#অবরুদ্ধ_নিশীথ
#তেজস্মিতা_মুর্তজা
২৬.
রাত দশটা আটত্রিশ মিনিট। হামজা জয়কে নিয়ে অন্তূদের বাড়ি থেকে বেরিয়েছে ইশার আজানের পর। জয়ের আজ পলাশের হোটেলে যাবার কথা ছিল। পলাশ অপেক্ষা করছে। কিন্ত হামজার সাথে সে এলো আব্দুর রহিম মেডিকেল হাসপাতালে। বহিঃবিভাগ দিয়ে ঢুকে এগোতেই জরুরী বিভাগ। কেচিগেইটের ওপাশে বেঞ্চিতে বসে আছেন লোকজন। কেউ কেউ বারান্দার গ্রিল ধরে আছে। উঁকি-ঝুঁকি মারছে ওয়ার্ডের ভেতরে। পাঁচশো শয্যার এই বিশাল হাসপাতালে লতিফকে খুঁজে পাওয়া সহজ কাজ নয়। কিন্তু আজ বিকেলে কেবিনে শিফ্ট করা হয়েছে লতিফকে। হামজার নির্দেশ।
কেবিনের দরজা চাপানো ছিল। স্পেশাল কেবিন রুম। হামজা ঢুকতেই লতিফের স্ত্রী আসমা উঠে দাঁড়াল এককোণে। হামজা বাঁধা দিলো, “আপনি বসুন, ভাবী। লতিফ ভাইয়ের পাশে বসুন আপনি। জয়..ʼʼ
জয় বারান্দায়। সামনে দিয়ে একটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছিল, সে মনোযোগ দিয়ে দেখল যতদূর দেখা যায়। দেখতে ভালো লাগল। তবু দুটো বাজে গালি দিলো মনে মনে। হাসপাতালে কেউ এভাবে পটের বিবি সেজে আসে? যখন সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল, কোমড়টা ন্যাকামিতে বেশিই দুলছিল। জয়ের ইচ্ছে করল, ধপ করে একটা কোমড়ের ওপর লাত্থি মেরে কোমড়টা সোজা করে দিতে। আবার ভালোও লাগছিল দেখতে।
লতিফ ঘুমাচ্ছে। তার এক পায়ে রড-রিং গেঁথে দেয়া হয়েছে, অপর পায়ে অস্ত্রোপচারের দরকার পড়েনি, হাঁটু অবধি ব্যান্ডেজ। জয়ের হাতের চর্চা কমে যাওয়ার ফল। ডানপায়ে রিংটা গেঁথে আছে যেখানে, দেখলে কেমন গা শিরশির করে ওঠার মতো। এক পা ফুলে চার পায়ের সমান হয়েছে। অচেতন পড়ে আছে লতিফ। জয় জানে, ডানপায়ে যখন সে প্রথম আঘাতটা করে, দশ মিলির মোটা রডের আঘাতে জয়ের সমস্ত শক্তি ক্ষয় হয়েছিল। হাঁটুর নিচে ফিমারের হাড্ডিগুলো চূর্ণ হয়ে গেঁথে যাবার কথা ভেতরে মাংসপেশির ভেতরে। তা-ই হয়েছে। এই রিং এই পা ঠিক করতে পারবে বলে মনে হয় না। পরের আঘাতটা করার সময় দয়া করেছে জয়।
হামজা লতিফের ছোট্ট মেয়েটাকে কোলের ওপর বসিয়ে আদর করছিল। হামজার কাছে বেশকিছু চকলেট পেয়ে বাচ্চাটি খুব খুশি। হামজা আসমাকে সান্ত্বণা দিলো, ভাবী, আপনি কাঁদবেন না। যারা লতিফ ভাইয়ের এই হাল করেছের প্রত্যেকে তাদের ন্যায্য শাস্তি পাবে।
আসমা কেঁদে ফেলল, “কে করছে এই কাজ বলেন তো? এইবারও কি..ʼʼ
-“এবারও মাজহার। আগেরবার গুলি করেছে, এবার পায়ে রডের আঘাত। কেন করেছে জানেন? যাতে লতিফ ভাই আর আমাদের কাজে না লাগতে পারে। আচ্ছা ভাবী, পুলিশ আসলে আপনি কি মাজহারের বিরুদ্ধে বয়ান দিতে পারবেন?ʼʼ
মহিলার চোখে-মুখে দ্বিধা। মহিলাকে চুপ থাকতে দেখে হামজা হতাশ হয়, “তাহলে আর কী? এভাবেই আমার লোকগুলো আহত হতে থাকবে ওদের হাতে। যেহেতু আপনিও বয়ান দিতে পারবেন না।ʼʼ
মহিলার ওপর হামজার চাল খাটলো। মহিলা বলল, “আমি দেব বয়ান। আপনের কথা চিন্তা করতেছি না। আমার স্বামীরে ওই হারামজাদা দুইবার এমনভাবে জখম করছে, তারে পুলিশে ক্যান, আমি তারে ফাঁসিতে ঝোলাবো।ʼʼ
