অন্তর্নিহিত কালকূট
লেখনীতে: অনিমা কোতয়াল
৩৭.
রাত বাজে আড়াইটা। কিছুক্ষণ আগেই বার থেকে অর্ধমাতাল হয়ে ফিরেছে উচ্ছ্বাস। ঘরটা অন্ধকার রেখেই গা এলিয়ে দিয়েছে বিছানায়। সঙ্গে সঙ্গেই ঘুম এসে ভর করল দুচোখে। শোয়ার ধরণটাও অদ্ভুত। হাঁটুর নিচের অংশটা বিছানার বাইরে, হাত দুটো ‘হ্যান্ডস আপ’ করার ভঙ্গিতে তুলে উপুড় হয়ে পড়ে রইল। চোখে ঘুমটা একটু ভালোভাবে ধরা দিতেই বিরক্তিকর শব্দে বেজে উঠল সেলফোন। অর্ধঘুমেই বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ফেলল উচ্ছ্বাস। ঘুমের ঘোরে ভেবে নিলো ফোনটা নিশ্চয়ই রুদ্র করেছে। চোখ বন্ধ রেখেই মুখ দিয়ে বিরক্তির ‘চ’ বর্গীয় আওয়াজ করল। চোখ খুলল না। কয়েক সেকেন্ড হাতরে খুঁজে নিল ফোনটা। রিসিভ করে কানে ধরে বলল, ‘ শালা ইতর! বউ পাওয়ার খুশিতে পাগল হয়ে গেছস? কী সমস্যা? গুলশান আসা অবধি সহ্য হচ্ছেনা? এখনই বাসর-টাসর সেড়ে ফেলতে চাস নাকি? রঞ্জুকে বল! ফুল দিয়ে সাজিয়ে গাড়িটাকেই বাসর ঘর বানিয়ে দেবে। তারপর যতখুশি ইয়ে কর। মাঝরাতে আমার ঘুমের পিণ্ডি চটকাচ্ছিস কোন দুঃখে?’
উত্তরে পাল্টা গালির জন্যেই অপেক্ষা করছিল উচ্ছ্বাস। কিন্তু তার বদলে শুনতে পেলো মেয়েলি কন্ঠে ফুঁপিয়ে কাঁদার শব্দ। উচ্ছ্বাস চমকালো। ঘুম পালিয়ে গেল চোখ থেকে। এক লাফে উঠে বসল। ব্যস্ত কন্ঠে বলল, ‘ নাজিফা! কী হয়েছে? কাঁদছো কেনো?’
‘ ব- বাবা। হসপিটাল..’
অস্ফুট স্বরে এইটুকু বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল মেয়েটা। কান্নার দমকে কথা বলতে পারছেনা। উচ্ছ্বাস স্তব্ধ হয়ে গেল। নাজিফার মতো শক্ত, স্পষ্টবাদী, ব্যক্তিত্বসম্পূর্ণ মেয়ের ফোন করে এভাবে কেঁদে ফেলা মানে সামান্য কিছু নয়। বেশ বড়সর কিছু ঘটে গেছে।
ভোররাত। হসপিটালের করিডরের লম্বা বেঞ্চটাতে বসে আছে উচ্ছ্বাস। চোখজুড়ে প্রচন্ড ক্লান্তি আর ঘুম। হাঁটুর ওপর দুই কুনুইয়ের ভর দিয়ে মুখে হাত রেখে বসে আছে। অপেক্ষা করছে নাজিফার জন্যে। কিছুক্ষণ আগের কথা মাথায় আসতেই দীর্ঘশ্বাস ফেলল। নাজিফার মুখে হসপিটাল শব্দটা শুনে আর এক মুহূর্ত দেরী করেনি উচ্ছ্বাস। কোনদিকে না তাকিয়ে ঐ অবস্থাতেই ছুটে এসেছে। এসে জানতে পারল নাজিফার বাবা ব্রেইন স্ট্রোক করেছে। অবস্থা ভালো না। হসপিটালে উচ্ছ্বাসকে দেখেই কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল নাজিফা। হঠাৎই দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল ওর বুকে। যেন এমনই একটা ভরসার বুক খুঁজছিল সে এতক্ষণ। যেখানে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে কাঁদতে পারবে। নিজের সব দুঃখ ঢেলে দিয়ে হালকা হবে। প্রায় পাঁচ মিনিটের মতো উচ্ছ্বাসের বুকে মাথা রেখে কেঁদেছে নাজিফা। প্রথম দুই মিনিট থমকে দাঁড়িয়ে ছিল উচ্ছ্বাস। কী করবে বুঝতে পারছিল না। কিন্তু পরে বিস্ময় নিয়েই নিজেও আলতো করে হাত রাখে নাজিফার পিঠে। মুখে কিছু না বলেও ভরসার আলিঙ্গনে সান্ত্বনা দেয়।
উচ্ছ্বাসের ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে করিডরে উপস্থিত হল নাজিফা। একদম স্বাভাবিক লাগছে ওকে এখন। কে বলবে একটু আগেই এই মেয়েটা কেঁদেকেটে বুক ভাসাচ্ছিল! কিন্তু উচ্ছ্বাস জানে, সেই কান্না কতোটা ভয় আর দুঃখের ছিল। বাবাকে খুব ভালোবাসে মেয়েটা। হয়তো সব মেয়েই বাসে। নাজিফা সোজা এসে বসল উচ্ছ্বাসের পাশে। ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেলে হেলান দিল দেয়ালে। কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকল দুজনেই। নীরবতা ভেঙ্গে উচ্ছ্বাস বলল, ‘কেমন আছেন আঙ্কেল?’
