অন্তর্নিহিত কালকূট
লেখিনীতে: অনিমা কোতয়াল
৮.
রুদ্রের এমন নিষ্ঠুর, কঠোর ভাষায় করা অপমানে ভীষণ কান্না পেল জ্যোতির। কিন্তু কাঁদলোনা। হৃদয়ের গহীন থেকে আসা তীব্র কষ্টের কান্নাটাকে গিলে ফেলল সাথেসাথেই। এটা নতুন কিছুই না। যতবার জ্যোতি নিজের অনুভূতিকে রুদ্রের সামনে প্রকাশ করতে গেছে; ততবার এমনি ধারালো কথার ছু-ড়ি দিয়ে তাকে ক্ষ-ত-বি-ক্ষ-ত করেছে রুদ্র। ভেঙ্গে দিয়েছে অপার প্রেমে মোড়ানো মনটাকে। শুষে নিয়েছে সবটুকু আশা। এই আঘাত সহ্য করা এখন ওর অভ্যাস। রুদ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল জ্যোতি। আহত স্বরে বলল, ‘আমাকে সবসময় এভাবে অপমান করতে তোমার একটুও খারাপ লাগেনা, রুদ্র?’
বিরক্তিতে ‘চ’ বর্গীয় ধ্বনি করল রুদ্র। একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিল জ্যোতিকে। তোয়ালেটা তুলে আবার মুছতে শুরু করল ভেজা চুলগুলো। তীব্র বিরক্তিমাখা কন্ঠে বলল, ‘নিজে যেচেপরে অপমানিত হতে যদি তোর খারাপ না লাগে, আমার অপমান করতে খারাপ লাগার কোন প্রশ্নই নেই। তোকে শুরুতেই আমি নিষেধ করেছিলাম, এসব প্রেম-পিরিতের ন্যাকা কান্নাকাটি আমার সামনে করবিনা। কানে ঢোকে না? নির্লজ্জ মেয়েমানুষ!’
জ্যোতি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রুদ্রর দিকে। ও শুনেছিল, পুরুষ মানুষের মন নাকি পাথরে গড়া। যদিও একথার কোন যুক্তি নেই। কিন্তু জ্যোতির মনে হয়, রুদ্র নামক এই পুরুষের হৃদয় পাথরের চেয়েও কঠিন কিছু দিয়ে তৈরী। সে কারণেই হয়তো জ্যোতির উজার করে দেওয়া এক সমুদ্র ভালোবাসার একবিন্দুও উপলব্ধি করতে পারেনা সে। চুল মুছতে মুছতে হঠাৎ থেমে গেল রুদ্র। ভ্রু জোড়া কুঁচকে তাকাল জ্যোতির দিকে। আচমকা ধমক দিয়ে বলল, ‘দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার চেহারা গিলছিস কেন? বিদায় হ।’
রুদ্রের ধমকে হালকা চমকে উঠল জ্যোতি। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মাথা নিচু করল। ধীরপায়ে বের হয়ে গেল রুম থেকে। রুদ্র আর সেদিকে তাকালোই না। অসহ্য হয়ে উঠছে মেয়েটা দিনদিন। বাবা বিয়ে দিয়ে বিদায় কেন করছেনা সেটাই ভেবে পায়না রুদ্র। যত্তসব ঝামেলা। এসব নিয়ে আর ভাবল না। সোজা বিছানায় গিয়ে বসল সে। মাখল লাগানো আটটা পাউরুটি, তিনটে সেদ্ধ ডিম, আর অর্ধেক গ্লাস জুস খেয়ে বাকিসব টি-টেবিলে সরিয়ে ফেলল। এরপর সোজা হয়ে গা এলিয়ে দিল বিছানায়। সাথেসাথেই চোখ দুটো ভারি হয়ে এলো ওর। প্রচন্ড ক্লান্তিতে শরীর একদম ছেড়ে দিল। আস্তে করে চোখদুটো বন্ধ করে ফেলল রুদ্র। কয়েকঘন্টা একদম নিশ্চিতে ঘুমোবে এখন ও।
*