দুই ভাই প্রসন্ন হাসল। জয়ের তো কান্না পেয়ে যাচ্ছিল মহিলার এই বাহাদুরীতে। এখানে মূলত তাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর কথা চলছে। মহিলা জানলে তার সামনে বলতো না এভাবে।
হামজা বলল, “এমনও হতে পারে, দেখবেন মাজহার আসবে দেখতে লতিফ ভাইকে। ও কিন্তু স্বীকার করবে না, কাজটা ও করেছে। নিশ্চিত দোষ দেবে আমার অথবা জয়ের। আমার কথা মিলিয়ে নেবেন।ʼʼ
অপারেশনের বিল মেটানো হয়নি। হামজা কল করে দেয়ার পর বকেয়াতে অস্ত্রপচার সম্পন্ন হয়েছে। আসমার সামনে হামজা কয়েকটা বড় বড় বান্ডেল তুলে দিলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে। কমপক্ষে ওখানে লাখ পাঁচেক টাকা তো হবে। অথবা হতে পারে তারও বেশি। আসমা কৃতজ্ঞতায় সজল চোখে চেয়ে থাকে সাদা পাঞ্জাবী পরিহিত টগবগে পুরুষটির কর্তব্যপরায়ন শক্ত দেহের পানে। চলে আসার সময় মেয়েটার কপালে গাঢ় একটা চুমু খেয়ে আসমার হাতে হাজার দশেক টাকা ধরিয়ে দিলো হামজা। প্রয়োজনীয় ওষুধ-পত্র, অন্যান্য দরকারে খরচ বাবদে। তাছাড়া সকালে তো আবার আসছে সে!
হামজা সরদার পরিবারের কাছে অনেক আগে শিখেছিল—বিশ্বাসঘাতকেরা এই জগতে সবচেয়ে নৃশংস শাস্তির দাবিদার। এদের ওপর দয়া করা এক প্রকার পাপ। প্রাণের হত্যায় যতটা না লোকসান আছে তার চেয়ে কঠোর হত্যাকান্ড হলো বিশ্বাসের হত্যা। প্রাণের হত্যাকারীর শাস্তি যদি মৃত্যু হয়, বিশ্বাসের হত্যাকারীর শাস্তি আরও শোচনীয় হওয়া উচিত। যেটা জয় করেছে। লতিফ মরলে মুক্তি পেয়ে যেত, অথচ এই অবস্থায় সে প্রতিক্ষণে মরবে। এটা ওর শাস্তি। সাথে হামজার কার্য হাসিল।
গাড়িতে ওঠার সময় জয় দাঁড়িয়ে রইল ফুটপাতে।
হামজা জিজ্ঞেস করল, “তুই বাড়ি ফিরবি কখন?ʼʼ
-“ভালো লাগতেছে না। তুমি যাও। আমি হোটেলে যাব।ʼʼ
জয়ের শরীরে পাতলা একটা ডেনিম জ্যাকেট। সাদা লুঙ্গি পরনে। হামজা শরীরের চাদটা খুলে ছুঁড়ে মারে জয়ের শরীরে, “এটা পেঁচিয়ে নে। ঠান্ডা লাগলে গালে-মুখে থাবরাবো ধরে।ʼʼ
জয় চুপচাপ চাদর গায়ে জড়ায়। গাড়ি ছাড়ার আগ মুহুর্তে গাড়ির জানালায় হাত রাখে, “কিছু টাকা দাও। পকেট খালি আমার।ʼʼ
হামজা পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করে জয়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, “হোটেলে যাচ্ছিস, থামাচ্ছি না। তবে শুতে একা যাস বিছানায়। আজ কিন্তু বিয়ে হয়েছে তোর! তোর বউয়ের সামনে ছোট যেন না হতে হয় আমাকে তোর কুকীর্তির জন্য।ʼʼ
কবীর কথাটা বুঝে ফিক করে হেসে উঠে জয়কে খোঁচায়, “বিছানায় একা যাইয়েন, ভাই। এখন কিন্তু ভাবী আছে আমাগো।ʼʼ
অথচ জয় নিশ্চুপ। স্থির চোখে বিদায় জানায় হামজাকে। আজ তার রসিকতার ছুটি।
