে শুধুমাত্র দায়িত্বের নাম দেওয়া যায় কি-না জানা নেই রুদ্রর। এইমুহূর্তে বাকি সব ভুলে গেল সে। ব্লাক হোল, ডার্ক নাইট, শত্রু সবকিছু। ওর মাথায় এখন শুধু একটা মেয়ের কথা ঘুরছে। প্রিয়তা!

*

রাতে রাস্তা ফাঁকা থাকায় গুলশান পৌঁছাতে বেশি সময় লাগল না উচ্ছ্বাসের। জিপ থেকে নেমে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করল না। লম্বা লম্বা কদম ফেলে ঢুকে গেল আমের ভিলায়। সারাবাড়ি অন্ধকার। কুহু আর জ্যোতি নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পড়েছে। রাত দুটোর বেশি বাজে, ঘুমানোটাই স্বাভাবিক। তবে ও জানে পূর্ব দিকের সেই বিশেষ বৈঠক ঘরের আলো জ্বলছে এখনো। বাকি লোকেদের যার যার কাজে পাঠিয়ে দিয়ে ওপরে দোতলায় উঠে এলো উচ্ছ্বাস। উঠতে উঠত বুক পকেটে একবার হাত বুলালো। চেক করে নিল পেনড্রাইভটা ঠিক জায়গায় আছে কি-না।

বৈঠক ঘরের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। উচ্ছ্বাস। ওর ধারণাই ঠিক ছিল। ভেতরে লাইট জ্বলছে। উচ্ছ্বাস হালকা টোকা দিয়ে বলল, ‘আসব রাশেদ বাবা?’

‘চলে আয়।’

চির পরিচিত সেই শক্তিশালী কন্ঠের অনুমতি পেয়ে ভেতরে এলো উচ্ছ্বাস। ঘরটাতে চোখ বুলিয়ে নিল একবার। রাশেদ নিজের নির্ধারিত চেয়ারে বসে আছেন। তার ঠিক বাঁ পাশের চেয়ারটাতে বসে আছে জাফর। আর ডান পাশের একটা চেয়ার ছেড়ে বসেছে ইকবাল। তিনজনের হাতেই জ্বলন্ত সিগারেট। উচ্ছ্বাস খানিকটা এগিয়ে এসে দাঁড়াল। জাফর উচ্ছ্বাসের দিকে ভালোভাবে একবার চোখ বুলিয়ে বলল, ‘তুই ঠিক আছিস? আসার সময় কোন বাঁধা আসেনিতো? আর রুদ্র?’

‘আমি ঠিক আছি। রাস্তায় কালো একটা গাড়ি আটকেছিল। চারজন ছিল ওরা। দুজনকে মে-রে ফেলেছি, বাকি দুজন পালিয়েছে। লা-শ দুটো লোক দিয়ে নদীতে ফেলে দিয়ে এসছি। আর আসার সময় রুদ্রকে সুস্থই দেখেছি আমি। তবে হাতে গু*লি লেগেছিল। ড্রেসিং করে নিয়েছে। সব ঠিকই আছে। কিন্তু আসতে ঠিক কতক্ষণ লাগবে সেটা জানিনা।’ যান্ত্রিক ভঙ্গিতে কথাগুলো বলে গেল উচ্ছ্বাস।

ইকবাল নিজের কপালে পড়া রেখাকে আরও গভীর করে বলল, ‘কিন্তু রুদ্র থেকে গেল কেন? কাজ তো হয়ে গেছে।’

‘আমাকে কিছুই বলেনি ও। শুধু বলেছে পেনড্রাইভটা সাবধানে রাশেদ বাবার কাছে প‍ৌঁছে দিতে।’

‘পেনড্রাইভটা বের কর।’ দীর্ঘ সময় পর পূণরায় রাশেদ আমেরের সেই দৃঢ় স্বর শুনতে পাওয়া গেল। সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বুক ভরা ধোঁয়া ছাড়লেন উনি। হাত বারিয়ে দিয়েছেন উচ্ছ্বাসের দিকে। উচ্ছ্বাস বুক পকেট থেকে বের করল পেনড্রাইভটা। আস্তে করে রাশেদের হাতের ওপর রাখল। রাশেদ নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বললেন, ‘অনেক লম্বা সময় জার্নি করেছিস। যা, ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়।’

উচ্ছ্বাস মাথা নাড়ল। বেরিয়ে যেতে নিলেই রাশেদ থমথমে গলায় বলে উঠলেন, ‘আর ঘুমিয়ে পড়তে বলেছি মানে ঘুমিয়ে পড়তেই বলেছি। সকালের আগে কোথাও বেরিয়েছিস সে খবর যাতে আমার কানে না আসে।’

উচ্ছ্বাসের সুন্দর মুখখানা অন্ধকারে ছেয়ে গেল। ভেবেছিল ফ্রেশ হয়েই হসপিটালের সামনে যাবে। শুনেছিল আজ নাজিফার নাইট ডিউটি। তখন কী বলতে এসছিল কে জানে? আজ গেলে হয়তো কিছু বলতো। ব্যপারটা না জেনে তো ঘুমও হবেনা। উচ্ছ্বাসের অন্ধকারাচ্ছন্ন মুখ দেখে জাফর বলল, ‘তোর আবার কী হল?’

