#অবরুদ্ধ_নিশীথ
#তেজস্মিতা_মুর্তজা
৩০.
শনিবার দিবাগত রাত। প্রায় আড়াইটা বাজছে। লতিফকে ব্যথার ওষুধ খাওয়ানোর ফলে শুয়ে পড়েছিল। আসমা বসে ঝিমোচ্ছে। তার মেয়ে জ্বালাতন করছে, শুতে পারা যাচ্ছে না। পুঁচকে সন্ধ্যার পর ঘুমিয়ে রাতে জাগে।
কেবিনের দরজায় ধাক্কা পড়ল। বেশ কিছুক্ষণ দ্বিধা-দ্বন্দে ভুগে দরজা খুলতেই হুড়মুড়িয়ে ভেতরে ঢুকে দরজা আঁটকে দিলো জয়।
আসমার আতঙ্কিত মুখের দিকে তাকিয়ে জয় নিজের স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হাসল, লাইট জ্বালান, ভাবী। বেশি অন্ধকারে থাকলে চোখ নষ্ট হয়। আল চেঁচাবেন না যেন ভুলেও, তাতে শব্দদূষণ হয়।ʼʼ
মহিলা ভয়ে জুবুথুবু হয়ে বলে, “ক্যান আসছেন?ʼʼ
জয় দু’পাশে মাথা নাড়ল, “লাইট জ্বালান।ʼʼ
লতিফের ঘুম ভাঙল। ভয়ে শীতের রাতে ঘাম ছুটেছে বেচারার শরীরে।
জয় কোমড় থেকে পিস্তল বের করে ম্যাগাজিন খুলে বুলেট চেইক করতে করতে বলল, “শরীর ভালো, লতিফ ভাই?ʼʼ
লতিফ উঠে বসার চেষ্টা করল। পারল না।
জয় পিস্তল লোড করে তাকাল, “বিশ্বাসঘাতকদের বাঁচিয়ে রাখতে নেই, লতিফ ভাই। সব নীতিতেই তাই। তবে বিশেষত রাজনীতিতে বিশ্বাসঘাতকতা শুকনো খড়িতে দাউদাউ করে জ্বলা আগুনের মতো। আজ আমাদের সাথে গাদ্দারি করেছেন, কাল মাজহারের সাথে করবেন। আপনাকে মেরে ফেলা উচিত। আপনি যে-কারো জন্যই ক্ষতিকর। এখন যেহেতু মাজহারের হয়ে কাজ করছেন, কয়দিন পর আপনার ছোবল মাজহারও খাবে। তোহ….আজ শত্রুপক্ষের একটা উপকার করব। সবার ভালোর জন্যই মারব আমি আপনাকে, মাইন্ড কইরেন না।ʼʼ
লতিফ কিছু বলতে চাইছিল। জয় হাত নেড়ে থামায়, “শুনেছি, ফেরাউন মৃত্যুর দূতকে সামনে দেখে তওবা করেছিল, আপনাদের আল্লাহ কিন্তু ওর তওবা কবুল করেন নাই। মৃত্যুকে সামনে রেখে গুনাহ কবুল করলে সেই গুনাহগার ক্ষমা পায় না, লতিফ ভাই।ʼʼ
লতিফ অবাক হয়। এই জলদগম্ভীর জয়কে সে দেখেনি। জয় চঞ্চল, বদমাশ, সবসময় তার চোখে-মুখে ফুটে থাকে এক বিদঘুটে রসিকতা ভরা শয়তানী হাসি। যার কথার উচ্চারণ অশুদ্ধ, মূর্খতায় পূর্ণ। আজ জয়কে লাগছে উচ্চ শিক্ষিত মৃ-ত্যুদূত। এই জয় বরফশীতল পিণ্ড।
পিস্তল তাক কোরে ধরল জয়। আসমা এক কোণে দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে জাপটে ধরে কাঁপছে। জয় জিজ্ঞেস করল, “ছেড়ে দেবার কথা ছাড়া আর কিছু বলতে চান, ভাবী? সংক্ষেপে শেষ করুন।ʼʼ
জয়ের নিষেধ করা কথাটাই বলে আসমা, “ছেড়ে দ্যান। ক্যান মারতেছেন? ছেড়ে দ্যান…ʼʼ
জয় সঙ্গে দাঁতে দাঁত চেপে, এক চোখ বুজে ট্রিগার প্রেস করে। ঠিক যেমন কিশোরেরা বন্দুক হাতে পাখি তাক করে রাবার বুলেট ছোঁড়ে, ভীষণ মজা ফুটে ওঠে মুখে। ক্যাচছ করে একটা আওয়াজ বেরোয়। আসমা খিঁচে চোখ বুজে ফেলে। ছোট্ট মেয়েটা ডুকরে কেঁদে ওঠে।