নাজিফা উচ্ছ্বাসের দিকে না তাকিয়েই বলল, ‘আপাতত ভয়ের কোন কারণ নেই। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা পাওয়ায়, এ যাত্রায় বেঁচে গেছেন।’
আবারও কিছুক্ষণের নীরবতা। এবারও নিরবতা ভাঙল উচ্ছ্বাস। বলল, ‘তোমার ভাইয়েরা কেউ নেই বাড়িতে?’
‘ না। ‘
‘ আন্টি কী ভেতরে?’
‘ হ্যাঁ।’
‘ ওনার খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই? খাবার আনবো?’
‘ মা কিছু খাবেনা এখন।’
‘ তুমি?’
‘ আমিও না।’
এবার খানিকটা ইতস্তত করছে উচ্ছ্বাস। কেমন উশখুশ করছে ভেতর ভেতর। নাজিফা হেলান দেওয়া অবস্থাতেই আড়চোখে তাকাল উচ্ছ্বাসের দিকে। একটানা পাঁচ সেকেন্ডের মতো তাকিয়ে থেকে বলল, ‘এসব উল্টাপাল্টা উত্তর জানা প্রশ্ন না করে আসলে যা বলতে চাইছো বলে ফেলো। বাঘিনী নই আমি। খেয়ে ফেলবো না তোমাকে।’
তার চেয়ে কম কী? কথাটা মনে মনে বললেও, মুখে বলল, ‘আমাকে কেন ডাকলে? মানে, তুমিতো নিজেই অ্যাম্বুলেন্স, ভর্তি, সবকিছুর ব্যবস্থা করেই ফেলেছিলে। আমারতো কোন প্রয়োজনই পড়ল না। বসে থাকা ছাড়া।’
নাজিফা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল, ‘ আমি একজন নার্স। এসব কারণে অন্যকারো হেল্প নেব কেন?’
উচ্ছ্বাস অবাক হল। ভ্রুকুটি করে বলল, ‘তাহলে? ডাকলে কেন?’
নাজিফা এবার সরাসরি উচ্ছ্বাসের চোখে চোখ রাখল। স্থির কন্ঠে বলল, ‘ এটাও তোমাকে বলে দিতে হবে?’
‘ ডাকলে অথচ কারণ বলবে না?’
নাজিফা এবার ভালোভাবে ঘুরে বসল উচ্ছ্বাসের দিকে। পা থেকে মাথা অবধি পর্যবেক্ষণ করল। অতঃপর হাত দিয়ে উচ্ছ্বাসের চুলগুলো ঠিক করতে করতে বলল, ‘ বলবো। যদি আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।’
‘ কী প্রশ্ন?’ সন্দিহান হয়ে জানতে চাইল উচ্ছ্বাস।
‘ আমার একটা ফোন পেয়ে এমন পাগলের মতো দৌড়ে চলে এলে কেন? নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছো? এলোমেলো চুল, কোচকানো গেঞ্জি, বা পায়ে প্যান্ট খানিকটা বেশি ওপরে তোলা। আমার একটা কলে জগৎ ভুলে গেলে?’
উচ্ছ্বাস বাকরুদ্ধ। নাজিফা ওর চোখে চোখ রেখে ভ্রু নাচাল। উচ্ছ্বাস নড়েচড়ে বসল। অস্থির লাগছে হঠাৎ। ব্যস্ত হাতে বাঁ পায়ের প্যান্ট নামাতে নামাতে দ্রুত কথা ঘুরিয়ে বলল, ‘ চা খাবে? আনবো?’