কিছুক্ষণ আগেই সন্ধ্যা হয়েছে। মাত্রই অফিস থেকে ফিরল রিপন গ্রুপের কর্ণধার রিপন চৌধুরী। গাড়িটা নিজের বিল্ডিং এর মধ্যে ঢোকাতেই চমকে উঠল। অচেনা একটা জীপ পার্ক করে রাখা দেখে ভীষণ অবাক হল সে। কে এসছে? যদিও তার সাথে মাঝমাঝে অনেক লোকজনই আসে দেখা করতে। কিন্তু তারাতো আগে থেকে জানিয়ে আসে। এভাবে না জানিয়ে আসার তো কথা না। দারোয়ান ঢুকতে দিল? কোন আত্মীয় এসেছে হয়তো। নয়তো গাড়ি ভেতরে ঢুকতে পারতো না। নিশ্চিন্ত হল রিপন। দারোয়ানকে কিছু জিজ্ঞেস করল না আর।
কিন্তু কাজের মেয়েটা যখন কাঁদোকাঁদো মুখে দরজা খুলল, রিপন বুঝল এভাবে নিশ্চিন্ত হয়ে ঢুকে পড়াটা মোটেও উচিত হয়নি। কিন্তু এখন দেরী হয়ে গেছে। তাই কিছু না বলে ভেতরে ঢোকে রিপন। বসার ঘরে এসেই দেখে তার বড় সোফাটায় পাশাপাশি বসে আছে দুজন যুবক। দুজনেই প্রায় সমবয়সী। একজন পায়ের ওপর পা তুলে বসে সিগারেট টানছে, অন্যজন সোফায় হেলান দিয়ে ফোন স্ক্রোল করছে। ভ্রু কুঁচকে ফেলল রিপন। সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে দেখল, ঘরের এক কোণে তার স্ত্রীকে। পাঁচ বছরের মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে আরষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অবাক হওয়ার মাত্রাটা বৃদ্ধি পেল তার। পুনরায় সোফায় বসা দুজন যুবকের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল, ‘আপনারা?’
রুদ্র ঠোঁটে সিগারেট ছোঁয়াতে গিয়েও থেমে গেল। তাকাল আটত্রিশ বছর বয়সী রিপন চৌধুরীর দিকে। সাড়ে পাঁচ ফুট হাইটের ধবধবে ফর্সা লোক। মাথায় যে টাক পড়তে শুরু করেছে সেটা কপালে দুপাশের অস্বাভাবিক ফাঁকা স্থানই বলে দিচ্ছে। রুদ্র সিগারেটটা নামিয়ে দু আঙুলের মাঝে আটকে রেখে বলল, ‘চলে এসছেন? বেশি অপেক্ষা করান নি তাহলে। বসুন।’
অবাক হল রিপন। ওনার বাড়িতে এসে ওনাকেই বলছে ‘বসুন’! যেন বাড়ির মালিক রুদ্র, আর রিপন অতিথি। তবুও কথা না বাড়িয় বসল গিয়ে সিঙ্গেল সোফায়। জিজ্ঞেস করল, ‘আপনাদের পরিচয়?’
উচ্ছ্বাস এখনো ফোনে মগ্ন। আশেপাশে কী হচ্ছে; সেসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই তার। দুনিয়া এখন উল্টেপাল্টে গেলেও তার কিচ্ছু যায় আসেনা। রুদ্র কিছুটা আড়মোড়া ভেঙ্গে রিপনের স্ত্রীর দিকে তাকাল। বলল, ‘ভাবি, কড়া করে কফি নিয়ে আসুন তো। কফি ছাড়া আড্ডা ঠিক জমেনা।’
রিপনের স্ত্রী বোকা চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল রুদ্রর দিক। এরপর একবার তাকাল নিজের স্বামীর দিকে। রিপন চোখের ইশারায় সম্মতি দিতেই সে পা বাড়ালো রান্নাঘরে। এমন সময় উচ্ছ্বাস বলে উঠল, ‘আমারটাতে সুগার কিউব দুটো ভাবি।’
তার দৃষ্টি এখনো ফোনে। দুজনের ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে রেস্টুরেন্টে খেতে এসে ওয়েটারদের অর্ডার করছে। রিপনের স্ত্রী একটু থেমে কথাটা শুনল। তারপর চলে গেল রান্নাঘরে। সে চলে যেতেই রিপন আবার প্রশ্ন করল, :বললেন না তো কারা আপনারা? এভাবে না বলেই চলে এলেন বাড়িতে? বাইরে দারোয়ান, গার্ড কেউ আটকায় নি?’