গুলিটা বালিশ ফুঁড়ে ঢুকে যায় লতিফের মাথা থেকে এক ইঞ্চি ফাঁকে। নিখুঁত নিশানা। লতিফের শ্বাস ছুটছে। জয় বাচ্চা মেয়েটাকে কাছে ডাকে বাচ্চাটা আসতে চায় না। জয় হাসে, হাসিটা আসমার কাছে ভয়ানক লাগে। কিন্তু বাচ্চাটা কেন জানি এগিয়ে যায়। জয় মেয়েটার ঝুঁটিতে হাত নেড়ে জিজ্ঞেস করে, “চলো, তুমি বলো। তোমার আব্বুর ওপর গুলি চালাবো, না ছেড়ে দেব? তুমি যা বলবে তাই করব। ভেবেচিন্তে বলবে কিন্তু।ʼʼ
-“গুলি তালালে কী হবে?ʼʼ
জয় হাসল, “গুলি চালানোর পর, তুমি তোমার আব্বুকে হাজার ডাকলেও সে আর উত্তর দেবে না তোমার ডাকের। কিন্তু একটা মজার ঘটনা দেখতে পাবে তুমি। আমার হাতের এই পিস্তল থেকে একটা বুলেট ছুটে গিয়ে তোমার আব্বুর ঠিক কপাল বরাবর বিঁধবে। খুব চমৎকার একটা দৃশ্য, আমি ট্রিগার দাবাতেই শাঁআআ করে একটা বুলেট ছুটে যাবে তোমার আব্বুর দিকে। দারুণ মজা লাগবে তোমার দেখতে বিষয়টা।ʼʼ
মেয়েটা জয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে, “দালুন লাগবে দেখতে?ʼʼ
-“খুবই দারুণ লাগবে।ʼʼ
-“কিন্তু আব্বু কথা বলবে না কেন?ʼʼ
জয় সোজা হয়ে দাঁড়াল, “বুলেট গিয়ে কপালে লাগার পর আর কথা বলতে ইচ্ছে করবে না তোমার আব্বুর। শ্বাস নিতে ইচ্ছে করবে না, হাঁটতে ইচ্ছে করবে না, তাকাতে ইচ্ছে করবে না, উঠে বসতে ইচ্ছে করবে না। চুপচাপ শুধু চোখ বুজে শুয়ে থাকতে শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করবে। শুয়ে থাকবে।ʼʼ
-“তাল মানে আমি চক্কেত আনতে বললে সেতাও আনবে না? আমার সাথে খেলবে না আর?ʼʼ
-“না।ʼʼ
জয় চোখ নত করে বাচ্চা মেয়েটার দিকে কেমন করে যেন চেয়ে থাকে। মেয়েটার নিষ্পাপ মুখ। জয়ের ভেতরটা বিদ্রোহ করে ওঠে। তার কিছু হচ্ছে, কপালের ডানপাশে চিরচির করছে।
মেয়েটা বলল, “তালে গুলি মেলো না।ʼʼ
জয় গম্ভীর হয়ে উঠল, “মজাদার দৃশ্যটা? সেটা দেখতে চাও না?ʼʼ
-“চাই তো। তুমি তোমাল কপালে কলো গুলি। আমি দেখি দালুন দিশ্য।ʼʼ
জয় চোখ বুজে দাঁত চেপে ধরে, “স্বার্থপর!? বাচ্চা মেয়েটাও স্বার্থপর!ʼʼ
দৌঁড়ে লতিফের কাছে যায় মেয়েটা, “আব্বু তুমিও দেখবে? ও আমাদের মজা দেখাবে? কী হলো, কলো গুলি তোমাল কপালে। আব্বু আল আমি দেখি।ʼʼ
জয় তির্যক চোখে মেয়েটাকে দেখল। ইচ্ছে করে মাথার ওপর তুলে এক আঁছাড় মারতে। ভ্রু জোড়ার ওপরে ফেঞ্চ-কাট চুলের এক গোছা পড়ে আছে। তা হাত চালিয়ে উপরে ঠেলে বলল,
-“চলে যান, লতিফ ভাই। শহর নয়, জেলা ছেড়ে। আশপাশের জেলায় নয়, দূরবর্তী কোনো জেলায় চলে যান বউ-বাচ্চা নিয়ে। দেশের শেষ সীমানায় চলে যান। কতক্ষণ এই সিদ্ধান্তে কায়েম থাকতে পারব বুঝতে পারছি না। কসম দ্বিতীয়বার সাক্ষাৎ হলে আর মিস হবে না টার্গেট। এখন এক হাঁটায় বেরিয়ে যাব এখান থেকে। ফের ফিরে আসার ইচ্ছা জাগার আগে আমার নাগাল সীমানার বাইরে চলে যাবেন।ʼʼ
আসমার দিকে চেয়ে হাসল জয়, “উনাকে বোঝাবেন, আজ ছেড়ে দিচ্ছি, কিন্তু একটা ভাবনা মাথায় আসতে পারে যে, মারতে তো এসেছিল জয়। বেঁচে গিয়ে সুযোগ যখন পেয়েছি, বদলা নিয়ে নিই, মেরে ফেলতে পারতো, সুযোগ পেয়ে আমিই বদলা নিয়ে নিই। আসতে পারে লতিফ ভাইয়ের মাথায় এমন কথা। তাই বলছি, একটু বোঝাবেন, এমন ভাবার দরকার নেই। বোকামি করে ছাড়ছি না, আসলে বুঝতে পারছি না কেন ছাড়ছি। যতক্ষণে বুঝতে পারব, ততক্ষণে আর ছাড়ার মানসিকতা থাকবে না। তাই এখন আপাতত বুঝতেই চাইছি না। কারণ এখন আপাতত ছাড়তে চাইছি।ʼʼ