ভ্রু জোড়া কুঁচকে চোখ ফিরিয়ে নিল নাজিফা। কিছু বলল না। উচ্ছ্বাস উত্তরের অপেক্ষা না করে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেল করিডর ছেড়ে। অজানা আশঙ্কায় হঠাৎ বুক কাঁপছে ওর। কোনভাবে নাজিফা ওকে ভালোবেসে ফেলছে না তো? ও তো এমন কোন ইঙ্গিত কোনদিনও দেয়নি নাজিফাকে। ও তো কোনদিন এটাও চায়নি যে নাজিফার সাথে ওর সরাসরি কখনও কথা হোক। কীভাবে কী হয়ে গেল, নিজেও বুঝে উঠতে পারেনা। হঠাৎই নাজিফার নিজে থেকে কথা বলতে আসা, নাম্বার দেওয়া। শুধু শিডিউল জানতে করা কলগুলো কবে যে বাড়তি আলাপের স্তরে পৌঁছে গেল নিজেও বোঝেনি উচ্ছ্বাস। হঠাৎ কেমন কেঁপে উঠল বুকটা। না চাইতেও নাজিফাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ফেলেছে ও। ভুল হয়ে গেল নাতো?
–
অন্ধকার কেটে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে রাস্তা, গাছপালা, ভবন। পাখিদের কিচিরমিচির ধ্বনি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দক্ষিণ-পশ্চিমা সতেজ হাওয়ায় প্রাণ জুড়িয়ে যায়। প্রায় ফাঁকা রাস্তা দিয়ে মাঝারি গতিতে এগোচ্ছে রুদ্রর জিপ। পাশে প্রিয়তা। ওদের পেছন পেছন আসছে আরেকটা গাড়ি। রুদ্র মনের সুখে গাড়ি চালাচ্ছে। মাঝেমাঝে হালকাপাতলা শিস বাজাচ্ছে। প্রিয়তা ভ্রুকুটি করে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে। রাগে দুঃখে গা জ্বলে যাচ্ছে ওর। রুদ্রর শিসের আওয়াজ সেই রাগে ঘিয়ের কাজ করছে। নিরুপায় হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বসে আছে চুপচাপ।
হঠাৎ কিছু একটা ভেবে উচ্ছ্বাসের নাম্বারে কল করলো রুদ্র। ব্লুটুথ কানেক্ট করে আবার ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো, ‘ কী ব্যপার গুরু? বউ পাশে থাকতেও সকাল সকাল আমার কথা মনে পড়ে কেন?’
রুদ্র ভ্রু কুঁচকে সন্দিহান কন্ঠে বলল, ‘ আগে বল তুই কোন জায়গায় কোন অকাজ-কুকাজ করছিস? এতো ভোরে যে জগিং করতে উঠিস নি তা আমি জানি। কেইস কী?’
‘ঘরে বউ নেই। অকাজ-কুকাজতো বাইরেই করতে হবে বস।’
‘থাবড়া খাওয়ার ভীষণ সখ হয়েছে তোর তাইনা?’
উচ্ছ্বাস চায়ের দোকানে ছিল। দু কাপ চা অর্ডার দিয়েছে। এক হাতেই ওয়ান টাইম দুটো চায়ের কাপ ধরে বলল, ‘একদমই না। আয় তারপর বলছি সব। তুই এতো সকালে কী মনে করে? কোন ঝামেলা হয়েছে? ওদিকে সব ঠিক? প্রিয়তা ঠিকঠাক আছে?’
রুদ্র আড়চোখে একবার তাকাল প্রিয়তার দিকে। বাতাসে বারবার মুখের ওপর পড়ছে চুলগুলো। বিরক্ত হয়ে তা সরাচ্ছে মেয়েটা। রুদ্র মৃদু হেসে বলল, ‘আছে। নিয়ে আসছি। আধঘন্টার মধ্যে বনানী থাকব।’
‘ গুলশান আসবি না?’