রুদ্র সিগারেটে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল, ‘এতোগুলো প্রশ্ন একসাথে করলেন? যাই হোক। একটার উত্তর দিলেই বাকি উত্তরগুলো আপনাআপনি পেয়ে যাবেন। আমি রুদ্র, রুদ্র আমের।’
চমকে উঠল রিপন। এই নামটা শুনেছে সে। অনেকবার শুনেছে। কালকেও এই ছেলেটারই ভয় দেখানো হচ্ছিল তাকে। দ্য সোলার সিস্টেম গ্রুপের লিডার, রাশেদ আমের ওরফে রাশেদ বাবার ছেলে! এই সেই রুদ্র! পরিচয়ের চেয়েও রুদ্রর বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে অবাক হল রিপন। এই ছেলেটাকে দেখে বোঝার উপায় নেই এ আন্ডারওয়ার্ল্ডের একজন নামকরা ক্রি-মি-নাল। স-ন্ত্রা-সীরাও এতো সুন্দর হয়! এতো সাক্ষাৎ দেবদূত! অথচ দেবদূতের মতো দেখতে এই ছেলেটা এতো এতো মানুষের জন্যে মৃত্যুদূত হয়ে আসে। কী আশ্চর্য! মুখ হাফ ইঞ্চির মতো হা হয়ে গেল রিপনের। তবে রাশেদের চেহারাটা মনে পড়তেই ভাবল, পঞ্চাশ পেরোনোর পরেও অমন জৌলুস সম্পন্ন যে পিতা; তার পুত্রের রূপ এরকম হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। রিপনকে এভাবে তাকাতে দেখে সামান্য হাসল রুদ্র। বলল, ‘ এবার নিশ্চয়ই বাকি উত্তরগুলো পেয়ে গেছেন, মিস্টার চৌধুরী।’
নিজেকে সামলে নিল রিপন। নিজের অবাক ভাবটা সাথেসাথেই লুকিয়ে ফেলল। এরা কেন এসেছে সহজেই বুঝে ফেলল সে। বিরক্তি আর রাগ ফুটে উঠল চেহারায়। চওড়া কপালে বিরক্তির ভাঁজ ফেলে বেশ উঁচু স্বরে বলল, ‘ আমি আগেও বলেছি, অকারণে এতোগুলো টাকা আমি দেবোনা। তাও একটা অবৈধ, বেআইনি দলকে। তারপরেও আপনারা যদি আমাকে জোর করেন, আমি পুলিশের সাহায্য নিতে বাধ্য হব।’
চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল রুদ্রের। উচ্ছ্বাসও এবার দীর্ঘ সময় পর ফোন থেকে চোখ তুলল। ঠোঁট কামড়ে ধরে রুদ্রের দিকে তাকাল একবার। এরপর আবার রিপনের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু রুদ্র হাত তুলে তাকে থামিয়ে দিল ওকে। তীক্ষ্ম চোখ দুটোয় রাগ স্পষ্ট। দুটো জিনিস রুদ্র একদমই সহ্য করতে পারেনা। তার সাথে উঁচু গলায় কথা বলা আর বিশ্বাসঘাতকতা। কিন্তু রুমের এক কোণে চোখ পড়তেই দাঁতে দাঁত চেপে, সিগারেটটা কয়েকবার নাড়িয়ে নিজেকে শান্ত করে ফেলল সে। মুখে মুচকি হাসি ফুটিয়ে রিপনের দিকে তাকাল। কী চমৎকার হাসি! ভাবল রিপন। অ্যাশট্রে না থাকায় টি-টেবিলেই সিগারেটটা নিভিয়ে ফেলে রাখল রুদ্র। রিপন সেটা খুব মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করল। কিন্তু কিছু বলল না। এরমধ্যেই রিপনের স্ত্রী ধোঁয়া ওঠা তিন মগ কফি নিয়ে হাজির হল। টি-টেবিলে মগগুলো রেখে দাঁড়াতেই রুদ্র বলল, ‘ ধন্যবাদ ভাবি।’
রিপনের স্ত্রী কিছু না বলে কাঁপা কন্ঠে বাঁ পাশের মগটা ইশারা করে বলল, ‘এটা আপনার দুই কিউব চিনি দেওয়া কফি।’