লতিফকে বলল, “লতিফ ভাই, আমার মানুষ মারতে ওয়েপন লাগে না, হাতের প্র্যাক্টিস আছে কমবেশি। বংশ পরম্পরার রক্ত-দোষ তো। বদলা নিতে আজকের উপহার পাওয়া জীবনটা হারাতে আসবেন না। আমার দেয়া উপহার কেউ যত্নে না রাখলে খুব রাগ হয় আমার। চলি ভাবী। আর হয়ত দেখা হবে না কোনোদিন। ভালো থাকবেন। মেয়েটাকে ভালোভাবে মানুষ করবেন, যেহেতু ওর কাছে বাপ-মা দুটোই রইল।
বেরিয়ে যায় জয়। বাচ্চা মেয়েটা দৌঁড়ে আসে খানিকটা পিছনে, তবে দরজার বাইরে যায় না। জয় আড়াল হয়ে যায়। আসমার চোখ ঘোলা হয়ে আছে, উদ্ভ্রান্তের মতো চেয়ে থাকে জয়ের যাওয়ার পানে। ছেলেটা এলো, কী থেকে কী করল, কিছু কথা বলল, চলে গেল। অদ্ভুত, অদ্ভুত, ভয়ানক অদ্ভুত!
—
জয়ের নামে দুটো কেইস ফাইল করেছেন ঝন্টু সাহেব। অনেকগুলো অভিযোগওকরতে ছাড়েননি। সুযোগ পেলে কারও নামে মামলা কম দিতে নেই। এটার একটা কারণ আছে। বাংলাদেশের আইন কখনও কখনও কোনো অপরাধীর বিশ-পঁচিশটা অপরাধ ফাইল আলমারীতে ফেলে রেখেও অপরাধীকে সুখে জীবন কাটাতে দেয়। হতে পারে মামলা শ-খানেক হলে একটু মাঠে নামল!
ঝন্টু সাহেব কাঁচা লোক না। তিনি জয়ের সবরকম বদগুণ ও কর্ম নিয়ে আলাদা আলাদা অভিযোগ মেরে এসেছন।
পুলিশকে বলেছেন, “শুনুন অফিসার। জয় জুয়া খেলে। তো একবার একজনের বউ অবধি কেড়ে নিয়েছিল।ʼʼ
আপনি জানলেন কী করে?
খুব বিপাকে পড়লেন উনি, “আমার কাছে খবর থাকে।ʼʼ
-“আচ্ছা, তারপর?ʼʼ
-“তারপর আর কী? মাইনষের বউ তাসে জিতে কী করে? সেও তাই করেছে!ʼʼ
কথাটা আংশিক সত্যি। কিন্তু পুরোটা না।
জয়ের সবরকমের বদভ্যাস উল্লেখ করা হয়েছে। জয় জুয়া খেলে, নারীবাজীর দোষ আছে, মারিজুয়ানা সেবনের অভ্যাস আছে। এমনকি রাজনৈতিক দায়িত্বসূমহ ঠিকমতো পালন করে না সে। ভার্সিটির কাজে বিশেষ এক্টিভিটি নেই তার। সেসব ব্যক্তিগত দোষ জয়ের, কিন্তু আপাতত আসল দোষ হলো, সে একজন লোককে মারাত্মক জখম করেছে। এছাড়াও বহু মিথ্যা দোষ আরোপ করে কেইসকে শক্ত করার চেষ্টাও করেছেন ঝন্টু সাহেব। কিন্তু ভাবার বিষয় হলো, তিনি হামজার ব্যাপারে কিছু বলেননি। হামজা মাজহারকে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ঘুরিয়ে এনেছে। সেটা উল্লেখ করেননি।
কথাগুলো জানিয়ে কবীর দম ফেলল। হামজা চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থেকে জয়কে ডাকল। জয় ঘুমাচ্ছিল। বসার ঘরে ঢুকতেই হামজা ধমকে উঠল, “লুঙ্গি উচু করে বাঁধ্। ঘর ঝাড়ু দেবার জন্য আর ঝাড়ু কিনব না। তোর লুঙ্গি যথেষ্ট।ʼʼ
এবার লুঙ্গিটা উঁচু করে ঠিক কোমড় অবধি তুলে বাঁধল। আরেকটু তুললে ইজ্জতহানি হতে পারতো। কবীর কপাল চাপড়াল।