‘ না, বাবা বলেছে বিয়ের পরেই প্রিয় আমের ভিলায় পা রাখবে। এই ছ’দিন বনানীতেই থাক। যে জন্যে কল করলাম। অনেকদিন হলো ঐ ফ্ল্যাটে যাওয়া হয়না আমার। তুই ইমিডিয়েটলি দুজন লোক পাঠিয়ে ফ্ল্যাটটা পরিষ্কার করে রাখতে বল। আর দুজন মেয়ে মেইডের ব্যবস্থা করে দে। এই পাঁচদিন ওর সঙ্গে থাকার জন্যে।’
‘ আর কিছু, স্যর?’ সকৌতুকে প্রশ্ন করল উচ্ছ্বাস।
‘ না বৎস। আপাতত এতোটুকু করে ধন্য করো আমায়।’
‘ অবশ্যই। আপনাদের সেবা করার জন্যেই আমার জীবন নিবেদিত। রাখি স্যার।’
মৃদু হেসে কল কাটল রুদ্র। ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ মীরা ছাড়া তোমার কাছের কোন বন্ধুবান্ধব আছে প্রিয়? বিয়েতে ইনভাইট করার মতো?’
প্রিয়তা চোখ কটমটে করে তাকাল রুদ্রর দিকে। ‘ খুব আমোদে আছেন মনে হচ্ছে?’
‘ তা আছি বোধ হয়। কী জানি? হঠাৎ নিজেই নিজেকে চিনতে পারছি না। তুমি মানুষ নও, নিশ্চয়ই কোন মায়াকন্যা। হিপনোটাইজ করছো নাকি আমাকে? অদ্ভুত কাজকর্ম করছি।’
প্রিয়তা হতাশ ভঙ্গিতে বাইরে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এর সাথে কথা বাড়ানোর ধৈর্য্য নেই ওর।
জীপ থামে বনানীর সেই ফ্ল্যাটের সামনে। রুদ্র সোজা কোলে করে ভেতরে নিয়ে এসেছে প্রিয়তাকে। প্রিয়তার ছোটাছুটি, নিষেধ-বারণ কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। রুদ্রর গায়ের জোরের কাছে প্রিয়তা পিঁপড়া বৈ কিছুই নয়। দেখে অন্তত তাই মনে হয়। প্রিয়তাকে সোজা বেডরুমে নিয়ে গেল রুদ্র। বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসল। নরম গলায় বলল, ‘সারারাত ঘুমাও নি। খাবার বানাতে বলেছি। খেয়ে ঘুমিয়ে নাও। দুজন মেয়ে আছে এখানে। ওরা দুপুরে ডেকে দেবে। কিছু লাগলে ওদের বলবে, কেমন?’
প্রিয়তা এবার অসহায় গলায় বলল, ‘আমাকে যেতে দিন। বিয়ে করবোনা আমি আপনাকে।’
রুদ্র মুচকি হাসল। হাত দিয়ে প্রিয়তার কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিতে বলল, ‘ কিছু করার নেই প্রিয়। আর কোন অপশন নেই তোমার কাছে। বিশ্বাস করো, আমার কাছেও নেই। আমি যদি তোমাকে এখন ছেড়েও দেই; কালকের মধ্যে বাবা লোক লাগিয়ে আবার তোমাকে তুলে নিয়ে আসবেন। সুতরাং আমাদের বিয়ে করতেই হচ্ছে। তাছাড়া আমারও তোমাকে ছেড়ে দেওয়ার কোন ইচ্ছে নেই এখন আর। ছাড়ছিও না। সুতরাং সেরকম কিছু হওয়ার সম্ভাবনাও নেই।’
প্রিয়তার কেঁদে ফেলার মতো অবস্থা হলো এবার। বাচ্চাদের মতো করে বলল, ‘ আমি পুলিশ কেইস করব আপনাদের বাপ-ছেলের নামে। একটা মেয়েকে জোর করে তুলে এনে, এভাবে বিয়ে করতে বাধ্য করতে পারেন না আপনারা।’
রুদ্র জবাব দিলোনা। প্রিয়তা কথাটাকে নেহাতই ছেলেমানুষী কথার মতো এড়িয়ে গিয়ে উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আজ হয়তো আমি আর আসব না। কাল কথা হবে।’
এরপর প্রিয়তার দিকে ঝুঁকে বলল, ‘আর পালানোর চেষ্টা করোনা। ফ্ল্যাটের বাইরে আমার লোকেরা পালা করে চব্বিশ ঘন্টাই পাহারা দিচ্ছে। অযথা শক্তি নষ্ট করে কী লাভ?’