গাড়ি যখন আড়াল হলো, তখনও জয় দাঁড়িয়ে রাস্তার পাশে। সে কোথাও যাবে বলে মনে হলো না। কবীরের কাছে একটা সিগারেট চেয়ে নিয়ে লাইটার জ্বালায়। কবীর চেয়ে দেখে তা। জয় সচরাচর সিগারেট টানে না। তার সিগারেটে টান দেয়ারও কিছু বিশেষ পরিস্থিতি আছে। কোনো ব্যাপারে হয়রানী বোধ হলে অথবা মন অশান্ত এবং দুষ্ট সত্ত্বা শান্ত থাকলে আনমনে সিগারেটে ঠোঁট লাগাতে দেখা যায় তাকে।
উদাস পায়ে হাঁটতে হাঁটতে ব্রিজের দিকে এগিয়ে যায় জয়। কবীর জিজ্ঞেস করল, “ভাই? আজকে মেয়েটার সাথে যা করলেন, তা কি ঠিক….ʼʼ
জয় রক্তখেঁকো পশুর মতো দাঁত খিঁচে ওঠে, “চুপ! একদম চুপ। ওই বিষয়ে কোনো কথা কইবি না। তোর খুব মায়া হইতেছে ওই শালীর জন্য, হ্যাঁ? তোরও হাল ওর মতো করি? তারপর দুজন একসাথে গলাগলি ধরে কাঁদবি?ʼʼ
কবীর বুঝল না, জয়ের কী হয়েছে। চুপচাপ সাথে চলল। সঙ্গ ছাড়া যাবে না। জয় গিয়ে ব্রিজের কার্নিশ ধরে দাঁড়ায়। সিগারেটের ধোঁয়াগুলো মিশে যায় অন্ধকারে। সোঁ সোঁ করে গাড়ি চলে যাচ্ছে পেছন দিয়ে। কবীর দাঁড়িয়ে আছে পাশে।
জয় বিরক্ত হলো, “আমার সাথে কী তোর? যা, বাড়ি যা। ক্লাবঘর তালা মেরে চাবি হামজা ভাইয়ের কাছে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি গিয়ে ঘুমা। আমার সাথে থাকার কিছু নাই।ʼʼ
কবীর কোনো জবাব দেয় না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে জয়ের পাশে। তার সন্দেহ, জয় হোটেলে যাবে না। কিন্ত কেন? হোটেলটা পলাশের তাই? এরকম ভয় যে জয়ের মাঝে নেই তা সে জানে। পলাশ চরম বেহায়া। হাজার হলেও আবার জয়কে ডাকবে। জয়কে ছাড়া তার আসর জমে না।
জয় চেয়ে থাকে অন্ধকারের দিকে। ব্রিজের নিচের ছোট ছোট খুঁপরিগলোতে হলদেটে লাইট জ্বলছে। অথচ জয়ের চোখে ভেসে ওঠে, অন্তূ আর আমজাদ সাহেবের বসে থাকার দৃশ্যটুকু। হিংসায় রক্ত টগবগিয়ে ওঠে ওর। ও শেষ কবে জাভেদ আমিরের কোলে চড়েছিল? তখন এতটাই ছোট ছিল যে সেসব উপভোগ করার মতো মানসিক বিকাশ ওর হয়নি। অন্তূর সাথে ওর বাপের সাথে যা ভাব! সব ন্যাকামি যত! কী থেকে কী হয়ে গেল!
শুধু ইচ্ছে করছিল, পাড়ার লোকগুলোর একেকটাকে কেটে টুকরো করতে। ওদের ন্যাকামি আর হামজার সম্মান বাঁচাতে আজ বিয়ে করে আসতে হয়েছে।
তরুর সামনে গিয়ে দাঁড়ানোটা অস্বস্তিকর হবে। এটাই মূল কারণ রাতটা বাড়ি না ফেরার। যত রাতেই ফিরুক, দেখা যাবে মেয়েটা সোফার ওপর বসে ঝিমোচ্ছে। রাতের খাবারটা খায়নি, জয়ের সাথে খাবে বলে। জয়কে খেতে দিতে হবে বলে ঘুম আসলেও ঘরে গিয়ে শোয়নি। জিজ্ঞেস করবে, “কোথা থেকে আসছেন? এত রাত করে ফিরতে হবে কেন? কোথায় ছিলেন এতক্ষণ?ʼʼ
জয় তরুকে মিথ্যা বলতে পারে না। কোনোদিন বলেনি। মেয়েটার কাছে জয় খুব যত্নের, ওর সাথে জয় কোনোদিন বিরূপ হয়নি। আজ সত্যি বলে নিজের নোংরা জীবনের একমাত্র প্রতিক্ষিণীর মন ভেঙে গুঁড়ো করতে তার ভালো লাগবে না। মেয়েটা ওর একাকীত্ব সইছে, কিন্তু নিজে না, অথচ অন্য কাউকে জয়ের পাশে মানতে পারবে না।