তার পিঠে চাপড় মেরে সোফায় বসে তরুকে ডাকল জয়, “আদা-মশলা-মরিচ-পেঁয়াজ, রসুন মেরে একটু পানি গরম করে দে রে, তরু। গলায় কুঁড়কুঁড়ানি উঠতেছে।ʼʼ
তরু কটমট করতে করতে এসে বলল, “একটু হলুদ-ধনিয়ার গুড়ো, সয়াবিন তেল, জিরেও দিই?ʼʼ
-“যদি গলার ব্যথা সারাতে কার্যকর হয়, তাইলে আলবাৎ দিবি। সাথে একটু মাল মেশাতে পারিস। অত্যান্ত সুন্দর একটা ড্রিংক তৈরি হবে।ʼʼ
হামজা গম্ভীর মুখে বলল, কর্কশ স্বরে বলল, “লতিফকে রেহাই দিতে পাঠিয়েছিলাম তোকে?ʼʼ
-“রেহাই? ছিঃ! অপবাদ দিচ্ছ। জয় বাংলার নামে শপথ করে বলতেছি, আমার-তোমার পেছন বাঁচাইছি আমি।ʼʼ
হামজা শীতল চোখে তাকিয়ে রইল। জয় বলল, “সামনে ইলেকশন, মাজহার আর ওর আপন বাপ আমার নামে অলরেডি মামলা মারছে, পলাশের সাথে পুন্দাপুন্দি চলতেছে, ভার্সিটির হলে সিন নিয়ে ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। এই বাঁশগুলাই আমি-তুমিসহ পুরা পার্টি মিলে পেছন পেতে দিয়েও নিতে পারব না। তো মনে করো, এইসবের মাঝেও যদি লতিফের ইন্নালিল্লাহ করে আরেকটা বাঁশ বাড়ানোর কি খুবই দরকার?ʼʼ
হামজা শব্দহীন হাসল, তুই শুধু এই কারণে ওকে ছাড়িসনি।
জয় কথা বলল না। হামজা বলল, “লতিফকে যেন কোনোভাবেই খুঁজে পাওয়া না যায়। তবেই ওর গুম হবার সাসপেক্শনটা শুধু মাজহার আর ওর বাপের ওপর থাকবে।ʼʼ
জয় উঠে যায়। সদর ঘরে দুটো মহিলা এসেছে। হামজার কাছে জন্ম নিবন্ধনের কাগজ সাইন করাতে। এটা কাউন্সিলরের কাজ, অথচ এখানে কেন এসেছে বুঝতে পারল না।
মশলার ঝাঁঝ রিমির সহ্য হয় না। কাশি উঠে যায়। মুখে শাড়ির আচল চেপে মসলা কসাচ্ছে। শাহানা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কাজের মহিলাগুলোর হাতের রান্না খাওয়ার অভ্যাস নেই এই বাড়ির পুরুষদের। তরু পানির পাত্র চুলোয় বসিয়ে গরম মশলা বের করল। খুব তাড়ায় আছে সে। দুটো লবঙ্গ, এলাচি, দুই টুকরো আদা, এক চিমটি লবন দিলো পানিতে। দারুচিনি দেবে কিনা তা ভাবার বিষয়।
-“এত তাড়াহুড়ো করে পানি গরম করছো কার জন্য?ʼʼ
“জয় গলার ব্যথায় পাগল হয়ে যাচ্ছে।ʼʼ
রিমি কূটিল হাসল, “পাগল হচ্ছে না-কি তোমায় বানাচ্ছে?ʼʼ
-“কী বলো, কিছুই বুঝলাম না, ভাবী।ʼʼ
-“এজন্যই তোমার এই দুর্দশা।ʼʼ
-“কী দশা?ʼʼ
-“বললে কূটনামি হবে। নিজে দেখলে ভালোভাবে অনুভব করতে পারবে।ʼʼ
-“ওরে বাবা! ধাঁধা বানাচ্ছো কেন? বলো না কী হইছে আবার? আবার কী করেছে সে?ʼʼ
-“তোমার এই আহ্লাদের কতটুকু মর্যাদা আছে তোমার পরাণপ্রিয় জয় আমিরের কাছে?ʼʼ
তরু দু’পাশে মাথা নেড়ে মুচকি হাসল, “তোমার যে কেন এত শত্রুতা ওর সাথে? অবশ্য আমার ভালোই লাগে তোমাদের এই ফাইট।ʼʼ
-“আমার খুব খারাপ লাগে, তরু। তোমার জন্য। চোখ থাকতে অন্ধ, মাথার দরজা বন্ধ, এমন লোকেরা খুব ভালোভাবে ঠকে যায়। বুঝলে?ʼʼ
-“ধুরু! যা বলবে, বলো তাড়াতাড়ি। আমার কিন্তু পানি গরম শেষের দিকে।ʼʼ
-“কোন আশায় করছো এসব?ʼʼ
তরু বিরক্ত হলো একটু, কিন্তু চেপে বলল, “আরেহ! কী করছি? খুলে বলো না!ʼʼ