প্রিয়তা বোকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রুদ্রর দিকে। মাথা নামিয়ে ওর কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে দিল রুদ্র। চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলল প্রিয়তা। রুদ্র প্রিয়তার কানের কাছে ঠোঁট ঠেকিয়ে বলল, ‘তাছাড়াও। তুমি যেদিকেই পালাও; তোমার প্রতিটা রাস্তা আমার কাছে এসেই থামবে। প্রিয় নামক এই পথ যেদিকেই যাক, গন্তব্য কেবল একটাই। রুদ্র আমের।’
কথাটা বলে সোজা হয়ে দাঁড়াল রুদ্র। প্রিয়তাকে দেখতে দেখতে পা পিছিয়ে গেল দরজা অবধি। অতঃপর ঘুরে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। ঠোঁটে মুচকি হাসি। এদিকে চাদর খামচে এখনও চোখ বুঝে আছে প্রিয়তা। অজান্তেই কখন যেন ঠোঁটে ফুটে উঠেছে মুচকি এক টুকরো হাসি।
–
সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে ঘুম ভাঙল রুদ্রর। সকালে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বাইরে খেয়ে নিয়েছিল। ওখান থেকে সোজা আমের ভিলায় ফিরেছে। নিজের ঘরে এসে গা এলিয়ে দিয়ছে বিছানায়। বিগত বারো দিনের সকল মানসিক অবসাদ, ক্লান্তি যেন এক ঘুমেই ধুয়ে মুছে ফেলতে চায় ও। বরাবরের মতো সারাদিনে কেউ ওর বিশ্রামে ব্যঘাত ঘটানোর সাহস পায়নি। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। লাইট জ্বালানো হয়নি। রুমটা হালকা অন্ধকার তাই। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসল রুদ্র। বিছানার কোণায় চোখ পড়তেই মৃদু হাসল রুদ্র। সেখানে গালে হাত দিয়ে বসে আছে কুহু। ছোট্ট বাচ্চা বাচ্চা মুখটাতে বাচ্চা ভাবটা যেন কয়েকগুন বেড়ে গেছে। মিষ্টি লাগছে ভীষণ। রুদ্রকে উঠতে দেখে কুহুও সোজা হয়ে বসল। রুদ্র নিজের এক হাত বাড়িয়ে দিল। ইশারায় কাছে ডাকল কুহুকে। কুহু দ্রুত এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল ভাইকে। বোনের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে রুদ্র বলল, ‘সন্ধ্যা সন্ধ্যা আমার ঘাড় মটকাতে এসছিস নাকি? পেত্নী।’
কুহু হালকা করে কিল মারল রুদ্রর বুকে। সোজা হয়ে বসে চোখমুখ অদ্ভুতভাবে বিকৃত করে বোঝাল, ‘রাক্ষস!’
রুদ্র হাসল। কুহুও ঠোঁট চেপে হাসল। হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠল ওর চোখজোড়া। আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল মুখমণ্ডল। উত্তেজিত হাতে বোঝালো, ‘তুমি সত্যিই বিয়ে করবে? তুমি? আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।’
রুদ্র কুহুর বেনুনী হালকা করে টেনে ধরে বলল ‘কেন? আমার আগে তুই বিয়ে করার প্লান করেছিলি নাকি?’
কুহু ঠোঁট ছাড়িয়ে নিল নিজের বেনুনী। ইশারায় বলল, ‘আমাকে তাড়াতে পারলেই তো বাঁচো।’
রুদ্র হেসে বিছানা থেকে নামল। ফোনটা হাতে নিয়ে সময় দেখল। কুহু তাকিয়ে আছে রুদ্রর দিকে। রুদ্র সেটা লক্ষ্য করে ভ্রু নাচিয়ে জানতে চাইল, কী হয়েছে? কুহু ইশারায় বলল, ‘জ্যোতি আপুর সাথে কথা বলবে না?’