জবাবে উচ্ছ্বাসও মুচকি হাসল। রুদ্র এতক্ষণ রুমের কোণে লাল টেডিবিয়ার জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পাঁচ বছরের মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ছিল। এবার অনেকটা আদেশের সুরে বলল, ‘মেয়েটাকে নিয়ে ভেতরের রুমে চলে যান ভাবি।’ একটু থেমে আবারও বলল, ‘আমি বলেছি সেটাই আপাতত যথেষ্ট। বারবার চোখের ইশারায় স্বামীর অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।’
রিপনের দিকে তাকাতেই যাচ্ছিল মহিলা, কিন্তু রুদ্রর কথা শুনে আর তা করল না। চুপচাপ মেয়েকে নিয়ে ভেতরে চলে গেল। ভয় হচ্ছে ভীষণ। কারা এরা? কেন এসছে? তার স্বামীর কোন ক্ষতি হবেনা তো? রিপন এবার রুদ্রের দিকে তাকিয়ে নির্ভীক কন্ঠে বলল, ‘এবার কী তাহলে আমায় খুন করবেন মি. রুদ্র?’
হেসে ফেলল রুদ্র। বিদ্রুপের হাসি। হাসিটা দেখে দ্বিতীয়বারও মুগ্ধ হল রিপন চৌধুরী। কিন্তু চেহারায় তা প্রকাশ করল না। উচ্ছ্বাস গরম কফির মগটা নিয়ে হেলান দিয়ে বসল। বেশ আয়েশ করে মগে ফুঁ দিচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে ও। মনে মনে ভাবছে, নতুন নতুন এসেছো বাছাধন। তাই এতো বুলি ফুটছে মুখে। একটু পর তোমার কী অবস্থা হবে সেটা ভেবে আমার ভীষণ মায়া হচ্ছে। এখানো বোঝনি যে কার সাথে লাগতে এসছো। সো স্যাড! রুদ্র কফির মগটা হাতে নিয়ে ধীরেসুস্থে এক চুমুক দিয়ে বলল, ‘আপনার চোখে-মুখে আমার হাতে মরার কোন ভয় দেখছি না আমি মি. চৌধুরী। যদিও ভেতরে ভেতরে আপনি ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু মরার আগ পর্যন্ত সেই ভয়টাকে ভেতরে লুকিয়ে রাখার মতো সাহস আপনার আছে। আর এতো সাহসি লোকেদের মারতে ভালো লাগেনা আমার। বাই দ্যা ওয়ে, ভাবি কফিটা ভালো বানায় কিন্তু।’
নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রইল রিপন। ও যে ভেতরে ভেতরে ভয় পাচ্ছে সেটাও বুঝে ফেলেছে! অদ্ভুত তো! কিন্তু কী করতে চাইছে রুদ্র? রুদ্র একটু ঝুঁকে বলল, ‘কিন্তু! শুনেছি যার প্রাণের ভয় থাকেনা, তার মানের ভয় ভীষণ থাকে।’
রিপন এখনো তাকিয়ে দেখছে রুদ্রকে। রুদ্রর কথা তার বোধগম্য হচ্ছেনা। রুদ্র রিপনের অবস্থাটা বুঝতে পেরে কফিতে দ্বিতীয় চুমুক দিয়ে বলল,
‘ বুঝতে পারছেন না তাইনা? ফেয়ার ইনাফ! পারার কথাও না। আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।’