-“আগে বলো, এই যে জয় আমিরের পেছনে নিজেকে লুটিয়ে দিচ্ছ, কোন আশায়? কী ভেবে?ʼʼ
মুখটা ছোট হয়ে গেল তরুর। কথা বলতে পারল না। চোখদুটো এক মুহূর্তে ঝাপসা হয়ে এলো।
-“জবাব দাও। কেন করছো এসব?ʼʼ
তরু ছলছলে চোখে রিমির কঠিন মুখের দিকে চেয়ে বলল, “এভাবে বলছো কেন ভাবী? আমার কিছুই চাওয়ার নেই ওর কাছে। মায়া, ভাবী। খুব মায়া লাগে। ওর তো কেউ নেই। আমি ছাড়া কে দেখবে ওকে?ʼʼ
রিমির মুখে আচমকা মলেন হাসি নেমে এলো, স্নেহভরে তরুর দিকে চেয়ে বলল, “গর্দভ মেয়েলোক! এটাই বোঝতে চাচ্ছি। ওর অনেকে আছে। তোমার কেউ নে পাগলি মেয়ে। ওর তুমি ছাড়াও লোক আছে।ʼʼ
তরু বিভ্রান্ত হয়ে বলল, “কে আছে? না, ভাবী। যেদিন থেকে ওকে পেয়েছি, আমি ছাড়া ওর কেউ নেই।ʼʼ
-“রাগাবে না আমায়। আমি যা জানি, তুমি জানো না। শুধু ভাবছি কথাটা বললে কীভাবে সহ্য করবে? সাহস হচ্ছে না আমার। শুধু বলছি তুমি আজ থেকে ওই নিমোকহারামের ফরমায়েশ খাটবে না। তাহলে আমি তোমাকে এই বাড়ি থেকে বের করে দেব।ʼʼ
তরু অবিশ্বাসে বোবা হয়ে গেল। চোখটা এবার ভরে উঠল। আস্তে কোরে ডাকল, “ভাবী!ʼʼ
রিমি চোখ ফিরিয়ে নিলো। সে কঠিন হবার চেষ্টা করে বোধহয় পারছে না। তরু রিমির আচরণে আহত হয়ে চেপে ধরল, “কী হয়েছে, ভাবী? তোমার কসম লাগে, খুলে বলো। তুমি আমার ওপর রাগ-টাগ ঝারো, কিন্তু তো কখনও এভাবে কথা বলো না আমার সাথে?ʼʼ
-“আগে ভাবতাম, দেরিতেই হোক, তবে জয় তোমাকে এড়াতে পারবে না। অথচ মনেই ছিল না, এই বাড়ির ছেলেরা শয়তানকেও শয়তানী শেখায়।ʼʼ
তরু ভ্র জড়াল, “আগে যা ভাবতে, এখন ভাবতে দোষ কী?ʼʼ
রিমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হেসে ফেলল, “তা জানলে তো আর এভাবে ফরমায়েশ খাটতে দৌঁড়ে আসতে না। সত্যি বলতে আমার তোমাকে কথাটা জানাতে কষ্ট হচ্ছে, মেয়ে। কিন্তু তুমি ওই নিমোকহারামটার জন্য এত উতলা হয়ে ওর গোলামি খাটবে, এটা আমি দেখতে পারব না।ʼʼ
তরু কথা বলল না। তার বড় অস্থির লাগছে।
রিমি বলল, “তোমার আশিক জয় আমির বিবাহ করিয়া সারিয়াছেন, তরুনীধি খাতুন। চমকে গিয়ে নিজেকে বোকা প্রমাণিত কোরো না, তরু। বরাবর জয়ের ওপর তোমার পাগলামীতে আমার তোমার উপর শুধুই মায়া হয়েছে। আমি জানতাম, শীতের মৌসুমের গাছের পাতার মতো ঝরে পড়তেই হবে তোমাকে একদিন। সে-দিন এলো শেষমেষ।ʼʼ
শেষের দিকে উদাসীন হয়ে পড়ল রিমি, ”তোমার হামজা ভাইকে আমিও ভালোবেসেছিলাম, তরু। তার বদলে সে শুধুই নিজের রূপ দেখিয়ে আমাকে খানখান করে ফেলেছে। ক্ষমতালোভী, নোংরা একেকটা রাজনীতিবিদকে ভালোবেসেছি আমি এই জীবনে। আব্বু, কাকা, মাজহার ভাইয়া, অবশেষে এই লোকটাকে। আমি সব বুঝি, জানো! তবুও এদের মায়া কাটাতে পারিনা।ʼʼ
তরু এই জগত ত্যাগ করেছে যেন। সে চমকে গেছে কিনা বোঝা গেল না, তবে অসাড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল চুলার পাশে। জয় আমির মিথ্যা বলে না। সে সেদিন বলেছে, সে সেদিন তরুকে খুন করে এসেছে। জিজ্ঞেস করলে, বিয়ের কথাও স্বীকার করতো। কিন্তু তরু জিজ্ঞেস করেনি। জয় নিজের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরণের জঘন্য মিথ্যাকে নির্বিঘ্নে স্বীকার করার জোর রাখে, আর এ তো সত্য।