রুদ্র খানিকটা চমকে উঠল। এতোসব চাপের মধ্যে জ্যোতির কথা ভুলেই গিয়েছিল ও। মেয়েটার সাথে কথা বলা দরকার। মনে কতখানি জখম নিয়ে বসে আছে কে জানে? কুহু গোমড়া করে তাকাল। ইশারায় বলল, ‘তোমাদের দুজনকে একসঙ্গে বেশি মানায় ভাইয়া। অন্যকাউকে এতো ভালো মানাবেনা তোমার সাথে।’
রুদ্র জবাব দিলোনা। গায়ে একটা শার্ট জড়িয়ে বোতাম লাগাতে লাগাতে বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে।
–
গোধূলির লালচে আকাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জ্যোতি। উদাস চোখে লক্ষ্য করছে প্রকৃতিকে। পাখিরা ঝাকে ঝাকে ফিরে যাচ্ছে নিজেদের নির্দিষ্ট নীড়ে। অথচ কালো আর লালচে রঙের সংমিশ্রণে সুসজ্জিত মেঘগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে উদ্দেশ্যহীনভাবে। মানুষের জীবনটাও বুঝি এরকমই। যাদের নীড় আছে, তারা দিনশেষে ফিরে যায় তাদের নীড়ে। আর যাদের নেই, তারা এভাবেই ভেসে বেড়ায়। উদ্দেশ্যহীনভাবে।নিরন্তর। কথাটা ভাবতে গিয়ে দু চোখ বেয়ে অশ্রুধারা নেমে এলো।
কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠল জ্যোতি। ঘাড় ফিরয়ে দেখল রুদ্র দাঁড়িয়ে আছ। গম্ভীর মুখে। জ্যোতি দ্রুত চোখ মুছল। জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলল, ‘উঠে গেছো? কফি লাগবে? ইশ! সন্ধ্যা হয়ে গেছে না? আমি খেয়ালই করিনি। সরি হ্যাঁ। আমি নিয়ে আসছি এক্ষুনি।’
কথাগুলো বলে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে চলে যাচ্ছিল জ্যোতি। রুদ্র বলল, ‘আমি কফি চাইতে আসিনি।’
জ্যোতি দাঁড়িয়ে গেল। মৃদু হেসে ঘুরে তাকিয়ে বলল, ‘সামনের সপ্তাহ থেকে তো বউয়ের হাতের কফিই খাবে। এই সপ্তাহটা না হয় আমিই খাওয়ালাম।’
রুদ্র এগিয়ে এসে জ্যোতির মুখোমুখি দাঁড়াল। গম্ভীর কিন্তু শান্ত স্বরে বলল, ‘রেগে আছিস?’
জ্যোতি চোখ সরিয়ে নিল। কিছু বলল না। রুদ্র বলল, ‘আমার ওপর রাগ বা অভিমানের কারণ নেই জ্যোতি। এমন নয় যে আমি তোকে ঠকিয়েছি। প্রেম, ভালোবাসা, অনভূতি যাই থাক সবটাই তোর নিজের ছিল। সেখানে কোথাও আমি ছিলাম না। থাকাতো দূরের কথা, কোনদিন তেমন কোন ইশারাও করিনি আমি তোকে। বরং উল্টোটাই করেছি। তুই আমায় ভালোবেসেছিস সেটা তোর দোষ না। ঠিক তেমনই আমি তোকে ভালোবাসিনা, সেটাও আমার দোষ হতে পারেনা।’
ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল জ্যোতি। রুদ্রর চোখে চোখ রেখে বলল, ‘রুদ্র আমের কৈফিয়ত দিচ্ছে?’
রুদ্রর চোয়ার শক্ত হয়ে উঠল। শক্ত কন্ঠে জবাব দিল, ‘ না। রাশেদ আমের ছাড়া অন্য কাউকে কৈফিয়ত দেই না আমি। শুধু বলে রাখছি। তোর কিছু কাজে আমি বিরক্ত হতাম ঠিকই, কিন্তু তোকে আমি পছন্দ করি। হয়তো ভালোও বাসি। কিন্তু সেটা শুধুই পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে। অন্যকিছু না। সেকারণেই বলছি। মরিচিকার পেছনে ছুটিস না। গুছিয়ে নে জীবনটা।’
জ্যোতির হঠাৎ কান্না পেল। রুদ্রর কোন কথাই ওর মন বা মস্তিষ্ক বুঝলো না। অকারণ রাগ-অভিমানে বিষিয়ে গেল মনটা। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকালো। আক্রোশ নিয়ে বলল, ‘মিথ্যুক তুমি! তুমি বলেছিলে কাউকে ভালোবাসবে না। কিন্তু তুমি বেসেছো। ঠক, প্রতারক তুমি একটা।’
রুদ্র এবার বিরক্ত হলো। এসব যুক্তিহীন কথার কোন অর্থ নেই। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বলল, ‘ হ্যাঁ আমি বলেছিলাম কখনও কাউকে ভালোবাসব না। কিন্তু তোকে এই নিয়ে কোন প্রতিশ্রুতি দেই নি। নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম আমি । আর সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছি। না চাইতেও হেরে গেছি। প্রথমবার। নিজেরই কাছে। কিন্তু সেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত বোঝাপড়া জ্যোতি।’
জ্যোতি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রুদ্রর দিকে। রুদ্রও চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াল।
‘ মেয়েটা আমার চেয়েও সুন্দরী?’