উচ্ছ্বাসের দিকে হাত বাড়াতেই উচ্ছ্বাস কফির মগে চুমুক দিতে দিতে ফোনটা এগিয়ে দিল রুদ্রকে। রুদ্র ফোনটা নিয়ে কিছু একটা করল। এরপর স্ক্রিনটা ঘুরিয়ে ধরল রিপনের দিকে। নিরুৎসাহ নিয়ে স্ক্রিনে তাকালেও কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই চোখ কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম হল রিপনের। এ কীকরে সম্ভব! রিপনের স্পষ্ট মনে পরল তিনদিন আগে বিজনেস পার্টি শেষে, দ্য ওয়েস্টিন হোটেলের কোন এক রুমে নিজের সুন্দরী এসিস্টেন্ট এর সাথে অবৈধ কাজে লিপ্ত হওয়ার কথা। কিন্তু এসব ভিডিও কে করেছে? আর সেই ভিডিও রুদ্রের কাছে কীকরে এলো? গলা শুকিয়ে এলো রিপন চৌধুরীর। এতক্ষণের দৃঢ়, সাহসি চেহারায় সামান্য বিচলিত ভাব দেখা গেল এবার। রুদ্র ঠোঁটে বিদ্রুপের হাসিটুকু বজায় রেখেই বলল, ‘লজ্জা পেলেন? লজ্জা পাবেননা। আমার সামনেতো একদমই না। আমি দুধে ধোয়া তুলসী পাতা মোটেও নই। তবে সমস্যাটা হল, আমি খারাপ সেটা সবাই জানে। কিন্তু আপনাকে তো সবাই ভদ্রলোক বলেই মানে। তাইনা?’
রুদ্রর কথা শুনে শুকনো দুটো ঢোক গিলল রিপন। সেটা দেখে রুদ্র যেন খুব মজা পেল। গলার স্বর খানিকটা নিচু করে বলল, ‘ভেতরে আপনার স্ত্রীও আছেন। তার কাছে আপনি নিশ্চয়ই ‘পতি পরম গুরু’ টাইপের স্বামী। এই ভিডিও টা দেখলে কী ভাববে বলুনতো? আর যদি সোসাল মিডিয়ায় চলে যায়? আপনিতো রাতারাতি স্টার হয়ে যাবেন। কী বলেন? ফেমাস করে দেই আপনাকে?’
কপালে এবার বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে ব্যবসায়ী রিপনের। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে কিছু একটা ভাবতে লাগল সে। রুদ্র কফির মগে চুমুক দিতে দিতে দেখছে রিপনকে। চোখে এখনো বিদ্রুপের হাসি খেলছে ওয। এই দাম্ভিক ব্যবসায়ীর এতক্ষণের সাহস আর দাপট গুড়িয়ে দিতে পেরে চরম আনন্দিত সে। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর রিপন চৌধুরী নির্বিকার কন্ঠে বলল, ‘আমি আপনাদের কথামতো টাকা দিচ্ছি মি. রুদ্র। দয়া করে ভিডিওটা ডিলিট করে দিন।’
উচ্ছ্বাস হাসল। কফির মগে আঙুল দিয়ে তবলার মতো করে আওয়াজ করার চেষ্টা করল মনের আনন্দে। রুদ্র কফির মগটা টি-টেবিলে রেখে বাঁকা হেসে রিপনের দিকে তাকাল। শীতল গলায় বলল, ‘ এখন তো শুধুমাত্র দু কোটিতে আমার মন ভরবেনা চৌধুরী।’
রুদ্রের থমকে গেল রিপন। বিষ্মিত কন্ঠে বলল, ‘মানে? দু কোটিই তো চেয়েছিলেন আপনারা।’
রুদ্র টেবিলে রাখা কফির মগের দিকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বলল, ‘কফিটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। শুরু করুন।’
রিপন চৌধুরী চিন্তিত মুখে আবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল। ব্যস্ত হাতে তুলে নিল কফির মগটা। এরপর অধৈর্য দৃষ্টিতে রুদ্রের দিকে তাকাতেই রুদ্র বলল, ‘আমার এবার আপনার গোটা কম্পানিটা চাই চৌধুরী। রিপন গ্রুপটাই চাই।পেপার সব রেডি করে নিয়ে এসছি আমি। আপনি ভদ্রলোকের মতো সাইন করে দিলেই হবে।’
#চলবে…