উচ্ছ্বাস জবাব দিল না। রাশেদ ঠোঁট থেকে সিগারেটটা নামিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললেন, ‘সময় শেষ হয়ে যাচ্ছেনা। আর কেউ কোথাও পালিয়েও যাচ্ছেনা। এখন আপাতত ঘুমিয়ে পড়, যা।’

রাশেদ কথাটা শেষ করতেই উচ্ছ্বাস অবাক হল। রাশেদ কী কিছু জানে এ ব্যপারে? কিন্তু মনের প্রশ্নটাকে মনে চেপে রাখল। চুপচাপ বেরিয়ে গেল রুম থেকে। রাশেদ হাসল, মৃদু হাসি। যা কেউ দেখতে পায়নি।

চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে গম্ভীর মুখ করে বসে আছে রুদ্র আমের। প্রিয়তা বিছানায় পা গুটিয়ে বসে আছে। ফোঁপাচ্ছে। দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে, ভয় পেয়ে গেছে মেয়েটা। মীরা ঘরময় পায়চারী করছে। গোল ফ্রেমের চশমাটা নাকের কাছে চলে এসছে। মাঝেমাঝেই থেমে যাচ্ছে; চোখ বড়বড় করে তাকাচ্ছে নিচে পড়ে থাকা লা*শটার দিকে। তারপর একটা শুকনো ঢোক গিলে আবার পায়চারী করছে। এই নিয়ে তিন গ্লাস পানি শেষ করে ফেলেছে মীরা। জীবনে প্রথম চোখের সামনে খু*ন হতে দেখল। ব্যপারটা মোটেও সহজ কথা নয়।

প্রিয়তা আর মীরা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ দুজন লোক ওদের দুজনের মুখ চেপে ধরে। মীরা কোন আওয়াজ করতে না পারলেও প্রিয়তা আওয়াজ করে ফেলেছিল। খুব সামান্য। কিন্তু সঙ্গেসঙ্গেই ওদের মুখের মধ্যে রুমাল গুজে দিল লোকদুটো। ধস্তাধস্তি করেও লোকদুটোর সাথে পেরে উঠছিল না ওরা। একজন প্রিয়তার, অপরজন মীরার হাত বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। ঠিক তখনই দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে রুদ্র। ‘থু’ মতন মৃদু একটা আওয়াজ বের হয়। সাথেসাথেই মাটিতে ঢলে পড়ে প্রিয়তাকে ধরে রাখা লোকটা। আরেকজনের দিকে পি*স্ত* ল তাক করতে গেলেই লোকটা একটা চা*কু বের। চেপে ধরে মীরার গলায়। রুদ্র দু-কদম পিছিয়ে যায়। মীরার গলায় চা*কু ধরে রেখেই গেইট অবধি নিরাপদে পৌঁছায় দ্বিতীয় লোকটা। মীরাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে রেখে দৌড়ে পালিয়ে যায় সে। রুদ্র ধাওয়া করেনি ওকে। ঐ একটা লোককে নিয়ে মাথাব্যথা করার মতো বাড়তি সময় নেই এখন। রুদ্র মীরাকে তুলে ভেতরে আনে, বিল্ডিং এর বাকিরা যাতে টের না পায়ে তাই দ্রুত ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। মীরা শুধু হা করে দেখছিল রুমে পড়ে থাকা লা*শ আর অ-স্ত্রধারী অতি সুদর্শন যুবককে। চেহারা আর ব্যক্তিত্বকে মেলানো প্রায় অসম্ভব! যদিও শুয়ে শুয়ে প্রিয়তা সব কাহিনীই খুলে বলেছিল ওকে। কিন্তু নিজ চোখে এই দৃশ্য দেখতে পাবে সেটা ভাবেনি। প্রিয়তা মোটেও অবাক হয়নি। কারণ এতক্ষণে ও বুঝে গেছে; এই লোকটার উপস্থিতি মানেই কারো না কারো লা-শ। খু-নে! আরও দু’মিনিট এভাবেই কাটল। রুদ্র এবার বেশ বিরক্ত হয়ে বলল, ‘কী ঠিক করলে? আমার হাতে আনলিমিটেড সময় পড়ে নেই তোমাকে দেওয়ার মতো।’