জয় হেঁটে ব্রিজের নিচের খুঁপরিগুলোর দিকে এগোয়। এখন ওই খুপরিতে বসবাস করা ভূমিহীন লোকগুলোর বাড়িতে যাবে, ওদের ঘুম কামাই করিয়ে আবোল-তাবোল কথা বলবে রাতভর। কারও বাড়িতে ছোট্ট পিকনিকের আয়োজনও করতে পারে। কবীরকে বলবে, এই এই জিনিস কিনে আন। মাটির চুলোর পাশে বসে নিজে রাঁধবে, শেষ রাতে সবাইকে সাথে নিয়ে খাবে। সারারাত গলা ভেঙে গান গাইবে। ফজরের আজানের সময় বাড়ি ফিরবে। লোকগুলোও সায় দেয়। বরং চরম খুশি হয় এই পাগল লোকের হুটহাট উপস্থিতিতে।
এসব ভেবে কবীর বিরক্তিতে মাথা ঝারা দেয়। হতাশ শ্বাস ফেলে জয়ের পেছনে যায়। পিছু সে ছাড়তে পারবে না, কেন পারবে না জানে না। শুধু জানে জয়ের পেছনে যেতে হবে তাকে, সাথে থাকতে হবে।
—
রাত বারোটা পার। কুয়াশায় বারান্দার গ্রিল অবধি দেখা যায় না। অন্তূ বসে থাকে বারান্দার মেঝের ওপর ঘরের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে। সারারাত হু হু করে উত্তুরে হাওয়া নাকে-মুখে ঢুকেছে। ঠান্ডার চোটে পিঠ বেঁকে এসেছে, সেসব কিছুই গায়ে লাগেনি অন্তূর। সন্ধ্যারাতে বিয়ে পড়িয়ে রেখে কাজী সাহেব বেরিয়ে গেলেন। একে একে লোকজন নিজেদের নৈতিক দায়িত্ব পালন করে তৃপ্ত মনে নিজ নিজ ঘরে ফিরল।
বেরিয়ে যাবার সময় হামজা বলে গেছিল, “এখানে থেকে পরীক্ষাটা শেষ করো। আমি জানি তুমি আজ যেতে চাইবে না। যেতেও বলছিও না আপাতত। তবে আমাদের বাড়ির বউয়েরা বাপের বাড়িতে থাকে না, রেওয়াজ নেই। পরীক্ষা শেষ হওয়া অবধি থাকো, এবং নিজেকে শান্ত করো। লোকে যা-ই জানুক, তুমি জানো কিছুই হয়নি। সো ডোন্ট বি আপসেট! হু!?ʼʼ
লোকটা দেখতে অতিকায় শুদ্ধ-বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ। এই ছদ্মরূপ তার আসল প্রকৃতিকে আড়াল করেছে। তবে আসল হামজাটা কে? কী? কেমন?
আজ অন্তূর এই মরণক্ষণে আমজাদ সাহেব এলেন না অন্তূর কাছে। আসতে নেই। রাবেয়া এসে পাশে বসলেন। অন্তূ একটুও তাড়াহুড়ো করল না চোখের পানি মুছতে। অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে না তা। কিন্তু কথা বলতে তার ভয়। কণ্ঠস্বর ও নাক আটকে আছে। আম্মুর সামনে কাঁদতে নেই।
-“ঘরে যা, অন্তূ।ʼʼ
অন্তূর আস্তে কোরে শুয়ে পড়ল শীতল মেঝের ওপর। মাথাটা মায়ের কোলে রেখে বলল, আজ তোমার বোঝা হালকা হলো, “আম্মা। তোমার অন্তূ বিয়ে করবে না করবে না, দেখো হয়ে গেছে।ʼʼ
চুলে হাত বুলালেন রাবেয়া, “চুপ কর, অন্তূ। ওঠ, ঘরে চল। জ্বর বাঁধাবি?ʼʼ
-“আম্মা! কাঁদছো কেন? কাঁদার মতো কথা বললাম?ʼʼ
-“কাঁদতেছি না। ওঠ তো অন্তূ। থাপ্পর মারব কিন্তু একটা। এইখানে ঠান্ডা।ʼʼ
-“তাতে কী? ভালোই লাগতেছে। তুমি ঘরে যাও। তুমি বুঝবা না ঠান্ডার হাওয়ায় বসে থাকার আরাম। যাও যাও! আব্বু একা।ʼʼ
-“মরে যাইতে চাস? তাইলে আমারে আগে মার।ʼʼ কণ্ঠটা আবার ভেঙে এলো রাবেয়ার, “আমিই তো তোরে জন্ম দিয়ে পাপ করছি রে মা! তোরে জন্ম না দিলে এই দিন তোর জীবনে আসতোই না। আমার গর্ভের দোষ। ওঠ অন্তূ। কার কী হচ্ছে, জানি না। আমার কিন্তু সহ্য হইতেছে না শোন। ওঠ্!ʼʼ
অন্তূ উঠে বসে, “ধুরু! ভাবলাম একটু শীত বিলাস করব, এখানে ইমোশোনাল সিন চলছে। ওঠো, চলো। শুয়ে পড়ি।ʼʼ