হঠাৎ জ্যোতির এমন কথায় পা থেমে গেল রুদ্রর। জ্যোতি এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘কী হল বলো? আমার চেয়েও সুন্দরী মেয়েটা? ওর ফিগার, শরীরের প্রতিটা ভাজ বুঝি আমার চেয়েও বেশি আর্কষণীয়? বলো? কী দিয়ে আকৃষ্ট করল ও তোমাকে? কী পেয়েছো ওর মধ্যে যা আমার মধ্যে পাওনি? ছুঁয়েছো ওকে? আমাকে ছুঁয়েও দেখোনি। তাহলে? বলো না? কী দিয়ে এমন খুশি করল ও তোমাকে?’
চড় মারার উদ্দেশ্যে হাত তুলেও নিজেকে সামলে নিল রুদ্র। রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল। জ্যোতির দিকে ভয়ানক দৃষ্টি ফেলে শান্ত স্থির গলায় বলল, ‘তোর জায়গায় অন্যকেউ এমন কথা বললে একটা বু-লে-ট খরচ করতে খুব বেশি ভাবতে হতোনা আমাকে। প্রিয়র সম্পর্কে এধরণের কথা মানতে রাজি নই আমি। কিন্তু তোকে ছেড়ে দিচ্ছি, কারণ তোর প্রতি একটা সফ্ট কর্ণার আছে আমার। সে জন্যই নিজে থেকে তোর কাছে এসেছিলাম কথা বলতে। নিজের দোষে সেই জায়গাটা নষ্ট করিস না। আমের ভিলার বাকি সবার মতো তুইও আমার কাছে স্পেশাল।’
কথাটা বলে হনহনে পায়ে ছাদ ত্যাগ করল রুদ্র। জ্যোতি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলল। কে এই মেয়ে! এতো বছরেও জ্যোতি যেই পাথরকে গলাতে ব্যর্থ হয়েছে; সেই পাথরকে এতো অনায়াসেই গলিয়ে দিল। এই অসাধ্য সাধন কে করল? কীকরে করল? কেন করল? চেষ্টা করেও ব্যপারটা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেনা। রুদ্রকে হারানোর যন্ত্রণা ওকে শেষ করে দিচ্ছে। ভেতরটা জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে। গলা ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। সবকিছু বিষাক্ত লাগছে ওর।
–
বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে প্রিয়তা। ফোন স্ক্রোল করছে। তবে ফোনের দিকে বিশেষ মনোযোগ নেই ওর। আড়চোখে বারবার তাকাচ্ছে দরজার দিকে। নিজের অজান্তেই রুদ্রর জন্যে অপেক্ষা করছে বোধ হয়। সেইযে গতকাল সকালে ওকে এখানে রেখে বেরিয়েছে, এখনো আসেনি। বেলা এগারোটা বাজতে চলল। দুজন মেয়ে সেই কাল থেকে একেবারে রাণীর মতো সেবা করে চলেছে ওর। এক গ্লাস পানিও নিজের হাতে নিয়ে খেতে পারছেনা। কী হচ্ছে, কী হতে চলেছে ও নিজেই বুঝে উঠতে পারছেনা। সত্যিই কী পাঁচদিন পর ওর আর রুদ্রর বিয়ে হবে? রুদ্র আমেরের স্ত্রী হবে ও? কিন্তু ও নিজে কী চায়? নিজেও বুঝতে পারছে কী? কিছু কথা মাথায় ঘুরপাক খেতেই কেমন দোটনায় পড়ে যাচ্ছে ও। এই বারোদিনের বিচ্ছেদের মধ্যেই তৈরী হয়েছে দোটানার এই অদৃশ্য দেয়াল। গোমড়া মুখে ফোনটা সাইডে ছুড়ে রাখল প্রিয়তা। হাঁটু গুটিয়ে দু গালে হাত রেখে বসে রইল।
হঠাৎ দরজার বাইরে থেকে দৃঢ়, গম্ভীর, পুরুষালি কন্ঠে কেউ বলে উঠল, ‘ আসব?’