জয়ের ডাক শোনা গেল, “তরু! মরে গেছিস? গরম পানি দিয়ে যা হেহ, গলা আঁটকে আছে একদম। বের হব আমি, তাড়াতাড়ি আয় বাল। শার্টটাও আয়রণ করে রাখিসনি, কার বালডা পরে বের হব আমি?ʼʼ
তরুকে তবুও চুপচাপ চুলার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল রিমি, “এ বাড়ির কোনো বেটাছেলেই মানুষ না, সবগুলো একেকটা রক্তখেঁকো জানোয়ার। প্রমাণ না পাওয়া অবধি বিশ্বাস না করলেও চলবে। একথা খুব তেতো শোনায় আমার মুখে, তাই না? সত্যি কথা তো, এইজন্য।ʼʼ
—
আজ রবিবার। রবি মানে সূর্য। তাই সূর্যটাও নিজের সবটুকু তাপ ছেড়ে টগবগ করে উদিত হয়েছে আজ।
সকাল সাড়ে দশটার দিকে মুস্তাকিন এসেছে। বসে আছে। অন্তূ বই-খাতা গুছিয়ে রেখে বসার ঘরে যাবার আগে অভ্যাসবশত মাথায় ওড়না তুলতে গিয়ে হাসে, বেশ্যার মাথায় ওড়নার পর্দা! হাস্যকরই তো। মুস্তাকিন মাথা নত করে বসে আছে। তার অভিব্যক্তিটা অব্যক্ত।
-“কেমন আছেন, মুস্তাকিন সাহেব?ʼʼ
অন্তূর আওয়াজে নিরস মুখে তাকায় মুস্তাকিন, “ঢাকা ছিলাম। কিছুই জানতাম না। কী থেকে কী হয়ে গেছে এই ক’দিনের ব্যবধানে!ʼʼ
অন্তূ হাসার চেষ্টা করল, “কোনো একদিনের ব্যবধানে দেখবেন এই পৃথিবীতে কেয়ামতও ঘনিয়ে এসেছে। যা ঘটবে, তার আভাস খুব কমই পাওয়া যায়, মুস্তাকিন সাহেব। কী ব্যাপার, তাকাচ্ছেন না কেন আপনি?ʼʼ
-“ইচ্ছে করছে না।ʼʼ
-“কেন?ʼʼ
-“বুঝতে পারছি না। আমার এতক্ষণেও বিশ্বাস হচ্ছিল না, এই সবে আপনার কথার ধরণে বিশ্বাস করার তাগিদ টের পাচ্ছি। কী থেকে কী হয়েছে?ʼʼ
মুস্তাকিনের দিকে চেয়ে অন্তূ মলিন হাসল, “সেদিন আব্বুদের কোথায় নামিয়ে দিয়েছিলেন?ʼʼ
-“সেদিন স্যারের নিষেধ না মেনে আমি ওনাদের সাথে আসলে এসব কিছুই…ʼʼ
-“কিছুই বদলাতো না। কিছুই করার ছিল না ওখানে। রটনা রটে যাওয়া, আর বাঁধ ফুঁড়ে পানির স্রোত মুক্ত হয়ে যাওয়া একই। সেই পানিকে ফেরানো যায় না, রটনা মুছে ফেলা যায় না। ছাড়ুন সে কথা।ʼʼ
মুস্তাকিন বেশ কিছুক্ষণ চেয়ে রইল অন্তূর দিকে। নিজেকে সামলে চোখ ফিরিয়ে বলল, “কেউ অন্তত অসম্মান করার সাহস পেত না আমার সামনে আপনাকে। আর লোকে কী বলল, তাতে প্রভাবিত হবেন কেন আপনি? লোকের কথায় আসে-যায় না।ʼʼ
অন্তূ আলতো হাসল। উদাসীন হাসি, “খুব আসে যায়, মুস্তাকিন সাহেব। আত্মসম্মান অবধি ঠিক আছে, কিন্তু যখন প্রশ্ন সম্মানের ওঠে, তখন লোকে আপনাকে সম্মান দিলেই সেটা কেবল সম্মান। সম্মানের ব্যাপারটা হলো, আপনারে বড় বলে বড় সে-ই নয়, লোকে যারে বড় বলে, বড় সে-ই হয়।ʼʼ
-“কিন্তু লোকে যদি বড়কে ছোট বলে?ʼʼ
-“সেটাও ভুল নয়। তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে তো তা ঠিক। তাদেরকে দেখানো হয়েছে বিধায় তারা ছোট দেখছে। নয়ত এত ছোট করে দেখার সযোগ ছিল কোথায় তাদের?