অন্তূ মুখ-চোখ ধুয়ে এলো। পানি বরফের মতো ঠান্ডা। এসে বাচ্চা মেয়ের মতো বিছানায় শুয়ে কম্বল পেঁচিয়ে হু হু করে কেঁপে বলল, “ওরে ঠান্ডা রে! আম্মা লাইট বন্ধ করে দিয়ে যাও। সেই শীত, বাপরে!ʼʼ
রাবেয়া অন্তূকে কেমন করে যেন তাকিয়ে দেখলেন। অন্তূ ঠিক ছোটবেলার মতো কম্বল মুড়ি দিয়ে অল্প একটু মুখ বের করে ঠকঠক করে গা কাঁপাচ্ছে। যন্ত্রণা লুকোনোর ব্যর্থ চেষ্টা।
রাবেয়া চলে গেলে অন্তূ স্থির হয়ে গেল। কতক্ষণ অন্ধকারে ছাদের দিকে চেয়ে রইল। এই শীতের রাতে বুকে জ্বলা আগুনের সাহস খুব বেশি। এত ঠান্ডা, এত কুয়াশা তবু বুকের উত্তাপ গমগম করছে।
অন্তূ উঠে গিয়ে বারান্দার দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে। নিশ্চুপ এক মাঝরাত। ঝুপঝুপ করে বৃষ্টির মতো চোখের দুই কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। কান্না জমে বুকটা কাঁপছে। অন্তূ মাথাটা দেয়ালে ঠেকিয়ে বাইরের অন্ধকার কুয়াশার দিকে তাকিয়ে রইল নিথর চোখে।
তার জীবন, সম্মান, স্বপ্ন, আব্বুর মান-মর্যাদা সব শেষ। শেষটা সে করেছে। কেন সে গেছিল সেদিন জয় আমিরের সঙ্গে বেয়াদবী করতে গেছিল? এত বোকা হলে চলে? তা কিছুই রইল না। নাহ নিজেকে ক্ষমা করা যাচ্ছে না। অন্তূ আস্তে কোরে হাতের তর্জনী আঙুল তুলে বুকের মাঝখানটায় চেপে ধরল। সেখানে ভেঙেচুড়ে আসছে। শীত বাড়ছে। পা দুটো ঠান্ডায় অবশ হয়ে আসছে। অন্তূ একটা খেলা খেলার চেষ্টা করল। এই শরীরের যন্ত্রণা, এটা কি তার বুকের ব্যথার চেয়ে বেশি তীব্র নাকি কম?
জিতল বুকের ব্যথা। শরীরের ব্যথা অনুভূত হচ্ছে না। সে অনড় বসে রইল মাথা ঠেকিয়ে। ফজরের আজান হলো। উঠল না নামাজ পড়তে। বসে রইল ওভাবেই।
রাত দুটোর দিকে রোজকার মতো অন্তূকে দেখতে এলেন আমজাদ সাহেব। তিনি আজ লুকিয়ে দেখতে এসেছিলেন। অন্তূ ঘুমালে দেখে চলে যাবেন। কিন্তু অন্তূকে ওভাবে ঠান্ডার মাঝে বারান্দার মেঝেতে বসে থাকতে দেখে বুকের ভেতরটা যেন কেমন করে উঠল। অসুস্থ শরীর নিয়ে বসলেন অন্তূর পাশে।
অন্তূ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল না। ওভাবেই বলল, “ঠান্ডা লাগবে, আব্বু। ঘরে যাও।ʼʼ
-“তোর লাগছে না?ʼʼ
-“বুঝতে পারছি না। তুমি অসুস্থ, এখানে বসে থেকো না, যাও।ʼʼ
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমজাদ সাহেব জিজ্ঞেস করেন, “আমার বাপ হবার চেষ্টা করিস না, অন্তূ?ʼʼ
-“তা করব, আমার সাধ্যি? বাপ তো তুমি, আব্বু। স্বার্থপর বাপ। বাপ হিসেবে তুমিই ঠিক আছো। আমি তোমার বাপ হলে এমন করতাম না। ভুলভাল কিছু করতাম। তুমি ঠিক কাজ করেছ।ʼʼ
আমজাদ সাহেব কী অদ্ভুত এক হাসি যে দিলেন! হেসে বললেন, “কী করতি তুই, বল।ʼʼ
-“মেরে ফেলতাম।ʼʼ
-“তাই তো করেছি। বাঁচিয়ে রেখেছি?ʼʼ
অন্তূ এবার তাকায় আব্বুর দিকে। আমজাদ সাহেব থমকে গেলেন। চোখদুটো কালিতে ঢাকা। ত্বক তীব্র ঠান্ডায় বিদীর্ণ হয়ে সাদা রক্তশূন্য হয়ে উঠেছে। চোখদুটো ফোলা, চোয়ালের ওপর শুকনো জলরাশির ধারা। বাপের ভেতরটা কেমন করে উঠল!