চমকে উঠল প্রিয়তা। হঠাৎ এমন গম্ভীর শব্দের আক্রমণে ভয় পেয়েছে। তাকিয়ে দেখল, অফ হোয়াইট রঙের পাঞ্জাবি পড়া এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। গালে চাপ দাড়ি, চকচকে প্রশস্ত কপাল, ব্যাক ব্রাশ করা চুল। উচ্চতা প্রায় রুদ্রর মতো। সুঠাম শরীর। যেন আরও পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর পরের রুদ্রকে দেখতে পাচ্ছে প্রিয়তা। প্রিয়তা জানে ইনিই রুদ্রর বাবা। রাশেদ আমের। রুদ্র বলেছিল ওর বাবার বয়স বোঝা যায়না। বিস্ময় কাটতেই ঝট করে উঠে দাঁড়াল প্রিয়তা। ওড়না ঠিক করে আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। রাশেদ ভেতরে আসলেন। দৃঢ় চলনে এসে বসলেন বিছানার একপাশে। প্রিয়তার উদ্দেশ্য বললেন, ‘বসো।’
প্রিয়তা কয়েক মুহূর্ত সংকোচ করে শেষে বসল। হাত-পা ঘেমে উঠেছে ওর। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। কী করবে বুঝতে পারছে না। রাশেদ ঘরের চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললেন, ‘আমি রুদ্রর বাবা। রাশেদ, রাশেদ আমের।’
‘ আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।’ এতক্ষণে গলা দিয়ে আওয়াজ বের হল প্রিয়তার।
রাশেদ সালামের জবাব দিয়ে ভ্রু কোঁচকালেন। মাথা দুলিয়ে বললেন, ‘আঙ্কেল! ডাকটা পছন্দ হয়নি আমার। বাবা বলার অভ্যেস করে ফেলো। এখন থেকেই।’
প্রিয়তা মূর্তির মতো বসে ছিলো এতক্ষণ। কিছু মনে পড়তে হঠাৎই উঠে দাঁড়িয়ে গেল। কোনমতে বলল, ‘ চ-চা, কফি কিছু_’
কথাটা শেষ করতে দিলেননা রাশেদ। হাতের ইশারায় বসে পড়তে বললেন ওকে। প্রিয়তা তাই করল। ভয় কাটেনি ওর। রাশেদ বললেন, ‘তোমার নাম?’
প্রিয়তা অবাক হল। নিজের ছেলের বউ বানাচ্ছে। নিয়ে আসার আদেশ দিয়েছে। অথচ নাম জানেনা? নাকি জেনেই প্রশ্ন করছে? তবুও খানিক ইতস্তত করে বলল, ‘প্রিয়তা।’
‘ বাবার নাম নূরুল ইসলাম। মায়ের নাম আসিয়া। পাঁচ বছর বয়সে মা মারা যায়। এক বছরের মধ্যেই বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। আর তার ঠিক ছ’মাস পর তোমাকে একটা আশ্রমে পাঠিয়ে দিয়ে, তোমার বাবা তার বউ নিয়ে বিদেশ চলে যায়। ওখানেই তোমার পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর ওদিকেই আলাদা ঘর নিয়ে থাকতে তুমি। ঠিক?’
প্রিয়তা হতবাক। এরমধ্যেই সব খবর জোগাড় করে নিয়েছে!
‘ ঠিক?’
রাশেদ দ্বিতীয়বার প্রশ্নটা করলেন। হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ায় প্রিয়তা। কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন রাশেদ। এরপর বললেন, ‘এই বিয়েতে রাজি তুমি?’
প্রিয়তা উত্তর দেওয়ার আগেই রাশেদ আবার বলল, ‘ আমি তোমাদের ব্যক্তিগত মান অভিমানের কথা জানতে চাইছি না। ওটা তোমরা নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নিও। ওসব ছাড়া, বিয়েতে কী তুমি রাজি?’
প্রিয়তা কী বলবে বুঝতে পারলনা। দ্বিধাগ্রস্ত মন নিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইল চুপচাপ। প্রায় দুই মিনিটের নীরবতার পর রাশেদ মাথা ঝাঁকালেন। বললেন, ‘ মৌনতাকেই সম্মতি ধরে নিচ্ছি আমি। কাজ সেড়ে যাচ্ছিলাম এদিক দিয়েই। ভাবলাম দেখা করে যাই। আর বিয়ের ব্যপারে তোমার মতামতটাও এনশিওর করার ছিল। আমি এখন উঠছি। এরপর বিয়ের দিনই হয়তো দেখা হবে।’
উঠে দাঁড়ালেন রাশেদ। প্রিয়তাও দাঁড়াল। রাশেদ প্রিয়তার সামনে এসে ওর মাথায় আলতো করে হাত রাখলেন। মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘ভালো থেকো।’
চলে গেলেন রাশেদ আমের। এদিকে রাশেদের যাওয়ার পথে স্থির, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল প্রিয়তা।
#চলবে…
[ রি-চেইক করিনি। সকলেই রেসপন্স করবেন। আর গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। হ্যাপি রিডিং।]
#অন্তর্নিহিত_কালকূট