মীরা হাঁটা থামাল। দু সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে প্রায় দৌড়ে প্রিয়তার পাশে বসে বলল, ‘চলে যা না। দেখলি তো একটু আগে কী হল।’

প্রিয়তার একবার তাকাল রুদ্রর দিকে। তারপর আবার মীরার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমি এখনো ওনাকে বিশ্বাস করতে পারছিনা। এমনো তো হতে পারে, লোকদুটোকে উনিই পাঠিয়েছিলেন আমাকে ওনার গল্প বিশ্বাস করানোর জন্যে?’

দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে রাগ নিয়ন্ত্রণ করল রুদ্র। মেয়েটাকে এখন আরেকটা চড় মারলে কী খুব বেশি অন্যায় হবে? চড় মারাটাই কী স্বাভাবিক না? কিন্তু আবারও ধৈর্য্য ধরল রুদ্র। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, ‘এক্সাক্টলি! আমার লোককেই আমি গু-লি করে মেরে ফেলে রেখেছি। অসাধারণ বুদ্ধি তোমার। জবাব নেই। তা নাসা কবে জয়েন করছো?’

প্রিয়তা চুপ হয়ে গেল। তর্কে হেরে গিয়ে সন্তুষ্ট নয় সে। মুখ ঘুরিয়ে নিল অন্যদিকে। ঘড়ি দেখে এবার বেশ রেগে গিয়েই বলল, ‘দেখ, আমার পক্ষে আর ধৈর্য রাখা সম্ভব হচ্ছেনা। ইয়েস ওর নট?’

মীরা এবার করুণ চোখে তাকাল প্রিয়তার দিকে। অনুরোধের স্বরে বলল, ‘দেখ প্রিয়ু। এখানে এখন থাকাটা আসলেই রিস্কি। ওরা আবার আসবেনা তার কোন গ্যারান্টি আছে? এমনতো নয় যে তোকে কেউ খুঁজবে। আর আমাকেও আমার বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আসবে। তাহলে সমস্যা কী?’

প্রিয়তা মীরার দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল, ‘তুই কীকরে বিশ্বাস করছিস এই লোকটার সঙ্গে গেলে আমার কোন ক্ষতি হবেনা? গেলে আমি তোর বাড়ি যাব।’

মীরা বোঝানোর চেষ্টা করে বলল, ‘আমি বিশ্বাস করছিনা। কিন্তু এটাই সবচেয়ে বেস্ট অপশন। আমার বাড়িটাও যে ওরা খুঁজে নেবেনা তুই শিওর? এখানে থাকার চেয়ে বা আমার বাড়ি যাওয়ার চেয়ে ওনার সাথে যাওয়াটা কম রিস্কি। এখনো বুঝছিস না?’

প্রিয়তা কিছু বলল না। কিন্তু নিজের জায়গা থেকে নড়লোও না। হাত-পা গুটিয়ে কাঁদোকাঁদো মুখ করে বসে রইল। রুদ্রর মেজাজ এবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল। আর সম্ভব হলোনা নিজেকে ধরে রাখা। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল ঠিক জ্যা মুক্ত ধনুকের মতো। চমকে উঠল প্রিয়তা, মীরা দুজনেই। রুদ্র এগিয়ে গেল প্রিয়তার কাছে। হাত ধরে একটানে নামাল বিছানা থেকে। একদম ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করল, ‘যাবে?’

প্রিয়তা হতভম্ব চোখে একবার দেখল রুদ্রকে। অতঃপর চোখ সরিয়ে কোনরকম ইতস্তত করে বলল, ‘ন-না।’

ঘড় কাঁপিয়ে একটা আওয়াজ হল। থাপ্পড়ের আওয়াজ। থাপ্পড়টা নিঃসন্দেহে প্রিয়তার গালেই পড়েছে। প্রিয়তা গালে হাত দিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে আছে রুদ্র নামক নিষ্ঠুর মানুষটার দিকে। মীরা গোল ফ্রেমের চশমা দিয়ে চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে। আপাতত মূর্তি ও। রুদ্র দু আঙুল দিয়ে গালটা হালকা চুলকে নিয়ে নির্বিকারভাবে বলল, ‘এবার যাওয়া যাক?’

#চলবে…

[ বাড়িতে আসছিলাম বলে একটু ব্যস্ত ছিলাম। তাই একটা করে পর্ব দিচ্ছিলাম। কাল চলে থেকে আবার একাধিক পর্ব পাবেন। ]

#অন্তর্নিহিত_কালকূট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here