-“এত কঠোর মৃত্যু বাপ হয়ে দিলে মেয়েকে? আব্বু, তোমার একটুও দয়া হলো না আমার ওপর?ʼʼ
এই যে অন্তূ! আবারও ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। তার একমাত্র দূর্বলতার জায়গা!
অন্তূ একটা আবদার করে, “আব্বু!ʼʼ
-“হু?ʼʼ
-“চলো, আমরা কোথাও চলে যাই, আব্বু। এখনও আকাশ ফর্সা হয়নি ভালোমতো। চলো আমরা দূরে কোথাও চলে যাই। যাবে আব্বু?ʼʼ
-“না, অন্তূ। আজ আমার খুশির দিন। আজ যা করেছি, এরপর আর কোনোদিন খারাপ থাকব না আমি। আমি এক কন্যাদায়গ্রস্থ বাপ ছিলাম। আজ সেই বোঝা ঝেরে ফেলেছি, বিয়ের বয়সী মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি আজ। ঋণমুক্ত, দায়মুক্ত আজ থেকে আমি। চলে যাব কেন?ʼʼ
আমজাদ সাহেবের মেহেদী রাঙা দাড়ি বেয়ে একফোঁটা পানি বড় নিঠুরভাবে বয়ে গেল। অন্তূ খিঁচে চোখদুটো বুজে ফেলে। বাপের চোখের পানি সন্তানদের দেখতে নেই। অন্তূর চোখের উচিত এই মুহুর্ত থেকে নিজেদেরকে অন্ধ ঘোষনা করা।
অন্তূ আলতো করে মাথা ঠেকাল আব্বুর কাধে, “তোমাকে অভিনন্দন, আব্বু। তোমার অন্তূর বিয়ে হয়ে গেছে। জয় আমিরের সাথে। তোমার আর চিন্তা নেই।ʼʼ
আমজাদ সাহেব নিজের শরীর থেকে চাদরটা খুলে অন্তূর পা দুটো গুটিয়ে চাদরটা জড়িয়ে দিয়ে হাত গুটিয়ে আবার আচমকা অন্তূর পায়ে হাত ছোঁয়ালেন, “আমাকে ক্ষমা করতে পারবি মা? মা রে! ও মা!ʼʼ
অন্তূ ছিটকে উঠল। দু’হাত দিয়ে আব্বুর পা জড়িয়ে ধরে আকুতি করে উঠল, “আব্বু, প্লিজ না। এত বড় পাপী কোরো না আমায়। আব্বু দয়া করো।
-“মা! আমার মা!ʼʼ
আমজাদ সাহেব কেমন করে ডেকে উঠলেন। অন্তূর হাত পা অনড় হয়ে উঠল। আমজাদ সাহেব অন্তূর হাতদুটো মুঠো করে ধরে বললেন, “মা! তুই আমার মা। আজ তোর ছেলেকে ক্ষমা কর মা। আজ তোর সাথে এই অধম বাপ যা করেছে, তুই আমায় বাঁধাস না না অন্তূ!ʼʼ
অন্তূ আর নিজেকে সামলায় কী করে? আব্বুর হাতের মুঠোর ওপর কপাল ঠেকিয়ে হু হু করে কেঁদে উঠল, “পাগল হলে, আব্বু! এমন করছো কেন? বাঁচতে দেবে না আমায়? তুমি এমন করলে আমি কিন্তু কিছু করে ফেলব আব্বু! একদম আমাকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করবে না খবরদার!ʼʼ
ফস ফস করে কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেলেন আমজাদ সাহেব। বুকের ওঠানামা বাড়ল। অন্তূ আৎকে উঠল, “কী হয়েছে আব্বু? প্রেশারের ওষুধ খাওনি?ʼʼ
আমজাদ সাহেব অস্থিরভাবে জোরে জোরে শ্বাস ফেলে বললেন, “আমার কিচ্ছু হয়নি। মার খাবি এবার আমার হাতে কিন্তু! চাদর গায়ে জড়িয়ে বস।ʼʼ
-“আব্বু ওঠো! চলো ঘরে যাই। এখানে ঠান্ডা। ওঠো তো, তাড়াতাড়ি!ʼʼ