মুস্তাকিন আস্তে কোরে মাথাটা নত করল। কিছু ভাবল। সোফার হাতলে হাত এলিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইল। হাতের ঘড়িটা জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। আজ অবধি মুস্তাকিনকে কখনও পুলিশের ইউনিফর্মে দেখেনি অন্তূ। প্রতিবার এমন ফরমাল গেট-আপে দেখা গেছে।
-“পরীক্ষা চলছে না আপনাদের? আজ নেই?ʼʼ
-“আজ শেষ হবে। দুপুর দুটোয় পরীক্ষা আছে।ʼʼ একটু থেমে জিজ্ঞেস করল, “আপনার তদন্ত কতদূর? কোনটা নিয়ে আগাচ্ছেন?ʼʼ
অন্তূ কাটাতে চাইছে। মুস্তাকিন টের পেল।
-“নতুন কিছু হাতে এসেছে।ʼʼ নিস্তেজ লাগছিল মুস্তাকিনের স্বর। তাকাচ্ছিল না অন্তূ দিকে। নিজের বাঁ হাতের তর্জনীতে থাকা গাড়ির চাবির দিকে চেয়ে আছে।
-“নতুন কিছু? পুরনোগুলো আনসলভড রেখে নতুন কেন?ʼʼ
-“পুরোনো কোনটার কথা বলছেন?ʼʼ
অন্তূ গভীর চোখে মুস্তাকিনকে পরখ করে চোখ নামালো, “আখির রেপ এণ্ড মার্ডার মিস্টিরি, ওর মেজো ভাই সোহানের খু-নের রহস্য, বড় ভাই সোহেলের লা’শ পাওয়া গেছে ওই বাড়িতে যেখানে সালমা খালারা থাকতেন, কিন্তু এখন তারাও নিখোঁজ। চাঁদনী ভাবী, সালমা খালা গেছেই বা কোথায়, হুট করে হারিয়ে গেছে, সেখানেই বড় ছেলের লাশ পাওয়া গেল। এগুলো কি পছন্দ হয়নি আপনার কেইস হিসেবে?ʼʼ
মুস্তাকিন একটু চুপ থেকে শান্তভাবে মাথা নাড়ল, “সব মাথায় আছে। তবে যেটা নেই সেটা হলো তদন্তের উপাদান—ক্লু। ক্রাইমগুলো শুধু হয়েছে, তবে সেগুলোর বিশেষ কোনো সূত্র নেই যা ধরে অপরাধী অবধি এগোনো যায়। আঁখির কেইসটা বন্ধ হয়েছে ফরেন্সিক রিপোর্ট পাওয়ার সাথে সাথেই। কারণ, সেখানে একটা সাসপেক্টেরও বিরুদ্ধে কোনো রকম ক্লু ছিল না। সোহানের মৃত্যুর ব্যাপারটা সবার জানা। আর সেদিন সোহেল মরল, ওটারও কোনো সূত্র নেই শুধু ওই রক্ত পুঁজ আর মেলাটোনিন হরমোন সেম্পল ছাড়া।ʼʼ
অন্তূ ভ্রু জড়াল। মেলাটোনিন হরমোন? সে যেটাকে নোংরা জিনিস ভেবে ভুল করেছিল। এখনও তার সন্দেহ আছে বিষয়টা নিয়ে।
-“ভার্সিটির এক মেয়ে বলেছিল সোহানের মৃত্যুর ব্যাপারে, সেটা ঝাপসা। আপনারা আঁখির লাশ পাঠিয়েছিলেন, আপনাদের জানার কথা, চাঁদনীরা কোথায় আছে? কোথায় পাঠিয়েছিলেন লাশ?ʼʼ
-“আমি পাঠাইনি। ডিপার্টমেন্ট থেকে পাঠিয়েছিল।ʼʼ
-“ওদের থেকে তথ্য কালেক্ট করতে পারবেন না?ʼʼ
-“পারলে দেব আপনাকে। কিন্তু আপনার এসব জেনে কী হবে? কী প্রয়োজন?ʼʼ হাসল মুস্তাকিন।
অন্তূ হাসার চেষ্টা করল, কিছু বলল না।
-“কালেক্ট করে জানাবো আপনাকে। উকিল হতে এখনও বছর কয়েক বাকি, এখনই এত খাটবেন না, এনার্জি বাঁচিয়ে রাখুন, নয়ত বিতৃষ্ণা ধরে যাবে নিজের পেশার প্রতি।ʼʼ
অন্তূ কিছুক্ষণ নির্বিকার পরে জিজ্ঞেস করল, “সোহানের ব্যাপারটা কী?ʼʼ
কিছুক্ষণ নীরবতা। পরে চোখ তুলে তাকিয়ে একটা দম ফেলে বলল, “যদি বলি, সোহানকে জয় আমির মেরেছে, বিশ্বাস করবেন?ʼʼ
অন্তূ ভ্রু কুঁচকাল সামান্য, “অসম্ভব কিছু নয়। অবিশ্বাস করার মতো ব্যাপার দুনিয়াতে খুব কম। কেন মেরেছে জয় আমির সোহানকে?ʼʼ
-“রাজনৈতিক মামলা। সোহান মাজহারের পার্টির লোক ছিল। তখন হামজা সবে ঝন্টু সাহেবের ভাতিজাকে বিয়ে করেছে। হুমায়ুন পাটোয়ারী কাউন্সিলর, জয় ছাত্রনেতা হয়ে উঠেছে, হামজা পুরোদমে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল রাজনীতিতে। কিন্তু এতে ঝন্টু, মাজহার বা হামজার শ্বশুর কোনোরকম সুবিধা করতে পারেনি হামজার ক্ষমতার ওপর। একটা ভাঙন। এরপর কিছু একটা ঝামেলা হয়েছিল মাজহারের সাথে, যা এখনও চলছেই। সেই জের ধরেই জয় সোহানকে অমানুষিক মার মেরেছিল। এরপর ছেলেটার ক্যান্সার হলো, আর ওর চিকিৎসার জন্যই সালমা খালা জমি বিক্রি করেছিল।ʼʼ
অন্তূ বিশেষ আগ্রহ পেল না। কিছু কথা নতুন অবশ্য, তবে শেষের কথাগুলো তানিয়ার কাছে সে শুরুতেই শুনেছিল। কোনো চমকপ্রদ কাহিনি লাগল না। কিন্তু চাঁদনীর ওই কথাটা খুব ধাক্কাধাক্কি করছিল ভেতরে—’সাবধান না হয়ে একটাকে হারিয়েছি।ʼ চাঁদনীর সব কথাই ভারী, তবে এটা যেন মেয়েটা খুব উদাসীনতা আর রহস্য ভরে বলেছিল। মুস্তাকিনের বর্ণনা সাদৃশ্য আনতে পারল না তার সাথে।
বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে অন্তূ প্রসঙ্গ বদলায়, “আপনার মা-বাবা কোথায় থাকেন? স্কুলে আমি আপনাকে দেখেছি খুব কম, তেমন দেখা হয়নি, আর উনাদের ব্যাপারে কিছু জানিইনা।ʼʼ
-“আম্মা দিনাজপুরেই তবে পাশের গ্রামে থাকেন। বাবা ঢাকায়।ʼʼ
-“আচ্ছা, উনারা একসাথে থাকেন না। আর ভাইবোন? আপনাদের পারিবারিক ব্যাপারটা বুঝলাম না..ʼʼ
-“পরে বলব কোনোদিন।ʼʼ মুস্তাকিন হাসল সামান্য।
দরজায় করাঘাত পড়ল। অন্তূ আৎকে উঠল অজান্তেই। এই করাঘাত তাকে আতঙ্কিত করে তুলল। মস্তিষ্কের স্মৃতিতে দরজার করাঘাতে এক ভয়ানক অভিজ্ঞতা সংরক্ষিত রয়েছে।
দরজা খুলতেই জয় প্যাচপ্যাচে হাসল, “হোয়াটস-আপ, ঘরওয়ালি?ʼʼ
সানগ্লাসটা শার্টের নিচ প্রান্তে মুছে মুঠো করে ধরে তবে তাকাল চোখ তুলে অন্তূর দিকে। তবুও যতক্ষণ মাথা নিঁচু করে ছিল, বোঝা যাচ্ছিল জয়ের ঠোঁট এবং সাথে ধূর্ত চোখদুটোও হাসছে।
কথা শেষ হতেই বাতির সলতে কমানোতে ক্রমশ আগুনের বহর ছোট হওয়ার মতো জয়ের হাসিটা নিভলো। কণ্ঠ চেপে জিজ্ঞেস করল, “ও এইখানে কী করতেছে?ʼʼ
অন্তূ জবাব দেবার প্রয়োজন মনে করল না।
জয় ফিসফিস করে বলল, “আমার অনুমতি আর ইচ্ছা ছাড়া তুমি পরপুরুষের সাথে সাক্ষাতে যাবে, এইটা কি ঠিক? নোপ! দিস ইজ নট ফেয়ার, ঘরওয়ালি। খু-উ-ব রাগ হচ্ছে ব্যাপারটাতে।ʼʼ
অন্তূ কিন্তু এবার মুচকি হাসল, “আপনার রাগের কারণ হওয়ার জন্য আমি খুব দুঃখিত, জয় আমির। কিন্তু পরপুরুষ ঘরে ঢোকানোটাই কি আমার বৈশিষ্ট্য নয়?ʼʼ
অন্তূর এই দুঃসাহস আর ঔদ্ধত্যে জয়ের ভেতরের রক্ত টগবগিয়ে ফুটিয়ে তুলল। জয় দাঁত চেপে ধরে চোখ বুজে বকে উঠল, “শালীর মেয়ে..ʼʼ
চলবে…
[ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।]