আমজাদ সাহেব আবদার করার মতো বললেন “এত ব্যস্ত হোস না তো, অন্তূ। বস, দুটো কথা বলি। আমি তোর সাথে কথা বলতে এসেছি, অন্তূ। অন্তূ? শোন, শান্ত হ। আমার কিচ্ছু হয়নি।ʼʼ
অন্তূ গলা উঁচিয়ে রাবেয়া বেগম ও অন্তিককে ডাকে। আমজাদ সাহেব তখনও আস্তে করে বলেন, “আমি আর কিছুক্ষণ তোর সাথে কথা বলি, অন্তূ?ʼʼ
অন্তূ ডুকরে ওঠে, “ওমন কেন করছো, আব্বু? এভাবে কেন কথা বলছো? কীসব বলছো তুমি? আব্বু, তুমি এমন করলে কিন্তু…ʼʼ
অন্তিক এলো। রাবেয়া দৌঁড়ে এলেন। আমজাদ সাহেব আবার বলেন, “অন্তূ, তোর সাথে আমার বোঝাপড়া আছে অনেক। একটু সময় দে আমায়, এত অস্থির হোস না। আমি কিছুক্ষণ বসি তোর কাছে? কথা বলি কিছুসময় তোর সাথে বসে?ʼʼ
—
ভোররাতে কলিং বাজছে পাটোয়ারী বাড়ির দোতলায়। -বালায়ে মেহেরবানী, দারওয়াজা খুলিয়ে…টিংটিংটুংটাং-
তরু চট করে চোখ খুলে উঠে দরজা খুলে দেয়। জয় ভেতরে এসে চাদরটা গা থেকে খুলে হাতে রাখে। তরু ভ্রু কুঁচকায়, এটা এখন তার ওপর ছুঁড়ে মারার কথা। অথচ জয় তাকাচ্ছেও না। তরু জিজ্ঞেস করে, “কোথায় ছিলেন এতক্ষণ? এই শেষরাত মানুষের বাড়ি ফেরার সময়?ʼʼ
জয় নিগূঢ় চোখে তাকায় মেয়েটার দিকে। তরু আবার জিজ্ঞেস করে, “এত দেরি কেন?ʼʼ
জয় চোখ সরায় তরুর চোখ থেকে, “খেয়েছিস রাতে?ʼʼ
-“খেয়েছি।ʼʼ
জয় হাসে, “এত খাস তবু মিথ্যা বলতে শিখিস না।ʼʼ
-“খেলে মিথ্যা বলা শেখা যায়?ʼʼ
জয় হাসে।
আস্তে কোরে বলল তরু, “আপনি খাবেন না?ʼʼ
জয় বলল না খেয়ে এসেছি। কেবল নিশ্চুপ মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়। জয় ভয় পায় তরুর অভিমানকে, ভয় পায় ওই মেয়ের চোখের কাতরতাকে। এই নিঃস্ব জীবনের একমাত্র যত্নকারী, আগলে রাখার মানুষ তরু জয়ের। সেই মেয়েকে দুঃখ দিতে জয়ের মতো পাষাণ্ডের কলিজা কাঁপে খুব।
খেতে বসে তরু আবার জিজ্ঞেস করে, “কোথায় ছিলেন? এত দেরি তো করেননা ফিরতে?ʼʼ
জয় হেঁটে ঘুরে এসে তরুর পাশে দাঁড়িয়ে জগ উঠিয়ে নিতে নিতে ফিসফিস করে বলে, “তোকে খু-ন করে এসেছি আজ।ʼʼ
তরু আৎকে ওঠে অজান্তে। জয় মিথ্যা বলে না। হাসতে হাসতে কঠিন সত্য বলে। তবুও হাসে, “আপনার হাতে আমার খু-ন, মঞ্জুর।ʼʼ
জয় মাথা নাড়ে, “উহু! যে উপায়ে আজ তোরে খু-ন করে আসলাম, তুই সইতে পারবি না।ʼʼ
তরু কথা বলেনা, চেয়ে থাকে জয়ের দিকে। জয় ঘুরে ওপারে গিয়ে টেবিলে বসে খাবারে হাত রেখে বলে, “বুঝলি তরু! তোরে ভালোবাসতে না পারাটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। এমন হইলেও হইতো, আমি তোরে তোর মতো করে ভালোবেসে, বিয়ে করে এক জীবন পাড়ি দিতাম।ʼʼ
তরু ছটফটিয়ে ওঠে, “এসব কথা কেন উঠছে?
-“ওঠার কথা বলে উঠতেছে।ʼʼ
-“আমি কি কোনোদিন চেয়েছি ওভাবে? আপনি পারেননি, আমিও তো আর বলিনি। এভাবে তো চলছে বেশ! আমি আপনাকে চরম নির্লজ্জতার সাথে ভালোবাসি। আপনাকে ভালোবাসার সময় আমার আত্মসম্মান থাকেনা। এবার আবার জিজ্ঞেস করবেন না যেন কেন ভালোবাসি আপনাকে। আমি কিন্তু বলব না।ʼʼ
জয় হাসে, “আমি জিজ্ঞেস করলেই তুই বলবি।ʼʼ
-“জিজ্ঞেস করবেন আপনি?ʼʼ
-“করব। বল, কেন ভালবাসিস আমায়?ʼʼ
তরু মসৃণ হাসে, “তিনবোনের পর যখন আমি মায়ের গর্ভে, তখন বাপ ভেবেছিল এবার একটা ছেলে হবে। হলাম আমি। বাপ আমায় মানলো না। মায়ের পক্ষে সম্ভব হলো না আমাকে মানুষ করা। চলে এলাম খালার কাছে। চারবেলা খেটেছি, দুবেলা খেয়ে আশ্রিতার জীবনে মানুষ হয়েছি। হামজা ভাই পড়ালেন টুকটাক, তুলি আপার কাছে শুয়ে থেকেছি। আমারও শখ থাকতে পারে, একথা কারও স্বরণে আসেনি। তবে এক নোংরা মানুষের কাছে আমি দুটু চুলের ক্লিপ, একজোড়া হাতের চুড়ি, চোখের কাজলের স্টিক, চুলে গোঁজার ফুলের খোঁপা, ভারত থেকে আনা শাল চাদরখানা, নবীরবরণের শাড়ি, রাস্তার মোড়ের মামার দোকানের ঝালমুড়ি, বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়া চালতার আচার—পেয়ে এসেছি কাল ধরে তার হাত থেকে। আমি যখন ছোট্ট ছিলাম, এ বাড়িতে এক ত্যাড়া ছেলের বাস ছিল। যার কাজের ঠিক নেই, কথায় রস নেই, লোকে বলে নিকৃষ্ট লোক সে। সেও বলে, আমি নাকি তার থেকে এসব আদায় করে নিয়েছি নিজের যত্ন দিয়ে। অথচ আমি ছোট ছিলাম। যত্ন করা বুঝতাম না। তুলি আপা একবার চুল ধরে মারতে এলো, সে গিয়ে তুলি আপাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে বলল, ‘ছোট মানুষ, ওকে মারবি না আর। নয়ত আমি তোর কান ফাটিয়ে হাসপাতাল করব।ʼ এবার বলুন, আমি তাকে যত্নে ভালোবেসেছি, নাকি ভালোবাসতে বাধ্য করেছে?ʼʼ
তরুর চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছে। অথচ কথা আটকাচ্ছে না মেয়েটার। জয় তা দেখে হাসল। আজ সে এক মহাপাপ করে এসেছে। তার খুব আনন্দ লাগছে। কীসের যেন বিষাদ-আনন্দ আন্দোলনে নেমেছে জয়ের বুকে। ধীরে ধীরে তা সংক্রামক ব্যধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে ভেতরে।
জয় জিজ্ঞেস করল, “আর কোনো কারণ নেই?ʼʼ
তরু চোখ মুছে হাসে, “আছে তো। মেয়ে মানুষ রহস্যমণ্ডিত, জানেন না? তারা কী থেকে যে কীসে আটকে যায়? কেউ কেউ কোনো পুরুষের গোপন নিঃসঙ্গতায় আটকে যায়। বাপ-মাহীন বেপরোয়া জীবনে আঁটকে যায়। যদিও তার পাপগুলোকে ক্ষমা করে নয়। আপনি পাপী, জঘন্য পাপী। আর আমি সেই পাপীর নির্লজ্জ প্রেমপিপাসী। সাহিত্যিক কথাবার্তা না?ʼʼ
দুইজন হো হো করে হেসে ফেলে। তরুর চোখে পানি, জয়ের চোখ জ্বলছে, লাল হয়ে উঠেছে চোখদুটো। কিন্তু জয় কাঁদতে পারে না, কারণ সে কাঁদতে শেখেনি, কাঁদা ব্যাপারটা কেমন হয় সে জানে না। অনেকক্ষণ দু’জন হাসল মাথা নিচু করে।
জয় যখন খাওয়া শেষ করে ঘরে যায়, তখন ফজরের নামাজ শেষ হয়েছে মসজিদগুলোতে। সে গিটারটা নিয়ে বারান্দায় বসে। কুয়াশা যেন মোটা চাদরের মতো প্রকৃতিতে বিছিয়ে আছে।
তরু ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে আস্তে করে কোয়েলের পাশে। তার ওপাশে তুলি ঘুমাচ্ছে। টুংটাং গিটারের শব্দের সাথে ভেসে আসছে জয়ের ভাঙা গলার আওয়াজ,
–আমি বা কে, আমার মনটা বা কে….
আজও পারলাম না, আমার মনরে চিনিতে..
ও পাগল মনরে! মন কেন এত কথা বলে….
আমি যত চাই আমার মনরে বোঝাইতে,
মন আমার চায় রঙের ঘোড়া দৌড়াইতে..
ও পাগল মনরে..
চলবে…
[ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন]